#ভরসার_দুহাত
#শোভা_আক্তার(লাভলী)
#পর্ব_৪
এলাকার মানুষদের আজ আনন্দের শেষ নেই। সবার প্রিয় মানুষ আজ এলাকার চেয়ারম্যান হয়ে উঠেছে। ফিরোজ আনোয়ারকে সবাই ফুলের মালা পড়িয়ে মিষ্টি মুখ করাচ্ছে। চেয়ারম্যান অফিসের দরজায় দাঁড়িয়ে খালিদ খান সব কিছু হিংস্র চোখে দেখছে। বুরাক এখনো বুঝতে পারছে না ফিরোজ আনোয়ার কিভাবে জিতে গেল। সে তো অনেক আয়োজন করেছিল যাতে সবাই খালিদ খানকে ভোট করে। ববি খালিদ খানকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই খালিদ খান দ্রুত হাঁটা ধরলো। সে নিজের চোখে এসব কিছু সহ্য করতে পারছে না। সবার পাশ কাটিয়ে যেতে নিচ্ছিল তখনই ফিরোজ আনোয়ার তার হাত ধরে ফেলল। খালিদ খান ভ্রু কুঁচকে তাকাল ফিরোজ আনোয়ারের দিকে। ফিরোজ আনোয়ার হাসিমুখে খালিদ খানকে জড়িয়ে ধরলো। খালিদ খান অবাক না হয়ে পারলো না। বুরাক আর ববি অবাক হওয়ার শেষ পর্যায়ে উঠে গেল। ফিরোজ আনোয়ার নিচু স্বরে ফিসফিস করে বলল-
“শুনলাম আমাকে ভয় দেখানোর জন্য আমার মেয়েকে কিডন্যাপ করেছিল তোমার ভাই। আমি যদি ভয় পেয়ে যাই তোমাদের মতো অমানুষকে, তাহলে এলাকাবাসীদের কিভাবে খেয়াল করবো? খালিদ খান, আমি তোমাকে প্রথম ও শেষ বারের মতো ওয়ার্নিং দিলাম। আমাদের শত্রুতা কবে শুরু হলো আমি জানি না। যেহেতু শুরু হয়েই গিয়েছে তাহলে এর মাঝে আমার পরিবারকে টেনো না। কারণ ফিরোজ আনোয়ার নিজের সীমারেখা অতিক্রম করলে তোমার নাম নিশানা উঠে দুনিয়া থেকে।”
ফিরোজ আনোয়ার খালিদ খানকে ছেড়ে হাসতে লাগলো যাতে কারোর সন্দেহ না হয়। খালিদ খান নিজেকে ছাড়িয়ে দ্রুত হাঁটা ধরলো আবার। বুরাক আর ববি একে অপরের দিকে তাকিয়ে আবার সামনের দিকে তাকাল। বুরাকের মন খারাপ হয়ে গেল এসব দেখে। ববি বুরাকের দিকে তাকিয়ে বলল-
“বস ভীষণ রেগে আছে। তুই তো বলেছিলি বসই জিতবে। তো এসব কি?”
“আমি কি করে জানবো? তুই ভালো জানিস আমি যা বলি তা করে দেখাই। সবাইকে ৫ হাজার ১০ হাজার করে দিয়েছি ভোটের জন্য তবুও তারা বেইমানী করলো।”
“তুই অনেক বোকা রে বুরাক। আজকাল কাওকে টাকা দিয়ে বিশ্বাস করা আর দেয়ালে নিজের মাথা টক্কর দেয়া একই কথা।”
“এখন এসব বলে কি লাভ? চল গিয়ে দেখি বসের কি খবর। রাগের মাথায় উল্টা পাল্টা কিছু করে বসলে?”
