ভালোবাসার চেয়েও বেশি 💞পর্ব-২৮

0
6648

#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-২৮

★ এ্যানি বিছানায় শুয়ে শুয়ে ফেসবুকের নিউজ ফিড স্ক্রোলিং করছিল। হঠাৎ একটা ছবিতে ওর চোখ আটকে যায়। এ্যানি ঠাস্ করে উঠে বসে। ভ্রু কুঁচকে তাকায় ছবিটার দিকে।

সানা ওর টাইমলাইনে কালকে ফার্মহাউসের কয়েকটা ছবি আপলোড করেছে। যেখানে সবাই মিলে খুব হাসি আনন্দ করছে। সানা ক্যাপশনে লিখেছে।

“celebrating big brother’s birthday, with family and friends. 🎉🎉”

এ্যানির রাগে শরীর জ্বলে যাচ্ছে। সবচেয়ে বেশি রাগ হচ্ছে নূরকে আদিত্যের সাথে দেখে। ছবিতে আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে আছে।
এ্যানি রাগে কটমট করতে করতে মোবাইলটা ঠাস করে একটা আছাড় মেরে নিচে ফেলে দিলো। দুহাত শক্ত করে মুঠ করে রাগে অস্থির হয়ে বিড়বিড় করে বললো।
…এটা তুমি একদম ঠিক করোনি আদি।একদম না।আমাকে রিজেক্ট করে ওই ক্ষ্যাত মার্কা মেয়েটাকে বেছে নিলে? কিন্তু আমি থাকতে তা কখনো হতে দেবনা। কখনো না। তুমি আমার না হলে অন্য কারোরও হতে পারবে না। ওই নূরকে আমি ছাড়বো না। কিছুতেই না। ওর এমন হাল করবো, যে তুমি নিজেই আর ওর চেহারা দেখতে চাইবে না। জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ্। বলেই এ্যানি একটা সয়তানি হাসি দিল।
————————————-

রাত ৮ টা

নূর বই নিয়ে বসে পরছে। হঠাৎ ওর ফোনটা বেজে উঠলো। নূর ফোন বের করে দেখলো তানি কল করেছে। নূর রিসিভ করে বললো।
…হ্যাঁ বল।

তানি একটু উৎসাহ নিয়ে বললো।
…নূর কাল আমাদের নবীন বরন উৎসব। আমার যে কি মজা লাগছে। আচ্ছা কাল তুই কি পরে যাবি?

….কি আবার পরবো? সবসময় যা পরি তাই পরবো।

…মানে? তুই কি কালও থ্রি পিচ পরে যাবি নাকি?

….হ্যাঁ। তো আর কি পরবো?

….কি পরবি মানে? শাড়ি পরবি। কাল সবাই শাড়ি পরেই আসবে। তাই আমরাও শাড়ি পরবো।

…কি বলছিস এসব? শাড়ী আর আমি? না না একদম না।তুই জানিস না? আমি ওসব শাড়ি টারি পরতে পারি না। আর এমনিতেও আমার কোনো শাড়ি নেই।

…আরে ফিকার নট। আমি আছি না। আমার কাছে অনেক শাড়ি আছে। সেখান থেকেই একটা পরলেই হবে। আমি সকালে তোর বাসায় এসে, নিজে তোকে শাড়ি পরিয়ে দেবো। তাহলে তো আর কোনো সমস্যা নেই তাইনা?

….কিন্তু এসবের কি দরকার? শাড়ি না পরলে কি এমন হবে?

….দেখ আমি কিছু শুনতে চাই না। তুই শাড়ি পরবি ব্যাচ্।নাহলে তোর সাথে আর কোনো কথা নেই হুহ্।

….হইছে হইছে, আর ইমোশনাল ব্লাক মেইল করতে হবে না। ঠিক আছে পরবো শাড়ী। হ্যাপি?

….মেলাগুলা হ্যাপি। উম্মাহ্। ঠিক আছে তাহলে কাল দেখা হচ্ছে বায়।

নূরও মুচকি হেসে বললো।
…বায়।

সকাল ৭ টা
তানি ওর কথামতো সকাল সকাল চলে এসেছে নূরের বাসায়। নীল কালারের একটা শাড়ী নূরকে দেখিয়ে বললো।
…এই শাড়িটা তুই পরবি। দেখতো তোর পছন্দ হয় কিনা?

