#বেখেয়ালি_মনে
#লেখনীতে- Ifra Chowdhury
পর্ব-২৫
.
.
ইনান, ত্রয়ী ছাদে দোলনায় বসে আছে। আজ যেনো পাশাপাশি বসতে অন্যরকম অস্বস্তি হচ্ছে ত্রয়ীর। মৃদু বাতাস বইছে তবুও ঘেমে একাকার হয়ে যাচ্ছে সে। ইনান খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সেগুলো পর্যবেক্ষন করছে আর মিটমিট করে হাসছে। ইনান নিশ্চুপ! ত্রয়ীও নিশ্চুপ! শুধু দু’জনের নিঃশ্বাসের শব্দ গুলো শুনা যাচ্ছে। ত্রয়ী এলোমেলো নিঃশ্বাস ছাড়ছে।
নীরবতা ভেঙে ইনান বলল,
– এতো লজ্জা পাচ্ছো কেন? এখনও তো লজ্জা পাওয়ার মতো কিছু করিনি আমি।
ইনানের কথাটা ত্রয়ীর কান অবধি পৌঁছাতেই সে ড্যাবড্যাব চোখে ইনানের দিকে তাকায়। তার চাহনিতে মিশে আছে লজ্জা। লজ্জায় কানের লতি গরম হয়ে গেছে। ফর্সা মুখ লাল রঙে ছেয়ে গেছে। কন্ঠে কথা নেই তার। ব্যস্ত পায়ে উঠে দাঁড়ায় সে। পিছন দিক থেকে ইনান হাত ধরে ফেলে।
ত্রয়ী শীতল গলায় বলে,
– ছাড়ুন আমায়। বাসায় যেতে হবে, দেরি হয়ে যাচ্ছে।
ইনান উঠে দাঁড়ায়। ত্রয়ীর বাঁধা চুল উন্মুক্ত করে দেয়। তার চুল পিঠ ছাড়িয়ে কোমর অবধি গিয়ে ঠেকে। ইনান বিস্ময় চোখে তাকিয়ে আছে সেদিকে।
আশ্চর্যান্বিত কন্ঠে বলে,
– এতো লম্বা চুল তোমার? অথচ, সেটা এতোদিনে খেয়াল করলাম আমি।
ইনানের ব্যবহারে ত্রয়ী হকচকিয়ে যায়। নিজ মনে বলে,
– মানুষটা করছে কী? এমন করলে তো শ্বাস বন্ধ হয়েই মরে যাবো!
ইনান ধীরে ধীরে ওর মুখ ত্রয়ীর কানের কাছে এগিয়ে নিয়ে আসে তারপর ফিসফিস করে বলে,
“এলোকেশী শুনছো তুমি?
জীবনে বহুবার প্রেমে পড়েছি আমি,
বলবো না, আমার প্রথম প্রেম তুমি!
তবে সে প্রেম ক্ষনিকের ভালো লাগা
কিংবা, চোখের তৃপ্তির অসম্পূর্ণতা।
তবে, তোমার মাঝে প্রেমের গভীরতা দেখেছি,
তোমার ছায়ার মাঝে নিজের অস্তিত্বের সত্তাকে আবিষ্কার করেছি!”
ত্রয়ীর নিঃশ্বাস আটকে আসছে। লজ্জায় গুটিসুটি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এলোমেলো উন্মুক্ত চুলগুলো চোখের উপর এসে পড়ছে। সে দ্রুত পায়ে ইনানের কাছ থেকে সরে দাঁড়ায়। ইনান তার মাতাল করা কন্ঠে আবার বলতে শুরু করে,
“মায়াবতী শুনছো তুমি?
তোমার মায়ার কবলে পড়ে প্রেমকে নতুন ভাবে জেনেছি,
তোমার ছায়ার ইশারায় প্রেমকে প্রেম থেকে আরো বেশি কিছু ভেবেছি।
প্রেম কেবল মোহের সন্ধিমাখা কাব্য,
তাই তুমি আমার কেবল-ই নও প্রেম ময় ছন্দ!
তুমি হলে আমার নিশি কুটুমের ন্যায় আগন্তক ভালোবাসা,
তুমি আমার অপূর্ণ জীবনে পূর্ণাঙ্গ প্রাপ্তির আকাঙ্ক্ষা!”
ইনান থামে। ত্রয়ীর কাছাকাছি এসে ওর মুখের দিকে তাকায়। গোলাপি ঠোঁট দু’টো থরথর করে কাঁপছে। ইনানের খুব করে ইচ্ছে করছে ঠোঁট দু’টো ছুঁয়ে দিতে। কিন্তু পরক্ষণেই আবার নিজেকে সামলে নেয়। ত্রয়ী লজ্জায় চোখ মেলে তাকাতে পারছেনা।
বিভ্রম কন্ঠে নিজেকেই আপন মনে বলে,
– এমন কন্ঠে কবিতা শুনলে বেশিদিন লাগবে না তোর পাগল হয়ে যেতে ত্রয়ী।
ইনান হেসে ফেলে ত্রয়ীর বিড়বিড় করে কথা বলে দেখে। তারপর আবার কাব্যিক কন্ঠে বলে,
“লজ্জাবতী শুনছো তুমি?
বলবোনা তুমি আমার প্রথম ভালোবাসা,
তুমি হলে আমার শেষ ভালোবাসা।
স্নিগ্ধময়ী শুনছো তুমি?
