ভালোবাসার চেয়েও বেশি💞পর্ব_১

0
17279

#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি💞💞
#লেখিকা_ Mehruma Nurr
#পর্ব_১

★অপয়া,মুখপুড়ি দিলিত সকাল সকাল ক্ষতি করে। এই তুই কি চাস বলতো।সব তো খেয়েছিস, জন্ম নিতেই মাকে খেলি তারপর দাদিকে এখন কি এই সংসার টাও খেয়ে শান্ত হবি?এইভাবে চলতে থাকলে সে সময় দূরে নেই যখন আমাদের ভিক্ষের থালি নিয়ে রাস্তায় বসতে হবে।
তুই তো আর মরবি না। আমাদের ই মরতে হবে তাছাড়া তো আর কোনো উপায় দেখছি না।

এখন কি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তোর চেহারা আমায় দেখাবি, নাকি এগুলো পরিস্কার করবি।আমার হয়েছে যত জ্বালা। যত্তসব।

ঝাঁঝাল কর্কশ গলায় নূরের সৎ মা রুবিনা বেগম কথাগুলো বলে চলে গেল।

নূর গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে এতক্ষণ তার সৎ মায়ের কথাগুলো শুনছিলো। গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কারণ, রুবিনা বেগম শুধু মুখের তীর মেরে ক্ষ্যান্ত হননি। সেই সাথে গালে একটা থাপ্পড়ও লাগিয়ে দিয়েছে যেটা সে প্রায়ই করে। মাঝে মাঝে এর চেয়ে বেশিও করে।

রুবিনা বেগম চলে যাওয়ার পর নূর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিচে পড়ে থাকা ভাংগা চায়ের কাপের টুকরোগুলো তুলে পরিস্কার করতে থাকে।
এই কাপটি হাত থেকে পরে ভেঙে গেছে।আর এই সামান্য কারণেই তার সৎ মা তাকে চড় মেরে এতগুলো কথা শুনিয়ে গেলেন।
যদিও এতে নূরের কোনো দোষ ছিলনা। নূর যখন চা নিয়ে যাচ্ছিলো তখন হঠাৎ ওর ছোট ভাই রবি পিছন থেকে এসে ওকে ভাউ বলে।আকস্মিক এমন হওয়ায় নূর তাল সামলাতে না পেরে হাত থেকে গরম চা ভরতি কাপটা নিচে পরে যায়। এতে কিছু চা ওর পায়ের ওপরেও পরে।কিন্তু তাতে কি যায় আসে এবাড়ির কারও।ওটা দেখার কারও টাইম নাই।ওর চেয়েও বেশি মুল্যবান এই কাপ। আর সেকারনেই রুবিনা বেগম তার মহামুল্যবান বানি শুনিয়ে গেলেন।
নূর কাপের টুকরো গুলো উঠিয়ে জায়গাটা পরিস্কার করে ফেললো। টুকরো গুলো ময়লার ঝুরিতে ফেলে পিছনে ফিরতেই দেখলো ওর ছোট ভাই রবি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।চেহারায় অপরাধবোধ।
নূর মাথাটা একটু নিচের দিকে ঝুকিয়ে রবির কাথ ধরে এক হাত দিয়ে রবির থুতনি থরে উচু করে বললো।
..কি হয়েছে ভাই এমন পেচার মত মুখ বানিয়ে রেখছিস কেনো?
আমার জন্য মা তোমাকে মারলো আবার বকলো।তুমি বললে না কেনো যে আমার জন্য সব হয়েছে। আবার আমাকেও বলতে দিলেনা ইশারায় না করলে।বললে তো আর তোমাকে বকা খেতে হতোনা।
নূর একটা ফেক মুচকি হাঁসি দিয়ে বলল।
আরে এসব কিছুনা, এগুলো তো রোজই হয়।এসব আমার সয়ে গেছে। আর তুই মন খারাপ করিস না মা বাবারা যেমন সন্তানদের ভালোবাসে তেমন কোনো ভুল পেলে তাদের শাসন করার অধিকারও আছে বুঝলি। এখন মন খারাপ করিস না কেমন।তুই মন খারাপ করে থাকলে আমার একদম ভালো লাগে না।তুই জানিস না।