নূর শাড়িটা হাতে নিয়ে দেখে বললো।
…শাড়িতো সুন্দর, কিন্তু এটাতো নতুন মনে হচ্ছে।

তানি একটু অপ্রস্তুত হয়ে বললো।
….কি কিকি বলছিস?নতুন হতে যাবে কেন? এটাতো অনেক দিন আগের শাড়ী। আসলে হয়েছে কি,এই শাড়িটা বেশি পড়া হয়নি তো তাই নতুন মনে হচ্ছে। তুই এখন বেশি কথা না বলে ব্লাউজ আর পেটিকোট পরে আয়। তারপর আমি শাড়ি পরিয়ে দিচ্ছি।

নূর আর কিছু না বলে মাথা ঝাকিয়ে ওয়াশরুমে গেল চেঞ্জ করতে।
নূর বেরিয়ে আসলে তানি ওকে সুন্দর করে শাড়িটা পরিয়ে দেয়। তারপর ওকে নিয়ে বেডে বসিয়ে দিয়ে, নিজের সাথে আনা বক্সটা বের করলো।
মেক আপ বক্স বের করা দেখে নূর ছিটকে উঠে বললো।
…এই এই এসব আবার কি? দেখ তোর কথামতো আমি শাড়িটা পরে নিয়েছি। তাই বলে এখন কি এসব আটা ময়দাও মাখাবি নাকি? আমি কিন্তু এসব একদম মাখবো না বলে দিলাম।

তানি হালকা রাগ দেখিয়ে বললো।
…এই তুই এমন বাচ্চাদের মতো করছিস কেন বলতো? শাড়ির সাথে একটু না সাজলে হয়। আর আমি কি তোকে পার্লারের মতো এতো এতো মেকআপ দিব নাকি? আমিতো জাস্ট সাধারণ ভাবে একটু সাজিয়ে দিবো। বাকিতো তুই এমনিতেই মাশাল্লা খুব সুন্দর আছিস। এখন চুপচাপ এখানে লক্ষী মেয়ের মতো বস।

বেচারি নূর আর কোনো উপায় না পেয়ে তানির সামনে যেয়ে বসলো। আর তানি ওকে সাজাতে লাগলো। মুখে একটু ফেস পাউডার দিয়ে চোখে আইলাইনার আর কাজল দিয়ে দিলো। তারপর ঠোঁটে হালকা লিপস্টিপ দিয়ে দিলো। মাথায় শাড়ির সাথে ম্যাচ করে একটা নীল ফ্যাশনেবল হিজাব সুন্দর করে বেধে দিল।
নূরকে সাজাতে সাজাতে তানি মুচকি হেসে মনে মনে ভাবছে, আমি জানি আজ আদিত্য ভাইয়া তোকে প্রপোজ করবে। আবির আমাকে বলেছে। তাই তো তোকে এতো সুন্দর করে সাজাচ্ছি। যাতে ভাইয়া আজ তোকে দেখে একদম পাগল হয়ে যায়।

একটু পরে সাজানো শেষ হলে তানি নিজের দুই হাত গালে রেখে এত্তো বড়ো হা হয়ে তাকিয়ে রইলো নূরের দিকে।

নূর তানির দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বললো।
…কিরে এভাবে হা করে তাকিয়ে আছিস কেন? নিশ্চয় আমাকে দেখতে খারাপ লাগছে তাইনা? তোকে বলেছিলাম এসব করার দরকার নেই। এখন দেখলিতো কেমন পচা লাগছে।
কথাগুলো বলে নূর মুখ ছোট করে বসে রইলো।

তানি একটু হেসে বলে উঠলো।
…হ্যাঁ তুই ঠিকই বলেছিস। তোকে এভাবে সাজানো একদম ঠিক হয়নি।

তানির কথা শুনে নূরের মনটা সত্যি সত্যিই খারাপ হয়ে গেলো। ওকে কি দেখতে এতটাই খারাপ লাগছে?

