ভরসার_দুহাত পর্ব_৩

0
495

#ভরসার_দুহাত
#শোভা_আক্তার(লাভলী)
#পর্ব_৩

“হ্যালো বেবি গার্ল।”
উমায়ের থতমত খেয়ে দাঁড়িয়ে রইল। মানুষটার কথা বলার ভঙ্গিটা বেশ বাজে লাগলো তার কাছে। উমায়ের আমতা আমতা করে বলল-
“আমি ফারহানকে দিতে এসেছিলাম। এখন আমি আসি।”
“দাঁড়াও না প্লিজ। তোমাকে মন ভরে দেখে নিই।”
উমায়ের এক কদম পিছিয়ে গেল। এখন তার ভয় করছে খুব। পেছন থেকে হঠাৎ গঙানোর শব্দ আসলো। উমায়ের তারাতাড়ি পেছনে ফিরে দেখে ফারহান নাক টানছে বার বার। চোখ বেয়ে পানি পড়ছে তার বার বার।
“কি হলো তুমি কাঁদছো কেন?”
ফারহান ফুপাতে ফুপাতে বলল-
“দাদু নেই, দাদুকে চাই আমি।”
উমায়ের কিছু বলতে যাবে তখনই সে তার ঘাড়ে স্পর্শ অনুভব করলো। দ্রুত পেছনে ফিরে মানুষটাকে ধাক্কা মেরে পিছিয়ে গেল। ভয়ে বুক ধুকপুক করছে তার। তখনই সেই দুটো লোক এগিয়ে আসতে নিলো কিন্তু সেই মানুষটা হাতের ইশারায় না বলল আসতে। উমায়ের ঘাড় ঘুরিয়ে তাদের দুজনকে দেখে ঢোক গিলল। তাদের দেখে মনে হচ্ছে এখনই উমায়েরকে গিলে খাবে। উমায়ের আবার সামনের দিকে তাকাল। মানুষটা উমায়ের এর বরাবর দাঁড়াল। হাসিমুখে বলল-
“তুমি হয় তো এখনো আমাকে চিনো নি। আমি সেই মানুষ।”
উমায়ের ভ্রু কুঁচকালো। সে বুঝতে পারলো না মানুষটার কথা।
“মানে?”
“মানে, আমি সেই মানুষ যার সাথে তোমার সারাজীবন কাটাতে হবে। অর্থাৎ তোমার ভবিষ্যতের স্বামী আমি।”
“হোয়াট ননসেন্স ব্রেইন মাথার ভেতরে আছে নাকি খুলে পড়ে গিয়েছে।”
“আহা বেবি গার্ল রাখছো কেন? আমি সত্যি বলছি। আচ্ছা ঠিক আছে, তুমি এখন বিশ্বাস না করলে নেই। যেদিন আমাদের বিয়ে হবে সেদিন দেখে নিও।”
“দেখুন অনেক মজা হয়েছে ফারহানের দাদা দাদী কোথায় সেটা বলুন।”
“আছে, আমি কিছুক্ষণের মধ্যেই তাদের ছেড়ে দিব। আপাতত এই বাড়িটা ব্যবহার করতে হলো তোমার সাথে কথা বলার জন্য।”
“আপনি কে বলুন তো। এমন আজগুবি কথাবার্তা কেন বলছেন?”
“রাশিদ খান, নতুন চেয়ারম্যান খালিদ খানের ছোটো ভাই।”
উমায়ের অবাকের উপর অবাক হচ্ছে। এই মানুষটাকে আজ সে প্রথম দেখলো আর মানুষটা কি আজব কথাবার্তা বলছে। উমায়েরকে চুপ থাকতে দেখে রাশিদ খান বলল-
“তুমি এত কিছু ভেবো না। আমি চাই না তুমি ভাবনার দুনিয়ায় হারিয়ে যাও। আচ্ছা শুনো, ইলেকশন শেষ হলে আমি শীগগিরই তোমার বাসায় আসবো বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে। আর আমি আগে থেকেই সরি বলছি তোমার বাবা চেয়ারম্যান হতে পারবে না বলে।”
“আপনার মাথায় কি কোন সমস্যা আছে বলুন তো। কি উল্টা পাল্টা বলছেন? আপনার কি মনে হয় আপনার মতো মানুষকে আমি বিয়ে করবো? আপনি একটা ছোট্ট বাচ্চাকে এইভাবে ব্যবহার করলেন?”
