ভালোবাসার চেয়েও বেশি 💞পর্ব-৪২

0
6811

#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-৪২

★ রোজকার অভ্যাস অনুযায়ী ভোরের আলো চোখে পরতেই নূরের ঘুম ভেঙে গেল। নূর উঠে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে নামাজ পড়ে নিল। নামাজ শেষে নূর নিচে নেমে বাগানের দিকে গেল একটু হাটাহাটি করতে। হেটে বাগানের সামনে এগিয়ে যেতেই নূর দেখলো মালি কাকা বাগানে নতুন একটা গাছ লাগাচ্ছে। নূর একটু এগিয়ে যেয়ে বললো।
….আরে কাকা, আপনি আজ এতো ভোর বেলায়ই চলে এসেছেন?

মালি কাকা অমায়িক হাসি দিয়ে বললো
…জে মা,আদিত্য বাবা কাল রাতেই আমাকে ফোন করে বলেছে ভোরেই একটা বেলি ফুলের গাছ এনে লাগাতে । তাই বেলি ফুলের গাছ এনে লাগাচ্ছি।

নূর ভালো করে খেয়াল করে দেখলো সত্যি সত্যিই একটা বেলি ফুলের গাছ লাগাচ্ছেন উনি। নূর অনেক খুশি হয়ে গেলো মনে মনে ভাবলো, জানিনা আদিত্য আর কতো ভাবে আমাকে সারপ্রাইজ করবে। আদিত্য সত্যিই একটা পাগল। না না পাগল না আমার রাজকুমার। নূর কথাগুলো ভেবে খুশি হয়ে এক ছুটে বাসার ভেতরে চলে গেলো।

আদিত্যের রুমের দরজায় এসে দাঁড়িয়ে পরলো নূর। মনে মনে ভাবছে কালকের মতো যদি আবার আটকে দেয়? কিন্তু আদিত্যকে এখন খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। একটু দেখেই চলে আসবো, হ্যাঁ। কথাটা ভেবে নূর পা টিপে টিপে ভেতরে ঢুকলো। আদিত্য আজও খালি গায়ে শুয়ে আছে। ইশশ কত্ত কিউট লাগছে আদিত্যকে। ইচ্ছে করছে একদম খেয়ে ফেলি। ছিঃ নূর তোর মাথাটা পুরোই গেছে। কিসব চিন্তা ভাবনা করছিস?
হঠাৎ নূরের ভেতর থেকে একটা আওয়াজ আসলো। আওয়াজ টা বললো।
…..কিন্তু আদিত্যকে কত্তোওও কিউট লাগছে। সকাল সকাল আমাকে এতো সুন্দর একটা সারপ্রাইজ দিল। সেজন্য একটা চুমুতো ওকে দিতেই হয়। শুধু একটা চুমু দিয়েই চলে যাবো হ্যাঁ

এসব ভেবে নূর আস্তে করে আদিত্যের কাছে যেয়ে চট করে আদিত্যের গালে একটা চুমু দিয়েই ভো দৌড় দিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো। মনে হচ্ছে চুরি করতে এসে ধরা পরার ভয়ে দৌড়াচ্ছে। নূর চলে যেতেই ঘুমের ঘোরেই আদিত্যের ঠোঁট দুটো প্রসারিত হয়ে গেলো।
——-

সকাল ১০ টা
আদিত্য একটু আগেই ব্রেকফাস্ট করে বেরিয়ে গেছে। নূর ড্রয়িং রুমে বসে টিভি দেখছিলো, এমন সময় হঠাৎ বাসার কলিং বেল বেজে উঠলো। নূর উঠে যেয়ে দরজা খুলে দিল।

দরজা খুলতেই তানি একগাল হেঁসে দিয়ে নূরকে জড়িয়ে ধরে বললো।
…..নূররররর জানু কেমন আছিস? জানিস আমি তোকে কতো মিস করেছি?

নূরও খুশী হয়ে হেসে দিয়ে বললো।
…ভালো আছি। আর আমিও তোকে অনেক মিস করেছি।

নূর তানিকে ভেতরে নিয়ে এলো। তানি নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
…..কিরে? তুই এখনো রেডি হোসনি কেন? মেহমান রা একটু পরেই চলে আসবে।

নূর ভ্রু কুঁচকে বললো।
…..রেডি হবো কেন? আর কিসের কোথাকার মেহমান আসবে?