“চিন্তা করিস না, উনি এমন এক মানুষ যে মৃত্যুকে খুব ভয় পায়।”
“হ্যাঁ ঠিক বললি, তবুও চল গিয়ে দেখি।”
বুরাক আর ববি সবার পাশ কাটিয়ে চলে গেল। ফিরোজ আনোয়ার তাকিয়ে রইলো তাদের যাওয়ার পথে।
উসমান উজ্জ্বল স্পিকারে গান ছেড়ে নাচছে। তাদের বাবা আজ থেকে এলাকার চেয়ারম্যান। এত গর্ব তারা কোথায় রাখবে ভেবে পাচ্ছে না। উমায়ের কপালে হাত দিয়ে চুপচাপ বসে আছে। সে এটারই ভয় পাচ্ছিলো। নুসাইফা বেগম রান্নাঘর থেকে বাটিতে করে মিষ্টি নিয়ে আসলেন। টি টেবিলের উপর রেখে উমায়ের এর পাশে বসলো। মেয়ের চেহারা দেখে উনি বুঝতে পারলেন মেয়ে এখন দুনিয়ার সকল চিন্তা ভাবনা নিজের মাথায় ঢুকিয়েছে। উসমান উজ্জ্বল দৌড়ে আসলো। মা হাসিমুখে দুজনকে মিষ্টি খেতে বললেন। উজ্জ্বল মিষ্টি দিয়ে উমায়ের এর পাশে বসে বলল-
“আপি, তুমি মিষ্টিমুখ করবে না?”
উমায়ের আড়চোখে ভাইকে দেখে লম্বা নিশ্বাস নিয়ে ছাড়লো। উসমান মিষ্টি খেতে খেতে বলল-
“আপি দিন দিন ফুটবল হয়ে যাচ্ছে তাই খেতে হবে না।”
উজ্জ্বল আর মা ফিক করে হেসে দিলো। উমায়ের মুখ বাঁকা করে বলল-
“আমি মাত্র ৫৬ কেজি।”
উজ্জ্বল বলল-
“আমি আর উসমান মিলেও ৫৬ কেজির হতে পারলাম না। এত কষ্ট কোথায় রাখি?”
“একদম ঢং করবি না তোরা। আমি একটু লম্বা বলে আমার ওজন বেশী এই আর কি।”
উসমান এক ভ্রু উঁচু করে বলল-
“তুমি নিজেকে ভালো মতো দেখেছো তো না-কি?”
“এই, তুই এত কথা বলোস কেন? যা এখান থেকে আমার ভালো লাগছে না।”
মা হাসতে হাসতে বলল-
“এমন কোন দিন নেই যেদিন তুমি আমাদের বলো নি এই কথাটা।”
উসমান আর উজ্জ্বল হাসতে হাসতে বলল-
“আহা অপমান করে দিলো আম্মু আপুর।”
উমায়ের রাগে ফুঁসে উঠলো। দাঁড়িয়ে দাঁতে দাঁত চেপে ধরে বলল-
“তুমি থাকো তোমার ছেলেদের নিয়ে আমি যাই।”
উমায়ের যেতে নিবে তখনই গাড়ির হর্নের আওয়াজ আসলো। আর আতশবাজির শব্দও ভেসে আসছে। উমায়ের দাঁড়িয়ে রইলো। উসমান আর উজ্জ্বল “আব্বু এসেছে” বলেই দৌড়ে বাহিরে গেল। মা উমায়ের এর দিকে তাকাল। মেয়ে ভ্রু কুঁচকে দাঁড়িয়ে আছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ফিরোজ আনোয়ার তার দু ছেলেকে নিয়ে ভেতরে আসলেন। নুসাইফা বেগম হাসিমুখে এগিয়ে গেলেন।
“আপনাকে অভিনন্দন জনাব।”
ফিরোজ আনোয়ার হাসলেন। পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়ের দিকে তাকিয়ে নিচু স্বরে বললেন-
“মেয়ের রাগ কমেনি?”
“মনে হয় না, আপনিই এখন সামলান তাকে।”
ফিরোজ আনোয়ার মাথা নাড়িয়ে এগিয়ে গেলেন। উমায়ের বাবাকে আসতে দেখে মুখ ঘুরিয়ে হাত আড়াআড়িভাবে ভাজ করলো। ফিরোজ আনোয়ার টি টেবিলের উপর থেকে মিষ্টি হাতে নিয়ে বলল-
“মিষ্টি আমার মেয়ের খুব প্রিয় তাই না?”
