ভরসার_দুহাত পর্ব_১৭

0
312

#ভরসার_দুহাত
#শোভা_আক্তার(লাভলী)
#পর্ব_১৭

“আই এম সরি বেবি গার্ল, ব্যাথা পেয়েছ তুমি?”
বর্ষা ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে একটা ছেলে তার দিকে ঝুঁকে দাঁড়িয়ে আছে। বয়স ২১/২২ হবে। বর্ষা নিজ থেকেই দাঁড়িয়ে বলল-
“জি ভাইয়া আমি ঠিক আছি।”
“এই ভীরের মধ্যে তুমি একা কেন? তোমার সাথে কেও নেই?”
“আছে, আমি আমার বড়ো ভাইয়াকে খুঁজছি।”
“কোথায় তোমার ভাইয়া?”
“এখানেই ছিল, জানি না কোথায় গিয়েছে।”
ছেলেটার সাথে আরো তিনজন ছেলে ছিল। তাদের মধ্যে একজন বলল-
“জায়গা খুব বড়ো হারিয়ে যাওয়া স্বাভাবিক। তোমার পরিবার কোথায়? না-কি বড়ো ভাইয়ার সাথে একা এসেছো?”
“আমার আম্মু আব্বু বই এর দোকানে।”
“চলো তোমাকে বই এর দোকানে দিয়ে আসি।”
“কিন্তু আমার বড়ো ভাইয়া?”
“তোমার বড়ো তো বড়ো হয়ে গিয়েছে, সে এসে পরবে। তুমি চলো এখন নাহলে হারিয়ে যাবে।”
বর্ষা মাথা নাড়াল। সে চুপচাপ ছেলেগুলোর পেছনে হাঁটা ধরলো। ছেলেগুলো তাকে বই এর দোকানের সামনে নিয়ে গেল। একটা ছেলে বলল-
“কোথায় তোমার পরিবার?”
“ওইতো ভেতরে”
বর্ষা আঙুল দেখিয়ে বলল কথাটা।
“ঠিক আছে যাও, আর শুনো তোমার ভাইয়ার জন্য চিন্তা করো না সে এসে পরবে।”
“ওকে ভাইয়া টাটা”
“টাটা”
বর্ষা দৌড়ে ভেতরে চলে গেল। টগর নামক ছেলেটা রাশিদ খানের কাঁধে হাত রেখে বলল-
“দাঁড়িয়ে থাকবি? চল যাই এখন।”
“মেয়েটা ভারী সুন্দর, আর একটু বড়ো হলে ভালো মতো। আমার জন্য ছোটো হয়ে গেল।”
বনি হেসে বলল-
“শালা তুই ভালো হবি না। এইটুকু মেয়ের দিকেও তোর নজর।”
মোবিন বলল-
“আরে রাশিদ তো প্লে বয়, সে কি ছোটো বড়ো দেখার মানুষ?”
রাশিদ বলল-
“আমার মতো প্লে বয় হতে পারবি?”
বনি বলল-
“না, আর হতেও চাই না। চল এখন যাওয়া যাক।”
তারা চারজন আবার হাঁটা ধরলো। বর্ষা দ্রুত হেটে রেনুর পাশে গিয়ে দাঁড়াল। বর্ষার কান্না কান্না ভাব দেখে রেনু বলল-
“কি হলো তোর? বুরাক নিশ্চয়ই বকেছে তাই না?”
“উঁহু, ভাইয়াকে পাইনি। ওখানে অনেক ভীর। আমি পড়ে গিয়ে ব্যাথা পেয়েছি।”
“বলিস কি?”
বর্ষা তার হাত দেখালো রেনুকে। রেনু বর্ষার হাত দেখে বলল-
“আহা বর্ষা এখন কি বলবি তুই ফুপিকে?”
“সত্যি কথা বলবো। আম্মু আব্বু কোথায়?”
“ভেতরে, আমি তোর অপেক্ষা করছিলাম। তারাতাড়ি চল।”
বর্ষা মাথা নাড়িয়ে রেনুর সাথে হেঁটে ভেতরে চলে গেল। শাফিয়া আর বশির চারপাশে হেটে হেটে বই দেখছিল। রেনু আর বর্ষাকে আসতে দেখে দাঁড়িয়ে গেল তারা। বর্ষা গিয়ে বশিরের বরাবর দাঁড়াল। বশির হাত আড়াআড়িভাবে ভাজ করে বলল-
“কোথায় ছিলি তোরা?”
