#বেখায়ালি_ভালোবাসা,
#পাট_৮
লেখিকা: #সাবেরা_সুলতানা_রসিদ
..
মেঘ খাবার খেয়ে তার শ্বশুরের রুম থেকে কিছুক্ষন পর চলে আসে ঝিনুকের রুমে।
ঝিনুক বসে বই পড়ছিল। মেঘ কে দেখে বলেঃ
—তুমি এখনও মন খারাপ করে আছো ভাবি?
—আরে না ,
—তুমি কিন্তু মিথ্যা বলছো। আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি তোমার মন খারাপ ।
মেঘ কি যেন ভেবে ঝিনুকের দিকে তাকিয়ে বলেঃ
—আচ্ছা ঝিনুক তুমি আমার একটা উপকার করবে?
ঝিনুক কিছুটা অবাক হয়ে বলেঃ
—কি উপকার ভাবি!!??
—তেমন কিছু না আবার—-
—আহঃ হাঃ বলোই না। এত সংকোচ করতেছ কেন?
—না ,সংকোচ না। তবে ভাবছি ।
—এত ভাবাভাবির দরকার নাই। চটপট বলে ফেল।
—আমি তোমার কাছে কিছু জানতে চাই।
—বলো কি জানতে চাও?
—যদি তুমি সঠিক টা জানো তাহলেই উত্তর দিবে । কোন কিছু নিজের ভাবনা থেকে বলবে না। আর হ্যা কেন আমি প্রশ্ন করছি সেটাও জানতে চেও না।
—আচ্ছা বাবা ঠিক আছে। যেটা জানি শুধু সেটাই বলবো। আর তোমাকে ও কোন প্রশ্ন করবো না।
মেঘ একটু সময় নিয়ে বলেঃ
—তোমার মায়ের কোন কথা তোমার মনে আছে?
—না ভাবী । আমার মায়ের কোন স্মৃতি আমার মনে পড়ে না।
—কোন কিচ্ছু মনে পড়ে না?
—না। যখন মা মারা যায় তখন আমার বয়স তিন কি সাড়ে তিন। তবে ভাইয়াদের মুখে শুনেছি,মা যখন মারা যায় তারপর থেকে আমি নাকি মা মা করে খুব কান্না করতাম।
—এখন তোমার বয়স কতো?
—উনিশ ।
—আচ্ছা ভাইয়াদের কাছ থেকে আর কি শুনেছ?
—বুঝলাম না।
—মানে তখন তো তুমি খুব ছোট ছিলে । আমার শ্বাশুড়ী মা মারা গেল তখন তোমাকে দেখাশোনা করতো? আই মিন তোমাদের সবাইকে কে দেখাশোনা করতো?
—বাবা তার এক ফুফু কে এনে রেখেছিল আমাদের বাড়িতে তার নিজের কোন ছেলে মেয়ে ছিল না। বাবা তাকে নিজের মায়ের মত মনে করতো।তিনি সম্পর্কে আমাদের দাদী হতো। ছেলে মেয়ে না হওয়ার কারণে দাদা তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল। তারপর থেকে সে আমাদের সঙ্গে থাকতো। আর বাবাও তখন খুব মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েছিল। আমাদের কথা চিন্তা করে আমাদেরকে সময় দেওয়ার জন্যে বাবা নাকি রাজনীতি ও ছেড়ে দিতে চেয়েছিল।
—আচ্ছা তোমার ভাইয়াদের বয়সের পার্থক্য কেমন?
—বড় ভাইয়ার থেকে মেঝ দু বছরের ছোট। আর মেঝ ভাইয়ার থেকে সৈকত ভাইয়া আরো দু বছরের ছোট।
—আর তুমি সৈকতের থেকে পাঁচ বছরের ছোট তাইতো?
—হ্যা।
মেঘ মনে মনে একটা হিসাব করে ।
—সৈকতের বয়স যখন আট তখন মা মারা যায়?
—হ্যা।
—আচ্ছা তোমরা কি সবাই এক সঙ্গে থাকতে?
—না। বড় আর মেঝ তখন বাইরে হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করতো। আমি আর সৈকত ভাইয়া বাড়ি তে থাকতাম।
—ও। আর মা মারা যাওয়ার পরে??
— মা মারা বাবা বড় আর মেঝ কে বাসায় নিয়ে চলে আসে । যাতে সবাই একসঙ্গে থাকলে মন খারাপ না হয়।
—আচ্ছা আমার শ্বাশুড়ী মা কেমন ছিলেন??
