বেলির_কথা (১৫)

#বেলির_কথা (১৫)

.
হাসনাত আর হাবিবা বাড়ি ফিরে আসে।হাসনাত বলে,
‘বোন তোকে ইচ্ছে করছে কোলে নিয়ে কিছুক্ষণ ঘুরি।আমার স্বপ্নের মেয়ে খুঁজে পেয়ে গেছি।’

হাবিবা কপাল কুঁচকে বলে,
‘স্বপ্ন ও দেখে ফেলছো?’
‘হ্যা।এবার তোর কাজ হচ্ছে একেবারের জন্য ই বেলিফুল কে আমার কাছে নিয়ে আসা।’
‘আচ্ছা দেখি।’
‘দেখি না?খুব শিঘ্রই।’
‘এত তাড়াহুড়া কিসের?তোমার কপালে থাকলে সে তোমার ই হবে।’

হাসনাত হাসিমুখে চলে যায়।হাবিবা ভাবতে থাকে কিভাবে কি করবে।তাদের গার্ডজিয়ান বলতে তো কেউ নেই ও।হাবিবা ছোট মানুষ তার কথা কি কেউ বিশ্বাস করবে?তারপর মনে হলো হাবিবার শশুড় শাশুড়িকে নিয়েই যাবে।

.
শাহেদ মন খারাপ নিয়ে বসে আছে।কিছুক্ষণ আগে হামিমের বাবা কল করেছিল।মিতু শাহেদ কে এমন মনমরা দেখে বলে,
‘বোনের বিয়ে হয়ে যাবে বলে মন খারাপ করছেন?’
‘নাহ।’
‘তাহলে?’
‘হামিমের বাবা কল দিয়েছিল।’
‘কি বলেছে?’
‘এ বিয়েটা হচ্ছেনা।’

মিতু ভুল শুনেছে মনে করে অবাক হয়ে তাকালো।এ আবার কেমন কথা?এতদূর কথা গড়িয়ে কি এমন হলো?

মিতু বলে,
‘কিন্তু কেন?’
‘হামিম নাকি বিয়ে করে ফেলেছে।তার আগেথেকেই গার্লফ্রেন্ড ছিল তার বাবা মা সেটা জানতো না।কথা পাকাপাকি হবার আগেই সে বিয়ে করেছে।তার বাবা আমার কাছে বারবার ক্ষমা চেয়েছে।’

মিতু চুপ হয়ে গেলো।বেলি কে কি বলবে?তার মনটা এবার একদম ই ভেঙ্গে যাবে।কিন্তু কিভাবে যে বলবে?
.
.
একদিন হাবিবা তার শশুড় শাশুড়িকে নিয়ে হঠাৎ করে বেলিদের বাড়িতে হাজির।বেলি সেদিন ভার্সিটি যায়নি।অচেনা মানুষ দেখে বেলির অবাক হয়।সালাম দেয়।হাবিবা বাইরে দাঁড়িয়ে থেকে বলে,
‘আমাকে চিনছেন?’

বেলি বলে,
‘না।’
‘অই যে সেদিন গাড়িতে পরিচিত হলাম।দাওয়াত দিয়েছিলেন?না বলেই চলে আসলাম হি হি হি।’

বেলি মনে করার চেষ্টা করে বলে,
‘অ হ্যা আপনি আপু?হায় হায় বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?ভিতরে আসুন?’

বেলি তাদের ভিতরে নিয়ে এসে মিতুকে ডাক দেয়।মিতু এসে সালাম দেয়।সবার সাথে পরিচয় করায়।মিতু নাস্তা রেডি করতে রান্নাঘরে যায়।

হাবিবা বলে,
‘এত তাড়াহুড়ার কিছু নেই।ভাবিকে এখানে আসিতে বলেন?’
বেলি বলে,
‘আমরা কি তুমি করে বলতে পারিনা?’
‘হ্যা অবশ্যই।আমি নিশ্চয় তোমার বড় হবো তুমি বলা যাবে।বড় হোক ছোট তুমি বলতে আমার ও বেশ ভাল লাগে।’

বেলিরা গল্প করতে করতে মিতু নাস্তা নিয়ে আসে।হাবিবার শশুড় শাশুড়ি মিতুকে দেখে খুব খুশি হয়।বেলি আপ্যায়ন এর ত্রুটি রাখেনা।

হাবিবার শশুড় মিতুকে বলে,
‘তুই আমার মেয়ের মতো।আমরা একটা প্রস্তাব নিয়ে এসেছি।রাখবি?’

মিতু বলে,
‘বলুন না আংকেল কি কথা?’
‘তোদের বেলিকে আমার হাবিবার ভাইয়ের জন্য নিয়ে যেতে চাই?’

