বেলির_কথা (১১)

#বেলির_কথা (১১)

বেলি মিতুকে তোলে ঘরে আনে।মিতু কাপড় চেঞ্জ করে নেয়।
কিছুক্ষণ পর মিতুর কোমড়ে ব্যথা অনুভব করে।
‘বেলিরে আমি শ্যাষ। ‘
‘ব্যথা করছে?’
‘হ্যা রে।’
‘ঠিম আছে তুমি রেস্ট করো।একটা কাজে ও হাত দিবেনা।’
‘কি বলিস?নাহ আমি পারব।’
‘কি বললাম?’
‘ঠিক আছে।’

বেলি মিতুকে একটা কাজ ও করতে দেয়না।
মিতু উঠতে নিলেই বেলি রেগে যায়।
.
.
কয়েকদিনের মধ্যে বেলির জীবন পালটে গেলো।মায়ের অভাব এর কথা মাথায় আসেনা।বেলি কখনো বুঝে নি যে বোনের মতো কেউ ও এত আপন হতে পারে।বেলির বড়বোন ছিল না কিন্তু ভাবি নামক একজন বড়বোন পেয়েছে।সারাদিন দুজনে গল্পসল্প করে দিন কাটিয়ে দেয়।ভার্সিটিতে তেমন যায় না বেলি। বাড়িতেই পড়া কমপ্লিট করে।
.
.
শাহেদ বাজারে গিয়েছিল।বাজার থেকে ফিরছিল।ফেরার পথে গ্রামের একজন চাচাবয়সী লোকের সাথে দেখা হয়।
‘ কি রে শাহেদ যে, ভাল আছিস?’
‘জ্বি ভাল আছি।’
‘তোকে একটা কথা বলব বলব করে বলা হয়না।’
‘কি কথা বলেন না চাচা?’
‘তোর বোনের কথায় বলার ছিল।মেয়েটাকে আর কদিন বাসায় রাখবি?এবার বিয়ে-শাদীর কথা ভাব?’

শাহেদ চুপ করে থাকে।
‘দেখ বয়স বেড়ে গেলে কিন্তু কেউ আর বিয়ে করতে চাইবে না।’
‘আচ্ছা আমি আপনার কথা ভেবে দেখব।’
‘আমার এক পাত্রের সন্ধান আছে।ওদের একজন ভাল মেয়ে লাগছে, যোগাযোগ করবি?’

শাহেদ সায় দেয় এতে।পাত্রের ফোন নাম্বার আর ঠিকানা নেয়।
তারপর বাসায় চলে আসে।বেলি আর মিতু তখন গল্প করছিল।

মিতু শাহেদ থেকে বাজারের ব্যাগ হাতে নিয়ে রান্নাঘরের দিকে যায়।শাহেদ বেলির পাশে বসে।
‘আচ্ছা বেলি একটা কথা জিজ্ঞেস করি?’
‘বলো?’
‘তোর কেমন ছেলে পছন্দ?’

বেলি একটু ভেবে নিয়ে বলে,
‘সাধারণ মানুষ, সৎ আর ভাল ছেলে।’
‘আর গায়ের রঙ?’
‘সব ই আল্লাহর সৃষ্টি।আমি অপছন্দ করার কে?’

শাহেদ পাত্রের সাথে যোগাযোগ করে।ফোনে পাত্রর ছবি দেখে।ভাল লাগে।পাত্রকে বেলির ব্যপারে বলে।তাদের একজন ভাল মেয়ে খুজছিল বলেই তারা জানায়।
.
রাতের দিকে বেলির একটা ছবি পাত্রদের ফোনে পাঠায়।কিছুক্ষণ পর তারা কল করে জানায় যে, তাদের গায়ের রঙ আরেকটু উজ্জ্বল লাগবে।

শাহেদ কিছু মনে করেনা।আল্লাহ যার ভাগ্য যাকে রেখেছে তার সাথেই বিয়ে হবে।
.
.
আজ বেলি ভার্সিটি যাবে।বোরকা পড়ে নেয়।মিতু বলে,
‘কবে আসবি?’
‘বিকেলের দিকে।’
‘কি বানিয়ে দিবো বল?’
‘কিছু বানাতে হবেনা।’
‘এতক্ষণ উপোস কিভাবে থাকবি?’
‘এসব আমার অভ্যাস আছে।’
‘বললেই হলো?’