“বেবি গার্ল শুনো, আমি কি করবো বলো? তার দাদা অসুস্থ খুব। আমি সাহায্য করেছি আর বদলে ছোট্ট একটা সাহায্য নিলাম। আর আমি সত্যি বলছি আমি কারো ক্ষতি করি নি। আসলে তোমার বাবা আর আমার ভাই দুজনই ইলেকশনে দাঁড়িয়েছে। আমরা যদি রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা বলি থার্ড পার্টিরা বাজে কথা লটিয়ে আমার ভাইকে হারিয়ে দিবে। আর তাদের মানসম্মানের ব্যাপারও আছে। আর তুমিই বলো তোমাকে বললে কি তুমি আমার সাথে আসতে কথা বলার জন্য? আমি তোমার সম্মানের কথাও ভেবেছি বুঝলে?”
“দেখুন অনেক হলো। এই পরিস্থিতি আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। আমাকে প্লিজ যেতে দিন।”
“দিব, আর শুনো আমাকে ভয় পেতে হবে না। আমি তোমার কোন ক্ষতি করবো না। নিজের জানের ক্ষতি কে করতে পারে বলো?”
বলেই রাশিদ খান দাঁত বের করে হাসলো। উমায়ের এর গা শিরশির করছে। কোনমতে এইখান থেকে বের হয়ে নিক বাকিটা পরে বুঝা যাবে। বেশী খারাপ ব্যবহার করলে যদি তার সাথে উল্টা পাল্টা করে ফেলে তারা? উমায়ের একটা লম্বা নিশ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত করে বলল-
“ভবিষ্যত নিয়ে আমি কখনো ভাবি নি। যা হবে দেখা যাবে। আমার দেরি হচ্ছে প্লিজ আমাকে যেতে দিন।”
“ঠিক আছে, কিন্তু ওয়াদা করো আমি ছাড়া আর কাওকে পছন্দ করবে না। দেখো হতে পারে আমি তোমার থেকে বয়সে একটু বড়ো কিন্তু আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। তোমাকে প্রথমবার যখন দেখেছিলাম রাস্তায় তখন থেকেই আমি পাগল হয়ে গিয়েছি।”
উমায়ের দাঁতে দাঁত চেপে ফিসফিস করে বলল-
“তো এখন পাগলাগারদে চলে গেলেও তো হয়।”
রাশিদ খান বলল-
“কিছু বললে বেবি গার্ল?”
উমায়ের না সূচক মাথা নাড়াল। রাশিদ খান উমায়েরকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখছে। উমায়ের এর ঘৃণা লাগছে। তার মন চাচ্ছে এখনই সামনে থাকা মানুষটার চোখ ক্ষত করে ফেলতে। হঠাৎ রাশিদ খানের কল বেজে উঠলো। বিরক্ত হয়ে পকেট থেকে মোবাইল বের করে রিসিভ করলো নাম না দেখেই।
“হ্যাঁ কে?”
“ছোটো বস কোথায় আপনি?”
“তুই? কি চাই?”
“কোথায় আপনি?”
“তোকে কেন বলবো?”
“বস আপনাকে খুঁজছে অনেকক্ষণ ধরে। আপনি না বলে কোথায় বেড়িয়ে পড়েছেন?”