উমায়ের জবাব দিলো না। ফিরোজ আনোয়ার হেসে আবার বলল-
“আমি জানি আমার মামনি আমাকে নিয়ে চিন্তা করছে। কিন্তু আমি আমার মামনিকে ওয়াদা করছি আমি আমার ও আমার পরিবারের কিছু হতে দিব না।”
উমায়ের বাবার দিকে তাকিয়ে বিরক্ত স্বরে বলল-
“এমন কোন ওয়াদা করো না যেটা পূরণ করার চান্স খুব কম।”
“মানে কি? তুমি আমার উপর বিশ্বাস করো না?”
“না করি না, তুমি সেদিন আমার কথা শুনো নি আমাকে কিডন্যাপ পরে ফেলেছিল। এখন খালিদ খান হেরে গিয়েছে। মাথায় তার রক্ত জমে আছে হয় তো।”
“তাকে আমি ভয় পাই না। আর আমি জানি সে আমার বা আমার পরিবারের কোন ক্ষতি করতে পারবে না।”
উমায়ের আর কিছু বলল না। বাবাকে বুঝানো তার পক্ষে সম্ভব না। বাবার হাত থেকে৷ মিষ্টিটা নিয়েই উমায়ের দ্রুত হাঁটা ধরলো। বাবা ফিক করে হেসে দিয়ে স্ত্রীর দিকে তাকালেন।
“আজ তার পছন্দের খাবার বানাবে সব।”
নুসাইফা বেগম মাথা নাড়ালেন স্বামীর কথা শুনে।
অন্যদিকে…..
৪২ ইঞ্চির টিভির উপর ফুলদানি ছুঁড়ে মারলেন খালিদ খান। রাগে শরীর জ্বলছে তার। টি টেবিল ভেঙে পড়ে আছে। সোফার কুশন উলট পালট হয়ে আছে। ববি আর বুরাক মাথা নিচু করে চুপচাপ পাশে দাঁড়িয়ে আছে। রাশিদ খান রাগী দৃষ্টিতে বুরাকের দিকে তাকিয়ে বলল-
“তুই ওয়াদা করেছিলি যে ভাইজানকে হারতে দিবি না। এসব কি ছিলো বুরাক?”
বুরাল জবাব দিলো না। তার কাছে এই প্রশ্নের কোন উত্তর নেই। ববি বুরাককে কনুই দিয়ে খোঁচা দিয়ে বলল-
“তোকে ফাঁসিতে উঠিয়ে দিবে দেখিস। রাশিদ খান অকারণে সব দোষ তোর উপর চাপিয়ে দিবে।”
“মন্দ বলেনি, ওয়াদা আমি করেছিলাম।”
“সব দোষ নিজের উপর নিস না বুরাক। তোর এতে কোন দোষ নেই।”
বুরাক কিছু বলল না। খালিদ খান মাটিতে বসে সোফায় হেলান দিয়ে ঘনঘন নিশ্বাস ফেলছে। রাশিদ খান দ্রুত এসে খালিদ খানের পাশে বসে বলল-
“ভাইজান, আপনি টেনশন নিয়েন না। একবার বলুন আপনি কি চান আমি সব করতে রাজি।”
খালিদ খান বুরাকের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল-
“বুরাক, কাছে আয়।”
বুরাক মাথা নিচু রেখেই এগিয়ে গেল। খালিদ খানের পাশে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসলো। খালিদ খান বুরাকের ঘাড় ধরে কাছে টেনে বলল-
“তুই আমার জন্য কি করতে পারিস?”