—হুম। বাবার মুখে শুনেছি মা নাকি অনেক ভাল ছিলেন। অনেক সংসারী ছিলেন। অনেক হিসেবি ও ছিলেন। নিজের সংসারের কোন জিনিস তিনি নষ্ট বা বেহাত হতে দিতেন না। আর বাবা নাকি তখন একটু বেহিসাবী ছিলেন। নিজের ইচ্ছামত ঘুরতেন ফিরতেন। নিজের কাজটাকে বেশি ভালবাসতেন।
—আচ্ছা এ কথা গুলো তুমি কার কাছ থেকে শুনেছো??
—বাবা নিজের মুখে বলতেন। এখনও বলে মাঝেসাঝে ।
—আর তোমাদের সে দাদী??
—মা মারা গেছে ষোল বছর। দাদী আমাদের সঙ্গে একসাথে সাত/আট বছর ছিল। তারপর বাবা ভাল ছেলে দেখে দাদীর দ্বিতীয় বিয়ে দেন ।দাদী কে সৈকত ভাইয়ার পচ্ছন্দ হতো না। সবসময় রেগে কথা বলতো। একদিন দাদী মা কে নিয়ে কি যেন বলেছিল ভাইয়া রেগে দাদীর মাথায় দূর থেকে গুলতি দিয়ে ইটের টুকরা মেরেছিল। দাদীর কপাল কেটে অনেক রক্ত বেরিয়ছিল।
—তারপর!!?
—তারপর বাবা যখন ফিরে সব জানতে পারে তখন ভাইয়াকে দুই টা চড় মেরেছিল । ভাইয়া ঙ্গান হারিয়ে ফেলে। আর দাদীকে ও বাবা কি যেন বলেছিলেন। তারপর থেকে উনি যতদিন আমাদের সঙ্গে ছিলেন মা কে নিয়ে কোন কথা বলতো না।
—আচ্ছা তোমার সে দাদীর কোন খবর জানো??
—না।
— উনি কি বেচে আছেন?? নাকি—-
—মনে হয় বেচে আছে। তা না হলে নিশ্চয় বাবার মুখে তার মারা যাওয়ার সংবাদ শুনতাম।
—তোমাদের তার সঙ্গে আর দেখা হয়নি??
—না । আর দেখা হয়নি।
—আচ্ছা আরেকটা কথা।
—কি কথা বলো?
—তুমি যে একটু আগে বললে বাবা শ্বাশুড়ী মা মারা তোমাদের জন্য রাজনীতি ছেড়ে দিতে চেয়েছিল,তারপর কি হলো?? উনি তাহলে রাজনীতি তে এখনও জড়িয়ে আছেন কি করে??
—বাবা রাজনীতি থেকে নিজের নাম কেটে দিয়ে এসেছিল। পার্টি অফিসে ইস্তাফা জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু যখন এটা সবাই জানাজানি হয়ে গেল তখন বাবার দলের লোকেরা সাধারণ জনগন যারা বাবাকে মম থেকে ভালবাসতো তারা এক হয়ে সব অনশন শুরু করে। বাবা রাজনীতি খুব ভাল বুঝতো। আর তারচেয়ে বড় কথা উনি সকল পেশার সকল শ্রেণীর লোকদের ভালবাসতেন আর এখন ও বাসেন। বাবাকে শুধু নিজের দলের লোকেরাই না ,বিরোধী দলের লোক ও খুব ভালবাসে , শ্রদ্ধা করে, সম্মান করে।
ঝিনুকের কথা শুনে মেঘের মনে আরো অনেক প্রশ্ন উুঁকি দিতে শুরু করে।
কিন্তু এর বেশী প্রশ্ন এখন ঝিনুক কে করা ঠিক হবে না বলে চুপ করে থাকে।
—কি হলো চুপ হয়ে আছো যে?
—না এমনি।
—তোমার প্রশ্ন করা শেষ?
