ভরসার_দুহাত পর্ব_২৮

0
434

#ভরসার_দুহাত
#শোভা_আক্তার(লাভলী)
#পর্ব_২৮

বুরাক চোখ তুলে একবার পুলিশকে দেখে উমায়েরকে জড়িয়ে ধরে মুখ লুকিয়ে ফেলল। পুলিশ সামনে থাকা দুই ব্যক্তিকে দেখে অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। রাস্তাঘাটে এমন কাজ মেনে নেয়া যায় না। পুলিশ হনহন করে এগিয়ে গেল। বুরাক পুলিশকে আসতে দেখে ফিসফিস করে বলল-
“পুলিশ সামনে আসছে।”
উমায়ের এর হাত পা জমে যাচ্ছে ভয়ে। কি করবে এখন ভাবতে না পেয়ে বুরাককে ছেড়ে বুরাকের দিকে তাকিয়ে ন্যাকার কান্না কেঁদে বলল-
“ওয়াদা করো যা রান্না করবো চুপচাপ খেয়ে নিবা৷ নাহলে আমি বাসায় ফিরবো না।”
বুরাক নাক মুখ কুঁচকালো উমায়ের এর কথদ শুনে। পুলিশ সামনে এসে বলল-
“এই এই কি হচ্ছে এসব? রাস্তায় দাঁড়িয়ে এমন নোংরামি করতে লজ্জা লাগে না তোমাদের?”
উমায়ের ঘুরে পুলিশের দিকে তাকিয়ে বলল-
“স্যার স্বামী স্ত্রীর মাঝে আসবেন না। আজ নয়তো ও আমার কথায় রাজি হবে। নাহলে আমি সারাজীবনের জন্য বাবার বাড়ি চলে যাব।”
পুলিশ অবাক হয়ে বলল-
“স্বামী স্ত্রী?”
“হ্যাঁ আমরা স্বামী স্ত্রী, কিন্তু ও স্বামী নামে কলঙ্ক। আমি রান্না করতে পারি না এতে কি আমার দোষ? এই ছেলে সবসময় আমার রান্নার বদনাম করে। আপনিই বলুন আমার কি ফিলিংস নেই? আমার কষ্ট হওয়া কি স্বাভাবিক না?”
পুলিশ থতমত খেয়ে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়াল। বুরাক অবাক না হয়ে পারলো না। এই মেয়ে এক্টিংও করতে পারে। উমায়ের এর চোখে পানি নেই তবুও চোখ মুছে নাক টেনে বলল-
“স্যার আপনি পুলিশ, ওকে হুমকি দিয়ে বলুন আমার থেকে মাফ চাইতে। নাহলে আমি আর কখনো ওর বাড়িতে ফিরবো না।”
পুলিশ মাথা নাড়িয়ে বুরাকের দিকে তাকিয়ে রাগী কন্ঠে বলল-
“আমাদের আইনে নারী নির্যাতন বলে একটা মামলা আছে জানো তো?”
বুরাক হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়াল। পুলিশ আবার বললেন-
“আর কখনো স্ত্রীকে রাগাবা না। বা তাকে কষ্ট দিবে না। আর আপনি, কথায় কথায় এত রাগ করা ভালো না। রান্না করা শিখুন। স্বামীরা কাজ কর্ম তো স্ত্রীর জন্যই করে। ছোটো ছোটো কথায় বাড়ি ছেড়ে দিবেন এটা কেমন নিয়ম?”
