ভরসার_দুহাত পর্ব_১১

0
366

#ভরসার_দুহাত
#শোভা_আক্তার(লাভলী)
#পর্ব_১১

গাছের সাথে হেলান দিয়ে বুরাক দাঁড়িয়ে আছে। তার বরাবর উমায়ের দাঁড়িয়ে আছে। রাতের অন্ধকারে তারা রাস্তা হারিয়ে ফেলেছে। বুরাকের টেনশন হচ্ছে ববির জন্য। উমায়ের এর মনে হাজারো প্রশ্ন ঘুরছে। কিন্তু বুরাক এখন টেনশনে আছে বলে জিজ্ঞেস করতে পারছে না। বুরাক তার পকেট থেকে মোবাইল বের করে দেখে নেটওয়ার্ক একদম কম। আর এমনিতেও তার মোবাইলের ডিসপ্লে কাজ করছে না। মোবাইল আবার পকেটে রেখে উমায়ের এর দিকে তাকাল। উমায়ের মাথা নিচু করে তার ওড়না দিয়ে খেলছে আঙুলে পেঁচিয়ে। বুরাক ডান বাম দেখলো। কি করা যায় এখন বুঝতে পারছে না। উমায়েরকে বলল তার পেছনে আসতে। দুজন আবার কিছুক্ষণ হাটলো। বুরাক গাছের ভাঙ্গা ডাল কুড়াচ্ছে। চারপাশে বেশ কুয়াশা। সময়ও যেন আগে বাড়তে চাইছে না। অনেকগুলো ডাল একসাথে করে বুরাক পাথর খুঁজতে লাগলো। মোবাইল স্ক্রিনের আলো দিয়ে কোনমতে পাথর খুঁজে শুকনা পাতা পাশে রেখে মাটিতে বসলো৷ উমায়ের কিছুক্ষণ বুরাকের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল-
“আমরা আদিমযুগে না মিস্টার বুরাক। আজকাল পাথর দিয়েও আগুন জ্বালানো যায় না।”
“চুপচাপ পাশে দাঁড়িয়ে থাকো। চেষ্টা করলে ক্ষতি কি?”
“তোমার কাছে লাইটার নেই?”
“লাইটার রেখে আমি কি করবো?”
“তুমি সিগারেট খাও না?”
বুরাক এক ভ্রু উঁচু করে উমায়ের এর দিকে তাকাল। উমায়ের থতমত খেয়ে এদিক সেদিক দেখছে। বুরাক লম্বা নিশ্বাস ফেলে বলল-
“ববির সাথে যখন থাকি তখন সিগারেট খাই। সে জেলে যাওয়ার পর অভ্যেস উধাও হয়ে গিয়েছে।”
“ববি মানে ওই ছেলেটা? ও তো গুন্ডা, তুমি ওই গুন্ডার সাথে কেন বন্ধুত্ব করেছিলে?”
“তুমি জেনে যাবে খুব শীগগিরই। এখন আমাকে আগুন জ্বালাতে দাও খুব শীত করছে আমার।”
উমায়ের মাথা নাড়িয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। টানা পনেরো মিনিট চেষ্টা করার পর শুকনা পাতায় আগুন জ্বলে উঠলে। বুরাক তারাতাড়ি সেই পাতার উপর আরো কয়েকটা পাতা রেখে আগুন বাড়িয়ে ডালগুলোয় আগুন জ্বালিয়ে নিলো। উমায়ের তালি বাজাতে বাজাতে বলল-
“বাহ তুমি দেখছি খুব বুদ্ধিমান।”
“আর তুমি খুব বোকা। এক নাম্বারের ইডিয়ট।”
“হেই হেই হোয়াট ডু ইউ মিন? আমি আবার কি করলাম?”
“আমার শার্টের উপর দাঁড়িয়ে আছো।”
উমায়ের নিচের দিকে তাকিয়ে জিহ্বায় কামড় দিয়ে সাথে সাথে সরে দাঁড়াল।
“তুমি শার্টের বাটন খুলে হিরোদের মতো স্টাইল করে রাখলে আমার কি দোষ?”
বুরাক জবাব দিলো না। তার পুরো শরীর ব্যাথা করছে। এখন ঝগড়া করার মুড নেই। বুরাক দাঁড়িয়ে চারপাশ থেকে ভাঙা ডাল নিয়ে পাশে রাখলো। উমায়ের এর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল-
“কি হলো দাঁড়িয়ে আছো কেন?”
