ভরসার_দুহাত পর্ব_১৪

0
298

#ভরসার_দুহাত
#শোভা_আক্তার(লাভলী)
#পর্ব_১৪

বুরাক বাগানের সামনে দাঁড়িয়ে আছে পকেটে হাত দিয়ে। সে ভেবেছিল বাবা আর ভাই তাকে বুঝার চেষ্টা করবে কিন্তু না। সে তার পরিবারকে অনেক হারিয়ে ফেলেছে। হয় তো পনেরো বছর আগেই হারিয়েছে। বুরাক চোখ বন্ধ করে লম্বা নিশ্বাস নিয়ে ছাড়লো। হঠাৎ তার হাতে টান অনুভব করলো। পেছনে ফিরে দেখে উমায়ের। উমায়েরকে দেখে মনে হচ্ছে সে রেগে আছে। বুরাক বুঝতে পারলো বিষয়টা। মাথা নিচু করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল। উমায়ের বুরাকের হাত ছেড়ে হাত আড়াআড়ি ভাবে ভাজ করে বলল-
“একটা প্রশ্নের উত্তর চাই”
“আমি জানি তুমি কি জিজ্ঞেস করতে চাও। উমায়ের, আমি আর কিছুক্ষণ সময় চাই। আমি তোমাকে সব বলবো। কিন্তু তার আগে আমার পরিবারকে আমার বুঝাতে হবে। যাতে এইখান থেকে চলে যাওয়ার পর তারা আমাকে ঘৃণা নিয়ে মনে না করে।”
“সন্ত্রাস, আমার বিশ্বাস হচ্ছে না তোমার ভাই তোমাকে সন্ত্রাস বলে ডেকেছে।”
বুরাক উমায়ের এর দিকে তাকাল। উমায়ের রাগে গজগজ করছে। বুরাক কিছু বলার আগেই উমায়ের চলে গেল ভেতরে। বুরাক তাকিয়ে আছে উমায়ের এর যাওয়ার পথে।

অন্যদিকে…..
নুসাইফা বেগম এবং ফিরোজ আনোয়ার হসপিটাল এসেছে। একটা কেবিনের বাহিরে তিনজন বডিগার্ড দাঁড়িয়ে আছে। ফিরোজ আনোয়ার ও নুসাইফা বেগমকে দেখে তারা সালাম দিয়ে কেবিনের দরজা খুলে দিলো। তারা দুজন ভেতরে প্রবেশ করে দেখে ববি বিছানায় হেলান দিয়ে নিউজপেপার পড়ছে। ববি তাদের দেখে সালাম দিয়ে সোজা হয়ে বসলো। তারা সালামের উত্তর নিয়ে পাশে বসলো। ববি নুসাইফা বেগমের হাতে টিফিনবক্স দেখে বলল-
“আন্টি আপনি আজও রান্না করে নিয়ে এসেছেন। আমাকে তো প্রতিদিন খাবার দিয়ে যায়। আমি খাই না বলে ডাক্তার বকাঝকা করে।”
“হসপিটালের খাবার থেকে ভালো তুমি ঘরে রান্না করা খাবার খাও। তাহলে তারাতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে।”
ববি মুচকি হাসলো। ফিরোজ আনোয়ার ববির দিকে একটা প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বলল-
“এটা তোমার জন্য”
“স্যার আপনি অলরেডি আমার এত সাহায্য করেছেন আবার এটা?”