যত যাই বলোনা কেনো আপু,ওই ঘষেটি বেগম আমার মা হলেও ওই মহিলাকে আমার একদমই পছন্দ না।
এসব কি কথা রবি উনি তোমার মা। আর গুরুজনদের নিয়ে এসব বলতে নেই।
হুহহ..গুরুজন না ছাই। আমাকে খালি ওই নিনাকে পটিয়ে গার্লফ্রেন্ড বানাতে দেও। তারপর বিয়ে করে এই বাড়িতে আনলেই ব্যাস ঘষেটি বেগমের দিন শেষ। তারপর বুঝবে কত দুধে কত হরলিক্স।😎
রবির কথা শুনে তো নূর থ হয়ে গেছে। ক্লাস ফাইবে পড়া ছেলের মুখে এমন কথা শুনে বিস্ময়ে কাশি উঠে গেছে। কোনো রকমে কাশি থামিয়ে বললো।
এসব কি বলছিস ভাই।
আরে ঠিকই বলছি আপু। তুমি ওই নিনাকে চিনোনা,এক নম্বরের ঝগরাটে। ওকে দেখে ডাইনি কটকটিও ভয় পেয়ে বনবাসে চলে যাবে।তাহলে ভাব এই মহিলার কি অবস্থা করবে।আমার তো ভেবেই সেই মজা লাগছে।
নূর হালকা ধমকের সুরে বললো।
রবি তুমি এখন অনেক ছোট মাত্র এগারো বছর বয়স। এসব কথা বলা একদম ঠিক না। তুমি যাও পড়তে বসো।
রবি আর কিছু না বলে চলে গেল ওখান থেকে।

নূর আবার কিচেনে গিয়ে চুলায় আবার চায়ের পানি তুলে দিল।
নূর ভালো করেই জানে রবি এসব কথা ওকে বলেছে ওর মন ভালো করার জন্য। কিন্তু ওকে কিভাবে বুঝাবে যে,নূরের কাছে এসব এখন ভাতমাছ। এগুলো আর ওর গায়ে লাগেনা। এসবকিছুর অভ্যাস হয়ে গেছে। হবেইবা না কেন এগুলো তো আর নতুন না ছয় বছর বয়স থেকে এসব সয়ে আসছে ও।