—হ্যা,আজকের মত।
—তাহলে আমি এখন স্টাডি রুমে গিয়ে একটু বই নিয়ে বসি । কাল আমার একটা পরীক্ষা আছে। তুমি লাইট অফ করে ঘুমিয়ে পড়ো।
—এখানে পড়ো আমার সমস্যা হবে না।
—না ভাবী তুমি একটু ঘুমাও। তোমার এখন ঘুমের খুব প্রয়োজন । আমি পড়া শেষ করে তারপর আসবো।
—আচ্ছা ঠিক আছে। তবে বেশী রাত জেগে থেকে না যেন।
—ঠিক আছে।
ঝিনুক নিজের বই নিয়ে বের হওয়ার জন্য দরজার কাছে পৌছাতে মেঘ বলেঃ—ঝিনুক শোন।
—হ্যা ভাবী বলো।
—আচ্ছা তোমার ভাইয়ার কি কোন পচ্ছন্দ করা মেয়ে আছে??
—ইউ মিন ভাইয়ার কোন মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক আছে কিনা??
মেঘ কাপাকাপা কন্ঠে বলেঃ
—হ্যাঁ ।
ঝিনুক কপাশ টা ভাজ করে একটু ভেবে বলে আমি এটা শিওর হয়ে তোমাকে কিছু বলতে পারছি না। কারণ আমি ঠিক সঠিক ভাবে কিছু জানি না। তবে ভাইয়া ভার্সিটি তে পড়ার সময় অনেক মেয়ে যে ভাইয়া কে পচ্ছন্দ করতো তা জানি।
অনেকে লাইন মারার জন্য আমার সঙ্গেও যোগাযোগ করতো । কিন্তু—-
মেঘ একটু জোরের সাথেই বলে
—কিন্তু কি!!?
—আমি ভাইয়ার সামনে কোনদিন কোন মেয়ের সম্পর্ক সাফাই গাইতে পারিনি। ভাইয়া আমাকে যেমন ভালবাসে আমি ঠিক তার থেকে দ্বিগুণ ভাইয়া কে ভয় ও পায়।
—আচ্ছা তুমি এখন যাও। আমি নিজেই না হয় এটা জেনে নেয়ার চেষ্টা করবো।
—ওকে ভাবী।
ঝিনুক চলে যেতেই মেঘ লাইট অফ করে শুইয়ে পড়ে। মাথার মধ্যে তার হাজার টা
প্রশ্ন কিলবিল করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু হিসাব মেলাতে পারছে না কোনটার।
সৈকত তার মায়ের মৃত্যুর জন্য কেন তার বাবাকে দোষী মনে করে!??
মেঘ মনে মনে একটা হিসাব করে তার শ্বশুরের বয়স এখন পঞ্চাশ কি পঞ্চান্ন বছর । এখন থেকে আরো ষোল বছর আগে শ্বাশুড়ী মা মারা যায়। তখন তার বয়স ছিল ৩৪/৩৯ বছর।
মেঘ ভাবে।
আচ্ছা একটা মেয়ে বারো বছর সংসার করে চার সন্তানের জননী হয়ে কোন পর্যায়ে গিয়ে সুইসাইডের মত এত জঘন্যতম পথ টা বেছে নেই!!??
মানুষ কখন সুইসাইডের কথা ভাবতে পারে!!?
মেঘ ঠান্ডা মাথায় ভাবতে থাকে। কি হতে পারে । কেন মা তার এত সুন্দর সাজানো গোছানো সংসার ,তার স্বামী সন্তান রেখে
ঐরাকম এক যন্ত্রণাময় মৃত্যু কে আলিঙ্গন করে নিল।
মেঘ প্রথম দিন সৈকতের মুখে শুনেছিল তার মা গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে ছিল। দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছিল কিন্তু তিনি মুখে একটা শব্দ ও করেন নি।
তাহলে কি তার বুকের ভিতরে আগুনে শরীর ঝলসে যাওয়ার থেকেও বড় কোন যন্ত্রণা ছিল!!??যার জন্য এমন একটা পথ বেছে নিয়েছিলেন।
সে যন্ত্রণাটা কি হতে পারে ??
তাহলে কি —??
না না এ আমি কি ভাবছি!!?
ঝিনুকের কথা অনুযায়ী আর নিজের চোখে বাবাকে এ’কদিনে বাবাকে যতটুকু দেখেছি চিনেছি তাতে সে নিজের মানুষ নিজের পরিবার ছাড়া তৃতীয় কোন ব্যক্তিকে তার জীবনে ভালবাসাতে পারে না। আর তার যদি সত্যি অন্য কোন মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক থাকতো তাহলে শ্বশুড়ী মা মারা আর কেন বিয়ে করলো না??
তাহলে কি হতে পারে ??
উুহ আর ভাবতে পারছি না।
তাহলে কি শ্বাশুড়ী মায়ের নিজের কোন ভুল ছিল??
