ভালোবাসাটা আমার পর্ব-২৫

0
1987

#ভালোবাসাটা_আমার
#রোকসানা_আক্তার
পর্ব-২৫

তার সাতমিনিটের মাথায় নিতুর ভাই ফারুক বাড়ির ভেতর প্রবেশ করলো।রিহান ভাবলো এবার কিছুটা হলেও উনাকে সংযত করা যাবে।রিহান নিতুকে রেখে ফারুকের দিকে শ্লথ পায়ে এগিয়ে গেলো।সালাম করলো।ফারুক রিহানের দিকে তাকানোর প্রয়োজন বোধ করলো না।রিহান কিছু বলতে মুখ খুলবে তার আগেই নিতুর ভাই রিহানকে পাশ কেঁটে ধড়মড় চলে গেলো।রিহান পেছন থেকে বলে উঠলো আবার,

“ভাইয়া যাবেন না দয়া করে।আপনার সাথে আমার কথা ছিল..!”

ফারুক এতক্ষণে তার ঘরের ভেতর ঢুকে গেছে।দরজা বন্ধ করবে তার আগমুহূর্তে একফোঁড় রিহানের দিকে তাঁকিয়ে,

“আমি কিছু শুনতে ইচ্ছুক নই।যা বলার মা-বাবাকে বলুন।আমি এসব ব্যাপারে জানি না।”

বলে রিহান এবং নিতুর সামনে ফারুক শব্দ করে দরজাটা বন্ধ করে দিলো!রিহান এবং নিতু বুঝলো ভাই তাদের বিশ্বাস করলো না!সেও মুখ ফিরিয়ে নিল সবার মতন।নিতুর চোখ ভিঁজে আসলো আবার।ভেঁজা চোখে রিহানের বুকের উপর বলতো মাথাটা রেখে নিজের তাল সামলানোর চেষ্টা করলো।রিহান নিতুর পিঠে হাত রাখলো।বললো,

“কিছু হবে না নিতু।সব ঠিক হয়ে যাবে।সব ঠিক হয়ে যাবে…!”

নিতু রিহানের বুক থেকে মাথা তুললো।চোখের পানি মুছলো।রিহানকে কিছু না বলে পেছনের দিকে ফিরে ঘরের দিকে পা চালালো।রিহান অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো কোথায় যাচ্ছে নিতু!নিতু দরজার কাছে এসে ছোট্টবোনকে ডেকে উঠলো,

“মিতা?”

মিতা সাথে সাথে জবাব তুললো।নিতু বললো,

“দরজাটা খুলবি,বোন?”

মিতা বোধহয় দরজা খুলতে এগুলো।কিন্তু পারলো না।নিতুর মা বাঁধা দিলো।নিতু শুনলো।বলে উঠলো,

“মা আমি বাবার সাথে কথা বলবো!দয়া করো দরজাটা খুলো মা।”
“দরজা খুলতে পারবো না।যেই ছেলের সাথে এসেছিস।ওর সাথে ফিরে যা।আমরা তোর কেউ না এখন আর!”

নিতু নিজেকে শক্ত করার চেষ্টা করে আবার বলে উঠলো,
“আমি তোমার সব কথা মানবো।একটু বাবার সাথে কথা বলবো।দয়া করো দরজাটা খুলো মা।এমন করো না।”
“আমার মাথা গরম করিস না!যেখান থেকে এসেছিস আবারো বলছি সেখানে ফিরে যা!!

কথাটা নিতুর মা একটু চেঁচিয়েই বলে উঠলেন,যা লুৎফরের রুমে বিয়ে পৌঁছায়।লুৎফর তার রুম থেকে বেরিয়ে আসে।বলে,

” কি হয়েছে?”

নিতুর মা লুৎফরের কথার জবাব না দিয়ে নিজের ঘরে চলে যান।লুৎফর এবার দরজার দিকে তাকায়।নিতুর গলার ধ্বনি আসছে।লুৎফর এগিয়ে গেলো না আর সেদিকে।নিজের ঘরে আবার ফিরে আসে!

নিতুর দরজা নিয়ে এই যে খুটুর-খাটুর দূরে দাঁড়িয়ে রিহান সবটা দেখে।খুব কষ্ট লাগতেছে আজ কেনজানি তার।নিতু কাঁদছে।কিছুটা আওয়াজ করে কাঁদছে।রিহান দ্রুতপায়ে নিতুর কাছে আসে।দুইকাঁধে হাত রেখে,

“কাঁদে না নিতু!কাঁদে না!”
“আমি মা-বাবার খুব কষ্ট দিয়ে ফেলেছি!আমাকে কেউ আর কখনোই ক্ষমা করবে না!”