হঠাৎ তানি উৎসাহ নিয়ে বলে উঠলো।
…..কারণ তোকে এতো সুন্দর লাগছে যে আজ সব ছেলেরা হার্ট অ্যাটাক করে মরেই যাবে। আরে আমিতো মেয়ে হয়েই তোর উপর ক্রাশ খেলাম।

নূর একটু লাজুক হেসে বললো।
…হয়েছে। তুই একটু বেশিই বাড়িয়ে বলছিস।

….বাড়িয়ে বলছি কি কম করে বলছি, সেটা আজ ক্যাম্পাসে গেলেই বুঝতে পারবি। এখন চল যাওয়া যাক।

তারপর দুজন বেড়িয়ে পড়লো। একটু পর গলির মোরে আসতেই নূর আদিত্যের গাড়ী দেখতে পেল। কিন্তু গাড়িতে আবারও সেই ড্রাইভার লোকটাকে দেখতে পেল। নূর মনে মনে ভাবলো, উনি কি আজ আসবেন না? হঠাৎ ওর ফোনে একটা ম্যাসেজ আসলো। নূর ফোন বের করে দেখলো আদিত্যের ম্যাসেজ।

“আমি ক্যাম্পাসের কাজে একটু ব্যাস্ত আছি। তুমি ড্রাইভারের সাথে চলে আসো। আমি এখানেই আছি”

নূর মনে মনে খুশী হলো। তারমানে উনি ক্যাম্পাসে আছে। তারপর দুজন গাড়িতে উঠে ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে গেল।
————————————–

আদিত্য, আবির আর তাসির তিনজনই আজ খুবই ব্যাস্ত। নবীন বরণ উৎসবের দেখাশোনার দায়িত্ব ওদের দেওয়া হয়েছে তাই। আদিত্য অবশ্য এসব কখনোই করতো না।যদি প্রিন্সিপাল সার ওকে রিকুয়েষ্ট না করতো। আদিত্য যতো বড়ো আকারের মানুষ হোক না কেন। ক্যাম্পাসে ও নিজেকে বাকিসব সাধারণ স্টুডেন্টদের মতোই মনে করে। তাই প্রিন্সিপাল সার কিছু বললে সেটা মানা করতে পারে না।

তাসির স্টেজের কাজ দেখাশোনা করছিল। হঠাৎ ওর পেছন থেকে মেয়েলি কন্ঠে কেউ ডাক দিল।

….উহহুম, উহহুম। এইযে শুনছেন?

তাসির পেছনে ফিরে তাকাতেই ওর মাথা ঘুরে উঠলো। এ কাকে দেখছে ও? মনে হচ্ছে কোনো পরী।
সামনে সানা দাঁড়িয়ে আছে। পরনে পিংক কালারের শাড়ি। চুলগুলো ছেড়ে দেওয়া। দেখতে কি অপরুপ সুন্দর লাগছে। তাসির হা করে তাকিয়ে আছে সানার দিকে। মনে মনে ভাবছে, পিচ্চিটাকে আজ যেন ছোট মনে হচ্ছে না। শাড়িতে ওকে কোনো আবেদনময়ী পূর্ণ যুবতী মেয়ে মনে হচ্ছে।

তাসিরের এভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে সানা নিচের ঠোঁট কামড়ে হাসলো। তারপর হাত দুটো একটু উঁচু করে গোল গোল ঘুরে তাসিরকে দেখিয়ে বললো ।
….আমাকে কেমন লাগছে বলেনতো?

সানা হাত উঁচু করায় পেটের কাছ থেকে শাড়িটা একটু সরে গেল। আর তাসিরের নজর যেয়ে পড়লো সানার মেদহীন পেটে। সাথে সাথেই তাসিরের কাশি উঠে গেলো। তাসির এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলো কেউ দেখছে কি না? তারপর কোনরকমে কাশি থামিয়ে আমতা আমতা করে বললো।
….তু তুতুমি এখানে কি করছো?

সানা গাঢ় লিপস্টিপ দেওয়া ঠোঁটে অমায়িক একটা হাসি দিয়ে বললো।
…..কি করছি মানে? নবীন বরন উৎসবে এসেছি। তানি আর নূর আপু আমাকে আসতে বলেছে। বায়দা ওয়ে আপনি বললেন নাতো আমাকে কেমন লাগছে দেখছে।?

তাসির বেচারা কি বলবে? সানাকে এই রুপে দেখে ওর ভেতরে হায় হুতাশ শুরু হয়ে গেছে। কোনরকমে জোরপূর্বক একটা হাসি দিয়ে বললো।
…ভা ভালো লাগছে। আচ্ছা আমি একটু আসছি। আমার কাজ আছে।
কথাটা বলেই তাসির ওখান থেকে তড়িঘড়ি করে চলে গেলো।

সানা বাঁকা হেসে মনে মনে বললো। এইটুকুতেই আপনার এই অবস্থা? আগে আগে দেখ, হোতাহে কেয়া?

