ভালোবাসার চেয়েও বেশি💞পর্ব-১৪

0
6815

#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি 💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-১৪
( ডাইরি স্পেশাল)

★রাত ১০ টা বাজে, আদিত্য সেই কখন থেকে নূরের ডাইরিটা হাতে নিয়ে বসে আছে বেডের ওপর। পড়বে কি পড়বেনা বুঝতে পারছে না।আদিত্য ভালো করেই জানে, এভাবে কারোর পার্সোনাল ডাইরি পড়াটা ঠিক না। নূর জানতে পাড়লে যদি রাগ করে? কিন্তু নূরের ব্যাপারে জানতে হলে ওকে এটা পড়তেই হবে। আদিত্য আর না ভেবে পড়ার সিদ্ধান্ত নেয়। পরে যা হয় দেখা যাবে।

আদিত্য ডাইরিটা খুলতেই দেখতে পেল। সুন্দর করে লেখা “নূরের আত্মকথা”। আদিত্য লেখাটার ওপর আলতো করে হাত বোলালো। তারপর পৃষ্ঠা উল্টিয়ে আসল লেখার পৃষ্ঠায় গেল।

আদিত্য প্রথম পৃষ্ঠা খুলতেই সর্বোপ্রথম যে শব্দটা দেখতে পেল তা হলো ” অপয়া”। আদিত্য একটা ধাক্কা খেল।ভ্রু কুঁচকে তাকায়ে পড়া শুরু করলো।

#প্রথম পৃষ্ঠা
অপয়া।
হ্যা আমিই অপয়া। সবাই হয়তো ভাববে এটা আবার কেমন নাম?নাম আমার অবশ্য একটা আছে। যেটা আমার দাদি রেখেছিলো আমার জন্য। মেহরুমা নূর।তবে সেটা শুধু নামমাত্রই রাখা। সেই ছোট্ট বেলা থেকে এই অপয়া কথাটা এতোবার শুনেছি যে নিজের নামটাও এতোবার শুনিনি।

ছোট বেলায় যখন সবাই আমাকে অপয়া বলতো।তখন আমি বুঝতে পারতাম না।ভাবতাম এটা হয়তো আমার কোনো নাম। যেমন সবার বাবা মা তাদের ছেলেমেয়েদের আদর করে সোনা যাদু বলে ডাকে।হয়তো আমাকেও সবাই আদর করে ওই নামে ডাকে।
কিন্তু ধীরে ধীরে যখন একটু বড়ো হতে লাগলাম তখন বুঝলাম এটা কোনো আদরের ডাক না। কারণ সবার বাবা মা যখন তাদের ছেলেমেয়েদের সোনা যাদু বলে ডাকতো। তখন তারা তাদের ছেলেমেয়েদের অনেক আদর সোহাগও করতো। কিন্তু আমার সাথে এমন কিছুই হতোনা। উল্টো আমাকে সবসময় বকাঝকা আর মার দিতো
যখন বড়ো হলাম তখন বুঝলাম। ওটা কোনো নাম না বরং আমার জীবনের চরম সত্য।আর আমার জীবনের অভিশাপ। যেটা নিয়ে হয়তো আমাকে সারাজীবন বাঁচতে হবে।

#অন্য পৃষ্ঠা
সবাই বলে আমার জন্য নাকি আমার মা মারা গেছে। আমি আমার মাকে খেয়েছি। আমার দাদিকে খেয়েছি। এমনকি আমার বাবাও তাই মানে।
সবার কথা শুনতে শুনতে এখন আমার নিজেরো মনে হয়। আমি আসলেই একটা অপয়া।আমার জন্য সবাই চলে যায়। মা দাদি আমাকে রেখে চলে গেছে। আর বাবা থেকেও নেই। সেও আমাকে দেখতে পারে না।
ছোট মার অত্যাচারেও এতটা কষ্ট লাগেনা। যতটা কষ্ট বাবার অবহেলায় লাগে।

মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছে হয়। বাবা যদি একটু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতো।তাহলে হয়তো আমার সব কষ্ট দূর হয়েও যেতো।

#অন্য পৃষ্ঠা
আমার বান্ধবী তানি বলে। তুই কেন ওই বাড়িতে পরে থাকিস? আর ওদের এতো অত্যাচার সহ্য করিস?।ছেড়ে দে ওই বাড়ি। নিজে ইনডিপেনডেন্ট হয়ে নিজের মতো চল।
কিন্তু ওকে কিভাবে বোঝাই। বলাটা যতো সহজ বাস্তবতাটা ততই কঠিন।ইনডিপেনডেন্ট বললেই ইনডিপেনডেন্ট হওয়া যায় না। বিশেষ করে একটা মেয়ের জন্য। আমাদের সমাজে ছেলেরা যা ইচ্ছে তাই করতে পারে। কিন্তু মেয়েরা তা পারে না। এমন না যে মেয়েরা পরিশ্রম করতে পারে না।তারাও ছেলেদের সমান পরিশ্রম করতে পারে।
কিন্তু একটা মেয়ে যখন ঘরের বাইরে পা রাখে। তখন চারিদিকে হায়েনার দল তাকে গ্রাস করে তার সর্বনাশ করার জন্য ওঁৎ পেতে থাকে।

তাই একটা মেয়ে ইনডিপেনডেন্ট হতে গেলেও, তার কারোর না কারোর সাপোর্ট দরকার হয়।সে যেই হোক না কেন।

আমি জানি তানি আমাকে ওর বাড়িতে থাকতে কখনো মানা করবে না। কিন্তু সেটাওতো একটা আশ্রিতার মতোই হবে। আর তাছাড়া কতোদিনই বা তানির বাবা মা অন্য একটা মেয়েকে তাদের বাড়িতে রাখবেন। একসময় না একসময় তারাও বিরক্ত হয়ে যাবেন।
তাই যেমনই হোক নিজের বাড়িই থাকা ভালো।
আর সবচেয়ে বড়ো কথা। তারা আমাকে আপন না ভাবলেও। আমিতো তাদের আপন ভাবি।যতো যাইহোক দিনশেষে ওটাইতো আমার পরিবার ।

#অন্য পৃষ্ঠা
জানো মা? মাঝে মধ্যে তোমার কথা ভীষণ মনে পরে। ইচ্ছে করে তোমার কাছে চলে যাই।তুমি খুব পচা মা।আমাকে একা রেখে কেন চলে গেলে?আমার এখানে ভালো লাগে না মা।এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে আমার যে কেউ নেই।কেউ আমাকে ভালোবাসে না।কেউ আমাকে দেখতে পারে না। জানো মা আমার না অন্ধকারে অনেক ভয় লাগে। রাতের বেলা যখন ঝড়ের বাজ পরে,তখনও ভয়ে কুকরে যাই।তবুও কেউ আসেনা আমার কাছে ভয় কমাতে।নাখেয়ে থাকলেও কেউ খেতে বলে না।আমি থাকতে চাই না এখানে। আমাকে তোমার কাছে নিয়ে যাও মা।

এটুকু পড়েই আদিত্য ঠাসস্ করে ডাইরি বন্ধ করে ফেললো। আর পড়তে পারে না ও।বুকের ভেতর কেমন চিনচিন ব্যাথা করছে। চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে।এমন একটা নিস্পাপ মাছুম মেয়েটাকে এতো কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। ভাবতেই আদিত্যর দম বন্ধ হয়ে আসছে। চোখ দুটো ভীষণ জ্বালাপোড়া করছে।হয়তো অশ্রু ঝরাতে চাইছে।কিন্তু ওতো পুরুষ মানুষ। আর পুরুষদের যে কাঁদতে নেই।
আদিত্য আর বসে থাকতে পারে না। উঠে বেলকনিতে যায়।এখন ওর একটু ফ্রেশ হাওয়ার দরকার। নাহলে ওর দম বন্ধ হয়ে যাবে।
আদিত্য বেলকনির গ্রিলে মাথা ঠেকিয়ে দু’হাতে গ্রিল ধরে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রইলো। বাইরের দমকা বাতাসে নিজেকে একটু শান্ত করার চেষ্টা করছে ।

