ভরসার_দুহাত পর্ব_৮

0
329

#ভরসার_দুহাত
#শোভা_আক্তার(লাভলী)
#পর্ব_৮

উমায়ের ভালো মতো ছেলেটাকে দেখলো। ছেলেটার জামা দেখে তার চোখ গড়িয়ে পানি পরলো। কিন্তু ঠোঁটের কোণায় হাসি ফুটে উঠেছে। রাশিদ খান ছেলেটাকে চিনতে পারলো না। মানকি ক্যাপ পড়া চোখে সানগ্লাসও রয়েছে। চেহারা একদমই দেখা যাচ্ছে না। বুরাক বাইক থেকে নেমে দাঁড়াল। তার হাতে একটি রড রয়েছে। রাশিদ খান গাড়ি থেকে উঁকি দিয়ে বলল-
“মরার ইচ্ছা না থাকলে সরে যা।”
বুরাক কিছু বলল না। চুপচপ দাঁড়িয়ে আছে। রাশিদ খান আর কিছু বলল না। গাড়ি স্টার্ট দিলো। উমায়ের অবাক হয়ে একবার রাশিদকে দেখলো তারপর আবার বুরাকের দিকে তাকাল। গাড়ি কিছুটা আগে বাড়তেই বুরাক দৌড়ে গিয়ে হাতে থাকা রডটা রাশিদের পাশের জানালায় আঘাত করলো। কাচ ভেঙে রাশিদ খানের গায়ের পরলো। উমায়ের ভয়ে নিজের চেহারা লুকিয়ে ফেলল। রাশিদের গালে আর হাতে কাচ ঢুকেছে। বুরাক গাড়ির দরজা খুলে রাশিদের শার্টের কলার ধরে টেনে বের করে গালে ঘুষি দিয়ে মাটিতে ফেলে দিলো। উমায়ের এর দিকে তাকিয়ে বলল-
“গাড়ি থেকে বের হবে না।”
উমায়ের মাথা নাড়াল। রাশিদ গাড়ি ধরে উঠে দাঁড়াল। ঘুষিটা গালে একটু বেশীই জোরে লেগেছে। রাগী দৃষ্টিতে বুরাকের দিকে তাকিয়ে বলল-
“তোর সাহস কি করে হলো আমাকে মারার?”
বুরাক দৌড়ে গিয়ে আবার রাশিদকে ঘুষি দিলো। এইবার নাকে লেগেছে ঘুষি। রাশিদ ছিটকে পরলো আবারো। বুরাক রাশিদের চুল ধরে টেনে দাঁড় করিয়ে গাড়ির পেছনের সিটের আয়নার দিকে ছুঁড়ে মারলো। কাচ ভেঙে রাশিদ অর্ধেক ভেতরে ঢুকে গিয়েছে। উমায়ের ভয় পেয়ে গেল ছেলেটার এমন রূপ দেখে। সে তারাতাড়ি গাড়ি থেকে বের হলো। বুরাক রাশিদকে টেনে গাড়ি থেকে বের করলো। রাশিদ খানের চেহারায় কাচ ঢুকেছে। রক্তাক্ত হয়ে গিয়েছে শরীর। উমায়ের দু কদম পিছিয়ে গেল। বুরাক উমায়েরকে দেখে রাশিদকে মাটিতে ফেলে এগিয়ে গেল। বুরাক সামনে যেতেই উমায়ের পিছিয়ে গেল।
“ভয় পাচ্ছো কেন?”
“তু..তুমি মারামারি করতে জানো? কিছুক্ষণের মধ্যেই ওর এই অবস্থা করে ফেললে।”
“মারামারি জানা আমার জন্য স্বাভাবিক বিষয়। আর আজ আমি মারামারি না জানলে তোমাকে বাঁচাতে পারতাম না।”
উমায়ের কিছু বলতে যাবে তার আগেই তার চোখ পেছনের দিকে গেল। রাশিদ খান গাড়ি ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আর তার হাতে রিভলবার। উমায়ের বলল-
“পেছনে, পেছনে দেখো।”
বুরাক পেছনে ফিরে দেখে রাশিদ খান রাগী দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। বুরাক ভাবলো রাশিদ যখন গুলি করবে সে সরে যাবে। কিন্তু রাশিদ খান হঠাৎ রিভলবার ঘুরিয়ে উমায়ের এর ধরলো। বুরাক তা দেখে দৌড়ে উমায়ের এর সামনে গেল। ততক্ষণে রাশিদ গুলি চালিয়ে ফেলেছে। গুলি গিয়ে বুরাকের ডান হাত ছুঁয়ে গাছে লেগে গেল। উমায়ের চিৎকার দিয়ে উঠলো। এগিয়ে এসে বুরাকের ডান হাত ধরে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলল-
“তুমি কেন আসলে সামনে?”
