ভালোবাসার চেয়েও বেশি💞পর্ব-৯

0
6687

#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি 💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর-৯

★নূর ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে তানির দিকে। তানি আজ কেমন যেন আজিব বিহেব করছে। কেমন লাজুক লাজুক হাসছে।নূর কিছুই বুঝতে পারছে না। এর আবার কি হলো?

আজ ওদের প্রথম ক্লাসটা হবে না।তাই ওরা মাঠের কোনায় গাছের নিচে বসে আছে।
নূর আর থাকতে না পেরে বললো।
…এই কি হয়েছে তোর বলতো?এমন আজিব বিহেব করছিস কেন?

তানি লাজুক লাজুক ভাব ধরে বললো।
…ইয়ার,একটা ঘটনা হয়ে গেছে জানিস।

..না বললে কিভাবে জানবো?

…কালকে ?

…কি?কালকে?

…মানে কালকে…

নূর এবার বিরক্ত হয়ে বললো।
…কি কাল কাল করছিস?ঢং না করে বলবি কি হয়েছে?

…কাল আবির আমাকে প্রোপোজ করেছে। একদমে বলে উঠলো তানি।

নূর যেন আকাশ থেকে পড়লো। ওর বান্ধবী তলে তলে এসব করছে। আর ও জানেই না।নূর উত্তেজিত হয়ে বললো।
…কিহ্হহ?কখন? কোথায়? কিভাবে? আর তুই আমাকে আগে বলিসনি কেন?

…কাল একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে গিয়েছিল। ওখানেই ফুল দিয়ে প্রোপোজ করেছে। আর আমিও হ্যা বলে দিয়েছি।

নূর খুশী হয়ে তানিকে জড়িয়ে ধরে বলে।
…ওয়াও ইয়ার , আমি তোর জন্য অনেক খুশী। আবির ভাইয়াকে দেখেতো ভালোই মনে হয়। তোকে খুশী রাখবে।
তারপর নূর তানিকে ছেড়ে দিয়ে বলে।
…এইজন্যই বুঝি কাল ক্যাম্পাসে আসা হয়নি হুম?

তানি লাজুক হেসে মাথা উপর নিচে নাড়ালো।মানে হ্যা।

নূর আবার বললো।
…তোকে এই লাজুক ক্যারেক্টারে দেখে, আমারনা ভীষণ হাসি পাচ্ছে। বলেই হাসা শুরু করলো নূর।

তানি ভ্রু কুঁচকে অভিমানী সুরে বললো।
…তুই আমাকে এভাবে বলতে পারলি?এরকম একটা বিষয়ে যেকোনো মেয়ের লজ্জা পাওয়ায় তো স্বাভাবিক। আর তুই কিনা??

তানির মুখ ফুলিয়ে থাকা দেখে নূর মুচকি হেসে বললো।
…আরে আমিতো মজা করছি। আমি সত্যি তোর জন্য অনেক খুশী।
আচ্ছা চল একটু লাইব্রেরিতে যাই। আমার একটা জরুরি বই লাগবে।
ওরা দুজন উঠে লাইব্রেরীর দিকে গেলো।

নূর আর তানি হেঁটে হেঁটে লাইব্রেরীর দিকে যাচ্ছে। হঠাৎ নূরের কানে কোথা থেকে কারোর গানের সুর ভেসে আসে। নূর ভাবছে এতো সুন্দর করে কে গান গায়ছে।নূর আনমনেই সেদিকে যেতে লাগলো, যেখান থেকে গানের সুর আসছে।নূর হাটতে হাটতে একটা রুমের সামনে এসে দাড়ালো। হ্যা এখান থেকেই গানের সুরটা আসছে।নূর আস্তে করে দরজাটা একটু খুলে দেখার চেষ্টা করলো কে গান গাইছে।নূর বুঝতে পারলো এটা কোনো অডিটোরিয়াম। হয়তো কোনো প্রোগ্রামের রিহার্সাল চলছে। নূর স্টেজের দিকে তাকাতেই ওর চোখ কপালে উঠে গেলো। এটা তো আদিত্য!তার মানে উনি গানটা গাইছে? উনার মতো রাগী মানুষ আবার গানও গাইতে পারে? ভাবছে নূর।

