ভালোবাসার চেয়েও বেশি💞পর্ব-২৩

0
7034

#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি💞💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-২৩

★নূর বাসায় ঢুকে দেখলো ওর সৎ মা রুবিনা বেগম আর রবি কোথাও যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে বসে আছে। সামনে কাপড় চোপড় ভরা দুটো লাগেজ দেখা যাচ্ছে। নূরকে আসতে দেখে রুবিনা বেগম বলে উঠলো।
…..তুই এসে গেসিছ? তাহলে শোন আমি রবিকে নিয়ে আমার বাবার বাড়ি যাচ্ছি। জনি হাসপাতালে ভর্তি। আর বাবাও অনেক অসুস্থ। তাই কিছুদিন ওখানেই থাকবো।

নূর মনে মনে ভাবলো ওই বদমাইশটার আবার কি হলো। যাই হোক ভালোই হয়েছে। সারাজীবন যেন হাসপাতালেই থাকে।
নূরের ভাবনার মাঝেই রুবিনা বেগম আবার বলে উঠলো।
…..রিপা ওর ফ্রেন্ডসদের সাথে টুরে গেছে। তাই বাসায় শুধু তুই থাকবি। বাসার ঠিক ঠাক খেয়াল রাখবি বুজেছিস? আমি নেই দেখে কোনো কাজের ফাঁকি দিবি না কিন্তু বলে দিলাম।

নূর মাথা ঝাকিয়ে বললো।
….জ্বি ছোট মা আমি সবকাজ ঠিক ঠাক করে নিবো। তুমি চিন্তা করোনা।

রুবিনা বেগম নিজের পার্সটা আনার জন্য রুমে গেল। রবি এই ফাঁকে নূরকে বললো।
….জানো আপু? শুনেছি ওই জনিকে কারা যেন সেই মারা মেরেছে। একদম হাত পা ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে। কতদিন হলো হাসপাতালে ভর্তি আছে। আমারতো সেই খুশি লাগছে। ওই জনিকে আমার একদম পছন্দ না।

রবির কথা শুনে নূরেরও মনে মনে অনেক খুশী লাগছে।
একটু পরে রুবিনা বেগম রবিকে নিয়ে বেড়িয়ে গেলো।

——————————–

আদিত্যের বাবার রুমের দরজায় এসে নক করলো আদিত্য। বিকালে ওর বাবা ফোন করে বাসায় আসতে বলেছে। কোনো দরকারি কথা আছে নাকি। তাই অফিস শেষ করে আদিত্য চলে এসেছে।
আদিত্যের বাবা ভেতর থেকে বললো।
….দরজা খোলাই আছে ভেতরে এসো।

আদিত্য ভেতরে ঢুকে বেডের ওপর ওর বাবার পাশে যেয়ে বসলো। তারপর ওর বাবার দিকে তাকিয়ে বললো।
… কেমন আছো বাবা?তোমার শরীর কেমন এখন?

আদিত্যের বাবা মুচকি হেসে বললো।
…আমি ভালো আছি।

….তা কি জেনো বলবে বললে?

আদিত্যের বাবা একটু গম্ভীর হয়ে বললো।
….হ্যা একটা কথা বলার ছিল।

….তো বলো কি বলবে?

আদিত্যের বাবা আদিত্যকে এ্যানির বাবার বলা সব কথা খুলে বলে। তারপর আদিত্যকে জিজ্ঞেস করে।
…তোমার কি মতামত এ ব্যাপারে?

সব শুনে আদিত্যের চরম রাগ হতে লাগলো এ্যানির ওপর। মেয়েটার কোনো লজ্জা নেই নাকি? এতকিছুর পরেও আবার বাবার কাছে বিয়ের কথা বলেছে।
আদিত্য ওর বাবার হাত ধরে নরম স্বরে বললো।
….তুমি আমার বাবা। তুমি যেটা বলবে আমি চোখ বুজে সেটাই করবো। তবে তার আগে তোমাকে একটা কথা জানাতে চাই বাবা। সেটা শোনার পর তুমি যে ফয়সালা করবে আমি সেটাতেই রাজি।

আদিত্যের বাবা বললো।
…..কি কথা? বলো?

……বাবা আমি নূরকে ভালোবাসি। আর ওকে বিয়ে করতে চাই।

আদিত্যের বাবা একটু গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
….আমি যদি নূরকে মেনে না নেই?