কিছুক্ষণ পর আদিত্য নিজেকে একটু শান্ত করে ওয়াসরুমে যেয়ে চোখে মুখে পানি ছিটালো।তারপর ফ্রেস হয়ে বেড়িয়ে এলো।
মাথাটা কেমন ব্যাথা করছে। তাই আদিত্য কিচেনে গিয়ে একটা ব্লাক কফি বানাল।তারপর কফি নিয়ে আবার বেডরুমে এসে বেডের ওপর বসলো। কফিটা খেতে খেতে আবারও ডাইরি পড়তে শুরু করলো।

#অন্য পৃষ্ঠা
ছোট বেলায় দাদি আমাকে রুপকথার কাহিনী শোনাতো। যেখানে আমার মতো একটি দুঃখি মেয়ে থাকতো।তারপর একটা সুন্দর রাজকুমার এসে তাকে রানী বানিয়ে নিয়ে যেতো তার রাজ্যে।
আমিও মনযোগ দিয়ে শুনতাম।
দাদি বলতেন আমার জন্যেও নাকি কোনো এক রাজকুমার আছে। যে আমাকে নিয়ে যাবে তার রাজ্যে।
আমিও শুনে খুশী হয়ে যেতাম। দাদির কোলে মাথা দিয়ে স্বপ্ন দেখতাম। একটা সুন্দর রাজকুমার সাদা ঘোড়ায় চড়ে এসে আমাকে নিয়ে যাচ্ছে তার রাজ্যে। আমাকে তার রানী বানিয়ে।

কিন্তু বড়ো হতে হতে আমার এই ভ্রমও চলে গেলো। আমি বুঝে গেলাম এগুলো সব শুধু কল্পকাহিনিতেই হয়। বাস্তবে কোনো রাজকুমার থাকে না। নিজের ভালো মন্দ নিজেকেই দেখতে হয়।

তানিও বলে আমার জীবনে নাকি কেউ আসবে। যে আমার সব কষ্ট দূর করে দিবে। আমি ওর কথায় হেসে দেই।মেয়েটা সত্যিই একটু ফিল্মি।কারণ আমি জানি এসব কিছুই হবার নয়।শুধু শুধু এসব স্বপ্ন দেখে নিজেকে মিথ্যে আশা দিতে চাই না।

কিন্তু ওইযে লোকে বলে না? মন, মন যে বড়ো বেহায়া জিনিস। যতোই বুঝাও না কেন। সে তার মতোই চলে। আর তাইতো,এতকিছুর পরেও এখনো মনের কোনে কোথাও না কোথাও ক্ষীণ একটা আশা বেধে রাখে।যে হয়তো কেউ না কেউ সত্যিই আসবে একদিন। যে আমার জীবনটাকে নতুন রঙে রাঙিয়ে তুলবে। তার কাছে হয়তো রাজাদের মতো বড়ো বড়ো প্রাসাদ না থাকুক।তার মনের ঘরে যেন আমার জন্য অসীম যায়গা থাকে।তার কাছে বড়ো বড়ো গাড়ি না থাকুক। শুধু পূর্ণিমা রাতে নৌকার ওপর বসে তার কাঁধে মাথা রেখে যেন চাঁদ দেখতে পারি।

দিনশেষে আবারও মনকে ঝাড়ি দিয়ে বুঝিয়ে দেয় যে,এসব কিছুই হবার নয়।শুধু শুধু স্বপ্ন দেখে লাভ নেই।

