ভরসার_দুহাত পর্ব_১০

0
262

#ভরসার_দুহাত
#শোভা_আক্তার(লাভলী)
#পর্ব_১০

উমায়ের বাসের জানালায় মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে। তারা কিছুক্ষণের মধ্যে পৌঁছে যাবে কিন্তু বুরাক এখনো আসে নি। উমায়ের জানালার দিয়ে উঁকি মেরে পেছনের দিকে তাকাল। রাস্তার এক পাশে জঙ্গল আর এক পাশে টং দোকানের লাইনের। বাস এগিয়ে যাচ্ছে রাস্তার মাঝ দিয়ে। বাসচালক উমায়েরকে দেখে বলল-
“আপা কি করেন? মাথা ভেতরে নেন। অন্ধকার রাস্তাঘাট, কোন জিনিস দিয়া যদি ব্যাথা লাগে?”
উমায়ের চুপচাপ সোজা হয়ে বসলো। বুরাকের জন্য ভয় করছে তার। বাসচালক উমায়েরকে একা দেখে বলল-
“আপনের স্বামী কই? ওইখানে রাইখা আইলাম না-কি আমরা?”
স্বামী শব্দ শুনে উমায়ের অস্বাভাবিক হয়ে গেল। তার মাথা যেন কাজ করা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কিছু কিছু মানুষের মানসিকতা অন্য রকম হয়। উমায়ের যদি বলে ছেলেটা তার স্বামী না। তাহলে যদি ভুল ভাবে? উমায়ের আমতা আমতা করে বলল-
“সে..সে ওখানেই আ..আছে।”
বাসচালক অবাক হয়ে বলল-
“হায় হায় আপা আগে কইবেন না। ভাইরে তো রাইখা আইলাম আমরা। মোবাইল থাকলে ফোন দিয়া জিগান কেমন আছে। আর ওখানের পরিস্থিতি কেমন।”
“আমার কাছে মোবাইল নেই।”
“আমার মোবাইল দিয়া কল দেন। এইযে এইখানে আছে একটু কষ্ট কইরা নেন।”
উমায়ের খুশী হলো। দুনিয়াতে এখনো ভালো মানুষ আছে। উঠে গিয়ে মোবাইল নিয়ে সিটে এসে বসলো। সে বুরাকের নাম্বার জানে না। কিন্তু এটা বাসচালককে বলা যাবে না। স্বামীর নাম্বার স্ত্রী জানে না বিষয়টা আজব হবে। উমায়ের মোবাইল কানে ধরে একা একা কথা বলতে লাগলো। ২ মিনিট পর মোবাইল জায়গার মতো রেখে বলল-
“ধন্যবাদ ভাই, ও একদম ঠিক আছে। রাঙামাটির জন্য অন্য বাসে উঠে গিয়েছে। পৌঁছে যাবে সময়ের মতো।”
“যাক ভালো খবর দিলেন। আর পরিস্থিতি কেমন ওইখানের?”
“বলল সে জানে না, যে যে যার যার মতো পালিয়েছে প্রাণ বাঁচিয়ে।”
“হো ঠিক কইলেন, কি জানি এই সন্ত্রাসরা কার পেছনে আইলো। খামোখা মারপিট ভালা লাগে না।”
উমায়ের জবাব দিলো না। টেনশন তার মাথা ব্যাথা করছে। বুরাক না আসলে কি হবে ভেবেই ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। হঠাৎ বাসের পেছন থেকে হর্ন বাজানোর শব্দ আসলো৷ উমায়ের শব্দ শুনে হাসিমুখে তারাতাড়ি উঁকি দিয়ে পেছনে তাকাল। ২ টা গাড়ি পেছনে, উমায়ের বুঝতে পারলো না কারা ভেতরে। গাড়ি দু’টো বাসের পাশ কাটিয়ে সামনে চলে গেল। কিছুটা দূর গাড়ি থেমে গেল। সাথে সাথে বাস ব্রেক দেয়ায় উমায়ের মাথায় ব্যাথা পেল। মাথা ধরে চোখ বন্ধ করে রাখলো কিছুক্ষণ। বাসচালক জানালা দিয়ে উঁকি মেরে বলল-
