বেখেয়ালি মনে পর্ব-২৩

0
568

#বেখেয়ালি_মনে
#লেখনীতে- Ifra Chowdhury
পর্ব-২৩
.
.
দেখতে দেখতে তিনমাস কেটে যায়। ত্রয়ী এসএসসি এক্সাম দিয়ে একদম ফ্রি বার্ড এর মতো উড়ছে। এই তিনমাসে ইনানকে মনের কথা বলার শত চেষ্টা করার পরও বলা হয়ে উঠেনি।

দুই মাস আগে গোধুলী লগ্নে ইনানের কাছে ত্রয়ী গিয়েছিলো। রোজকারের মতন সেদিনও প্রিয়া ইনান চেঁচামেচি করছিলো। সেদিন ত্রয়ী কেন জানি চুপ থাকতে পারেনি। প্রিয়ার মুখের উপর বলে দিয়েছিলো,

” সেল্ফ রেসপেক্ট যার নেই তাকে অন্তত ইনান ভাইয়া নিজের লাইফে এন্ট্রি দিবেনা। ”

তার থেকে প্রায় তিন বছরের ছোটো একটা মেয়ের মুখে সেল্ফ রেসপেক্ট নিয়ে কথা শুনে প্রিয়া সেখান থেকে চলে যায়। তার প্রায় সপ্তাখানেক পর প্রিয়া খান বাড়ি ছেড়ে সিলেট পাড়ি জমায়।

সেদিন ত্রয়ী বড্ড বেশিই খুশি হয়েছিলো। প্রজাপতির মতো ডানা মেলে উড়ার ইচ্ছা জেগেছিলো মনের কোণে।

খুশির চোটে দৌড়ে গিয়ে ইনানকে ঝাপটে ধরেছিলো।
মিনিট কয়েক পর ত্রয়ীর হুশ ফেরে। মুহুর্তেই ইনানকে ছেড়ে দিয়ে লজ্জায় চোখ নামিয়ে দেয়। হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে সে। ইনান থমকে দাঁড়িয়ে আছে। মুখে কিছু বলছেনা। নিশ্চুপ সে। লজ্জার আভা ছড়িয়ে পড়েছে ত্রয়ীর চোখে মুখে।

কাচুমাচু হয়ে ইনানের পাশ কেটে যাওয়ার সময় ফিসফিস করে বলে,
– ভালো….

ত্রয়ীর কথা শেষ হওয়ার আগেই ইনান চোখ কড়া করে তাকায় তার দিকে। এমন কঠোর চাহনি দেখে ত্রয়ী অস্বস্তিবোধ করে। মৃদু কন্ঠে বলে,
– ভালো হয়েছে প্রিয়া আপু চলে গেছে।
একথা বলেই সে ভোঁ দৌড়ে পলায়ন করে সেখান থেকে।

সেদিনের কথা মনে করে ত্রয়ী খিলখিল করে হেসে ফেলে। পিছনে দাঁড়িয়ে ইনান সবটা দেখছে। সূর্য ডুবে গেছে কিন্তু তার রেশটুকু রয়ে গেছে। আকাশ মৃদু আলোয় সজ্জিত। এমন আলোতে ত্রয়ীকে দেখতে বেশ লাগছে। ত্রয়ী উঠে দাঁড়ায় বাসায় ফিরার জন্য। ঘুরে দেখে ইনান দাঁড়িয়ে আছে।

ত্রয়ী চোখ নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে,
– আপনি? কখন এলেন?
– হলো বেশ কিছুক্ষন।
– তো চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিলেন কেন?
– এমনি। এই মুহুর্তে কেন জানি চুপ থাকতেই ভালো লাগছে।

নিচ থেকে তনয়ার কন্ঠ ভেসে আসছে। মায়ের গলা পেয়ে ত্রয়ী ইনানের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিচে নেমে আসে।

____________________________________________________________

রাত এগারোটা বেজে দশ মিনিট। রাবেয়া হক ইনানের রুমে আসেন। ইনান রকিং চেয়ারে বসে আছে। চোখেমুখে অস্থিরতার ছাপ পড়ে আছে। মাকে দেখে খুব জোর করে হাসি টেনে আনে সে।

তা দেখে রাবেয়া হক বলে,
– এখনো ঘুমোচ্ছিস না কেন?
– মা তুমি একটু বসবে আমার পাশে?

