#ভরসার_দুহাত
#শোভা_আক্তার(লাভলী)
#পর্ব_১৩
বুরাক উনাকে দেখে হাসিমুখে এগিয়ে যেতে নিলো। ছেলেটা রাগে হনহন করতে করতে এগিয়ে এসে সজোরে বুরাকের গালে থাপ্পড় মেরে দিলো। উমায়ের ভয়ে পিছিয়ে গেল। ছেলেটা বুরাকের কলার চেপে ধরে বলল-
“তোর সাহস কি করে হলো আমার বাড়িতে পা রাখার?”
তখনই সেই ভদ্রমহিলা দৌড়ে এসে বুরাককে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো।
“বশির কি করছো? ছাড়ো বুরাককে।”
“ওর সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি। বলেছিলাম না ওকে আমার বাড়িতে যাতে ও কখনো না আসে?”
বলেই বশির বুরাককে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিলো। রাগে ফুসছে সে। বুরাক মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। উমায়ের কি করবে কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। কাওকেই তো সে চিনে না। বুরাকের গালে আগে থেকেই ব্যাথা ছিল। থাপ্পড় মারার কারণে ক্ষত জায়গা থেকে রক্ত ঝরা শুরু হলো। উমায়ের তা দেখে দ্রুত হেটে গিয়ে বুরাকের সামনে দাঁড়াল৷ নিজের গায়ে থাকা ছেঁড়া ওড়না দিয়ে বুরাকের গালের ক্ষত জায়গা চেপে ধরে বশিরের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল-
“আপনি কে আমি জানি না। কিন্তু এভাবে অত্যাচার কেন করছেন ওর উপর? এমনিতেই বুরাক অসুস্থ।”
বশির রাগী কন্ঠে বলল-
“দেখলে ওর কান্ড? কাকে না কাকে এখন তুলে নিয়ে আসলো। আব্বু আম্মু যদি ওদের ঘরে জায়গা দেয় আমি বাসা ছেড়ে চলে যাব।”
তখনই পেছন থেকে একটা ভারী কন্ঠ শোনা গেল-
“চিৎকার চেচামেচি হচ্ছে কেন এভাবে?”
সবাই ভেতরের দিকে তাকাল। একজন বয়স্ক মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। সাদা রং এর পাঞ্জাবি লুঙ্গি, মাথায় চুপি, বড়ো বড়ো সাদা দাঁড়ি। উমায়ের দু’বার চোখের পলক ফেলল। মানুষটা কিছু কিছু বুরাকের মতো দেখতে। বুরাক উনাকে দেখে মাথা নিচু করে ফেলল। উনি ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে বুরাককে দেখে বশিরের দিকে তাকিয়ে বলল-
“অন্যের জন্য তুমি তোমার মাথা গরম কেন করছো?”
“আব্বু ওকে যেতে বলুন। আমার ওকে মেরে ফেলবো আমার বাড়িতে পা রাখলে।”
“তুমিও কি ওর সন্ত্রাস হতে চাও খুন করে? আমার এক সন্তান সন্ত্রাস হওয়ায় আমি ওকে সারাজীবনের জন্য আমার মনে কবর দিয়ে দিয়েছি। এখন আমার আর এক সন্তানের মুখে খুনখারাবির কথা শুনে খুব খারাপ লাগছে।”
বশির মাথা নিচু করে বলল-
“মাফ করবেন আব্বু।”
উমায়ের বুরাকের কানের কাছে ফিসফিস করে বলল-
“বুরাক, এটা কি তোমার পরিবার? সত্যি করে বলো।”
বুরাক আড়চোখে উমায়ের এর দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়াল। উমায়ের ঢোক গিলল। তার ভয় করছে এখন। তখনই একজন বয়স্ক ভদ্র মহিলা দ্রুত এগিয়ে আসলো। বুরাক মাথা তুলে উনাকে দেখে হাতমুঠো শক্ত করে ফেলল। এবার তার বুক ছিঁড়ে কান্না আসছে৷ উনি ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে বুরাকের সামনে দাঁড়ালেন। বুরাকের গালে হাত রাখতেই কেঁদে উঠলেন। বুরাক উনার হাত ধরে চোখ কুঁচকে বন্ধ করলো। সাথে সাথে বুরাকের চোখ বেয়ে পানি পরলো। উমায়ের অবাক হলো বুরাকের কান্না দেখে। বশির রাগী কন্ঠে বলল-
“আম্মু, আপনি বলেছিলেন কোনদিন এই ছেলে বাড়িতে আসলে আপনি নিজে ওকে ধাক্কা দিয়ে বের করবেন। আর আজ আপনিই…”
সেই ভদ্রলোকটা বললেন-
“তুমি মাথা ঠান্ডা রাখো, বৌমা তুমি বশিরকে ঘরে নিয়ে যাও।”
মাঝবয়েসী মহিলাটি বশিরকে টেনে ধরে নিয়ে গেল। বুরাকের মা উমায়ের এর দিকে তাকিয়ে বলল-
“তুমি কে?”