আদিত্য স্টেজে চেয়ারের উপর বসে, গলায় গিটার ঝুলিয়ে, চোখ বন্ধ করে হাত দিয়ে গিটার বাজিয়ে গান করছে।

♬ স্বপ্নে তার সাথে হয় দেখা ♪
বসে বসে ভাবি তাও একা একা
সে স্বপ্নে আসে তবু
স্বপ্নের চেয়েও মধুর
তাকে পাবার আশায়
দুচোখ রাখা দূর বহুদূর।
তার স্বপ্ন দেখে রাত চলে যায়
তারপর আসে ভোর
তারপর আমার ঘুম ভাংগে
দেখি ব্যস্ততার এ শহর
অবিরাম ছুটে চলা
একা একা কথা বলা
কতো কিছু বলে ফেলা
তাকে ভালোবেসে ফেলা
এ ভালোবাসাতেই রোদ্দুর।
তার স্বপ্ন আঁধারে ঘেরা নয়
সোনালী রোদে ভরা
মেঘের আকাশ চাইনা
তার স্বপ্নে আছে তারা
বেসেছি ভালো তাঁকে
স্বপ্ন দেখার ফাঁকে
স্বপ্নের রং মেখে
মনেতে তার ছবি এঁকে
সে স্বপ্নের চেয়েও মধুর
তাকে পাবার আশায়
দুচোখ রাখা দূর বহুদূর। ♬ ♬

হঠাৎ কাঁধে কারো ধাক্কায় নূরের হুঁশ ফেরে।এতক্ষণ ও আদিত্যের গানের সুরে হারিয়ে গিয়েছিল। পাশে তাকিয়ে দেখে তানি।তানি দুষ্টু হেসে বললো।
…কিরে? তুই তো দেখি আদিত্য ভাইয়ার গানের ভেতর একদম ডুবে গিয়েছিলি।জাল দিয়ে টেনে তুলতে হলো।হি হি হি…

নূর থতমত খেয়ে বললো।
…এ এএমন কিছুই না। আসলে হঠাৎ উনাকে গান গাইতে দেখলাম তো তাই একটু অবাক হয়েছি। তবে উনি সত্যি অনেক সুন্দর গান গায়।

তানি বললো।
…হ্যা তা ঠিকই বলেছিস।আমি আদিত্য ভাইয়ার গান ইন্টারনেটে আগেও শুনেছি।উনি সত্যিই অনেক সুন্দর গান গায়।তবে শুনেছি উনি পাবলিক প্লেসে তেমন একটা গান গায় না। ইন্টারনেটেও গান উনার ফ্রেন্ডরাই আপলোড করে। উনি কখনও করেন না।শুনেছি সামনে ভার্সিটির নবীন বরণ উৎসব আর কালচারাল প্রোগ্রামের জন্য প্রিন্সিপাল স্যার আদিত্য ভাইয়াকে গান গাইতে ইনসিস্ট করেছে তাই হয়তো গানের রিহার্সাল করছে।

নূর তানির দিকে অবাক হয়ে চেয়ে বললো।
…বাব্বাহ, তুই এতো খবর কখন রাখিস।
তানি একটু ভাব নিয়ে বললো।
….এটাও একটা ট্যালেন্ট বুঝলি।

…হুহ হয়ছে। এখন চল যাই।

…চল মানে?এখানে এসে আদিত্য ভাইয়ার সাথে দেখা না করেই চলে যাবি?