“তোকে উত্তর দিতে চাই না আমি। ভাইজানকে বল আমি কিছুক্ষণের মধ্যে আসছি।”
“বস আপনার স্লো পয়জনের লাগেজ পেয়ে গিয়েছে।”
“কি?”
রাশিদ খান চমকে উঠল। চোখ এতটাই বড়ো করেছে যেন এখনই বেড়িয়ে আসবে। উমায়ের রাশিদ খানের চোখ দেখে না হেসে পারলো না। মুখ চেপে ধরে মাথা নিচু করে ফেলল। রাশিদ খান দু বার চোখের পলক ফেলে বলল-
“শুন, ভাইজানকে সামলা। আমি এখনই আসছি। আর এসে তোকে সর্বপ্রথম ধরবো। আমার লাগেজ ভাইজান কিভাবে পেল?”
“আগে বস আপনাকে ধরে নিক তারপর আপনি আমাকে ধরে নিয়েন আমার সমস্যা নেই। এখন রাখছি।”
বুরাক কল কেটে দিলো। রাশিদ খান কান থেকে মোবাইল সরিয়ে দ্রুত গিয়ে দরজা খুলে বেড়িয়ে পরলো। উমায়ের ঠাই দাঁড়িয়ে আছে। সেই দুজন লোকও রাশিদ খানের পিছু ধরলো। উমায়ের কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো বাহিরের দিকে। তারপর ফারহানের দিকে দ্রুত গিয়ে বলল-
“ফারহান, এটা কি তোমার বাড়ি?”
ফারহান হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালো। উমায়ের হাঁটু ভেঙে বসে বলল-
“কি হয়েছিল বলো আমায়। ওই আংকেল তোমাকে কি বলেছিল সব বলো।”
“আমি আম্মুর সাথে বাহিরে গিয়েছিলাম। রাস্তায় ওই আংকেলটা আম্মুকে কি যেন বলায় আম্মু আমাকে কিছু না বলেই চলে গেল। আর ওই আংকেলটা আমাকে বলল আপনাকে ছাড়া আর কারো থেকে সাহায্য না নিতে। আর আপনাকে কিছু বলতে না। বললে আমাকে চকোলেট দিবে না।”
উমায়ের ঠাই বসে রইলো। প্রত্যেকটা কথা তার মাথায় গিয়ে বিঁধছে। মনে হচ্ছে কেও তার মাথায় ভারী কিছু দিয়ে বার বার আঘাত করছে। উমায়ের নিজেকে সামলে নিয়ে বলল-
“তোমার দাদু কোথায় জানো না?”
ফারহান না সূচক মাথা নাড়াল। তখনই পেছন থেকে মেয়েলি কন্ঠ ভেসে আসলো।
“আমাকে ক্ষমা করে দিও।”
উমায়ের ঘাড় ঘুরিয়ে দরজার দিকে তাকাল। একজন মাঝবয়সী মহিলা দাঁড়িয়ে আছে। ফারহান তাকে দেখে “আম্মু” বলে দৌড়ে গেল। গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলো। উমায়ের ধীরে ধীরে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে রইলো। ভদ্রমহিলা নিচু হয়ে ফারহানের কপালে চুমু দিয়ে জড়িয়ে ধরলো। উমায়ের রাগী কন্ঠে বলল-
“আপনি মা নাকি ওর শত্রু। এভাবে নিজের সন্তানকে ব্যবহার করতে দিলেন কিভাবে?”
“মাফ করে দিও বোন। আমার শ্বশুর মশাই অসুস্থ। আমরা রাশিদ খান থেকে সাহায্য নিয়েছি। উনি এর বদলে চেয়েছিলেন কিছুক্ষণের জন্য আমাদের বাড়ি। সে নাকি যাকে ভালোবাসে মানে আপনাকে কিছু বলতে চায়। আমি ভয় পাচ্ছিলাম এটা ভেবে সে যদি আপনার সম্মান নিয়ে খেলে। খুব দোয়া করছিলাম আপনার জন্য।”
“সে আমার সম্মান নিয়ে না খেললেও এমন কিছু বলে গিয়েছে যা শুনে আমার মরতে ইচ্ছে করছে।”
“একটা কথা বলবো?”