তানি নূরের হাত ধরে টেনে নূরের রুমের দিকে নিয়ে যেতে যেতে বললো।
…..আরে এসব কথা পরে হবে। তুই আগে তাড়াতাড়ি চলতো। তোকে রেডি করিয়ে দেই। ওঁরা যেকোনো সময় চলে আসবে। তাড়াতাড়ি চল।

তানি নূরকে টেনে ওর রুমে নিয়ে এলো। তারপর নূরের কাবার্ড থেকে একটা শাড়ি বের করে নূরের সামনে ধরে বললো।
…যা তুই ওয়াশরুম থেকে ব্লাউজ পেটিকোট পড়ে আয়। তারপর আমি তোকে এই শাড়িটা পরিয়ে দিচ্ছি।

তানির কাজকর্ম নূর কিছুই বুঝতে পারছে না। নূর কনফিউজড হয়ে বললো।
…..আরে শাড়ী কেন পরবো? আর কারাইবা আসবে? তুই সবকিছু ঠিক করে বল আমাকে।

তানি একটু বিরক্তিকর ভঙ্গিতে বললো।
….দেখ এতো কথা বলার সময় নেই এখন। তুই তাড়াতাড়ি আগে রেডি হয়ে নে। পরে তোকে সব বলছি।
কথাগুলো বলে তানি নূরকে ঠেলে ওয়াশরুমের ভেতর ঢুকিয়ে দিল।

নূর আর কোনো উপায় না পেয়ে, তানির কথামতো ব্লাউজ পেটিকোট পড়ে নিল। নূর বেড়িয়ে আসলে তানি নূরকে সুন্দর করে শাড়িটা পরিয়ে দিল। নূর শুধু বারবার জিজ্ঞেস করছে হয়েছেটা কি? কিন্তু তানি যেন নূরের কথা কানেই শুনছে না। ও ওর মতো কাজ করে যাচ্ছে। শাড়ি পরানো শেষ হলে তানি নূরকে সুন্দর করে সাজিয়ে দিল।

সাজানো শেষ হলে, তানি নূরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো।
….বাহ্, কি সুন্দর লাগছে তোকে। তোকে দেখে পাত্রপক্ষ কিছুতেই অপছন্দ করতে পারবে না। প্রথম দেখাতেই তোর উপর ফিদা হয়ে যাবে।

তানির কথা শুনে নূর যেন আকাশ থেকে পড়লো। চমকে উঠে তানির দিকে চোখ বড়ো বড়ো করে বললো।
….পা পা পাত্রপক্ষ? কি বলছিস তুই এসব ? কিসের পাত্রপক্ষ?কোথাকার পাত্রপক্ষ? আর আমাকে কেন দেখতে আসবে? পাগল হয়ে গেছিস তুই?

…..আরেহ্ পাগল হবো কেন? যা সত্যি তাই বলছি। আজ তোকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসছে। সেইজন্যই তো আমি সকাল সকাল চলে এসেছি তোর কাছে। তোর হেল্প করার জন্য।

তানির কথায় নূর কথায় নূর হতভম্ব হয়ে গেলো। কি বলছে ও এসব? মাথার তার ছিঁড়ে গেল নাকি? নূর একটু সিরিয়াস ভঙ্গিতে বললো।
……দেখ তানি, সবকিছুরই একটা লিমিট আছে। এধরনের মজা আমার একদম পছন্দ না। তাই মজা করা বন্ধ করে আসল কথাটা বল।

তানি ভ্রু কুঁচকে বললো।
….আরে মজা কেন করবো আমি? যা সত্যি তাইতো বলছি।

ওদের কথার মাঝেই বাসার কলিং বেলটা আবারও বেজে উঠলো।
তানি তড়িঘড়ি করে বললো।
…..দেখেছিস, ওরা হয়তো চলে এসেছে। তুই এখন এসব কথা বাদ দিয়ে তাড়াতাড়ি নিচে চল।
কথাটা বলে তানি নূরের মাথায় ঘোমটা দিয়ে দিলো।তারপর নূরের দুই কাঁধে হাত দিয়ে ধরে নূরকে নিয়ে যেতে লাগলো তানি।