তাও তো না। মা নাকি খুব ভাল মানুষ ছিলেন । নিজের স্বামী ,সন্তান আর সংসারকেই তিনি ভালবাসাতেন।
মেঘ বিছানা থেকে উঠে পায়চারি করে আর ভাবে । কোথাও না কোথাও সমস্যা একটা আছেই। তা না হলে এমন হবার কথা নয়। মায়ের মৃত্যুর পিছনে নিশ্চয় বিশেষ কোন কারণ আছে । তা না হলে অন্যে কোন রহস্য লুকিয়ে আছে এ মৃত্যুর পিছনে।
কিন্তু সেটা কি??
না এ মুহূর্তে আর আমার বাড়ি যাওয়া চলবে না।
এখানে থেকে আমাকে সবটা জানতে হবে। যতদিন না সৈকত আর বাবার মধ্যে সৃষ্ট ব্যবধানের কারণ টা জানতে পারছি ততদিন আর শান্তি নেই।
সৈকত আমাকে ভালবাসুক আর না বাসুক ওর পাশে থেকে আমাকে সব জানতে হবে। ওর মুখ থেকেও আমাকে আরো কিছু জানতে হবে।
ধূর এতক্ষন তো ভালই ছিলাম হঠাৎ সৈকতের কথা মনে হতেই বুকের ভিতরটা কেমন করে মোচড় দিয়ে উঠলো।
আচ্ছা এই মানুষটাই বা এমন কেন।
ও যত বেশি আমাকে কষ্ট দিচ্ছে আর আমি ততই যেন ওর দিকে আকৃষ্ট হয়ে পড়ছি। ও কি একটু ও আমাকে ভালবাসে না। আমি কি এতটাই বাজে দেখতে!!?
না দেখতে তো খারাপ নই। দেখতে যদি খারাপ হতাম তাহলে নিজের এলাকার ছেলে গুলো কেন আমার পিছনে লাইন মারতো। কথা বলার জন্য পাগল হয়ে যেত। আর রাকিব !?? রাকিব ই বা কেন তাহলে আমার জন্য হাতের শীরা কেটে সুইসাইড করতে গিয়েছিল!!?
মেঘ নিজের মাথায় নিজে একটা চড় দিয়ে বলে কোন ভাবনায় ছিলি আর কোথায় হারিয়ে গেলি।
সৈকত যেমন রহস্যময় তেমনি এ বাড়ি টিও পুরো রহস্য দিয়ে ঘেরা।
তবে সব রহস্য আমি উদঘাটন করেই ছাড়বো। আর ওই চেনা আচেনার মাঝে থাকা লোকটা কেও আমি জয় করেই ছাড়বো।
মেঘ শুয়ে পড়ে আর হারিয়ে যায় ঘুমের রাজ্য । আর সেখানে গিয়েও স্বপ্ন দেখে তার ভালবাসার মানুষ টিকে নিয়ে।
————**——**——**————
সকালে সবাই নাস্তা শেষ করে অফিসে চলে গেছে। ঝিনুক ও কলেজে। ডলি তো দিনে বাসাই থাকে না। মেঘ তাকে সেই দিন দেখেছে তারপর আর তার দেখা হয়নি। রোজি ও একটু আগে অনি কে সঙ্গে নিয়ে কোথায় যেন গেছে।
সৈকত হয়তো নিজের রুমে আছে আর নই সেও বেরিয়েছে।
মেঘ আর সৈকতের কোন খোজ নেই নি। ইচ্ছা করে তার ঘরে ও ঢোকে নি।
মেঘ দূরে থেকে বুঝতে চাই আসলে সৈকতের ওর উপর কোন টান আছে কি না!!
মেঘ বসে ভাবছে কি করা যায় কোথা থেকে কি শুরু করবে কিছু বুঝতে পারছে না।
কাজের লোক গুলো যার যার মত কাজ করছে।
মেঘ উঠে দাড়ায় । সারা বাড়িটা তার ভাল করে দেখা দরকার।
যে ভাবা সেই কাজ।
মেঘ সারা বাড়িটা মন দিয়ে অনেক সময় নিয়ে ঘুরে ঘুরে খুটায় খুটায় দেখে । কিন্তু না কোথাও তার শ্বাশুড়ী মায়ের কোন ছবি নেই।
সৈকত যে পরিমাণ তার মাকে এখনও ভালবাসে । তাতে করে এ বাড়িতে কোথাও না কোথাও তার মায়ের পুরাতন কিছু স্মৃতি থাকার কথা । কিন্তু নেই কেন!!?