বেলি চমকে উঠে,আর কিছু বলতে নিলে মিতু মুখ চেপে ধরে।
‘তা ছেলের সম্পর্কে বলুন?আর ছেলে রাজি কিনা সেসব ও বলুন।আমাদের মেয়ে কেমন সেসব জানে?’

হাবিবা হু হু করে হেসে উঠে।
হাসার কারণ ধরতে না পেরে সবাই বোকাবনে যায়।নিজে নিজে ত পাগলে হাসে।সবার ফেইস দেখে হাবিবা হাসি থামায়,তারপর সেদিন যে তারা এসেছিল সব শেয়ার করে।বেলি এসব শুনে খুব ই লজ্জা পায়।

মিতু বলে,
‘বেলির ভাই বাসায় নাই,উনি আসুক।কথা বলে আপনাদের জানাবো।’

হাবিবারা চলে গেলে বেলি বলে,
‘আমার তো বিয়ে ঠিক হয়ে আছে তাহলে?’
‘ওরা ক্যান্সেল করেছে।’
‘কেন?কি সমস্যা?’
‘ওদের ছেলের গার্লফ্রেন্ড আছে।’
‘আস্তাগফিরুল্লাহ।আল্লাহর কাছে শুকরিয়া।’
‘হ্যা সেটাই।আল্লাহর উপর ভরসা রাখ। শিঘ্রই তিনি এতকিছু দিবেন যে তুই খুশি হয়ে যাবি।’

বেলি সস্থি পায়।আবারো মনে মনে একই দোয়া করে।
.
শাহেদ আসলে মিতু সব কথা শেয়ার করে।শাহেদ এ বিয়ের ব্যপার নিয়ে খুবই ক্লান্ত।এখন আর আগের মতো আগ্রহ পায়না।মনে হয় এরা ও কিছু একটা বলে চলে যাবে।

কিন্তু হাবিবা নিজ থেকে কল করে করে বেলির সাথে কথা বলে।

মিতু একদিন হাবিবা কে হাসনাতকে সহ নিয়ে আসতে বলে।শাহেদ এর সাথে পরিচিত হোক তার ই তো বোন।

অতঃপর হাসনাতকে সহ বেলিদের বাড়িতে নিয়ে আসে হাবিবা।শাহেদ প্রথমে হাসনাতকে দেখে ই ভেবেছিল এ বিয়ে আর হচ্ছেনা।কোথায় এমন ছেলে আর কোথায় বেলি?

কিন্তু হাসনাত মানে মুগ্ধতা।
শাহেদ হাসনাতের সাথে কথা বলেই মন ফ্রেশ হয়ে গেলো।হাসনাত মাথা নিচু করে বলে,
‘যেকোনো কিছুর বিনিময়ে আপনাদের ফুল টা আমায় দিয়ে দিন ভাইয়া।প্লিজ?’

শাহেদ হাসনাতকে জড়িয়ে ধরে।অনেকদিন পর মনে হচ্ছে শাহেদ একটা ভাই পেয়েছে।

হাসনাত বেলি, মিতু আর শাহেদের জন্য গিফট নিয়ে আসে।

বেলির জন্য একটা বেলিফুল আর চিঠি নিয়ে আসে।তাদের আলাদা করে কথা বলার সুযোগ দেয়া হয়।

বেলি এর আগে ছেলেদের সামনে এভাবে একান্তে কথা বলেনি।হাত পা সব কাপাকাপি করছে।হাসনাত আগে বলা শুরু করে,
‘আমি বাঘ নাকি তেলাপোকা?এরকম ভয়ের কি আছে?’

বেলি ভয় পায়না,এটা প্রমাণ করার জন্য বলে,
‘শুনুন আমি তেলাপোকা একদম ই ভয় পাইনা।’
‘আচ্ছা একটা ধরে আনি তাহলে?’

বেলি চুপ করে থাকে।
‘এখন দেখে আপনাকে কত শান্ত লাগছে।’
‘হ্যা আমি ত শান্ত ই।’
‘কি জানি।তবে প্রচুর বোকা আর বাচ্চাস্বভাবের।’
‘একদম উল্টাপাল্টা বলবেন না।’
‘ঝগড়া করবেন নাকি?’

বেলি আবারো চুপ।হাসনাত কি বলবে ভেবে পায়না।এরকম চুপ থাকলে কি কথা মুখ দিয়ে আসে।
‘বলছি আমাকে আপনার কেমন লেগেছে?’