ইনানের মুখে এমন কথা শুনে রাবেয়া হক অবাক হন। ইনান রকিং চেয়ার থেকে উঠে এসে মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে।

ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে তিনি বলেন,
– কি হয়েছে বাবুসোনা?

ইনান কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থেকে বলে,
– মা আমি সব কিছু আবার নতুন করে শুরু করতে চাই।
– নতুন করে শুরু করতে চাস বলতে?
উৎকন্ঠিত কন্ঠে কথাখানা বলেন রাবেয়া হক।
– বিয়ে করতে চাই।

ছেলের কথা শুনে রাবেয়া হকের চোখ ছলছল করে উঠে। মুখের ভাষা যেনো হারিয়ে ফেলেছেন তিনি। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে রাবেয়া হক বলে,
– কাউকে পছন্দ হয়েছে তোর?

ইনান মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দেয়।
– কাকে?
ইনান ইশারায় চারপাশে নজর ঘুরিয়ে মিটিমিটি হেসে চোখ নাচায়। ছেলের দিকে তাকিয়ে রাবেয়া হক প্রসন্ন হাসি দিয়ে বলে,
– ত্রয়ীকে?
– হুম।

আনন্দে আত্মহারা হয়ে রাবেয়া হক ইনানের রুম থেকে বেরিয়ে যান। কথাটা বলার জন্য মোস্তফা হকের কাছে যান। কিন্তু এতোক্ষণে মোস্তফা হক গভীর ঘুমে তলিয়ে গেছেন তাই আর তাকে ডেকে বিরক্ত করেন না তিনি।

___________________________________________________________

সন্ধ্যার কিছুক্ষন পর ত্রয়ীকে ডেকে পাঠায় ইনান। হঠাৎ করে ইনানের ডাক পেয়ে ত্রয়ীর মনে ভাবান্তরের সৃষ্টি হয়। উদাস মনে, দ্রুত পায়ে ছাদে উঠে। ছাদের কার্ণিশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে ইনান। ত্রয়ীর উপস্থিতি বুঝতে পেরে পিছন ঘুরে তাকায়।

হালকা কেশে বলে,
– তোমার সাথে জরুরি কিছু কথা আছে।
– কি কথা?
– আমার অতীত সম্পর্কে কিছু কথা।

অতীতের কথা শুনে ড্যাবড্যাব চোখে ত্রয়ী ইনানের দিকে তাকায়। তা দেখে ইনান বলে,
– কি হলো এমব ভাবে তাকিয়ে আছো কেন?
ত্রয়ী চোখ নামিয়ে বলে,
– না তেমন কিছু না। নিজ থেকেই অতীত বলতে চাচ্ছেন তাই অবাক হচ্ছি।

ইনান মৃদু হেসে বলে,
– অবাক হওয়ার কিছু নেই। আমি এই ক’মাসে বুঝতে পেরেছি আমার প্রতি তোমার একটা দূর্বলতা তৈরি হয়েছে। তাই, তুমি কোনো বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমার বিষয়ে সবটা জানার অধিকার আছে তোমার।

ইনানের মুখে নিজের দূর্বলতার কথা শুনে হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়। লজ্জায় সর্বাঙ্গে কাঁপন ধরে। ঠোঁট টিপে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকে সে। কথাগুলো কণ্ঠনালীতে এসে জমাট ধরেছে। মুখ ফুটে কিছু বলার পরিস্থিতিতে নেই ত্রয়ী। অবচেতন মন নিজের অজান্তেই নেচে উঠে।

মুহুর্তেই আবার থেমে যায়। অজানা ভয় এসে বুকে হানা দেয়। শ্বাসরুদ্ধকর অনুভূতি হয় ত্রয়ীর কন্ঠে।
তোতলানো গলায় বলে,
– আমি প্রস্তুত আপনার অতীত শোনার জন্য। তারপর না হয় বাকি কথা হবে।

হঠাৎ করেই ধমকা হাওয়া বয়ে চারদিকে। ত্রয়ীর এলোমেলো চুল উড়তে থাকে। ইনান দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।
সেই দীর্ঘশ্বাস বাতাসের সাথে মিশে একাকার হয়ে যায়। ইনান বলে,
– তাহলে শুনো!
.
.
চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here