মেঘের মনে অনেক প্রশ্ন কিন্তু উত্তর মিলছে না এক টার ও।
কি করবে??
না আর ভাবা যাবেনা এতকিছু।
মাথার শিরা গুলো কেমন ব্যথা করতে শুরু করেছে।
————**——**——**————
চৌধুরী সাহেব রাতের খাবার খাওয়ার সময় মেঘ কে ডেকে মেঘের হাতে একটা খাম তুলে দেয়।
—কি বাবা এটা??
—খুলে দেখ ।
মেঘ খাম খুলে দেখে দুটো এয়ার টিকিট ঢাকা টু সিলেট।
মেঘ অবাক হয়ে বলে বাবা এটা কেন??
—তুই আর সৈকত আগামীকাল রাতের ফ্লাইটে ওখানে যাবি। ওখানে আমার একটা বাঙ্গলো তোদের জন্য বুক করা আছে সেখানে গিয়ে দু চার দিন থেকে সব ঘুরে দেখে আসবি মন টা ভাল লাগবে।
—কিন্তু বাবা—
—কোন কিন্তু না। আমি সৈকত কে বলে দেব।
বলতে না বলতেই সৈকত বাসায় ঢোকে ।
মেঘ সৈকত কে দেখে মাথা নিচু করে অন্য দিকে সরে দাড়ায় ।
চৌধুরি সাহেব সৈকত কে ডেকে বলেঃ
—নিজের ব্যাগ গুছিয়ে রেখ। আগামিকাল মেঘ মা কে সঙ্গে নিয়ে সিলেট যাবে।
—না আমি যেতে পারবো না।
—কেন কি এমন কাজ করো তুমি ?যে যেতে পারবে না। নিজের অফিসেও তো ঠিকমত বসো না। আমি আছি বলেই তোমার সব কিছু চলছে। আর আমি যখন থাকবো না তখন বুঝবে পৃথিবী টা কত কঠিন জায়গা। নিজের স্বার্থে মা ও কখনো সন্তানের কথা ভাবে না। আর তুমি তো——
কথা গুলো বলতে চৌধুরী সাহেবের আজ কেন যানি গলাটা বুজে এলো।
মেঘ পাশ থেকে বললোঃ
—বাবা থাক না। কেউ যখন যেতে চাইছে না তখন জোর করার দরকার নেই। কারো উপর কোন জিনিস না চাপিয়ে দেওয়ায় ভালো। আর তাছাড়া আমার উনাকে নিয়ে কেন যানি ভরসা পায় না।
সৈকত মেঘের কথা শুনে আড়চোখে মেঘের দিকে তাকায় । মেঘ দেখেও সেটা না দেখার ভান করে দাড়িয়ে থাকে।
—হুম । তুই ঠিকই বলেছিস। ওকে ভরসা করা যায় না। তাহলে কি করি বলতো??
ভরসার কথা শুনে সৈকতের ইগোতে একটু আঘাত লাগলো।
—আচ্ছা ঠিক আছে আমি আমার ব্যাগ টা গুছিয়ে রাখবো । বলেই দ্রুত ওখান থেকে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেল।
চৌধুরী সাহেব মেঘের দিকে তাকিয়ে বললো তোর ওষুধে কাজ হয়েছে।
—বাবা আমার একটা কথা ছিল।
—বল কি কথা।
—আমি ট্রেনে যেতে চাই।
—কেন?
—আমার ট্রেনে জার্নি করতে ভাল লাগে।
— আচ্ছা ঠিক আছে।
—আরেক টা কথা।
—কি?
—ঝিনুক ও আমাদের সঙ্গে যাক।
রোজি এসে বললো হ্যা বাবা ঝিনুক ওদের সঙ্গে যাক। বোঝেনইতো সৈকতের কোন কান্ডঙ্গান নেই । কোথায় কি করবে তার কোন ঠিক নেই।
আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে ঝিনুক কে ওর কোন ফ্রেন্ড কেও সঙ্গে নিতে বলো। আর যাবার ডেট আমাকে বলো। আমি ট্রেনের দুটো কেবিন বুক করে রাখবো।
আচ্ছা বাবা।
চৌধুরী সাহেব খাওয়া শেষ করে উঠে যায়———-
(চলবে)