#ভালবাসা_বাকি_আছে – ১৩
Hasin Rehana – হাসিন রেহেনা
রায়হান আর বুশরার ফোনে কথা হয়না বললেই চলে। সদ্য রোমান্টিসিজমে ভেসে যাওয়ার পরে এই পরিবর্তন মেনে নিতে মন খারাপ তো হয়ই বুশরার। কিন্তু কিছু করার নেই। একাডেমিক পড়াশুনা, পরীক্ষা নিয়ে ব্যাস্ততা যাচ্ছে বুশরার। রায়হানও ব্যাস্ত নির্বাচনের শেষ সময়ের প্রচারনা নিয়ে। তাইতো টেক্সটই ভরসা আজকাল।
নির্বাচন নিয়ে শুরুতে খুব একটা আশা না করলেও এখন বেশ আশাবাদী রায়হান। আলী হায়দার সাহেবের অনুসারীরা সাদরে বুকে টেনে নিয়েছে ওকে। এলাকার মানুষের মুখে মুখে ওর নাম। আসলে রায়হানের ব্যাক্তিত্ব আর লিডারশীপ এমনই যে ওর বক্তব্য শুনে, কর্মকাণ্ড দেখে, ভবিষ্যৎ কর্মযজ্ঞের পরিকল্পনা শুনে যে কোন প্রজ্ঞাসম্পন্ন মানুষ অন্যরকম বিশ্বাস আর টান অনুভব করতে বাধ্য। আবার সোশ্যাল মিডিয়ার বদৌলতে তরুণ প্রজন্মের কাছেও অল্প সময়ে পৌঁছাতে পেরেছে। সব মিলিয়ে দলের সবার বিশ্বাস, সর্বকনিষ্ঠ সংসদ সদস্যের সম্মানটা হাসিল করতে সক্ষম হবে রায়হান। ওদিকে এই বিশেষ সময়টাতে রায়হানের পাশে থাকতে না পারার আফসোস পোড়াচ্ছে বুশরাকে। গতকালও মাঝরাতে রায়হানকে চিঠি লিখেছে বুশরা।
ম্যানচেস্টার
২২ ডিসেম্বর, ২০২২
বেচারা রায়হান সাহেব,
আপনি মনেহয় বাংলাদশের প্রথম নেতা যে কিনা বউয়ের ভোট ছাড়াই জাতীয় সংসদে ঢোকার টিকিট পেতে যাচ্ছেন। ব্যাপারটা কিন্তু গিনেজ বুকে স্থান পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু এই খুশিতে যে বউকে ভুলে যাচ্ছেন তা কি ঠিক? গত এক সপ্তাহে ফোন করেছেন একবার। অর্ধশত টেক্সটের রিপ্লাই দিয়েছেন পাঁচটা। এই অযাচিত মানষিক নির্যাতনের দেশে ফিরে আপনার নামে বধু নির্যাতনের মামলা করবো কিন্তু। এই আমি বলে রাখছি। আর হ্যাঁ, আপাতত শাস্তিস্বরুপ আগামী একদিন আপনার সাথে সকল প্রকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলো। ফোন করে লাভ নেই। আমি এক কথার মানুষ।
ইতি,
আপনার নির্যাতিত বউ।
সকালবেলা অভিমানমাখা চিঠি পড়ে মুচকি হাসছে রায়হান। মেয়েটা পাগল। সত্যি সত্যি ফোন অফ করে বসে আছে। বার বার নিজেই জোর দিতে নির্বাচন নিয়ে সিরিয়াস হতে, সর্বোচ্চটা দিতে। আর এখন এত অভিমান যে ফোন অফ করে বসে আছে। বউদের মন এত অদ্ভুত। কাল পরীক্ষা ছিল বুশরার। কেমন হয়েছে সেটাও শোনা হয়নি। বাড়ি ফিরে না খেয়েই ঘুমিয়্র গেছিলো রায়হান। তাহলে কি এজন্য রাগ মহারানীর? ভেবে কুল পায়না রায়হান।
“ভাইয়া তুমি এখানে? আম্মা তোমাকে খুঁজতেছে তো।”
ঘরে এসেই অস্থিরভাবে বললো রুকাইয়া। এই মেয়েটা দিন দিন আরো প্রাণোচ্ছল হচ্ছে। দুইদিন আগে বাড়ি এসেছে। আর আসার পর থেকেই বাড়ি মাথায় করে রেখেছে। এসময় রুকাইয়াকে সামনে পেয়ে খুশি হলো রায়হান।
“এই ভাইয়া, কি বলছি আমি? মন কোথায়?”
উত্তর না দিয়ে রায়হান বললো,
“আচ্ছা বুড়ি, ভাবির সাথে কথা হইছে?”
“কোন ভাবি?”
“কয়টা ভাবি তোর?”
“শায়লা ভাবি, বিউটি ভাবি, কুমু ভাবি, মিতা ভাবি,…..”, এক নাগাড়ে বলতে থাকলো রুকু।”
“হইছে থাম। বুশরার কথা বলছি?”
“অ, বুশরা? যেম্নে ভাবি বললা। ও কি আমার ভাবি লাগে নাকি?”
