ভরসার_দুহাত পর্ব_১৫

0
340

#ভরসার_দুহাত
#শোভা_আক্তার(লাভলী)
#পর্ব_১৫

“১৪ বছর আগে আমার দোষের কারণে আমার আপন ছোটো বোন রাশিদ খান ও তার ৩ বন্ধুর শিকার হয়েছিল।”
উমায়ের চমকে উঠল। যে যখন থেকে এই বাসায় এসেছে শকড এর উপর শকড হচ্ছে। বুরাক উমায়ের এর হাত ছেড়ে বলল-
“বর্ষা শাহরিয়ার শাহ, আমার ছোটো বোন…”

অতীতের অংশ…..
শাহ পরিবারে ৫ জন সদস্য। পুরো এলাকায় শাহ পরিবারকে সবচেয়ে খুশী পরিবার বলে সবাই। পরিবারের কর্তা শাহরিয়ার শাহ পেশায় একজন জামা বিক্রেতা। মার্কেটে উনার নিজস্ব জামার দোকান রয়েছে। উনার স্ত্রী বাসায় থ্রি পিস বানানোর কাজ করেন। উনাদের ৩ সন্তান। বড়ো ছেলে বশির শাহরিয়ার শাহ, ছোটো ছেলে বুরাক শাহরিয়ার শাহ, এবং একমাত্র মেয়ে বর্ষা শাহরিয়ার শাহ। বড়ো ছেলে এবার এসএসসি দিচ্ছে। ছোটো ছেলে ক্লাস এইটে পড়ছে। আর মেয়ে ক্লাস সেভেনে। তিনজনই বেশ ভালো পড়াশোনায়। ছোটো ছেলে-মেয়েকে নিয়ে শাহরিয়ার শাহ স্কুলে গেলেন বড়ো ছেলেকে পরীক্ষা দেয়ানোর জন্য। বুরাকের থেকে আড়াই বছর ছোটো। একে অপরের সাথে সবসময় তাদের ঝগড়া লেগেই থাকে। গতকাল রাতেও চকোলেট নিয়ে ঝগড়া করেছে। আর আজ একে অপরের দিকে তাকিয়েও দেখছে না। বুরাকের রাগ একটু বেশী। সে কখনো নিজ থেকে কথা বলে না। বর্ষা-ই সবসময় বুরাকের কাছ থেকে মাফ চায়। এখন তার দোষ থাকুক বা না থাকুক। শাহরিয়ার শাহ ছেলে মেয়েদের চেহারা দেখে হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করলেন-
“তোমাদের ঝগড়া এখনো শেষ হয়নি?”
বুরাক আর বর্ষা জবাব দিলো না। বশির বলল-
“তারা তো সবসময় এভাবেই ঝগড়া করে। কিছুক্ষণ পর দেখবে আবার ঠিক হয়ে গিয়েছে।”
বুরাক বলল-
“না আমি আর ওকে মাফ করবো না।”
বর্ষা ভেংচি কেটে বলল-
“আমি নিজ থেকে আর কথা বলবো না। দেখবো নি আমার সাথে কথা না বলে থাকে কিভাবে।”
বুরাক মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে বলল-
“মরে যাব তবুও কথা বলবো না।”
বশির বুরাকের মাথায় আস্তে করে থাপ্পড় মেরে বলল-
“বলেছি না মরার মুখে না আনতে? ছোটো মুখে বড়ো বড়ো কথা সবসময়।”
“ওকে বলে দাও আমি নিজ থেকে কথা বলার মানুষ না। সবসময় ও নিজেই আসতো আমার কাছে কথা বলার জন্য।”
“আমার বলতে হবে না ও শুনেছে।”
বুরাক বাঁকা করলো। শাহরিয়ার শাহ বললেন-
“আচ্ছা তোদের ঝগড়া এখন সাইডে রাখ। আমরা এসে পরেছি। বশির, তুই যা বাবা ভালো মতো সব প্রশ্নের উত্তর দিবি ওকে?”
