ব্রোকেন হার্ট পর্ব-১৮

0
1304

#ব্রোকেন_হার্ট
লেখা : মান্নাত মিম

|১৮|
প্রতিবারের মতোই বেখেয়ালি আমি এন্ডারসনের ভালোবাসায় মগ্ন বিধায় ভুলে গেলাম তার ড্যাডকে আমাদের সম্পর্কের বিষয়ে জানিয়েছিল কি না জিজ্ঞেস করার কথা। তারপরে সময়-অসময়ের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে মনেও রইল না বিষয়টা। এরমাঝে এন্ডারসনের সাথে দেখাসাক্ষাৎ কমেও এলো। সময় হয়ে উঠল না তার দেখা করার এতোই ব্যস্ততা অফিসের। পরে জানতে পারি ব্যস্ততা আসলে কীসের ছিল!

টি-টেবিলে নাস্তা দিতে দিতে জিজ্ঞেস করলাম,

“এতো রাত করে যে, কিছু হয়েছে?”

ভেরোনিকাকে বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছে। এইতো শুনলাম, তার সাথে ক্রিশ্চানের সম্পর্ক ভালোই যাচ্ছে। তাই ক্রিশ্চানের সাথে টুকটাক কথাবার্তা বলি তাও আবার ভেরোনিকার অনুরোধে। কত ভালো বন্ধুত্ব ছিল আমাদের! এখন সেসব স্মৃতি কেবল স্মৃতিই হয়ে রইল। সামনের ভবিষ্যতে কার অবস্থান কোথায় হবে কে জানে।

“আ…আসলে একটা কথা কি শুনেছো?”

আমতাআমতা করে ভেরোনিকা প্রশ্ন করল। ভ্রু কুঁচকে এলো আমার তার এমন তোতলানো প্রশ্ন করায়। কী এমন কথা হতে পারে যে, সে এমন তোতলাচ্ছে? পরক্ষণেই উত্তর পেয়ে গেলাম।

“এন্ডারসনের ম্যারেজ ডেট ফিক্সড করার উপলক্ষে অনুষ্ঠান আয়োজন হবে। সেখানে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে তার ক্লাসের বন্ধুরা আলোচন করছিল। এখন এখানে এসে দেখি তুমি কিছুই জানো না।”

আমি নিশ্চল, নিথর, বিমূর্ত। ভাবাবেগ স্পর্শ করল না আমায়। বোধগম্য হলো না ভেরোনিকা কী বলছে! আমাকে এমন স্তব্ধ হয়ে থাকতে দেখে ভেরোনিকা ভয় পেয়ে গেল বেশ। আমাকে ঝাঁকিয়ে বলতে লাগল,

“ইমি! প্লিজ রিয়েক্ট করো, প্লিজ। এমন হয়ে থাকলে অসুস্থ হয়ে পড়বে।”

আমি অসাড়ে হওয়া হাত নিয়ে নিজের কাঁধ থেকে তার হাত সরিয়ে দিয়ে বললাম,

“তুমি বাড়ি চলে যাও।”
______

“মিথ্যে ভালোবাসা, মিথ্যে বলা কথাগুলোও মিথ্যে, মিথ্যে সব! তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা তো সত্য। তবুও তুমি কেন এমন করলে আমার সাথে?”

আমার প্রশ্নে এন্ডারসন থমকে চেয়ে রইল আমার মুখ পানে। আমার রিক্তবক্ষ তার চোখে ধরা পড়ল কি না জানি না, তবে সিক্ত হওয়া চোখ দেখে এগিয়ে এসে মুছে দেওয়ার প্রয়াস চালালে আমি সরে দাঁড়াই। তবুও ফের ধৈর্য ধরে সে এগিয়ে এসে চোখের জল মুছে আমার দু-হাত তার হাতের ভাজে নিয়ে বলল,

“তোমার অনুভূতি সত্য বলেই আমি আমার অনুভূতির সন্ধান পেয়েছি। আর তার সাথে তো তুমি-ই পরিচয় করে দিয়েছ। তাহলে মিথ্যে অপবাদ কেন দিলে?”