আমি এই ষোল বছর বয়সী কিশোরীর সরলতায় ঘেরা স্নিগ্ধতার প্রেমে পড়েছি! ”
ত্রয়ী চোখ মেলে তাকায়। লজ্জায় একদম লজ্জাবতী হয়ে গেছে। জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। ইনান তার চোখাচোখি হয়ে দাঁড়িয়ে বলে,
– হ্যাঁ! তুমি আমার স্নিগ্ধময়ী। ভালোবাসি তোমায়, ভালোবাসি খুব!
ত্রয়ী আর এক মুহুর্তও সেখানে দাঁড়ায় না। দৌড়ে পালায় সেখান থেকে। না হলে লজ্জায় সেখানেই দম বন্ধ হয়ে মরে যাবে সে।
ইনান হাত বাড়িয়ে ত্রয়ীকে ধরার ব্যর্থ চেষ্টা করে। তারপর আপন মনে হেসে বলে,
– লজ্জাবতী আমার।
__________________________________________________________
ডিনানের পর ইনান ত্রয়ীর ফ্ল্যাটে আসে। তার চোখ দু’টো এদিক ওদিক তাকিয়ে নিজের মানুষটাকে খুঁজে যাচ্ছে সেই তখন থেকে। কিন্তু বারংবার ব্যর্থ হচ্ছে সে। ত্রয়ী ড্রইংরুম বা ডাইনিং রুমের আশেপাশে নেই। তাই ইনান ব্যস্ত পায়ে ত্রয়ীর রুমের দিকে পা বাড়ায়।
এর আগে বহুবার এসেছে এই ফ্ল্যাটে কিন্তু ত্রয়ীর রুমে কখনো যাওয়া হয়নি। রুমের দরজা হালকা ভেজানো। ইনান উঁকি দিয়ে রুমের ভেতরটা দেখে নেয়। ত্রয়ীকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। হয়তো ব্যালকনিতে আছে ভেবে সে রুমে প্রবেশ করে।
রুমের ভেতরে এসে সে চমকে যায়। বড্ড অগোছালো হয়ে আছে রুম। ইনান অগোছালো রুম একদম পছন্দ করে না। সে ছেলে হলেও বড্ড গোছালো স্বভাব তার।
কিছুক্ষণ রুমের চারপাশে তাকিয়ে ব্যালকনিতে যায় রুমের মালকিনকে খুঁজতে। কিন্তু মহারাণী ব্যালকনিতেও নেই। হয়তো ওয়াশ রুমে আছে ভেবে ইনান রুমে এসে ত্রয়ীর বেডে বসে। পাঁচ মিনিট বসার পর তার দম বন্ধ হয়ে আসে এমন অগোছালো রুম দেখে। তারপর নিজেই রুম গোছাতে শুরু করে।
হঠাৎ করে ইনানের চোখ ত্রয়ীর ড্রেসিং টেবিলের উপরে থাকা একটা রুমালের দিকে। সে হন্তদন্ত হয়ে হেঁটে গিয়ে রুমালটা হাতে নিজের নাকের কাছে নিয়ে ধরে। ত্রয়ীর গন্ধ পাচ্ছে ও এই রুমালে।
দরজার ওপাশে কারো পায়ের আওয়াজ পেয়ে তাড়াতাড়ি করে পকেটে পুরে নেয় সে রুমালটা। ত্রয়ী হনহন করে রুমে ঢুকেই ইনান দেখে অবাক হয়ে যায়।
বিস্মিত কন্ঠে বলে,
– আপনি?
– তোমাকে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছিলো, তাই চলে এসেছি।
– হঠাৎ আমাকে দেখতে ইচ্ছে হলো কেন?
কিঞ্চিৎ ভ্রু কুঁচকে ত্রয়ী জিজ্ঞেস করে।
– এমা! হঠাৎ কোথায়? আমার সবসময়-ই ইচ্ছে করে তোমাকে দেখতে। তোমাকে কাছে পেতে।
শেষে কথাটুকু শুনে ত্রয়ীর গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠে লজ্জায়। অন্যদিকে ফিরে বুকের উপর হাত রেখে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। তারপর মিইয়ে যাওয়া গলায় বলে,
– আপনি নির্লজ্জ এটা জানেন আপনি?
ইনান মিটমিটিয়ে হেসে বলে,
– জানি তো, আর সব প্রেমিক পুরুষ-ই তাদের প্রেমিকার কাছে নির্লজ্জই হয়।
ত্রয়ী চোখ রাঙিয়ে ইনানের দিকে তাকিয়ে বলে,
– আপনি শুধু নির্লজ্জ না। আপনি হচ্ছেন চরম নির্লজ্জ!
ত্রয়ীকে ক্ষেপাতে পেরে ইনান হেসে ফেলে। হাসি দেখে ত্রয়ী চোখ কড়া করে বলে,
– আপনি যাবেন এখান থেকে?
– না গেলে কী করবে?
– চুল টেনে ছিড়ে ফেলবো। আর নয় হয় খামচি দিবো।
ত্রয়ীর এমন কথা শুনে ইনান দুষ্টুমির ছলে ইনান বলে,
– আর তুমি যখন আমায় খামচাতে আসবে তখন কোলে তুলে নিয়ে পুরো বাসা ঘুরাবো তোমায়।
ইনানের কথা শুনে ত্রয়ী ভড়কে যায়। ইনান রুম থেকে বের হওয়ার আগেই সে নিজেই গটগট পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
.
.
চলবে।