“খুলে দেখো তোমার কাজে আসবে।”
ববি প্যাকেটটা নিয়ে খুলে দেখে মোবাইল বক্স। ববি ফিরোজ আনোয়ার ও নুসাইফা বেগমকে ধন্যবাদ জানালো।নুসাইফা বেগম প্লেটে খাবার বেড়ে ববির দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল-
“ডাক্তার বলেছে আর ২ দিন হসপিটালে থাকতে হবে। তারপর তোমাকে রিলিজ করে দিবে।”
ফিরোজ আনোয়ার বলল-
“তোমাকে একটা কথা বলতে চাই। জানি না তুমি রাজি হবে কিনা কিন্তু বলাটা জরুরি।”
“বলুন স্যার”
“খালিদ খান তো পলাতক। পুলিশ তাকে খুজে বেড়াচ্ছে। তুমি আগে ওর সাথে কাজ করতে এটা সবাই জানে। আবার তারা এইটাও জানে খালিদ খানের সাথে তোমার ঝগড়া হয়েছে। যার কারণে তুমি আর খালিদ খানের সাথে কাজ করো না। হসপিটাল থেকে বের হওয়ার পর তোমাকে একটা দলিলে সাইন করে স্টেটমেন্ট দিতে হবে তুমি আগে খালিদ খানের লোক ছিলে। আর এটাও বলবে কি কারণে এখন আর তোমাদের মাঝে কোন সম্পর্ক নেই।”
ববি মাথা নিচু করে ফেলল। কি করবে সে বুঝতে পারছে না। ফিরোজ আনোয়ার আবার বলল-
“তুমি যদি খালিদ খানের বিরুদ্ধে স্টেটমেন্ট দাও পুলিশ তোমাকে অ্যারেস্ট করবে না।”
ববি ফিরোজ আনোয়ারের দিকে তাকিয়ে বলল-
“স্যার আমি স্টেটমেন্ট দিতে রাজি। আমি অ্যারেস্ট হতে ভয় পাই না। গুনাহ তো অনেক করেছি জীবনে। শাস্তি তো পেতেই হবে।”
“নিজের গুনাহ কবুল করে পস্তানোই হলো অনেক বড়ো শাস্তি। জেনে খুশী হলাম তুমি তোমার দোষ কবুল করছো।”
“জি”
“আর হ্যাঁ তোমাকে এখন আমার সাথে সাথে থাকতে হবে আমার লোক হয়ে। চিন্তা করো না আমার অবৈধ কাজ নেই। যা আছে আলহামদুলিল্লাহ সব হালাল।”
“জি স্যার আপনার উপর ভরসা আছে।”
“ধন্যবাদ, এখন মোবাইলটা অন করে বুরাককে কল দাও। আমার টেনশন হচ্ছে উমায়েরকে নিয়ে।”
“জি স্যার”
নুসাইফা বেগম ববির হাত থেকে মোবাইলের বক্স নিয়ে পাশে রেখে বলল-
“আগে খাবার খাও তারপর কল দিবে।”
ববি হেসে মাথা নাড়াল।

উমায়ের উঠানের চৌকিতে বসে আছে। তার বেশ অস্বস্তি হচ্ছে এখানে। কাওকেই তো চেনে না। যাকে চেনে তাকেও এখন অচেনা লাগছে। সাহিবা আর মন্টি কথা বলতে বলতে ঘর থেকে বের হলো। বের হয়ে উমায়েরকে চৌকিতে বসে থাকতে দেখে তার দিকে এগিয়ে গেল। উমায়ের তাদের দেখে নড়েচড়ে বসে মুচকি হাসলো। সাহিবা আর মন্টি উমায়েরকে সালাম দিলো। উমায়ের সালামের উত্তর নিয়ে তাদের বসতে বলল। সাহিবা উমায়ের এর পাশে বসে বলল-
“আন্টি, তুমি দেখতে একদম বার্বিডল।”
উমায়ের হেসে সাহিবার গাল ধরে টেনে বলল-
“আর আপনি একদম ডিজনি প্রিন্সেসদের মতো দেখতে।”
“তাই?”
“হ্যাঁ, আপনার নাম কি?”
“আমার নাম সাহিবা শাহ আর ও আমার বড়ো ভাই মন্টি শাহ।”
“আপনাদের নামগুলো বেশ সুন্দর।”
মন্টি বলল-
“আপনার নাম কি আন্টি?”