উমায়ের মাথা নিচু করে ফেলল। অকারণে বকা শুনতে হচ্ছে তাও একজন পুলিশের মুখে। বুরাক উমায়ের দিকে তাকিয়ে বলল-
“এত রাগ করা ভালো না। আমি ইন্সপেক্টর সাহেবের সামনে দাঁড়িয়ে তোমাকে ওয়াদা করছি আর কখনো তোমাকে কষ্ট দিবে না৷ তুমি খুশী মনে যা রান্না করবে আমার জন্য চুপচাপ খেয়ে নিব। এখন প্লিজ বাসায় ফিরে আসো আব্বু আম্মু তোমার জন্য আমার ক্লাস নিচ্ছে প্রতিদিন। তুমি তো জানো আমার ধুলোবালিতে এলার্জি আছে। মাস্ক পড়ে থাকলে দম বন্ধ হয়ে আসে। এখন চলো বাসায় ফিরে যাই।”
উমায়ের মুখে বড়ো হাসি ফুটিয়ে মাথা নাড়াল। বুরাক আবার পুলিশের দিকে তাকিয়ে বলল-
“স্যার আপনাকে ধন্যবাদ৷ আপনার কারণে আমাদের দূরত্ব আবার কমে গেল। আপনার স্ত্রী অনেক লাকী স্যার। আপনার মতো এত বুদ্ধিমান স্বামী পেয়েছেন উনি।”
পুলিশ ইমোশনাল হয়ে বলল-
“ভাগ্য খারাপ আমার এখনো বিয়ে হয় নি। কিন্তু আমি চাই প্রত্যেক স্বামী স্ত্রী সবসময় একসাথে থাকুক। তোমরা কখনো আলাদা হয়ো না।”
বুরাক আর উমায়ের জোরপূর্বক হাসি দিয়ে বলল-
“মন খারাপ করবেন না স্যার। ম্যাম খুব শীগগিরই আপনার জীবনে আসবেন।”
পুলিশ ভ্রু কুঁচকে বলল-
“কোন ম্যাম?”
“আপনার স্ত্রীর কথা বলছি স্যার।”
পুলিশ দাঁত বের করে হেসে মাথা নাড়াল। উমায়ের বলল-
“স্যার এখন আমরা আসি।”
“ঠিক আছে”
উমায়ের বুরাকের হাত ধরে হাঁটা ধরলো। কিছুটা এগিয়ে যেতেই পুলিশ আবার পেছন থেকে ডাক দিলো। বুরাক আর উমায়ের থমকে দাঁড়াল। উমায়ের এর কপাল বেয়ে ঘাম ঝরছে। দুজন ধীরে ধীরে পেছনে ফিরে দেখে পুলিশ এগিয়ে আসছে। বুরাক তার মাস্ক ঠিক করে নিলো। পুলিশ হাতে থামা ছবিটা দেখিয়ে বলল-
“এই মেয়েটাকে কোথাও দেখেছো তোমরা?”
উমায়ের আর বুরাক ছবিটার দিকে তাকিয়ে দেখে একটা মেয়ের ছবি। তার মানে এতক্ষণ অকারণে ভয় পাচ্ছিল তারা? বুরাক পুলিশের দিকে তাকিয়ে বলল-
“না স্যার, এই মেয়েটা কি অপরাধী?”
“না, মেয়েটাকে ৩ দিন ধরে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তার বাবা মা মিসিং কমপ্লেইন করেছে। যদি কোথাও মেয়েটাকে দেখো তাহলে পাশের থানায় কল করে জানিও।”
উমায়ের মন খারাপ করে বলল-
“আশা করছি মেয়েটাকে পেয়ে যাবেন আপনারা।”
পুলিশ মুচকি হেসে মাথা নাড়াল। বুরাক আর উমায়ের ঘুরে আবার হাঁটা ধরলো। দুজন দ্রুত হেটে সেই রাস্তা থেকে সরে আসলো। উমায়ের আশে পাশে চোখ বুলিয়ে লম্বা নিশ্বাস ফেলে বলল-
“যাক বাবা, আমি ভেবেছিলাম আজ তোমাকে হারিয়েই ফেলবো।”
বুরাক উমায়ের এর আচমকা তাকাল। উমায়ের কথাটা বলে নিজেই থতমত খেয়ে গেল। ধীরে ধীরে মাথা তুলে বুরাকের দিকে একবার তাকিয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে ফেলল। আমতা আমতা করে বলল-
“মানে এখন যদি পুলিশ তোমাকে ধরে ফেলতো আব্বু আমাকে দোষারোপ করতেন।”
বুরাক শব্দ করে হেসে এগিয়ে গেল। উমায়ের বুরাকের চলে যাওয়া দেখে দ্রুত হেটে গিয়ে তার পাশাপাশি হাঁট ধরলো।