মিতু রান্নাঘরে যায়।পরোটা ভেজে নেয়।তারপর ভাজি করে একটা টিপিনে নেয়।ততক্ষন এ বেলি বের হয়ে যাচ্ছে।

মিতু হাত ধরে বলে,
‘ধর সময় করে মনে করে খেয়ে নিবি?’
‘তুমি আবার এত কষ্ট করতে গেলে কেন?’

মিতু চুপ করে থাকে।বেলি হেসে মিতুকে জড়িয়ে ধরে।

ভার্সিটিতে বেলির অনেক বান্ধবি হয়েছে।দুইজন বেশি ভালো বান্ধবি।এদের মধ্যে একজন হিন্দু ধর্মের,নাম পূজা সে বিবাহিত।আরেকজন মুসলিম সে ও বিবাহিত,নাম জান্নাত।

তারা বেশিরভাগ সংসারের গল্প করে। মাঝে বসে বেলি সব কথা শুনে।দুজনের ই একটা অভিযোগ বিয়ের আগে তাদের পড়াবে বলেছে কিন্তু এখন কাজ করতে করতে তাদের পড়ার সুযোগ দেয়া হয়না।আর ননদের সাথে শুধু ঝামেলা হয়।ননদ কাজ করেনা, তাদের সব কাজ করে করে দিন যায়।আর ননদ সারাক্ষণ পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত থাকে।

বেলি বলে,
‘তোমাদের শশুড় বাড়িতে কে কে আছে?’

পূজা বলে,
‘আমার হাসবেন্ডরা একভাই একবোন,আর শাশুড়ি আছে।’

জান্নাত বলে,
‘আমার হাসবেন্ডরা দুইভাই,একবোন।শশুড় শাশুড়ি আছে।’

তখন বেলির মনে পড়ে তার ভাবির কথা।বেলি বলে,
‘আচ্ছা তোমরা কি বাপের বাড়ি গেলে কাজ করো?’

জান্নাত বলে,
‘নাহ ভাবি আছে।ভাবি সব করে।’
‘একটা ও হেল্প করো না?’
‘কেন করবো?ভাবির সংসার ভাবি ই তো সব কাজ করবে।তাছাড়া শশুড় বাড়ি থেকে যাই কাজের জন্য নাকি?’
‘বিয়ের আগে হেল্প করতে?’
‘নাহ আম্মু করতে দিতো না।’

বেলি হেসে বলে,
‘আচ্ছা তাহলে এটা যদি ভেবে নাও তবে এটাও তোমার সংসার,তাই কাজগুলো ও তোমার।’
‘কিন্তু তাই বলে মাঝেমধ্যে হেল্প করতে ই পারে?’

পূজা বলে,
‘আমি ননদের সাথে তেমন কথা ও বলিনা।ভাল লাগেনা কেমন যেন দেখতে ও?’
‘কেমন দেখতে?’
‘বলতে পারব না তোমাদের।অগোছালো মেয়ে একটা।’

বেলি বলে,
‘তুমি ননদের ভাল করে কথা ও বলোনা সে কেন তাহলে তোমার কাজে সাহায্য করবে?তুমি তাকে পছন্দ ও করোনা তাই তোমার কষ্টে ও সে মজা পায়।’

জান্নাত বলে,
‘আমি আমার ননদকে মোটামুটি দেখতে পারি।কিন্তু অই যে শশুড় শাশুড়ি তাকে একদম ই কাজ করতে দেয়না।’
‘এটা স্বাভাবিক। তুমি যখন বাপের বাড়ি ছিলে তখন তোমার বাবা মা ও এমন করতো।তাই না?তুমি ননদের সাথে মিশবে।ওর ভাল মন্দ দেখবে।ওর সাথে বন্ধুর মতো আচরণ করবে। একদিন না একদিন ওর ও হেল্প করতে মন চাইবে তোমাকে।’

‘নাহ দুনিয়া অনেক কঠিন।ভালবাসা দিলেও অনেক সময় ভালবাসা পাওয়া যায়না।’

‘আচ্ছা তাই যদি হয় মনে অভিযোগ ও রেখোনা।আশা ও রেখোনা।যত আশা কম রাখবে জীবন তত সুন্দর ও লাগবে।সময় নিয়ে কাজকে ভাগ করে ফেলবে।দেখবে সব সহজ লাগতেছে।আর ননদের বিয়ে হয়ে গেলে অথবা না থাকলে,কাজগুলো ত তোমাকেই করতে হতো তাই না?সে ভেবে অ তো মন খারাপ চলে যায়।’

পূজা বলে,
‘হ্যা ঠিক,জীবনে আশা রাখতে নেই।যত আশা কম রাখা যায়,ততই জীবন সুন্দর।আর সৃষ্টিকর্তা তো আছে ই।আর যদি জীবনে সুখ নাই বা পেলাম।না হয় সুখ টা স্বর্গে নিবো।’

তিন বান্ধবি কথা বলতে বলে স্যার চলে এসেছে।
.