“উমায়ের”
“আপনার নাম আমি প্রথমবার শুনলাম।”
উমায়ের জবাবে হাসলো। তারা তিনজন বসে অনেকক্ষণ গল্প করলো। সাহিবা আর মন্টি কথায় কথায় ঝগড়া করে আর উমায়ের তাদের থামায়। শাফিয়া রান্নাঘর থেকে বের হয়ে উমায়ের আর বাচ্চাদের দেখে হাসলো। বাগানের দিকে তাকিয়ে দেখে বুরাক সেখানেই দাঁড়িয়ে সিগারেটের ধোঁয়া উড়াচ্ছে। শাফিয়া এগিয়ে গেল বুরাকের দিকে। বুরাক ভাবীকে আসতে দেখে হাতে থাকা সিগারেট ফেলে দিলো। ভাবী বুরাকের সামনে এসে ভ্রু কুঁচকে বলল-
“এত বড়ো হয়ে গেলি যে সিগারেটও খাওয়া শুরু করলি।”
বুরাক তার ঠোঁট ঢেকে বলল-
“ইয়ে মানে.. ভাবী আসলে..”
“আচ্ছা থাক বড়ো হয়েছিস বলে কিছু বললম না। উমায়ের তোর কি হয় বল।”
“সে আমার কিছু হয় না।”
“মিথ্যে বলবি না।”
“সত্যি বলছি ভাবী, ভাইয়াকে বলো না একবার আমার কথা শুনতে। আমার কথা শোনার পরও যদি ভাইয়া আমাকে বলে চলে যেতে আমি চলে যাব। আর কখনো ফিরে আসবো না।”
“আমি প্রায়ই তোর ভাইয়াকে দেখতাম তোকে মনে করতো। কান্নাও করতে দেখেছি অনেকবার। সে তোকে ঘৃণা করে না। আমি বুঝানোর চেষ্টা করেছি বলে আমার সাথে ঝগড়া করেছে। আমি আম্মুকে বলেছি বশির আর আব্বুকে বুঝাতে। একমাত্র উনিই পারবেন সব ঠিক করতে।”
“আব্বু আমাকে একবারো জিজ্ঞেস করেনি আমি কেমন আছি। তাকিয়ে পর্যন্ত দেখছে না আমার দিকে। আর ভাইয়া চলেই গেল বাসা থেকে।”
“ফ্যাক্টরি গিয়েছে, কাজ শেষ হলেই এসে পরবে। তোর ভাই সাহিবা আর মন্টিকে ছাড়া ঘুমাতে পারে না। কি মনে হয় সে ল বাসা ছেড়ে চলে যাবে? কখনো না।”
“হুমম, আচ্ছা আমি শুনো উমায়ের এখানে কাওকে চিনে না। তোমরা প্লিজ ওর একটু খেয়াল রেখো। অনেক বিপদ পেরিয়ে আজ ও বেঁচে আছে।”
“বলিস কি? চিন্তা করিস না আমরা আছি। ভেতরে আয় এখন। আর সিগারেট খেতে দেখলে মাটিতে পুঁতে ফেলব।”
বুরাক হেসে মাথা নাড়াল। ভাবী চলে গেল ভেতরে। বুরাক কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ভেতরে গেল। উমায়েরকে দেখে ধীরপায়ে এগিয়ে গেল সেখানে। উমায়ের বুরাককে দেখে বিরক্ত হলো। বুরাক উমায়ের এর এক্সপ্রেশন দেখে বলল-
“রেগে আছো আমার উপর?”
“না”
বুরাক গিয়ে উমায়ের এর পাশে বসলো। বুরাক বসতেই উমায়ের উঠে দাঁড়াল। সাহিবা আর মন্টি একবার বুরাক আর একবার উমায়েরকে দেখছে। বুরাক সাহিবা আর মন্টির দিকে তাকিয়ে বলল-
“চলো আমরা আইসক্রিম খেতে যাই।”
মন্টি বলল-
“সত্যি নিয়ে যাবে চাচু?”