নূর যেন হতবুদ্ধি হয়ে গেলো। ওর মাথায় কিছুই ঢুকছে না। কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। তানির সাথেও পেরে উঠছে না। তানি একপ্রকার ওকে জোর করেই নিচে নিয়ে যাচ্ছে। তানি কেন এমন করছে? ওতো জানে আমি আদিত্যকে ভালোবাসি। তাহলে কোথাকার কোন পাত্রপক্ষের সামনে এভাবে নিয়ে যাচ্ছে কেন আমাকে? আদিত্য জানতে পারলে নাজানি কি করে বসে? এসব ভেবে নূরের এখন কান্না আসছে।

তানি নূরকে ধরে নিচে ড্রয়িং রুমে নিয়ে এলো। নূর মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ওর এসব একদম অসহ্য লাগছে। ইচ্ছে করছে এক ছুটে এখান থেকে পালিয়ে যেতে।

হঠাৎ মেয়েলী কন্ঠে কেউ বলে উঠলো।
….এটা আবার কেমন মেয়ে? পাত্রপক্ষের সামনে এসে সালাম না দিয়েই দাঁড়িয়ে আছে হুম?

কন্ঠটা নূরের কাছে পরিচিত মনে হলো। নূর ঝট করে মাথা তুলে সামনে তাকালো। সামনে তাকাতেই নূর ৮৪০ ভোল্টের একটা ঝটকা খেল।

নূর দেখলো সামনে সোফায় সানা আবির আর আদিত্য বসে আছে। এতক্ষণে যেন নূরের জানে পানি এলো।নূর একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। তারমানে এরাই পাত্রপক্ষ?
কথাটা ভেবে নূর আদিত্যের দিকে তাকালো। আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে দুষ্টু হেসে এক চোখ টিপ দিয়ে, ঠোঁট চোঁখা চুমু দেখালো। নূর মাথা নিচু করে একটু লাজুক হাসলো।

সানা আবারও এ্যাটিটিউডের সাথে গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
…..মেয়েতো দেখছি চরম বেয়াদব। বলার পরেও সালাম দিচ্ছে না। এটা কোন ধরনের ব্যবহার?

হঠাৎ করে সানার এমন ব্যাবহারে নূর থতমত খেয়ে গেল। তানি নূরের কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো।
…..কি করছিস? পাত্রপক্ষের সামনে নাক কাটাবি নাকি? সুন্দর করে সালাম দে।

নূর মাথা নিচু করে বললো।
….আ আ আসসালামু আলাইকুম।

আবিরও মুরব্বিদের মতো এ্যাটিটিউড নিয়ে বললো।
…….ওয়ালাইকুম আসসালাম। ওয়াবারকাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ্।
তারপর তানির দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দিয়ে বললো।
….আসসালামু আলাইকুম, বিয়াইন সাব।

তানিও এ্যাটিটিউডের সাথে বললো।
…ওয়ালাইকুম আসসালাম বিয়াই সাব।

…..কেমন আছেন বিয়াইন সাব?

……পুরাণ প্রেমের প্যারা।

…..এই প্যারাতে কেস খায়নাই, কোন ছেরি ছ্যারা।

সানা আবিরের দিকে তাকিয়ে ধমকের সুরে বললো।
….বিহেব ইউরসেল্ফ ভাইয়া। উনি এখনো তোমার বিয়াইন হয়নি বুঝেছ? আগে আমরা মেয়ে পছন্দ করে বিয়েতে হ্যাঁ বলবো, তারপর এসব হবে বুজেছ?

আবির একটু নড়েচড়ে বসে গলা খাঁকারি দিয়ে এ্যাটিটিউড নিয়ে বললো।
….ইয়েস ইয়েস, অপকোর্স। আমরা মত না দিলেতো, এই বিয়েই হবে না।

এদের কথা শুনে নূরের ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে। মনে মনে ভাবছে, সানাতো আমাকে পছন্দ করতো, তাহলে আজ এমন করছে কেন?