“বলুন”
“এমন মানুষের স্ত্রী হওয়ার চেয়ে ভালো মরে যাওয়া।”
উমায়ের তাকিয়ে রইলো ভদ্রমহিলার দিকে। ভদ্রমহিলার চোখ দেখে তার মনে কৌতুহল জাগছে। তার মনে হচ্ছে এনার থেকে কিছু জানা যাবে রাশিদ খানের সম্পর্কে।

অন্যদিকে……
বুরাক পায়ের উপর পা তুলে বসে নুডলস খাচ্ছে। সামনেই আগুনে জ্বলছে কোটি টাকার স্লো পয়জন। রাশিদ খান মাথা নিচু করে বসে আছে। খালিদ খান রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আগুনের দিকে। কিছুক্ষণ আগে তুমুল ঝগড়া হলো দুই ভাইয়ের মাঝে। সেখানে বসে বুরাক দুজনের ঝগড়া দেখে মজা নিচ্ছিলো। দুই ভাইয়ের ঝগড়া কোন মুভি থেকে কম মনে করে না বুরাক। খালিদ খান ধপ করে সোফায় বসে বলল-
“বুরাক যদি সেই মানুষটাকে সময়ের মতো না হুমকি দিতো এতক্ষণে পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়তো স্লো পয়জনের কথা। তোকে কি বলেছিলাম রাশিদ?”
রাশিদ খান চুপসে গিয়েছে। রাগ হচ্ছে ভীষণ তার বুরাকের উপর। কেন যেদিন রাশিদ খান বকা শুনে সেদিন বুরাকের প্রশংসা হয়? এই বিষয়টা রাশিদ মোটেও পছন্দ করে না। বুরাক নুডলস শেষ করে টি টেবিলের উপর রেখে বলল-
“বস, এবার মাফ করে দিন। উনি তো ওয়াদা করেছেন আর কখনো এমন করবে না।”
“বুরাক তুই ওকে প্রশ্রয় দেয়া কবে বন্ধ করবি?”
বুরাক মুচকি হেসে উঠে দাঁড়াল। হেটে গিয়ে খালিদ খানের পাশে বসে বলল-
“যেদিন মরে যাব।”
খালিদ খান বিরক্ত চেহারা বানিয়ে বলল-
“তোর ক্লাস নেই না অনেকদিন হলো। তাই এত বড়ো বড়ো কথা বের হচ্ছে মুখ থেকে তাই না?”
বুরাক শব্দ করে হাসলো। খালিদ খান বুরাকের গালে আস্তে করে থাপ্পড় মেরে বলল-
“আর কখনো এসব বলবি না। তোর কিছু হলে আমার কি হবে বল তো।”
“ছোটো বস আছে তো।”
“আরে ওর নিজেকে নিয়ে ব্যস্ততা কম হলে তো আমার প্রটেক্ট করবে তাই না?”
বুরাক আবার হেসে উঠলো। এবার খালিদ খানও হাসলো। রাশিদ খান অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তাদের দুজনের দিকে। তার চোখে-মুখে যেন রাগের পাহাড় জমে গিয়েছে। কোন একসময় ভেঙে বুরাককে পিছিয়ে ফেলবে ভাবছে।

রাতেরবেলা…..
