#ব্রোকেন_হার্ট
লেখাঃ মান্নাত মিম
|৯|
আমার রুম চেনা এন্ডারসনের। সেদিন টমাসের সাথে দেখা করে কথা বলে বাড়ির আদ্যোপান্ত দেখে নিয়েছে সে। ফলে আমার রুমে জানালা গলিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি আমাদের।
“কথা শুনেছি না? এবার আমাকে আদর দাও।”
ঘামঝরা বিস্ফারিত দৃষ্টি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে এন্ডারসন। যেমন আমি বড়ো কিছু চেয়ে বসেছি তার কাছে!
“এভাবে তাকিয়ে আছো কেন, হু? প্রাণ চেয়েছি না কি? দাও আদর নাহলে কিন্তু আমি জানালা দিয়ে লাফ দেব।”
বলেই জানালার দিকে এগিয়ে গেলাম। তখন নিচ থেকে লাফ দিয়ে আমাকে এন্ডারসন জানালার ওপরে উঠতে বলেছিল। অথচ আমি ত্যাড়াবাঁকা হয়ে ঠায় ডাঁট হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। সেটা দেখে কাছে এসে এন্ডারসন আমাকে বদ্ধ আলিঙ্গনে নিয়ে নেয়। কানের খানিক নিচে উষ্ণ স্পর্শ এঁকে সরে দাঁড়ায়। আমি তখন নিভন্ত নয়নে বললাম,
“এভাবে চলে গেলে কেন? আরো আদর চাই।”
বাচ্চাদের মতো বায়না আমার মনে হয় আইসক্রিম চাইছি। আমার বাচ্চামো বায়না করা আবদারে এন্ডারসন জবাবে বলেছিল,
“এক শর্তে দেব রাজি?”
আমি মাথা নেড়ে সায় দিতেই সে বলল,
“দেখো, আমি কীভাবে ওপরে যাই।”
একলাফে জানালা পেরিয়ে রুমের ভেতরে প্রবেশ করল সে৷ আবার ক্ষনিকের মধ্যে লাফ দিয়ে নেমে এলো। আমাকেও সেভাবে যেতে বলল শর্তানুযায়ী। আমি-ও লাফ দিলাম নাগালই পেলাম না জানালার। সেটা দেখে আমার কোমর পেঁচিয়ে ওপরে জানালার নাগাল পাইয়ে দিলো এন্ডারসন। রুমে যেতেই সে-ও পিছন পিছন এলো।
এখন শর্তানুযায়ী আমার পাওনা চাইতেই তার রঙহীন ফ্যাকাশে মুখ দেখতে হচ্ছে।
“আরে বাবা! আদর দিচ্ছ না কেন?”
আমার জানালার পাশেই রাখা চেয়ার। সেটা একহাতে টেনে এনে আমাকে আরেক হাতে বসিয়ে পায়ের কাছে বসলো এন্ডারসন। মাথা হাত বুলিয়ে বলল,
“শোনো, দেখো কত রাত হয়েছে। এখন ঘুমানোর সময়, না? তোমার নিশ্চয় ঘুম পাচ্ছে? আমার-ও পাচ্ছে। তাই এখন কোনো কথা না বলে ঘুমানোই ভালো, ঠিকাছে?”
নেশার চূড়ান্ত পর্যায়ে আমি তাও আবার সামনে থাকা পাগল করা বলিষ্ঠ দেহের ডার্ক হ্যান্ডসাম ছেলে। এমতাবস্থায় ঘুম তো আসবেই না যেটা আসছে সেটাও এন্ডারসন হতে দিচ্ছে না। তাই আগের মন ভাঙার রেশটা যেন চলে এলো আমার মাঝে। সেই সুর ধরেই গুনগুনিয়ে কান্না করতে করতে বললাম,
“এখন যদি তুমি আদর না দাও তাহলে আমি চিৎকার করে কাঁদব।”
“আচ্ছা, আচ্ছা আদর করছি। তাও চিৎকার-চেঁচামেচি করো না। তবে চোখ বন্ধ করো।”
“না, বন্ধ করলে যদি তুমি চলে যাও।”
ঝুঁকে গিয়ে এন্ডারসনের কপালে কপাল ঠেকিয়ে আমার প্রশস্ত দুবাহু দিয়ে তার গলা জড়িয়ে ধরলাম। দু’জনের উষ্ণ নিঃশ্বাস একে-অপরের মুখমণ্ডলে আছড়ে পড়ছে। আবেশে আমার চোখ বন্ধ হয়ে এলো। আমি অন্যরকম অনুভূতির শীর্ষে অবস্থান করছি যখন, তখন এন্ডারসন তার গলা থেকে আমার হাত নামিয়ে আঙুলে আঙুল রেখে ওপরে তুলে ধরল। আলতো স্পর্শ করল আমার কপোলে তার ওষ্ঠ দ্বারা। একের পর আরেক গালেও পাগল করা স্পর্শ করতে করতে নেমে আসছিল গ্রীবাদেশে। পাগল করা স্পর্শ আমার নেশা চড়িয়ে মাতালাবস্থা যেন আরো করুণ করে দেয়। ফলে এন্ডারসনের আঙুলের মাঝে আমার আঙুলে চাপ বাড়ে সাথে নখের দাগ পড়ে। হঠাৎই গ্রীবাদেশের স্পর্শের ঝড় উদরে তুমুলভাবে তুলে আমার দেহের হেনস্তা করে। তখন আমি নিজের মধ্যে নেই। অবশীভাবে অসাড় হয়ে আসা শরীর ছেড়ে দেই তলিয়ে যেতে থাকে ভালোলাগার মূর্ছনায়।