“আমি কি জানতাম সে সত্যি গুলি করে দিবে? আহ্ আমার হাত।”
উমায়ের ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো। বুরাক রাশিদের দিকে তাকাল। রাশিদ ঠিক মতো দাঁড়াতেও পারছে না। বুরাক বলল-
“তুমি গাড়ির পেছনে থাকো। ও যে কোন সময় আবার গুলি করতে পারে।”
“আর তুমি কি করবে?”
“সেটা আমার উপর ছেড়ে দাও তুমি এখান থেকে সরে দাঁড়াও।”
উমায়ের তাই করলো। রাশিদ রিভলবার চেক করে দেখে একটাই গুলি রয়েছে। সে আবার রিভলবার বুরাকের দিকে আবার ধরে দাঁড়াল। বুরাক ডান বাম দেখলো। কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। হঠাৎ চোখ গেল মাটিতে পড়ে থাকা রডটা দেখা যাচ্ছে। বুরাক দৌড়ে গিয়ে রডটা নিলো। বুরাককে আস্তে দেখে রাশিদ গুলি চালিয়ে দিলো। কিন্তু গুলি বুরাকের লাগে নি। বুরাক রড নিয়ে দৌড়ে এসে রাশিদ খানের বুকে ঢুকিয়ে দিলো। রাশিদ খান থমকে দাঁড়িয়ে রইল। তার নাক মুখ গড়িয়ে রক্ত বের হতে লাগলো। হাত থেকে রিভলবার পড়ে গেল তার। বুরাক অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাশিদ খানের দিকে। তার চোখে ১২ বছরের একটা মেয়ের মৃত চেহারা ভেসে উঠলো। বুরাক রাগে রড বের করে ইচ্ছে মতো রাশিদের লাগলো। রাশিদ শব্দ করার শক্তিটুকু পাচ্ছে না। উমায়ের দৌড়ে এসে বুরাককে থামানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু বুরাক কিছুই শুনতে পাচ্ছে না। রাগ তার মাথায় জায়গা করে ফেলেছে। উমায়ের খুব কষ্টে বুরাকের হাত ধরে টেনে সরালো। বুরাক ঘনঘন নিশ্বাস ফেলছে রাশিদ খানের দিকে তাকিয়ে। উমায়ের বুরাকের বুকের বা পাশে হাত বুলাতে বুলাতে বলল-
“শান্ত হও মরে গিয়েছে তো।”
বুরাক উমায়ের এর দিকে তাকিয়ে বলল-
“না ওকে এখন মরতে দিবো না। মৃত্যুর আগে ওকে আমার চেহারা দেখতে হবে।”
বুরাক তার হাত থেকে রডটা ফেলে সানগ্লাস আর মানকি ক্যাপ খুললো। রাশিদ খানের চোখ নিমিষেই বড়ো বড়ো হয়ে গেল। কিন্তু সে কিছু বলতে পারছে না। বুরাক এগিয়ে গিয়ে রাশিদ খানের সামনে হাঁটু গেড়ে বসলো। রাশিদ খানের অবাক চেহারা দেখে বুরাক বাঁকা হাসি দিয়ে নিচু স্বরে বলল-
“একটা গল্প শোনাই তোকে, একদিন একটি কুকুরের দল নেকড়ের বাচ্চাকে ছিঁড়ে খেয়ে ফেলেছিলো। নেকড়ের মনে প্রতিশোধের আগুন জ্বলে উঠে। সেই নেকড়ে কুকুরের দলে ঢুকে পরেছিল নিজের পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে। কিন্তু কুকুররা টের পর্যন্ত পায়নি যে তাদের দলে নেকড়ে রয়েছে। আজ এই মুহূর্তে নেকড়ে সেই কুকুরের দলের একজনকে মৃত্যুর পথে পৌঁছে দিলো। আর মাত্র ৩ জন বাকি।”
রাশিদ খান চমকে উঠল। বুরাক দাঁড়িয়ে তার পকেট থেকে রিভলবার বের করলো। উমায়ের অবাকের উপর অবাক হচ্ছে। ছেলেটার কাছে রিভলবারও আছে? বুরাক রাশিদ খানের কপালে গুলি করলো ২ বার। ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পরলো রাশিদ খান। বুরাক রিভলবারটা পকেটে রেখে উমায়ের এর দিকে ঘুরে দাঁড়াল। উমায়ের কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল-
“তোমার আসল পরিচয় কি?”