নূর আর তানি ক্যাম্পাসে ঢুকতেই অবাক হয়ে গেল।পুরো ক্যাম্পাসকে যেন নতুন বউয়ের মতো সাজানো হয়েছে। কি সুন্দর লাগছে দেখতে। নূর আর তানি মুগ্ধ হয়ে চারিদিকে ঘুরে ঘুরে দেখছে। নূরের চোখ দুটো শুধু আদিত্যকে খুঁজছে। নূর এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখতে লাগলো। হঠাৎ মাঠের একপাশে চোখ যেতেই কাঙ্খিত মানুষটিকে দেখতে পেল নূর। তাকে দেখে নূরের মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো। নূর খেয়াল করলো আদিত্যও আজ একটা নীল পাঞ্জাবি পরেছে। এই প্রথম আদিত্যকে পাঞ্জাবিতে দেখছে। আজতো মনে হয় শুধু হ্যান্ডসাম বললেও কম হবে। মারাত্মক ভয়ংকর রকমের হ্যান্ডসাম লাগছে। হঠাৎ তানির কথায় নূরের ঘোর কাটলো।

….ওইযে দেখ ওখানে আদিত্য ভাইয়ারা আছে। চল ওখানে যাই। কথাটা বলেই নূর আর তানি আদিত্যের দিকে যেতে লাগলো। যতো এগিয়ে যাচ্ছে নূরের হার্টবিট ততই জোরে জোরে বাড়ছে।

আদিত্য ফোনে কাউকে কাজের ইন্সট্রাকশন দিচ্ছে। আবিরও পাশে দাঁড়িয়ে আছে। আদিত্য ফোনে কথা বলতে বলতে সামনে তাকাতেই ওর নজর ওখানেই আটকে স্তব্ধ হয়ে যায়। সাথে সাথে হার্টবিট কয়টা মিস হয়ে যায় আদিত্যের। মূহুর্তেই আশেপাশের সবকিছু যেন ঘোলাটে হয়ে গেল। মস্তিষ্ক পুরো ব্লাঙ্ক হয়ে গেলো। কি করছে কোথায় আছে কোনো হুশ নেই আদিত্যের। আশেপাশে কাওকে দেখতে পাচ্ছে না, কারো কথা শুনতে পাচ্ছে না। মুগ্ধ অপলক নয়নে তাকিয়ে শুধু সামনে থেকে আসা এক অপ্সরিকে দেখছে। হ্যাঁ এতো কোনো পরী বা অপ্সরিই হবে। মানুষ কখনো এতো সুন্দর হতেই পারে না। আদিত্য এতোটাই হারিয়ে গেছে যে ওর হাত থেকে ফোনটাও পরে যায়। ভাগ্যিস আবির সেটা দেখতে পেয়ে তাড়াতাড়ি দুই হাত দিয়ে নিচে ধরে ক্যাচ করে নিয়েছে। নাহলে বেচারা ফোন আজকেই অক্কা পেত।

নূর এতক্ষণে আদিত্যের কাছে চলে আসে। আদিত্যকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে নূরের ভীষণ লজ্জা লাগে। নূর লজ্জায় একবার নিচের দিকে তো একবার এদিক ওদিক তাকাতে থাকে। কিন্তু আদিত্যের সেদিকে কোনো হুশ নেই। সেতো মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাকিয়ে আছেতো আছেই।
আদিত্যের অবস্থা দেখে তানি আর আবির মিটিমিটি হাসছে। আবির দুষ্টু হেসে একটু গলা খাঁকারি দিল।
….উহুম উহুম।

নাহ্ তাতেও কোনো রিয়াকশন নাই।আদিত্য এখনো একইভাবে নূরের দিকে তাকিয়ে আছে।
একটু পরে হঠাৎ একটা ছেলে ওখানে এসে আদিত্যের উদ্দেশ্যে বললো।
….ভাই আর দুই মিনিটের ভেতরেই প্রধান অতিথি চলে আসবে। উনাকে কিভাবে ওয়েলকাম করবো?

