#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি 💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-২৪
★ নূর অবাক আর বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে সামনে। মাত্রই এসে পৌঁছেছ ওরা। বাইক থেকে নামার পর থেকে নূর শুধু হা করে সবকিছু দেখছে। মনে মনে ভাবছে এটা কি ফার্মহাউস নাকি কোনো রিসোর্ট?
দোতলা বিশিষ্ট একটা ডুপ্লেক্স বাসা। যার চারিদিকে কাচের দেয়াল। সামনে বিশাল একটা সুইমিং পুল। পুলের পাশে ছাতা বিশিষ্ট কয়েকটা চেয়ার আছে। বাসার দুইপাশে সারি সারি নানা রকমের গাছ গাছালি আর ফুলের বাগান। সত্যিই জায়গাটা অসম্ভব সুন্দর। নূর মুগ্ধ হয়ে দেখছে সবকিছু।
আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো।
….কি? পছন্দ হয়েছে আমাদের ফার্মহাউস?
আদিত্যের কথায় নূরের ঘোর কাটলো। নূর মুচকি হেসে বললো।
…পছন্দ মানে?অনেক পছন্দ হয়েছে। জায়গাটা খুব সুন্দর।
ওদের কথার মাঝে আবির আর তানিও চলে এলো। আবিরও তানিকে নিয়ে বাইকে এসেছে। তানি বাইক থেকে নেমে অতি উৎসাহ নিয়ে নূরের কাছে যেয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে বললো।
…ওয়াও নূর তুই এসেছিস? আমার যে কি খুশি লাগছে তোকে দেখে, বলে বুঝাতে পারবো না।
আবির এগিয়ে এসে বললো।
…বাহ্ এতো কষ্ট করে বাইক রাইড করে নিয়ে আসলাম আমি। আর হাগ বান্ধবীকে? এ কেমন বিচার?
আবিরের কথায় সবাই হেসে দিল।
আদিত্য আবিরকে জিজ্ঞেস করলো।
…সানা কার সাথে আসছে?
…..সানা ড্রাইভার কাকা গাড়িতে দিয়ে যাবে।
….ওওহ।
একটু পর তাসিরও বাইক নিয়ে চলে এলো। তাসির বাইক থামিয়ে নেমে দাড়াতেই ওর সামনে সানার গাড়ি এসে থামলো। গাড়ির দরজা খুলে সানা বাইরে বের হয়ে দাঁড়ালো।
তাসির হা হয়ে তাকিয়ে আছে সানার দিকে। পিংক কালারের টপসে পিচ্চিটাকে একদম বারবিডল লাগছে। হঠাৎ খেয়াল করলো সানা ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে। তারপর হাসি মুখ করে ওর দিকে এগিয়ে আসছে। মনে হচ্ছে জড়িয়ে ধরবে। তাসির একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো। মেয়েটা কি সত্যি সত্যিই ওকে সবার সামনে জড়িয়ে ধরবে নাকি? সানা যতো কাছে আসছে তাসিরের হার্টবিট ততই ফাস্ট চলছে। সানা তাসিরের কাছাকাছি আসতেই তাসির চোখ বন্ধ করে ফেললো। কিছুক্ষণ পর কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে তাসির চোখ খুলে তাকিয়ে দেখলো সামনে কেউই নেই। তাসির পেছনে তাকিয়ে দেখলো সানা নূরকে জড়িয়ে ধরে আছে। তাসির যেন বোকা বনে গেল। তারমানে সানা আমার দিকে না, নূরের দিকে তাকিয়ে ছিল। আর আমি কিনা কি ভেবে বসে আছি। এসব ভেবে তাসির নিজের মাথায় নিজেই একটা চাটি মাড়লো।
অতঃপর সবাই বাসার ভেতরে ঢুকলো।
ভেতরে ঢুকে নূর আর তানি দুজনেই আবারও হা হয়ে গেল। ভেতরেও সবকিছু একদম ফাইভ স্টার হোটেলের মতো সুন্দর।
সবাই যেয়ে সোফায় বসে পড়লো। নূর জিজ্ঞেস করলো।
…এখানে কি কেউ থাকে? না মানে সবকিছু এতো পরিস্কার পরিচ্ছন্ন দেখছি তাই বললাম।
আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
…না এখানে কেউ থাকেনা।তবে দেখাশোনার জন্য লোক রাখা আছে। তারাই এসে সবকিছু পরিস্কার করে রাখে।আর আজ আমাদের আসার কথা জানানো হয়েছিল তাই সব পরিস্কার করে রেখেছে।
নূর মুচকি হেসে বললো।
..ওহহ।
তাসির বলে উঠলো।
…তো আজকের প্লান কি কি? প্রথমে আমরা কি করবো?
