বেখায়ালি ভালোবাসা পর্ব-৩৪

0
2707

#বেখেয়ালি_ভালোবাসা,
#পর্ব_৩৪
#লেখাঃসাবেরা_সুলতানা_রশিদ

সৈকত তাড়াতাড়ি করে মেঘের কাছে যেয়ে বলে কি হয়েছে ??
মেঘ চোখ বন্ধ করে পায়ে হাত দিয়ে বসে থাকে।
সৈকত মেঘের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে মেঘের চোখে মুখে ব্যথার তীব্র এক অভিব্যক্তি ফুটে উঠেছে ।
সৈকত আস্তে করে মেঘকে কোলে করে এনে বিছানায় শুইয়ে দেয় ।
মেঘের চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে ।
সৈকত মেঘকে কান্না করতে দেখে বুঝতে পারে যে মেঘ অনেকটাই ব্যথা পেয়েছে ।
সৈকত তাড়াতাড়ি করে উঠে বাইরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতে মেঘ বলে
—কোথায় যাচ্ছেন?
—ডাক্তার ডাকতে।
—এতো রাতে আপনি ডাক্তার কোথায় পাবেন?
—চিন্তা করো না পেয়ে যাবো । আমি হোটেল ম্যানেজারের সাথে কথা বললে সে ব্যবস্থা করে দেবে ।
—কোথাও যেতে হবে না । আপনি এদিকে আসুন।
—কোথাও যেতে হবে না মানে !!?ডাক্তার না ডাকলে পায়ে কি হলো সেটা বুঝবো কি করে ?
—তেমন কিছু হয়নি সামান্য চোট লেগেছে । এটা আপনা আপনি ঠিক হয়ে যাবে ।
আপনি আমার পাশে এসে বসুন।
সৈকত মেঘের পাশে এসে বসে ।
মেঘ সৈকতের দিকে তাকিয়ে
বুঝতে পারে সৈকত ভিতরে ভিতরে খুব অস্থির হয়ে উঠেছে আমার এ অবস্থা দেখে।
আমার এতটুকু কষ্ট দেখে ও নিজেও খুব কষ্ট পাচ্ছে।
সৈকত আমাকে এতোটা ভালবাসে অথচ মুখে নিজে থেকে কেন স্বীকার করে না !!?
কেন নিজের মুখে একবারো বলে না যে, মেঘ আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি ।
কেন একবারের জন্য নিজ থেকে বুকে জড়িয়ে বলে না যে মেঘ তুমি শুধু আমার!!?
কেন নিজ থেকে আমার সবটুকু জোর করে নেয় না !!?
আমি তো আমার সবটুকু তাকে অনেক আগেই বিলিয়ে দিয়ে নিঃস্ব হয়ে আছি ।
তবুও কেন নিজ থেকে আমাকে তার ভালবাসা তার আদর দিয়ে পরিপূর্ণ করে দেয় না!!?
সৈকতের দিকে তাকিয়ে এসব কথা ভাবতে ভাবতে মেঘের চোখ দিয়ে মেঘনার ঢল নামে ।
সৈকত মেঘের চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে মেঘের হাত দুটো নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে শক্ত করে ধরে বলেঃ
—সরি মেঘ ,আমি বুঝতে পারিনি তুমি এভাবে ব্যথা পাবে । তাহলে আমি এমন করতাম না ।
—ইটস ওকে ।
সৈকত মেঘের পায়ের কাছে সরে বসে মেঘের বাম পা টা তুলে নিজের কোলের উপর নেয় ।
—এই কি করছেন!!?পা ছাড়ুন।
—কেন?আমি কি তোমার পায়ে হাত দিতে পারি না??
—হ্যা পারেন। শুধু পা কেন আমার সবটাই তো আপনার । কিন্তু তারপরও আপনি আমার পায়ে হাত দিচ্ছেন ভেবে কেমন যেন লাগছে ।
সৈকত মেঘের পায়ের উপর নিজের হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে
—কেমন লাগছে শুনি??
—খারাপ লাগছে ।
—কি !!?খারাপ লাগছে ??