“জি আব্বু, আল্লাহ হাফেজ।”
“আল্লাহ হাফেজ।”
বশির দৌড়ে স্কুলের ভেতর চলে গেল। শাহরিয়ার শাহ ছেলে মেয়েদের উদ্দেশ্যে বললেন-
“আপন ভাই বোনদের মধ্যে ছোটো ছোটো বিষয় নিয়ে ঝগড়া স্বাভাবিক। কিন্তু আমার ছেলে মেয়ে ঝগড়া করলে আমার ভালো লাগে না৷ আমার জন্য হলেও তোরা একে অপরের সাথে কথা বল। আমি ওয়াদা করছি এরপর থেকে যখন চকোলেট আনবো। সবার জন্য দু’টো করে আনবো।”
বর্ষা বুরাক একে অপরের দিকে তাকিয়ে আবার মুখ ফিরিয়ে নিলো। শাহরিয়ার শাহ শব্দহীন হাসলেন। উনার ছেলে মেয়েরা শুধরানোর মানুষ না। ছেলে মেয়েকে নিয়ে উনি বাজারে গেলেন। বর্ষা কাছা মাছের গন্ধ সহ্য করতে পারে না। শাহরিয়ার শাহ বুরাকের হাতে বর্ষার হাত দিয়ে কঠোর গলায় বলল-
“বোনের খেয়াল রাখ, আমি আসছি কিছুক্ষণের মধ্যে। আর খবরদার তোরা ঝগড়া করবি না।”
বুরাক মাথা নাড়াল। শাহরিয়ার শাহ যেতেই বর্ষার হাত ছেড়ে মুখ ঘুরিয়ে রাখলো। বর্ষাও ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে হাত আড়াআড়ি ভাবে ভাজ করে। বর্ষা ভাবলো বুরাককে ভয় দেখানো যাক। বুরাক চারপাশে চোখ বুলাচ্ছে। সামনেই ছোটো ছোটো মুরগীর বাচ্চা বিক্রি করছে। বুরাক এক নজর বর্ষাকে দেখে এগিয়ে গেল। সে গিয়ে মুরগীর বাচ্চা দেখছে। কিছুক্ষণ পর পেছনে ফিরে দেখে বর্ষা নেই৷ বুরাক চমকে উঠলো। দ্রুত হেটে গিয়ে এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখে বর্ষা নেই। ভাবলো হয় তো বাবার সাথে গিয়েছে। কিন্তু সে তো মাছের গন্ধ সহ্য করতে পারে না। সেখানে তো ভুলেও যাবে না। তবুও বুরাক কিছুটা এগিয়ে গিয়ে দেখে বাবা দাঁড়িয়ে মাছ কাটাচ্ছে৷ কিন্তু বর্ষা কোথাও নেই। বুরাকের ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। আবার ফিরে এসে বাহিরে গেল। এদিক সেদিক করে সব জায়গা খুঁজে দেখলো। কিন্তু বর্ষা কোথাও নেই৷ বুরাকের কান্না কান্না ভাব চলে আসলো মিনিটেই। তখনই বাবা আসলেন৷ এসে বুরাককে একা দেখে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলেন-
“বর্ষা কোথায়?”
বুরাক বাবার দিকে নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে আছে। বাবা জবাব না পেয়ে আবার জিজ্ঞেস করলো। কিন্তু বুরাক জবাব দিচ্ছে না। বাবা এক সময় ধমক দিয়ে জিজ্ঞেস করলো-
“একটা চড় মেরে দাঁত ফেলে দিব। কিছু জিজ্ঞেস করছি আমি তুমি জবাব দিচ্ছো না।”
বুরাক কেঁদে উঠল। বাবা থতমত খেয়ে গেল বুরাকের কান্না দেখে। বাবা বুরাকের কাছে এসে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বলল-
“আচ্ছা মাফ করো আমায় আর বকবো না। বলো বর্ষা কোথায়?”
বুরাক কাঁদতে কাঁদতেই বলল-
“হঠাৎ করে কোথায় চলে গেল আমি জানি না।”
বাবা বুরাককে ছেড়ে বলল-
“মানে? কোথায় গেল তুমি দেখো নি?”