আদিত্য বললো।
….আপাতত আমরা একটু রেস্ট করবো। হাল্কা নাস্তা পানি করবো। তারপর আমরা সাইকেলিং করবো।
সাইকেলিং এর কথা শুনে নূর অবাক হয়ে তাকালো আদিত্যের দিকে। নূরের সাইকেলিং অনেক পছন্দ। ছোট বেলায় ওর দাদি ওঁকে একটা সাইকেল কিনে দিয়েছিলো। সেটা চালাতে অনেক মজা পেত নূর। তারপর বড়ো হওয়ার পর নূরের বাবার একটা পুরানো সাইকেল ছিল। সেটা চালিয়ে নূর স্কুলে যেতো। নূরের অনেক ভালো লাগতো সাইকেল চালাতে। কিন্তু ওর বাবার সাইকেল নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর আর কখনও সাইকেল চালাতে পারেনি। তাই হঠাৎ সাইকেলের কথা শুনে নূর একটু অবাক হয়ে যায়। আবার মনে মনে খুশিও হয়। অনেক দিন পর সাইকেল চালাতে পারবে এটা ভেবে।
তাসির উৎসাহিত কন্ঠে বললো।
…ওয়াও সাইকেলিং দ্যাটস গ্রেট আইডিয়া। অনেক দিন পর সাইকেলিং। ইট উইল বি ফান।
আবির বলে উঠলো।
….ইয়া। তারপর আমরা সুইমিং করবো আর পুল গেম খেলবো।
আদিত্য বললো।
…ওকে দেন। সবাই তাহলে একটু ফ্রেশ হয়ে নেওয়া যাক।
তারপর সানার দিকে তাকিয়ে বললো।
…সানা তুই নূর আর তানিকে ফ্রেশ হওয়ার জন্য রুম দেখিয়ে দে।
সানা মাথা ঝাকিয়ে বললো।
…ঠিক আছে ভাইয়া।
তারপর একে একে সবাই উঠে গেলো ফ্রেশ হতে।
নূর বসে বসে ভাবছে আদিত্যকে পায়েসটা কিভাবে দিবে। এভাবে আমার পায়েস আনা উনি যদি পছন্দ না করেন তখন? এক কাজ করি ডাইনিং টেবিলে অন্য খাবার গুলোর সাথে রেখে দেই। তাহলে আর বুঝতে পারবে না কে এনেছে। নাস্তার সাথে ওটাও খেয়ে নিবে। হ্যাঁ এটাই ভালো হবে। যেই ভাবা সেই কাজ।
নূর দরজা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখলো আপাতত ডাইনিং এরিয়ায় কেউ নেই। নূর মনে মনে খুশি হয়ে গেলো। এটাই সুযোগ এই ফাঁকে পায়েসটা রেখে চলে আসবো। নূর চুপিচুপি ডাইনিং টেবিলের কাছে গেলো। সাইড ব্যাগ থেকে পায়েসের বক্সটা বের করে যেই রাখতে যাবে। হঠাৎ পেছন থেকে আদিত্যের গলা শুনে চমকে পিছনে তাকালো নূর।
… তোমার হাতে ওটা কি?
নূর থতমত খেয়ে গেল। মনে হচ্ছে চুরি করতে এসে ধরা পড়ে গেছে। কি বলবে এখন ভেবে পাচ্ছে না। নূর আমতা আমতা করে বলার চেষ্টা করলো।
….আ আ আসলে। ইয়ে মানে।আ আ আমি।
নূরের কথা শেষ হওয়ার আগেই আদিত্য ভ্রু কুঁচকে নূরের হাত থেকে বক্সটা নিয়ে নিল। তারপর নিজেই বক্সটা খুলে দেখার চেষ্টা করলো কি আছে। নূর চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রইলো।
বক্সের ভেতর পায়েস দেখে আদিত্য অবাক হয়ে চেয়ে রইলো। নূর ওর জন্য পায়েস রান্না করে এনেছে? মা মারা যাবার পর আদিত্য আর কখনও পায়েস খায়নি। বাবা অবশ্য অনেকবার বুয়াদের দিয়ে পায়েস রান্না করিয়েছে। কিন্তু আদিত্য কখনো তা খায়নি। কিন্তু আজ নূর ওর জন্য পায়েস এনেছে। এটা ভাবতেই আদিত্যর মন ভরে উঠছে। আদিত্য মায়া ভরা চোখে নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
…এটা তুমি আমার জন্য এনেছো?