“আমি একজন মানুষ।”
“তুমি মারামারি জানো, তোমার কাছে রিভলবারও আছে। তার মানে…”
“তোমাকে এতকিছু ভাবতে হবে না উমায়ের। চলো তোমাকে বাসায় দিয়ে আসি।”
“বাসায়? আমার বাবা, মা, ভাইয়েরা কেও তো বেঁচে নেই।”
“সবাই বেঁচে আছে। আমি বলেছিলাম না তাদের কিছু হতে দিবো না।”
“মানে?”
“মানেটা না হয় অজানাই থাক। চলো এখন।”
উমায়ের আর কিছু বলল না। বুরাক ভাবলো একবার ববির সাথে কথা বলে নেয়া যাক। মোবাইল বের করে ববিকে কল করলো। ববি সাথে সাথে রিসিভ করে বলল-
“কোথায় তুই? অনেকক্ষণ ধরে কল করছিলাম কিন্তু নাম্বার বার বার বন্ধ বলছিলো।”
“হয় তো নেট সমস্যা, কেন কিছু হয়েছে?”
“বুরাক খালিদ খান সব জেনে গিয়েছে।”
“হোয়াট? কিন্তু কিভাবে?”
”আমাদের সাথে আসা সব চ্যালাপ্যালাকে তো তুই মেরে ফেলেছিস কিন্তু একজন বেঁচে বাসায় ফিরে গিয়ে সব বলে দিয়েছে। সে আমাদের পেলে মেরে ফেলবে।”
“তুই এখন কোথায়? আর তুই ঠিক আছিস তো?
“আমি ফিরোজ আনোয়ারের বাসায় আর উনাদের সব বলে দিয়েছি যে কেন আমরা তাদের মারি নি। উনাদের বডিগার্ডরা আছে। আমি সেফ আছি কিন্তু তুই আর উমায়ের কোথায়? তোদের পাগলের মতো খুঁজছে খালিদ।”
“উমায়ের আমার সাথেই আছে। রাশিদ খানকে আমি মেরে ফেলেছি।”
ফিরোজ আনোয়ার ববিকে ইশারায় বলল মোবাইল দিতে সে কথা বলবে। ববি মোবাইল এগিয়ে দিলো। ফিরোজ আনোয়ার কানে মোবাইল ধরে বলল-
“আমার মেয়ে কোথায়?”
“আ..আমার পাশেই আছে।”
“তুমি কেন আমাদের বাঁচালে আমি জানি না। কিছুক্ষণ আগে তোমাদের প্রতি মনে ঘৃণা ছিল এখন শ্রদ্ধা বেড়েছে। একটা অনুরোধ করতে চাই।”
“জি করুন”
“আমার মেয়েকে সুস্থ সবল আমার কাছে ফিরিয়ে দাও।”
“আমি এখনই ওকে আপনার কাছে নিয়ে আসছি।”
“না না এইখানে এসো না। এলাকায় মানুষ ছড়িয়ে পড়েছে এতক্ষণে তোমাদের খোঁজার জন্য।”
“ঠিক আছে, স্যার আপনি আমার উপর ভরসা রাখুন। আমি খুব শীগগিরই আপনার মেয়েকে আপনার কাছে ফিরিয়ে দিবো। আমি ওর কোন ক্ষতি হতে দিবো না।”
ফিরোজ আনোয়ার কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল-
“ঠিক আছে, আশা করছি তুমি বিশ্বাসের মর্যাদা রাখবে।”
“রাখবো”
উমায়ের বলল-
“তুমি..তুমি কি আমার আব্বুর সাথে কথা বলছো?”