“না আমি ওখানে মুরগীর বাচ্চা দেখছিলাম। আর ও এখান থেকে কোথায় চলে গেল আমি দেখি নি।”
শাহরিয়ার শাহ বিপদে পরলেন। ছেলে মেয়ের জন্য উনি একদিন হার্ট অ্যাটাক করে ফেলবেন। এত কেন দুষ্টুমি করে ওরা। বুরাক কান ধরে বলল-
“আব্বু সরি, কিন্তু বিশ্বাস করো আমার দোষ নেই এতে। ও কোথাও যাওয়ার আগে আমাকে বলেনি।”
“কিন্তু আমি তোমাকে বলেছিলাম ওর খেয়াল রাখতে। তুমি ওকে এখানে একা দাঁড় করিয়ে রেখে ওখানে গেলে। আর গেলে যেহেতু ওকে নিয়ে যেতে।”
“আমি জানতাম না এমন কিছু হবে।”
“আচ্ছা চলো দেখি ও কোথায়।”
বাবা আর বুরাক মিলে পুরো বাজারে বর্ষাকে খুঁজে বেড়ালো। কিন্তু বর্ষা কোথাও নেই। বাবার টেনশন বেড়ে গেল। কোথায় যেতে পারে মেয়ে। বেশ কিছুক্ষণকে জিজ্ঞেস করলো বর্ষার কথা। কিন্তু সবাই বলছে তারা বর্ষাকে দেখেনি। বুরাক ফুঁপিয়ে কাঁদছিল। হঠাৎ পেছন থেকে বর্ষার কন্ঠ ভেসে আসলো-
“আব্বু তোমরা কোথায় ছিলে?”
বাবা আর বুরাক পেছনে ফিরে দেখে বর্ষা ভ্রু কুঁচকে দাঁড়িয়ে আছে। বুরাক বর্ষাকে দেখার সাথে সাথে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। বর্ষা থতমত খেয়ে গেল ভাইয়ের কান্না দেখে। নিজেকে ছাড়িয়ে বলল-
“কি হলো তুই আবার কাঁদছিস কেন?”
বুরাক নাক টানতে টানতে বলল-
“কোথায় ছিলি তুই?”
“আমি এখানেই ছিলাম। তুই আমাকে রেখে কোথায় গিয়েছিলি এটা বল।”
“আমি তো ওখানে গিয়েছিলাম।”
“কেন যাবি? আব্বু তোকে বলেছিল না আমার খেয়াল রাখতে? জানো আব্বু আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম কাওকে না দেখে। পুরো জায়গায় খুঁজেছি তোমাদের।”
বর্ষা মায়া মায়া চেহারা বানিয়ে বলল কথাটা। বাবা বর্ষাকে জড়িয়ে ধরে মাথায় চুমু দিয়ে বলল-
“মাফ করে দাও আম্মু আর তোমাদের একা রেখে যাব না।”
“ওকে সরি বলতে বলো”
বাবা কিছু বলার আগেই বুরাক বলল-
“সরি, আর এমন করবো না।”
“গুড বয়”
বাবা বলল-
“আচ্ছা আর ঝগড়া না ঠিক আছে? চলো এখন বাসায় যাই। আজ আমরা ইলিশ মাছ খাব।”
বুরাক চোখ মুছে বলল-
“সত্যি আব্বু?”
“হ্যাঁ সত্যি তারাতাড়ি চল”

সন্ধ্যার সময়…..
বশির মায়ের কোলে মাথা দিয়ে বই পড়ছে বর্ষা তার পুতুলকে বউ সাজাচ্ছে। আর বুরাক বাবার কাছে তার পড়া মুখস্থ দিচ্ছে। বশির হঠাৎ বলল-
“আব্বু, আমার পরীক্ষা শেষ হলে কোথাও ঘুরতে যাব নি?”
মা জিজ্ঞেস করলো-
“নানু বাসায় যাব নি।”
“নানু বাসা তো খুবই কাছে যখন খুশী যাওয়া যায়। দূরে কোথাও যেয়ে আসি?”
বুরাক পড়া দিয়ে খাট থেকে নেমে বর্ষার পাশে বসলো। বাবা খাটে হেলান দিয়ে বশিরের দিকে তাকিয়ে বলল-
“কোথায় যেতে চাও?”