“ও ভাই কি হইলো? সরেন আমগো দেরি হইতাসে।”
গাড়ির দরজা খুলে খালিদ খান বের হলো৷ সাথে তার চ্যালাপ্যালারা আছেই। সবাই আহত, বুরাক তাকে হাফ মার্ডার করেই রেখেছে অলরেডি। খালিদ খান বলল-
“গিয়ে উমায়েরকে নিয়ে আয়।”
দুজন লোক এগিয়ে গেল। তাদের এগিয়ে আসতে দেখে বাসে চিৎকার চেচামেচি শুরু। উমায়ের চোখ খুলে সামনের দিকে তাকাল। খালিদ খানের লোকদের দেখে তার চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেল। বাসচালক দাঁড়িয়ে সবার উদ্দেশ্যে বলল-
“কেও ভয় পাইয়েন না। আমি দেহি কি করা যায়।”
লোক দুটো বাসে ঢুকতেই বাসচালক এগিয়ে গেল-
“ভাই ভাই কি করতাসেন? এহেনে নিরীহ মানুষরা আছে দোহাই লাগে ছাইড়া দেন।”
লোকটা বাসচালককে ধাক্কা মেরে বলল-
“একদম চুপ থাক। কথা বললেই গুলি গলা দিয়ে নামিয়ে দিব।”
উমায়ের দাঁড়িয়ে বলল-
“আমি তোমাদের সাথে যেতে রাজি বাসে থাকা কারো যাতে ক্ষতি না হয়।”
বাসে থাকা সবাই অবাক হয়ে গেল। লোকটা কিছুটা সরে উমায়েরকে ইশায়ায় বাস থেকে নামতে বলল। উমায়ের মাথা নিচু করে ধীরে ধীরে এগিয়ে গেল। বাসচালক অবাক হয়ে বলল-
“আপা ওরা আপনেরে খুঁজতাসিলো?”
“আমার কারণে আপনারা বিপদে পড়েছেন। তার জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। আর এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে। তারাতাড়ি বাস চালিয়ে চলে যান।”
কথাটা বলেই উমায়ের দ্রুত বাস থেকে নেমে গেল। লোকটা বাসচালকের দিকে তাকিয়ে বলল-
“দু মিনিট সময় দিলাম। তারাতাড়ি রাস্তা ক্লিয়ার কর। নাহলে বাসে থাকা একটা মানুষও জীবিত থাকবে না।”
বলেই লোকটা বাস থেকে নেমে উমায়ের এর হাত ধরে টেনে নিয়ে খালিদ খানের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। উমায়ের মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। সে জানে না এখন তার সাথে কি হবে। খালিদ খান রাগী কন্ঠে বলল-
“নারী, একজন পুরুষ বরবাদ হয়ে যায় নারীর প্রেমে পড়লে। ঠিক এই কারণেই আমি বিয়ে করি নি।”
উমায়ের চোখ তুলে খালিদ খানকে দেখে বলল-
“আপনি বিয়ে করেন নি না-কি কেও আপনাকে পছন্দই করেন নি। প্রেম করার জন্য ভালো চরিত্রের প্রয়োজন।”
“হা হা হা ফিরোজ আনোয়ারের মেয়ে ফিরোজ আনোয়ারের মতোই।”
“না, আমার আব্বুর মতো কেও না। সত্যি বলতে এখন আমি আপনার সামনে দাঁড়িয়ে খুব ভয় পাচ্ছি। আমার জায়গায় আমার আব্বু থাকলে কখনো ভয় পেত না। কিন্তু আপনি ভয় পেতেন এটা আমি জানি।”
“আমি ভয় পেতাম? আমি? খালিদ খান ভয় পেত? হাসালে মেয়ে।”
“একটা মানুষ ভয় না পেলে কি এতগুলো বডিগার্ড সাথে নিয়ে ঘুরে?”