আদিত্য এখনো ওভাবেই নূরের দিকে তাকিয়ে আছে। ছেলেটার কথা যেন ওর কানেই যায়নি। ছেলেটা আবার বলে উঠলো।
….ভাই শুনতে পাচ্ছেন?

আদিত্যের সেম রিয়াকশন। নূর আরো লজ্জায় মিয়িয়ে যাচ্ছে।
আবির এবার না পেরে আদিত্যর কাঁধ ঝাকিয়ে একটু উচ্চস্বরে বলে উঠলো।
….ভাইইইই।

আদিত্য এবার বাস্তবে ফিরলো। একটু হকচকিয়ে উঠে এদিক ওদিক তাকিয়ে অপ্রস্তুত ভাবে বললো।
….হুম? হ্যাঁ? হ্যাঁ হ্যাঁ কি হয়েছে? বল?

ছেলেটা আবার বলে উঠলো।
…ভাই প্রধান অতিথি চলে আসছে। এখন কি করবো?

আদিত্যর ঘোর এখনো পুরোপুরি কাটেনি। আদিত্য ঘোরের মাঝেই বলে উঠলো।
…তো এতে জিজ্ঞেস করার কি আছে? ফুলকে অতিথি দিয়ে বরণ করো।

আদিত্যের কথায় সবার মাথার উপর যেন কাকের কা কা শব্দ হলো। সবাই হ্যাবলার মতো হা করে তাকিয়ে রইলো।
ছেলেটা কনফিউজ মুখ করে আবার বললো।
…কি কন ভাই এগ্লা?

আদিত্য আবার বললো।
….মানে, বরণকে ফুল দিয়ে অতিথি করো।

আদিত্যের এমন আবোলতাবোল কথায় , বেচারা ছেলেটার এবার অজ্ঞান হবার উপক্রম।
নূর আর তানি অনেক কষ্টে নিজেদের হাসি চেপে রেখেছে।
আবির আদিত্যের অবস্থা বুঝতে পেরে ছেলেটার উদ্দেশ্যে বললো।
…আরে অথিতিকে ফুল দিয়ে বরণ করো। এটাও কি আবার বলতে হয় নাকি? যাও এখন।

ছেলেটা মাথা ঝাকিয়ে চলে গেলো ওখান থেকে।
আবির আদিত্যের কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো।
…কি করছিস ভাই? প্রেস্টিজ কি সব পানচার করে দিবি নাকি? কমেডি করার জন্য তো লেখিকা আপু আমাকে রেখেছেন। তাহলে তুই কেন কমেডি করছিস?

আবিরের কথায় আদিত্য থতমত খেয়ে গেল। এদিক ওদিক তাকিয়ে গলা খাঁকারি দিয়ে বললো।
….আ আমি একটু স্টেজের দিকে যাচ্ছি। বলেই তাড়াহুড়ো করে ওখান থেকে চলে যায়।
কিছুদূর যেতেই আবির পেছন থেকে ডাক দিয়ে বললো।
….ভাই কোথায় যাচ্ছিস?

আদিত্য আবিরের দিকে তাকিয়ে বললো।
…বললাম না স্টেজের দিকে যাচ্ছি।

আবির উল্টো দিকে দেখিয়ে বললো।
…স্টেজতো এই দিকে তুই ওদিকে কোথায় যাচ্ছিস?

আদিত্য আবারও থতমত খেয়ে গেল। কি বলবে এখন ও? আসলে নূরকে এই রুপে দেখে ওর মাথায় নষ্ট হয়ে গেছে। কি করছে কোথায় যাচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না। আদিত্য কোনরকমে বললো।
…আ আমি একটু ওয়াসরুমে যাবো। তাই এদিকে যাচ্ছি। কথাটা বলেই আদিত্য একমূহুর্তও দেরি না করে ওখান থেকে চলে গেলো। এখন ওর সত্যি সত্যিই একটু ফ্রেশ হওয়া দরকার। নাহলে নিজের মাইন্ডকে কিছুতেই শান্ত করতে পারবে না।

আদিত্য চলে যেতেই আবির আর তানি হো হো করে হেসে ওঠে। আদিত্যের এমন করুন অবস্থা আগে কখনো দেখেনি ওরা।
নূর নিচের দিকে তাকিয়ে লাজুক হাসছে।
একটু পরে সানাও ওদের কাছে চলে এলো। নূরকে দেখে সানা অবাক হয়ে বললো।
…ওয়াও আপু কি সুন্দর লাগছে। মাশাল্লাহ্।

নূর মুচকি হেসে বললো তোমাকেও খুব সুন্দর লাগছে।

দূর থেকে এসব দেখে এ্যানি রাগে ফুলছে। সয়তানি হেসে মনে মনে বলছে। যতো হাসার এখনি হেসে নে নূর । আজকের পরে হাসাতো দূরের কথা নিজের মুখটাও কাওকে দেখাতে পারবি না। শুধু কিছু সময়ের অপেক্ষা। তারপর দেখ আমি কি করি?