বুরাক চোখ তুলে খালিদ খানের দিকে তাকিয়ে বলল-
“আপনি যা বলবেন।”
“মেরে দে ফিরোজ আনোয়ার ও তার পরিবারকে। তার পরিবারের কেও যাতে জীবিত না থাকে।”
“জি”
“আজ রাতের মধ্যে আমি এই কাজ সম্পূর্ণ চাই। ববি।”
ববি ডাক শুনে দ্রুত হেটে গেল খালিদ খানের দিকে।
“তুই বুরাকের সাথে যাবি। তোদের দুজনকে আমি আদেশ দিলাম। কেও যাতে না বাঁচে তার পরিবারে।”
ববি মাথা নাড়াল। খালিদ খান তার ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলল-
“আর তুই, তোকে আমি শেষ বারের মতো সর্তক করছি। আমাকে জিজ্ঞেস না করে কোন কাজ করবি না।”
রাশিদ খান মাথা নিচু করে বলল। বুরাক উঠে দাঁড়াল। ববি বুরাকের কাঁধে হাত রেখে বলল-
“আজ রাতেই যাব আমরা।”
বুরাক ববির দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়াল।
উমায়ের পড়ার টেবিলে বসে গভীর চিন্তায় ডুবে আছে। কেন তার এত ভয় করছে নিজেও জানে না। তখনই তার মোবাইল বেজে উঠলো। চোখ ঘুরিয়ে দেখে রুম্মানের নাম ভাসছে স্ক্রিনে। মোবাইল হাতে নিয়ে রিসিভ করে কানে ধরলো। সাথে সাথেই অপর পাশ থেকে রুম্মান উচু স্বরে বলল-
“দোস্তো তোকে অনেক অনেক অভিনন্দন।”
“আস্তে বল, কানের পোকা মরে যাবে তো আমার। আর তুই আমাকে অভিনন্দন কেন জানাচ্ছিস?”
“আংকেল জিতে গিয়েছে তাই। আজ থেকে তুই আমাদের চেয়ারম্যান সাহেবের একমাত্র মেয়ে।”
উমায়ের লম্বা নিশ্বাস ফেলল। রুম্মান আবার বলল-
“দোস্তো শুন, যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। তুই আর টেনশন নিস না। আংকেলের উপর বিশ্বাস রাখ। উনি কারো কোন ক্ষতি হবে দিবে না।”
“আব্বুর উপর আমার বিশ্বাস আছে। কিন্তু আমার ভয় করছে খুব। তোকে একটা কথা বলতে চাই। ওয়াদা কর কাওকে বলবি না।”
“ওয়াদা, বল তুই।”
উমায়ের তার কিডন্যাপের সব কিছু বলল রুম্মানকে। রুম্মান অবাক হয়ে বসে আছে। সে যেন নিজের কানে বিশ্বাস করতে পারছে না। রুম্মান নিচু স্বরে বলল-
“ওই অমানুষটা তোর কোন ক্ষতি করেনি তো?”
“না, কিন্তু আমার মন বলছে খুব শিগগিরই ক্ষতি করার চেষ্টা করবে।”
“আল্লাহ না করুক, আংকেলকে বল তোর জন্য বডিগার্ড রাখতে।”
“লাগবে না, আমি কারো উপর বিশ্বাস করতে পারবো না। বডিগার্ড রাখলে তো আরো ভয় পাবো। নিজের রক্ষা নিজেই করবো এখন থেকে।”
রুম্মান এই কথার কি উত্তর দিবে ভেবে পেল না। উমায়ের ঘড়ির সময় দেখে বলল-
“মাগরিবের আযান দিবে এখন। এখন রাখছি আগামীকাল ভার্সিটিতে দেখা হবে।”
“ইন শাহ আল্লাহ, নিজের খেয়াল রাখিস আর টেনশন করিস না বেশী।”
“ঠিক আছে, বেশী না একটু চিন্তা করবো।”
“তুই শুধরাবি না তাই না? যা এখন আমি কল রাখলাম।”
উমায়ের হেসে কল কেটে দিলো। তখনই মাগরিবের আযানের শব্দ চারপাশে ছড়িয়ে পরলো। উমায়ের উঠে পরলো নামাজ আদায়ের জন্য।
বুরাক হাতে রিভলবার নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছে। চারপাশে অন্ধকার নেমে এসেছে। ববি এখনো ফিরোজ আনোয়ারের পরিবারের ডিটেইলস নিয়ে আসেনি। রিভলবার পাশে রেখে বুরাক পকেট থেকে মোবাইল বের করলো। একটা নাম্বার ডায়াল করে কানে ধরলো। কেও ধরলো না। কান থেকে মোবাইল নামিয়ে লম্বা নিশ্বাস ফেলল। কিছুক্ষণ পর ববি আসলো। এসে বুরাকের পাশে বসে একটা ফাইল এগিয়ে দিলো।
“এখানে ফিরোজ আনোয়ারের পরিবারের সবার ছবি এবং ডিটেইলস আছে।”
“গুড, তোর কাছে রেখে দে।”
“ওকে, কখন যাবি?”