“অনেক জবান চলে মেয়েটা। এই তোরা, কেটে টুকরো করে ফেল ওকে।”
“সত্যি কথা বলায় খালিদ খান রেগে গেল।”
উমায়ের হাতে টান অনুভব করলো। পেছনে ফিরে দেখে খালিদ খানের লোক। হাতে চাপাতি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। খালিদ খান বলল-
“আমার থেকে কিছুটা দূরে সরিয়ে মার। রক্তে আমার সাদা জামা নষ্ট করতে চাই না।”
উমায়ের এর হাত ধরে টেনে রোডের মাঝে নিয়ে গেল। উমায়ের এখন করবে ভেবে পাচ্ছে না। চিৎকার করবে? চিৎকার করলে যদি বেঁচে যাওয়ার চান্স বেড়ে যেত তাহলে এতক্ষণে চিৎকার করে আকাশ জমিন এক করে ফেলতো। ভয় করছে তার খুব। তখনই বাইক এগিয়ে আসার শব্দ আসলো। উমায়ের ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই গুলির শব্দ আসলো৷ হঠাৎ শব্দ হওয়ায় উমায়ের ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলল। ধপ করে কারো মাটিতে পরার শব্দ আসলো। উমায়ের চোখ খুলে মাটির দিকে তাকিয়ে দেখে লোকটা পড়ে আছে। আর রাস্তায় রক্ত ভেসে যাচ্ছে। বাইকটা সামনে এসে দাঁড়াল। উমায়ের বাইকের দিকে তাকিয়ে দেখে একটা ছেলে বাইকের সামনে হেলমেট পড়া। আর বুরাক পেছনে বসে আছে। তার জামা রক্তে ভিজা। বুরাক বাইক থেকে নেমে দাঁড়াল। উমায়ের দ্রুত হেটে বুরাকের কাছে গেল। বুরাককে ভালো মতো দেখে তার চোখ গড়িয়ে পানি পরলো। হেলমেট পড়া ছেলেটা বলল-
“উমায়ের সাইড হয়ে যাও।”
উমায়ের এর মনে হলো সে কন্ঠটা চেনে। কিন্তু মনে করতে পারছে না। বুরাকের উমায়ের গালে থাকা পানি আলতো করে মুছে দিলো। বুরাকের হাতে ছোঁয়া পেয়ে উমায়ের বুরাকের দিকে তাকাল। বুরাক বলল-
“তোমার আব্বুকে ওয়াদা করেছি তোমার ক্ষতি হতে দিবো না।”
উমায়ের মুচকি হাসলো। বুরাক ইশারায় বলল সরে যেতে। উমায়ের সরে গিয়ে দাঁড়াল। বুরাক আর সেই ছেলেটা কিছুটা এগিয়ে গিয়ে দাঁড়াল। খালিদ খান রাগে গজগজ করতে করতে বলল-
“তোরা আমার সাথে কিভাবে পারলি বেইমানি করতে?”
বুরাক ফিসফিস করে ববিকে বলল-
“উমায়ের যদি জেনে যায় আমি খালিদ খানের লোক তাহলে সব শেষ।”
“সময় খুব কম যত দ্রুত সম্ভব খালিদ খানের মুখ বন্ধ করতে হবে।”
বুরাক একবার পেছনে ফিরে উমায়ের এর দিকে তাকাল। উমায়ের বুরাকের চাহনি দেখে মুচকি হাসলো। বুরাক ফিরে খালিদ খানের দিকে তাকাল। খালিদ খান তার লোকদের চিল্লিয়ে বলল-
“তোরা শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি দেখিস? যা মার ওদের দুজনকে।”
সাথে সাথে তারা সবাই দৌড়ে বুরাক আর ববির দিকে এগিয়ে আসলো। বুরাক আগের মতোই তার বেল্ট আবার খুলে নিলো। বুরাকের বেল্ট দেখে তারা আবার থেমে গেল। ববি বুরাকের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল-
“কতবার বলেছিলাম তোর মতো বেল্ট আমাকে একটা বানিয়ে দিস। আমারও ভাব নিতে মন চায়৷”
বুরাক এক ভ্রু উঁচু করলো ববির কথা শুনে। ববি বিরক্ত হয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে বলল-
“তোরা আসবি না-কি আমরা চলে যাব?”