আদিত্যের কথায় নূর চোখ খুলে তাকায়। তারপর মাথা ঝাকায়। মানে হ্যাঁ।
আদিত্য একটা তৃপ্তির হাসি দিয়ে বললো।
…তাহলে আমাকে না দিয়ে এখানে রাখছিলে কেন?
নূর অপ্রস্তুত হয়ে বললো।
….না মানে।
….থাক আর মানে মানে করতে হবে না। একটা প্রিজে ঢেলে উপরে আমার রুমে নিয়ে আসো। আমি রুমে যাচ্ছি ফ্রেশ হতে।
নূর মাথা ঝাকিয়ে বললো।
…ঠিক আছে।
আদিত্য মুচকি হেসে চলে গেলো।
নূরও মনে মনে অনেক খুশী হলো। তারপর কিচেনে গিয়ে একটা প্রিজে একটু পায়েস ঢেলে ট্রেতে করে নিয়ে গেলো আদিত্যের রুমে।
আদিত্যের রুমের সামনে এসে নক করতে গিয়ে দেখলো দরজা খোলা। নূর আস্তে করে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে দেখলো আদিত্য রুমে নেই। ওয়াশরুমের পানির শব্দে নূর বুঝতে পারলো আদিত্য ওয়াশরুমে। নূর টি-টেবিলের ওপর ট্রেটা রেখে এদিক ওদিক ঘুরে ঘুরে রুমটা দেখতে লাগলো।
ওয়াশরুমের দরজা খোলার শব্দে নূর পেছনে তাকালো। নূর দেখলো আদিত্য খালি গায়ে শুধু একটা থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পরে আছে। উদোম শরীরে সিক্স প্যাক বডি স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। মুখে পানি দেওয়ার কারণে সামনের চুলগুলো ভিজে কপালে লেপ্টে আছে। দেখতে কি মারাত্মক হট লাগছে। নূর লজ্জা পেয়ে তাড়াতাড়ি উল্টো দিকে ঘুরে দাড়ালো। মনে মনে ভাবলো ছি ছি নূর তুই একটা ছেলের দিকে এভাবে তাকিয়ে ছিলি? তুই কবে থেকে এতো লুচু হয়ে গেলি?
আদিত্য বাঁকা হেসে নূরকে বললো।
…হয়েছে আর লজ্জা পেতে হবে না। এদিকে ঘুরো আমি টি শার্ট পরে নিয়েছি।
নূর মাথা নিচু করেই আদিত্যের দিকে ঘুরে আমতা আমতা করে বললো।
….আ আ আমি যাই তাহলে। আপনি পায়েসটা খেয়ে নিয়েন।
কথাটা বলে নূর যেতে নিলেই আদিত্য নূরকে থামিয়ে দিয়ে বললো।
….দাঁড়াও। কোথায় যাচ্ছো? আমি কি তোমাকে যেতে বলেছি?
নূর চুপচাপ ওখানেই দাঁড়িয়ে রইলো।
আদিত্য পায়েসের প্রিজটা হাতে নিয়ে বেডের ওপর বসে নূরকে বললো ।
….এখানে এসে বসো।
নূর আদিত্যের কথামতো ওর পাশে যেয়ে বসলো। আদিত্য পায়েসের প্রিজটা নূরের হাতে দিয়ে বললো।
…নেও পায়েসটা আমাকে খাইয়ে দেও।
নূর আদিত্যের দিকে চমকে চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে বললো।
…আ আ আমি?
…হ্যাঁ, তুমি ছাড়া এখানে আর কেউ আছে নাকি? তুমি যখন এটা মনে রেখেছো যে, মা আমার জন্মদিনে পায়েস রান্না করতো। এটাও নিশ্চয় মনে আছে যে, মা আমাকে সেটা নিজের হাতে খাইয়েও দিতো। কাজ যখন করেছো তখন পুরোটাই করো। অর্ধেক কেন করবে?