নূর ভাবছে ছোট মা তো ঠিকই বলেছে। আমি আসলেই একটা অপয়া। তানা হলে কি আমার সাথে এসব হয়।
জন্ম নিতেই মা আমাকে একলা করো চলে গেল।বাবাও আমাকে দেখতে পারেনা।আর সবার মত সেও মনে করে আমার জন্যেই মা মারা গেছে। আমাকে দেখলেই তার রাগ লাগে। এজন্য আমিও ভয়ে তার সামনে যাইনা।একমাত্র দাদিই ছিল যে আমাকে ভালোবাসতো, আমাকে আদর করতো। আমি তার কাছেই বড় হয়েছি।কিন্তু সেই সুখও আমার কপালে বেশিদিন টিকলো না।ছয় বছর বয়সে দাদিও আমাকে একা করে চলে গেল। আর সেদিন থেকেই শুরু হলো আমার এই দুর্বিষহ জীবন।
শুনেছি মা মারা যাবার তিন মাস পর দাদি আমার কথা ভেবে বাবাকে আবার বিয়ে করান।কিন্তু দাদি কি আর জানতো, যার ভালোর জন্য এটা করছে সবচেয়ে বেশি কষ্ট সেই পাবে।
দাদি যতদিন বেচে ছিল ততদিন সব ঠিকই ছিল।ছোট মা আমাকে আদর স্নেহ করতো, আমিও তাকে নিজের মায়ের মতই ভালোবাসতাম।কারন আমার জন্মের পর তাকেই মায়ের রুপে দেখেছিলাম।বাবা আমাকে দেখতে না পারলেও কখনো বকা দিতনা। শুধু আমাকে তার সামনে যেতে মানা করতো। যদিও বাবা ব্যাবসার কাজে বেশির ভাগ দিন বাইরেই থাকে। তাই আমারও তেমন সমস্যা হত না।কিন্তু যেদিন থেকে দাদি মারা যায় সেদিন থেকেই ছোট মার ব্যাবহারে পরিবর্তন শুরু হয়।
আমাকে আর আগের মত ভালোবাসতো না আদর করতো না।বরং আমি কাছে গেলেই ধমকানো আর মারা শুরু করলো।ধীরে ধীরে আমাকে দিয়ে বাড়ির সব কাজ করানো শুরু করলো।আমি অনেক কান্না করতাম কিন্তু কিছু বলতে পারতাম না বললেই ছোট মা মারতো।বাবার কাছেও বলার উপায় ছিল না কারন বাবা তো আমাকে এমনিতেই দেখতে পারতো না।
তারউপর ছোট মা আমাকে হুমকি দিতো।বাবাকে যদি কিছু বলি তাহলে আমাকে আরও মারবে।আমিও ভয়ে কিছু বলতাম না। বাবা মাকে তার বাবার বাড়ি থেকে নিয়ে এসে পালিয়ে বিয়ে করেছিলো।তাই নানা আর মামা মায়ের সাথে সব সম্পর্ক ছিন্ন করেন। একারণে নানা বাড়িরো কোনো আশা ছিলোনা।
এভাবেই দিন যেতে থাকে প্রথম প্রথম খুব কষ্ট হত একা একা কান্না করতাম। ধীরে ধীরে এসব অভ্যাসে পরিণত হয়েযায়।আর আমিও বুঝে যায় যে এটাই আমার জীবন। এভাবেই আমাকে বাচতে হবে।

হঠাৎ পায়ে ঠান্ডা কিছু অনুভব হওয়ায় নূরের ভাবনায় ছেদ পরে।নিচে চেয়ে দেখে রবি পায়ে বরফ ঘোষছে। নূর নিচু হয়ে রবিকে বললো।
কি করছিস ভাই?
রবি বরফ ঘোষতে ঘোষতে বললো।
যেটা তুমি কখনোই করবে না। নিজের খেয়াল তো তোমার কখনও হয়না।দেখো কতো লাল হয়ে গেছে, নিশ্চয় জ্বালা করছে। সেদিকে তো তোমার খেয়ালই নেই। তুমি আছো কাজ নিয়ে পরে।
রবির কথা শুনে নূরের চোখের কোনে না চাইতেও পানি চলে এলো। এই একটি ব্যাক্তিই আছে যে ওকে এই পরিবারের সদস্য মনে করে। আর সবার জন্য নূর একজন কাজের লোকের চেয়ে বেশি কিছু না।হয়তো তার চেয়েও অধম।
নূর মাথাটা একটু অন্য দিকে ঘুরিয়ে চোখের পানি মুছে নিয়ে রবিকে বললো।
আরে এটা কিছু না সামান্য ব্যাপার এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে। তুই চিন্তা করিস না দেখি ওঠতো এখন। তোর স্কুল আছেতো যা রেডি হয়ে নে।আমি তোর জন্য চকলেট মিল্কশেক বানাচ্ছি ।
রবি বললো তোমারও তো আজকে ভার্সিটির প্রথম দিন তুমি যাবে না?
নূর মাথা নাড়িয়ে বুঝালো সে যাবে।
রবি খুশি হয়ে বললো ইয়েএএ..আপু আজকে তোমার অনেক মজা হবে তাইনা। নতুন ভার্সিটিতে যাবা।ঠিক আছে আমি এখনই রেডি হয়ে আসছি, আমি আর তুমি একসাথে বের হবো।কথাগুলো বলতে বলতে রবি চলে গেল।
নূর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চায়ের পাতিল থেকে কাপে চা ঢেলে রান্না ঘর থেকে বের হলো।

