#ব্রোকেন_হার্ট লেখাঃ মান্নাত মিম |৪| “আগে বলবে তো।” “এখন তো জানলে। এখন তাহলে হেল্প করো।” “আচ্ছা, দেখি কী করা যায়।” “দেখি বললে হবে না তো ক্রিশ্চান। আমার জন্য অত্যন্ত জরুরি প্রয়োজন যেকোনো একটা কাজ। তাও আবার এই মাসের মধ্যেই। নাহলে লেখাপড়া ছাড়তে হবে। পার্মানেন্ট চাকরি করতে হবে, সেটাও কী মিলবে বলা মুশকিল। এখন তো তাও পার্টটাইম জব খুঁজছি।” বেশ চিন্তিত দেখা গেল ক্রিশ্চানকে। আমি কপাল চেপে বসে রইলাম। ইউনিভার্সিটি আজ না এসে পারলাম না। যদি কারো থেকে সাহায্য পাওয়া যায় এই আশায়। তবে ক্রিশ্চান ছাড়া আর কে আছে সাহায্য করার মতো। তাই তাকেই জানালাম বিষয়গুলো। সে তো বলল, দেখবে বিষয়টা। এখন দেখার মতো সময় আমার হাতে নেই। আর্জেন্ট দরকার। ক্যাম্পাসের সিঁড়ির মাঝে বসে দু’জন আলোচনা করছি। আবারো দেখা গেল এন্ডারসনকে। তাকে ঘিরে ছেলে-মেয়ে’দের হট্টগোল। “কী ব্যাপার ওখানে এত জটলা পাকানো কেন?” “এন্ডারসন বাস্কেটবলে ফাইনালে ওঠেছে।” “ওহ্, তাই। আচ্ছা উঠি আমি। তুমি কি যাবে এখন?” “হুম, চলো।” দ্রুতপদে চলে এলাম সেখান থেকে। আসলে এন্ডারসনকে চোখের সামনে ওভাবে দেখতে মন চাইছিল না। ওইযে দুর্বলতা! সে আমার মনের দুর্বলতা। তাই একপ্রকার তার থেকে পালিয়ে চলা, দূরত্বের সৃষ্টি করা। মনোযোগের সাথে ক্লাস শেষ করলাম। যদি-ও মনযোগটা কতটুকু ছিল ঠাওর করতে পারিনি। তবে পাশে ক্রিশ্চান থাকায় মনমস্তিষ্ক ডাইভার্ট কমই হয়েছিল। “আজ তোমাদের বাড়ি যাব ভাবছি।” ক্রিশ্চানের কথায় হালকা হাসলাম। বাড়িতে নিয়ে আপ্যায়ন করার মতো কিছু কী আছে না কি? নাহ, নেই। যাওয়ার সময় বাইরে থেকেই কিনে নিয়ে যেতে হবে। এমন সময় একটা মেয়ে এলো আমাদের বেঞ্চের সামনে। “তোমার নাম ইমোজিন?” আমি ঘাড় ঘুরিয়ে তার দিকে ফিরে তাকিয়ে মাথা নেড়ে সায় দিলাম। আমাকে চিনলো কীভাবে মেয়েটা? ক্লাসে এখনো পরিচিত হইনি সবার সাথে। “এন্ডারসন তোমায় ডাকছে।” ওহ্ গড! এন্ডারসন আমায় কেন ডাকবে? আজব তো! এদিকে মেয়েটা আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত ঘুরঘুর করে দেখছে। পাশে তাকিয়ে দেখলাম ক্রিশ্চানেরও একই অবস্থা। অবাকান্বিত চোখে চেয়ে রয়েছে সে। “তোমাকে এন্ডারসন ডেকে পাঠানোর কারণ কী?” ক্রিশ্চানের সরাসরি প্রশ্ন আমি হালকা কেঁপে উঠলাম। কেন এমন চোরাবস্থা আমার বুঝতে সক্ষম হলাম না। আমার আর এন্ডারসনের মাঝে তো কোন প্রেমের সম্পর্ক নেই যে এভাবে ভয়ভীতি থাকবে। সাহস নিয়ে দৃঢ়তার সাথে বললাম, “চলো দেখি কেন ডেকেছে।” মনে হয় সরাসরি তাকে সাথে নিয়ে যাওয়ার কথায় কৌতুহলী