“ভাইয়া, বুরাক ভাইয়াকে পাচ্ছি না। আমি খুঁজতে গিয়েছিলাম। আর দেখো পড়ে গিয়ে হাতে ব্যাথা পেয়েছি।”
বর্ষা হাত দেখাতেই বশির সাথে সাথে তাকে ধরলো।
“একি অবস্থা করলি হাতের।”
“অনেক ব্যাথা করছে।”
বলেই বর্ষা ফুপিয়ে কেঁদে উঠল। বশির হাঁটু গেড়ে বসে বর্ষাকে পায়ের উপর বসালো। মা বাবা তাদের দেখে দ্রুত হেঁটে সামনে আসলো। বর্ষাকে কাঁদতে দেখে জিজ্ঞেস করায় শাফিয়া সব বলল। মা বর্ষাকে কোলে নিয়ে মানাচ্ছে। বাবা রাগে গজগজ করছে। বুরাক না বলে কোথায় গেল। বাবা সবাইকে বলে বুরাককে খুঁজতে পা বাড়ালো। বশির শাফিয়াকে মায়ের সাথে থাকতে বলে বাবার পেছনে হাঁটা ধরলো। আশে পাশে তারা ভালো মতো খুঁজলো। বুরাক এখানের কোথাও নেই। বাবার রাগ দেখে বশির চুপসে যাচ্ছে। বাবা দাঁতে দাঁত চেপে বশিরের দিকে তাকিয়ে বলল-
“একবার ওকে পেয়ে নেই। ওর সাহস কি করে হলো আমাদের না বলে এদিক সেদিক চলে যাওয়ার।”
“আব্বু মাথা ঠান্ডা রাখুন। চলুন আমরা মেইন অফিসে যাই। সেখানে গিয়ে বললে তারা মাইকে এনাউন্স করবে।”
“হুম চল”
বাবা আর বশির মেইন অফিসের দিকে হাঁটা ধরলো। যাওয়ার পথে দেখে বুরাক একা দাঁড়িয়ে আছে ওয়াটার ফাউন্টেনের সামনে। বাবা বুরাককে দেখে দ্রুত গিয়ে বুরাকের হাত ধরে টেনে নিজের দিকে ঘুরালো। হঠাৎ হাতে টান অনুভব করায় বুরাক চমকে উঠলো। বাবাকে দেখে সে ভয় পেয়ে গেল। বুরাক আমতা আমতা করে বলল-
“আব..আব্বু, কি..কি হয়েছে?”
বাবা বুরাককে সজোরে একটা থাপ্পড় মেরে দিলো। বশির ভয়ে মুখে হাত দিয়ে এক কদম পিছিয়ে গেল। বুরাক গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আশে পাশে তার বয়সী মানুষদের হাসির শব্দ তার কানে ভেসে আসছে। বাবা রাগী কন্ঠে বলল-
“তুই আমাদের না বলে এখানে কেন আসলি?”
বুরাক জবাব দিলো না। কান্না তার গলায় আটকে গিয়েছে। বাবা আবার বলল-
“তোর কারণে বর্ষা ব্যাথা পেয়েছে জানিস? মেয়েটা আমার তোকে খুঁজতে বের হয়েছিলো, তাও একা। ওর যদি কিছু হয়ে যেত এখন?”
বুরাক বাবার দিকে তাকিয়ে বলল-
“বর্ষা ব্যাথা পেয়েছে, তাই আপনি আমাকে মারলেন তাই না?”
“তো আর কি? ওর বয়স কত জানিস না তুই? এত বড়ো জায়গায় আমরা ওকে খুজতাম কিভবে?”
“আর আমি যদি হারিয়ে যেতাম?”