ববি কেকের উপর মোমবাতি সাজাচ্ছে। আশে পাশে সবার হাতে বেলুন মাথায় বার্থডে ক্যাপ। ববি মোমবাতি সাজিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াল। এইখানে অনেক বৃদ্ধ লোক রয়েছে। সবার সন্তান আছে। কিন্তু তাদের সন্তানরা বাসায় জায়গা দেন নি। ববির গলা ধরে আসছে। আবার আনন্দও লাগছে যে আকলিমা সবাইকে আশ্রয় দিয়েছে। কিছুক্ষণ পর আকলিমা আসলো তার নূরজাহান মাকে নিয়ে। উনি হুইলচেয়ারে বসে আছেন। সবাই উনাকে দেখে হ্যাপি বার্থডে গান গাইতে লাগলো। উনি অবাক চোখে সবার দিকে তাকাচ্ছেন। ববি একটা বেলুন নিয়ে এগিয়ে গিয়ে হুইলচেয়ারের সামনে হাঁটু গেড়ে বসলো। নূরজাহান মা ববিকে চিনলো না। ববি হাসিমুখে বেলুনটা উনার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল-
“শুভ জন্মদিন মা, আমি সবসময় দোয়া করবো আপনি যেত খুশী এবং সুস্থ থাকেন।”
উনি হেসে ববির হাত থেকে বেলুন নিয়ে ববির মাথায় হাত বুলালো। ববি উনার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে চুমু দিলো। আকলিমা ববির দিকে তাকিয়ে আছে। ববি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আকলিমাকে ইশারায় বলল উনাকে নিয়ে যেতে। আকলিমা উনাকে নিয়ে গেল কেকের সামনে। ববি ছুরি উনার দিকে এগিয়ে দিলেন। উনি কাঁপা কাঁপা হাতে ছুরি নিয়ে বললেন-
“আমি তো বুড়ো মানুষ ছুরি ধরতে পারি না। তোমরা আমার সাথে কেক কাটো।”
ববি আর আকলিমা একে অপরের দিকে তাকাল। ববি আবার নূরজাহান মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল-
“আকলিমা আছেন তো। উনি আপনার হাতে কেক কাটবেন।”
“তুমিও কাটবে, নাহলে আমি কিন্তু রাগ করবো।”
ববি আকলিমার দিকে তাকাল। আকলিমা ইশারায় বলল রাজি হয়ে যেতে। উনি এমনিতেও খুব অভিমানী। ববি মাথা নাড়িয়ে এগিয়ে আসলো। নূরজাহান মায়ের হাতের উপর আকলিমা হাত রাখলো। ববি এক নজর আকলিমাকে দেখে আলতো করে আকলিমার হাত ধরলো। ববির ছোঁয়া পেয়ে আকলিমার হৃদয়ের স্পন্দন বেড়ে গেল। চোখ চুলে ববির দিকে তাকাল। ববি নূরজাহান মায়ের দিকে হাসিমুখে তাকিয়ে আছে। আকলিমা চেয়েও চোখ সরাতে পারছে না। ববি বার্থডে গান গাইতে গাইতে কেক কাটলো। কেক কাটা শেষে ববি আকলিমার দিকে তাকাল। আকলিমার চাহনি দেখে সে চোখ ফিরিয়ে নিলো। মেয়েটা হয় তো রাগ করেছে। ববি তারাতাড়ি হাত সরিয়ে ফেলল। ববি হাত সরাতে আকলিমার হুশ ফিরলো। অবাক হয়ে চারপাশে তাকাল। কেক কাটা হয়ে গিয়েছে দেখে সোজা হয়ে দাঁড়াল। নিজের আচরণ দেখে নিজেই অবাক হচ্ছে সে৷ ববি আকলিমার চোখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বলল মা ডাকছে তাকে। আকলিমা মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখে মা তাকে কেক খাইয়ে দেয়ার জন্য তাকিয়ে আছে। আকলিমা হেসে ঝুঁকে কেক খেয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে চুমু দিলো গালে। ববি হাত আড়াআড়িভাবে ভাজ করে তাদের সবাইকে দেখছে। কিছুক্ষণ তাদের সাথে কাটানোর পর ববি বলল তার এখন যেতে হবে। আকলিমার মনে হলো সে তার জীবনের সবচেয়ে কষ্টের কথা শুনেছে। ববির যাওয়ার কথা শুনে তার মন খারাপ হয়ে গেল। ববি নূরজাহান মাকে বলল-
“মা, আমি জানতাম না আপনার আজ বার্থডে। নাহলে অনেক সুন্দর একটা গিফট নিয়ে আসতাম। আমি আগামীকাল আবার আসবো আপনার জন্য খুব সুন্দর একটা গিফট নিয়ে।”