আবার বুরাকের দিকে তাকিয়ে বলল-
“তুই একটা মেয়েকে পালিয়ে নিয়ে আসলি?”
উমায়ের থতমত খেয়ে গেল উনার মুখে এমন কিছু শুনে। বুরাক বলল-
“না আম্মু, আমার অনেককিছু বলার আছে আপনাদেরকে। কিন্তু ভাইয়া তো রেগে আছে আমার উপর।”
বুরাকের বাবা শান্ত গলায় বললেন-
“তোমার কোন কথা আমরা শুনতে চাই না। আমি অনুরোধ করছি তুমি চলে যাও এখনই।”
“আব্বু আমাকে আমার কথাটা বুঝানোর সুযোগ তো দিন। আর আমি সারাজীবনের জন্য আসি নি। আমি চলে যাব, আপনাদের দেখতে ইচ্ছে করছিল তাই এসেছি।”
“দেখা তো হয়েছে। এখন চলে যাও। আমরা আমাদের বাসায় কোন ঝামেলা চাই না। মহান আল্লাহ তায়ালা না করুক যদি তোমাকে খুঁজতে খুঁজতে পুলিশ এসে পড়ে তখন? আমি এই অপমান সহ্য করতে পারবো না। আমার মৃত চেহারা না দেখতে চাইলে এখনই চলে যাও তুমি।”
“আব্বু দয়া করে এইভাবে বলবেন না৷ আমি কখনো আপনাদের অপমান করাতে পারবো না। আমাকে একবার সুযোগ দিন সবকিছু বুঝানোর।”
“আমার ছেলে রেগে আছে তার মায়ের উপর। আমি চাই না আমার উপরও রাগ করুক। আমি আবার বলছি তুমি চলে যাও।”
বুরাকের মা পেছনে ফিরে স্বামীর দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন-
“আপনি বাবা না জল্লাদ? ছেলে এত বছর পর এসেছে নিশ্চয়ই কিছু বলতে চায় আমাদের। আর আপনি রাগ দেখাচ্ছেন?”
“দু’দিন আগে আপনি নিজে আপনার এই ছেলেকে যাতা বলছিলেন। আর আজ সে সামনে আসায় সব ভুলে গেলেন?”
“সেটা আমি বশিরের সামনে ইচ্ছে করে বলতাম। ছেলেটা বুরাকের নাম শুনলেই রেগে যেত।”
“বাহ বেগম, আপনি ভালো নাটক করেছেন এতদিন। আপনার ছেলেকে বলুন চলে যেতে। আমার বাড়িতে এখন ওর কোন জায়গা নেই।”
“বাড়িটা আমারও, আমার ছেলে আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবে না।”
“তাহলে আপনিও ওর সাথে চলে যান।”
“বুরাক চমকে উঠল বাবার মুখে এমন কথা শুনে। বুরাকের মা মাথা নিচু করে ফেলল। বুরাক বাবার দিকে তাকিয়ে বলল-
“মানলাম আমি ভালো ছেলে হতে পারি নি। কিন্তু আপনি তো এখন ভালো স্বামী হওয়ার ক্রেডিট হারিয়ে ফেলছেন।”
“তুমি আমাকে শেখাতো এসো না বুরাক। আর কতবার তোমায় বলবো চলে যেতে?”