________
ঘুম ভেঙে মাথা ভার ভার লাগছে। ঘাড় বাঁকা হয়ে আছে। সোজা করতে নিয়েই ঘাড় টান খায়। ফলে ব্যথাতুর শব্দ মুখ নিসৃত হয়। ধীরলয়ে চক্ষু মেলতেই নিজেকে আবিষ্কার করি চেয়ারে। মস্তিষ্কে খেয়াল আসছে না আমি এখানে কেন? কীভাবে কী? নানাবিধ চিন্তায় মগ্ন আমি হঠাৎ ‘বিপ বিপ’ শব্দ পেলাম। জানালার কোণে আবিষ্কার করলাম সেই শব্দের উৎসকে। মোবাইল! কার এটা? আমার তো নয়। চেয়ার থেকে ওঠে দাঁড়াতেই পা আমার টালমাটাল অবস্থা। মাথায় চক্কর কাটছে। তবুও নিজেকে খানিকটা সামলে নিয়ে এগিয়ে গিয়ে মোবাইল হাতে তুলে নিলাম। স্ক্রিনের এন্ডারসনের ছবি দেখেই বুঝে গেলাম এটা কার মোবাইল। তবে এখানে যে কীভাবে এলো সেটাই বোধগম্য আমার হচ্ছে না। নিজের ঘামে ভেজা শরীর ও এলকোহলের গন্ধে শাওয়ার নেওয়া জরুরি মনে করে সেদিকেই ধাবিত হলাম। শাওয়ারের ঝর্ণা ছেড়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে ভিজতে লাগলাম। তখনই আকস্মিকভাবে রাতের ঘটনাগুলো পর্যায়ক্রমে চোখের পাতায় ভেসে উঠতে লাগল। গতকালের রাতের ঘটনাগুলো নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ঘটায় সকালে মনে পড়তে সময় নিয়েছিল। তবে ভুলে যাওয়ার মতো ছিল না। নেশাগ্রস্থ অবস্থায় কী কী করেছি এন্ডারসনের সাথে সবকিছু মানসপটে ভেসে উঠতে লাগল। তার আদুরে ভঙ্গিতে আমাকে বুঝানো। আমার আদর চাওয়ার আকুলতা। তবে সে তা পূরণে অপারগতা-ও দেখতে পেলাম। তার স্পর্শে অসাড়তার সৃষ্টির সুযোগে সে আমায় ফেলে চলে গিয়েছিল। ডুকরে কেঁদে উঠলাম। আরো একবার আমাকে সে এভাবে ফেলে চলে গেল। আবারো! ঝর্ণার পানির শব্দপ বোবাকান্নার চিৎকার কেবল চারদেয়াল সাক্ষী রইল৷
চোখমুখ ফুলে লাল বর্ণ ধারণের ফলে নিচে আর নামলাম না। মাম্মাকে তো ফেস করার সাহসই পাচ্ছি না। একে তো টাকা জোগানে ব্যর্থতা উপরন্তু কালকের হয়ে যাওয়া ঘটনায় আরো বেশি মূর্ছায়িত আমি। বেশ সময় নিয়ে নিজেকে পরিপাটিরূপ দানে রেডি হলাম ইউনিভার্সিটির উদ্দেশ্যে। কারণ ক্রিশ্চানের কাছ থেকে নোট নেওয়া হয়নি। ছেলেটা না আবার আমার ওপর রেগে থাকে। অবশ্য রাগার কারণও রয়েছে ভয়ে ভয়ে আছি তাই। এত ভালো বন্ধু তাও আবার দুঃসময়ের। এভাবে হাতছাড়া হয়ে গেলে আমি তখন বিপাকে পড়ে যাব। নানান ভাবনাচিন্তার মাঝে এন্ডারসনের মোবাইলের কথা খেয়াল হলো। ইস! এটাকেও তো নিতে হবে৷ এন্ডারসনের হাতে ঠিকঠাকভাবে পৌঁছে দেওয়ার পর তার সাথের যোগাযোগ খতম আমার। লম্বা একটা দম নিয়ে প্রস্তুতি নিলাম তার সামনাসামনি হওয়ার।
________
“তোমার দেখি আজকাল খোঁজই নেই। কী ব্যাপার ডেটিং-ফেটিং এ আছ না কি?”