“তো কি করবো?”
“বসো আগুনের পাশে। নাহলে ঠান্ডা লেগে যাবে। চারপাশে খুব শীত।”
“মাটিতে বসবো?”
বুরাক হাত আড়াআড়ি ভাবে ভাজ করে তাকিয়ে রইল উমায়ের এর দিকে। উমায়ের মাটিতে চোখ বুলিয়ে বলল-
“ভালো মতো দেখো, চারপাশে কত ময়লা। যদি বিষাক্ত পোকা আমাকে কামড় দেয়? আমি কীটপতঙ্গ খুব ভয় পাই।”
বুরাক লম্বা নিশ্বাস ফেলল। সে ভাবলো উমায়ের ঠিক বলেছে। জঙ্গলে বিষাক্ত পোকা-মাকড় থাকা স্বাভাবিক। বুরাক নিজের শার্ট খুলল ধীরে ধীরে। হাতে খুব ব্যাথা। উমায়ের চোখ সরিয়ে ফেলল। যদিও বুরাক সেন্ডো গেঞ্জি পড়ে আছে তবুও তার অস্বস্তি হচ্ছে। বুরাক তার শার্ট দিয়ে মাটি পরিষ্কার করে উমায়ের এর দিকে তাকিয়ে বলল-
“এখন বসো, আমি খেয়াল রাখছি চারপাশ। পোকামাকড় আসলে সাবধান করবো। আর কিছুক্ষণ পর তো সকাল হয়েই যাবে। তারপর আমরা রাস্তা বের করে তোমার বাসায় চলে যাব।”
উমায়ের মাথা নাড়াল। গিয়ে মাটিতে বসে ওড়না শরীরে পেচিয়ে নিলো। সত্যি চারপাশে খুব শীত। বুরাক একটা গাছের সাথে হেলান দিয়ে বসে রইল। শীতে তার ইচ্ছে করছে আগুন শরীরে লাগিয়ে ফেলতে। গাছের সাথে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলল। উমায়ের চারপাশে চোখ বুলাচ্ছে। হঠাৎ যদি কোন প্রাণী এসে হামলা করে? এইখানে কি বাঘ বা নেকড়ে আছে? তারা তো খুব ভয়ংকর প্রাণী। উমায়ের ভয়ে চুপসে যাচ্ছে। বুরাকের দিকে তাকাল। এই ছেলেটাই তার রক্ষা করতে পারবে। তার পাশে গিয়ে বসবে কিনা ভাবছে। বেশী কাছে যাওয়া কি ঠিক হবে? ভাবতে ভাবতে উমায়ের হাবুর কেটে গিয়ে বুরাকের পাশে বসলো। পাশে যেতেই উমায়ের এর চোখ বুরাকের হাতের দিকে গেল। বুকের বা পাশ তার মোচড়ে উঠলো হাত রেখে। হাতে গুলি ছুঁয়ে যাওয়ার কারণে চারপাশ নীল হয়ে রক্ত জমে গিয়েছে। উমায়ের বুঝতে পারছে না ছেলেটা এত ব্যাথা কিভাবে সহ্য করছে। উমায়ের কি করবে বুঝতে পারছে না। বুরাক চোখ খুলে উমায়ের এর দিকে তাকাল। তার মনে হচ্ছিল কেও তার পাশে আছে। উমায়ের এর চিন্তিত চেহারা দেখে বলল-
“আবার কি হলো তোমার? ক্ষুধা পেয়েছে?”
উমায়ের বুরাকের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বুরাকের কপালে আলতো করে হাত রাখলো। কপাল ছুঁয়ে সাথে সাথে হাত সরিয়ে অবাক হয়ে বলল-
“তোমার শরীর আগুনের মতো গরম হয়ে আছে। বুরাক তুমি কিভাবে টিকে আছো এখনো?”
বুরাক ফিক করে হেসে বলল-
“তো তুমি কি ভাবছো আমার কি মরে যাওয়ার কথা?”
“হ্যাঁ, আমি এটাই ভাবছি। তুমি এখন অনেক অসুস্থ বুরাক। পানি কোথায় পাই এখন?”
“তোমার পিপাসা পেয়েছে?”