নূর ভীষণ লজ্জায় পরে গেলো। মাথা নিচু করে ওড়নার কোণা আঙুলে প্যাঁচাতে প্যাঁচাতে লাজুক হাসলো।
আদিত্য আবার বললো।
…কি হলো নেও।নাহলে কিন্তু আমি খাবোনা।
নূর আর উপায় না পেয়ে প্রিজটা হাতে নিয়ে এক চামচ পায়েস নিয়ে আদিত্যের মুখের সামনে ধরলো। আদিত্য মুচকি হেসে নূরের মুখের দিকে তাকিয়ে থেকেই হা করে পায়েসটা মুখে নিল। পায়েস মুখে নিতেই পায়েসের অপূর্ব স্বাদে আদিত্য আবেশে চোখ বন্ধ করে নিল।
নূর মনে মনে একটু ভয়ে আছে। নাজানি উনার কেমন লাগবে? যদি ভালো না হয়?
আদিত্য একটু পরে চোখ খুলে তৃপ্তির হাসি দিয়ে বললো।
…অসম্ভব মজা হয়েছে। একদম আমার মায়ের মতো।
আদিত্যের কথা শুনে নূর একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। যাক উনার ভালো লেগেছে। এটা ভেবে নূরও একটা তৃপ্তির হাসি দিল।
দরজার আড়াল থেকে এতক্ষণ সানা সবকিছু দেখছে। ভাইকে এতো বছর পর পায়েস খেতে দেখে সানার চোখে খুশির পানি চলে এলো। ভাইকে এভাবে খুশি দেখে সানারও মন ভরে এলো। সানা একটা তৃপ্তির হাসি দিয়ে ওখান থেকে চলে এলো।
পায়েস খাওয়ানো শেষে নূর চলে যেতে নিলে। আদিত্য নূরের হাত ধরে বললো।
…কাজ কিন্তু এখনো শেষ হয়নি। মা আমাকে পায়েস খাওয়ানোর পরে কপালে একটা চুমুও কিন্তু দিতো।
নূর বেচারি লজ্জায় মরি মরি অবস্থা। এক পায়েসের জন্য ওকে কতকিছু করতে হচ্ছে।
আদিত্য বাঁকা হেসে বললো।
…এমনিতেও তোমার আমাকে রোজ একটা করে চুমু দেওয়ার কথা আছে। সেই হিসেবেই নাহয় চুমু দাও।
নূর মাথা নিচু করে ঝাকালো। মানে সে রাজি।
আদিত্য মুচকি হেসে চোখ বন্ধ করে নিলো।
নূর আদিত্যের কপালে চুমু দিয়ে সবসময়ের মতো দৌড়ে চলে গেলো।
তাসির নিজের রুম থেকে বেড় হতেই সানার সাথে ধাক্কা খেলো।
তাসির তড়িঘড়ি করে বললো।
…সরি সরি আমি আসলে খেয়াল করিনি।
সানা মুচকি হেসে বললো।
…হইছে হইছে। আর সরির মালা গাঁথতে হবে না।
হঠাৎ সানা নিচের দিকে তাকিয়ে দেখলো। আবির তানির হাত ধরে একটা রুমের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। সানার মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি আসলো। সানা ফট করে তাসিরের হাত ধরে বললো।
…চলেন একটু মজা নেওয়া জাক।
তাসির ভ্রু কুঁচকে বললো।
…মানে?
..আরে এতো মানে মানে না করে আমার সাথে চলেন।কথাটা বলেই সানা তাসিরের হাত ধরে একপ্রকার টেনে নিয়ে গেল। আর তাসির বেচারা আর কি বলবে? সানা ওর হাত ধরে থাকায় এমনিতেই ওর বুকের ধুকপুক শুরু হয়ে গেছে।
আবির তানিকে নিয়ে যে রুমে ঢুকেছে, সানা তাসিরকে নিয়ে এসে সেই রুমের দরজায় কান পেতে দাঁড়িয়ে থাকে। তাসির শুধু হা করে সানাকে দেখছে।
আবির তানিকে নিয়ে রুমের ভেতর এসে দেয়ালের সাথে আটকে ধরে দুষ্টু হেসে তাকিয়ে থাকে।
তানি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো।
…কি ব্যাপার? তুমি আমাকে এখানে আনলে কেন?
