ভরসার_দুহাত পর্ব_১৮

0
348

#ভরসার_দুহাত
#শোভা_আক্তার(লাভলী)
#পর্ব_১৮

ঘটনা চলাকালীন বশির রেস্টুরেন্ট থেকে বের হচ্ছিলো। বের হতেই সে দেখলো বুরাক বর্ষাকে ধাক্কা দিয়ে সরে যেতেই সেই নেশাগ্রস্ত ছেলেটা তার হাতে থাকা কাচের বোতল বর্ষার মাথায় মেরে দিলো। বর্ষা মাথা ধরে চিৎকার দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পরলো। বর্ষার চিৎকার শুনে সবাই গাড়ি থেকে নামলো। বুরাক বর্ষার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। বশিরের পা নড়ছে না। রাস্তায় বর্ষার রক্ত ভেসে যাচ্ছে। মা বর্ষাকে জাপ্টে ধরে হাউমাউ করে কাঁদছে। এমন বশির সেই ছেলে গুলোর দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে দৌড়ে গেল। একটা ছেলের কলার ধরে ইচ্ছে মতো থাপড়াতে লাগলো। ৪ জনের সাথে সে পেরে উঠতে পারলো না। বাকি তিনজন মিলে বশিরকে ধরে মারতে লাগলো। রাস্তায় এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখে রেস্টুরেন্ট থেকে মানুষ বেড়িয়ে পরলো। তারা গিয়ে বশিরকে ছাড়িয়ে নিলো। সেই নেশাগ্রস্ত ছেলেগুলোকে ধরার আগেই তারা এলোমেলো কদম ফেলে দৌড়ে চলে গেল। বশির নিজেকে ছাড়িয়ে দৌড়ে এসে হাঁটু গেড়ে বর্ষার পাশে বসলো। মায়ের জামা রক্ত দিয়ে ভরে যাচ্ছে৷ বুরাক এখনো থমকে দাঁড়িয়ে আছে। বশির বুরাকের দিকে তাকিয়ে উঠে দাঁড়াল। বুরাক কাঁধে ধাক্কা মেরে বলল-
“কি করলি এটা বুরাক? দেখ তো আমাদের ছোটো বোনের অবস্থা কি হয়েছে। এখন যদি ওর কিছু হয়ে যায়?”
বুরাক বর্ষার দিকে তাকিয়ে থেকেই বলল-
“আমি কিছু করি নি।”
“তুই ধাক্কা দিয়েছিস ওকে। আমি নিজ চোখে সব দেখেছি।”
বুরাক বশিরের দিকে তাকিয়ে বলল-
“ভাইয়া আমি কুকুরগুলোর জন্য ওকে ধাক্কা দিয়েছিলাম।”
বশির দাঁতে দাঁত চেপে বুরাকের গালে থাপ্পড় মেরে দিলো। বুরাক গাল ধরে দাঁড়িয়ে আছে। শাফিয়া বশিরের পাশে এসে ধমকের স্বরে বলল-
“কি করছো তুমি? ছেলেটাকে পাবলিক প্লেসে মারছো কেন?”
বশির শাফিয়ার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে উচ্চ স্বরে বলল-
“তো কি করবো? কি করবো হ্যাঁ? ওর কারণে আমার বোনের অবস্থা দেখেছো?”
“ও ইচ্ছে করে কিছু করেনি বশির তুমি শান্ত হও।”
তখনই বাবার কন্ঠ ভেসে আসলো-
“কি হচ্ছে আপনারা এভাবে ভীর করে রেখেছেন কেন?”