খালিদ খান গর্জে উঠলো-
“হাঁদারামের বাচ্চারা, তোদের না পেলে কুকুর পালা উচিত ছিল। তারা আমার কথা তো শুনতো।”
ববি বলল-
“এটা একদম ঠিক বলেছেন ব.. মা..মানে খালিদ খান।”
খালিদ খান অবাক হয়ে বলল-
“গিরগিটও লজ্জা পাবে তোদের পল্টি দেখে। এই তোরা তারাতাড়ি যা ওদের মার। ২১ জন হয়ে ২জনকে মারতে পারবি না।”
বুরাক বলল-
“২১ না ২০ জন। ১ জন অলরেডি…”
খালিদ খান কপালে হাত দিয়ে দিলো। কোথায় ফাসলো সে বুঝতে পারছে না। উমায়ের দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছে সে কি সত্যি মারপিট দেখছে? তাদের কথা শুনে মনে হচ্ছে তারা গবেষণায় ব্যস্ত। বুরাক বলল-
“অনেক গল্প হয়েছে। তারাতাড়ি আয় তোরা কাহানীতে দি এন্ড এর ট্যাগ লাগাতে হবে।”
খালিদ খান বলল-
“তোরা যদি না যাস তোদের সবার লাশ এইখানে পড়ে থাকবে বলে দিলাম।”
তারা শোনার সাথে সাথে দৌড়ে আবার আসলো। তারা কিছুটা সামনে আসতেই বুরাক ববির দিকে তাকিয়ে ইশারা করলো। ববি মাথা নাড়িয়ে সামনের দিকে তাকাল। পকেট থেকে সুইচ গিয়ার বের করে একজনের এক ধরে টেনে পিঠে ঠেকিয়ে গলার উপর চালিয়ে দিলো৷ বুরাক তার বেল্ট ঘুরাতে ঘুরাতে এগিয়ে গেল। বুরাক তার বেল্ট আর ববি তার সুইচ গিয়ার দিয়ে সবাইকে আঘাত করছে। সাথে ববির হেলমেটও আছেই। সে হেলমেট দিয়ে বার মাথায় আঘাত করছে। উমায়ের তাদের মারামারি দেখে দু’বার চোখের পলক ফেলল। সে বুঝতে পারছে না কি হচ্ছে এখানে৷ খালিদ খান এসব দেখে গাড়ি থেকে রিভলবার বের করে বুরাকের দিকে গুলি মারলো। কিন্তু বুরাক সরে যাওয়ায় গুলি গিয়ে ববির বাম কাঁধে লাগলো। উমায়ের চমকে উঠলো। ববি কাঁধ ধরে ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠলো। বুরাক রাগে কটমট করতে করতে খালিদ খানের দিকে তাকাল। হঠাৎ বুরাকের হাতে সজোরে ঘুষি লাগলো৷ বুরাক গালে হাত দিয়ে পিছিয়ে গেল। ঠোঁট কেটে রক্ত বের হচ্ছে বুরাকের। বুরাক সামনে তাকাতেই পেটে লাথি লাগলো। পেট ধরে বুরাক আবার পিছিয়ে গেল। বুরাকের ডান হাতে ব্যাথা আছে লোকটা বুঝতে পেরে ইচ্ছে করে বুরাকের হাতে মারতে লাগলো। বুরাক তার ডান হাত ধরে মাটিতে শুয়ে পরলো। ব্যাথায় জায়গায় আঘাত লাগলে শরীরের শক্তি কমে যায়। উমায়ের বুরাক বলে চিৎকার দিয়ে উঠলো। বুরাক চোখ তুলে তাকাতেই তার চেহারায় লাথি মেরে দিলো। ববি তা দেখে দৌড়ে এসে লোকটাকে পেছন থেকে গলা চেপে ধরলো। লোকটা তার কনুই দিয়ে ববির পেটে সজোরে আঘাত করতে লাগলো। সাথে লোকেরা এসে ববিকে পেছন থেকে চেপে ধরে সরিয়ে ফেলল। সেই লোকটা ঘুরে ববির দিকে এগিয়ে এসে তার কাঁধে আঘাত করলো। ববি ব্যাথায় চিৎকার দিয়ে উঠলো। বুরাক খুব কষ্টে ধীরে ধীরে উঠে লোকটার পেছন থেকে চুল ধরে টেনে এলোপাথাড়ি পেটে আর চেহারা ঘুষি দিতে লাগলো। ববি নিজেকে কোন মতে ছাড়িয়ে ইচ্ছে মতো তাদের থাপড়াতে লাগলো। উমায়ের নখ খাচ্ছে তাদের দেখে। বুরাক লোকটাকে মারতে মারতে মাটিতে শুইয়ে দিলো। ঘাড় ঘুরিয়ে ববির দিকে তাকাল। ববি একা পারছে না। বুরাক দৌড়ে গেল। দুজন মিলে সবাইকে আধমরা করে দাঁড়িয়ে ঘনঘন নিশ্বাস ফেলছে। বুরাক আর পারছে না দাঁড়িয়ে থাকতে৷ তার হাত ব্যাথা করছে। ববি তার হাত থেকে সুইচ গিয়ার ফেলে দিয়ে বলল-
“তারা জানতো আমাদের সাথে পারবে তবুও কেন মরতে আসলো?”
