ভরসার_দুহাত পর্ব_১৬

0
345

#ভরসার_দুহাত
#শোভা_আক্তার(লাভলী)
#পর্ব_১৬

“এরপর মারবো টগর, বনি ও মোবিনকে।”
বশির আর শাফিয়া একে অপরের দিকে অবাক হয়ে তাকাল। বুরাক বলল-
“ভাইয়া আমি কিভাবে ভুলতে পারি আমার ছোটো বোনের সেই মিষ্টি হাসি? কিভাবে ভুলতে পারি আমাদের ঝগড়া? আমার কারণে ও আজ আমাদের মাঝে নেই। এর শাস্তি আমি সারাজীবন উপভোগ করতে রাজি।”
বশির বুরাকের বরাবর দাঁড়িয়ে বলল-
“ওদের শাস্তি দেয়ার জন্য আইন ছিল। তুই রাশিদ খানকে মারলি, তো বল তোর আর রাশিদ খানের মধ্যে পার্থক্য কি রইল?”
“আব্বু কেস করেছিল তাই না? কি হয়েছে বলো? শাস্তি দিতে পেরেছে ওদের?”
“ওদের টাকা আছে। টাকা দিয়ে কেস জিতেছে। কিন্তু তুই আর আমি মিলে ওদের বিরুদ্ধে প্রমাণ জোগাড় করতে পারতাম।”
“কিভাবে? বলো কিভাবে? এসব ঘটনা ঘটার পর তোমাদের কোর্ট থেকে আদেশ দেয়া হয় ঢাকা থেকে চলে যেতে। আর তোমরা এসে পরলে আমাকে রেখে।”
“এটাই ছিল তোর শাস্তি, তোর ছোটোবেলা থেকে জেদ করার পরিণতি। বলেছিলাম না তোর জেদ একদিন তোকে নিয়ে ডুববে?”
বুরাক জবাব দিলো না৷ এখন জবাব দেয়ার মতো তার কাছে শব্দ নেই। শাফিয়া বলল-
“বুরাক এখনই সঠিক সময়। বল তুই এই ১৪ বছর কি হয়েছিল। আর তুই বাড়ি না ফিরে খালিদ খানের সাথে কেন চলে গিয়েছিলি?”
বশির বলল-
“কিসের জন্য আর? ফিল্মের হিরোর মতো নিজের বোনের খুনের প্রতিশোধ নেয়ার জন্য।”
বুরাক বলল-
“শুধু এর জন্য না, রাশিদ খানের বিরুদ্ধে প্রমাণ জোগাড় করার জন্যও। কিন্তু আফসোস পারি নি, কিন্তু তার বড়ো ভাই খালিদ খানের বিরুদ্ধে প্রমাণ জোগাড় করা হয়ে গিয়েছে ভাবতে পারো। সে নিজেই তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে স্টেটমেন্ট দেবে।”
“তোর কথা আমার একদমই পছন্দ হচ্ছে না৷ আমি শুধু এইটুকু জানি, তুই একজন ক্রিমিনাল।”
বলেই বশির ভেতরে চলে গেল। শাফিয়া বুরাকের কাঁধে হাত রেখে বলল-
“মন খারাপ করিস না৷ উনার মাথা ঠান্ডা হতে ১ দিন তো লাগবেই। রাতে আমি ভালো মতো বুঝিয়ে বলবো।”
“না ভাবী, ভাইয়া আবার তোমার সাথে ঝগড়া করবে।”
“তোর ভাই কখনো আমার সাথে ঝগড়া করে না। আজ তার মাথা গরম ছিল বলে চুপ ছিলাম। নাহলে আমার সাথে ঝগড়ায় পারে কে?”
বুরাক হেসে দিলো। শাফিয়াও হাসতে হাসতে বলল-
“আচ্ছা এখন বাহিরে থাকিস না। মশা বাড়ছে ভেতরে আয়। উমায়ের আসো তোমার জন্য জামা আনিয়েছি।”
“উমায়ের এর জামা? কোথায়?”