বিশ মিনিট হয়ে গেলো আদিত্য এখনো আসছে না। এদিকে একটু পরেই আদিত্যকে স্টেজে ডাকা হবে গানের জন্য। তাসির আবিরের দিকে তাকিয়ে বললো।
…..আদি এখনো আসছে না কেন? আর ফোনও ধরছে না।একটু পরেই তো ওকে ডাকা হবে।

আবির বললো।
…আরে ওতো বললো ওয়াসরুমে যাচ্ছে । তারপর তো আসেই নি।
আবির কিছু একটা ভেবে নূরকে বললো।
….নূর তুমি প্লিজ আদিত্যকে একটু ডেকে আনতে পারবে? আসলে আমাদের এখানকার সবকিছু দেখাশোনা করতে হচ্ছে। তাই আমরা যেতে পারছি না। তুমি একটু যাবে প্লিজ?

নূর অপ্রস্তত ভাবে বললো।
…আ আমি?

….হ্যাঁ তুমি। যাবে প্লিজ?

…..কি কিন্তু আমি ওনাকে কোথায় খুজবো?

আবির হাত দিয়ে ইশারা করে দেখিয়ে বললো।
….আরে ভাই মিউজিক রুমের ওইদিকে গেছে। তুমি গেলেই পেয়ে যাবে।

নূর মাথা ঝাকিয়ে তানির দিকে তাকিয়ে বললো।
….তুইও চলনা আমার সাথে।

আবির তানির দিকে তাকিয়ে চোখ দিয়ে ইশারা করে যেতে মানা করলো।তানি বুঝতে পেরে নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
….নূর আমার শাড়িটা কেমন যেন হয়ে গেছে। আমি সানাকে নিয়ে যাচ্ছি ওটা ঠিক করতে। তুই একাই যা। এখান থেকে এখানেই তো। কোনো সমস্যা হবে না।

নূর আর উপায় না পেয়ে অগত্যা একাই গেল।
নূর ক্যাম্পাসের বারান্দা দিয়ে হেটে মিউজিক রুমের দিকে যাচ্ছে। সবাই এখন স্টেজের সামনে থাকায় এদিকে তেমন লোকজন নেই।
নূরের হালকা ভয় লাগছে। হঠাৎ একটা ফাঁকা ক্লাসের দরজা দিয়ে কেউ নূরের হাতটা ধরে হ্যাঁচকা টান দিয়ে ভেতরে নিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো।
আচমকা এমন হওয়ায় নূরের ভয়ে আত্মা বেড়িয়ে যাওয়ার উপক্রম। চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফ্রীজড হয়ে রইলো। হঠাৎ নূর ওর কানে আর ঘাড়ে কারোর গরম নিঃশ্বাসের উপলব্ধি করলো। সামনে থাকা মানুষটার শরীর থেকে একটা মাতাল করা ঘ্রাণ ওর নাকে এসে লাগলো। নূরের মনে হলো এই ঘ্রাণটা পরিচিত। মনে হচ্ছে আগেও কোথায় যেন এই ঘ্রাণটা পেয়েছে ও। নূর একটু সাহস নিয়ে সামনের ব্যাক্তিকে দেখার জন্য পিটপিট করে চোখ দুটো খুললো। চোখ খুলে সামনের ব্যাক্তিকে দেখে নূরের চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো। এটাতো আদিত্য!
নূরের ভয় অনেকটা কমে আসলো।মনে মনে ভাবলো উনি আমাকে এভাবে এখানে কেন আনলো? নূর খেয়াল করলো আদিত্য কেমন জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলছে। ওনাকে অনেকটা অশান্ত লাগছে। কেমন জানি এলোমেলো আর উন্মাদ লাগছে। নূর কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠলো।
…কি কিকি হয়েছে আ আপনার? এ এএমন করছেন কেন?