“হ্যাঁ নিয়ে যাব। যাও তোমরা আম্মুর কাছ থেকে পারমিশন নিয়ে আসো।”
সাহিবা আর মন্টি “ওকে” বলেই দ্রুত হেটে ঘরে গেল। উমায়ের হাত আড়াআড়ি ভাবে ভাজ করে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে। বুরাক উঠে গিয়ে উমায়ের এর পাশে দাঁড়াল।
“আমি খালিদ খানের লোক।”
উমায়ের চমকে উঠল। অবাক হয়ে বুরাকের দিকে তাকিয়ে রইল। বুরাক উমায়ের এর দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সাহিবা আর মন্টি দৌড়ে এসে বুরাকের সামনে আসলো। মন্টি বলল-
“চলো চাচু আম্মু পারমিশন দিয়ে দিয়েছে।”
“সত্যি তো?”
সাহিবা বলল-
“হ্যাঁ চাচু সত্যি।”
“আচ্ছা চলো”
বুরাক এক নজর উমায়েরকে দেখে মন্টি আর সাহিবার হাত ধরে হাঁটা ধরলো। উমায়ের বুরাকের যাওয়ার পথে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চৌকিতে বসে পরলো৷ শাফিয়া ঘর থেকে বের হয়ে এসে উমায়ের এর কাছে দাঁড়াল।
“উমায়ের, খাওয়া দাওয়া করবে না? তোমার তো ক্ষুধা পেয়েছে হয় তো।”
উমায়ের দাঁড়িয়ে না সূচক মাথা নাড়াল। শাফিয়া চোখ ছোটো ছোটো করে বলল-
“মিথ্যে বলবে না। আমি বুরাকের শুধু ভাবী না মামাতো বোনও হই। তাই তোমারও বোন হলাম। যে কোন অসুবিধে হলে আমাকে বলবে কেমন? বুরাক তো বাচ্চাদের নিয়ে গেল বাহিরে। আসুক তারপর আমরা একসাথে লাঞ্চ করবো।”
উমায়ের মাথা নাড়াল। শাফিয়া মুচকি হেসে চলো গেল। উমায়ের ভাবছে বাড়ির মানুষগুলো অনেক ভালো। হঠাৎ দেখলো ছাদের সিঁড়ি বেয়ে বুরাকের বাবা নামছে। উমায়ের মাথা নিচু করে ফেলল। বুরাকের বাবা উমায়েরকে দেখে বলল-
“বুরাককে কবে থেকে চেনো তুমি?”
হঠাৎ প্রশ্ন করায় উমায়ের ভয় পেয়ে গেল। মাথা নিচু রেখেই বলল-
“৬ মাস হবে।”
“কতটুকু চেনো-জানো তাকে?”
উমায়ের মাথা তুলে বুরাকের বাবার দিকে তাকাল। কি উত্তর দিবে সে? বুরাক তো তার জন্য রহস্যময় মানব। বুরাকের বাবা আবার বলল-
“সময় আছে ছেড়ে দাও ওকে। নাহলে সারাজীবন কষ্ট পেতে হবে।”
বলেই বুরাকের বাবা ঘুরে দাঁড়াল। ঘুরতেই দেখে উনার স্ত্রী দাঁড়িয়ে আছে। উনি চুপচাপ পাশ কাটিয়ে চলে গেলেন। বুরাকের মা হেটে এসে উমায়ের এর সামনে দাঁড়াল।
“ছেলের উপর রেগে আছে এখন উনি। তুমি মন খারাপ করো না মা। তোমার আর বুরাকের মাঝে কি সম্পর্ক আমি জানি না। আমার ছেলে যেসব কাজের সাথে জড়িত সেসবের চিন্তা করে আমিও এমন কিছুই বলতে চাই তোমাকে।”
“আন্টি আমার আর বুরাকের মাঝে এমন কোন সম্পর্ক নেই যার ফলে আমাকে পস্তাতে হবে বা আমি কষ্ট পাবো। বুরাক কাল পরশু-ই আমাকে আমার বাসায় দিয়ে আসবে।”
বুরাকের মা কিছু বলল না। উমায়ের এর মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুরে হাঁটা ধরলো। কিছুক্ষণ পর বুরাক আসলো। সাহিবা দৌড়ে এসে উমায়ের এর সামনে দাঁড়িয়ে আইসক্রিম এগিয়ে দিয়ে বলল-
“আন্টি, এটা তোমার জন্য।”
“আমি আইসক্রিম খাই না বাবু।”
“আমি তো অনেক ভালোবেসে নিয়ে আসলাম তোমার জন্য।”
“আচ্ছা এখন রেখে দাও আমি পরে খেয়ে নিব।”
“সত্যি তো?”