“তোর ভাই-ই তো নিয়ে আসলো দেখিস নি?”
বুরাক না সূচক মাথা নাড়াল। শাফিয়া হেসে উমায়ের এর হাত ধরে হাঁটা ধরলো। বুরাক একটা লম্বা নিশ্বাস নিয়ে ছেড়ে এক কদম এগিয়ে যেতেই মোবাইল বেজে উঠল। পকেট থেকে মোবাইল বের করে দেখে ববির নাম্বার। বুরাক চমকে উঠে সাথে সাথে কল রিসিভ করলো।
“হ্যালো, ববি?”
“বুরাক? কিরে তোকে কখন থেকে কল দিচ্ছিলাম বন্ধ বলছিল কেন?”
“নেটওয়ার্ক সমস্যা এখানে খুব। তুই ঠিক আছিস তো ববি?”
“হ্যাঁ আলহামদুলিল্লাহ, তুই আর উমায়ের কেমন আছিস? আর কোথায় তোরা এখন?”
“আমরাও ভালে আছি। আমি উমায়েরকে আমার বাসায় নিয়ে এসেছি।”
“হোয়াট? তোর পরিবার বাসায় জায়গা দিয়েছে।”
বুরাক ববিকে এই বাড়ির পরিস্থিতির সম্পর্কে বলল। ববি কপালে হাত দিয়ে বসে আছে৷ বুরাক বলল-
“আচ্ছা এসব ছাড়, সেদিন কি হয়েছিল?”
“দেখা হলে বলবো। তোরা ফিরছিস কবে? খালিদ খান পলাতক আর পুরো এলাকায় পুলিশ টিম রয়েছে তাই টেনশন নেয়ার প্রয়োজন নেই।”
“আমরা কাল বা পরশুই ফিরছি। আচ্ছা শোন, উমায়ের এর আব্বুর নাম্বারটা আমাকে মেসেজ করে দিস।”
“আচ্ছা, তোরা খেয়াল রাখিস নিজের। আমার চিন্তা করিস না আমি সুস্থ আছি একদম।”
“ঠিক আছে, খুব শীগগিরই আসছি।”
“আমি অপেক্ষায় আছি।”
“আল্লাহ হাফেজ”
“আল্লাহ হাফেজ”
বুরাক কল কেটে নিশ্চিন্তের নিশ্বাস ফেলল। ববির জন্যই চিন্তা হচ্ছিল তার৷ এখন নিশ্চিন্ত হলো। বুরাক হেটে গেল ভাবীর ঘরের দিকে। গিয়ে দেখে উমায়ের চুপচাপ খাটে বসে আছে আর ভাবী তাকে জামা দেখাচ্ছে। বুরাক আশে পাশে চোখ বুলালো। ভাইকে দেখা যাচ্ছে না। ভাবী দরজার সামনে বুরাককে দেখে বলল-
“দাঁড়িয়ে আছিস কেন? ভেতরে আয়।”
“ভাইয়া নেই?”