আদিত্য নূরের দুই হাতের আঙুলের ভেতর নিজের দুই হাতের আঙুল ঢুকিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে রেখেছে। নিজের মাথাটা ঝুকিয়ে নূরের মাথার পাশে হিজাবের ওপর দিয়েই নাক ঘষে নেশা ভরা মাতাল কন্ঠে আদিত্য বলে উঠলো।
….তোমার এই রুপে আমার সামনে আসা একদম ঠিক হয়নি নূর।একদম না। এখন আমি কি করবো? আমি যে কিছুতেই নিজেকে সামলাতে পারছি না নূর। পাগল হয়ে যাচ্ছি। কোনো কিছুতে কন্সেন্ট্রেট করতে পারছি না। আই এ্যাম গোয়িং ক্রেজি নূর।আই কান্ট কন্ট্রোল মাইসেল্ফ। প্লিজ হেল্প মি নূর। আমি এখনি কোনো ভুল করতে চাচ্ছি না নূর। প্লিজ হেল্প মি টু হোল্ড মাইসেল্ফ প্লিজ।

আদিত্যের কথা সব নূরের মাথার উপর দিয়ে বাউন্সার যাচ্ছে। ও কিছুই বুঝতে পারছে না। তবে এটুকু বুঝতে পারছে যে আদিত্য ভেতরে ভেতরে অনেক অশান্ত হয়ে আছে। নূর মনে মনে ভাবছে, উনিতো নিজেকে শান্ত করার জন্য আমার কাছে হেল্প চাচ্ছে। কিন্তু আমি করবো? আর কিভাবে ওনাকে শান্ত করবো? নূর একটু চিন্তা করলো। হঠাৎ কিছু একটা মনে আসতেই নূর বলে উঠলো।
….আ আমার হাতটা ছাড়বেন প্লিজ?

নূরের কথায় আদিত্য একটু হতাশ হলো। মনে মনে ভাবলো মেয়েটা কি আমার কাছে থাকাতে বিরক্ত হচ্ছে? আদিত্য ধীরে ধীরে নূরের হাতটা ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো।

আদিত্য হাত ছেড়ে দিতেই নূর কোনো কিছু না ভেবে ফট করে আদিত্যকে জড়িয়ে ধরলো।

আচমকা এমন হওয়ায় আদিত্য প্রথমে প্রচুর অবাক হয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর আদিত্য ঠোটে একটা তৃপ্তির হাসি দিয়ে সেও দুহাত নূরের পিঠে রেখে নূরকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরলো। আদিত্য চোখ বন্ধ করে নূরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে হিজাবের ওপর দিয়ে নূরের ঘাড়ে নাক ডুবিয়ে নূরের শরীরের ঘ্রাণ নিতে থাকলো।
আদিত্যের গরম নিঃশ্বাস ঘাড়ে পড়তেই নূরের সারা শরীরে কাটা দিয়ে উঠলো। নূর আদিত্যর পিঠের পাঞ্জাবি দু’হাতে খামচে ধরলো।
আদিত্য মাথা উঠিয়ে হিজাবের উপর দিয়ে নূরের মাথার একপাশে আলতো করে চুমু খেল।
হিজাব থাকায় নূর সেটা বুঝতে পারলো না।

নূরের এই পদ্ধতিটা কাজে লাগলো। নূরের ছোয়ায় ধীরে ধীরে আদিত্যর অশান্ত মনটা অনেকটা শান্ত হয়ে গেলো। হঠাৎ আদিত্যের ফোন বেজে ওঠায় দুজনেরই ঘোর কাটলো। আদিত্য মনে মনে চরম বিরক্ত হলো। এমন একটা মূহুর্তে কে ফোন দিয়ে ডিস্টার্ব করছে?
নূর ধীরে ধীরে আদিত্যের পিঠ থেকে হাত সরিয়ে আনে। আদিত্যও বুঝতে পেরে নূরকে ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায়।
নূর তখন ওভাবে জড়িয়ে ধরলেও, এখন লজ্জায় আর আদিত্যর দিকে তাকাতেই পারছে না। মাথা নিচু করে মাটির দিকে তাকিয়ে আছে।
আদিত্য ব্যাপারটা বুঝতে পেরে মুচকি হেসে বললো।
….চলো স্টেজের কাছে কাছে যাই। আমাকে এখন পারফর্ম করতে হবে।