বুরাক বাবার কন্ঠ শুনে ভয়ে কাঁপছে। ভীর ঠেলে বাবা এগিয়ে এসে বর্ষার এই অবস্থা দেখে দ্রুত এসে হাঁটু গেড়ে বসলো-
“একি হলো? বর্ষা এই বর্ষা? বর্ষার মা কি হয়েছে ওর।”
বশির রাগে গজগজ করতে করতে বলল-
“তোমার ছেলে করেছে ওর এই অবস্থা।”
বাবা অবাক চোখে বশিরের দিকে তাকাল। শাফিয়া বলল-
“না ফুপা এমন কিছুই না। আসলে হয়েছে টা কি…”
মা চিৎকার করে বলল-
“চুপচাপ তোরা, আমার মেয়েকে হসপিটাল নিয়ে চল নাহলে মরে যাবে।”
বাবা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললেন-
“এই..কি..কি বল..বলছো না এমন কি..কিছু হবে না।”
বাবা বর্ষাকে কোলে তুলে নিয়ে বলল গাড়ির দরজা খুলতে। সবাই গাড়িতে উঠে বসলো। বাবা দ্রুত গাড়ি চালিয়ে হসপিটাল নিয়ে গেল। বর্ষার মাথা থেকে রক্ত ঝরা কমছে না। কাচ ভেঙে কপালে ঢুকে গিয়েছে। বুরাক বর্ষার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সে তো এমন কিছু চায়নি। তো কেন হলো এসব? হসপিটাল পৌঁছে বাবা গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে ভেতরে গেল। আশে পাশের নার্সদের ডেকে বাহিরে নিয়ে গেল। নার্স বর্ষার অবস্থা দেখে দ্রুত কোলে নিয়ে দৌড়ে ভেতরে গেল। সবাই তার পেছনে দৌড়ে গেল বুরাক বাদে। সে চুপচাপ গাড়িতে বসে আছে। কিছুক্ষণ বসে থেকে গাড়ি থেকে নামলো। ভেতরে গিয়ে দেখে বাবা আর বশির এদিক সেদিক দৌড়াদৌড়ি করছে। বুরাক গিয়ে মায়ের পাশে দাঁড়াল। রেনু শাফিয়াকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। বুরাকের চেহারা দেখে শাফিয়া তার কাঁধে হাত রেখে বলল-
“চিন্তা করিস না বুরাক। বর্ষার কিছু হবে না।”
তখনই বাবা আর বশির আসলো। মা বাবাকে দেখে বলল-
“ডাক্তার কোথায়? বলো না তারাতাড়ি আসতে।”
“আসছেন উনারা তুমি চিন্তা করো না।”
“মেয়ে ঠিক হয়ে যাবে তো?”
“ইন শাহ আল্লাহ।”
দুজন ডাক্তার দ্রুত এসে কেবিনের ভেতরে ঢুকলো। সবাই বাহিরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে। প্রায় ১০ মিনিট পর ১জন ডাক্তার বের হলেন। সবাই উনার দিকে তাকিয়ে ভালো কিছু শোনার অপেক্ষা করছে। ডাক্তার শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলল-
“আপনার মেয়ে মাথায় আঘাত লাগার সাথে সাথে মরে গিয়েছে। এখন আমাদের কিছু করার নেই। উই আর সরি।”
চারপাশ হঠাৎ থমকে গেল। কারো মুখে কোন সাড়াশব্দ নেই। ডাক্তার আবার বলল-
“কাচ আমরা বের করেছি। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন তারপর সবাইকে ভেতরে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হবে।”
বলেই ডাক্তার ভেতরে চলে গেলেন। মা আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলেন না। ধপ করে মাটিতে বসে পরলেন। বাবা এখনো ঠাই দাঁড়িয়ে আছে। বশির আর বুরাক থমকে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের কাছে এটা স্বপ্নের মতো। যে স্বপ্ন ভেঙে গেলে তাদের থেকে বেশী খুশী আর কেও হবে না। বশির বুরাকের বরাবর এগিয়ে গিয়ে শান্ত গলায় বলল-
“তোর মনের আশা পূরণ হয়ে গিয়েছে বুরাক। মনে আছে একবার বলেছিলি বর্ষা মরে গেলে তুই খুব খুশী হবি? দেখ, আজ সত্যি বর্ষা মরে গিয়েছে।”
বুরাক দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে ধপ করে বসে পরলো। মা হাউমাউ করে কাঁদছে। ডাক্তার বেরিয়ে সবাইকে ভেতরে যেতে বলল। মা শুনেই উঠে দৌড়ে ভেতরে গেল। উনার একমাত্র রাজকন্যা নিশ্চুপ বিছানায় শুয়ে আছে। বর্ষার পাশে বসে মা তাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কাঁদছে। বাবা দরজার পাশেই দাঁড়িয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। শাফিয়া ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে কাঁদছে। বুরাক আর নিজেকে থামিয়ে রাখতে পারলো না দ্রুত গিয়ে বর্ষা আর মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো। বুরাক বর্ষার মাথায় আলতো করে হাত রেখে বলল-
“বর্ষা? এই বর্ষা? আমাকে মাফ করে দে। আমি ইচ্ছে করে তোকে ধাক্কা দেই নি। তুই তো কুকুরগুলোকে ভয় পাচ্ছিলি তাই তোকে সরাতে গিয়ে ভুলে ধাক্কা দিয়ে দিয়েছি। মাফ করে দে বোন। ফিরে আয় আমাদের কাছে।”
হঠাৎ বুরাক হাতে টান অনুভব করলো। পেছনে ফিরে দেখে বশির। বশির বুরাককে সরিয়ে রাগী কন্ঠে চেচিয়ে বলল-
“আমার বোনকে ছুঁয়ে দেখলে তোর চামড়া তুলে ফেলবো। দূর থাক ওর সামনের থেকে।”
“ভাইয়া আমি…”
“চুপ, দূর থাকতে বলেছি তাই তোর দূর থাকতে হবে।”
বাবা বশিরের উদ্দেশ্যে বলল-
“কি হয়েছিলো ওখানে?”