মা ববির মাথায় হাত বুলিয়ে বলল-
“আমার কিছু লাগবে না। জীবনের শেষ যুগে আমি যা পেয়েছি তাই অনেক। তুমি তো আমার ছেলে। ছেলের থেকে কিছু চাই না আমি। যদি আসো শুধু আমার সাথে দেখা করে যেও এটাই আমার জন্য অনেক বড়ো উপহার।”
ববি হাঁটু গেড়ে মায়ের হাত ধরে বলল-
“আমি অনাথ, আমার মা বাবা কে আমি জানি না। যখন জ্ঞান হয়েছে নিজেকে ভিক্ষুক হিসেবে পেয়েছিলাম। মসজিদে বসবাস করতাম। টাকা আর আরামের লোভে বাজে কাজে জড়িয়ে আমি ভিক্ষুক জীবন থেকে মুক্ত পেলেও মনে শান্তি পেতাম না। সব জায়গায় সুখ খুঁজে বেড়াতাম। কিন্তু কোথাও সুখ খুঁজে পাই নি। আজ আপনাদের সাথে সময় কাটিয়ে মনে হলো আমি দুনিয়ার সবচেয়ে সুখী মানুষ। আজ প্রথমবারের আফসোস হচ্ছে যে আমি অনাথ।”
ববির দু চোখ বেয়ে পানি পারলো। মা ববির চোখের পানি মুছে বলল-
“না বাবা, তুই অনাথ না। আমরা আছি তো। আমাদের সন্তান তো থেকেও নেই। তোরাই না হয় আমাদের নিজের বাবা মা মেনে নিস।”
ববি মায়ের পায়ে মাথা রেখে কোমড় জড়িয়ে ধরলো। মা আলতো করে ববির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আকলিমা থমকে দাঁড়িয়ে আছে। তার চোখে পানি টলমল করছে ববির কথা শুনে। ববি মাকে ছেড়ে চোখের পানি মুছে সোজা হয়ে দাঁড়াল। আকলিমা আড়ালে চোখ মুছে বলল-
“এত ইমোশনাল হলে হয় না। দুঃখ ছাড়া জীবন সফল হয় না। মা, আপনি ববির জন্য দোয়া করে দিন সে যেন সবসময় সুখে থাকে।”
মা মুচকি হেসে বললেন-
“আমি তোদের দুজনই জন্যই দোয়া করবো তোরা যাতে সবসময় সুখে থাকিস।”
ববি বলল-
“আমার জন্য বেশী করতে হবে। আকলিমার কাছে তো আপনারা আছেন আমার কাছে তো কেও নেই।”
“তাহলে তুই প্রতিদিন এসে আমাদের সাথে দেখা করে যাবি।”
“ঠিক আছে মা আজ আসি তাহলে।”
ববি মাথা নাড়াল। সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে হাঁটা ধরলো। আকলিমা তার সাথে দরজা পর্যন্ত আসলো।
“আজ আসার জন্য ধন্যবাদ। সবাই ভীষণ খুশী হয়েছে আপনার সাথে দেখা করে।”
“আপনাকেও ধন্যবাদ আমাকে এই সুখের মুহূর্তের অংশ বানানোর জন্য।”
আকলিমা জবাবে মুচকি হাসলো। কিছুক্ষণ নিরব থাকলো তারা। ববি কিছু বলতে চায় কিন্তু বলবে কিনা ভাবছে।।আকলিমা ববির দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বলল-
“আপ..আপনার নাম…নাম্বারটা দেয়া যাবে?”
ববির মনে হলো তার শরীর বেয়ে কারেন্ট দৌড়ে গেল। সে কানে ঠিক শুনছে তো? আচমকা আকলিমার দিকে তাকাল। ববির চাহনি দেখে আকলিমা বলল-
“না মানে, সবাই আপনাকে খুব ভালোবেসে ফেলেছে। ধরুন কেও বলল আপনার সাথে দেখা করতে চায় আর আমি আপনাকে কল দিয়ে বলতাম। তাই বললাম আর কি। না দিলে সমস্যা নেই আমার কাছে ফিরোজ স্যারের নাম্বার আছে। উনাকে কল দিয়ে বলবো নি আপনাকে পাঠিয়ে দিতে।”
“আমাকে ডাকতে হলে ফিরোজ স্যারকে কেন ডিস্টার্ব করবেন?”
ববি পকেট থেকে মোবাইল বের করে বলল-
“আপনার নাম্বার বলুন।”
আকলিমা তার নাম্বার বলল। নাম্বার আদান প্রদান করে দুজন আবার চুপ হয়ে গেল। মাগরিবের আযান ভাসছে চারপাশে। আকলিমা মাথায় ওড়না টেনে নিয়ে বলল-
“আযান দিচ্ছে, নামাজ পড়তে যাব আমি। ওয়েট, আপনি নামাজ পড়েন?”