“তোর একমাত্র ভাইয়ের বউ বুড়ি….”
“দূরে গিয়া মুড়ি খাও ভাইয়া। ও আমার কইলজার টুকরা বান্ধবী।”
“আচ্ছা ঠিক আছে, কথা হইছে আজকে?”, অধৈর্য হয়ে প্রশ্ন করলো রায়হান।
“হুম কথা হইছে, আম্মার সাথেও কথা হইছে। তুমি নাকি কথাবার্তা বন্ধ করে দিছো। খুব খারাপ কিন্তু।”
“কখন কথা হইছে?”
“একটু আগে।”
“কথা বলায়ে দে।”
“অকাজ করার আগে হুশ থাকে না? অপেক্ষা করো।”
“তুই আমার বোন না?”, কন্ঠে যতখানি সম্ভব মধু ঢেলে বললো রায়হান।
“আমাকে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে তো লাভ নাই ভাইয়া। ফোন বন্ধ করে রাখছে তো। অন করে কল দেয়। আবার বন্ধ করে দেয়। বাঁদর শায়েস্তা করার ভালো বুদ্ধি পাইছে। নোবেল দেওয়া উচিত ওরে। আম্মা ডাকে, যাও।”
বাংলার পাঁচের মত মুখ করে ঘর থেকে বেরোল রায়হান। তবে অন্তত এটুকু জেনে নিশ্চিন্ত হলো যে মেয়েটা ভালো আছে। ওর সাথে ছাড়া বাড়ির অন্যদের সাথে কথা হচ্ছে।
গত কয়দিনের বকেয়া শোধ করতেই বোধহয় গোটা বিশেক ফোনকল করলো রায়হান। অথচ ভীষণ ব্যাস্ত আজকের দিনটাতে ফোন হাতেই নেওয়ার কথা না ওর। পুরুষ মানুষ ঠেলায় পড়লে সময় সুযোগ বের করে নেয় কিভাবে তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রায়হান। কিন্তু কি লাভ। এই সময় সুযোগটা একদিন আগে করলে এই দিন দেখতে হতোনা বোধহয়। এতবার ফোন করেও বুশরাকে পায়নি ও। যান্ত্রিক কন্ঠে বারবার বলছে নম্বরটি বন্ধ আছে। গভীর রাতে বাড়ি ফিরে শুয়ে পড়লো রায়হান। প্রায় বিশত্রিশবার ফোন করলো বুশরাকে। বালিশে মাথা রেখে একই যান্ত্রিক কণ্ঠস্বর শুনতে শুনতে ঘুমিয়েও পড়লো ক্লান্তিতে। অপেক্ষা একটা সুন্দর স্বপ্নের অপেক্ষা। স্বপ্নে মেয়েটা এত আদুরে থাকে। একদম ঝগড়া করেনা।
এক সময় গভীর ঘুমে বুশরার অস্তিত্ব অনুভব করলো রায়হান। কি গভীরভাবে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রেখেছে ওকে। যেন বাধন আলগা করলেই আবার হারিয়ে যাবে দূর দুরান্তে। রায়হানও বাহুডোরে বেঁধে রাখলো স্ত্রীকে। কিছুতেই ছেড়ে দেওয়া যাবে না এক মুহুর্তের জন্য। অবচেতন মনেই প্রার্থনা করে সময়েক চাকা থেমে যাক। স্বপ্নটা আটকে থাক সময়ের বেড়াজালে।
ভোরের আজান ভেসে আসছে মসজিদ থেকে। আর পাঁচটা দিনের মতই ঘুম আলগা হতে শুরু করেছে রায়হানের। তবে প্রিয়তমাকে জড়িয়ে রাখা স্বপ্নের আবেশটা রয়ে গেছে এখনো। বুশরার গায়ের মিষ্টি গন্ধটাও নাকে লাগছে। হাতের বাধন আরেকটু শক্ত করলো। ঘুম জড়ানো আস্ফুট কন্ঠে বললো, “বুশরা”।
চলবে।
#ডাক্তার_মিস – সিকুয়েল
#ভালবাসা_বাকি
বোনাস পর্ব, বিধায় ছোট কেন বললে দুঃখ পাবো। গল্প কেমন লাগলো জানাবেন কেমন? নিজের পেইজ ছাড়া পেন্সিল আর অন্যপ্রকাশের গ্রুপে #ভালবাসা_বাকি_আছে গল্পটা দিচ্ছি আমি। কাজেই গল্পের পাঠক সীমিত। আপনাদের যদি আমার লেখা ভালো লাগে, আই রিপিট, যদি ভালো লাগে তাহলে রিভিউ গ্রুপগুলোতে একটু আধটু আলোচনা করবেন কষ্ট করে। লিং’ক’ও শে’য়ার করতে পারেন, ক’মে ন্টে দিলাম। এটুকুন আমার ভালবাসার দাবি। পাশে থাকার জন্য অনেক ধন্যবাদ ও ভালবাসা। ✨✨
সমালোচনার গ্রুপ গল্পকথা – Hasin Rehana তে স্বাগতম।