বেলি হাসনাতের দিকে একবার থাকায়।আর বলে,
‘আপনি অনেক সুন্দর।আমার বিপরীত জন।’
‘এই একদম এমন কথা নয়।আমার বেলিফুল ফুলের মতো ই সুন্দর।’

বেলির যে লজ্জা লাগলো কথাটা শুনে।হাসনাত ফুলটা এগিয়ে দেয়।আর বলে,
‘বেলির হাতে, বেলিফুল ই মানায়।’

বেলি ফুলটা হাতে নেয়।
‘আমাকে কি কিছুই বলার নেই?’

বেলি মাথা নাড়ায়,
‘না।’

হাসনাত নিজের লিখে আনা কাগজ টা এগিয়ে দেয়।

আর হাসনাত বলে,
‘বিধাতা আমাকে করেছে সুন্দর, শুধু তোমার জন্য,তুমি কি আসবে, ভালবাসবে আমাকে কখনো?
অগোছালো এ জীবনে গুছিয়ে রাখবে কি আমাকে?
আমি যে ভালবাসি,খুব ভালবাসি তোমাকে।’

বেলি হা করে হাসনাতের দিকে তাকিয়ে থাকে।তারপর কাগজের দিকে তাকায়।অনেক সুন্দর হাতের লিখা,
*ভালবাসি*
(লাভ)হাসনাতের বেলি’

বেলির জীবনে এমন কেউ আসবে সে ভাবতে পারেনা।এমন মুহুর্তে কি বা বলবে মাথায় আসছেনা।বেলি ফুলটা আবারো হাসনাতের দিকে এগিয়ে দেয়।হাসনাত ফুলটা হাতে নিতেই
তারপর মুহুর্তেই দৌড় দিয়ে কেটে পড়ে।হাসনাত হু হু করে হাসে।


আজ বেলির আকদ হয়ে যায়।কয়েকদিন পর ঘরোয়া করে অনুষ্ঠান করে একেবারের জন্য বেলিকে নিয়ে যাবে বলেই ঠিক হয়।হাসনাতরা সন্ধ্যার দিকে চলে যায়।তবে বেলির সাথে আজ তেমন কথা বলার সুযোগ পায়নি সে।মসজিদ থেকে এসে বেলিকে একটু করে দেখতে এসেই চলে যায়।তাছাড়া আশেপাশে অনেক মুরুব্বি মানুষ ছিলেন বলে হাসনাত আর আলাদাভাবে কথা বলতে চায়নি।

বেলির এত আনন্দের মাঝে মনটা ভার।মিতু পাশে এসে বসে বলে,
‘আম্মার কথা ভাবিস?’
‘হুম।’
‘আম্মা আজ তোকে এভাবে দেখলে কতই না খুশি হতো।এই নাহ একদম কাঁদবি না।শোন বাস্তবতার পথে হাটতে হাটতে তোর অনেক অভিজ্ঞতা হবে।অনেক ঝড় তুফান আসবে জীবনে তবে বলে রাখি,স্বামীর ভালবাসার কখনো অমর্যাদা করিস না।এমনভাবে ভালবাসবি তাকে, যাতে করে তুই কাফন পড়েই শেষবারের মতো সে ঘর থেকে বের হোস।তার আগে নয়।’

‘ভাবিই’

বেলি মিতুকে জড়িয়ে ধরে কাদে।শাহেদ দূর থেকে বেলিকে দেখে।ঘরটা খালি করে অবশেষে চলে যাবে বোনটা।শাহেদ চোখের জল মুছে বলে,
‘আম্মার কবরের কাছে যাবি?’

বেলি মাথা নাড়িয়ে ভাইকে জড়িয়ে ধরে।
.
শাহেদ কবরের কাছে গিয়ে জিয়ারত করে।তারপর বলে,
‘আম্মা তোমার কলিজার বিয়ে হয়ে গেছে তো।কত বড় হয়ে গেছে আম্মা।তুমি এত তাড়াতাড়ি কেন চলে গেলে আম্মা?’

বেলি ধপ করে নিচে বসে।হু হু করে কাদে।একজন মেয়েই জানে ‘মা ‘ শব্দটির গভীরতা।
‘কতদিন হয়ে গেলো আম্মা আমারে দেখেনা।এখানে একা শুয়ে আছে।এই বেলির কথা কি আর মনে পড়েনা?’

মিতু বলে,
‘চল উঠ বেলি।রাত হয়ে যাচ্ছে।’

বেলি কেঁদে কেঁদে বলে,
‘মিষ্টি আমার মায়ের হাসি,চাঁদ এর চেয়ে সুন্দর যে,
মাকে মনে পড়ে আমার, মাকে মনে পড়ে….

চলবে…..

#তাহরীমা

(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখা উচিৎ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here