“তোকে এখানেই রেখে আমরা ফিরে গেতাম গ্রামে।”
বুরাক হাতমুঠো শক্ত করে বন্ধ করে ফেলল। বশির আশে পাশের পরিস্থিতি দেখে বাবাকে বলল-
“আব্বু বাসায় গিয়েও ওকে বকা যাবে। এটা পাবলিক প্লেস, সিন ক্রিয়েট হচ্ছে অকারণে। চলুন আমরা বাসায় ফিরে যাই। প্যাকিং-ও তো করতে হবে।”
বাবা কিছু বলল না। ঘুরে হাঁটা ধরলো। বশির বুরাকের হাত ধরতেই বুরাক এক ঝটকায় নিজের হাত সরিয়ে ফেলল। বশির বলল-
“তুই আব্বুর রাগ আমার উপর কেন তুলছিস?”
“কথা বলো না আমার সাথে।”
“এত রাগ ভালো না বুরাক। এই রাগ-ই একদিন তোকে বরবাদ করে ফেলবে। তারাতাড়ি আয় এখন।”
বলেই বশির হাঁটা ধরলো। বুরাক আড়চোখে পাশে তাকাল। তার বয়সী ছেলেগুলো ফিসফিয় করে কি যেন বলছে তার হাসছে তার দিকে তাকিয়ে। বুরাক চোখের পানি মুছে দ্রুত হাঁটা ধরলো।

গাড়িতে চুপচাপ মন খারাপ করে বসে আছে বুরাক। সবাই তার উপর রেগে আছে। বর্ষা মায়ের কোলে ঘুম। মা যত্ন করে বর্ষার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। বুরাক এমন দৃশ্য দেখে মুখ ঘুরিয়ে ফেলল। তার কি দোষ ছিল সে বুঝতে পারছে না। বাসায় পৌঁছে সবাই গাড়ি থেকে নামলো। বুরাককে রেখে সবাই চলে যাচ্ছে। বুরাকের চেহারা দেখে শাফিয়া তার হাত ধরলো। বুরাক হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলো কিন্তু শাফিয়া আরও শক্ত করে ধরে বলল-
“আমি জানি তুমি ইচ্ছে করে কিছু করো নি। তুমি যদি জানতে তোমাকে খুঁজতে গিয়ে বর্ষা ব্যাথা পাবে তাহলে তুমি যেতে না আমি জানি।”
“সবাই রেগে আছে আমার উপর।”
“একদম না, শুধু ফুপা রেগে আছেন। কিন্তু তুমি চিন্তা করো না। ফুপি আছে তো, উনি সব সামলে নিবেন।”
“আপু তুমি অনেক ভালো।”
শাফিয়া হেসে বুরাকের গাল ধরে টেনে কপালে চুমু দিলো। বুরাকের লজ্জা লাগছে খুব। শাফিয়া আবার হাসলো বুরাকের চেহারা দেখে। বশির তাদের এই দৃশ্য দেখে দ্রুত হেটে এসে ভ্রু কুঁচকে বলল-
“কি হচ্ছে এখানে?”
বুরাক বলল-
“এসে পড়েছেন কাবাব মে হাড্ডি হয়ে।”
“হ্যাঁ আমি তো হাড্ডি-ই। তোর মতো কাবাব হতে পারবো না।”
“তুমি জ্বলো আমার গোলগাল স্বাস্থ্য দেখে তাই না?”
“আব্বে মোটু যা এখান থেকে।”
“ঠিক আছে”
বলেই বুরাক শাফিয়ার হাত ধরে হাঁটা ধরলো। শাফিয়াকে নিয়ে যেতে দেখে বশির অবাক হয়ে দৌড়ে গেল তাদের পিছনে। দুইবার হাঁটছে আর ঝগড়া করছে। শাফিয়া মুখ টিপে হাসছে তাদের ঝগড়া দেখে।

বাবা বুরাকের সাথে অনেকক্ষণ হয়েছে কথা বলছে না। বুরাক মাফ চেয়েছে তবুও বাবা কিছু বলছে না। বুরাক মন খারাপ করে ড্রইংরুমে একা বসে আছে। বর্ষাকে মা বাথরুম থেকে বের করে ঘরে নিয়ে গেল বুরাকের সামনে থেকে। বুরাক রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বর্ষার দিকে।রেনু বুরাককে একা দেখে এগিয়ে আসলো৷ বুরাক রেনুকে দেখে মুখ ঘুরিয়ে বসে রইল। রেনু বুরাকের পাশে বসে বলল-
“তুমি কি আমার উপর রেগো আছো?”