#অন্য পৃষ্ঠা
(এখানে নূরের সাথে আদিত্যর দেখা হওয়া থেকে শুরু করে সবই লেখা আছে। এসব দেখে আদিত্যের মুচকি হাসলো।)

#অন্য পৃষ্ঠা
ওই পঁচা লোকটা আবার এসেছে। কেন আসে ওই জঘন্য লোকটা বারবার। ওকে দেখলেই আমার ঘেন্না লাগে।আজ আবার এসেছে। শেষমেশ কি আমার শেষ সম্বলটুকুও রক্ষা করতে পারবো না? (তারপর জনি নূরের সাথে কি কি করেছে সবই লিখেছে এখানে) ।

এসব পড়ে আদিত্যের মাথায় আগুন ধরে গেল। রাগে সারা শরীর ফেটে যাচ্ছে। কপালের রগ ফুলে উঠেছে। চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। চোখ দুটো লালঅগ্নি হয়ে উঠেছে। অতিরিক্ত রাগের কারণে হাতে থাকা কফির কাপটা শক্ত করে চেপে ধরে। যার জন্য কাপটা ভেঙে যায়। কাপের কিছু টুকরো গুলো হাতের ভেতর ঢুকে হাত দিয়ে রক্ত বের হয়।
কিন্তু সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নাই আদিত্যের। ওর তো এখন রাগে সবকিছু ভেসে গুড়িয়ে দিতে ইচ্ছে করছে।

আদিত্য বেড থেকে উঠে সারা ঘরে পায়চারী করতে থাকে। দুই হাতের আঙুল দিয়ে চুল টেনে ধরে আছে। কিছুতেই নিজের রাগকে কন্ট্রোল করতে পারছে না। বারবার নূরের সাথে হওয়া ঘটনার কথা মনে করতেই সারা রাগে কেপে উঠছে।

আদিত্য সহ্য করতে না পেরে খাটের পাশে ছোট টেবিলের উপর থেকে ফুলদানিটা হাতে নিয়ে ফ্লোরে টাসস্ আছাড় দিয়ে ভেঙে ফেললো। তারপর চিৎকার করে বলতে লাগলো।
….হাউ ডেয়ার ইউ। ইউ ব্লাডি বিচ।হাউ ডেয়ার ইউ টু টাচ হার।ইউ ব্লাডি বাস্টার্ড। আই উইল কিল ইউ। আই উইল কিল দ্যাট ব্লাডি বিচ।

একটুপর আদিত্য ফোনটা বের করে তাসিরকে ফোন দেয়। তাসির ফোন রিসিভ করে কানে ধরতেই।আদিত্য বলে ওঠে।
…আই ওয়ান্ট টু কিল হিম তাসির।আই ওয়ান্ট টু কিল দ্যাট বাস্টার্ড।

হঠাৎ আদিত্যের এমন কথা শুনে তাসির হকচকিয়ে ওঠে। আদিত্য যে চরম পর্যায়ে রেগে আছে তা বুঝতে পারছে তাসির।তাসির আদিত্যকে শান্ত করার জন্য বললো।
….ওকে ওকে রিলাক্স। শান্ত হ আগে। টেক এ ডিপ ব্রেথ।তারপর বল কি হয়েছে? আর কাকে মারার কথা বলছিস?

আদিত্য একটু শান্ত হয়ে। তাসিরকে সবটা খুলে বলে। সবটা শুনে তাসির হতভম্ব হয়ে যায়।এতটুকু মেয়ের জীবনে এতো কষ্ট। ভাবতেই তাসিরের খুব খরাপ লাগে। শেষের কথা শুনে ওরও খুব রাগ লাগে। তারপর আদিত্যকে বলে।
…আচ্ছা ঠিক আছে বুঝতে পেরেছি । যা করার কাল করিস।আমরা আছি তোর সাথে। এখন একটু শান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পর।কাল আমারা এটা নিয়ে কথা বলবো। ওঁকে বায়।