“সত্যি”
সাহিবা দৌড়ে রান্নাঘরে চলে গেল। শাফিয়া বাহিরে এসে বুরাক আর উমায়েরকে বলল হাতমুখ ধুয়ে নিতে খাবার রেডি। বুরাক উমায়েরকে এক নজর দেখে বাথরুমের দিকে হাটা ধরলো। উমায়ের সেইখানেই দাঁড়িয়ে রইল। বুরাক হাতমুখ ধুয়ে এসে উমায়েরকে বলল যেতে। উমায়ের হাটা ধরতেই বুরাক মায়ের ঘরে চলে গেল। সবসময় সেখানেই মাটিতে মাদুর বিছিয়ে খাওয়া দাওয়া করা হয়। বুরাক গিয়ে দেখে বাবা খাটে হেলান দিয়ে বসে টিভি দেখছে। বুরাককে দেখে ভাবী ভেতরে এসে বসতে বলল। বুরাক এসে মায়ের পাশে বসলো। ভাবী বুরাককে একা আসতে দেখে জিজ্ঞেস করলো-
“উমায়ের কোথায় বুরাক?”
“আসছে সে”
মা ভাত প্লেটে বাড়তে বাড়তে জিজ্ঞেস করলো-
“তোর গালে আর হাতে কি হয়েছে?”
“লম্বা কাহানী, ভাইয়া আসুক তারপর বলবো। আচ্ছা ভাইয়া খেতে আসবে না?”
ভাবী বলল-
“তোর ভাইয়া দুপুরের খাবার বাহিরেই খায়৷ রাতে আসবে একেবারে।”
বুরাক আর কিছু বলল না। তখনই ধীরপায়ে হেটে উমায়ের আসলো। ভাবী উমায়েরকে দেখে বসতে বলল। উমায়ের গিয়ে ভাবীর পাশে বসলো। বুরাক বলল-
“সাহিবা আর মন্টি কোথায়?”
“ওদের তো খাইয়ে দিতে হয়। আর ওরা স্কুল থেকে এসে নাস্তা করেছিল তাই এখন খাবে না।”
উমায়ের চোখ তুলে বুরাকের বাবার দিকে তাকাল। উনি বার বার আড়চোখে বুরাককে দেখছে উমায়ের বিষয়টা খেয়াল করলো। সবাই একসাথে খাওয়া দাওয়া করে নিলো। উমায়ের কখনো ঝাল খাবার খায় না। কিন্তু বুরাকের মা ভাবী এত ভালো রান্না করেছে না খেয়েও পারে নি। উমায়ের এর নাক লাল দেখে বুরাকের মা হেসে বলল-
“উমায়ের তোমার হয় তো ঝাল খাবার খেয়ে অভ্যেস নেই তাই না?”
“জি আন্টি, ছোটো বেলা থেকেই ঝাল খেতে পারি না। কিন্তু আপনাদের হাতের রান্না খুব মজাদার।”
“ভর্তা ভাজি সব বৌমা করেছে।”
উমায়ের ভাবীর দিকে তাকিয়ে বলল-
“ভাবী, যত প্রশংসা করবো তত কম।”
“করো করো, এমনিতেই অনেক বছর হলো প্রশংসা শুনি না। আর বশির বলে আমি না-কি খাবার বানাতে পারি না মজা করে। আবার আমার হাতের রান্না ছাড়া খাবেও না।”
“আমার আব্বুও এমন।”
“তোমার বাসায় কে কে আছেন?”