আদিত্য অনেক ভয় পেয়ে গেল ওর বাবার কথায়। সত্যিই যদি বাবা রাজি না হয় তাহলে কি করবে ও? নূরকে ছাড়া কিভাবে বাঁচবে ও। এসব ভেবে আদিত্য করুণ চোখে ওর বাবার দিকে তাকালো।

আদিত্যর বাবা হঠাৎ হো হো করে হেসে উঠলো।
আদিত্য ভ্রু কুঁচকে তাকালো ওর বাবার দিকে।
হাসি থামিয়ে আদিত্যের বাবা বললো।
….তুমি কি ভেবেছো আমি জানি না? আমি তোমার বাবা, তোমার মুখ দেখেই সব বলে দিতে পারি। আমিতো সেদিনই সব বুঝে গিয়েছিলাম। শুধু তোমার মুখ থেকে শুনতে চাচ্ছিলাম।

আদিত্য অবাক হয়ে তাকিয়ে বললো।
….তারমানে নূরকে তুমি মেনে নিয়েছো?

….অবশ্যই। আমারতো মেয়েটাকে খুব পছন্দ হয়েছে। মেয়েট সত্যিই অনেক ভালো।

আদিত্য খুশি হয়ে ওর বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলে।
….আমি জানতাম বাবা তুমি কখনও আমার কথা ফেলবে না। আই লাভ ইউ বাবা।

পিছন থেকে সানা এসে দুই গালে হাত রেখে খুশি আর উত্তেজিত হয়ে বললো।
…সত্যিই????? ওয়াও ভাইয়া আই এ্যাম সো হ্যাপি। নূর আপু আমার ভাবি হবে? আমার যে কি খুশি লাগছে। বলতে বলতে আদিত্যের পাশে বসে আদিত্যকে একপাশ থেকে জড়িয়ে ধরলো। তারপর আবার বললো।
…..আমিতো এখন থেকেই ওকে ভাবি ডাকবো।ওয়াও কত্ত মজা হবে।

আদিত্য তড়িৎ গতিতে বলে উঠলো।
….এই না না খবরদার! এখুনি ওকে ভাবি বলবি না। কারণ আমি এখনো ওকে কিছু জানায়নি। তাই এখুনি এসব বলা যাবে না।

সানা ঘাড় ঝাকিয়ে বললো।
…ঠিক আছে ভাইয়া। তুমি যেভাবে বলবে সেভাবেই হবে।

আদিত্যের বাবা আদিত্যকে বললো।
….শোন তোমাকে আরেকটা কথা বলার ছিল।

…জ্বি বাবা বলো?

…..আসলে গ্রামে আমাদের জমিজমা নিয়ে একটা ভেজাল হয়েছে। তাই আমাকে একটু গ্রামে যেতে হবে। তোর চাচুকে পাঠাতাম, কিন্তু ও এসব ভালো বুঝবে না তাই আমাকেই যেতে হবে। হয়তো কিছুদিন থাকাও লাগতে পারে।

….কিন্তু বাবা তোমার শরীর মাত্রই ঠিক হয়েছে। গ্রামে গিয়ে যদি আবার অসুস্থ হয়ে পরো?

….আরে নাহ কিছু হবে না। তুই চিন্তা করিস না। ওখানে দেখাশুনা করার জন্য লোক আছে।

…..ঠিক আছে বাবা।তুমি যেটা ভালো মনে করো। কবে যেতে চাচ্ছো?
…..পরশু যাবো।

….ঠিক আছে।
————————————–

সন্ধ্যা ৬ টা
নূর একটু বই নিয়ে বসেছে। হঠাৎ ওর ফোনটা বেজে উঠলো। নূর ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো তানি কল করেছে। নূর ফোন রিসিভ করে বললো।
…হ্যালো। হ্যাঁ বল।

তানি করুন সুরে বললো।
….ইয়ার নূর তুই কি সত্যিই যাবি না। একটু চেষ্টা করে দেখ না। তুই বললে আমিই নাহয় তোর ছোট মার সাথে কথা বলে দেখতাম। কোনো মিথ্যে বাহানা দেখিয়ে দিতাম।

নূর একটু মুচকি হেসে বললো।
….তার আর দরকার হবে না।

তানি ভ্রু কুঁচকে বললো।
… কেন?

….কারণ ছোট মা বাসায় নেই। সে রবিকে নিয়ে বাবার বাড়ি গেছে। কদিন নাকি ওখানেই থাকবে।

তানি খুশিতে লাফিয়ে উঠে বললো।
….ওয়াট??? ওয়াও এটা তো মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। এখন তো আর কোনো প্রবলেমই নেই। এখন নিশ্চয় তুই যেতে পারবি?