উমায়ের এর মুখে সব কথা শুনে ফিরোজ আনোয়ার চুপচাপ বসে আছে। এতদিন বিষয়টা উনি মেনে নিয়েছে কিন্তু আজ রাশিদ খান উনার মেয়েকে মিথ্যের সাহায্যে কিডন্যাপ করেছে। তাদের লড়াইয়ের মাঝে পরিবারকে টেনে রাশিদ খান ভালো করে নি। ফিরোজ আনোয়ার দাঁড়িয়ে উচু স্বরে বলল-
“বডিগার্ডস, গাড়ি বের করে এখনই।”
বলেই ফিরোজ খান হাঁটা ধরলো। কিন্তু বাসা থেকে বের হতে পারলো না। উমায়ের এসে বাবার সামনে দাঁড়িয়ে পরলো। ফিরোজ আনোয়ার শান্ত দৃষ্টিতে বলল-
“মামনি যেতে দাও আমাকে।”
“উঁহু, তুমি কোথাও যাবে না।”
“আমাকে যেতে হবে। আজ ওর লাশ মাটির নিচে পুঁতে ফেলবো। ওর সাহস কি করে হলো আমাদের মাঝে আমার পরিবারকে টানার।”
“আমাদেরকে টানার সুযোগটা তো তুমি নিজেই করে দিলে।”
ফিরোজ আনোয়ার চুপ হয়ে গেলেন। মেয়ে ভুলে নি। সেদিন যদি মেয়ে আর স্ত্রীর কথায় ইলেকশনে নাম না দিতো আজ এই দিন দেখতে হতো না। নুসাইফা বেগম এগিয়ে এসে বললেন-
“ইলেকশনে দাঁড়াতে না দাঁড়াতে আপনার মুখে খুন খারাবির কথা ফুটে উঠলো। জানি না ভবিষ্যতে কি হবে।”
ফিরোজ আনোয়ার স্ত্রীর দিকে তাকালেন। পেছনেই সোফায় বসা উনার ২ ছেলে। তারা তো ছোটো এত কিছু তারা বুঝে না। কিন্তু বিপদ তো তাদের উপরেও আছে। উমায়ের বলল-
“আব্বু সময় আছে। এখনই গিয়ে নাম তুলে ফেল। আমার মনে হচ্ছে তোমাকে ভয় দেখানোর জন্যই খালিদ খান এটা করিয়েছে।”
“সম্ভব না, আগামীকাল থেকে ভোট শুরু হবে। তিনদিনের মধ্যে কে বিজয়ী সেটার ঘোষণা হবে। এতকিছু করার পর আমি কিভাবে পিছনে ফিরি?”
“আমি জানি সময় একদমই নেই। কিন্তু আমি আমার মন বলছে তোমার চেয়ারম্যান হওয়ার লড়াই আমাদের সবাইকে ডুবাবে।”
“এমনটা বলো না আম্মু। তোমাদের কারো কিছু আমি হতে দিব না।”
উমায়ের কিছু বলল না। হেটে গিয়ে উসমান উজ্জ্বলকে নিয়ে চলে গেল। আযানের শব্দ শুনতেই নুসাইফা বেগমও চলে গেলেন নিজের ঘরে। ফিরোজ আনোয়ার চিন্তিত চেহারা বানিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

পরেরদিন…..
সকাল থেকে ভোট শুরু হয়েছে, ভোটের পরেরদিনই ভোট গগনা করা হবে। খালিদ খান সোফায় বসে আছে। কেন যেন তার মনে হচ্ছে সে জিততে পারবে না। এলাকাবাসীদের মুখে ফিরোজ আনোয়ারের প্রশংসা ভরপুর। বুরাক তার বসকে চিন্তিত দেখে বলল-
“বস, কি হয়েছে?”