“না, বার বার আমার কথা কেন চিন্তা করছো? তোমার কপালে দেয়ার জন্য।”
“লাগবে না, আমি এমন জ্বরের সাথে অনেকবার মোকাবিলা করেছি। আর সবসময় জিত আমার হয়েছে।”
“অসুস্থতা নিয়ে এত গর্ব করতে নেই বুরাক। তুমি নিজেকে নিয়ে কেন ভাবো না?”
“কি দরকার নিজেকে নিয়ে ভাবার? আগে আমার জন্য কেও ছিলো না ভাবার। তখন ভাবতাম, যেহেতু আমার কেও নেই দরকার নেই নিজেকে নিয়ে এত ভাবার। আর আজ, তুমি আমার জন্য চিন্তা করছো আমাকে নিয়ে ভাবছো। তাই আমার আজও মন চাচ্ছে না নিজেকে নিয়ে ভাবার। তুমি তো আছো।”
উমায়ের অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বুরাকের দিকে। ছেলেটার কথা বার্তা আজব, কিন্তু ভালো লাগার মতো। বুরাক ঘাড় ঘুরিয়ে আগুনের দিকে তাকাল। ডালগুলো পুড়ে গিয়েছে। এগিয়ে দিয়ে বাকি ডালগুলো আগুনের উপর রেখে দিলো। হঠাৎ কাপড় টেনে ছেঁড়ার শব্দ আসলো। বুরাক উমায়ের এর দিকে তাকিয়ে দেখে উমায়ের তার ওড়না টেনে ছিঁড়ছে। বুরাক ভ্রু কুঁচকালো। উমায়ের ওড়নার টুকরা নিয়ে বুরাকের ডান হাতের ক্ষত ধীরে ধীরে মুছতে লাগলো। বুরাক হাত সরিয়ে ফেলে বলল-
“কি করছো এসব? আমি ঠিক আছি। আর রক্ত পড়ছে না তাই কাপড় লাগবে না।”
“হাতে রক্ত জমে আছে। এতে সমস্যা বাড়বে কারণ জীবাণু চারপাশে ঘুরে আমাদের। হাতটা মুছে কাপড় পেঁচিয়ে ফেললে ভালো হবে।”
“তুমি কি ডাক্তার হতে চাও? মানে ডাক্তারি পড়ছো?”
“না, আমি কি হতে চাই নিজেও জানি না। কখনো কিছু হওয়ার স্বপ্ন দেখিনি। হাত দাও তোমার।”
উমায়ের হাত বাড়িয়ে দিলো। বুরাক উমায়ের এর হাত এক নজর দেখে মুচকি হেসে নিজের হাত এগিয়ে দিলো। উমায়ের পরম যত্নে বুরাকের হাত মুছে দিয়ে কাপড় পেঁচিয়ে দিলো। বুরাকের মনে হচ্ছে উমায়ের প্রচুর মুভি দেখে। তাই তো এই ফিল্মি আইডিয়া বের করলো। উমায়ের বুরাকের দিকে তাকিয়ে বলল-
“যদি বেঁচে ফিরি, আব্বুকে বলল বুরাকের সাথে আমি সারাজীবন ফ্রেন্ডশিপ রাখতে চাই।”
“আমরা ফিরে যাওয়ার পর তুমি আর আমাকে দেখতে পাবে না।”
“কি? কিন্তু কেন?”