বুরাক বলল-
“আপনার মেয়ের সাথে কথা বলুন।”
বুরাক মোবাইল এগিয়ে দিতেই উমায়ের খোপ করে নিয়ে কানে ধরলো।
“আব্বু”
“মামনি”
“আব্বু তুমি ঠিক আছো?”
“হ্যাঁ, তুমি ঠিক আছো তো?”
“আমি একদম ঠিক আছি আব্বু। এইযে ও..এই তোমার নাম যেন কি?”
বুরাক থতমত খেয়ে গেল। উমায়ের এখনো ওর নাম জানে না? কি নাম বলবে? উমায়ের তো এইটাও জানে না যে বুরাক খালিদ খানেরই লোক। উমায়ের ভ্রু কুঁচকে বলল-
“নাম কি ভুলে গেলে?”
“না, আমি.. আমি হচ্ছি.. আমার নাম বুরাক।”
“ওকে, আব্বু বুরাক আমাকে বাঁচিয়েছে।”
“বুরাকের উপর বিশ্বাস করে তোমাকে ওর হেফাজতে দিলাম। তুমি তবুও নিজের খেয়াল রেখো।”
“আচ্ছা আব্বু, আর তুমি চিন্তা করো না আমি জানি ও আমার কোন ক্ষতি করবে না।”
বুরাক তার ভ্রু দু’টো উঁচু করে ফেলল। উমায়ের এর কথাটা তাকে অবাক করেছে। হঠাৎ সামনে থেকে গাড়ি এগিয়ে আসার শব্দ আসলো। বুরাক সামনে তাকাল। তার মনে হচ্ছে খালিদ খান আসছে। বুরাক উমায়ের এর হাত থেকে মোবাইল নিয়ে তারাতাড়ি বাইকে বসে বলল-
“বাইকে বসো আমাদের যেতে হবে।”
“ওরা কারা?”
“খালিদ খানের লোক, তারাতাড়ি বসো।”
উমায়ের বাইকে উঠে বসলো। বুরাক ফুল স্পিডে বাইক চালাতে লাগলো। পেছনেই গাড়ি রয়েছে। উমায়ের বার বার পেছনে দেখছে। বুরাক এক সময় ধমকের স্বরে বলল-
“তুমি বার বার পেছনে দেখছো কেন? আমাকে শক্ত করে ধরে বসো নাহলে পড়ে যাবে।”
“আমি দেখছি ওরা যদি গুলি করে আমাকে।”
বুরাক ভাবলো উমায়ের ঠিক বলেছে। উমায়েরকে তার রক্ষা করতেই হবে। বুরাক উমায়েরকে আবার বলল শক্ত করে ধরতে। উমায়ের শক্ত করে ধরতেই বুরাক বাইক আঁকাবাকা করে চালাতে লাগলো। উমায়ের ভয়ে চিৎকার মারছে। এক সময় বুরাক আর উমায়ের তাদের পেছনে ফেলে অনেক আগে বেরিয়ে পরলো। বুরাক পেছনে একবার দেখে বাইকের স্পিড কমিয়ে দিলো। উমায়ের এখনো শক্ত করে বুরাককে ধরে বুরাকের পিঠে গাল লাগিয়ে চোখ বন্ধ করে রেখেছে। বুরাক মুচকি হাসলো। বুরাক উমায়েরকে নিয়ে বাসস্ট্যান্ডে এসে পড়েছে। বাইকের তেলও খুব কম রয়েছে। উমায়ের চারপাশে চোখ বুলিয়ে বলল-
“আমরা এখানে কেন এসেছি?”
“রাত তো অনেক হলো কিছু খেতে তো হবে।”
“আমার খেতে ইচ্ছে করছে না। আমরা বাসায় কখন যাব।”
“আমার বন্ধু ববি সর্বপ্রথম প্রমাণ জোগাড় করবে খালিদ খানের বিরুদ্ধে। তারপর পুলিশ খালিদ খানকে ধরে ফেলবে। ববি আমাকে জানানোর পর আমরা ফিরে করবো।”
“কতক্ষণ লাগবে এসব করতে?”