বুরাক ভ্রু কুঁচকে রেনুর দিকে তাকিয়ে বলল-
“তোর উপর আমি রাগবো কেন?”
“কথা বলছো না যে?”
“আমি কথা বলছি না না-কি কেও আমার সাথে কথা বলতে চাইছে না? রেনু তুই যা আমার ভালো লাগছে না।”
“তুমি জানো বর্ষার একটু কিছু হলে জ্বর এসে পড়ে। আজও এসেছে।”
“তো আমি কি করবো? মরে যেতে বল ওকে।”
রেনু রাগে আগুন হয়ে গেল।
“এবার কিন্তু বেশী বেশী বলছো।”
“হ্যাঁ বলছি কি করবি তুই?”
“তোমার মাথা ফাটিয়ে দিব।”
“এখান থেকে চলে যা রেনু। আমার রাগ উঠলে ভালো হবে না বলে দিচ্ছি।”
রেনু ভেংচি কেটে উঠে চলে গেল। বুরাক রাগে ঘনঘন নিশ্বাস ফেলছে।
পুরো রাত জেগে বুরাক ভাবলো কি করা যায়। বর্ষাকে শাস্তি তো দিতেই হবে। ওর কারণে সবসময় বুরাক বকা শুনে। সবাই ঘুম, বুরাক একা জেগে রইল রাত ৩ টার পর্যন্ত। আইডিয়া পেতেই পৈশাচিক হাসি দিয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে পরলো।

সকালবেলা…..
আজ সন্ধ্যায় তারা গ্রামে যাওয়ার জন্য রওয়ানা দিবে। সকালে যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু বুরাকের মা কিছু কেনাকাটা করবে উনার মা আর ভাইদের জন্য। সকালের নাস্তা করতে বসেছে সবাই। আজ যেহেতু শপিং করবে তারা কে কি কিনবে এখনই আলোচনা করছে। বুরাকের এসবের প্রতি নেশা নেই। সে চুপচাপ বসে নাস্তা করছে। আবার আড়চোখে বর্ষার দিকে তাকাল। বর্ষাকে বাবা৷ নিজের হাতে নাস্তা খাইয়ে দিচ্ছে। যবে থেকে বর্ষার জন্ম হয়েছে বুরাককে আর কেও আগের মতো ভালোবাসে না এটা সম্পূর্ণ বুরাকের ভাবনা। শাফিয়ার কথায় বুরাকের ধ্যান ভাঙলো। বুরাক শাফিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল-
“কিছু বলবে আপু?”
“কোথায় হারিয়ে আছো তুমি?”
“কোথাও না, আমি তো নাস্তা করছি।”
“আচ্ছা, তো এখন বলো আমার আইডিয়া কেমন?”
“কিসের আইডিয়া?”
“শুনো নি?”
বুরাক না সূচক মাথা নাড়াল। বশির হাসতে হাসতে বলল-
“খাবার সামনে থাকলে ও আর কোন কিছুর দিকে তাকায় না। বাদ দাও ওকে।”
“কেন বাদ দেবো? আমি বলেছি আমরা সবাই এক কালারের জামা নিবো মানে নিবো।”
বুরাক বলল-
“কিসের জামা?”
“সামনে ঈদ আসছে, আমরা সবাই এক কালারের জামা নিবো। তোমরা পাঞ্জাবী আর আমরা থ্রি পিস।”
“আচ্ছা”
বুরাক এসব বুঝে না। তার মা তাকে যে জামা কিনে দেয় সে চুপচাপ কবুল করে নেয়। রেনু শাফিয়াকে জিজ্ঞেস করলো-
“আপু শপিংমল কাকে বলে?”
“আমরা যেখান থেকে জামা কেনাকাটা করি সেখানকেই শপিংমল বলে।”
“কিন্তু ওটা তো মার্কেট।”
বশির হেসে বলল-
“আরে বোকা, সব একই। এখন চুপচাপ নাস্তা কর।”
“শপিংমল অনেক বড়ো?”