বলতে বলতে নিতু আবার কেঁদে উঠে।রিহানের কিছু বলার ভাষা রইলো না।মুখটা কেনজানি শান্ত হয়ে গেলো।নিতুকে কোন শব্দগুলো দিয়ে সামলাবে, নিরব করাবে তা জানে না রিহান।

———————————
“ওহ তাহলে এই পোলার লগেই পালাইলি?”

একটা কুৎসিত গলার স্বরে রিহান এবং নিতু উভয়ই চমকে উঠে।পাশ ফিরে তাকিয়ে একজন আঁধবয়সী মহিলা।মুখে পানের খিল।ঠোঁটজোড়ার ফাঁকে কয়েকটা দাঁত দেখা যায়, তা টকটকে লাল।নিতু মহিলাটিকে চিনতে পারলো ভালো করে।তাদের বাড়ির পুকুরের ওপাড়ে উনাদের বাড়ি।স্বভাবে ভালো না খুব একটা।মহিলাটি আবার বলে উঠে,

“ঢাকাইয়া পোলার কান্দে ঝুঁলিয়া গেলি?তয় কয়রাত আছিস একসাথে?”

রিহানের বেশ উদ্ভট লাগলো এই মহিলার কথাবার্তা গুলো।সাথে চরমমাত্রায় রাগ চলে এলো!নিতুকে বললো,

“নিতু?এখানে আর একটা মুহূর্তও দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব না!চলো।”

বলে নিতুর হাত টান মেরে নিতুকে এদিকপ নিয়ে এলো।এবং পথের দিকে হাঁটা ধরলো।পেছন থেকে,

“আরেহহ কই যাস তোরা?কই যাস?মানুষজন দেখবো না তোদের?মানুষজনরে আগে দেখাইয়া নিই তোদের,তারপর যাইস।”

রিহান নিতুকে গাড়িতে বসিয়ে দিলো।রিহান ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলো।নিতু বলে উঠলো,

“আমরা কোথায় যাচ্ছি? ”

রিহানের কোনো জবাব এলো না!

————————————
বাইরে থেকে আর কোনো আওয়াজ কানে এলে না নিতুর।লুৎফর বসা থেকে উঠে এলেন।জানালা দিয়ে বাইরে তাকালেন।উঠান খালি।চারপাশে আঁধার নেমে আসছে।ওরা বোধহয় চলে গিয়েছে লুৎফর বুঝলো।আবার নিজের ঘরে অন্ধকারমাখা ঘরটায় ফিরে এলো লুৎফর।সামনে থাকা চেয়ারটায় বসে পড়লো।চোখ বুজলো।চোখের সামনে ভেসে উঠলো মেয়েকে নিয়ে দেখা স্বপ্নগুলোর ছবি।অনেক বড় আশা নিয়ে মেয়েকে ঢাকায় দিয়েছেন। কিন্তু আজ..!

———————————-
রিহান ফ্রেশ হয়ে বাথরুম থেকে বেরিয়ে দেখে নিতু খাটের উপর এলোমেলোভাবে শুয়ে আছে।
গ্রাম থেকে ফিরেছে মিমিট ত্রিশেক হবে।এখন গভীর রাত।দীর্ঘ জার্নি ছিল।এই পুরো জার্নিতে মেয়েটা গাড়িতে কেঁদে এসেছে।ক্লান্ত খুব এখন হয়তো।তাই রুমে ঢুকামাত্রই ঘুমিয়ে গেছে।ফ্রেশও হওয়া হয়নি মেয়েটির।রিহান নিতুর কাছে যেয়ে পাশ থেকে বালিশ টেনে নিতুর মাথার নিচে গুঁজে দিলো।কপাল,গালে মাথার কিছু চুল এলোমেলো হয়ে আছে,সেগুলো রিহান কানের দুই পাশে গুঁজে দিলো।নাভির উপর থেকে সরে যাওয়া কাপড়টা ঠিক করে দিলো।তারপর বাতি বন্ধ করে নিজে সোফায় শুয়ে পড়লো।খাটে শুতো।কিন্তু নিতু এলোমেলো হয়ে শোয়ার কারণে তার শোয়ার সিস্টেম ছিল না।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here