রিপার রুমে এসে চায়ের কাপটা বেডের পাশে ছোট টেবিলটায় রাখলো। রুমে কোনো কিছুর শব্দ পেয়ে রিপা তার ফেসপ্যাক লাগানো মুখে চোখের ওপর থেকে শশার স্লাইস সরিয়ে দেখলো নূর চায়ের কাপ রাখছে।মুখে বিরক্তির ছাপ নিয়ে রিপা নূরকে বললো।
এই তোকে না কতবার বলেছি, সকাল সকাল তোর এই অপয়া চেহারা আমায় দেখাবিনা।আমি ঘুম থেকে ওঠার আগেই চা রেখে যাবি।
নূর মাথা নিচু করে বললো।
সরি আপু আমি আগেই দিয়ে যেতাম আসলে চা টা আনার সময় আমার হাত থেকে পরে গেছে। তাই আবার নতুন করে বানিয়ে আনতে সময় লেগে গেল। আর কখনো এমন হবেনা।
ঠিক আছে ঠিক আছে যা এখন সকাল সকাল তোর চেহারা দেখলাম নাজানি দিনটা কেমন যাবে।
নূর আর কিছু না বলে চলে গেল ওখান থেকে।
রিপা রুবিনা বেগমের আগের ঘরের সন্তান। বিয়ের পরে রুবিনা বেগমের সাথে সেও এই বাড়িতে থাকে। এবং সেও রুবিনা বেগমের মতো নূরকে অপমান করার কোনো চান্সই মিস করেনা।

সব কাজ শেষ করে নূর নিজের রুমে আসে রেডি হতে। আজ তার জীবনে একটা বিশেষ দিন।আজ নূরের ভার্সিটির প্রথম দিন। এতকিছুর পরেও নূর কখনও তার পড়ালেখা বাদ দেইনি।অবশ্য এই জন্য ওকে অনেক কষ্ট আর নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। নূর যাতে পড়ালেখা না করতে পারে সেজন্য রুবিনা বেগম কম চেষ্টা করেননি এবং এখনো করেন। সারাদিন কাজ করাতো যাতে পড়তে না পারে। নূর সারাদিন কাজ করে রাতে যেটুকু সময় পেতো ওইসময়টাতে পড়তো।নূরের অন্য কিছুর কমতি থাকলেও আল্লাহ পাক ওকে মেধা ভরপুর দিয়েছে। এইজন্যেই অল্পতেই নূর সব পেরে যেতো। ও কখনও প্রাইভেট পড়তো না তারপরও সবসময় প্রথম স্থান থাকতো। এজন্য রুবিনা বেগম আর রিপা হিংসায় জ্বলে পুরে মরতো।
অবশ্য নূরের পড়ালেখার পেছনে আরো একজন মানুষের হাত আছে। সে হলো নূরের চাচা সরিফ হক।নূরের বাবারা দুই ভাই, নূরের বাবার নাম জারিফ হক আর চাচা সরিফ হক।সরিফ হক নূরের স্কুলের টিচার ছিলেন।সেই সুবাদে সরিফ হক নূরকে পড়ালেখায় অনেক হেল্প করতেন। আগে সবাই একসাথেই থাকতো। পরে নূরের চাচা আলাদা বাড়ি করে ওখানেই তার পরিবার নিয়ে থাকে। সরিফ হকের নিজের কোনো মেয়ে নেই শুধু একটা ছেলে । তাই সে নূরকে নিজের মেয়ের মতোই ভালবাসে। সেতো নূরকে নিজের বাড়ি রাখতে চেয়েছিলেন, কিন্তু নূরের চাঁচি এতে নারাজ। সেও নূরকে বাকি সবার মতো অপয়া মনে করে। নূরের এইচ এস সি পরিক্ষার পর রুবিনা বেগম নূরের পড়াশোনা প্রায় বন্ধই করে দিয়েছিল। তখন নূর তার তার চাচার কাছে অনেক কান্নাকাটি করে। তখন সরিফ হক নূরের বাবার সাথে কথা বলে আর নূরের পড়ালেখা কন্টিনিউ করানোর জন্য রিকোয়েস্ট করে। নূরের বাবাও রাজি হয়ে যায়।নূর অনেক ভালো একটা ভার্সিটিতে চান্স পায়।