বুরাক রহস্যময় হাসি দিলো। উমায়ের আবার চিন্তায় ডুবে গেল। বুরাকের কথা বার্তা এমন কেন সে ভেবে পাচ্ছে না। বুরাক উমায়ের এর দিকে তাকিয়ে থেকে মনে মনে বলল-
“কারণ ফিরে যাওয়ার পর আমি নিজেকে পুলিশের কাছে সারেন্ডার করে ফেলল। তুমি সব জেনে যাবে আমার সম্পর্কে। তখন ঘৃণা করবে কিনা জানি না। যদি ঘৃণা করো তবুও মন খারাপ করবো না। শুধু এইটুকু চাইব, তুমি যাতে প্রতিদিন আমাকে একবার হলেও মনে করো।”
উমায়ের চোখ ফিরিয়ে নিলো। বুরাকের চাহনি তার হৃৎস্পন্দন বাড়িয়ে দেয়। বেশ কিছুক্ষণ পর উমায়ের ঘুরিয়ে পরলো। কিছুক্ষণ আগে ভয় পাচ্ছিল কিন্তু এখন নিজেই মাটিতে শুয়ে পড়েছে। বুরাক তার শার্ট উমায়ের এর গায়ের উপর দিয়ে দিলো।

চারপাশে আলো ফুটে উঠেছে। বুরাক ধীরে ধীরে চোখ খুলল। গাছের সাথে হেলান দিয়ে ঘুমানোর কারণে তার কোমড় ব্যাথা হয়ে গিয়েছে। হঠাৎ সে তার পায়ে ভর অনুভব করলো। নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে উমায়ের তার পায়ের উপর মাথা রেখে শুয়ে আছে। বুরাক উমায়ের এর ঘুমন্ত চেহারার দেখে হাসলো৷ সে তার পছন্দ দেখে গর্বিত হলো। চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখে এখন সব স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। তারাতাড়ি বের হওয়ার রাস্তা খুঁজতে হবে। উমায়েরকে তার ডাকতে ইচ্ছে করছে না। কিন্তু ডাকা জরুরি। ধীরে ধীরে উমায়েরকে ডাকলো। উমায়ের ধরফরিয়ে উঠে বসলো। বসে ঘনঘন নিশ্বাস ফেলে এদিক সেদিক দেখছে। বুরাক হা হয়ে দু’বার চোখের পলক ফেলল। সে তো ধীরে ধীরেই ডেকেছে তো এইভাবে ফালানোর কি ছিল? উমায়ের ভীতু কন্ঠে বলল-
“বাঘ এসেছিল?”
উমায়ের এর লাফিয়ে উঠার কারণটা বুরাক বুঝতে পারলো। সে মুচকি হেসে বলল-
“না, তুমি স্বপ্ন দেখেছো।”
“যাক ভালো, জানো অনেক বড়ো ছিল বাঘটা। আমি মনে করেছি এখনই আমাকে খেয়ে ফেলবে।”
“তুমি কি পশুও ভয় পাও?”
“সব না, কিছু কিছু। বাঘ সবচেয়ে বেশী ভয় পাই। একবার চিড়িয়াখানায় গিয়েছিলাম। সেখানে বাঘের বাচ্চাকে ধরে আদর করা যেত। আমি বাঘের বাচ্চাকে আদর করতে গিয়েছিলাম সে আমাকে কামড় দিতে নিয়েছি। দাঁতের ঘোষাও লেগেছিল হাতে। ছোটো গুলো এত ভয়ংকর হয় বড়ো গুলো তো আরো বেশী হবে তাই না?”
“হ্যাঁ ঠিক বললে, আচ্ছা এখন উঠো। আমাদের রাস্তা খুঁজতে হবে।”
“খুঁজে পাবো তো?”
“হ্যাঁ, নিশ্চয়ই পাবো।”
বুরাক ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল। এখনো শরীরটা বেশ ব্যাথা। উমায়ের এর দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো। উমায়ের মুচকি হেসে বুরাকের হাত ধরে দাঁড়াল। বুরাক চারপাশে চোখ বুলিয়ে হাঁটা ধরলো। উমায়ের চারপাশ দেখে বলল-
“এমন ধোঁয়া কেন বুরাক?”
“এগুলো কুয়াশা”
“এত ঘন?”
“হ্যাঁ, এটা জঙ্গল তাই বেশী দেখা দেয়।”
উমায়ের মাথা নাড়াল। কিছুক্ষণ হাঁটার পর বুরাকের কানে পানির শব্দ আসলো। দ্রুত হেটে দুজন সামনে গিয়ে দেখে ঝর্ণা। উমায়ের ঝর্ণা দেখে অবাক হয়ে বলল-
“বুরাক, জঙ্গলের মাঝে ঝর্ণা?”
“ঝর্ণা বেশীর ভাগ জঙ্গলের মাঝেই হয়। এই ঝর্ণা হয়তো বান্দরবান পর্যন্ত যায়।”
“সত্যি?”
“শিওর না, আমি আন্দাজে বললাম।”
“ওও, তবুও মনে হচ্ছে এমনই হবে।”
“আচ্ছা আমরা যদি ঝর্ণার পানি ফলো করতে করতে যাই রাস্তা পাবো?”