“আমি চলে যাব, আমি থাকতে আসি নি কতবার বলবো? আমি আপনাদের দেখতে এসেছিলাম। চলে যাব দু’দিন পর।”
বুরাকের মা বুরাকের বাবার দিকে তাকিয়ে বললেন-
“ও বলল তো চলে যাবে। দু’টো দিন ওকে থাকতে দিন।”
বুরাকের বাবা জবাব দিলেন না। বুরাকের মা হাত জোড় করে বলল-
“আমি আপনার থেকে সহজে কিছু চাই না। আমাকে দু’দিনের জন্য একটু শান্তি দিন। আপনি ভালো মতো জানেন বুরাককে আমি কতটা ভালোবাসি।”
“প্রত্যেক বাবা মা তার সন্তানকে ভালোবাসে। কিন্তু কিছু কিছু সন্তানরা বাবা মাকে কখনো সম্মান করতে পারে না।”
বুরাকের বাবা রাগী দৃষ্টিতে বুরাকের দিকে তাকাল। বুরাক চোখ ঘুরিয়ে ফেলল বাবার চাহনি দেখে। বাবা হনহন করে ভেতরে চলে গেল। বুরাক উমায়ের এর দিকে তাকিয়ে বলল-
“উমায়ের, উনি আমার আম্মু।”
উমায়ের বুরাকের মাকে সালাম দিয়ে মাথা নিচু করে ফেলল। বুরাকের মা সালামের জবাব দিয়ে বুরাকের দিকে তাকিয়ে বলল-
“আমি কি জানতে পারি ও তোর কি হয়?”
বুরাক উমায়েরকে এক নজর দেখে আবার মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল-
“ওর নাম উমায়ের বিনতে ফিরোজ, ও আমার কিছুই হয় না আম্মু। কোন এক দুর্ঘটনা ওকে আর আমাকে সম্মুখীন করে ফেলেছে।”
“ভেতরে আয় তোরা।”
“কিন্তু ভাইয়া আর আব্বু?”
“আমি আছি তো, ওদের মানানো আমার জন্য কোন ব্যাপার না।”
বুরাক উমায়ের এর দিকে তাকিয়ে ইশারায় বলল ভেতরে যেতে। বুরাকের মা উমায়ের আর বুরাক হাত থেকে টেনে ভেতরে নিয়ে গেল। ভেতরের সোফায় আর একটা মেয়ে বাচ্চা বসে আছে মোবাইল নিয়ে। কানে হেডফোন, বুরাক তাকে দেখে মাকে জিজ্ঞেস করলো-
“মা, ও কে?”
“সাহিবা, তোর ভাতিজী।”
“ভাইয়ার দুই ছেলে মেয়ে?”
“হ্যাঁ মন্টি বড়ো আর সাহিবা ছোটো।”
বুরাকের মা সাহিবার দিকে এগিয়ে দিয়ে কান থেকে হেডফোন সরিয়ে বলল-
“সারাদিন মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকিস। তাকিয়ে দেখ কে এসেছে?”
“উফফ দাদী, এত কার্টুন দেখছি দেখো না। আমি এখন বিজি আছি।”
“তোর চাচু এসেছে, চাচুর সাথে দেখা করবি না?”
সাহিবা বুরাক আর উমায়েকে দেখে আবার দাদীর দিকে তাকিয়ে বলল-
“আমার কোন চাচু?”
“তোর বুরাক চাচু।”
সাহিবা চমকে উঠল। সোফা ছেড়ে দাঁড়িয়ে ভীতু কন্ঠে বলল-
“কিভাবে সম্ভব? আব্বু বলেছিল বুরাক চাচু মরে গিয়েছেন। উনি কিভাবে আসতে পারেন? ভূ..ভূত নয় তো?”
হঠাৎ পাশ থেকে ধমকের স্বর ভেসে আসলো-
“সাহিবা, একটা চড় মেরে দাঁত ফেলে দিব। বলেছিলাম না তোর আব্বু মিথ্যে কথা বলে।”
“কিন্তু আম্মু, দাদুও তো বলেছিলেন উনার ছোটো ছেলে আর নেই।”
“বেশী কথা বলবি না, তুই ঘরে যা এখন।”
সাহিবা এক নজর বুরাককে দেখে দৌড়ে ভেতরে চলে গেল। বুরাকের মা বলল-
“আমি সাহিবা আর মন্টিকে গিয়ে বুঝাই। তারা ছোটো, তাদের না বুঝালে উল্টা পাল্টা কথা ভাববে।”
বলেই মা চলে গেলেন। বুরাকের ভাবী হেটে এসে বলল-
“বুরাক তুই সাহিবার কথায় মন খারাপ করিস না। আব্বু আর বশির তো যাতা বলে।”
বুরাক তার ভাবীকে ভালো মতো দেখে বলল-
“আমার কেন মনে হচ্ছে আমি আপনাকে চিনি।”
“মানে কি? তুই এখনো আমাকে চিনতে পারিস নি?”