তানি নূরকে ধরে আদিত্যদের মুখোমুখি সোফায় বসালো। তারপর নিজেও ওর পাশে বসলো।

সানা নূরের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
….শোন মেয়ে, আগে তোমাকে ফ্রেন্ড হিসেবে পছন্দ করতাম। তবে এখন যখন ভাইয়া তোমাকে বিয়ে করতে চাচ্ছে। এখন ম্যাটার টা অন্যরকম। তাই আগে তোমাকে আমাদের পরিক্ষায় উত্তির্ন হতে হবে। তবেই আমরা এই বিয়েতে রাজি হবো। নাহলে এই বিয়ে হবে না।

সানার কথায় নূরের হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। ভয়ে কলিজা শুকিয়ে আসছে। মনে মনে ভাবছে, এরা যদি আমাকে পছন্দ না করে তখন? আমি কি আদিত্যকে হারিয়ে ফেলবো? না না আমি আদিত্যকে হারাতে পারবো না। কিছুতেই না। আমাকে যে করেই হোক ওদের পরিক্ষায় পাস করতেই হবে।

হঠাৎ ওখানে তাসির চলে আসে। তাসির এসে তড়িঘড়ি করে বললো।
….সরি সরি। আমার আসতে একটু দেরি হয়ে গেছে। আমি কোনো কিছু মিস করিনিতো?

আবির বলে উঠলো।
….না না বেশি দেরি করিসনি। সেশন মাত্রই শুরু হয়েছে। আয় বসে পর।

তাসির একবার সানার দিকে তাকিয়ে দেখলো,সানা ওর দিকে একবারের জন্যেও তাকাচ্ছে না। মনে হচ্ছে তাসির যে এখানে আছে, সেটা ওর চোখেই পরছে না। যেন তাসির সানার জন্য ইনভিসিবল হয়ে গেছে। তাসির একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নূরের পাশে গিয়ে বসে পরলো।

আবির ভ্রু কুঁচকে বললো।
….কিরে? তুই ওই পাশে বসলি কেন? ওটাতো কনেপক্ষের সাইড।

তাসির মুচকি হেসে বললো।
….কারণ আমি কনেপক্ষ তাই।

…….মানে?

…..মানে আজ আমি আদিত্যের ফ্রেন্ড হিসেবে না। কনেপক্ষ থেকে নূরের ভাই হিসেবে এসেছি।

তাসিরের কথায় নূর ছলছল চোখে তাসিরের দিকে তাকালো। তাসির নূরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে চোখ দিয়ে ইশারা করে আস্বস্ত করলো। নূরও ছলছল চোখে মুখে হাসি নিয়ে মাথা ঝাকিয়ে সায় দিল।

আদিত্য তাসিরের দিকে তাকিয়ে চোখ দিয়ে ইশারা করে ধন্যবাদ বললো। তাসিরও মুচকি হেসে ইশারা করলো, ইটস ওকে।

তাসিরের এই ব্যাপার টা সানারও অনেক ভালো লাগলো। তবে সানা চেহারায় সেটা বুঝতে দিল না। তাসিরকে এমন ভাবে ইগনোর করছে, যেন তাসির নামে এখানে কোনো প্রাণীই নেই।

সানা নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
…. এভাবে মাথা নিচু করে বসে আছো কেন? ঘাড় কি কুজা নাকি মেয়ের?

সানার কথা শুনে নূর চমকে উঠে, এক ঝটকায় মাথা সোজা করে সটান হয়ে বসলো।

তাসির বলে উঠলো।
….আমার বোনের মাঝে কোনো ত্রুটি নেই। আমার বোন লাখে একটা।

সানা তাচ্ছিল্যের সুরে বললো।
….মুখের ভাপে তো আর আলু সিদ্ধ হবে না মিস্টার তাসির। আপনার বোনের ব্যাপারে তো আপনি ভালোই বলবেন। তবে আমরা নিজের চোখে সবকিছু দেখে তবেই ভালো মন্দ ডিসাইড করবো।

সানা তানির দিকে তাকিয়ে বললো।
…..আপনার বান্ধবীর ঘোমটা সরিয়ে ওর চুলগুলো দেখান। দেখিতো চুল আসল না নকল?

তাসির একটু রাগী স্বরে বলে উঠলো।
…..এগুলো একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে না মিস সানা? এসব তো পুরাণ চিন্তাধারার কথাবার্তা। এখন কার যুগে এসব চলে না।

সানা এ্যাটিটিউডের সাথে গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
….ওল্ড ইস গোল্ড কথাটা মনে রাখবেন মিস্টার তাসির। আমরা সবকিছু চেক করে তবেই মতামত দিবো। পরে দেখা গেল বউ টাকলা বের হলো তখন? তাই আমরা কোনো রিস্ক নিতে চাই না।