নূর আলমারি খুলে দেখে সব জামাই পুরানো। আজ প্রথম ভার্সিটিতে যাবে সেখানে সবাই কত দামী দামী জামাকাপর পরে আসবে। অথচ তার একটা ভালো জামাই নেই পরে যাওয়ার জন্য। নূর মনে মনে বলে পড়ার সুযোগ পাচ্ছি এইতো অনেক জামা কাপড় দিয়ে কি হবে। আর কিছু না ভেবে ওখান থেকে একটা জামা নিয়ে ফ্রেস হতে যায়।
নূর যে রুমটাতে থাকে সেটা এই বাসার সবচেয়ে ছোট রুম। রুমটাতে শুধু একটা খাট আর একটা পুরনো আলমারি আছে।

নূর ফ্রেস হয়ে এসে দেয়ালে টানানো ছোট আয়নাটির সামনে এসে চিরুনি দিয়ে চুলগুলো আচরে বিনুনি করে নেয়। তারপর ওড়নাটা মাথায় দিয়ে দিল ব্যাচ্ হয়ে গেল নূরের রেডি হওয়া।

নূরের শারীরিক সৌন্দর্যের বর্ণনা দিতে গেলে, নূর সুন্দর এক কথায় ভয়ংকর সুন্দর। তবে এই সৌন্দর্য সচরাচর সবার চোখে পরবে না। বছরের পর বছর অযত্ন, অবহেলা আর বিষন্নতার কারণে নূরের সৌন্দর্য সহজে কারোর সামনে ধরা পরে না।
তবে যার সত্যিকারের সৌন্দর্য দেখার চোখ আছে, সেই কেবল দেখতে পাবে নূরের নিষ্পাপ চেহারার ওই পবিত্রতা। যেখানে নেই কোনো কৃত্রিমতার ছায়া,আছে শুধু ভরপুর মায়া।দেখতে পাবে ওই টানা ডাগর ডাগর দুটো চোখ। যে চোখে আছে সমুদ্র সমান গভীরতা।

নূর ড্রয়িং রুমে এসে খাবার টেবিলে যেয়ে দেখলো এটো থালাবাটি এলোমেলো হয়ে আছে খাবার জন্য একটা শুকনো রুটি ছাড়া আর কিছুই নেই।
নূর ভালো করেই জানে এসব রুবিনা বেগম এর কাজ।
নূরের পড়াশোনা বন্ধ করানোর জন্য এরকম অনেক পন্থা সে অবলম্বন করে থাকে।
নূর টেবিলের সবকিছু পরিস্কার করে রাখে।তারপর শেষমেশ ওই শুকনো রুটি টাই খেয়ে পানি খেয়ে নেয়। কারণ বাইরে যেয়ে খাওয়ার মতো টাকা ওর কাছে নেই।
নূর রবিকে ডাকে একসাথে বের হওয়ার জন্য। সামনে এগুতেই নূর দেখে ওর চাচা সরিফ হক বসে আছে সোফায়।
মুচকি হেসে নূর বললো, আরে চাচা কখন এলেন? কেমন আছেন?
সরিফ হক মুখে খুশির ঝলক নিয়ে বললো,
এইতো মা ভালো এইমাত্র আসলাম। দরজা খোলায় ছিলো তাই ভিতরে এসে বসলাম। তোমার তো আজকে ভার্সিটির প্রথম দিন, তাই ভাবলাম দেখা করে যাই।তুমি খুশিতো?
নূর বললো,হ্যা চাচা আমি খুশি।এসব আপনার জন্যই পসিবল হয়েছে। আপনি না থাকলে হয়তো আমি এই পর্যন্ত আসতেই পারতাম না।আমাকে দোয়া করবেন চাচা আমি যেন আপনার মান রাখতে পারি।
সরিফ হক বললো,
আমার জন্য কিছুই হয়নি, সব হয়েছে তোমার মেধা আর পরিশ্রমের জন্য। তানা হলে কি, যেখানে অনেকে লাখ লাখ টাকা দিয়েও ভর্তি হতে পারে না।সেখানে তুমি তোমার মেধার জোরেই টিকে গেছো।আমার দোয়া সবসময়ই তোমার সাথে আছে।
সরিফ হক তার পকেটে হাত দিয়ে কিছু টাকা বের করে নূরের হাতে দিয়ে বললো।
এই টাকাটা রাখো নতুন জায়গায় যাচ্ছো তোমার কাজে লাগাবে।
নূর ছলছল চোখে চেয়ে রইলো।মনে মনে ভাবছে যেখানে ওর নিজের বাবা ওকে দেখতে পারেনা।আজকের এমন একটা দিনেও ওর পাশে নেই। সেখানে উনি চাচা হয়েও আমার সব খেয়াল রাখে।
রবির ডাকে নূরের ভাবনায় ছেদ পরলো।
রবি বললো চলো আপু আমি রেডি।
নূর মাথা ঝাকিয়ে বললো হ্যা চল।
রবি সরিফ হককে দেখে বললো,
আরে চাচ্চু কেমন আছেন?
সরিফ হক মুখে হাসির রেখা টেনে বললো।
ভালো বাবা তুমি কেমন আছো?
আমিতো বিন্দাস😎
সরিফ হালকা হেসে বললো তোমার বাবা বাসায় নেই?
রবি বললো না।বাবাতো কাল রাতেই চলে গেছে।
সরিফ হক কিছুটা হতাশ স্বরে বললো ওহহ।মনে মনে ভাবছে আজকের এমন একটা দিনেও ভাইয়া মেয়েটার সাথে নেই।
নূর বলে উঠলো তাহলে আমরা যায় চাচা।
সরিফ হক বললো হ্যা,হ্যা চলো আমিও বের হবো তোমার সাথে দেখা করতেই এসেছিলাম। এখন বাসায় যাবো। ওরা তিনজন একসাথেই বেরিয়ে গেল।