বুরাক অবাক হয়ে বলল-
“উমায়ের তুমি দেখছি খুব বুদ্ধিমতী। আইডিয়াটা বেশ ভালো।”
উমায়ের গর্বিত হলো। বুরাকের দিকে তাকিয়ে লজ্জা মাথা কন্ঠে বলল-
“তুমি একটু দূরে যাও না। আমার কিছু কাজ আছে।”
“একদম পানি নোংরা করবে না।”
“এই এই কি বলো এসব? পানি নোংরা করবো কেন?”
“আমি বুঝতে পেরেছি তোমার কি কাজ। তাই সতর্ক করলাম।”
“হ্যাঁ হ্যাঁ থ্যাঙ্ক ইউ যাও এখন।”
বুরাক দ্রুত কিছুটা দূর চলে গেল। তারা এখন জঙ্গলে আছে যেহেতু তার মানে ফলের গাছও আছে এইখানে। শুধু খুঁজে নিতে হবে। প্রায় ১০ মিনিট পর উমায়ের এর চিৎকারের শব্দ আসছে। সে বুরাককে ডাকছে। বুরাক দ্রুত এগিয়ে গিয়ে আবার থেমে উঁচু স্বরে বলল-
“আসবো আমি সামনে?”
“হ্যাঁ আসো”
বুরাক দ্রুত এগিয়ে গেল। উমায়ের দাঁড়িয়ে আছে আবার চিন্তিত চেহারা বানিয়ে। বুরাক কপাল কুঁচকে বলল-
“আবার কি হলো?”
“আমার ব্রাশ না করলে ভালো লাগে না।”
“আমি জঙ্গলের মাঝে এখন ব্রাশ কোথায় পাব?”
“আমি বলছি না ব্রাশ নিয়ে আসতে। আমি শুধু বললাম এইভাবেই।”
“সোজাসাপটা বললেই হয় উমায়ের তুমি তারাতাড়ি বাসায় যেতে চাও। রাস্তা খুঁজতে সময় লাগতে পারে তাই আমি রিকুয়েষ্ট করছি একটু ধৈর্য ধরো।”
উমায়ের মন খারাপ করে মাথা নিচু করে ফেলল। বুরাক উমায়েরকে দেখে লম্বা নিশ্বাস ফেলল। সে তো বকা দেয় নি৷ তো মেয়েটা অকারণে কেন মন খারাপ করলো। বুরাক পানির দিকে তাকিয়ে বলল-
“এই পানি দিয়ে মুখ ধোয়া যাবে তো? নোংরা করো নি তো আবার?”
উমায়ের রাগী দৃষ্টিতে বুরাকের দিকে তাকাল। বুরাক হাসতে হাসতে এগিয়ে গেল। মুখ হাত ধুয়ে পেছনে ফিরে দেখে উমায়ের গালে হাত রেখে মাটিতে বসে আছে। বুরাক এগিয়ে আসতে আসতে বলল-
“আবার কার চিন্তায় ডুবে গেলে?”
“আব্বু, আম্মু, উসমান, উজ্জ্বলকে মিস করছি। তোমার মোবাইল দিয়ে কথা বলা যাবে?”
“ডিসপ্লে কাজ করছে না। আর নেটওয়ার্কও সমস্যা এখানে।”
উমায়ের এর মন আবার খারাপ হয়ে গেল। বুরাক উমায়ের এর পাশে দাঁড়িয়ে হাত এগিয়ে দিয়ে বলল-
“চলো তোমার পরিবারের কাছে যাই।”
উমায়ের বুরাকের হাতের দিকের তাকিয়ে মুচকি হাসলো। আবার বুরাকের দিকে তাকিয়ে বলল-
“থ্যাঙ্ক ইউ ফর এভরিথিং।”
“মাই প্লেজার”
উমায়ের হেসে বুরাকের হাত ধরে উঠে দাঁড়াল। দুজন আবার হাঁটা ধরলো জঙ্গল থেকে বের হওয়ার উদ্দেশ্যে। কিছুক্ষণ পর বুরাকের মনে হলো তারা আরো গভীরে চলে যাচ্ছে। কারণ সকাল বেলা হলেও ধীরে ধীরে অন্ধকার হচ্ছে চারপাশ। ভেতরে অনেক গাছপালা যার ফলে সূর্যের আলো আসছে না। আর এমনিতেও আকাশে মেঘ জমে আছে। উমায়ের ভয় সূরা পড়ছে মনে মনে। এমন ভয়ংকর পরিস্থিতি সে কখনো দেখেনি। বুরাকের হাত খামচে ধরে হাঁটছে। বুরাক উমায়ের এর দিকে তাকিয়ে বলল-
“তুমি অকারণে আমার হাতের উপর অত্যাচার করছো কেন?”