“ও বাথরুমে গিয়েছে।”
বুরাক ভেতরে ঢুকলো। ভাবী বলল-
“উমায়ের তুমি সুতির জামা পড়ো তো? আমি আসলে জানি না তুমি কি ধরণের জামা পড়ো।”
“ভাবী সমস্যা নেই, আমি বাসায়ও থ্রি পিস পড়ি।”
“তাহলে ঠিক আছে, ভাবলাম তোমার লাইফস্টাইল খুব আলাদা।”
“না, ১০ টা পরিবারে যেভাবে সন্তানকে লালন পালন করে ঠিক সেভাবেই আমার আম্মু আব্বু আমাকেও লালন পালন করেছে।”
“আমার অনেক ইচ্ছা তোমার বাবা মাকে দেখার। তুমি এত ভালে নিশ্চয়ই তোমার আম্মু আব্বুও অনেক ভালো।”
বুরাক বলল-
“ঠিক ভাবলে ভাবী, ফিরোজ আনোয়ার সাহেব অনেক ভালো অনেক। এমন মানুষ দুনিয়ার প্রতি স্থানে থাকলে দুনিয়া অনেক সুন্দর হতো।”
তখনই বশিরের কন্ঠ ভেসে আসলো-
“আর তোর মতো মানুষ দুনিয়ার প্রতি স্থানে থাকলে দুনিয়া ধ্বংস হয়ে যেত।”
বুরাক পেছনে ফিরে দেখে তার ভাই মাথা মুছতে মুছতে এগিয়ে আসছে। উমায়ের দাঁড়িয়ে মাথা নিচু করে রাখলো। শাফিয়া বলল-
“তোমার ফালতু কথা সাইডে রাখবে? বলেছিলাম না আমার সামনে আমার ফুপাতো ভাইকে কিছু বলবে না।”
“তোমার ফুপাতো ভাইকে বলো যত দ্রুত সম্ভব বাসা ছেড়ে যেতে। ওর চেহারা আমার সহ্য হয় না।”
“সহ্য তো তোমার চেহারাও আমার হয় না। কি ছিলে আর কি হয়ে গেলে।”
বলেই শাফিয়া ভেংচি কাটলো। বুরাক খুব কষ্টে হাসি থামিয়ে রেখেছে। বশির ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে শাফিয়ার দিকে। পরিবেশ হঠাৎ করে শান্ত হয়ে গেল। কিন্তু উমায়ের এর কারণে আর শান্ত রইল না। সে ফিক করে হেসে উঠল। উমায়ের এর হাসি দেখে বুরাক আর শাফিয়াও হেসে দিলো। বশির ভাবলো সে লজ্জিত হওয়ার চেয়ে ভালো পরিস্থিতি সামলে নিক। সেও সবার দেখাদেখি হাসতে শুরু করলো৷ বুরাক ভাইয়ের হাসি দেখে থমকে গেল। অনেকদিন পর ভাইকে হাসতে দেখছে৷ বশির হাসি থামিয়ে বলল-
“অনেক হয়েছে আমি ক্রিকেট ম্যাচ দেখবো যাও তোমরা।”
বুরাক উমায়েরকে ইশারায় বলল চলে আসতে। উমায়ের মাথা নাড়িয়ে বুরাকের পিছু পিছু চলে গেল।

উঠানের চৌকিতে বসে আছে তারা দুজন। উমায়ের আশে পাশে একবার চোখ বুলিয়ে বলল-
“তোমার বাড়ি খুব সুন্দর। দেখে ছোটোখাটো রাজপ্রাসাদ।”
“বাড়ির ডিজাইন আমার দাদু নিজের হাতে এঁকে ছিলেন। দাদুকে আমি দেখিনি। বশির ভাইয়া ছোটো থাকতেই উনি চলে গিয়েছেন।”
“আমিও আমার দাদুকে দেখতে পাইনি।”
“আমাদের ভাগ্যে ছিল না দাদুর ভালোবাসা।”
“হ্যাঁ, আচ্ছা বুরাক এর পর কি হয়েছিল?”
বুরাক উমায়ের এর দিকে তাকাল। উমায়ের এর বেশ আগ্রহ বুরাক মুচকি হাসলো।

অতীতের অংশ…..
সকাল ৭ টায় সবাই ঘুম থেকে উঠে তৈরী হয়ে নিলো। শাহরিয়ার শাহ উনার এক বন্ধুকে কল দিয়ে বাসার ব্যবস্থা করে নিলেন। এতজন মানুষকে হোটেলে রাখা উনার সুবিধার মনে হলো না। বুরাক ঘুমের কারণে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। বশির বুরাকের কান ধরে টেনে বসা থেকে দাঁড় করালো। বুরাক নিজের কান ছাড়িয়ে বলল-
“কি করছো তুমি? ব্যাথা পাচ্ছি তো।”
“মটু রে, বার বার ঘুমিয়ে গেলে হেঁটে বাসস্ট্যান্ড যাবি কিভাবে?”