নূর একটু আমতা আমতা করে বললো।
….কি কিন্তু এভাবে যাওয়াটা কি ঠিক হবে?

….আরে ঠিক হবে মানে? আলবাত ঠিক হবে।আমি আর কোনো কথা শুনবো না।তুই যাবি মানে যাবি।এন্ড দ্যাটস্ ফাইনাল। একবার ভাব তোকে দেখলে আদিত্য কতো খুশি হবেন।

নূর একটু লাজুক হেসে আস্তে করে বললো।
….ঠিক আছে।

তানি খুশি হয়ে বললো।
…ইয়েস্। আই লাভ জানু। আমার যা খুশি লাগছে। আমরা সবাই একসাথে অনেক মজা করবো। এখন তাহলে রাখি বায়।

…বায়।

—————————————

রাত ১১-৫৯
আদিত্য মাত্রই বেডে শুয়ে চোখ বন্ধ করেছিল। আজ আর নিজের ফ্লাটে যায়নি। এই বাসায়ই থেকে গেছে। সকালে এখান থেকেই ফার্মহাউসে চলে যাবে। হঠাৎ ওর ফোনটা বেজে উঠলো। আদিত্য বিরক্ত হয়ে ভাবলো এতরাতে আবার কে ফোন দিল।আদিত্য ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো নূর কল করেছে। আদিত্য চমকে গিয়ে এক ঝটকায় উঠে বসলো। এই প্রথম নূর ওকে নিজের থেকে কল করেছে তাও আবার এতরাতে। মেয়েটার কিছু হলো নাতো? কথাটা ভেবেই আদিত্য তাড়াতাড়ি ফোনটা ধরে বললো।
….নূর তুমি ঠিক আছো? কিছু হয়নিতো তোমার?

নূর একটু আমতা আমতা করে বললো।
….আ আআমি ঠিক আছি। কিছু হয়নি।

আদিত্য একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো। তারপর আবার বললো।
….তাহলে এতরাতে ফোন দিলে যে? কিছু বলবে?

….হ হ হ্যাঁ।

…..কি বলবে?বলো?

নূর চোখ বন্ধ করে এক নিঃশ্বাসে বলে উঠলো।
….হ্যাপি বার্থডে।

আদিত্যের কুঁচকে থাকা ভ্রু জোড়া বিস্ময়ে টান টান হয়ে গেলো। চোখ মুখ খুশিতে চকচক করে উঠলো। আদিত্য ঠোঁট কামড়ে হেসে ভাবলো মেয়েটা তাহলে ওকে উইশ করার জন্য ফোন দিয়েছে। আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
…..ধন্যবাদ। তা আমাকে উইশ করার জন্য কি এতরাত পর্যন্ত জেগেছিলে? না মানে, তুমি যেই ঘুম কুমারী। এতক্ষণ ঘুমিয়ে তলিয়ে যাওয়ার কথা।

নূর লজ্জায় আর কোনো কথায় বলতে পারছে না। শুধু আঙুল দিয়ে বিছানার চাদর প্যাঁচাচ্ছে। আসলেই তো সে আদিত্যকে উইশ করার জন্যই এতক্ষণ না ঘুমিয়ে বসে আছে।

আদিত্য বললো।
…কথা না বললে তাহলে ফোন রেখে দেই নাকি?

নূর তড়িঘড়ি করে বললো।
…..শু শুশুনুন। একটা কথা বলার ছিল।

…..হুম বলো?

….আ আ আসলে আমি কাল যেতে পারবো।

আদিত্য অবাক হয়ে বললো।
…সরি??? কি বললে তুমি? আবার বলবে প্লিজ।

…আমি কাল আপনাদের সাথে যেতে পারবো।

আদিত্যর মনে হচ্ছে ও স্বপ্ন দেখছে। ওর বিশ্বাসই হচ্ছে না। নূর সত্যিই কাল সারাদিন ওর সাথে থাকবে? ওর জন্মদিনে ওর পাশে থাকবে? আদিত্য কিছু একটা ভেবে নূরকে বললো।
…তোমার বাসায় কোনো সমস্যা হবে নাতো?

নূর বললো।
….আসলে বাসায় কেউ নেই। তাই কোনো সমস্যা হবে না।

আদিত্য অনেক খুশী হয়ে গেল। মনে মনে ভাবলো তুমি জানোনা তুমি আমাকে কতবড় গিফট দিলে।এটা আমার জন্মদিনের সেরা গিফট হবে নূরপাখি। হঠাৎ আদিত্য ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলো।
….এক মিনিট, তারমানে তুমি এখন বাসায় একা আছো?