“হ্যাঁ, ওখানে সবাই কেনাকাটা করতে যায়। শপিংমলের দরজা অনেক বড়ো। সেখানে অনেক পাহারাদার থাকে। শুধু তাই না চোরকে ধরার জন্য সেখানে কুকুরও আছে।”
“কুকুর পাহারা দেয়?”
“হ্যাঁ, আমরা টিভিতে দেখেছিলাম না পুলিশদের সাথে কুকুর থাকে?”
“হ্যাঁ”
“সে রকম কুকুর আছে।”
“আমি কুকুরকে ধরতে পারবো?”
“না ওরা খুব হিংস্র হয়, ধরলেই কামর দেবে।”
রেনু মুখ লটকালো। বশির আর শাফিয়া হাসছে। বুরাক তাদের সব কথা শুনে কি যেন ভাবতে লাগলো। নাস্তা করে ছোটোরা এই বাড়ির ছাদে গেল। ছাদ দেখে তারা মুগ্ধ। চারপাশে টবে গাছ লাগানো। যেন ছোট্ট একটা বাগান। শাফিয়া গোলাপ ফুলের পাপড়ি আলতো করে ছুয়ে বলল-
“দেখলে বশির, গোলাপ ফুল কত সুন্দর হয়। আর তোমার এই ফুল পছন্দ না।”
“দেখতে সুন্দর বলে সবাই গোলাপ ফুলকে পছন্দ করে বুঝলে।”
“জি না, কারণটা শুধু এটা না। গোলাপ ফুল হচ্ছে ভালোবাসার সাক্ষী। দেখো না মুভিতে, হিরো হিরোইনকে গোলাপ ফুল দিয়ে প্রপোজ করে।”
“আমি এভাবে প্রপোজ করতে পারবো না।”
“কতবার বলেছি এসব কথা মাথা থেকে বের করতে?”
“আমার বের করতে ইচ্ছে করে না।”
শাফিয়া হেসে অন্যদিকে হেটে গেল। বুরাক দূর থেকে তাদের দেখে ভ্রু কুঁচকালো। তার মাথায় ঢুকে না বশির আর শাফিয়া সবসময় এত কাছাকাছি থাকে কেন। তার৷ বিষয়টা ভালো লাগে না। শাফিয়ার প্রতি তার ক্রাশ ক্রাশ ভাব রয়েছে। বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে তারা সবাই নিচে নামলো। বাবা বলল তৈরী হয়ে যেতে তারা শপিং করে ওখান থেকেই বাসস্ট্যান্ড চলে যাবে। সবাই তারাতাড়ি তৈরী হয়ে নিলো। বুরাক আগে থেকেই তৈরী হয়ে গাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আজকে বর্ষাকে শাস্তি তো দিতেই হবে। কিছুক্ষণ পরই সবাই আসলো। গাড়িতে উঠে বসে গল্প করছে। বুরাক মায়ের দিকে তাকাল। বর্ষা মাকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে। সকাল থেকেই বর্ষার মন খারাপ। মন খারাপের কারণ সে জানে না। আধা ঘণ্টার মধ্যে সবাই শপিংমল পৌঁছে গেল৷ গাড়ি থেকে নেমে সবাই হা হয়ে তাকিয়ে আছে শপিংমলের দিকে৷ শপিংমলটা বাহিরে থেকেই এত সুন্দর ভেতর থেকে তো আরো সুন্দর হবে। বাবা গাড়ি নিয়ে পার্কিং প্লেসে চলে গেল। তারা সবাই দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে বাবার। বুরাক চারপাশে চোখ বুলালো৷ বশির ভাইয়া যেমনটা বলেছে শপিংমল ঠিক তেমনই। কিন্তু এখানে হিংস্র কুকুর দেখা যাচ্ছে না। বাবা আসতেই তারা সবাই এগিয়ে গেল। হাঁটতে হাঁটতে বুরাক হাতে কারো স্পর্শ পেল। পাশে তাকিয়ে দেখে বর্ষা। বর্ষার চাহনি দেখে বুরাকের বেশ মায়া হলো।
“রেগে আছো আমার উপর?”