সানার কথায় তাসিরের সত্যি সত্যিই রাগ হচ্ছে। যদিও তাসির জানে এগুলো সব মজা করে করছে। তবুও ওর রাগ হচ্ছে। এমনিতেই সানার ছবিগুলোর জন্য এখনো রেগে আছে। তারউপর এখন ওর এমন ব্যাবহারে আরো রাগ হচ্ছে।

এদের কথা শুনে নূর বেচারির কেদে দেওয়ার মতো অবস্থা।
তানি তাসিরের দিকে তাকিয়ে বললো।
…..থাকনা ভাইয়া। ওদের যা খুশী তাই করতে দিন। আমাদের মেয়ে সবদিক দিয়েই পারফেক্ট। তাই ওরা যত যাই করুক না কেন, কোনো ক্ষুত বের করতে পারবে না।

তাসির মাথা ঝাকিয়ে তানির কথায় সায় দিল।

তানি নূরকে দাড় করিয়ে উল্টো ঘুরিয়ে মাথার ঘোমটা খুলে দিয়ে, নূরের চুল দেখালো।

সানা এগিয়ে যেয়ে একটা মেজার মিটার ফিতা বের করে নূরের চুল ফিতা দিয়ে মাপতে লাগলো।
সানার কান্ড দেখে আবির আর তানি মুখ টিপে হাসছে।
মাপা শেষে সানা গম্ভীর ভাবে মাথা ঝাকিয়ে বললো।
….হুমমম। ঠিক আছে এই টেস্টে তুমি পাস। এখন নেক্সট। আমাদের একটু হেটে দেখাও। দেখিতো পা সোজা আছে নাকি বেকা?

নূর ভয়ে ভয়ে মাথা ঝাকিয়ে বললো।
….. ঠি ঠি ঠিক আছে।
কথাটা বলে নূর দুই হাতে শাড়ী হালকা উঠিয়ে ধীরে ধীরে হাটতে লাগলো।
আর সানা মাথা ঝুকিয়ে মনযোগ সহকারে নূরের হাঁটা দেখছে।

হাঁটা শেষ হলে সানা আবারও গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
….হুম। ঠিক আছে এখন বোসো।

নূর মাথা ঝাকিয়ে যেয়ে সোফায় বসলো।

সানা সোফায় বসে বললো।
…হুমম।ফিজিক্যাল টেস্টে তুমি পেরে গেছ। এখন তোমার গুনাগুন সম্বন্ধে কিছু জানা যাক। তো বলো তুমি কি নাচ গান কিছু জানো?

তানি মুচকি হেসে বললো।
…জ্বি জ্বি, নূর অনেক সুন্দর গান গাইতে পারে।

সানা বললো।
…ঠিক আছে, আমাদের একটা গান গেয়ে শোনাও।

নূর গান গাইবে কি? ভয়ে ওর গলা শুকিয়ে গেছে। ঢোক চিপে কোনরকমে গাইলো

♬ ♬ দূর দ্বীপবাসিনী
চিনি তোমারে চিনি
দারুচিনির দেশের
তুমি বিদেশিনি গো
সুমন্দভাষিণী।

এইটুকু গাইতেই সানা হাত উঠিয়ে নূরকে থামিয়ে দিয়ে বললো।
…থাক থাক হয়েছে। আমি বুঝতে পেরেছি। যাইহোক শুধু গানবাজনা করলে তো আর হবে না। রান্না বান্না কি কিছু পারো?

নূর কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো।
…জি জিজ্বি পা পারি।

সানা গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
….শুধু মুখের কথায় তো আর চিড়ে ভিজবে না। কাজে করে দেখাতে হবে। যাও আমাদের সবার জন্য চা করে আনো।

নূর মাথা ঝাকিয়ে বললো।
….ঠি ঠি ঠিক আছে। আমি এখোনি আনছি।
কথাটা বলেই নূর উঠে যেতে নিলেই সানা পেছন থেকে ডাক দিয়ে বললো ।
…দাড়াও কোথায় যাচ্ছো?

নূর আমতা আমতা করে বললো।
…চা চা বানাতে।

…..তোহ? নিজের পছন্দ অনুযায়ী আমাদের চা খাওয়াবে নাকি? আগে সবার কাছে জিজ্ঞেস করো কে কেমন চা খায়। তারপর সবার পছন্দ অনুযায়ী চা করে আনবে।

নূর মাথা ঝাকিয়ে বললো।
…ঠি ঠিক আছে। সবাই বলুন কার কেমন চা পছন্দ?