বশির বাবার দিকে তাকাল। বুরাক কিছু বলার আগেই বশির বলল-
“তুই চুপ, মিথ্যে কথা বলে নিজেকে বাঁচিয়ে ফেলবি জানি।”
বশির যা যা দেখেছে সব বলল বাবাকে। বাবা শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বুরাকের দিকে। বুরাক কান্নাজড়িত কন্ঠে বলল-
“আব্বু বিশ্বাস করো ইচ্ছে করে করি নি।”
“আমি জানি আমার সন্তানরা কেমন। আর রাগ কত বেশী সেটাও জানি। তোকে আমি পাবলিক প্লেসে থাপ্পড় মেরেছি বলে তুই আমার মেয়েকে মৃত্যুর পথে ঠেলে দিলি।”
মা অবাক দৃষ্টিতে বাবার দিকে তাকিয়ে বলল-
“বশির তো রাগের মাথায় বুরাকের দোষ দিচ্ছে। তুমি কি বলছো এসব?”
বাবা জবাব দিলো না। বশিরকে নিয়ে বেরিয়ে পরলো পুলিশ স্টেশনের উদ্দেশ্যে। বুরাক মুখে হাত দিয়ে কাঁদছে। শাফিয়া বুরাকের কাঁধে হাত রাখতেই বুরাক শাফিয়াকে জড়িয়ে ধরলো।
“আপু বিশ্বাস করো আমি ইচ্ছে করে করি নি।”
“আমার তোর উপর পুরো ভরসা আছে। আমি জানি তুই কেমন। রাগী হতে পারিস কিন্তু নিজের বোনের এত বড়ো ক্ষতি হতে দিতে পারিস না।”
বুরাক শাফিয়ার দিকে তাকিয়ে আবার মায়ের দিকে তাকাল। মা জাপ্টে ধরে রেখেছে বর্ষাকে। বুরাক মায়ের দিকে এগিয়ে গেল।
“মা আপনিও কি ভাবেন আমি ইচ্ছে করে এসব করেছি?”
মা বুরাকের মাথায় হাত রেখে কাছে টেনে জড়িয়ে ধরলো।
“মা রে বাপ, আমি শুধু জানি আমার মেয়ে আর নেই।”
“আমি আমার বোনের ক্ষতির কথা ভাবতেও পারি না। আমি ওর উপর রেগেছিলাম কিন্তু আমি ওকে মারতে চাইনি।”

খালিদ খান এক জগ পানি রাশিদ খানের উপর ঢেলে দিলো। তবুও রাশিদ খান ঠিক মতো দাঁড়াতে পারছে না। খালিদ খান রাগে জগটা পানিতে ছুঁড়ে মারলো। রাশিদের কলার চেপে ধরে উচ্চ স্বরে বলল-
“কি করে এসেছিস তুই? কি বলছে ওরা?”