রবির স্কুল বাসার কাছেই। হেটেই যাওয়া যায়। রবিকে স্কুলের গেটে দিয়ে নূর রওনা হলো ভার্সিটির উদ্দেশ্যে।
বাস স্টানে এসে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছে নূর। রিকশায় গেলে অনেক টাকা লাগবে তাই বাসেই যাবে। চাচার দেওয়া টাকাগুলো এখনি শেষ করতে চায়না নূর। টাকাগুলো রেখে দিয়ে ওর জরুরি কাজে লাগাবে। যদিও দরকার হলে চাচার কাছে চাওয়ার সাথেই দিয়ে দিবে।তারপরও বারবার টাকার কথা বলতে নিজেরি খারাপ লাগে।
ভাবতে ভাবতেই বাস চলে এলো। নূর তারাতারি করে বাসে উঠে পরে।বাসে উঠে দেখে অনেক ভীড়। নূর আগে কখনো এভাবে একা চলাফেরা করেনি। তাই একটু ঘাবড়ে যায়। অনেক কষ্টে ঠেলেঠুলে একটা সিট পেয়ে বসে পড়ে।
বসে বসে নূর ভাবছে, নাজানি নতুন জায়গা নতুন মানুষ সব কেমন হবে
নূরের স্কুল আর কলেজ একসাথেই ছিল তাই অন্য কোথাও যেতে হয়নি। এই প্রথম কোনো নতুন জায়গায় যাচ্ছে নূরের একটু নার্ভাস লাগছে।

নূর হয়তো স্বপ্নেও ভাবেনি ওর সাথে আজকে কি হতে চলেছে। যা ওর জীবনের মোর টাকেই পাল্টে দিবে।

চলবে….

(এটা একটা রোমান্টিক লাভ স্টোরি। এর কাহিনি আর চরিত্র সবই কাল্পনিক। বাস্তবতার সাথে কোনো মিল নেই। তাই কেউ দয়া করে বাস্তবতা খোজার চেষ্টা করবেন না।
আজকের পর্বে শুধু নায়িকার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। পরের পর্বে মূল কাহীনি শুরু হবে।আপনাদের সবার সাপোর্ট আশা করছি।
ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here