“ঢাকা”
বর্ষা বলল-
“কিন্তু ঢাকায় তো কিছুই নেই বিল্ডিং আর রোড ছাড়া।”
“ঢাকায় অনেক সুন্দর মেলা হয়।”
বুরাক বলল-
“মেলা তো এখানেও হয়।”
“চুপ থাক তুই, ঢাকায় বাণিজ্য মেলা হয় খুব সুন্দর। এবারের মেলা এসএসসি পরীক্ষার পর হবে।”
বাবা বুরাকের মায়ের দিকে তাকালেন। বুরাকের মা বলল-
“আমার দিকে তাকাতে হবে না নিজেই ভাবুন কি করা যায়।”
“তুমি সবসময় ভালো আইডিয়া দাও। তাই জিজ্ঞেস করছি কি করা যায়।”
“যেহেতু ছেলের পরীক্ষার শেষ হয়ে যাবে যাওয়াই যায়।”
“ঠিক আছে যাব তাহলে।”
বশির খুশীতে লাফিয়ে উঠলো। আবার বসে আমতা আমতা করে বলল-
“আমরা কি শাফিয়াকেও নিয়ে যেতে পারি?”
বুরাক সাপের মতো ফিশ করে উঠলো।
“কেন কেন শাফিয়া আপু কেন যাবে?”
বর্ষা বলল-
“কেন যাবে মানে ও আমাদের বোন হয়। আমরা রেনুকেও সাথে নিব।”
“আবার রেনুও”
বশির ধমকের স্বরে বলল-
“তোর কি সমস্যা ওরা গেলে?”
“আমার সমস্যা একটাই তুমি সবসময় শাফিয়া শাফিয়া করো কেন? ভবিষ্যতে আমার আর শাফিয়া আপুর বিয়ে হবে জানো না?”
“আপু বলে ডাকছিস আবার বিয়েও করতে চাস? আর ভুলে গেলি ও তোর থেকে বয়সে বড়ো?”
“বয়সে বড়ো বলে কি বিয়ে করা যাবে না? এটা জায়েজ আছে তাই আমি বিয়ে করবো। নানু তো বলেছে আমাদের বি‌য়ে দিবে।”
“নানু দুষ্টুমি করেছে মিস্টার বুরাক শাহরিয়ার শাহ।”
“আই ডোন্ট কেয়ার”
বশির বুরাকের কলার ধরে টেনে বলল-
“একদম মাটিতে পুঁতে ফেলব এসব বলবি না।”
মা ধমকের স্বরে বশিরকে বলল-
“বশির কি শুরু করেছিস?”
বুরাক বশিরের হাত ছাড়িয়ে বলল-
“ওর গায়ে কেন ফোসকা পড়ে আমার মুখে এসব শুনলে আমি জানতে চাই।”
বশির রাগে গজগজ করছে। বই নিয়ে দাঁড়িয়ে বলল-
“ওকে বলে দিও আমাকে সম্মান করতে না পারলে আমার সাথে কথা না বলতে।”
“এহহ আসছে, নিজে আমার কলার ধরে আমাকেই জ্ঞান দেয়।”
বশির হনহন করে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল। বুরাকের মনে সন্দেহ হচ্ছে। তার ভাই সবসময় রেগে যায় কেন সে বুঝতে পারে না। মা বুরাককে বলল-
“তুই গোয়েন্দাদের মতো এক্সপ্রেশন দিয়ে দাঁড়িয়ে না থেকে ঘরে গিয়ে বাকি পড়া পড়।”
“আজকের মতো পড়া শেষ, এখন আমি টম এন্ড জেরি দেখতে যাব। আব্বু ডিশটা ঠিক করে দাও না পড়া তো দিয়েছি।”
বাবা ইশারায় বলল যেতে উনি আসছে। বুরাক যেতেই বর্ষা দাঁড়িয়ে দৌড়ে যেতে যেতে বলল-
“ভাইয়া দাঁড়া আমিও দেখবো। আব্বু তারাতাড়ি আসো।”
বাবা হেসে খাট থেকে নামলো। মা জিজ্ঞেস করলো-
“বশির শাফিয়াকে পছন্দ করে হয়তো।”
“কি যে বলছো? এটা ওর আবেগের বয়স এমনটা হওয়া স্বাভাবিক।”
“হুম তা ঠিক, কিন্তু ভবিষ্যতে ওদের বিয়ে দিতে আমার আপত্তি নেই।”
“তোমার বড়োলোক ভাই মানবে কিনা দেখতে তো হবে।”
“আবার আমার ভাইকে নিয়ে পরলেন?”