“জানি না, আমার মনে হচ্ছে ফিরোজ আনোয়ার জিতবে।”
“এমন কথা ভাবতেও হবে না। চেয়ারম্যানের পজিশন আপনার। আপনি হবেন এই এলাকার রাজা। একমাত্র আপনি।”
“এত স্বপ্ন দেখিস না বুরাক। স্বপ্ন ভাঙলে খুব কষ্ট হয়।”
বুরাক মুচকি হেসে খালিদ খানের পাশে গিয়ে বসলো।
“আমি সেই স্বপ্ন দেখতে পছন্দ করি যে স্বপ্ন গুলো ভবিষ্যতে সত্যি হবে। আর হ্যাঁ, আমি এখনই দেখতে পাচ্ছি আপনি চেয়ারম্যানের চেয়ারে বসে আছেন। একদম রাজার মতো।”
খালিদ খান হেসে বুরাকের মাথায় হাত রাখলো। বুরাক খালিদ খানের হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে চুমু দিয়ে বলল-
“আমার বাবা কে আমি জানি না। কিন্তু আপনি আমার বাবা থেকেও কম না। আমি আপনার জন্য সব করতে পারি, সব।”

পরেরদিন, সবাই অপেক্ষায় আছে ফলাফল জানার জন্য। উমায়ের আজ ভার্সিটি যায়নি। তার আজ খুব ভয় করছে। বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে চায়ের কাপ নিয়ে। উসমান উজ্জ্বল খাটে বসে লুডু খেলছে। তাদের চিৎকার চেচামেচি শুনে উমায়ের বার বার বিরক্ত হচ্ছে। এক সময় সহ্য করতে না পেরে ঘরে গিয়ে রাগী কন্ঠে বলল-
“এই তোরা চুপ থাকবি না-কি মেরে ঘর থেকে বের করবো?”
উসমান বলল-
“আপি দেখো ও চিটিং করে।”
উজ্জ্বল বলল-
“না আপি মিথ্যে কথা। আমার সত্যি ৬ উঠেছে।”
“মিথ্যে আপি আমি দেখেছি ৪ উঠেছে।”
উমায়ের চায়ের কাপ রেখে দুকান চেপে ধরে চিৎকার করে বলল-
“চুপ থাকতে বলেছি বাঁদরের দল।”
উসমান আর উজ্জ্বল চুপসে গেল। উমায়ের রাগকে তারা খুব ভয় পায়। বোন রাগলে বাঘিনী হয়ে যায়। উসমান উজ্জ্বলকে ইশারায় বলল তুই বাহিরে আয়। উজ্জ্বল ভেংচি কেটে না বলল। উমায়ের কান থেকে হাত সরিয়ে বলল-
“বের হো আমার ঘর থেকে তোরা।”
উজ্জ্বল মুখ লটকিয়ে বলল-
“একটু থাকি, আমরা আর চিৎকার করবো না। চুপচাপ খেলবো।”
“তোরা কত চুপচাপ থাকিস আমি ভালো মতো জানি। যা নিজেদের ঘরে যা।”
উসমান বলল-
“ঠিক আছে, কিন্তু আপি আমাদের কিছু খেতে ইচ্ছে করছে।”
“তো আমি কি করবো? যা আম্মুকে গিয়ে বল।”
উজ্জ্বল বলল-
“আম্মু ঘুমাচ্ছে তুমি কিছু বানিয়ে দাও।”
“পারবো না, যা তোরা এখন আমি পড়তে বসবো।”
“চল উসমান চল, আমরা যেদিন না থাকবো সেদিন আমাদের মর্ম বুঝবে।”
উসমান বলল-
“ঠিক বললি, চল চলে যাই।”
উমায়ের চোখ ছোটো ছোটো করে বলল-
“আমার চেহারায় কি লিখা আছে যে আমি গাধা? যা এখান থেকে তোরা।”
উসমান উজ্জ্বল খাট থেকে নেমে চলে গেল। যাওয়ার আগে উজ্জ্বল উঁকি মেরে বলল-
“আপি, তোমার চেহারায় আমি গাধা না আমি গাধী লিখা।”
“তবে রেএএ”
উজ্জ্বল উসমান দুজনই দৌড়ে পালালো। তারা যেতেই উমায়ের হেসে দিলো। তার দুই ভাই হচ্ছে কার্টুন। বিনোদন দিতে এক্সপার্ট তারা।

অন্যদিকে…..