রাশিদ খান হাসছে। খালিদ খান রেগে গিয়ে রাশিদকে সজোরে থাপ্পড় মেরে দিলো। রাশিদ তবুও হাসছে। খালিদ খানকে জড়িয়ে ধরে বলল-
“সরি ভাইয়া আমি ইচ্ছে করে করিনি। কুকুরটাকে মারতে চেয়েছি সেই মেয়েটা সামনে আসায় ওর মাথায় লেগেছে বোতল।”
খালিদ খান নিজেকে ছাড়িয়ে বলল-
“তোর এই কান্ডের জন্য আমাকে না জানি কত বিপদের সাথে মোকাবিলা করতে হয়।”
“কিছু হবে না ভাইয়া। মেয়েটার কিছু হয়নি।”
টগর হেলেদুলে এসে খালিদ খানকে বলল-
“বড়ো ভাই, সেখানে অনেক লোকজন ছিলো। হয় তো আমাদের দেখেছে তারা।”
খালিদ খান নিজের চুল টেনে ধরলো। রাগে তার গা জ্বলছে। রাগী দৃষ্টিতে রাশিদের দিকে তাকিয়ে বলল-
“নিজের ঘরে যা। আগামী ১ মাস পর্যন্ত তুই বাসা থেকে বের হবি না। যা এখন।”
রাশিদ খান হেলেদুলে হেটে চলে গেল নিজের ঘরে। খালিদ খান রাশিদ খানের বন্ধুদের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল-
“আজকের পর থেকে তোদের সাথে আমার ভাইয়ের কোন সম্পর্ক নেই। যা তোরা আর কখনো আসবি না।”
মোবিন এগিয়ে এসে বলল-
“কিন্তু বড়ো ভাই আমরা একই কলেজে পড়াশোনা করছি। খুব শীগগিরই পরীক্ষা দেবো। প্লিজ এমন করবেন না৷ আমরা আমাদের দোষ কবুল করছি।”
“যা এখান থেকে তোরা।”
বনি এগিয়ে এসে মোবিন আর টগরে ধরে ফিসফিস করে বলল-
“তোরা নিশ্চিন্ত থাক, উনার মাথা এখন গরম আছে। ঠান্ডা হলে সব ভুলে যাবে। চল এখন নাহলে আমাদের লাশ বের হবে পরে।”
টগর বলল-
“হ্যাঁ ঠিক বললি, উনার উপর আমার ভরসা নেই। যদি মেরে ফেলে আমাদের, চল চল পালাই।”
তারা তিনজন দ্রুত বাসা থেকে বেরিয়ে গেল। খালিদ খান ধপ করে সোফায় বসে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করলো।

বশির ও বাবা কেস করে ঘটনা যে জায়গায় ঘটেছে সেখানে গেল পুলিশদের সাথে। পুলিশরা আশে পাশের মানুষ জিজ্ঞাসাবাদ করে বুঝতে পারলো কারা করেছে এই কাজ। পুলিশ বুরাকের বাবার দিকে তাকিয়ে বলল-
“অপরাধী কে আমরা জেনে গিয়েছি। তার নামে এর আগেও অনেকবার কমপ্লেইন পেয়েছি আমরা। কিন্তু তার বড়ো ভাই টাকার জোরে তার কেস বন্ধ করিয়ে ফেলে সবসময়।”
“আমরা তাদের ভয় পাই না। আপনি প্লিজ তাদের এরেস্ট করুন।”
বশির বলল-
“পুলিশ সাহেব চারজন ছিলো তারা।”
“হ্যাঁ তারা চারজন সবসময় একসাথে থাকে। ঠিক আছে আমরা তাদের এরেস্ট করছি।”
বলেই পুলিশরা ভ্যান নিয়ে চলে গেল খালিদ খানের বাড়ির উদ্দেশ্যে। বাবা আর বশির হসপিটালে ফিরে আসলো। ডাক্তাররা বলছে জানাজার ব্যবস্থা করতে। মা মাটিতে বসে হাউমাউ করে কাঁদছে জানাজার কথা শুনে। বুরাক বাবার দিকে তাকিয়ে আছে। বাবাকে এখন পর্যন্ত সে কাঁদতে দেখেনি। মেয়ে মারা গিয়েছে এখনো কিভাবে এত শক্ত রেখেছে নিজেকে। বুরাক অবাক না হয়ে পারলো না৷ বাবা ডাক্তারদের রিকুয়েষ্ট করলো বর্ষাকে আপাতত মর্গে রাখতে। পুলিশ আসবে কিছুক্ষণ পর তাই৷ ডাক্তার রাজি হলো৷ বাবা বুরাকের মায়ের পাশে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসলো।
“আমরা কেস করেছি। আমাদের মেয়েকে যারা মেরেছে তাদের এত সহজে রেহাই দেবো না আমি।”
“এসব করলে কি হবে? আমাদের মেয়ে কি ফিরে আসবে?”
“না, তার অপরাধীরা শাস্তি পেলে শুধু আমরা না বর্ষাও শান্তি পাবে। এত কম বয়সে আমাদের মেয়ে আমাদের ছেড়ে চলে গেল। এত সহজে অপরাধীরা রেহাই পাবে না।”
বশির বুরাকের দিকে তাকিয়ে বলল-
“আব্বু, এই অপরাধীর বিরুদ্ধে কেন কিছু বলতে দিলে না আমাকে?”