টিফিন টাইমে বেলি টিফিন বের করে।জান্নাত জিজ্ঞেস করে,
‘কে দিয়েছে এসব? মা নাকি?’

বেলি তখন বলে,
‘তোমাদের বলা হয়নি।আমার বাবা মা কেউ নেই।আমার ভাই ভাবি আছে।ভাবি বানিয়ে দিয়েছে।’

তারপর মিতুর নামে অনেক গল্প হলো।জান্নাত আর পূজা অবাক হয়ে বেলির দিকে তাকিয়ে থাকলো।
জান্নাত বলে,
‘আজকাল এমন মেয়ে আছে?এত সুন্দর ব্যবহার?তোমার ভাবি সুন্দরী হয়েও অহংকার দেখায় না?’

‘হ্যা আছে।যার মন মানসিকতা সুন্দর হয় সে তো সুন্দর হবে।সারা দুনিয়ায় একশ তে এই একজন ই থাকে এমন সুন্দর।আফসোস সবার মন যদি এমন সুন্দর হতো।’

‘আমি আসলে এমন করে কখনো ভেবে দেখিনি।আসলেই সব নিজের ভাবনা আর মন মানসিকতার উপর সব নির্ভর করে।’

বেলি বলে,
‘জানো আমার আম্মা বলত সংসার এ একটু আধটু ঝামেলা হয়।ঝগড়া কখনো সমাধান হয়না।তবে ঘরের কর্তী ঠিক থাকলে অনেক সময় ঝামেলা কম হয়।একই স্থানে থাকতে গেলে সবাইকে একজন আরেকজনকে বুঝতে হবে। বন্ধুর মত আচরণ করা দরকার।ননদদের উচিৎ ভাবির সাথে মিলেমিশে থাকা।ভাবিদের ও তাই।’

জান্নাত হেসে বলে,
‘তুমি খুব ভালো মেয়ে আসলেই।’

বেলি হাসে।পূজা বলে,
‘তোমার মতো ফ্রেন্ড সত্যি ভাগ্যের ব্যপার।’
‘তেমন কিছু ই নয়।আমি আমার আম্মার কাছ থেকে সংসারের গল্প শুনতে শুনতেই এসব ধারণা করেছি মাত্র।’
‘তোমাকে তোমার আম্মা খুব ভালবাসত তাইনা?’

বেলি চুপ হয়ে যায়।

ক্লাস শেষে বেলি ভার্সিটি থেকে বের হয়।
.
.
মিতু বাসায় একা বসে আছে।বেলি ছাড়া কিছুই ভাল লাগছে না।শাহেদ ও কাজে গেছে।প্রতিবেশি এক মহিলা এসে মিতুকে বলে,
‘কেমন আছো বউ?’

মিতু সালাম দেয়।
‘আছি আলহামদুলিল্লাহ।’
‘আচ্ছা শুনো বাচ্চাকাচ্চা তাড়াতাড়ি নিয়ে ফেলো।বয়স বেশি হলে বাচ্চা আর হয়না।’

মিতু নতুন বউ তাই চুপ করে থাকে।

মিতুকে চুপ থাকতে দেখে মহিলা আবারো বলে,
‘শুনো তোমার জামাইকে কত বললাম বোনটারে বিয়ে দাও।বোনের ও বয়স বাড়ায় ফেলতেছে। একি তো কালো তার উপর পড়ালেখা করাচ্ছে।এসব দিয়ে কিছুই হয়না আজকাল।রূপ থাকতে হয়।ঘরে বড় মেয়ে থাকলে আয় বরকত ও চলে যায় বুঝলা?দেখবা তোমার সন্তান হতে সমস্যা হবে।কালো মেয়েরা অকল্যাণি হয় যে।তাই তুমি তোমার জামাই আসলে বেশি করে বুঝাবা যাতে তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দেয়?’

মিতু তবুও চুপ করে থাকে।আর কথাগুলো মন দিয়ে শুনে..

চলবে….

(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখা উচিৎ)

#তাহরীমা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here