সানা বললো।
…আমি লেবু চা খাই।

নূর আদিত্যের দিকে তাকায়।

আদিত্যের বলার আগেই সানা বললো।
….ভাইয়া চা খায় না। ওর জন্য কফি করে আনো।

নূর মাথা ঝাকালো।

আবির বলে উঠলো।
…আমার জন্য কমলালেবুর চা।

আবিরের এমন উদ্ভট কথা শুনে, সবাই ভ্রু কুঁচকে তাকালো।

আবির বলে উঠলো।
…..কি হয়েছে? এভাবে দেখার কি আছে? এসব লিজেন্ডদের ব্যাপার স্যাপার বুজেছ? তোমাদের মাথায় এসব ঢুকবে না।

তানি বাঁকা হেসে বললো।
…আমরা ভাই নরমাল মানুষ, কোনো এলিয়েন না। তাই আমরা তো নরমাল চা খাবো।

সবার চায়ের অর্ডার শোনার পর নূর কিচেনে গেল চা বানাতে।

আবির তানির দিকে তাকিয়ে বললো।
….আপনি কি বলতে চাচ্ছেন?আমরা নরমাল না? আমরা এলিয়েন? আপনি কিন্তু আমাদের ইনসালাত করছেন।

আবিরের কথায় সবাই আবারও ভ্রু কুঁচকে আবিরের দিকে তাকালো।
সানা বলে উঠলো।
…ভাইয়া তুমি কি আজকাল চাচির কাছ থেকে ইংরেজির ক্লাস নিচ্ছো নাকি? এসব কি?

আবির বলে উঠলো।
….লিজেন্ড হয়েও এক মুশকিলে পরে গেছি। কেউ কিছু বুঝতেই চায় না।

আবিরের কথায় সবাই হেসে দিল।

আদিত্য সানার দিকে তাকিয়ে বললো।
….একটু বেশিই হয়ে যাচ্ছে না এসব? এখন এসব বন্ধ করা উচিৎ। নাহলে কিন্তু নূরের যে অবস্থা হয়েছে, যেকোনো সময় ও কেঁদে ফেলতে পারে।

সানা বলে উঠলো ।
…..আর একটু সময় প্লিজ ভাইয়া। দেখ তুমি আমাকে প্রমিজ করেছ তুমি আমার প্ল্যানে সাপোর্ট করবে। তানা হলে কিন্তু আমি এই বিয়ের বিরুদ্ধে অবরোধ করে বসবো।

আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
…..ওকে ওকে মেরি মা। তোকে প্রমিজ করেছি দেখেইতো চুপ করে বসে আছি আমি। তবে আর বেশিক্ষণ করিস না ঠিক আছে।?

তানি হেসে দিয়ে বললো।
…ঠিক আছে।

একটু পরে নূর সবার জন্য চা করে নিয়ে এলো। নূর চায়ের ট্রে টা টি টেবিলে রেখে সবাইকে যার যার চায়ের কাপ হাতে দিল। তারপর নূর যেয়ে আবার সোফায় বসে পড়লো।

সানা চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে, একটা ম্যাগনিফাইং গ্লাস বের করে, চায়ের কাপের ওপর ধরে ভালোকরে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো। মনে হচ্ছে চায়ের কাপের ভেতর থেকে কোনো রকেট সাইন্সের ফরমুলার খোঁজ করছে।

তাসির সানাকে টিজ করে বললো।
….মিস তানি, কাপের ভেতর কি কোনো গুপ্তধনের খোঁজ পেলেন নাকি? পেয়ে থাকলে আমাদেরও একটু জানাবেন প্লিজ। হা হা হা…

তাসিরের কথা শুনে সানা রাগ দেখিয়ে বললো।
….এটা কোন ধরনের ব্যাবহার মিস্টার তাসির? কখন থেকে দেখছি আপনি আমাদের ইনসাল্ট করে যাচ্ছেন। এভাবে চললে আমার মনে হয় না, এই বিয়েটা হবে। মেয়ের ভাই এমন হলে, বোন আর কতো ভালো হবে তা বোঝাই যাচ্ছে।
হয়ে
সানার কথা শুনে নূর চমকে উঠলো। বি বিয়ে হবে না? কথাটা ভাবতেই নূরের হাত পা অসাড় হয়ে আসছে। আদিত্যকে কি তাহলে ও হারিয়ে ফেলবে?