আমার মাথায় কেবল তার আর ক্যাপ্রিনার ম্যারেজের বিষয়টা ঘুরঘুর করছে। তার এত আবেগজনিত কথা আমার গরম হওয়া মস্তিষ্কের নিউরন সতেজ করতে সক্ষম হচ্ছে না। তাই তো তার ধরে রাখা হাত ও আটকে রাখা চোখের জল দুটোই ছুটে চলার চেষ্টায় রত। অথচ ফের নির্বিকার চিত্তে এন্ডারসন আমাকে বুঝিয়ে বলতে লাগল,

“সম্ভবত তুমি আমাদের ম্যারিজ অনুষ্ঠানের…”

গরম চোখে তাকিয়ে এবার মুখ খুললাম যা এতক্ষণ চুপচাপ বন্ধ হয়ে শ্রবণে ছিল,

“আমাদের ম্যারিজ অনুষ্ঠান! ওয়াও চমৎকার! অভিনন্দন আপনার আগাম ম্যারিজ লাইফের জন্য। ছাড়ুন আমায় এখন।”

সে তো ছাড়লই না আরো এগিয়ে আমার মুখের দিকে ঝুঁকে গিয়ে অধরে অপর অধরের আলতো স্পর্শ করিয়ে বলল,

“ভালোবাসি তো।”

আমার ভেতরকার আবদ্ধ হয়ে থাকা হাহাকারগুলো এবার চিৎকারে রূপ নিলো। আছড়ে পড়লাম তার বুকে। কিল-ঘুষি যা ইচ্ছে রাগ প্রকাশের মাধ্যমে সেটা জানান দিতে লাগলাম। অথচ সে আগলে নিয়ে মাথায় আদুরে স্পর্শ করতে করতে বলল,

“জানোই তো, ভালোবাসার প্রতি আমার নেগেটিভ মন্তব্য। কিন্তু সেটা আমূলে-পরিবর্তন করে সুন্দর অনুভূতির পরিচয় করিয়ে দিলে তুমি। এত ঘৃণ্য স্বাদের বিপরীতে মিষ্টি-মধুর বহু আকাঙ্ক্ষিত ভালোবাসা আমার মিথ্যে হওয়ার তো কথা নয়, তাই না?”

শান্ত হয়ে পড়ে রইলাম তার বুকে। অস্ফুটস্বরে গোঙানির কান্না করতে লাগলে আবারো বলল,

“শান্ত হও। অনুষ্ঠানে ড্যাডের জন্য খুব আশ্চর্যজনক সারপ্রাইজ প্ল্যান করে রেখেছি, তুমি শুনতে চাও?”

এন্ডারসনের কথায় মাথা উঁচিয়ে প্রশ্নাত্মক দৃষ্টি নিয়ে তাকাই।
______

বোঝাই যাচ্ছে আজ অনুষ্ঠান এই রাজপ্রাসাদের মতো অট্টালিকাতে। বাহারি সাজে সজ্জিত বাড়ির পায়ের সুইমিংপুলে পাড়ে বসে আছি। সুইমিংপুলে গা ভিজিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এন্ডারসন। তার ড্যাডের সাথে আমাকে আজ অনুষ্ঠানে পরিচয় করিয়ে দিতে নিয়ে আসাই সারপ্রাইজ; যেটা সেদিন সে বলেছিল। আমাকে আগে নিয়ে এলো অযথাই। বিরক্তি নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে,

“আমাকে কেন শুধু শুধু আগে আগে নিয়ে এলে?”