ববি আকলিমার দিকে তাকিয়ে না সূচক মাথা নাড়াল। আকলিমা নাক মুখ শক্ত করে বলল-
“মসজিদ কিন্তু বেশী দূর না। এখন যাই আল্লাহ হাফেজ।”
বলেই আকলিমা ভেতর যাওয়ার জন্য হাটা ধরলো। ববি হেসে পকেটে হাত রেখে এগিয়ে গেল। ফিরোজ আনোয়ারের বাসা ডানদিকের রাস্তায়। ববি হাঁটা ধরলো সোজা রাস্তায় মসজিদের পথে।

উমায়ের তার নখ কামড় দিয়ে ধরে পায়চারি করছে। বুরাককে এখনো মোবিনের কথা বলা হয় নি। আচ্ছা এমন কি হতে পারে না উমায়ের বুরাককে রুম্মান আর মোবিনের সম্পর্কে বলে বুঝাক যে বুরাক মোবিনকে না মারে? বুরাক মানতে তো? উমায়ের ধপ করে খাটে বসলো। চিন্তায় তার খিদে পেয়ে যাচ্ছে। বিছানা ছেড়ে দাঁড়িয়ে দ্রুত হেটে বাহিরে গেল। খিদে পেয়েছে কিন্তু খেতে ইচ্ছে করছে না তার। সোফায় বসে কিছুক্ষণ চুপ করে বসে ভাবলো কি করা যায়। অবশেষে ভেবে উঠে দাঁড়াল। ঘর থেকে মোবাইল নিয়ে এসে বাহিরে গেল। বুরাকের ঘরের দরজায় ঠকঠক করে দাঁড়িয়ে রইলো। বুরাক দরজা খুলতেই উমায়ের তাকে সরিয়ে ভেতরে ঢুকলো। বুরাক ভ্রু কুঁচকাল তার কান্ড দেখে। দরজা খোলা রেখেই উমায়ের এর দিকে এগিয়ে এসে বলল-
“কি হলো? কার উপর রেগে আছো?”
উমায়ের বুরাকের বরাবর হয়ে বলল-
“তোমাকে কিছু বলতে চাই।”
“কি?”
“মোহাম্মদ মোবিন হোসেনকে আমি চিনি।”
বুরাক বড়ো বড়ো চোখ করে তাকাল উমায়ের এর দিকে। উমায়ের একটা ঢোক গিলে বলল-
“কিন্তু আমি তোমাকে তাকে মারার অধিকার দিতে পারবো না।”
“হুম, কি হয় তোমার?”
“বুরাক সেটা তোমার না জানলেও চলবে। মোবিন বর্ষার মৃত্যুর জন্য দায়ী না। আর সে এখন আগের মতো নেই।”
“উমায়ের আমার প্রশ্ন এটা ছিলো না।”
“তোমার প্রশ্ন যেটাই হোক আমার উত্তর এটাই থাকবে। মোবিনের ক্ষতি করো না।”
“একজন ধর্ষিতার জায়গায় নিজেকে কল্পনা করে দেখো উমায়ের।”
“বুরাক প্লিজ, তুমি বুঝার চেষ্টা করো মোবিনকে যদি তুমি মেরে ফেলো তার সাথে সাথে আমি আমার সবচেয়ে প্রিয় মানুষটাকে হারিয়ে ফেলবো।”
“বলবে না তুমি তাই তো?”
উমায়ের মুখ ঘুরিয়ে ফেলল। বুরাক লম্বা নিশ্বাস ফেলে বলল-
“আচ্ছা সমস্যা নেই, তোমার কথা শুনে আমি এটা তো বুঝতে পারলাম যে মোবিন এলাকাতেই আছে। তাকে খুজে বের করতে আমার সময় লাগবে না।”
উমায়ের বুরাকের হাত ধরে নিজের মাথায় রেখে বলল-
“তোমাকে আমার কসম তুমি মোবিনের ক্ষতি করবে না।”
বুরাক বাঁকা হাসি দিয়ে উমায়ের এর মাথা থেকে হাত সরিয়ে উমায়ের এর হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে গিয়ে বাহিরে বের করে বলল-
“আমাকে কেও থামাতে পারবে না। সে তোমার যত কাছেরই মানুষ হোক। তাকে আমি আর বেঁচে থাকতে দিবো না।”
বলেই উমায়ের এর মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিলো বুরাক। উমায়ের বুরাককে অনেকবার ডাকলো কিন্তু বুরাক দরজা খুলছে না। উমায়ের এর ভয় বেড়ে গেল। কি করবে এখন? বুরাক কি সত্যি মোবিনকে মেরে ফেলবে?

