ভালোবাসাটা আমার পর্ব-২৬

0
2109

#ভালোবাসাটা _আমার
#রোকসানা_আক্তার
পর্ব-২৬

নিতু চুপচাপ বসে আছে।দৃষ্টি জানলার বরাবর বাইরের উঁচু উঁচু দালানগুলোর দিকে।রিহান ভেতরে ঢুকে।হাতের ফোনটা টেবিলের উপর রেখে বলে,

“দুপুরের খাবার খেয়েছো,নিতু?”

নিতু চমকে উঠে।তাকিয়ে রিহান।অফিস থেকে এত তাড়াতাড়ি ফিরলো?মনের প্রশ্ন মনেই ছিল।মুখ খুলে আর নিজে কিছু বলতে গেলো না।মাথা নাড়লো শুধু।মানে খেয়েছে।

“স্নেহা কলেজ থেকে ফিরেছে?”

তাতেও মাথা নেড়ে সম্মতি দেয়।নিতু এখানে আসার পর থেকে এভাবে ইঙ্গিতেই কথা বলে।
প্রয়োজন ছাড়া তেমন কথা বলে না।পরিবার, আত্মীয়-স্বজন সবাই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তা নিয়ে নিতুর মন খুব ক্ষুদ্র হয়ে গেছে।আর এই ক্ষুদ্র মনের একমাত্র কারণ তো রিহান নিজেই।এসব কিছু হওয়ার পেছনে রিহান নিজেই নিজেকে দায়ী করে এখন।রিহান আবার উদাসীন হয়ে যায়।ছোট একটা শ্বাস ছেড়ে বাথরুমে ঢুকে।

————————————————
রিহান দুপুরের খাওয়া শেষ করে টিস্যু হাতে মুখ মুছে।এমন সময় দরজায় কলিংবেল বাঁজে।স্নেহা পাশে ছিল।বললো, “স্নেহা দেখ তো ক এসেছে?”

স্নেহা উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিলো।সিয়াম ভাইয়া এসেছ।সে রিহানের স্কুলজীবনের বন্ধু।মাঝেমধ্যে প্রায়ই আসে।তবে ভাইয়া বিয়ে করার পর থেকে আর তেমন উনার দেখা পায়নি। সিয়ামকে দেখে রিহান হেসে উঠে।সিয়াম রিহানের কাছে এসে গলা নেয় কিছুক্ষণ।তারপর বলে,

“লুকিয়ে লুকিয়ে ত বিয়ে করে ফেললি ব্যাটাা।আমাদের একবারও জানানোর প্রয়োজন বোধ করলি না।বাহহহহ..।তা ভাবী কোথায়?”

রিহান আবারো হাসে সিয়ামের কথা শুনে।বলে,
“ওদিকে চল।ওখানে বসো কথা বলি।”
“চল।”

রিহান এবং সিয়াম হলরুমের সোফায় যেয়ে বসে।
দীর্ঘ আলাপণ পর সিয়াম কথার মাঝে হঠাৎ বলে উঠে,

“তা বেবীটেবী নিবি না?একটা বেবী নিয়া নে।একটু মামাটামা হমু।”

রিহান চুপ করে আছে।সিয়াম লক্ষ করছে কথার মাঝে ও যতবার নিতুর কথা টেনেছে ততবারই রিহানের থেকে নিরবতা উত্তর পেয়েছে।নিতুকে পেয়ে কি রিহান খুশি নয়?প্রেম করেই তো বিয়ে করলো দুইজন।সিয়ামাা এবার নিজের সিট ছেড়ে অপর সিটে গিয়ে বসলো।মানে রিহানের পাশে।কাঁধে হাত রেখে বললো,

“কী ব্যাটা, মন খারাপ? ”

বলে হাসার চেষ্টা করলো রিহান।বললো,
“আরেহ নাহ!”
“অভিনয় করছিস?”
“দূর কিসের অভিনয়!”
“তোর চোখমুখ তাই বলছে।”

“তেমন কিছু না।শুনলি ই তো কতটা এক্সিডেন্টলি বিয়েটা হয়েছে।”
“হ্যাঁ,হয়েছে।ভালোবেসেই তো বিয়ে করেছিস।”
“কিন্তু নিতুর সাথে আমার অনেক দূরত্বতা।ওকে যেহেতু ভালোবাসি খুব ওর পরিবারের সাথে কথা বলে ওকে বিয়ে করা উচিত ছিল।কিন্তু সেভাবেও যে করবো সেই সুযোগটাও ছিল না ওই আবরাহামের জন্যে।”
“বুঝতে পারছি সব।তবে দোষটা তোরও দেওয়া যায়না,বা নিতুর,বা নিতুর পরিবারের!”