“২/৩ টার দিকে যাব।”
“কাওকে মারার আগে তোর খারাপ লাগে তাই না?”
“না, আমার জন্ম হয়েছে অন্যের মৃত্যুর জন্য।”
“একদম না, তুই নিজেকে নিজেই এই অন্ধকার দুনিয়ায় ঠেলে দিয়েছিস। তোর কত সুন্দর একটা জীবন ছিলো। তুই আমাকে বলেছিলি তুই বলবি কেন এই পথ বেছে নিয়েছিস। এখনো তো বললি না।”
“বলবো, সঠিক সময় এখনো আসেনি। শুন, বসকে কখনো বলবি না যে আমি অনাথ না। আমারো একটা পরিবার আছে কেও যাতে না জানে।”
“ভরসা রাখ আমার উপর। আচ্ছা চল কিছু খেয়ে আসি। প্রচুর ক্ষুধা পেয়েছে আমার।”
বুরাক মাথা নাড়াল।
গভীর রাত ৩ টা, ফিরোজ আনোয়ারের পুরো পরিবার ঘুমিয়ে আছে। বুরাক আর ববি এসেছে তাদের সবাইকে মারতে। বুরাক এখনো ফিরোজ আনোয়ারের পরিবারের কারো ছবি দেখেনি। বাড়ির বাহিরে সিকিউরিটি গার্ড রয়েছে। ভেতরে বডিগার্ডও আছে। বুরাক আর ববি দাঁড়িয়ে থেকে ভাবলো কি করা যায়। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর বুরাক আইডিয়া বের করলো। ববিকে ইশারায় বলল স্লিপিং স্প্রে লাগবে। ববি ইশারায় বলল তার কাছে নেই বাসায় গিয়ে নিয়ে আসতে হবে। বুরাক পকেট থেকে মোবাইল বের করে তাদের সাথের একজনকে কল দিয়ে বলল স্প্রে আর দড়ি নিয়ে আসতে। ১০ মিনিটের মধ্যে সে আসলো সবকিছু নিয়ে।
“শুন ববি, আমি গিয়ে সর্ব প্রথম দারোয়ানের নাকে স্প্রে করবো। সে ঘুমিয়ে গেলে তুই ওর হাত পা বেঁধে ফেলবি। তারপর আমরা ভেতরে যাব।”
“কিন্তু ভেতরে তো বডিগার্ডরা আছে।”
“সেটা আমার উপর ছেড়ে দে।”
“আচ্ছা”
বুরাক গিয়ে দারোয়ানের সামনে দাঁড়াল। দারোয়ান হেলান দিয়ে ঘুমাচ্ছে। বুরাক নিশ্চিন্ত হলো। তবুও পেপার তার নাকে স্প্রে করে দিলো কারণ সে ঘুম থেকে উঠে গেলে সমস্যা। বুরাক ববির দিকে তাকিয়ে ইশারায় বলল তার হাত পা বেঁধে ফেলতে। বুরাক দরজা হালকা ফাঁকা করে দেখে দুজন বডিগার্ডকে দেখা যাচ্ছে। ভেতরে কয়জন আছে জানতে পারলে সে কিছু ভাবতে পারতো। এখন কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। বুরাক ববিকে বলল দূরে সরে দাঁড়াতে। সে কোন একভাবে সেই বডিগার্ডদের বাহিরে নিয়ে আসবে। বুরাক দরজায় দুবার ঠকঠক করলো। বডিগার্ডরা দাঁড়িয়ে কথা বলছিল। শব্দ পেয়ে একজন এগিয়ে আসলো। বুরাক দরজার পাশে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বডিগার্ডটা দরজা খুলে উঁকি দিতেই বুরাক আর চেহারায় স্প্রে করে দিলো। সাথে সাথে বডিগার্ডটা মাটিতে লুটিয়ে পরলো। তাকে পড়তে দেখে সেই বডিগার্ডটা বাকি সব বডিগার্ডদের ডাকলো। ববি বুরাককে নিচু স্বরে বলল-
“আমি ওদের দূরে কোথাও নিয়ে যাই তুই ততক্ষণে কাজ সম্পূর্ণ করে ফেল।”
“কিন্তু ওদের কাছে রিভলবার থাকলে?”