“আম্মু, আব্বু, আমি ও আমার দুই ছোটো ভাই।”
বুরাকের বাবা বলে উঠলেন-
“নিজের এত সুন্দর পরিবার ছেড়ে পালিয়ে আসার কারণ বুঝলাম না।”
উমায়ের বিরক্ত হয়ে বলল-
“আপনাকে কে বলেছে আমি পালিয়ে এসেছি? আর আমি কেন-ই বা পালাবো? আমার বাবা একজন চেয়ারম্যান। উনার শত্রুর অভাব নেই। আমার পরিবারের উপর নিয়ে অনেক ঝড় গিয়েছে যার ফলে আজ আমি এখানে। আর আপনি চিন্তা করছেন কেন আমি থাকবো না আপনাদের বাসায়।”
বুরাক ধমকের স্বরে বলল-
“উমায়ের, তুমি আমার বাবার সাথে ঠিক মতো কথা বলো।”
“আমি ঠিক মতোই কথা বলছি। অকারণে এমন অপবাদ আমি সহ্য করতে পারবো না। তুমি আমাকে এখানে নিয়ে আসার আগে একবারো বলেছো যে তুমি তোমার বাসায় নিয়ে যাচ্ছো আমায়? তোমার উপর ভরসা করেই তো এসেছিলাম আমি। আমার ভরসার এই পরিণতি?”
উমায়ের রাগে ফুঁসছে। বুরাক কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। হঠাৎ করেই পরিবেশ নিরব হয়ে গেল। উমায়ের মাথা নিচু করে ঘনঘন নিশ্বাস ফেলছে। ভাবী উঁচু স্বরে সাহিবাকে ডাকলো। সাহিবা দৌড়ে আসতেই ভাবী সাহিবাকে বলল উমায়েরকে নিয়ে ঘরে যেতে। উমায়ের চুপচাপ উঠে সাহিবার সাথে চলে গেল। বুরাক কপালে হাত দিয়ে বসে আছে। বাবা নিশ্চয়ই আরো রেগে গিয়েছে। মা পরিস্থিতি দেখে শান্ত গলায় বললেন-
“মেয়েটাকে অকারণে এসব কেন বললেন আপনি? ওরা তো বলেছেই ওরা পালিয়ে আসে নি।”
“তো কি একটা মেয়ে অকারণেই তার পরিবার ছেড়ে একটা ছেলের সাথে এসে পরবে?”
বুরাক কপাল থেকে হাত সরিয়ে মাথা নিচু রেখেই বলল-
“আমি যার জন্য কাজ করতাম সে উমায়ের এর বাবাকে শত্রু ভাবে। ইলেকশনে হারার পর সে আমাকে বলে উমায়ের এর পরিবারকে মেরে ফেলতে। কিন্তু আমি পারি নি। কারণ উমায়ের সেই মেয়ে যাকে আমি পছন্দ করি।”
বাবা রাগী কন্ঠে বলে উঠলো-
“বাহ বুরাক বাহ, কত গর্বের সাথে বলছো তুমি একজন গুন্ডা একজন সন্ত্রাসের সাথে কাজ করো। আর তার কথায় কারো খুন করতে যাচ্ছিলে। সত্যি করে বলো তো এর আগে কতজনকে মেরেছো।”
“অনেক জনকে মেরেছি আব্বু, অনেকজনকে। আমি সেসব মানুষদেরই মেরেছি যারা পরিবেশ দূষিত করে বেড়াতো। কিন্তু আসল কথা কি জানেন? আপনার ছেলের সাথে কখনো ভালো মানুষের মৃত্যু হয়নি। উমায়ের এর বাবা অনেক ভালো মানুষ। আমি পারি নি উনাকে মারতে।”
“তবুও আমার ঘৃণা হচ্ছে তোমাকে আমার চোখের সামনে দেখে। তোমাকে দেখলে আমার বার বার সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ে। যখন তোমার কারণে আমার একমাত্র মেয়ের…”
বুরাকের বাবা থেমে গেলেন। রাগে উনার নিশ্বাস ভারী হয়ে গিয়েছে। বুরাকের মা মাথা নিচু করে ফেললেন। এত বছর এই বিষয়ে কোন কথা হয় নি। আর আজ অতীতের প্রত্যেক পৃষ্ঠা খুলে যাচ্ছে। ভাবী বলল-
“বাবা, আমরা মানছি বুরাকের দোষ ছিল। কিন্তু আপনার কি মনে হয় না সে এর জন্য অনেক কঠিন শাস্তি পেয়েছে?”