সাঁতরে সাঁতরে নীলাভ পানিতে ফর্সা দেহ নিয়ে ডুব দিয়ে অদূরে গিয়ে আবার আমার সমুখে এলো। পা ভিজিয়ে রেখেছিলাম এতক্ষণ উত্তর পেলাম না দেখে বাড়ির দরজায় তাকালে পোর্চের সিঁড়িতে এন্ডারসনের মেজো ভাই চুম্বনরত এক নারীর সঙ্গে। আমি সন্তর্পণে চোখ সরিয়ে নিলাম। এন্ডারসন তার ভাইদের সাথে বাড়িতে এসেই পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল। তাঁদের নির্বিকার ভঙ্গিমা ছিল। চোখ সরিয়ে সামনে তাকাতে তাকাতেই এন্ডারসন হেঁচকা টানে নিয়ে নিলো অতল পানির মধ্যে ডুব দিয়ে।

সোনালি রঙের পাথুরে কারুকার্য শোভিত পোশাক পরিধানের কারণেই না কি অজ্ঞাত কাউকে এন্ডাসনের বাহু ধরে চলতে দেখে সকলের নজর বিদ্ধ হচ্ছি আমি। পোশাকটা দিয়েছে এন্ডারসন। এজন্যই তখন সুইমিংপুলে সে আমাকে টেনে নিয়ে ভিজিয়ে দিয়েছিল। এন্ডারসনের ড্যাডও আমাদের দিকে ক্রুদ্ধ দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে রয়েছে।

“সে কে?”

“আমার ভালোবাসা ড্যাড।”

তার ড্যাড যা বোঝার বুঝে গেল। আমার পরিচয় জানতে চাইলেন তিনি। আমি ভয়ে ভয়ে নিজের বিষয়ে এ টু জেট সব বললাম। শুনে তিনি এন্ডারসনের উপর চিৎকার করে উঠলেন,

“তোমার মতিভ্রম হয়েছে। তার স্ট্যাটাস কি দেখোনি? দেখেছ মিলে আমাদের সাথে? শুধু নতুন পোশাক পরিধান করলেই সবকিছু বদলে যায় না।”

উনার চিৎকারে মেহমানদের সমাগম তৈরি হয়ে গেল। সাথে অনুষ্ঠানের বেয়ারা-ও ছিল। তাঁদের-ই মাঝে আমার মাম্মাকে দেখা গেল। তিনি এগিয়ে এসে আমাকে ধরে জিজ্ঞেস করলেন,

“এসব কী ইমোজিন!?”

তাঁর কথায় অবাকতার সাথে প্রশ্ন বিদ্ধ ছিল। যা তীর ফলার ডগায় বসে আমার হৃদয় চূর্ণবিচূর্ণ করে দিলো। আমি উত্তরে এখন কী দিবো? মাম্মামের দিকে চোখ তুলে তাকানোর মতো আমার সাহস হচ্ছে না। নিচের দিকে তাকিয়ে কান্না করছি। এন্ডারসন এগিয়ে এসে মাম্মামকে বলতে লাগল,

“আন্টি আসলে…”

তাকে কোন কথা বলতে না দিয়ে হাত উঁচিয়ে থামিয়ে দিলেন মাম্মাম। আমি দুঃখে, অপমানে জর্জরিত হয়ে মাম্মামকে সেখানে রেখে চলে দৌড়ে চলে আসতে নিলাম। সিঁড়ির পোর্চে এসে হাত ধরে পেছন থেকে এন্ডারসন আটকে দিলো। তার চোখে আকুতি ভরা তারারা জ্বলজ্বল করছে। অথচ আমার চোখে…!

“প্লিজ ইমোজিন। প্লিজ।”

“আ…আমি, আমি ভুল করেছি এন্ডারসন। আমি ভুল করেছি। আমার মাম্মামকে অপমানিত করেছি। আমাদের সম্পর্ক এখানেই শেষ।”

তার হাত ছেড়ে চলে এলাম নিজের পথ ধরে। শেষ স্পর্শ, শেষ সম্পর্ক।
_______

চলবে…

সকলের রেসপন্স কাম্য।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here