আচ্ছা ঠিক আছে এই যে আমি তোমার পা সরিয়ে দিলাম । আর স্পর্শ করবো না বলে নিজের কোল থেকে পা তুলে টুপ করে ছেড়ে দেয় ।
—আঃ আঃ আঃ আঃ
বলে মেঘ ব্যথায় চোখ বন্ধ করে ।
ওহ শীট !!আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম যে তোমার পায়ে ব্যথা ।
সৈকত মেঘের পায়ে হাত দেওয়ার আগেই বলে থাক আপনাকে আর হাত দিতে হবে না ।
সৈকত মুখ কালো করে চুপ করে বসে থাকে ।
একটু পরে বলে সব দোষ আমার ।
তোমার এ অবস্থা।
ধুর !!!আমার আগেই বোঝা উচিত ছিল যে এসব সারপ্রাইজ টারপ্রাইজ আমার দ্বারা অন্যকে দেওয়া সম্ভব না।
চাইলাম কি ??
আর হলো টা কি ?
যখন যেটা করতে যায় সবসময় তার উল্টোটাই হয় আমার সাথে ।
মেঘ সৈকতের কথা গুলো শুনে মনে মনে হাসতে থাকে । কিন্তু সেটা সৈকত কে বুঝতে দেয় না।
মেঘ বলেঃ
—আচ্ছা আপনাকে আমার জন্মদিনের কথা কে বললো বলুনতো??
—কেন??
—কারণ আপনার তো এটা জানার কথা নয়। আর আমার যতদুর মনে আছে আপনার আর আমার মাঝে এসব বিষয় নিয়ে কখনো কথা হয়নি।
—না হয়নি কথা। তাই বলে কি আমার জানার অধিকার নেই?
নাকি জেনে বড় কোন অপরাধ করে ফেলেছি!?
মেঘ সৈকতের কন্ঠ শুনেই বোঝে উনি রেগে যাচ্ছেন । কিন্তু হঠাৎ কি কারণে রেগে যাচ্ছে সেটা মেঘ বুঝতে পারে না।
হঠাৎ সৈকত উঠে ফোন হাতে নিয়ে ফোনের দিকে মনোযোগ দেয় ।
মেঘ মনে মনে অবাক হয় এটা দেখে যে সৈকত তার দেওয়া সেই মোবাইলটা ব্যবহার করছে ।
মেঘ আর কিছু বলে না । চুপ করে চোখ বন্ধ করে শুইয়ে থাকে।
আর ভাবে উনি যে আমাকে ভালবাসে তাতে কোন সন্দেহ নেয় ।
এই যে একটু আগে আমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য এত কষ্ট করে এতকিছু করলো । এটাও তার ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ ।
কিন্তু তবুও মনটা কেন যেন কিছুতেই শান্তি পাচ্ছে না । যতক্ষন না তার নিজের মুখ থেকে এটা শুনতে পাচ্ছি ।
দুধের স্বাদ কি আর ঘোলে মেটে !!?
হঠাৎ পায়ে হাতের স্পর্শে মেঘ চোখ মেলে তাকাই।
দেখে সৈকত হালকা গরম পানিতে কাপড় ভিজিয়ে পায়ে ছ্যাকা দিচ্ছে ।
সৈকত মেঘের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে এখন কেমন লাগছে??
—অনেক ভাল লাগছে । কিন্তু আপনি গরম পানি কোথায় পেলেন?
—কেন বাথরুমে। ওখানে তো ওয়াটার হিটার আছে ।
—মেঘ মুচকি হেসে বলে তা আপনি কি করে জানলেন যে গরম পানি দিলে ব্যথা উপশম হয়??
সৈকত পাশ থেকে ফোনটা উচু করে বলে কেন এখন না ইন্টারনেটের যুগ!!?সমস্যা লিখলাম সার্চ দিলাম আর সমাধান ও পেয়ে গেলাম।
কেন ওটাতো কেবল যখন তখন পু করে বেজে ওঠে । আর মানুষকে যখন তখন বিরক্ত করে । কোন সময় ঙ্গান নেই ।
আপনার মতো মানুষ সাইরেন ব্যবহার করছে দেখে তো আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না!!!?