বুরাক না সূচক মাথা নাড়াল। তার ভাবী হেসে বুরাকের মাথায় আস্তে করে থাপ্পড় মেরে বলল-
“আমি শাফিয়া”
বুরাক ভূত দেখার মতো চমকে উঠে বলল-
“শাফিয়া আপু? তু..তুমি আর ভাইয়া? তার মানে আমার সন্দেহ তখন ঠিক ছিল।”
“আপু বলছিস কেন? এখন আমি তোর ভাবী হই। ভাবী ডাক। আর হ্যাঁ তোর সন্দেহ ঠিক ছিল৷”
“তোমরা বিয়ে কেন করলে? তুমি জানতে আমি তোমাকে পছন্দ করতাম।”
শাফিয়া ফিক করে হেসে দিয়ে বলল-
“বউ নিয়ে এসেছিস, এখন এসব কথা না বললেই ভালো।”
উমায়ের থতমত খেয়ে বলল-
“আমি ওর বউ না।”
“বউ না এখন, হয়ে যাবে। পালিয়ে এসেছো বিয়ে করবে না?”
“বুরাক”
উমায়ের বুরাকের দিকে মায়া মায়া চেহারা বানিয়ে তাকাল। বুরাক শাফিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল-
“ভাবী তোমাদের অনেককিছু আমার বলার আছে।”
“ঠিক আছে বলিস, এখন ঘরে গিয়ে বিশ্রাম কর। জানিস, মা আজও তোর ঘর যেমন ছিল তেমনই রেখেছে। বশির আর আব্বু অনেকবার চেষ্টা করেছে তোর ঘরকে গেস্টরুম বানিয়ে ফেলবে। কিন্তু মা তা হতে দেয়নি।”
“আমি জানি, আমি যতই ভুল করি মা কখনো আমাকে ঘৃণা করতে পারবে না। আর ভাবী, তুমিও আমাকে এত বিশ্বাস করছো।”
“করতাম না, রেনু আমাকে বলেছে তোর সাথে ওর একবার কথা হয়েছিল। আর তুই কোন এক কারণে এমনটা করেছিস।”
“হ্যাঁ, অনেক আগে রেনুর সাথে কথা হয়েছিল। কেমন আছে ও?”
“ভালো, তুই এখন তারাতাড়ি ঘরে যা।”
“আচ্ছা, ভাবী তুমি উমায়েরকে তোমার সাথে নিয়ে যাও।”
“উমায়ের, বাহ তোমাস নামটা তো বেশ সুন্দর।”
উমায়ের জবাবে মুচকি হাসলো। বুরাক ইশারায় বলল ভাবীর সাথে যেতে। উমায়ের মাথা নাড়িয়ে ভাবীর সাথে চলে গেল৷ বুরাক চারপাশে চোখ বুলালো। বাড়ি অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে। বুরাক হেটে তার ঘরে গেল। তার ঘরের দরজা বন্ধ। দরজার ছিটকিনি খুলে ভেতরে উঁকি দিলো। ঘর অন্ধকার, ধীরে ধীরে প্রবেশ করে লাইট জ্বালালো। চারপাশে চোখ বুলিয়ে বুরাক হাসলো। এখনো তার ছোটোবেলার প্রিয় মিকি মাউসের চাদরটা বিছানায় বিছানো। বুরাক এগিয়ে গিয়ে খাটে বসলো৷ এত বছর পর তার মন শান্তি পাচ্ছে তার ঘরে এসে।মন চাচ্ছে আবার ছোটোবেলায় ফিরে যেতে। হঠাৎ বুরাক খেয়াল করলো মন্টি আর সাহিবা উঁকি দিচ্ছে দরজা দিয়ে। বুরাক হেসে বলল-
“আপনারা বাহিরে কি করছেন? ভেতরে আসেন।”
মন্টি আর সাহিবা ধীরে ধীরে এগিয়ে আসলো। মন্টি ভ্রু কুঁচকে বলল-
“আপনি কি সত্যি আমাদের চাচু?”
“আপনাদের কি মনে হয়?”
“দাদী বলল আব্বু আর দাদু মজা করেছে।”
সাহিবা বলল-
“আচ্ছা চাচু আপনি কোথায় ছিলেন এত বছর?”