“হেঁটেএএএ?”
বুরাকের ঘুম উড়ে গেল হেঁটে যাওয়ার কথা শুনে। দ্রুত হেটে বাবার কাছে চলে গেল। বশির হাসতে হাসতে ঘর থেকে বের হয়ে বাবার ঘরে গেল। বুরাক বাবাকে জিজ্ঞেস করলো-
“আব্বু আমরা বাসস্ট্যান্ড হেঁটে যাব?”
“হ্যাঁ, যাওয়ার পথে হোটেল থেকে নাস্তা করে যেতে হবে তো।”
“রিকশা দিয়ে যাওয়া যাবে না? আমি তো হাঁটতে পারি না জানো তুমি।”
বশির এগিয়ে আসতে আসতে বলল-
“না হাঁটলে পাতলা হবি কি করে?”
“এখনই কেন? আমি তো ছোটো মানুষ এখন।”
মা বলল-
“আচ্ছা আমরা হোটেল পর্যন্ত হেটে যাব। সেখান থেকে নাস্তা করে রিকশা দিয়ে বাসস্ট্যান্ড যাব চলবে এখন?”
বুরাক হেসে দ্রুত গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরলো।
“চলবে চলবে চলবে, আপনি দুনিয়ার বেস্ট আম্মু।”
মা হেসে বুরাকের কপালে চুমু দিলো। বর্ষা বুরাককে টেনে সরিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে বলল-
“এটা আমার আম্মু যা তুই।”
“দেখলে আম্মু ও কত হিংসে কর?”
মা হেসে বুরাককেও টেনে জড়িয়ে ধরে বলল-
“আমি তোমাদের দুজনেরই আম্মু।”
বশির গিয়ে সেও জড়িয়ে ধরলো মাকে। শাফিয়া আর রেনুও বাদ পরলো না। তারাও দৌড়ে গেল জড়িয়ে ধরার জন্য। বাবা হাসিমুখে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে।

হোটেল থেকে নাস্তা করে বুরাকের বাবা টেম্পো নিলো। রিকশা পাওয়া যাচ্ছে না। সবাই টেম্পো করে বাসস্ট্যান্ড গিয়ে নামলো। বশির বেশ এক্সাইটেড। বাবা সবার জন্য বাসের টিকিট নিয়ে যার যার হাতে দিয়ে দিলো। পানি খাবার কিনে নিয়ে সবাই বাসে উঠে বসলো। একদম শেষের বড়ো সিটে তারা বিয়ে বসলো। বর্ষা ছোটো বলে বাবা কোলে নিয়ে বসেছে। শাফিয়া আর বশির পাশাপাশি বসে কথা বলছে। রেনু আর বর্ষা গল্প করছে। আর মাঝে বসে বুরাকের বোরিং লাগছে। বসে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পরলো। শাফিয়ার ডাকে বুরাকের ঘুম ভাঙলো। ধীরে ধীরে চোখ খুলে দেখে সবাই দাঁড়িয়ে আছে। মা বলল-
“চলো এসে পড়েছি।”
“এত তারাতাড়ি?”