রাত বাজে আড়াইটা। দরজায় ঠকঠক শব্দ শুনে আকলিমার ঘুম ভাঙলো। বিছানা ছেড়ে নেমে দরজা খুলে দেখে তার আশ্রমেরই একজন বাবা দাঁড়িয়ে আছে।
“কি হলো বাবা কিছু লাগবে আপনার?”
“নূরজাহান আপার নাক থেকে রক্ত ঝরছে খুব।”
আকলিমা ভয় পেয়ে গেল। দ্রুত হেটে গিয়ে নূরজাহান মায়ের ঘরে গেল। বাকি মায়েরা উনার হাতের তালু পায়ের পাতা ঘষছে নাকের রক্ত মুছে দিচ্ছে। আকলিমা উনার পাশে বসে গালে হাত রেখে ডাকতে লাগলো। না ধীরে ধীরে চোখ খুলে এক নজর আকলিমাকে দেখে আবার চোখ বন্ধ করে ফেলল। আকলিমা কাঁদতে কাঁদতে উনাকে ডাকছে কিন্তু উনি সাড়া দিচ্ছেন না। আকলিমা দ্রুত হসপিটালে কল দিয়ে এম্বুল্যান্স ডাকাল। কিছুক্ষণের মধ্যে এম্বুল্যান্স আসতেই নূরজাহান মাকে নিয়ে আকলিমা হসপিটাল গেল। হসপিটালের সব ফর্মালিটি পূরণ করে অপেক্ষা করতে লাগলো। ভয় করছে তার খুব হাতে থাকা মোবাইলটার দিকে তাকিয়ে আছে। ববিকে কল দিবে? এত রাতে একটা মানুষকে টেনশন দিতে ইচ্ছে করছে না তার। কিন্তু মনে হচ্ছে একমাত্র এই মানুষটা পাশে থাকলে সে সাহস পাবে। মোবাইল ছাড়াতেই একজন নার্স এগিয়ে আসলো।
“নূরজাহান আপনার পেশেন্ট?”
আকলিমা নার্সের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়াল। নার্স একটা প্রেসক্রিপশন এগিয়ে দিয়ে বলল-
“এই ঔষধগুলো লাগবে। হসপিটাল থেকে কিছুটা দূর ফার্মেসি। আপনি দ্রুত নিয়ে আসুন।”
“জি জি আনছি এখনই”
আকলিমা প্রেসক্রিপশন নিয়ে দ্রুত হসপিটাল থেকে বেরিয়ে গেল। রাস্তা নিরব বেশী মানুষ নেই। চারপাশ কুয়াশায় ঢাকা। তারাহুরোর কারণে শালও নিতে ভুলে গিয়েছে। আকলিমা অনেকক্ষণ হাটলো। সে বুঝতে পারছে না ফার্মেসী কোথায়। হসপিটাল থেকে এত দূর তো ফার্মেসী হয় না। আকলিমা দাঁড়িয়ে গেল। আশে পাশে চোখ বুলিয়ে কাওকে পেল না। হঠাৎ তার মনে হলো কেও তার পেছনে আছে। আকলিমা পেছনে ফিরে দেখে দুটো লোক পা টিপে টিপে এগিয়ে আসছে। আকলিমা ঘুরতেই তারা দাঁড়িয়ে গেল। একে অপরের দিকে তাকিয়ে ইশারায় কি যেন বলে দৌড়ে আকলিমার দিকে এগিয়ে আসলো। আকলিমা দৌড়ে পালালো। চিৎকার করছে কিন্তু আশ পাশ থেকে কেও আসছে না। হঠাৎ আকলিমা ধাক্কা অনুভব করলো। ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেল। লোকগুলোর দিকে ঘুরে বলল-
“আমাকে প্লিজ যেতে দিন আপনারা।”
তারা জবাব দিলো না। হঠাৎ একজনের মোবাইল বেজে উঠলো। পকেট থেকে মোবাইল বের দেখে পাশের জনকে বলল-
“টগর স্যার কল দিয়েছে।”
“রিসিভ করে বল আর একটা মেয়ে পেয়ে গিয়েছি আজই ১০০জন মেয়ে পাচারের কাজ সম্পূর্ণ হয়ে যাবে।”

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here