“না, আমার মনে হয় ওকে তখনই আমার মেরে ফেলা উচিত ছিল। ওকে মেরে ফেললে আজ এই দিন দেখতে হতো না।”
বুরাক মাথা নিচু করে রেখেছে। সে মানছে সে দোষী, তাই তো এতদিন পরিবার থেকে দূর ছিল। মা বললেন-
“তো তখন মারলেন না কেন? কেন ওকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছিলেন? মেরে ফেলতেন, ও মরে গেলে আমিও এত বছর শাস্তি পেতাম না।”
বাবা জবাব দিলেন না। বুরাক ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়িয়ে বলল-
“আমি উমায়েরকে দেখে আসি। আমি ওর বাবাকে ওয়াদা করেছি ওর কোন ক্ষতি হতে দিব না। আমার উপর উনার বিশ্বাস আছে। আমি উনার বিশ্বাস নিয়ে খেলতে চাই না।”
বলেই বুরাক চলে গেল। বাহিরে গিয়ে দেখে মন্টি, সাহিবা আর উমায়ের বাগানে হাঁটছে আর কথা বলছে। বুরাক এগিয়ে গেল তাদের দিকে। উমায়েরকে আসতে দেখে মুখ ঘুরিয়ে ফেলল। বুরাক তাদের কাছে গিয়ে বলল-
“বাচ্চারা তোমরা যাও। আম্মু তোমাদের খাইয়ে দিবে বলে বসে আছে।”
মন্টি আর সাহিবা দ্রুত হেটে চলে গেল। বুরাক কিছু বলার আগেই উমায়ের বলল-
“সরি, আমি তোমার বাবার সাথে সত্যি খারাপ ব্যবহার করেছি। এখনই গিয়ে মাফ চেয়ে নিচ্ছি।”
উমায়ের যেতে নিচ্ছিল তখনই বুরাক তার হাত ধরে ফেলল। উমায়ের বুরাকের দিকে তাকাল। বুরাক চোখ মুখ শক্ত করে উমায়ের এর দিকে তাকিয়ে বলল-
“আমি কেন আমার পরিবার থেকে দূর, আমাকে কেন সবাই সন্ত্রাস ডাকে, আমি খালিদ খানের সাথে কেন জড়িত শুনবে না?”
উমায়ের দু’বার চোখের পলক ফেলল। বুরাক উমায়েরকে টেনে বরাবর দাঁড় করালো। বুরাক চোখ বন্ধ করে লম্বা নিশ্বাস নিয়ে ছেড়ে চোখ খুলে বলল-
“আমার সম্পর্কে জানার পর প্রত্যেক ডিসিশন তুমি নিবে। আমার উপর ভরসা করবে কিনা সব তোমার উপর।”
“তারাতাড়ি বলো বুরাক, আমার হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছে।”
“১৪ বছর আগে আমার দোষের কারণে আমার আপন ছোটো বোন রাশিদ খান ও তার ৩ বন্ধুর শিকার হয়েছিল।”

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here