“তুই সেটার চিন্তা করিস না। লুকিয়ে পর তুই।”
বুরাক দ্রুত গিয়ে গাছের পেছনে লুকিয়ে পরলো। বডিগার্ডরা বেরিয়ে দেখে দারোয়ান আর সেই বডিগার্ডটার কোন হুশ নেই। সাথের একজন বডিগার্ড বলল সেখানে কেও আছে। সবাই তাকিয়ে আছে বরাবর একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। ববি পেছনে ফিরে সব শক্তি লাগিয়ে দৌড়ে গেল। সবাই ববির পেছনে দৌড়ে গেল দুজন বাদে। বাড়ির পাহারা তো দিতে হবে। বুরাক ভাবলো এই দুজনকে সামলানো তার জন্য সহজ। বুরাক মাস্ক পড়ে নিলো। স্প্রে নিয়ে তৈরী হয়ে নিলো। তারা দুজন ঘুরে দাঁড়িয়ে আছে। বুরাক দ্রুত পায়ে হেটে গেল তাদের দিলে। তাদের মধ্যে একজনের মনে হলো কেও তাদের পেছনে আছে। সে পেছনে ফিরতেই বুরাক তার চেহারায় স্প্রে করে দিলো। পাশের জন ফিরে বুরাককে দেখে পকেট থেকে রিভলবার বের করতে নিলো৷ বুরাক সাথে সাথে তার পেটে লাথি মেরে দিলো। সে গিয়ে দরজার সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেল। দরজার শব্দ হওয়ায় ফিরোজ আনোয়ারের ঘুম ভেঙে গেল। উনি উঠে দ্রুত গেলেন বারান্দায়। বারান্দা থেকে কিছু দেখা যাচ্ছে না। বুরাক স্প্রে তার চেহারায় মারতেই সে ঘুমিয়ে পরলো। বুরাক স্প্রে পকেটে রেখে রিভলবার বের করে ভেতরে ঢুকলো। ফিরোজ আনোয়ার বুরাককে আসতে দেখে ভয় পেয়ে গেল। দ্রুত গিয়ে স্ত্রীকে ঘুম থেকে তুললেন।
“কি হলো ডাকলেন যে?”
“তারাতাড়ি ছেলে মেয়ের ঘরে যাও আমি আসছি।”
“কি হয়েছে বলবেন তো।”
“বলছি, তুমি যাও।”
নুসাইফা বেগম দ্রুত উমায়ের এর ঘরে গেলেন। ফিরোজ আনোয়ার মোবাইল নিয়ে তারাতাড়ি পুলিশকে কল করলেন। বুরাক হলরুমে এসে চারপাশে চোখ বুলাচ্ছে। ববির কাছে সবার ছবি। এখন কিভাবে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। হঠাৎ পাশের রূপ থেকে কাচ ভাঙার শব্দ আসলো। বুরাক দ্রুত গেল সেই রুমে। ফিরোজ আনোয়ার হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আর সামনে কাঁচের ফুলদানি ভেঙে পড়ে আছে। বুরাক ফিরোজ আনোয়ারের দিকে রিভলবার ধরে দাঁড়াল। তখনই পেছন থেকে মেয়েলি কন্ঠ ভেসে আসলো।
“আব্বুউউ”
বুরাক শব্দটা শুনে থমকে দাঁড়াল। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে দরজার সামনে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ফিরোজ আনোয়ার রাগী কন্ঠে বললেন-
“মামনি যাও এখান থেকে। পালাও এখনই।”
উমায়ের দৌড়ে এসে ফিরোজ আনোয়ারের সামনে দাঁড়াল।
“খবরদার আমার আব্বুর ক্ষতি করার চেষ্টা করবে না।”
বুরাক এখনো থমকে দাঁড়িয়ে আছে। উমায়ের ভালো মতো বুরাকের দিকে তাকাল। তার হঠাৎ মনে হলো সে এই চোখদুটো চিনে। ছেলেটা হুডি আর মাস্ক পড়ে আছে বলে চেহারা দেখতে পারছে না। তখনই বাহির থেকে পুলিশের গাড়ির শব্দ ভেসে আসলো।
চলবে…….