বুরাক চেয়ারম্যান অফিসের বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে। উপরের তলায় ভোট গননা হচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যে চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হবে। হঠাৎ একটা গাড়ি এসে থামলো। বাড়ির দরজা খুলে একটা ছেলে বের হলো। বুরাক তাকে দেখে হাসিমুখে এগিয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো।
“ওয়েলকাম ব্যাক দোস্তো।”
“এখন ওয়েলকাম জানিয়ে কি লাভ? ভুলেই তো যাস আমাকে।”
বুরাক তাকে ছেড়ে হাসতে হাসতে বলল-
“তুই কি বলতে চাস? আমি জেলখানায় যেতাম তোর সাথে দেখা করতে?”
“কেন গেলে কি তোর মানসম্মান ডুবে যেত?”
“অফকোর্স।”
ববি বুরাকের পেটে আস্তে করে মেরে বলল-
“শালা তুই আসলেই শয়তানের হাড্ডি।”
“আচ্ছা সরি সরি, তো বল জেল থেকে এতদিন পর বের হয়ে কেমন লাগছে?”
“মনে হচ্ছে আমি মুক্ত পাখি। এই খোলা আকাশে মন ভরে উড়তে চাই এখন। আচ্ছা ভোটের কি খবর?”
“কিছুক্ষণ পর ফলাফল জানা যাবে।”
“বস কোথায়?”
“ভেতরে বসে আছে, চল দেখা করে আসি।”
“হ্যাঁ চল”
ববি আর বুরাক ভেতরে গেল। খালিদ খান সবার সাথে সেখানে বসে কথা বলছে। সেখানে ফিরোজ আনোয়ারও বসে আছেন। বুরাক আর ববি পারমিশন নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো। খালিদ খান ববিকে দেখে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে হাত বাড়ালো। ববি দ্রুত গিয়ে খালিদ খানকে জড়িয়ে ধরলো। সবাই হা হয়ে তাকিয়ে আছে। ছেলেটাকে ৬ মাস আগে পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়েছিলো। তার কাছ থেকে স্লো পয়জন পাওয়া গিয়েছিল। ফিরোজ আনোয়ার দাঁতে দাঁত চেপে ধরলেন। সে চেয়ারম্যান হলে সর্বপ্রথম খালিদ খান ও তার চ্যালাপ্যালাদের এলাকা ছাড়া করাবে। তখনই উপর থেকে একজন দৌড়ে এসে বললেন-
“আমরা আমাদের নতুন চেয়ারম্যান পেয়ে গিয়েছি। আপনারা সবাই উপরে আসুন।”
সবাই দাঁড়িয়ে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে আগের থেকেই ধন্যবাদ অভিনন্দন জানিয়ে নিলো। বুরাক আর ববি বাদে সবাই উপরে চলে গেল। বুরাক ববির কাঁধে হাত রেখে বলল-
“তুই সেদিন রাশিদ খানের অপবাদ নিজের উপর না নিলে বস কখনো জিততে পারতো না।”
“হ্যাঁ, বস আমাদের জন্য অনেক কিছু করেছে এটা খুবই ছোটো জিনিস ছিলো আমার জন্য।”
বুরাক হেসে ববির পিঠে হাত রাখলো। তখনই উপর থেকে হৈহল্লার শব্দ শোনা গেল। বুরাক আর ববি একে অপরের দিকে তাকিয়ে হাসলো। তারপর দুজনই দৌড়ে গেল উপরে। উপরে গিয়ে পরিবেশ দেখে তারা অবাক না হয়ে পারলো না। সবাই ফিরোজ আনোয়ারকে অভিনন্দন জানাচ্ছে। আর পাশেই দাঁড়িয়ে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে খালিদ খান। তার দৃষ্টিতে রাগের আগুন জ্বলছে যে আগুনে সে ফিরোজ আনোয়ারকে পুড়িয়ে দিতে চায়।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here