তাসির তেড়ে উঠে সানার সামনে আঙুল তুলে বললো।
….দেখুন আমার বোনের সম্বন্ধে একটাও বাজে কথা বলবেন না। আরে আপনি কি বিয়ে করাবেন না। আপনাদের মতো ফ্যামিলিতে আমিই আমার বোনকে বিয়ে দেবনা।

আবির এতক্ষণে তেড়ে উঠে বললো।
….এই এই কি বলতে চান আপনি? আমাদের মতো ফ্যামিলি মানে কি?

এবার তানি তেড়ে এসে আবিরের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বললো।
….আমি বলছি। আপনাদের মতো মানে হচ্ছে, আপনাদের মতো এলিয়েন দের সাথে আমরা আমাদের বোন বিয়ে দেবনা।

ব্যাচ্ শুরু হয়ে গেলো দুই পক্ষের ভেতর ওয়ার্ল্ড ওয়ার থ্রি।

এদের কান্ড দেখে আদিত্য চরম বিরক্ত। মনে মনে ভাবছে, এরা এতো ড্রামা কিভাবে করতে পারে?

নূর এসব আর সহ্য করতে পারলো না। মুখে হাত চেপে ধরে কেঁদে উঠলো।

আদিত্য এতক্ষণ চুপ করে থাকলেও, নূরের কান্না দেখে আর চুপ করে থাকতে পারলোনা আদিত্য। সোফা থেকে দ্রুত উঠে যেয়ে নূরের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে দুই হাতের মাঝে নূরের মুখটা ধরে বললো।
…..শুশশ শুশশ, এই পাগলি কাঁদছ কেন? কেদনা প্লিজ, দেখ ওরা সবাই মজা করছে। সত্যিই বলছি।

নূরের কান্না দেখে বাকি সবাইও চুপ হয়ে গেলো। মেয়েটা এতো ভয় পেয়ে যাবে ওরা বুঝতেই পারেনি।

নূর কান্নারত অবস্থায় বললো।
….তু তু তুমি মিথ্যে ব বলছো তাইনা? আ আমাকে ওরা প পছন্দ করেনি। তুমি আর আমাকে বিয়ে করবে না তাইনা?

আদিত্য নূরের চোখের পানি মুছে দিয়ে জড়িয়ে ধরে বললো
….সত্যিই বলছি আমি। ওরা শুধু মজা করছে তাছাড়া আর কিছুই না। আ্যাম সরি, আমিও ওদের মজাই সামিল হয়ে গিয়েছিলাম।
আদিত্য নূরকে ছেড়ে নিজের দুই কান ধরে অপরাধী সুরে বললো।
…..এই দেখো কান ধরছি, আর কখনও এমন করবোনা প্রাণপাখী । এবার কান্না বন্ধ করো প্লিজ।

নূর কান্না একটু থামিয়ে বললো।
…স সত্যিই বলছেন?

আদিত্য মুচকি হেসে মাথা ঝাকিয়ে বললো।
….হ্যাঁ প্রাণপাখী সত্যিই বলছি।

নূর খুশী হয়ে আদিত্যকে জড়িয়ে ধরে বললো।
…আ আমি অনেক ভয় পেয়ে গেছিলাম। ভেবেছিলাম তোমাকে বোধহয় হারিয়ে ফেলবো।

আদিত্য নূরের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো।
….আমি তোমাকে বলেছি না। আমি থাকতে তোমার কোনো ভয় নেই। আমাকে তোমার থেকে কেউ আলাদা করতে পারবে না।

এদের প্রেম দেখে সবাই একসাথে গালে দুই হাত দিয়ে বলে উঠলো।
….Awwwwwwww😱

নূরের এতক্ষণে হুঁশ আসলো। তড়িঘড়ি করে আদিত্যকে ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে বসলো। নূর সবার সামনে এভাবে প্রচুর লজ্জায় পরে গেলো।

আবির নেকি কান্না করে, তানির ওড়নার আচল নিয়ে মিছেমিছি চোখ মোছার অভিনয় করে বললো।
….বাচ্ কর পাগলে আব রুলায়েগা কেয়া? ইতনি খুশী,ইতনি খুশী, ইতনি খুশী মুঝে আজতাক নেহি মিলি।🤧🤧

আবিরের কথায় সবাই হেসে উটলো।

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here