বাবা ঘাড় ঘুরিয়ে বুরাকের দিকে তাকাল। তারপর বশিরের দিকে তাকিয়ে বলল-
“ওর শাস্তি হচ্ছে ওর গিল্ট। সারাজীবন ও নিজেকে এই ভেবে অভিশাপ দিবে যে ওর ভুলের কারণে ওর বোন আর নেই এই দুনিয়ায়।”
বুরাক মাথা নিচু করে রেখেছে৷ বাবা মাকে ধরে বিছানার এক পাশে বসিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেল। শাফিয়া বশিরের দিকে তাকিয়ে বলল-
“তুমি এবার বেশী করছো বশির। বুরাকের এতে কোন দোষ নেই।”
“ওর প্রতি তোমার দরদ বেশী হলে আমার সাথে আর কখনো কথা বলো না। আমি আমার কলিজার টুকরা হারিয়েছি। তুমি বুঝবে না এই কষ্ট।”
“কী! কী বললে তুমি? আমি বুঝবো না? বর্ষা আমারও বোন ছিলো। আমারও কলিজার টুকরা ছিলো। রেনুকে যতটা ভালোবাসি আমি বর্ষাকেও ততটা ভালোবাসি। আর তুমি বলছো আমি এই কষ্ট বুঝতে পারবো না?”
“যদি বুঝতে পারো তাহলে বুরাকের সাফাই গাওয়া বন্ধ করো।”
বলেই বশির হনহন করে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেল। শাফিয়া দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে রেখেছে।

রাত ধীরে ধীরে গভীর হচ্ছে। দরজা ঠকঠক করার শব্দে খালিদ খান চোখ খুললো। বসে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পরেছিল সে। ধীরে ধীরে উঠে গিয়ে দরজা খুলল। দারোয়ান এসেছে।
“কী হয়েছে?”
“স্যার পুলিশ আইছে। ভেতরে আইতে চায় কি করুম?”
“পুলিশ এসেছে, কিন্তু কেন?”
“রাশিদ ভাইজানের লগে দেহা করতে চায়।”
খালিদ খানের কপাল বেয়ে ঘাম ঝরছে। তখনই হনহন করে পুলিশরা এগিয়ে আসলো। দারোয়ান তাদের দেখে বলল-
“আরপ আপনেরা কেন আইলেন? বলছিলাম না বাহিরে থাকতে।”
“আপনি নিজের কাজ করুন। আমাদের অর্ডার দিতে হবে না।”
দারোয়ান ভয়ে পিছিয়ে গেল। পুলিশ খালিদ খানের বরাবর দাঁড়িয়ে বলল-
“আপনার ভাই রাশিদ খানকে ডাকুন।”
“কিন্তু কেন?”
“আপনি ভালো মতো জানেন কেন। ডাকুন এখনই।”
“দেখুন ও বাসায় নেই। ১ সপ্তাহ আগে দেশের বাহিরে গিয়েছে।”
“আরে বাহ, কোন দেশে গিয়েছে আপনার ভাই?”
খালিদ খান আমতা আমতা করছে। পুলিশ তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বাকি পুলিশদের ইশারায় বলল ভেতরে গিয়ে সার্চ করতে। খালিদ খান বলল-
“আরে আরে আপনারা কী করছেন? বললাম তো রাশিদ নেই বাসায়।”
“আপনি আমার সাথেই দাঁড়ান। বা থাকলে তারা ফিরে আসবে সমস্যা নেই।”
খালিদ খান বার বার কপালের ঘাম মুছছে। কিছুক্ষণের মধ্যে রাশিদ খানকে হেঁচকা টেনে তারা নিয়ে আসলো। পুলিশ হেসে বলল-
“আপনার ভাই দেশে ফিরে এসেছে তাহলে। আচ্ছা আজ আসি তাহলে।”
পুলিশ যেতে নিলো তার আগেই খালিদ খান পুলিশের পা ধরে বসে পরলো। পুলিশ খালিদ খানের দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বলল-
“আপনাদের মতো ক্রিমিনালরা পুলিশদের পায়ের নিচে থাকলে খুব সুন্দর দেখায়।”
“আমি মানছি রাশিদ ভুল করেছে। কিন্তু আমি এর জন্য আমার ভাইকে শাস্তি পেতে দেখতে পারবো না।”
“আপনার ভাই খুন করেছে। আপনি এটাকে ভুল বলবেন?”
“সে এখনো ছোটো, আমার ছেলের মতো সে। কি করবো বলুন?”
“তেমন কিছু না। তাকে একজন প্রকৃত মানুষ রূপে দেখতে চাইলে আমাদের সাথে যেতে দিন।”
খালিদ খান পুলিশের পা ছেড়ে দাঁড়াল। পুলিশ বাকিদের ইশারায় বলল রাশিদকে নিয়ে যেতে। খালিদ খান হঠাৎ নিচু শব্দে বলল-
“কত লাগবে আপনার?”
পুলিশটা চলে যেতে নিলো কিন্তু খালিদ খানের কথা শুনে থেকে গেল। খালিদ খানের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দিলো।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here