বুরাক নিজের হাত ছাড়িয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে দ্রুত হেটে এগিয়ে গেল। বর্ষার মন আরো খারাপ হয়ে গেল। রেনু এই দৃশ্য দেখে হনহন করে হেটে বুরাকের পাশাপাশি গেল।
“তুমি এমন কেন? জানো বর্ষা রাতে কান্না করেছে।”
“কেন করেছে? আমি ওকে কাঁদতে বলি নি।”
“ওর কারণে তুমি বকা শুনেছো তাই কান্না করেছে।”
“শুধু বকা শুনি নি, মারও খেয়েছি সবার সামনে। ওকে বলে দে আমি ওকে কখনো মাফ করবো না।”
বলেই বুরাক দৌড়ে এগিয়ে গেল বশিরের দিকে। রেনু মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে পেছনে ফিরে বর্ষার দিকে তাকাল। বর্ষা মন খারাপ করে মায়ের হাত ধরে হাটছে৷

অনেকক্ষণ শপিং করলো তারা। বুরাক চুপচাপ তাদের পাশাপাশি হাঁটছিল। বাবা এখনো রেগে আছে তার উপর৷ মা বুরাকের জন্য জামা কিনে নিলো৷ বুরাক ভেবেছে বাবা একবার তার সাথে কথা বললে সে আর বর্ষাকে শাস্তি দিবে না। কিন্তু বাবা তার দিকে তাকিয়েও দেখছে না৷ উপর থেকে শপিং সবাই নিচ তলায় আসলো। এখানে কসমেটিকস এর দোকান সব। বর্ষা আর রেনু সবার থেকে বেশী লাফাচ্ছে৷ বাবা হাসছে তাদের কান্ড দেখে৷ বুরাক সবার আড়াল হয়ে বাহিরে চলে আসলো৷ সিকিউরিটি মামার দিকে তাকিয়ে দেখে উনি একা বসে আছে৷ বুরাক উনার দিকে হাসিমুখে এগিয়ে গিয়ে বলল-
“আসসালামু আলাইকুম”
“ওয়ালাইকুম আসসালাম, কি বাপজান তুমি হারাই গেসো নি?”
“না মামা, আমি শুনেছিলাম আপনাদের কাছে কুকুর আছে পাহারা দেয়ার জন্য।”
“আছে তো ওইযে গাড়ি রাখার জায়গায় সব।”
“আমি আসলে এমন শুধু টিভিতে দেখেছিলাম তাই জিজ্ঞেস করলাম।”
“আইচ্ছা, হোনতে যাইয়ো না কামুড় দিবো।”
“আচ্ছা মামা আসি আল্লাহ হাফেজ।”
“আল্লাহ হাফেজ।”
বুরাক ঘুরে দাঁড়াতেই দেখে সবাই এগিয়ে আসছে। বুরাক দ্রুত হেটে অন্যদিকে গেল। বাবা বের হয়ে বুরাকের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে তার মাকে উদ্দেশ্য করে বলল-
“তোমার ছেলে কি আবার মার খেতে চায় আমার হাতে? ওর সাহস কি করে হলো আমাদের না বলে আবার বাহিরে আসার?”