…এই না না আমাদের এখানে দেখলে, কি না কি ভাবে কে জানে?তার চেয়ে বরং চল এখান থেকে চলে যাই।
নূর তানিকে একপ্রকার টেনে নিয়ে চলে গেলো ওখান থেকে।

আদিত্যর গান গাওয়া শেষে আবির সিট থেকে উঠে দাঁড়িয়ে হাতে জোরে জোরে তালি দিতে দিতে বললো।
…. ওয়াহ্ ওয়াহ্ কেয়া বাত,কেয়া বাত।একদম ফাটিয়ে দিয়েছিস ব্রো।
তাসিরও সায় দিয়ে বললো।
…হ্যা আদিত্য সত্যিই অনেক সুন্দর হয়েছে।

আদিত্য বললো।
… হয়ছে তোরা থাম এখন।তোরা জানিস না এসব আমার একদম ভালো লাগে না।প্রিন্সিপাল স্যার রিকুয়েষ্ট না করলে আমি কখনো এমন পাবলিক প্লেসে গান গাইতাম না।

আবির গাল ফুলিয়ে বললে।
….হ্যা হ্যা জানি তোর এসব ভালো লাগে না।কিন্তু ব্রো দিস ইস নট ফেয়ার হাঁহ্হ।তোর দরকার নেই অথচ,আল্লাহ সব ট্যালেন্ট তোরেই ঢেলে দিছে।আমাদের মতো অসহায় গরীব দুঃখীদেরও তো কিছু ছিটে ফোটা দিতে পারতো তাই না?আমরা তো মনে হয় খালি কমেডি করার জন্য এসেছি দুনিয়াতে।
আবিরের এমন অসহায় ভরা কথা শুনে তাসির আর আদিত্য দুজনেই হেসে দেয়।

ক্লাস শেষে নূর আর তানি রোজকার মতোই চলে যায় ওদের গন্তব্যস্থলে।ওঁরা যেতেই প্রতিদিনের আবির আর তাসিরকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো।

নূর আর তানি ওদের কাছে যেতেই, আবির তানিকে একটা চোখ মারলো।তানি লজ্জায় লাল হয়ে গেলো। নূর মুখ টিপে হাসছে।
তাসির নূরকে বললো।
…আদিকে প্রিন্সিপাল স্যার একটু ডেকেছে ও একটু পরেই চলে আসবে। তুমি যেয়ে বসো।

নূর মাথা ঝাকিয়ে চলে গেলো।
নূর যেতেই আবির তাসিরকে বললো।
…শোন না,তুই থাক এখানে আমি একটু আসছি।

তাসির ভ্রু কুঁচকে বললো।
….তুই আবার কোথায় যাচ্ছিস?আদি আমাদের এখানে থাকতে বলেছে তুই জানিস না?

আবির বললো।
..তুই তো আছিস। আর আমি একটু পরেই আসছি।
চোখ দিয়ে ইশারা করে তানিকে দেখিয়ে বিড়বিড় করে বললো।
…একটু বোঝ না ইয়ার।

তাসির আর কিছু বললো না।আবির তানির হাত ধরে চলে গেলো ওখান থেকে। তাসির মনে মনে বললো। বাহ্ কি দিন এসে গেছে তোর তাসির। দুই ভাই প্রেম করবে আর তুই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পাহাড়া দিবি।কি ভাগ্য তোর। একদম সোনায় সোহাগা।