চেহারায় ভাঁটা পড়েছে। তাই সে বলল, “নাহ, তুমি-ই যাও। আমি অপেক্ষা করব।” মাথা নেড়ে ওঠে দাঁড়ালাম। ডাকতে আসা মেয়েটা তখন বলল, “বাস্কেটবলের কোর্টে আছে সে।” ______ আবারে সেই স্থানে, প্রথম দেখা, প্রথম প্রেমে পড়ার জায়গাটা। মানুষটাও এখানে একই অবস্থানে। তবে আলাদা, একদমই অন্যরকম তার আর আমার অবস্থান। মিলে না দু’জনের মাঝে কিছুই। উপরন্তু আমার একতরফা প্রেম, ভালোবাসা আর ভাবনাগুলো। সে তো বেখবর, অজানা। শুধু প্রথম দেখার বিব্রত দৃশ্যে এন্ডারসনের অবস্থান ছিল বলেই মুখচেনার হিসেবে ডাকা ও কথা হয়। “হেই, ইমোজিন অপস ইমি কাম হ্যায়ার।” এক পা দু পা করে এগিয়ে গেলাম এন্ডারসনের কাছে। বন্ধুদের সাথে কথা বলছিল এতক্ষণ ধরে। জার্সি গায়ে জড়ানো। মনে হয় মাত্রই খেলা শেষ করেছে। প্রেকটিস করছিল বোধহয়। আমাকে দেখে কথা দ্রুত সেরে ডাকল তার কাছে যাওয়ার জন্য। “কী ব্যাপার তোমাকে আজকাল দেখি দেখাই যায় না?” স্মিত হাসলাম। প্রায় সকলেই বলে, আমার হাসি না কি খুব সুন্দর, চমৎকার! এই মিষ্টি হাসি দেখে এন্ডারসন-ও একই কথাই বলল, “তোমার হাসি খুবই সুন্দর, মিষ্টি।” ফের হেসে জিজ্ঞেস করলাম, “ডাকলেন কেন বললেন না তো?” ভ্রু কুঁচকে এলো আমার কথায় এন্ডারসনের। মনে হয় প্রশ্নে সে মহা বিরক্ত হলো। হওয়াই স্বাভাবিক। যে কি না ইউনিভার্সিটির সকলের ক্রাশ, তার সাথে একটু কথা কিংবা পাত্তা পাওয়ার জন্য সকলেই মুখিয়ে থাকে। সেখানে আমি তার সাক্ষাৎ সংক্ষিপ্ত আকারে শেষ করতে চাচ্ছি। “আমার বাস্কেটবলের ফাইনালে তোমাকে আমন্ত্রণ জানাতে ডেকেছি।” “ওহ্!” বলেই আনমনা হয়ে গেলাম। চিন্তাভাবনা আসছে মাথায়। সে কেন তার ফাইনালে আমাকে আমন্ত্রণ জানাবে? সেখানে তো গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে যাবে, উৎসাহ পেতে। আমি তো তার কেউ নই। তাহলে? “কী হলো এত ভাবনা চিন্তা করার?” “আচ্ছা, থাকব।” মিনমিনে স্বরে বললাম। অথচ আমার একটুও থাকার ইচ্ছে নেই। যত বেশি তার থেকে নিজেকে দূর করতে চাইছি। সে যেন তত বেশি আমাকে তার কাছে টেনে নিচ্ছে। আসলে নিচ্ছে না জড়িয়ে যাচ্ছি। মন সারাক্ষণ তার-ই দিকে টানে। যেটা একদমই উচিত নয়, আমাকে পথভ্রষ্ট করতে এটাই যথেষ্ট। নাহ, তার থেকে দূরে দূরে থাকতে হবে। তার ফাইনালে তো আরো আগে যাব না। এন্ডারসনকে কোনো কথা বলতে না দিয়ে দ্রুততম পা চালিয়ে চলে এলাম সেখান থেকে। হয়তো আমার করা কর্মকাণ্ডে বিস্ময়াহত হয়ে দাঁড়িয়ে এন্ডারসন। তা কেবল অনুভব করলাম মাত্র। দেখার ইচ্ছে নেই, একদমই নেই। চলবে… আপনাদের গঠনমূলক মন্তব্যের আশায় অপেক্ষাকৃত।