নূর আস্তে করে বললো।
…হুম।

….ভয় করছে?

….হুম ভয়তো করছেই।কিন্তু কি করবো কিছু করার নেই।

….ভয় পেয়োনা আমি আছিতো। আমার সাথে কথা বলতে থাকো। দেখবে আর ভয় পাবে না।

নূর মাথা ঝাকিয়ে বললো।
.. ঠিক আছে।

তারপর দুজন টুকটাক করে নানান কথা বলতে লাগলো। কথা বলতে বলতেই নূর একসময় ঘুমিয়ে পরলো।
নূরের কোনো সারা শব্দ না পেয়ে আদিত্য বুঝতে পারলো নূর ঘুমিয়ে পরেছে। আদিত্য মুচকি হেসে আবারও নূরের নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে শুনতে সেও একসময় ঘুমিয়ে পরলো।
————————————-

ভোর ৫-৩০ এর এলার্ম বাজতেই নূর তড়িঘড়ি করে বিছানা থেকে উঠে পড়লো। ওয়াশরুমে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে ফজরের নামাজ আদায় করে নিল।নামাজ শেষ করে নূর রান্নাঘরে গিয়ে ফ্রীজ থেকে দুধের প্যাকেট বের করে পানিতে ভিজিয়ে রেখে দিল দুধ গলার জন্য। ততক্ষণে নূর বাসার সব টুকটাক কাজ সেরে নিলো।
তারপর আবার রান্নাঘরে এসে চুলায় একটা পাতিল বসালো। দুধের প্যাকেট ছিড়ে পাতিলে দুধ ঢাললো। কতক্ষণ পরে দুধ গরম হয়ে আসলে তার ভেতর একমুঠ পোলার চাউল দিয়ে দিল।

সেদিন আদিত্য ওর মায়ের কথা বলার সময় বলেছিল। আদিত্যের মা নাকি প্রতিবার আদিত্যের জন্মদিনে ওর জন্য পায়েস রান্না করে নিজের হাতে খাওয়াতো। সেই কথাটা মনে করে নূরও তাই আদিত্যের জন্য আজ পায়েস রান্না করছে। ওতো আর আদিত্যকে কোনো দামী উপহার দিতে পারবে না। তাই এইটুকুই করার চেষ্টা করছে।

পায়েস রান্না শেষ হলে একটা বক্সে ঢেলে ফ্রীজে রাখলো ঠান্ডা হওয়ার জন্য। তারপর নূর নিজের রুমে গেল ফ্রেশ হওয়ার জন্য। আদিত্য কাল বলেছিল রেডি হয়ে থাকতে। ও এসে নিয়ে যাবে।
———————————

সকাল ৭ টা
আদিত্য ঘুমিয়ে আছে। হঠাৎ বিকট একটা শব্দে আদিত্য ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো। সামনে তাকিয়ে দেখলো আবির আর সানা জোঁকারদের মতো মাথায় কোন ওয়ালা টুপি।হাতে আর গলায় রংবেরঙের জরি আর পালক পেঁচিয়ে রেখেছে। দুজনের হাতে দুটো প্যাঁপু বাঁশি। দুজন বেডের দুইপাশে উঠে প্যাঁপু বাঁশি বাজিয়ে চিল্লিয়ে বলছে।
….হ্যাপি বার্থডে ভাইয়া।

আদিত্য চরম বিরক্ত হয়ে বললো।
…এই থামবি তোরা? কি শুরু করেছিস সকাল সকাল? এভাবে কেউ কাউকে উইশ করে? আরেকটু হলেতো আমার কানের পর্দা ফেটে যেতো। তোরা কি বড়ো হবি না কখনো?

আদিত্যের ধমক শুনে দুজন সুড়সুড় করে বেড থেকে নেমে দাড়ালো। আবির ন্যাকা স্বরে বললো।
….এল্লা কি কস ভাই? আমি আর সানা কাল সারারাত ধরে বসে থেকে। গুগলে সার্চ দিয়ে দিয়ে এমন একটা ট্রেন্ডি স্টাইল বের করলাম উইশ করার। আর তোর পছন্দই হলোনা? এইডা কোনো কথা? আরে তুই কি বুঝবি? এসব লেটেস্ট ট্রেন্ড ব্রো। টপ লেভেলের ব্যাপার স্যাপার। আমার মতো ট্যালেন্টেড লোকেরাই এসব পারে বুঝলি? আর কি বড়ো হবিনা,বড়ো হবিনা লাগিয়ে রেখেছিস? আর কতো বড়ো হবো? এখন কি বড়ো হতে হতে ছাঁদ ভেঙে বেড়িয়ে যাবো নাকি?