—আমার কথা আমাকে ফেরত দিয়ে বলে লজ্জা দিচ্ছো ??তবে জেনে রাখ ছেলেদের বিয়ের আগে একটু একটু লজ্জা থাকে কিন্তু বিয়ের পর আর লজ্জা কি জিনিস সেটা থাকে না।
—হা হা হা
—সৈকত মেঘের হাসি শুনে ভেংচি কেটে বলে হি হি হি ।
সৈকত মেঘকে নিজ হাতে মেঘের মুখে তুলে রাতের খাবার খাইয়ে দেয় ।
মেঘ নিশ্চুপ বালিকার মতো করে খেয়ে নেয় ।
দুজনের খাওয়া শেষ করে
কথার ঝুড়ি খুলে বসে যায় দুজনে । জমতে থাকে তাদের দুজনের না বলা কথার আসর ।
মাঝে মাঝে একে অন্যের ভালবাসা পূর্ণ দৃষ্টির চাহনিতে পুড়ে যায় ।
সৈকত মেঘের কাছে পাশে এসে বসে ।
মেঘের হার্টবিট বেড়ে যেতে থাকে ।
মেঘ চোখ বন্ধ করে দুহাত মুঠো করে ধরে নিজের হার্ট বিট কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে । কিন্তু হাজার চেষ্টার পরও যেন হার্টবিট কেন জানি বেড়েই চলেছে ।
সৈকত পাশে বসে মেঘের ডান হাতের ভিতর নিজের ডান হাত দিয়ে ধরে রাখে ।
মেঘ কেন যেন মনে হচ্ছে জমে যাচ্ছে । নড়ার কোন শক্তি পাচ্ছে না ।
সৈকতের নাকে মেঘের চুলের সুঘ্রান এসে লাগছে । সৈকত মাথাটা কাত করে মেঘের চুলে নিজের নাক ঢুবিয়ে দেয় ।
মেঘ সৈকতের স্পর্শে কেপে ওঠে ।
সৈকতের মুখ টা আস্তে আস্তে নেমে আসে মেঘের মুখের দিকে ।
মেঘ সৈকতের গরম নিশ্বাস টা অনুভব করে ।
সৈকতের মুখ আরেকটু এগোতেই মেঘ বাম হাত দিয়ে সৈকত কে একটা ধাক্কা দেয় ।
সৈকত মেঘের দিকে তাকাতেই মেঘ ইশারাদ্বারা নিজের পা দেখিয়ে দেয় ।
—ওহ নো !!
সৈকত বেচারার মুখে ওহ নো শুনে মেঘ খিল খিল করে হেসে ওঠে ।
সৈকত রাগী একটা লুক নিয়ে বলে খুব মজা লাগছে না??
—মেঘ হাসি থামিয়ে বলে মোটেও না ।
—আমি জানি খুব মজা পাচ্ছো আমার অবস্থা দেখে। তবে শুনে রাখ আমারও দিন আসবে । সেদিন আমিও
দেখবো ——
—কি দেখবেন শুনি!!?
—দেখবো আমার যা দেখার ।
—কি দেখবেন সেটাই তো জানতে চাইছিì
—সেটা তোমার এখন জানার দরকার নাই। সময় হলে বুঝিয়ে দিব।
—ওকে । বলে মুখ চেপে হাসে মেঘ।
আর হাসতে হবে না। এবার চুপটি করে লক্ষী মেয়ের মতো শুয়ে পড়ো ।
সকালে বের হতে হবে ।
—কোথায়??
—কোথায় আবার ঢাকা। ওখানে নিয়ে তোমাকে আগে ডাক্তার দেখাবো । তারপর বাড়ি নিয়ে যাবো।
—আহ হা রে বউয়ের জন্য কি চিন্তা!!?
—মানে!!?
—মানে কিছু না ।
সৈকত মেঘের মাথায় হাত রেখে লম্বা চুলের মধ্যে আঙ্গুল দিয়ে বিলি কেটে দেয়।
কিছুক্ষনের মধ্যে মেঘ ঘুমের রাজ্যে প্রবেশ করে ।
সৈকত তাকিয় থাকে মেঘের ঘুমন্ত নিষ্পাপ মুখের দিকে।
কি শান্ত ভাবে ঘুমিয়ে আছে এই অভিমানী মেয়েটি।
যার মুখের দিকে তাকিয়ে বিনিদ্রায় কাটিয়ে দেয়া যায় রাতের পর রাত।
অদ্ভুত এক মায়া আছে মেঘের মুখে যা এত দিন সৈকত খেয়াল করে নি ।
আজ মেঘের দিকে তাকিয়ে নতুন করে আবিষ্কার করছে তার ভালবাসার মানুষটিকে ।
সৈকত মেঘের কপালে একটা চুমু একে দেয় ।
কেমন যেন প্রশান্তিতে ভরে ওঠে সৈকতের বুক।
কেন জানি আজ
চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করে ভালবাসি অভিমানী । আমি তোকে বড্ড ভালবাসি——

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here