নূর বসে বসে বোর হচ্ছে। আদিত্য কখন আসবে কে জানে?নূরের শুধু বারবার আদিত্যের সেই গান গাওয়ার মূহুর্তটা মনে পরছে। কি সুন্দর করে গান গায় উনি।উনার সবকিছুই একদম পারফেক্ট। যে উনার জীবন সাথী হবে। তার ভাগ্যটা সত্যিই অনেক ভালো।ছিঃ ছিঃ এসব কি ভাবছি আমি?উনাকে নিয়ে আমার এসব ভাবা একদম ঠিক না।
নূর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সামনে তাকিয়ে দেখলো। অনেকগুলো কৃষ্ণচূড়া ফুল নিচে পরে আছে। নূর এগিয়ে গিয়ে নিচে বসে ফুলগুলো একটা একটা করে হাতে তুলে নিল।
নূরের মাথায় একটা বুদ্ধি এলো।নূর ওর ব্যাগের ভেতর থেকে একটা সুতা বের করে ফুলগুলো দিয়ে একটা মালা তৈরী করলো। ও মুখ দিয়ে গুণ গুণ করে গানের ধুন বের করছে। মালা বানানো শেষ হলে , সেটা নিয়ে মাথায় মুকুটের মতো পরে নিল।নূরের খুব খুশী লাগছে। ও নিজে নিজে কিছু ক্রিয়েট করতে পেরেছে এটা ভেবে।

আদিত্য হন্তদন্ত হয়ে আসছে নূরের কাছে। ইশশ কতো দেরি হয়ে গেছে। প্রিন্সিপাল স্যার ছাড়ছিলোই না। মেয়েটা চলে গেলো নাকি কে জানে?না না যাবেনা নিশ্চয়। গেলেতো তাসির আমাকে বলতো।
এসব ভাবতে ভাবতে আদিত্য এগিয়ে যাচ্ছে। নূরের কাছাকাছি আসতেই ওর কদম থেমে গেলো নূরের গুণগুণ শুনে। কি সুন্দর কোকিলের মতো মিষ্টি সুর।শুধু গুনগুনিই এতো মধুর। নাজানি গান গাইলে আরো কতো মিষ্টি লাগবে।আদিত্য নূরের আর একটু সামনে যেতেই আদিত্য আরো বেশি স্তব্ধ হয়ে গেলো। মুগ্ধ হয়ে চেয়ে রইল নূরের দিকে। সামান্য একটা ফুলের মুকুটেই যেন ওকে পরীর মতো লাগছে। আদিত্য ভেবে পায়না এই মেয়েটা ওকে আরো কতো ভাবে পাগল করবে? দিনে দিনে এই মেয়েটার নেশায় চরমভাবে আসক্ত হয়ে পরছে। আদিত্য ওর ফোনটা বের করে ফট করে নূরের একটা ছবি তুলে নিল।
নূর এখনো আদিত্যর উপস্থিতি টের পায় নি।কোনো কিছুর শব্দ পেয়ে নূর মাথা উপরে তুলে দেখে আদিত্য এসেছে। নূর সাথে সাথে দাঁড়িয়ে যায়। নূর দাঁড়াতেই দেখে আদিত্য কেমন মুগ্ধ নয়নে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। নূর লজ্জা পেয়ে যায়। লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। লজ্জায় দুগাল লাল হয়ে যায়। নূরের এমন লজ্জারাঙা মুখ দেখে আদিত্য আরো পাগল হয়ে যায়।উফফ এই মেয়েটা আজকে আমাকে হার্ট অ্যাটাক দিয়েই ছাড়বে।

আদিত্যের এভাবে তাকিয়ে থাকায় নূর অনেক অস্বস্তিতে পরে যায়। মাথা নিচু করে হাত দিয়ে ওড়নার আচল প্যাচাতে থাকে।
আদিত্য ব্যাপারটা বুঝতে পেরে মাথাটা ঝাকিয়ে নিজেকে ঠিক করে বলে।
…এটা কোথায় পেয়েছো।নূরের মুকুটের দিকে ইশারা করে।

নূর আমতা আমতা করে বললো।
….নিচে ফুল পরে ছিল। ওগুলো দিয়ে বানিয়েছি।

আদিত্য একটু অবাক হয়।যেখানে আজকালকার মেয়েরা দামী দামী ব্রান্ডের কসমেটিক আর অর্নামেন্টস ব্যবহার করে নিজেকে স্টাইলিশ প্রেজেন্ট করায় ব্যস্ত। সেখানে এই মেয়ে সামান্য ফুলের মালা দিয়ে নিজেকে সাজাচ্ছে। ও সত্যিই সবার থেকে আলাদা। একটা পিওর সোল।
আদিত্য বলে উঠলো।
…বাহ খুব ভালো বুদ্ধিতো। তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে। তা একটাই বানয়েছ?