বশির বলল-
“মরার মতো ঘুমালে কিভাবে বুঝবি তারাতাড়ি এসেছি না-কি দেরি করে।”
বাবা ধমকের স্বরে বলল-
“অনেক হয়েছে, আর কেও ওর সাথে মজা করবে না।”
বশির মাথা নিচু করে ফেলল। বুরাক ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল। এখনো ঘুম আসছে তার কিন্তু ক্ষুধা পেয়েছে। বাস থেকে নেমে বাবা আশে পাশে চোখ বুলালো। বুরাক মাকে বলল তার ক্ষুধা পেয়েছে। মা ব্যাগ থেকে কেক আর চিপস বের করে দিলো বুরাককে৷ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর বাবাট বন্ধু আসলেন গাড়ি নিয়ে। সবাই গাড়িতে উঠে বসলো। বশির আর শাফিয়া শহরের সম্পর্কে বই-তে পড়েছিল আজ সব কিছু দেখতে দেখতে যাচ্ছে। বুরাক নিজের খাবার নিয়ে ব্যস্ত। ১ ঘন্টার মধ্যে তারা সেই বাসায় পৌঁছে গেল। তিন তলা একটি বিল্ডিং। সবাই উঠে দুই তলায় গেল। বাড়িটা বুরাকের বাবাট বন্ধুর। এই বাসায় কেও থাকে না ভাড়াটিয়া কিছুদিন আগে চলে গিয়েছে তাই এখন খালি আছে। বুরাকের বাবা বলায় উনার বন্ধু ঘরবাড়ি সব ঠিক করিয়ে দিয়েছে। খাট, আলমারি সবকিছু রয়েছে এখানে। দুটো ঘর একটি ডাইনিং দু’টো বাথরুম একটা রান্নাঘর। খুবই সুন্দর বাড়িটা। বুরাকের মা বলল-
“আপনার বন্ধু বলেছিল বাড়িটা বিক্রি করতে চায়। আপনি পারলে কিনে নিয়েন।”
“টাকা তো থাকতে হবে কেনার জন্য। আর আমরা ঢাকায় থেকে কি করবো বলো?”
“তা ঠিক, তবুও পরিবেশ খুব সুন্দর। এখানে থাকলে খারাপ হতো না।”
“এসেছি মাত্র তিন দিনের জন্য এত স্বপ্ন দেখো না। আমি পূরণ করতে পারবো না।”
বুরাকে মা হাসলেন। রেনু, শাফিয়া ও বর্ষা এক ঘরে, মা বাবা এক ঘরে, বুরাক আর বশির ডাইনিংরুমে। কে কোথায় ঘুমাবে সব ডিসাইড করা হয়ে গেল। বাবা আর বশির গেল দুপুরের খাবার কিনে নিয়ে আস্তে। রেনু, শাফিয়া মিলে ঘর গুছিয়ে নিলো। বুরাক ঘরের জানালা দিয়ে রাস্তাঘাট দেখছে। কিছুক্ষণ পর বাবা আর বশির হাসলো। বুরাক বশিরকে দেখে বলল-
“ভাইয়া মেলা কবে শুরু হবে?”
“মেলা অনেক আগেই শুরু হয়ে গিয়েছে।”
“অনেক আগে বলতে?”
“১ সপ্তাহ হবে।”
“বলো কি?”
শাফিয়া বলল-
“বানিজ্য মেলা এক মাস পর্যন্ত হয়।”
“আমরা কবে যাব?”
বাবা বলল-
“আমরা আগামীকাল যাব।”
সবাই আনন্দে লাফিয়ে উঠল। সারাদিন গল্প করে রাতে সবাই তারাতাড়ি ঘুমিয়ে পরলো।

পরেরদিন সবাই দেরি করে ঘুম থেকে উঠল। বাবা আর বশির গিয়ে নাস্তা কিনে নিয়ে আসলো। বুরাক রেনুর সাথে মেলা নিয়ে গল্প করছে। কি কিনবে কোন রাইডে চড়বে এই নিয়ে। শাফিয়া শুনে বলল-
“এখানে কোন রাইড নেই। কিন্তু খেলনার দোকান আছে অনেকগুলা।”
বর্ষা বলল-
“সত্যি আপু?”
“হ্যাঁ একদম সত্যি”
“তুমি কি কিনবে?”
“আমি শুধু একটা ডায়েরি কিনবো।”
“ডায়েরি কেন?”