রিহান ভ্রু যুগল কুঁচকে ফেলে।বলে,
“কি বলতে চাচ্ছিস?”
“যা হবার তাতো হয়েই গেলো তাই না?এখন আগের সব টেনে নিজেদের দাম্পত্য জীবনে কেনো ঝামেলা করছিস।এই যে নিজের দোষ দিচ্ছিস,সেই অনুশোচনায় নিতুর সাথে ঘেঁষছিস না।একদিন এই সময়টাকে খুব ফিল করবি।খমোখা ওসবকিছুর রেষ ধরে ধরে নিজের ভেতরের চাপা চাওয়া,ইচ্ছাকে কেনো দূরে সরিয়ে দিচ্ছিস।শুন?যখন যেই পরিস্থিতিতে থাকিস তা উপভোগ করার চেষ্টা করিস।তাহলে বুঝতে পারবি জীবন কতটা সুন্দর।মানুষের জীবনে বাঁধা-বিপত্তি থাকে।দুর্বার ঝামেলা থাকে।তা আবার একদিন ঠিকও হয়ে যায়।তাই বলি কি।ভাবীর মনমরা,চুপচাও এসব হওয়াটা স্বাভাবিক।তুই তোর ভালোবাসা দিয়ে তাকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা কর।তুই ই পারবি তার মনের সব বিষন্নতা মুহুর্তে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে সুন্দরভাবে দুইজন জীবন কাটাতে।তারপর আরো অনেক বুঝায় সিয়াম।

—————————————-
রাতের খাবার শেষ হলে নিতু রুমে চলে যায়।তারপর রিহানও।রিহানের চোখমুখের দৃষ্টি ভালো না।সিয়াম যাওয়ার পর থেকেই মনটা ফুর্তিতে ভরা।তাট মনে কি যেনো ঘুরছে নিতুকে নিয়ে সে নিজেই ভালো জানে।নিতু হাতমুখ ধোঁয়ার জন্যে বাথরুমে ঢুকে।দরজা অবশ্যি লক করে নি।শুধুা হাতমুখই তো ধোঁবে আর তো কিছু না তাই আর দরজা লক করার প্রয়োজন বোধ করে নি।রিহান কি করে?তার মিনিট একেক পরই দরজা আলতো ঠেলে সেও বাথরুমে ঢুকে পড়ে।নিতু চমকে উঠে।রিহান হেসে দিয়ে দরজা লক করে ফেলে।নিতুর চমকানো ভাব আরো বেড়ে যায়।রিহান আবারো একফালি হাসে।হেসে এবার আরেকটা কান্ডা ঘটায়।তা হলো ঝর্ণার কল ছেড়ে দেয়।মুহূর্তে নিতুর শরীরের কিছু অংশ ভিঁজে যায়।নিতু এবার চেঁচিয়ে বলে উঠে,

“কি করতেছেন আপনি এসব!”

রিহান হাসি মাখা মুখেই উত্তর করে,

“গোসল করবো।”
“তাহলে আমাকে ভেঁজচ্ছেন কেনো?”
“তুমিও গোসল করবে।”
“পাগল আপনি?এতরাতে আমি গোসল করবো?এমনিতে যেটুকু ভিঁজে গেছি তাতেই অবস্থা খারাপ। ঠান্ডা লাগলে আপনার খবর আছে। ”

রিহান এবার নিতুর ভেঁজ অংশটার দিকে তাকায়।বুকের অংশটা ভিঁজে ছপছপে।ভেতরে ব্লাউজ পড়েছে তাও দেখা যাচ্ছে।নিতুর এবার কেনজানি লজ্জা লেগে যায় খুব।সে নিজেকে আড়াল করতে বুকের উপর হাত রেখপ বলে,

“জায়গা দিন আমাকে।আমি বেরুবো।”

বলে রিহানকে পাঁশ কাটতে চায়।রিহান দরজা বরাবর দাড়িয়েই থাকে।সরে না।নিতুর রাগ উঠে যায়।চোখ বড় করে রিহানের দিকে তাকায়।
“সমস্যা কি আপনার?”

রিহান কিছু বলে না।আস্ত পায়ে নিতুর দিকে এগোয়।নিতু আবারো চেঁচিয়ে,

“এএএ আসবেন না!”

বলেও লাভ নেই।রিহান নিতুর খুবই কাছাকাছি। নিতুর বুকের ভেতরটা ধকধক করছে.মুখে উষ্ণ শ্বাস!রিহানেরও তাই।রিহান বলে,
“ভালোবাসি নিতু!”

নিতুর ঠোঁট কেঁপে উঠে।রিহান সেই ঠোঁটে চম্বন বসিয়ে দেয়।এই প্রথম রিহানের থেকে নিতুর পাওয়া প্রথম স্পর্শ!নিতু রিহানকে সরিয়ে দিতে চেয়েও পারে নি।চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে চোখবুঁজে।রিহান নিতুর গালে,গলায় অনবরত কিস করে যাচ্ছে।ঝর্ণার কল তখন বন্ধ করা হয়নি।নিতু দূরে সরে দাঁড়িয়েছিল।কিন্তু এখন আর দূরে নয়।ঝর্ণার পানির নিচেই দুইজন পানির সাথে মিশে গিয়ে একাকার হয়ে যাচ্ছে।পূর্ণতা পাচ্ছে তাদের এতদিনের চেপে রাখা গভীর ভালোবাসার!

চলবে…
(রাতে আরেকটা পর্ব দিয়ে দিব।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here