নূর বললো।
…আরেকটা আছে আপনি নিবেন?

আদিত্য মনে মনে খুশী হলেও,উপরে উপরে বলে।
…আমি ছেলে মানুষ এটা দিয়ে কি করবো?

নূর একটু ভেবে বললো।
…হুম তাও ঠিক। তবে আপনি চাইলে হাতে পরতে পারেন।

আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
…ঠিক আছে তুমি পড়িয়ে দেও তাহলে।

নূর মাথা নাড়ালো।মানে ঠিক আছে।
ওরা দুজন ব্রেঞ্চের ওপর বসলো। আদিত্য ওর বা হাতটা এগিয়ে দিল নূরের দিকে।
নূর মালাটা আদিত্যের হাতের কব্জিতে বেঁধে দিলো।
আদিত্য শুধু একধ্যানে চেয়ে আছে নূরের মুখের দিকে।এই প্রথম নূর ওর হাত স্পর্শ করেছে। ওর মনে যেন আনন্দের ঢেউ খেলছে।
মালা বাঁধা শেষে নূর বললো।
…হয়ে গেছে।

…হুম? হ্যা। ধ্যাংক্স।

আদিত্য বললো।
…তোমার জন্য একটা জিনিস আছে।

নূর জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো।
…আমার জন্য? কি?

…দেখতে পাবে। আগে চোখটা বন্ধ করো।

…চোখ কেন বন্ধ করবো?

…তোমাকে না সব কথাই দুবার বলতে হয়।চোখ বন্ধ করতে বললাম করো।এতো কথা বলো কেন?

নূর চোখ বন্ধ করে নিলো।নূর চোখ বন্ধ করতেই আদিত্য একটা বক্স ওর হাতে দিল।তারপর বললো।
…এখন খোল চোখ।

নূর চোখ খুলে দেখলো ওর হাতে একটা বক্স।নূর ভ্রু কুঁচকে একবার বক্সের দিকে তাকিয়ে তারপর আবার আদিত্যের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো।
…কি আছে এটাতে?

..খোলো। খুললেই দেখতে পাবে।

নূর বক্স খুলে দেখলো, এক বক্স ভরা প্রান চাটনি। ভিন্ন ভিন্ন ফলের। নূরের চোখ মুখ খুশীতে চকচক করে উঠলো।যা দেখে আদিত্যের মনও খুশী হয়ে গেলো।
কিন্তু একটু পরেই নূরের মুখখানা ছোট হয়ে গেলো। ও ভাবছে এভাবে উনার কাছ থেকে এগুলো নেওয়া ঠিক হবে না। আদিত্য ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো।
…কি হয়েছে?পছন্দ হয়নি?

নূর ইতস্তত হয়ে বললো।
…না তা না।আসলে আমি এগুলো নিতে পারবো না। এটা ঠিক দেখায় না।

নূরের কথা শুনে আদিত্যের রাগ হতে লাগলো। ও গম্ভীর হয়ে বললো।
…কেন নিতে পারবে না? এখানে বেঠিক এর কি আছে?তানির কাছ থেকে নিতে পারলে,আমার কাছ থেকে নিতে কি সমস্যা?

নূর কাচুমাচু করে বললো।
…কিন্তু..