“তা জানি না। খুব সময় লাগতে পারে। আমাদের এলাকা খুব ছোটো। এলাকায় ঢুকলেই আমাদের মেরে ফেলবে।”
“ওওহহ, আচ্ছা তোমার আব্বু আম্মু কি জানে তুমি বাসায় ফিরবে না এসব শেষ না হওয়ার পর্যন্ত?”
বুরাক উমায়ের এর দিকে তাকিয়ে রইল। উমায়ের বুরাকের চাহনি দেখে ভাবছে সে ভুল কিছু জিজ্ঞেস করলো কিনা। বুরাক বলল-
“উমায়ের, আমি যেদিন তোমাকে তোমার আব্বু আম্মুর কাছে সুস্থ সবল পৌঁছে দিবো সেদিন সব বলবো তোমাকে আমার বিষয়ে। এর আগে আমার রিকুয়েষ্ট প্লিজ তুমি আমাকে আমার বিষয়ে কোন প্রশ্ন করবে না।”
উমায়ের মাথা নাড়াল। বুরাক একটা লম্বা নিশ্বাস ফেলে আশে পাশে তাকাল। অনেকগুলো দোকান আছে খাবার কিনে নিলে ভালো হয়। উমায়েরকে বাইকে বসিয়ে রেখে বুরাক খাবারের দোকানে আসলো। উমায়ের বসে পা নাড়াচ্ছে। সে অনেকবার মা বাবার সাথে ঘুরতে বেরিয়েছিল। কিন্তু আজ প্রকৃতি নতুন লাগছে। বুরাককে উমায়ের এর কাছে রহস্যময় মানব মনে হচ্ছে৷ বুরাক আসলো খাবার আর পানি নিয়ে। উমায়ের এর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল-
“পরোটা আর ভাজি পেলাম। খাবে তো?”
“আম্মুর হাতের পরোটা ছাড়া খাই না আমি।”
বুরাক এক ভ্রু উঁচু করলো। এখন কি এই মেয়েটার ন্যাকামো সহ্য করতে হবে? উমায়ের বুরাকের চেহারা দেখে ফিক করে হেসে দিলো। বুরাক তাকিয়ে রইল উমায়ের এর দিকে। উমায়ের বলল-
“সরি সরি, মজা করছিলাম তোমার সাথে। খাবার নিয়ে আমার সমস্যা নেই। যাই দিবে চুপচাপ খেয়ে নিব। কিন্তু খাবার টাটকা, ভালো ও হালাল হতে হবে।”
“হ্যাঁ হ্যাঁ এটা টাটকা, ভালো ও হালাল খাও এবার।”
উমায়ের হেসে বুরাকের হাত থেকে খাবার নিলো।
“তুমি খাবে না?”
“রাশিদ খানের রক্ত চুষে আসলাম। এখন আর খেতে ইচ্ছে করছে না।”
উমায়ের এর হাসি উড়ে গেল। হঠাৎ তার মাথায় একটা কথা আসলো। সে এখন একটা খুনীর সাথে আছে। বুরাকের ডান হাতে রক্ত জমাট হয়ে লেগে আছে। উমায়ের এর মনে হচ্ছে সে মাথা ঘুরে এখন পড়ে আ।যাবে। ভয়ও করছে খুব হঠাৎ। বুরাক চারপাশে চোখ বুলাচ্ছে। বিপদের হাত পা নেই। যদি তারা এইখানেও এসে পড়ে তাদের খুঁজতে খুঁজতে? বুরাক হঠাৎ উমায়ের এর দিকে তাকাল। উমায়ের ভাসা ভাসা চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। যেন এখনই কেঁদে উঠবে। বুরাক ভ্রু কুঁচকে বলল-
“কি হলো তোমার?”
উমায়ের চুপ করে রইল। বুরাক কিছুটা সামনে গিয়ে বলল-
“ভয় করছে আমাকে দেখে?”
উমায়ের হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়াল। বুরাক হেসে বলল-
“আমি তোমার ক্ষতি করবো না এইটুকু বিশ্বাস রাখতেই পারো।”
“সত্যি?”