বুরাক হাত বাড়িয়ে তাদের কাছে ডাকলো। মন্টি আর সাহিবা এগিয়ে গিয়ে বুরাকের পাশে দাঁড়াল। বুরাক তাদের পাশে বসতে বলল। তারা দুজন বুরাকের দু পাশে বসলো। বুরাক মুচকি হেসে বলল-
“আমি অনেক দূর ছিলাম এত বছর। আপনাদের সাথে দেখা করার সুযোগ পাই নি।”
সাহিবা বলল-
“আব্বু আপনার উপর রেগে আছে কেন চাচু?”
“আমি এত বছর আসি নি দেখা করতে তাই।”
মন্টি বলল-
“আবারো কি চলে যাবেন?”
“হয় তো”
সাহিবা বলল-
“আপনার সাথে কে এসেছে?”
“উনাকে আপনারা আন্টি বলে ডাকবেন। উনি আমার ফ্রেন্ড হোন”
মন্টি এক ভ্রু উঁচু করে বলল-
“ফ্রেন্ড না-কি গার্লফ্রেন্ড?”
“এই, তুমি এসব কথা বার্তা কোথা থেকে জেনেছো?”
“আম্মু একবার আন্টুকে বলেছিল একজন ছেলে ও একজন মেয়ে কখনো ফ্রেন্ড হতে পারে না।”
“আন্টু? রেনুর কথা বলছো?”
“হ্যাঁ আমাদের তো একটাই আন্টু।”
“ও আসে না?”
সাহিবা বলল-
“প্রতি সপ্তাহে আসে। কাল আসবে হয় তো আবার।”
বুরাক ভাবছে রেনুর সাথে কথা বলবে। মেয়েটা প্রায়ই তাকে কল করতো। কিন্তু বুরাক ওর কল রিসিভ করতো না। তখনই মা আসলেন-
“বুরাক, উমায়ের এর জন্য কি রান্না করবো? মেয়েটাকে দেখে আমার মনে হচ্ছে সে কোন সাধারণ মেয়ে না।”
সাহিবা দাঁড়িয়ে বলল-
“সাধারণ না, মানে এলিয়েন?”
বুরাক ভ্রু কুঁচকে বলল-
“মানে কি?”
মন্টি তাকিয়ে বলল-
“আমরা ইউটিউবে দেখেছিলাম যারা সাধারণ মানুষ না তারা এলিয়েন হয়।”
বুরাক হেসে দিয়ে বলল-
“ইউটিউবের যাতা কন্টেন্ট তারা পোস্ট করে।”
বুরাক মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল-
“হ্যাঁ আম্মু সে খানদানী মানুষ। কিন্তু খাবার নিয়ে তার সমস্যা নেই। যা খুশী রান্না করো।”
মা বুরাকের চেহারায় হাত বুলিয়ে বলল-
“আজ সব তোর পছন্দের খাবার বানাবো।”
বুরাক মায়ের হাত ধরে হাতে চুমু দিয়ে জড়িয়ে ধরলো। এত শান্তি সে কখনো অনুভব করেনি। হঠাৎ বাহির থেকে চিৎকার চেচামেচির শব্দ আসলো। মা আর বুরাক দ্রুত বাহিরে গিয়ে দেখে বশির শাফিয়ার সাথে ঝগড়া করছে। আর উমায়ের চুপচাপ একপাশে দাঁড়িয়ে আছে। বুরাক দ্রুত গিয়ে উমায়ের এর পাশে দাঁড়াল৷ উমায়ের এর ইচ্ছে করছে চিৎকার করে কাঁদতে। কোথায় এসে ফেঁসে গেল সে। বশির বুরাককে দেখে দাঁতে দাঁত চেপে বলল-
“এই সন্ত্রাসটা আবার আমার সামনে আসলো? আমি সত্যি বলছি ও আর একবার আমার সামনে আসলে আমি বাসা ছেড়ে চলে যাব।”
“ভাইয়া, তুমি আমাকে যা খুশী বলো। কিন্তু ভাবীর সাথে কেম রাগারাগি করছো?”
“আমি স্ত্রীকে আমি যা খুশী বলল। তোর কোন অধিকার নেই আমাদের মাঝে বলার।”
বুরাক আর কিছু বলল না। চুপচাপ মাথা নিচু করে নিজের ঘরে চলে আসলো। উমায়ের থমকে দাঁড়িয়ে আছে। বুরাকের ভাই এখন বুরাককে কি বলল, সন্ত্রাস?
চলবে…….