তাসিরের সাথে কথা বলার পর আদিত্য কাওকে ফোন করে বলে।
….শোন, একজনকে খুঁজে বের করতে হবে। খুঁজে বের করে আমাদের গোডাউনে নিয়ে আসবে।আর হ্যা খবরদার ওকে কেউ হাত লাগাবে না।যা করার আমি করবো। মনে থাকে যেন।

—————————————-

নূর বই খুলে একটু পড়তে বসেছে। ওষুধ খাওয়ায় জ্বরটা এখন আর নেই। গত দুদিন হলো কোনো পড়াশোনা হয় না। তাই আজ একটু পড়তে বসেছে। কিছুক্ষন পড়ালেখা করার পর,নূর রোজকার মতো ডাইরি লেখার জন্য ব্যাগে হাতে দেয় ডাইরি বের করার জন্য।
ব্যাগের ভেতর ডাইরি না পেয়ে নূরের কপাল কুঁচকে আসে। ব্যাগের ভেতর থেকে সব বের করে ভালো করে খুজতে থাকে।নূর চিন্তার পরে যায়। মনে মনে ভাবে ব্যাগেই তো রেখেছিলাম কোথায় গেল? সারা ঘড়ে পাগলের মতো ডাইরিটা খুজতে থাকে নূর। কোথাও না পেয়ে নূর নিচে বসে কান্না শুরু করে দেয়। দাদির দেওয়া শেষ স্মৃতিটাও ধরে রাখতে পাড়লাম না। লোকে ঠিকই বলে তুই আসলেই একটা অপয়া। কোনো কিছুই ধরে রাখতে পারিস না।সবকিছু হারিয়ে ফেলিস।নূর কান্না করতে করতে নিজেকেই বকতে থাকে।
————————————

গত এক ঘন্টা যাবত নিজের জিমিং রুমে বক্সিং ব্যাগের সাথে বক্সিং করে যাচ্ছে আদিত্য।এই মূহুর্তে নিজেকে শান্ত করার এটাই একমাত্র পদ্ধতি ওর কাছে। যতো রাগ এই বক্সিং ব্যাগের ওপর ঝাড়ছে। মনে হচ্ছে বক্সিং ব্যাগকে নয় ওই জনিকে মারছে।

কিছুক্ষণ পর একটু ক্লান্ত হয়ে বক্সিং করা থেমে যায়। বক্সিং ব্যাগকে দুই হাতে ধরে তার সাথে মাথা ঠেকিয়ে হাঁপাতে থাকে।

নিজেকে একটু শান্ত করে মাথা তুলে দাঁড়ায়। তারপর হাতের গ্লোবস গুলো খুলে রেখে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।
নিজের রুমে এসে সোজা ওয়াসরুমে ঠুকে যায়।শাওয়ার ছেড়ে দিয়ে টিশার্ট টা খুলে শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে পরে। দুহাত দেয়ালে ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকে। শাওয়ারের পানি সব মাথা আর পিঠ দিয়ে চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে।
আদিত্য চোখ বন্ধ করে শুধু নূরের কথা ভাবছে। ওই নিস্পাপ মায়াবী মুখটার পেছনে কতো কষ্ট লুকিয়ে আছে। কতো কিছু সহ্য করতে হয়েছে ওকে।এই জন্যই মেয়েটা এতো মনমরা হয়ে থাকে

আদিত্য মনে মনে প্রমিজ করছে। যে করেই হোক নূরকে আর কোনো কষ্ট ভোগ করতে দিবে না।তার জন্য যা করতে হয় সে করবে। ওই নিস্পাপ মেয়েটাকে আর কোনো কষ্ট পেতে দিবে না।