“ওদের ইচ্ছে হচ্ছিল আমাদের হাতে মরতে তাই হয় তো।”
হঠাৎ খালিদ খান শব্দ করে হাসতে লাগলো। ববি আর বুরাক খালিদ খানের দিকে তাকাল। তারা বুঝতে পারছে না মানুষটা পাগল হয়ে গেল না-কি। খালিদ খান হাসি থামিয়ে লম্বা নিশ্বাস ফেলে বলল-
“আমার হাতে মরার ভয়ে তোদের মারতে গিয়েছিল ওরা। ওদের মৃত্যু আমার হাতে লিখা নেই। কিন্তু তোদের মৃত্যু ঠিকই লিখা আছে। বলেই খালিদ খান বুরাকের দিকে রিভলবার ধরে দাঁড়াল। ববি ডান বাম দেখে নিচু স্বরে বলল-
“বুরাক তুই উমায়ের এর কাছে যা। আমি সামলাচ্ছি এনাকে।”
বুরাক দৌড়ে উমায়ের এর কাছে গেল। ববি খালিদ খানের দিকে দৌড়ে গেল। খালিদ খান বাঁকা হাসি দিলো ববিকে আসতে দেখে। ববি তার হেলমেট খুলে ছু্ঁড়ে মারলো খালিদ খানের দিকে। হঠাৎ এমন কিছু হবে খালিদ খান ভাবতে পারে নি। হেলমেট রিভলবারের উপর লেগে রিভলবার হাত থেকে পড়ে গেল। ববি গিয়ে খালিদ খানের গলা ধরে গাড়ির সাথে চেপে ধরলো। খালিদ খান ছটফট করছে। খালিদ খানের দু’টো লোক ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল চাপাতি হাতে নিয়ে। ববি ঘাড় ঘুরিয়ে বুরাকের দিকে তাকিয়ে বলল-
“বুরাক উমায়েরকে নিয়ে যা।”
উমায়ের ববিকে দেখে অবাক হয়ে গেল। এই ছেলেটাই তো রাশিদ খানের সাথে তার বাসায় ছিলো। সে বুরাককে কিভাবে চিনে উমায়ের বুঝে উঠতে পারলো না। বুরাক বলল-
“তোকে একা রেখে কিভাবে যাব?”
“আমার কিছু হবে না তুই যা। তারাতাড়ি যা উমায়েরকে নিয়ে।”
সেই দুটো লোক বুরাক আর উমায়ের এর দিকে হেলেদুলে আসতে লাগলো। বুরাক ডান বাম দেখে উমায়ের এর হাত শক্ত করে ধরে ববির দিকে তাকিয়ে বলল-
“তোর যাতে কিছু না হয়।”
“আমার কিছু হবে না।”
“ওয়াদা কর।”
ববি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল-
“ওয়া..ওয়াদা।”
বুরাক উমায়ের এর হাত ধরে জঙ্গলের দিকে দৌড়ে গেল। ববি খালিদ খানের দিকে তাকাতেই খালিদ খান হঠাৎ ববির কপালে সজোরে নিজের কপাল দিয়ে আঘাত করলো। দুজনই কপালে ব্যাথা পেয়েছে। ববি তার কপাল ধরে পিছিয়ে গেল। খালিদ খান মাটি থেকে রিভলবার তুলে নিয়ে ববির দিকে ধরে দাঁড়াল। ববি খালিদ খানের হাতে রিভলবার দেখে হাতমুখ শক্ত করে ফেলল।

বুরাক উমায়ের এর হাত ধরে দৌড়াচ্ছে। রাতের বেলা জঙ্গলের কোন জায়গায় তারা যাচ্ছে জানে না। পেছনেই খালিদ খানের লোক আসছে। উমায়ের বলল-
“এরা মানুষ না-কি জম্বি? এত মারলে আধমরাও হলো না। উল্টো দৌড়ে আসছে আমাদের পেছনে।”
“দৌড়ানোর সময় কথা বলো না। আমাদের যেভাবেই হোক তাদের থেকে দূরে যেতে হবে।”
“বুরাক সেই ছেলেটা তোমার কি হয়?”
“বেস্ট ফ্রেন্ড?”
“কিন্তু সে তো গুন্ডা।”
“এই মেয়ে একদম চুপ। তুমি নিজের প্রাণ চাও আমি প্রশ্নের জবাব?”
“আপাতত প্রাণ”
“তাহলে চুপচাপ দৌড়াও।”
উমায়ের চুপ হয়ে গেল। বেশ কিছুক্ষণ দৌড়ানোর পর উমায়ের বলল-
“আমি আর দৌড়াতে পারবো না বুরাক। অনেক ক্লান্ত লাগছে।”
বুরাক দৌড়ানোর স্পিড করিয়ে পেছনে তাকাল। কাওকে দেখা যাচ্ছে না। তারা যত ভেতরে যাচ্ছে তত চারপাশ অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে৷ আকাশে মেঘও রয়েছে আবার চাঁদের আলোও ফুটে উঠেছে। হঠাৎ দূর থেকে পর পর দু’বার গুলি করার শব্দ ভেসে আসলো৷

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here