“হ্যাঁ বাবা সত্যি, এখন খেয়ে নাও। আমি ভাবছি কোথায় যাওয়া যায়।”
উমায়ের মাথা নাড়িয়ে পরোটা ছিঁড়ে মুছে দিলো। বুরাক কিছুটা দূরে গিয়ে পকেট চেক করে দেখে ৮০০ টাকা আছে। এইটুকু টাকা দিয়ে কি করবে। ববিকে মেসেজ দিয়ে বলল তার বিকাশে কিছু টাকা পাঠাবে। ববি রিপ্লাই দিয়ে বলল খালিদ খান কল দিয়ে বলেছে বুরাক আর ববি নিজেকে তার সামনে সারেন্ডার না করলে এলাকায় বোম ব্লাস্ট করাবে। বুরাক আরো চিন্তায় পরলো। এমন জঘন্যতম মানুষকে সম্মান করতো সে। যে নিজের ছোটো ভাইয়ের জন্য অন্ধ। তার ছোটো ভাই শতশত অপরাধ করেছে তবুও ছোটো ভাইকে শাসন করেনি। বুরাক ববিকে মেসেজ দিয়ে বলল বিষয়টা হ্যান্ডেল করতে। হঠাৎ পাশ থেকে চিৎকার চেচামেচির শব্দ ভেসে আসলো। বুরাক পাশে তাকিয়ে দেখে খালিদ খানের লোক এগিয়ে আসছে। বুরাক তাদের সবাইকে চিনে। সবার হাতে রিভলবার, চাপাতি কিছু না কিছু আছে। মানুষ এসব দেখে ভয় পাচ্ছে৷ বুরাক ভিড়ের মধ্যে দৌড়ে গিয়ে উমায়ের এর হাত ধরে টেনে একটা বাসে উঠে পরলো। বাসগুলোর ড্রাইভাররা দৌড়ে গিয়ে যার যার বাস স্টার্ট করে চলে যাচ্ছে। বুরাক উমায়েরকে একটা সিটে বসিয়ে বাস থেকে উঁকি মারলো। তারা বাকি বাসগুলো চেক করছে। বুরাক এই বাসচালকের দিকে তাকিয়ে বলল-
“বাস তারাতাড়ি স্টার্ট করুন। সন্ত্রাসরা এসেছে মেরে ফেলবে সবাইকে।”
“বাসে তেল কম মাঝ রাস্তায় বন্ধ হতে পারে।”
“আপাতত এইখান থেকে বের হলেই হবে। দেখুন বাসে কত মানুষ। যদি কারো ক্ষতি হয় তখন?”
বাসচালক বিষয়টা বুঝতে পেরে বাস স্টার্ট করলো। বুরাক আবারো বাস থেকে উঁকি মারলো। তারা এখনো খুঁজছে। বুরাক লম্বা নিশ্বাস ফেলে দরজার পাশেই বসে পরলো। উমায়ের এগিয়ে এসে বুরাককে বলল-
“ওরা দেখেছে তোমাকে?”
“না, কিন্তু ওরা আন্দাজ করে ফেলবে আমরা কোন এক বাসে উঠে গিয়েছি। শুধু তাই না সিসিটিভি ক্যামেরাও চেক করতে পারে।”
“হ্যাঁ ঠিক বললে, আচ্ছা আমরা যাচ্ছি কোথায়?”
বুরাক বাসচালককে জিজ্ঞেস করলো এই বাস কোথায় যাবে। বাসচালক বলল রাঙামাটি যাবে। উমায়েরকে বলল সিটে গিয়ে বসতে। উমায়ের যাবে না তার ভয় করছে। বুরাকের পাশেই বসে রইল। উমায়ের হাত দেখে বলল-
“ব্যাথা করছে না?”
বুরাক উমায়ের এর দিকে তাকিয়ে না সূচক মাথা নাড়াল।
“মিথ্যে বলে লাভ নেই। ডাক্তার দেখানো জরুরি নাহলে ইনফেকশন হয়ে যাবে।”
“চিন্তা করো না, আমার কিছু হবে না।”
উমায়ের আর কিছু বলল না। বুরাক জেদি সে বুঝে গিয়েছে। বুরাক বলল-
“আচ্ছা উমায়ের, একটা সন্ত্রাস ছেলে যদি একটা সাধারণ মেয়ের প্রেমে পড়ে তাহলে কি হয়?”
উমায়ের বুরাকের দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বলল-
“জীবন বিষাক্ত হয়ে যায়।”

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here