আদিত্য তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো।
….হইছে? তোদের ট্যালেন্টের প্রদর্শন করা শেষ? এখন কি গ্রান্ড সেলুট দেবো নাকি?

আবির খুশিতে গদগদ হওয়ার ভাব ধরে বললো।
…না না এসবের আবার কি দরকার? এটাতো আমাদের কর্তব্য। তাই নারে সানা?

সানা মাথা ঝাকিয়ে বললো।
..হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই।

আদিত্য দাঁতে দাঁত চেপে বললো।
…তোরা যাবি এখন এখান থেকে?

….হ্যাঁ হ্যাঁ যাচ্ছি যাচ্ছি। আমরা কি এখানে ঘর বাধতে এসেছি নাকি? চল সানা।বলেই আবির সানার হাত ধরে চলে যেতে নেয়। দরজার কাছে যেয়ে আবার ফিরে এসে বললো।
….বায়দা চিপা গলি আমরা বের হবো কখন? আর গাড়ি কোনটা নিবো?

আদিত্য বিছানা থেকে নামতে নামতে বললো।
…একটু পরেই বের হবো।আর গাড়ি তোদের যেটা ইচ্ছা সেটা নিয়ে যা।আমি গাড়তে যাবো না।

আবির ভ্রু কুঁচকে বললো।
…কেন তুই আবার কিসে যাবি?

…আমি বাইক নিয়ে যাবো।

সানা এক্সাইটেড হয়ে বললো।
…ওয়াও ভাইয়া তাহলে আমিও তোমার সাথে বাইকে যাব।

আদিত্য সানার দিকে তাকিয়ে বললো।
…না তুই গাড়িতে করে যা। আমি নূরকে নিয়ে যাবো।

সানা খুশি হয়ে বললো।
…তার মানে নূর আপুও যাবে? ওয়াও তাহলেতো আরো মজা হবে ইয়েএএ।আমি এখুনি যেয়ে রেডি হচ্ছি। বলেই একছুটে চলে গেলো সানা।

আদিত্য আবিরের দিকে তাকিয়ে দেখলো আবির ওর দিকে দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আদিত্য ভ্রু কুঁচকে বললো।
…ওয়াট??এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?

আবির দুই হাত উপরে তুলে তালি দিতে দিতে তাচ্ছিল্যের সুরে বললো।
….বাহ্ ভাই বাহ্। নিজেকে টম ক্রুজ বানিয়ে আমাদের হিরো আলম বানিয়ে দিলি?

….মানে?

….মানে তুই বাইক নিয়ে স্টাইল মেরে ভাবিকে নিয়ে যাবি। আর আমরা মুরুব্বিদের মতো গাড়ি নিয়ে যাবো? এটা কেমন বিচার?

….তুই এতো ড্রামা কিভাবে করতে পারিস বলতো?

আবির ক্যাবলা হাসি দিয়ে বললো।
….কি করবো ভাই? “সবকো আতি নেহি, মেরি যাতি নেহি”।

…হইছে থাম এখন। আর তোদের ইচ্ছে হলে তোরাও বাইক নিয়ে যা। আমি কি না করেছি নাকি?

আবির খুশি হয়ে বললো।
…দ্যাটস গ্রেট আইডিয়া ব্রো।আমরা তিনজনই বাইক নিয়ে যাবো। হেব্বি হবে। আমি এখুনি তাসিরকে বলছি।

…ঠিক আছে।

—————————–

নূর রেডি হয়ে গলির মাথায় এসে দাঁড়িয়ে আছে আদিত্যের জন্য । আদিত্য ফোন করে জানিয়েসে ও আসছে। তাই নূর ওর জন্য অপেক্ষা করছে।
হঠাৎ একটা বাইক এসে নূরের সামনে ব্রেক করলো । নূর একটু ভয় পেয়ে দুই পা পিছিয়ে গেল।