“আমি কি করলাম?”
“আমার হাতে ব্যাথা লাগছে তোমার নখ দিয়ে।”
উমায়ের তারাতাড়ি হাত ছেড়ে দিলো। বুরাক বিরক্ত হয়ে আবার সামনের দিকে তাকাল। তার মেজাজ বিগড়ে যাচ্ছে পরিবেশ দেখে। হাটতে হাটতে এক সময় উমায়ের দাঁড়িয়ে গেল। চারপাশে চোখ বুলিয়ে উঁচু স্বরে বলল-
“আমি আর হাঁটতে পারবো না।”
বুরাক দাঁড়িয়ে পেছনে ফিরে ভ্রু কুঁচকে বলল-
“কেন?”
“আমার পা ব্যাথা করছে। আমি কখনো এত হাঁটি নি।”
“১৫ মিনিট হয়েছে মাত্র আমাদের হাঁটার।”
“জি না মিস্টার বুরাক ৩০ মিনিটের বেশী হয়েছে। তুমি তুফানের গতিতে হাঁটলে বুঝবে কি করে।”
“তো তুমি কি চাও ধীরে ধীরে হাঁটবো? যত তারাতাড়ি সম্ভব আমাদের এই গভীর জঙ্গল থেকে বের হওয়া উচিত।”
“আমি শক্তি পাচ্ছি না। আমার পেটটাও খুব ব্যাথা করছে।”
“ক্ষুধা পেয়েছে বললেই হয়।”
“না, ক্ষুধা পেলে তো পেটে গড়গড় শব্দ হয় কিন্তু আমার পেট ব্যাথা করছে।”
“তুমি খালি পেটে অনেকক্ষণ হেটেছো তাই ব্যাথা করছে। আচ্ছা তুমি অপেক্ষা করো আমি দেখছি ফল পাই কিনা।”
“ফল? আমি তো একটাও ফলের গাছ
দেখতে পেলাম না। সব এমন এমন গাছ যা কখনো দেখিও নি।”
“কারণ এটা জঙ্গল, আরো অনেক কিছু আছে যা তুমি কখনো দেখো নি। যেমন শিং ওয়ালা গরু।”
“বলো কি শিং ওয়ালা গরু?”
বুরাক শব্দ করে হেসে উঠলো। উমায়ের কিছুক্ষণ ভাবলো, সে হয় তো কিছু ভুলছে৷ বুরাক ঘুরে হাঁটা ধরলো। উমায়ের হঠাৎ রেগে গিয়ে চিল্লিয়ে বলল-
“বুরাক তোমাকে খুন করে ফেলবো। গরু তো শিং ওয়ালাই হয়।”
বুরাক ঘুরে বলল-
“তুমি যদি ভয়ের কারণে উল্টা পাল্টা শোনো আর বুঝো আমার কি দোষ?”
উমায়ের রাগে মাটিতে সজোরে লাথি মেরে দ্রুত হেটে বুরাকের কাছে গেল। বেশ কিছুক্ষণ হাঁটার পর নেকড়ের চিৎকারের শব্দ আসলো পেছন থেকে। বুরাক আর উমায়ের থমকে দাঁড়াল। উমায়ের বুরাকের হাত জাপ্টে ধরে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল-
“এটা কুকুরের শব্দ?”
“না, নেকড়ে অর্থাৎ জঙ্গলে যে কুকুর গুলো থাকে সেগুলোকে নেকড়ে বলে। কিন্তু সেগুলো কুকুর না কুকুরের মতো দেখতে।”
“তোমার বুঝানোর স্টাইল এমন কেন? কিছুই বুঝলাম না।”
বুরাক বিরক্ত হয়ে বলল-
“সম্মান দাও আমাকে। নাহলে এইখানেই রেখে চলে যাব। আর নেকড়েরা এসে তোমাকে ধরবে।”
“প্লিজ বুরাক না”
“তাহলে চুপচাপ হাঁটা ধরো।”
বুরাকের হাত শক্ত করে ধরে উমায়ের হাঁটছে। হঠাৎ পেছন থেকে দৌড়ে আসার শব্দ আসলো। বুরাক আর উমায়ের পেছনে ফিরে চমকে উঠল।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here