নূর মাথা নিচু করেই ঝাকালো।
আদিত্য নূরের হাত ধরে বাইরে বেড়িয়ে এলো।
নূর এখনো মাথা নিচু করেই হেটে যাচ্ছে।
আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে মনে মনে বললো। আর মাত্র কিছু সময় নূরপাখি, আমার পারফরম্যান্স শেষ হলেই তোমাকে আমার মনের কথা বলে দেব। তোমার জন্য অনেক বড়ো সারপ্রাইজ আছে নূরপাখি। শুধু একটু অপেক্ষা করো।

একটু পরে ওরা দুজন স্টেজের সামনে চলে আসলো। এবং সাথে সাথেই আদিত্যর ডাক স্টেজে পারফরম্যান্সের জন্য। আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
….তুমি বাকি সবার কাছে যেয়ে বসো। আমি একটু পরেই চলে আসবো।
নূর মাথা ঝাকিয়ে সায় জানালো।
আদিত্য নূরকে রেখে স্টেজে গেল পারফর্ম করতে।

নূর সামনে চেয়ে দেখলো তানিরা যেখানে বসে আছে সেখানে কোনো সিট খালি নেই। আর আশেপাশে প্রচুর ভীড়। তাই ওদের কাছে যাওয়াও সম্ভব না। আসলে সবাই আদিত্যের গান শোনার জন্য ভীড় জমিয়েছে। নূর আর উপায় না পেয়ে পিছনের দিকে একটা সিটে বসে পড়লো।

আদিত্য স্টেজে উঠে একটা উচু চেয়ারে বসে গিটার গলায় ঝুলিয়ে গান গাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিল। আদিত্য তানিদের দিকে তাকিয়ে নূরকে ওখানে না দেখে ভ্রু কুঁচকে এদিক ওদিক তাকিয়ে নূরকে খুজতে লাগলো। পেছনের দিকে নজর যেতেই আদিত্য দেখতে পেল নূর একদম পেছনের দিকে বসে আছে। আদিত্য একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। তারপর মুচকি হেসে গাওয়া শুরু করলো।

♬ ♬ ♬ হে হামনাভা মুঝে ♬ ♩
আপনা বানা লে
সুখি পাড়ি দিল কি ইস
জামি কো ভিগা দে

হুমম…হু আকেলা, যারা
হাত বারা দে
সুখিঁ পাড়ি দিল কি ইস
জামি কো ভিগা দে

কাবসে মে দার দার ফির রাহা
মুসাফির দিল কো পানা দে
তু আওয়ারিগি কো মেরি
৷ আজ ঠেহরা দে

হো সাকে তো থোড়া পেয়ার
জাতা দে
সুখী পাড়ি দিল কি ইস
জামি কো ভিগা দে

মুরঝাইছি শাখ পে দিল কি
ফুল খিলতে হে কিউ
বাত গুলো কি জিকড় মেহেক কা
আচ্ছা লাগতা হে কিউ
উন রঙ্গোছে তুনে মিলায়া
জিনছে কাভি মে মিল না পায়া

দিল কারতা হে তেরা শুকরিয়া
ফির সে বাহারে তু লা দে

দিল কা সুনা বানজার মেহকা দে
সুখী পাড়ি দিল কি ইস
জামি কো ভিগা দে

হমম…হু আকেলা যারা
হাত বারা দে
সুখী পারি দিল কি ইস
জামি কো ভিগা দে

ওয়াসে তো মওসম গুজরে হে
জিন্দেগী মে কায়ই
পার আব না জানে
কিউ মুঝে বো
লাগরে হে হাসি

তেরে আনে পার জানা মে এ
কাহি না কাহি জিন্দা হু মে
জিনে লাগা হু মে
আব এ ফিজায়ে
চেহরে কো ছুতি হাওয়ায়ে

ইনকি তারাহ দো কদম তো
বারাহ দে
সুখী পারি দিল কি ইস
জামি কো ভিগা দে

হুমম…হু আকেলা জারা
হাত বারাহ দে
সুখী পাড়ি দিল কি ইস
জামি কো ভিগা দে ♬ ♬
(গানটা লেখিকার খুব পছন্দের)

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here