———————————

ক্যাম্পাসে মন মরা হয়ে বসে আছে নূর। ডাইরিটার জন্য ওর অনেক খারাপ লাগছে। দাদি ওকে সখ করে কিনে দিয়েছিল।আর বলেছিল, নিজের মনের সবকথা এই ডাইরিতে লিখবি।
আমিও দাদির কথা মতো বড়ো হওয়ার পর থেকে আমার মনের সবকথা ওই ডাইরিতেই লিখতাম। ধীরে ধীরে ডাইরিটা আমার অনেক প্রিয় বন্ধু হয়ে গিয়েছিল। আর শেষ পর্যন্ত কিনা ওটাও আমাকে ছেড়ে চলে গেল।

নূরের ভাবনার মাঝেই তানি এসে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো।
…জানুউউউ,,, তোকে খুব মিস করেছি এই দুই দিন। কেমন আছিস তুই?

তারপর নূরকে ছেড়ে সামনাসামনি হয়ে বসলো তানি।নূরের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বললো।
…কিরে কি হয়েছে তোর? মুখটা এমন পেচার মতো বানিয়ে রেখেছিস কেন?

নূর তানির দিকে তাকিয়ে কাঁদো কাঁদো সুরে বললো।
….জানিস? আমার ডাইরিটা না হারিয়ে গিয়েছে। কাল ব্যাগে করে ভার্সিটিতে নিয়ে এসেছিলাম।বাসায় যেয়ে দেখি নেই। কতো খুঁজলাম কোথাও পেলাম না।

তানি বললো।
…নেই মানে কোথায় যাবে? ব্যাগ থেকে কি আর একা একাই হাওয়া হয়ে যাবে?

নূর মুখ ছোট করে বললো।
…জানিনা।

…আরে চিন্তা করিস না। আমার মনে হয় কোথাও পড়ে গেছে। পেয়ে যাবি নিশ্চয়। আচ্ছা তুই মনে করতো কাল কোথায় কোথায় গিয়েছিলি?হয়তো সেইসব জায়গায় কোথাও পড়েছে। আমরা খুজলেই পেয়ে যাব।

তানির কথায় নূরের হুঁশ আসে। ওর কথামতো নূর মনে করতে থাকে কাল কোথায় কোথায় গিয়েছিল।নূর একটা একটা সব মনে করে আর সেখানে সেখানে ওরা দুজন খুজতে শুরু করে।

প্রথমে ক্লাসে , তারপর কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে খোঁজে। কিন্তু কোথাও পায় না।তানি নূরকে জিজ্ঞেস করে।
…আর কোথাও যাস নি?

তখন নূরের মনে পরে। কালতো ওকে হসপিটালে নিয়ে গিয়েছিল ওখানে পরে নিতো? তানি বলে।
…কিরে কি ভাবছিস? গিয়েছিলি আর কোথাও?

নূর মাথা ঝাকিয়ে বললো
.. হ্যা।

তানি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো।
…কোথায়?

…হসপিটালে।

তানি চমকে যেয়ে বলে উঠলো।
….কিহহ?কেন? কি হয়েছে তোর? অসুস্থ হয়েছিলি তুই?

…আরে আরে থাম বলছি। তারপর নূর তানিকে কালকের সব ঘটনা বলে। (জনির ঘটনাটা বলে না)।

…হুম বুঝতে পেরেছি।আমার মনে হয় ডাইরি আদিত্য ভাইয়ার গাড়ির ভেতরেই কোথাও পড়েছে।কারণ হসপিটালের ভেতরে শুধু তোকে নিয়ে গেছে। ব্যাগতো গাড়ির ভেতরেই ছিল। তাই হয়তো ডাইরি গাড়ির ভেতরেই কোথাও পড়েছে বুঝতে পেরেছিস? তুই চিন্তা করিস না। ক্লাস শেষে আদিত্য ভাইয়ার কাছে জিজ্ঞেস করিস।যদি উনি পেয়ে থাকে তাহলে নিশ্চয় তোকে দিয়ে দিবে।

নূর খুশী হয়ে গেল। যাক তাওতো একটা আশা আছে। হয়তো ডাইরিটা পাওয়া যেতে পারে ।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here