“তো কি করবো? ও যেভাবে নিজের টাকা সবাইকে দেখিয়ে বেড়ায় কি বলবো?”
“হয়েছে হয়েছে যান এইবার ছেলে মেয়ে অপেক্ষা করছে।”
বুরাকের বাবা হাসতে হাসতে ঘর থেকে বের হলেন।

১ সপ্তাহর পর বশিরের পরীক্ষা শেষ হলো। তারা ৩ দিন পর ঢাকা যাবে। শাফিয়াও এবার পরীক্ষা দিয়েছে। পরীক্ষা শেষ হতেই শাফিয়া আর রেনু এসে পড়েছে বুরাকদের বাসায়। শাফিয়াকে দেখে বুরাকের মনে লাড্ডু ফুটছে। শাফিয়া বুরাকের মায়ের সাথে উঠানে বসে আলু কাটছে। বুরাক চৌকিতে বসে গালে হাত দিয়ে তাদের দেখছে৷ রেনু বুরাকের গালে আস্তে করে থাপ্পড় দিয়ে বলল-
“তুমি কোন দুনিয়ায় হারিয়ে আছো?”
বুরাক বিরক্ত হয়ে বলল-
“দেখছিস না কাজ দেখছি।”
বশির দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। বুরাকের কথা শুনে এক ভ্রু উঁচু করে বলল-
“না দেখে গিয়ে সাহায্যও তো করতে পারিস।”
শাফিয়া বলল-
“লাগবে না, মনে নেই আমাদের বাসায় কি হয়েছিল?”
বর্ষা বলল-
“কি হয়েছিল আপু আমি তো সেদিন যাইনি।”
“তোর ভাই বলল আমার সাহায্য করবে পেয়াজ কাটতে। শুধু একটা পেয়াজ দিয়েছিলাম কাঁটার জন্য। ব্যস দুই আঙুল কেটে রক্তাক্ত হয়ে গেল।”
বশির ভেংচি কেটে বলল-
“এতটাও কাটে নি। তুমি ওর হাত ধরে ছিলে বলে ঢং করছিল।”
“এভাবে বলো না বশির সত্যি খুব রক্ত ঝড়েছিল।”
“মোটা মানুষের শরীরে রক্ত বেশী থাকা স্বাভাবিক।”
বুরাক মুখ বাঁকা করে বলল-
“আমার স্বাস্থ্য দেখে তোমার জেলাস ফিল হয় তাই না?”
“আমার বডি একদম পারফেক্ট। আর এক বছর পর যখন জিম করা শুরু করবো তখন দেখে নিস আমাকে কতটা হ্যান্ডসাম লাগে।”
শাফিয়া বলল-
“সালমান খান হতে চাও বশির?”
“তোমার সালমান খান পছন্দ?”
“হ্যাঁ, ভীষণ।”
“তাহলে সালমান খানের মতোই বডি বানাবো।”
বুরাক চৌকি ছেড়ে নেমে শাফিয়ার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বলল-
“আপু আমিও বডি বানাবো।”
বশির ফিক করে হেসে দিলো। শাফিয়া চোখ ছোটো ছোটো করে বশিরের দিকে তাকিয়ে বলল-
“ব্যাড মেনার্স বশির”
“শুনো নি এই মটু কি বলছে। ওকে বলে দাও তোর দ্বারা সম্ভব না।”
বুরাক বলল-
“সব সম্ভব, একবার আমাকে বড়ো হতে দাও।”
রেনু বলল-
“ভুল বললে, বলো একবার আমাকে ডায়েট করার মতো ধৈর্যশীল হতে দাও।”
সবাই ফিক করে হেসে দিলো রেনুর কথা শুনে। বুরাক রেনুর দিকে রাগী দৃষ্টিতে একবার তাকিয়ে হনহন করে চলে গেল। শাফিয়া রেনুর দিকে তাকিয়ে বলল-
“তোরা জানিস ও দুষ্টুমি কম বুঝে তবুও এমন করিস?”