একটু পরে বাইকে থাকা লোকটা মাথার হেলমেট খুলতেই নূর অবাক হয়ে গেল। এটাতো আদিত্য! নূর হা হয়ে তাকিয়ে রইলো আদিত্যের দিকে। আদিত্য একটা ব্লাক কালারের ডেনিম স্কিন টাইট প্যান্ট পরেছে। গায়ে হোয়াইট টিশার্টের ওপর মেরুন কালারের লেদার জ্যাকেট। চোখে ব্লু সানগ্লাস। সব মিলিয়ে আদিত্যকে কোন হলিউডের হিরোদের মতো লাগছে। আদিত্য হেলমেট খুলে চুলগুলো ঝাকিয়ে ঠিক করছে। নূর যেন চোখ ফেরাতেই পারছে না আজ। মনে মনে ভাবছে উনি এতো সুন্দর কেন? একটু কম হলেওতো পারতো।

আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে দেখে নূর ওর দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। আদিত্য বাঁকা হেসে বললো।
….সব দেখা কি এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই দেখবে?

আদিত্যের কথায় নূর থতমত খেয়ে গেল। লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিল। তারপর আবার আদিত্যের দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বললো।
….আজ হঠাৎ বাইক?

….এমনি ইচ্ছে হলো তাই। এখন সময় নষ্ট না করে উঠে বসো।

নূর একটু অপ্রস্তুত হয়ে বললো।
….কিন্তু আমি আগে কখনো বাইকে উঠিনি।আমার কেমন যেন ভয় করছে।

…ভয় কিসের? আমার উপর ভরসা নেই তোমার?

নূর মাথা ঝাকালো। মানে হ্যাঁ।

আদিত্য মুচকি হেসে বললো ।
….তাহলে এখন উঠে বসো।

নূর দুই পা একদিকে ঝুলিয়ে আদিত্যের পিছনে উঠে বসলো।
আদিত্যর থেকে একটু ফাঁক রেখেই এক হাত দিয়ে বাইকের পিছনের অংশ শক্ত করে ধরে বসল নূর।

আদিত্য বললো।
…ঠিক করে আমাকে ধরে বসো নাহলে পরে যাবে।

নূর জোরপূর্বক একটা হাসি দিয়ে বললো।
…আমি ঠিক আছি। সমস্যা নেই।

আদিত্য আর কিছু না বলে বাইক স্টার্ট দিল ।
বাইক সামনে এগুতেই নূর নিজের ব্যালেন্স রাখতে না পেরে আদিত্যের পিঠের ওপর ঘেঁষে পড়লো। নূরের হাত যেয়ে পরলো আদিত্যের কমোড়ে আর মুখ যেয়ে পড়লো আদিত্যের ঘাড়ে।

আদিত্য একটু জোরে বললো।
…দেখেছো এইজন্যই বলেছিলাম আমাকে ধরে বসো। নাহলে ব্যালেন্স রাখতে পারবে না। যেহেতু প্রথম বাইকে উঠেছো তাই ব্যালেন্স হারিয়ে পরে যেতে পারো । তাই বলছি আমাকে ভালো করে ধরে বসো।

নূর কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। এদিকে আদিত্যকে ধরতে লজ্জাও করছে আবার পরে যাওয়ার ভয়ও করছে। বর্তমানে পরে যাওয়ার ভয়টায় বেশি। তাই নূর আর কিছু না ভেবে আদিত্যের কমড়ে হাত দিয়ে ধরে বসে রইলো।

অনেকক্ষণ পরে বাইক যখন শহর ছেড়ে আসলো তখন বাইরের শো শো বাতাসে নূর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করলো। এখন ওর কাছে অনেক ভালো লাগছে। চোখ বন্ধ করে সময়টা উপভোগ করতে থাকলো।

আয়নায় নূরকে দেখে একটা তৃপ্তির হাসি দিল আদিত্য। নূরকে এভাবে দেখে আদিত্যের অনেক ভালো লাগছে। এটাইতো ও চায়। এই মেয়েটার খুশির জন্য ও সব করতে পারবে।

নূরের নাক আদিত্যের ঘাড়ের কাছে থাকায় আদিত্যের শরীর থেকে একটা মনমাতানো ঘ্রাণ এসে লাগলো নূরের নাকে। কেমন পাগল করা নেশা ধরানো ঘ্রাণ। নূর চোখ বন্ধ করা অবস্থায়ই নিজের নাকটা আরেকটু নিচের দিকে নামিয়ে ভালো আদিত্যের শরীরের ঘ্রাণ নিতে লাগলো। নূর যেন কোনো মোহে হারিয়ে যাচ্ছে।

দুজন এভাবেই দুজনের মোহে হারিয়ে পরিবেশটা উপভোগ করতে করতে যাত্রা করলো।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here