বুরাক মাথা নিচু করে বলল-
“সরি আব্বু, আমার শপিং করা পছন্দ না তাই বাহিরে এসে দাঁড়িয়ে ছিলাম।”
বাবা জবাব দিলো না। দ্রুত হেটে পার্কিং প্লেসে চলে গেল। বুরাক রাগে গজগজ করছে। তার প্ল্যান হয় তো সাকসেস হবে না। কিছুক্ষণ পর বাবা গাড়ি নিয়ে আসতেই সবাই গাড়িতে উঠে বসলো। সবাই বলাবলি করছে তারা এখন একটা রেস্টুরেন্টে যাবে। তারপর সেখান থেকে বাসায় যাবে। যেহেতু এসেছে সব জায়গায় ঘুরেফিরে গেলে মন্দ হয় না। তাদের গাড়ি এসে একটা ব্রিজের পাশে থামলো। চারপাশে মানুষ কম। কিন্তু রাস্তায় গাড়ি চলাচল করছে। রাস্তার পাশে অনেকগুলো ছেলে দাঁড়িয়ে নেশা করছে। বাবা এমন দৃশ্য দেখে সবাইকে বলল ভেতরে যেতে। সবাই দ্রুত ভেতরে চলে গেল৷ সেখান থেকে খাওয়া দাওয়া করে বের হতেই এশার আযান চারপাশে থেকে ভেসে আসলো। বাবা বলল-
“আমি নামাজ আদায় করে আসি পাশের মসজিদ থেকে তোমরা ভেতরেই থাকো।”
মা বলল-
“কিছুক্ষণ পর পর মানুষ আসছে। অকারণে আমরা বসে থাকবো টেবিল দখল করে? আমরা বরং গাড়িতে গিয়ে বসি আপনি আসুন।”
“আচ্ছা সাবধানে থেকো।”
বাবা পাশের মসজিদে চলে গেল। তারা সবাই গাড়িতে উঠে বসলো। জ্বরের কারণে বর্ষার ভালো লাগছে না। গাড়িতে তার দম বন্ধ হয়ে আসছে। বুরাকের হঠাৎ বাহিরে চোখ যেতেই চমকে উঠল। এখানে অনেকগুলো কুকুর। বর্ষাকে একবার ভয় দেখাতে পারলেই তার মন শান্তি পাবে। বুরাক মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল-
“আম্মু আমি নাহয় বর্ষাকে নিয়ে বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকি। নাহলে ওর অস্থিরতা বাড়বে।”
“না, আমরা এখানের কিছু চিনি না।”
“গাড়ির পাশেই তো দাঁড়িয়ে থাকবো সমস্যা নেই।”
বশির বলল-
“আচ্ছা চল আমিও আসছি।”
বুরাক কিছু বলার আগেই বশির দরজা খুলে বেরিয়ে গেল গাড়ি থেকে। বর্ষার হাত ধরে বের করে দাঁড়িয়ে রইল। বুরাকও বের হলো। সে এবার হার মেনেছে তার পক্ষে সম্ভব না। আর এমনিতেও তার মায়া লাগছে খুব বর্ষাকে দেখে। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর বশির বলল-
“আম্মু আমি একটু রেস্টুরেন্টে যাই।”
“কেন?”
“অনেক পানি পান করেছি, ইমার্জেন্সি।”
“আচ্ছা যা তারাতাড়ি আসবি।”
“ওকে ওকে”
বশির বুরাকের হাতে বর্ষার হাত দিয়ে দৌড়ে রেস্টুরেন্টের ভেতরে গেল। বুরাক পেছনে ফিরে মায়ের দিকে তাকাল। মা চোখ বন্ধ করে হেলান দিয়ে আছে। আর শাফিয়া ও রেনু বসে কথা বলছে। হঠাৎ কাচ ভাঙার শব্দ আসলো। বুরাক পাশে তাকিয়ে দেখে সেখানে ছেলেরা ঝগড়া করছে। নেশাগ্রস্ত অবস্থা সবার। বুরাক তোয়াক্কা করলো না। সে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। ছেলেগুলো ইট নিয়ে কুকুরগুলোর দিকে মারছে। কুকুরগুলো জোরে জোরে চিৎকার করছে। বর্ষা ভয়ে বুরাকের হাত চেপে ধরলো। বুরাক হেসে বলল-
“আরে ভয় পেতে হবে না। কুকুরগুলো কিছু করবে না।”
“আমি গাড়িতে বসবো।”
“কিন্তু তুই বলেছিলি তোর ভালো লাগছে না।”
“আমার ভয় লাগছে এখন।”
বুরাক শব্দ করে হাসলো। হঠাৎ অনেকগুলো কুকুর দৌড়ে সেই ছেলেগুলোর দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। ছেলেগুলো বুরাকের কাছ থেকে কিছুটা দূরে। বুরাক মনে করেছে কুকুরগুলো তাদের দিকে এগিয়ে আসছে। বুরাক কিছু বুঝতে না পেরে বর্ষাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ফেলল। তখনই আবারো কাচ ভাঙার শব্দ আসলো আর সাথে বর্ষার চিৎকারের শব্দও ভেসে আসলো।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here