“এইভাবেই”
বশির হেসে বলল-
“ডু ইউ ওয়ান্ট টু রাইট আওয়ার লাভ স্টোরি?”
“শাট আপ, আই ডোন্ট লাভ ইউ”
বলেই শাফিয়া উঠে দ্রুত বুরাকের মায়ের সাহায্য করার জন্য চলে গেল। বশির হাসছে বসে। বুরাক ভ্রু কুঁচকে বলল-
“ইংলিশে কি বলছিলে?”
“তুই জেনে কি করবি?”
“লাভ স্টোরি অর্থ আমি জানি।”
বশির থতমত খেয়ে বলল-
“আরে আরে উল্টা পাল্টা ভাববি না। তুই তো জানিস ওর গল্প লিখতে ভালো লাগো। তাই আমি ওকে জিজ্ঞেস করছিলাম লাভ স্টোরি মানে প্রেমের কাহানী লিখতে চায় কিনা।”
“সত্যি?”
“হ্যাঁ সত্যি, এখন চুপ করে বস। আর নাস্তা করে সবাই তারাতাড়ি তৈরী হয়ে নে। রাস্তায় জ্যাম থাকতে পারে তাই আমাদের তারাতাড়ি বের হতে হবে।”

নাস্তা করে সবাই তৈরী হতে চলে গেল। পুরুষ মানুষরা তৈরী হয়ে ডাইনিং রুমে বাকিদের অপেক্ষা করছে। বশির বার বার ঘড়ি দেখছে। তার মা তৈরী হতে কখনো এত দেরি করে না কিন্তু আজ এত দেরি করছে কেন। বুরাক বসে থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে গেল।
“আব্বু আমরা ১৫ মিনিট ধরে অপেক্ষা করছি। এখনো কি তারা তৈরী হয় নি?”
“আর একটু অপেক্ষা করো বাবা।”
বশির দাঁড়িয়ে উঁচু স্বরে বলল-
“আর মাত্র ৫ মিনিট, এই ৫ মিনিটের মধ্যে আপনারা না আসলে আমরা চলে যাব।”
তখনই দরজা খুলে রেনু আর বর্ষা হনহন করে বের হলো। দুজনই রাগে ফুঁসছে। রেনু বলল-
“তোমরা এত বাজে কেন? আপুকে ফুপি শাড়ি পড়িয়ে দিচ্ছিল বলে দেরি হয়েছে।”
বুরাক হাসিমুখে বলল-
“আপু শাড়ি পড়েছে?”
রেনু আর বর্ষা মাথা নাড়াল। তখনই শাফিয়া আর মা বেরিয়ে আসলো। বুরাকের বাবা স্ত্রীকে দেখে বললেন-
“তুমি শাড়ি পড়লে না?”