আবার বুরাকের মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল-
“আর ফুপি আপনিও ওদের কিছু বলেন না।”
“কি বলবো আমি? তোরা বাচ্চা মানুষ নিজেরা যা খুশী বল। আমি নাহয় চুপচাপ শুনি আর হাসি।”
শাফিয়া হাসলো ফুপুর কথা শুনে।

রাতেরবেলা…..
সবাই উঠানে মাদুর বিছিয়ে বসে গল্প করছে শুধু বাবা বাদে। উনি ভোর বেলা উঠে দোকানে চলে যান তাই তারাতাড়ি ঘুমাতে হয়। বর্ষা আর রেনু বুরাকের মায়ের পায়ে মাথা রেখে শুয়ে কথা বলছে। বশির, শাফিয়া তাদের পরীক্ষা নিয়ে আলাপ করছে। বুরাক মুখ ফুলিয়ে বসে আছে। সবাই যার যার মতো ব্যস্ত। মা বুরাকের পিঠে হাত রেখে বলল-
“কি হলো তোমার?”
“কেও আমাকে দেখেও দেখছে না?”
“তুমি যদি নিজ থেকে কথা না বলো কিভাবে বলবে ওরা বলো?”
“আমি বলবো না, ওরা হাসাহাসি করে সবসময় আমার স্বাস্থ্য নিয়ে।”
“ওরা সবাই তোমার ভাই বোন হয় বুরাক। ওরা দুষ্টুমি করে আর তুমি মন খারাপ করে ফেলো। এত রাগ ভালো না বাবা।”
“আমি রাগ করতে চাই না। কিন্তু আমি রেগে যাই।”
মা হেসে বলল-
“ধৈর্য ধরা শিখো বুরাক। তুমি যত ধৈর্যশীল হবে তত জীবনে সাফল্য লাভ করতে পারবে।”

বর্তমানে….
দরজা ঠকঠক করার শব্দ আসলো। বুরাক উমায়েরকে দাঁড়াতে বলে হেটে গেল দরজা খুলতে। দরজা খুলে দেখে বশির এসেছে। বশির বুরাককে দেখে বিরক্ত হলো। বুরাক সাথে সাথে সরে দাঁড়াল। বশির ভেতরে ঢুকে উমায়েরকে দেখলো। উমায়ের মাথা নিচু করে ফেলল বশিরকে দেখে। বশির বুরাককে এক নজর দেখে হনহন করে ভেতরে চলে গেল। শাফিয়া উঠানেই দাঁড়িয়ে ছিল। এমন পরিস্থিতি দেখে লম্বা নিশ্বাস ফেলল। বশির এগিয়ে এসে শাফিয়াকে দেখে বলল-
“মেয়েটা ওর কি হয়?”
“কিছু হয় না”
“মজা নিচ্ছো? সত্যি করে বলো। তোমাকে তো বলেছে হয় তো।”
“বলেনি, তুমি প্লিজ ওর কথা শুনো। ও আমাদের কিছু বলতে চায়। ওই সন্ত্রাসদের সাথে মিলার কোন তো কারণ থাকতে পারে বলো। আর আব্বু তো ওকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছিল বলো।”
“তাই বলে ওই মানুষটার সাথেই গিয়ে মিশলো যে আমার ছোটো বোনকে খু..খুন করেছে।”
বুরাক পেছন থেকে বলে উঠলো-
“মেরে ফেলেছি রাশিদ খানকে।”
বশির আর শাফিয়া চমকে উঠল। দুজনই অবাক দৃষ্টিতে তাকাল বুরাকের দিকে। বুরাক আবার বলল-
“এরপর মারবো টগর, বনি ও মোবিনকে।”

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here