আবির দুষ্টু হেসে বললো।
…বয়ফ্রেন্ড তার গার্লফ্রেন্ডকে একটা রুমে নিশ্চয় লুডু খেলার জন্য নিয়ে আসে না? কিসের জন্য নিয়ে আসে তা নিশ্চয় তুমি ভালো করেই জানো। নাকি আমার মুখ থেকে শুনতে চাও? হুহ? দুষ্টু।
…মানেহ?
…আসলে এমন রোমান্টিক মহলে আমার না অনেক জোরে জোরে প্রেম পাচ্ছে।
…ছিইহ, অসভ্য। তোমার মাথায় কি সারাক্ষণ এসবই ঘোরে? কোনো ভালো কিছু আসে না?
আবির বাঁকা হেসে ঋষি মুনিদের মতো হাত উঁচিয়ে বললো।
…..ভালো কথা, ভালো কাজ এগুলো সব মোহ্ মায়া। এসবে কিছুই নেই। এসব থেকে বেড়িয়ে আসো বালিকে। তবেই জীবনে সাফল্য অর্জন করতে পারবে।
তানি একটু রাগী স্বরে বললো।
…সরোতো এখান থেকে। যত্তসব ঢং।
কথাটা বলে তানি আবিরকে ধাক্কা দিয়ে ওখান থেকে চলে যেতে নিলেই আবির খপ করে তানির হাত ধরে সিনেমার ভিলেনদের মতো সয়তানি হাসি দিয়ে বললো।
….মুহা হা হা হা,,, তুমি কি ভেবেছো সুন্দরি? তোমাকে আমি এভাবে নির্জন জায়গায় এনে এমনি এমনি ছেড়ে দেবো? কখনোই না। তুমি এখন আমার শিকার। আমার হাত থেকে তোমাকে কেউ বাঁচাতে পারবে না। হু হা হা হা
তানি ভালো করেই বুঝতে পারছে আবির ড্রামা করছে। তাই তানিও নিজের ড্রামা চালু করে দিলো।অসহায় দুঃখী ভাব ধরে কপালে এক হাত ঠেকিয়ে ন্যাকা কান্না করে বললো।
…নেহিইইইইই,,,ছাড় আমাকে ছেড়ে দে সয়তান। আমার এতবড় সর্বনাশ করিসনা।
আবির আবারও সয়তানি হেসে বললো।
…কখনোই না। আমার হাত থেকে আজ তোর রেহাই নেই।
…ছেড়ে দে আমাকে। তুই আমার দেহ পাবি কিন্তু আমার মন পাবি না।
আবির আবারও কিছু বলতে যাবে তখনই দরজার কাছে কারোর জোরে জোরে হাসার শব্দ শুনতে পেল।
আবির আর তানি দুজনেই একটু চমকে গেল। আবির ধীরে ধীরে যেয়ে দরজাটা খুলে দিতেই তাসির আর সানা হাসতে হাসতে নিচে পরে গেলো। তাসির মাটিতে পড়ে পেটে হাত দিয়ে গড়াগড়ি খেয়ে হাসছে। সানাও সমানে হেসে যাচ্ছে। কিছুতেই হাসি থামাতে পারছেনা। এতক্ষণ দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে ওরা সবকিছুই শুনছিলো। শেষের দিকে এসে কিছুতেই ওরা হাসি আটকিয়ে রাখতে পারলোনা। দুজনেই অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো।
তানি বেচারির ইচ্ছে করছে লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যেতে। আবিরের ওপর রাগও হচ্ছে প্রচুর। সব ওর জন্যই হয়েছে। কি দরকার ছিল এতো ঢং করার। তানি আর থাকতে না পেরে দৌড়ে ওখান থেকে চলে গেলো।
তাসির আর সানাতো এখনো হেসেই যাচ্ছে।
আবির একটু বিরক্ত হয়ে বললো।
…এ এ এতো হাসার কি আছে? মনে হচ্ছে জন্মের হাসি একদিনেই হেসে শেষ করবি।
তাসির কোনরকমে হাসি থামিয়ে বললো।
…তোদের দুজনকেই মিউজিয়ামে রাখা উচিত। লাইক সিরিয়াসলি ইয়ার , দ্যাট ওয়াজ এপিক। বলেই আবারও হাসি শুরু করে দিল তাসির।
আবিরও ওদের সাথে আর না পেরে কপট রাগ দেখিয়ে চলে গেলো ওখান থেকে।
চলবে….