“কি যে বলেন, বোরখা-ই ঠিক আছে। চলুন চলুন যাওয়া যাক।”
“হ্যাঁ চলো”
সবাই হাঁটা ধরলো যাওয়ার জন্য। বশির শাফিয়ার সামনে গিয়ে ফিসফিস করে বলল-
“সুন্দর লাগছে তোমাকে কিন্তু চুলে খোঁপা করে বেলি ফুল বাঁধতে আরো সুন্দর লাগতো।”
“আমরা মেলা ঘুরতে যাচ্ছি পহেলা বৈশাখ মানাতে না।”
বলেই শাফিয়া হেসে দ্রুত হেটে বুরাকের মায়ের কাছে গেল। গাড়ি করে রওয়ানা হলো মেলার উদ্দেশ্যে। সবাই বেশ এক্সাইটেড। রাস্তা জ্যাম বলে দেড় ঘন্টা লাগলো তাদের বাণিজ্য মেলা পৌছাতে। সবাই গাড়ি থেকে নামলো। বুরাক আড়মোড়া ভেঙে বলল-
“ধ্যাত ঢাকায় এত জ্যাম থাকে কেন? আমার কোমড় ব্যাথা হয়ে গেল বসে থাকতে থাকতে।”
শাফিয়া বলল-
“এখন মেলা চলছে সবাই কমবেশি ঘুরতে আসছে তাই রাস্তা জ্যাম।”
মা বলল-
“আচ্ছা সবাই সাইড হয়ে দাঁড়াও উনি গাড়ি পার্ক করে আসুক তারপর আমরা একসাথে ভেতরে যাব।”
সবাই মাথা নাড়াল। বুরাকের বাবা গাড়ি পার্ক করে তারাতাড়ি আসলেন। মেলার ভেতর প্রবেশ করে সবাই হা হয়ে চারপাশে তাকাল। শাফিয়া বলল-
“বশির, ম্যাম আমাদের প্রোজেক্টোরে যে ছবিগুলো দেখিয়েছিল মেলা তো দেখছি তার থেকেও বেশী সুন্দর।”
“ঠিক বলেছো, দেখো ওখানে টম & জেরির জামা পড়া মানুষ।”
রেনু আর বর্ষা লাফাতে শুরু করলো তাদের দেখে৷ বাবার হাত ধরে তারা এগিয়ে গেল। শাফিয়া আর বশির চারপাশে চোখ বুলিয়ে বইয়ের দোকান খুঁজছে। তারা কিছু ইংলিশ শব্দের বই নিতে চায়৷ বাবাকে বলায় বাবা সবাইকে নিয়ে বই নেয়ার জন্য এগিয়ে গেল। বাচ্চারা বেশ এনজয় করছে মেলায় এসে। বুরাক বর্ষা আর রেনুকে লাফাতে দেখে ধমক দিয়ে বলল-
“এই তোরা থামবি? একটা চড় মেরে দাঁত ফেলে দিব। সব জায়গায় গেলে দুষ্টুমি শুধু?”
রেনু মন খারাপ করে ফেলল। বর্ষা রাগী কন্ঠে বলল-
“তোর কি? তোকে কে বলেছে বডিগার্ডের মতো আমাদের পেছনে পেছনে ঘুরতে? যা তুই আগে।”
“অচেনা এলাকায় এসেছিস ভদ্র মতো থাক বলে দিলাম।”
বলেই বুরাক এগিয়ে গেল। বর্ষা ভেংচি কেটে মায়ের হাত ধরে হাঁটছে আর কথা বলছে রেনুর সাথে। তারা বইয়ের দোকান পেতেই বই দেখতে লাগলো। বুরাকের বোরিং লাগছে। সে দোকান থেকে সরে অন্য জায়গায় চলে গেল। রেনু বুরাককে যেতে দেখে বর্ষাকে বলল-
“দেখ বুরাক জানি কোথায় যাচ্ছে।”
“চলে যাক আমার কি? আমরা কার্টুন বই নিব ঠিক আছে?”
“আচ্ছা, কিন্তু বুরাক যদি হারিয়ে যায়? আমরা তো সত্যি অচেনা এলাকায় এসেছি।”
“হ্যাঁ ঠিক বললি, আচ্ছা আমি ডেকে নিয়ে আসি।”
“ও তো তোর উপর রেগে আছে।”
“সরি বললেই ওর রাগ চলে যাবে। তুই দাঁড়া আমি এখনই ভাইয়াকে নিয়ে আসি।”
বর্ষা দৌড়ে বুরাকের পেছনে গেল। কিন্তু মানুষের ভীরে সে বুরাকের কাছে যেতে পারছে না। ধাক্কা লেগে হঠাৎ পড়ে গেল একজনের পায়ের সামনে। হাতে ভীষণ ব্যাথা পেয়েছে। হাত ধরে বসে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল। হঠাৎ কাঁধে কারো স্পর্শ পেল।
“আই এম সরি বেবি গার্ল, ব্যাথা পেয়েছ তুমি?”

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here