নূরের কথা শেষ করতে না দিয়েই, আদিত্য বলে উঠলো।
…ব্যাচ্, কোনো কিন্তু না।আমি বলেছি নিবে মানে নিবে।দ্যাটস্ ফাইনাল। নো মোর আর্গুমেন্টস।

আদিত্যের এমন ধমকিতে নূরের আর না বলার সাহস হয় না।নূর মাথা ঝাকিয়ে রাজি হয়ে যায়।
আদিত্য যেন হাফ ছেড়ে বাচে।যাক শেষমেষ রাজি হয়েছে।

আদিত্যর খুব ইচ্ছে করে নূরের চাটনি খাওয়া দেখতে। তাই ও বলে উঠলো।
…তাহলে খাও।

নূর একটু অবাক হয়ে বলে।
… এখনি খাবো?

…হ্যা খাও।আমিও একটু দেখি এমন টক জিনিস কিভাবে খাও তুমি?

নূর আর উপায় না পেয়ে চাটনির একটা প্যাকেট বের করে। নূর উপরে উপরে যতই না করুক ভেতরে ভেতরে চাটনি দেখে ওর মুখে পানি চলে এসেছে। আদিত্য না থাকলে কখন খাওয়া শুরু করে দিতো।আদিত্যের সামনে একটু ইতস্তত করছিল।তবে এখন যখন আদিত্য নিজেই খেতে বলেছে, তখন আর কোনো বাধা নেই।
নূর একটা চাটনির প্যাকেট নিয়ে দাঁত দিয়ে প্যাকেটের মাথা ছিড়ে খাওয়া শুরু করলো।
আর আদিত্য চেয়ে চেয়ে ওর খাওয়া দেখছে।
নূর প্রথমে একটু ইতস্তত বোধ করলেও,পরে চাটনির স্বাদ পেয়ে আশেপাশের সবকিছু ভুলে যায়।ও চোখ বন্ধ করে মনের সুখে চাটনি খেতে থাকে। আসলে চাটনি নূরের একটা দূর্বলতা।

নূরের চাটনি খাওয়া দেখে আদিত্যের বেহাল অবস্থা। নূর চাটনি খাওয়ার সময় বারবার ওর ঠোঁটে লেগে থাকা চাটনি জিহ্বা দিয়ে চেটে তুলছে। আবার খেতে খেতে বারবার চটাস চটাস শব্দ করছে। চাটনির ঝালের কারণে নূরের ঠোঁট দুটো লাল হয়ে গেছে। এমন দৃশ্য দেখে আদিত্যের গলা শুকিয়ে আসছে। শুকনো ঢোক গিলছে ও।সারা শরীরে কাটা দিয়ে উঠছে। নাহ আর দেখতে পারছে না আদিত্য এই ভয়ংকর দৃশ্য। অন্যদিকে ঘুরে নিজের চোখ বন্ধ করে নেয় আদিত্য। লম্বা নিঃশ্বাস নিয়ে নিজেকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে। আদিত্য একটু গলা খাঁকারি দিয়ে নূরকে বলে।
….থাক হইছে। বাকিগুলো পরে খেও।

আদিত্যের কথায় নূর একটু অবাক হয়।নিজেই তো খেতে বললো, আবার নিজেই না করছে। আজব লোক। নূর খাওয়া বন্ধ করে দেয়। তারপর বক্সটা ব্যাগে ভরে রাখে।

অতঃপর নূর রোজকার কাজ করে চলে যায়।

রাতের বেলায় আদিত্য শুয়ে শুয়ে নূরের দেওয়া মালাটা হাতে নিয়ে দেখছে।কি করছো তুমি আমার সাথে?এতো দিনের শক্ত হয়ে গড়ে তোলা মানুষটাকে তুমি ভেঙে গুড়িয়ে দিচ্ছো।এটা কি ঠিক করছো?মনে মনে এসব ভাবতে ভাবতে একসময় মালাটা বুকে নিয়েই ঘুমিয়ে পরে।

নূরও বিছানায় শুয়ে আজ সারাদিনের কথা ভাবছে।আদিত্যের সাথে সময় কাটাতে এখন ওরও ভালো লাগে ।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here