চেখ পাকিয়ে তাকাই ক্রিশ্চানের দিকে তার এমনতর ত্যাঁড়া বাক্য কর্ণগোচর হওয়া মাত্র। এতে বোঝাই যাচ্ছে যে, সে রেগে আছে আমার ওপর। তাই তো মধুর বাক্য ছেড়ে খোঁচা মার্কা বাক্য উগড়ে দিচ্ছে।
“দেখবে কী করে? দেখার মতো কি আর আগের নজরে তাকাও না কি?”
অভিমানে ভরা সুরেলা কণ্ঠে বললাম। যদি রাগটা কমে কিছুটা এই আশ্বাসে আশাবাী হয়ে। হলোও তাই।
“তোমার মোবাইল কোথায়? কল দিব কীভাবে?”
এই রে সেরেছে! মোবাইল আমার যে, ভেঙক চুরমার হয়ে ওপারে গমন করেছে সেটা বলার মতো অবস্থা নয়। যদি হতো তাহলে বলতাম। কিন্তু মোবাইলের কথার সাথে রাতের ঘটনাগুলোও বলতে হবে বিধায় শুধু বললাম,
“আর বলো না, চুরি গেছে।”
“কীহ্! কীভাবে? তুমি ঠিক আছ তো?”
উফ্! ছেলেটা না হাঁদারাম! বলার সাথে সাথে হাত ধরে টেনে টেনে দেখছে কোথাও আমার লেগেছে কি না।
“আহা, লাগেনি তো৷ তুমি অত চিন্তা করো না। আচ্ছা, শোনো জরুরি কথা আছে তোমার সাথে।”
হাত ছেড়ে দিয়ে উৎসুক দৃষ্টি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে ক্রিশ্চান। এদিকে আমি হাঁসফাঁস করছি কীভাবে বলল কথাটা। তবুও বলা উচিত আমার কারণ না বললে তাতে সমস্যা বাড়বে ছাড়া কমবে না।
“আসলে আমি ক্লাবের কাজটা আর করতে চাচ্ছি না।”
“কিন্তু কেন?”
এখন কারণ কী দেখাব ভাবছি। যেহেতু আমি চরম বিপদে পড়ে যেকোনো ধরনের কাজের জন্য ক্রিশ্চানের কাছে সাহায্য চেয়েছিলাম। সেহেতু এখন হঠাৎ মাঝে এসে কাজ ছেড়ে দেওয়ার মতো জুতসই কারণ উল্লেখ্য করতে হবে। কিন্তু এখানে কারণ যে এন্ডারসন সেটা বলা যাবে না। তাই সেদিন রাতের ঘটনা বললাম যেদিন তিনজন ছেলেগুলো আমার পথ আঁটকে ছিল। এন্ডারসনের বিষয়টা চেপে গিয়ে কোনরকম গুছিয়ে বলে দিলাম ঘটনা। সেটা শুনে ক্রিশ্চান ক্রোধিত হয়ে ফোঁসফোঁস করে বলল,
“আামকে জানালে না কেন? আমাকে ফোন করতে, সেখানে গিয়ে তাদের হাতেনাতে ধরে আগে ইচ্ছামতো ধোলাই দিলাম।”
উফ! বাঁচা গেল কিছু সন্দেহ করেনি তাহলে। তাকে শান্ত করতে আশ্বাসী বাণী তৈরি করে বললাম,
“বাদ দাও। এখন অন্য কোন কাজ পেলে সেখানে চলে যাব এই কাজ ছেড়ে। তাহলে তো আর পাবে না আমাকে।”
মাথা নেড়ে সম্মতি দিলো অন্য কাজ খোঁজ করবে ক্রিশ্চান। তবে আজ যেতে হবে কাজে, সেখানে গিয়ে ক্লাবের মালিকের সাথে কথা বলে না করে দিয়ে আসবে৷ ক্রিশ্চান-ও থাকবে। সে-ই কথা বলবে।
______
চলবে…
এডিট করা না। যারা পড়েন তাদের রেসপন্স করার অনুরোধ রইল।