#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি 💞💞
#লেখিকা- Mehruma Nurr
# পর্ব-৪৭
★পুরো ফার্মহাউস আজ নতুন বধূর সাজে সজ্জিত করা হয়েছে। চারিদিকে নানা রকমের ফুল আর ফেইরি লাইট দ্বারা সাজানো হয়েছে। পুলের পাশে একটা স্টেজ করা হয়েছে। স্টেজের সাথে বড়ো বড়ো জরির অক্ষরে লেখা আছে, নূর আর আদিত্যর গায়ে হলুদ।
ফার্মহাউস জুড়ে মানুষের সমাগম। বাচ্চা কাচ্চারা এদিক ওদিক ছোটাছুটি করছে। সবার মাঝেই খুশির আমেজ বিরাজ করছে। করবেই না বা কেন? বাড়ির বড়ো ছেলের বিয়ে বলে কথা।
এতকিছুর মাঝে আদিত্যর মেজাজ টা চরম খারাপ হয়ে আছে। কারণ আজ দুদিন হয়ে আসলো আদিত্য ওর নূরপাখির সাথে দেখা করতে পারেনি। ওর সাথে কথাও বলতে পারে নি।
বাড়ির মুরব্বিরা বলেছে হলুদের আগে নাকি বর কনের দেখা করা ঠিক না। আদিত্য যদিও এসব মানে না,তবুও ও কিছু করতেও পারছে না। কারণ ওর ওপর সবসময় কয়েক জোড়া শকুনের চোখ গেড়ে বসে থাকে। যেমন এখনও ওর সামনে বিনা বেতনের বডিগার্ডের মতো দাঁত কেলিয়ে বসে আছে সবগুলো। এদের জন্যই আজ এক বাসায় থেকেও, আমি আমার প্রাণপাখীকে একনজর দেখতেও পারছি না। ইচ্ছে তো করছে সবগুলোকে পানিতে চোবাতে।
এসব ভেবে আদিত্য চোখ গরম করে ওদের দিকে তাকালো।
আবির জোরপূর্বক একটা হাসি দিয়ে বললো।
….এমনে তাকাছ ক্যা? আমাদের কি দোষ? আমরা কি নিজের ইচ্ছাই এসব করছি নাকি?বড়োরা আমাদের যেটা করতে বলেছে, আমরা সেটাই করছি। তুই তো জানিসই, আমি আবার ময় মুরব্বিদের কথা একদম বাধ্য ছেলের মতো পালন করি? হে হে
আদিত্য দাঁতে দাঁত চেপে বললো।
….হুম হুম, তাতো আমি ভালো করেই জানি। তুই কতো বাধ্য ছেলে। ব্যাপার না ব্যাটা, সময় আমারও আসবে। তখন আমিও দেখবো, তুই কতো বাধ্য ছেলে হতে পারিস? তোদের সবকয়টাকেই দেখে নেব।
সায়েম বলে উঠলো।
…..ব্রো তুমি তো এমন ভাব করছো, যেন তুমি কতশত বছর ভাবিকে দেখনা। আরে, মাত্র দুই দিনই হচ্ছে। এতেই এতো ডেস্পারেট হওয়ার কি আছে? বি এ্যা ম্যান ব্রো।
তাসির বলে উঠলো।
…আরে রাগ করছিস কেন? আর কিছুক্ষণ পরে এমনিতেই নূরকে দেখতে পাবি। এখন মুড নষ্ট না করে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিচে চল।
আদিত্য আর কিছু না বলে মাথা ঝাকিয়ে রেডি হতে লাগলো। নূরকে দেখার জন্য আদিত্যের পরাণ পাখি ছটফট করছে।
সানা আর তানি নূরকে হলুদের জন্য রেডি করছে। নূরও মনে মনে আদিত্যকে অনেক মিস করছে। নূরের চারিদিকেও বডিগার্ড দিয়ে ঘেরা। এমনকি নূরের ফোনটাও ওরা নিয়ে নিয়েছে। যার জন্য আদিত্যর সাথে একটু কথাও বলতে পারছে না। আদিত্যকে দেখার জন্য ওর মনটাও খুব ছটফট করছে।
নূরকে এভাবে মুখ ছোট করে বসে থাকতে দেখে তানি সানার কাঁধে হালকা ধাক্কা মেরে চোখের ইশারায় নূরকে দেখালো।
সানা সেটা দেখে দুষ্টু হেসে গেয়ে উঠলো।
♬ ♬ ♬ চার দিনোদা পিয়ার ও রাব্বা
বাড়ি লাম্বি জুদায়ই,
লাম্বি জুদায়ই,,,,,,,
সানার গান শুনে নূর লজ্জায় পরে গেলো।
তানি দুষ্টু হেসে বললো।
….ভাভাগো ভাভা, কি পেরেম? ভাবা যায় এল্লা? মাত্র একদিন জিজুকে না দেখে আমাদের নূর রানীর যেন, রাতের ঘুম আর দিনের শান্তি হারাম হয়ে গেছে।
তানির কথায় সানা হেসে দিল। নূর আমতা আমতা করে বললো।
….এ এমন কিছুই না। তোরা শুধু শুধু বেশী বুঝছিস।
…..হুম হুম সবই জানি। এখন আর এতো সাধু সাজতে হবে না। তাড়াতাড়ি রেডি হন।তারপর নিচে যেয়ে আপনার দিলের জান, পরানের পরান, সোয়ামীর চাঁদ মুখের দর্শন কইরেন।
কথাটা বলেই তানি আর সানা দুজনেই হাসতে লাগলো।
আর নূর তো লজ্জায় শেষ।
নূরকে সাজানো শেষ হলে, তানি সানার দিকে তাকিয়ে বললো।
….তুমি নূরের কাছে থাকো।আমি বাইরের সিচুয়েশন দেখে আসি।
সানা মাথা ঝাকিয়ে বললো।
…..ঠিক আছে।
———
তানি সিরি বেয়ে নিচে নামছিল,তখনই সামনে থেকে আবির আসছিল। তানিকে নামতে দেখে আবির তানির দিকে তাকিয়ে হা হয়ে গেলো। হলুদ শাড়িতে তানিকে অনেক সুন্দর লাগছে।
আবির তানির কাছে এসে দুষ্টু হেসে বুকের বাম পাশে হাত রেখে বললো।
…..হায় মে মারজাভা।জানেমন আজতো তোমার কিউটনেস ওভারলোড হয়ে গেছে। আমার তো ভয় করছে, কারোর নজর না লেগে যায় আমার কিউটির উপর।
তানি মনে মনে খুশী হলেও, উপরে সেবা বুঝতে না দিয়ে, এটিটিউডের সাথে বললো।
…..এক্সকিউজ, হু ইজ ইউর জানেমন? আর ইউ টকিং টু মি? এন্ড বায়দা ওয়ে হু আর ইউ?
তানির কথায় আবির ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। ভ্র কুঁচকে বললো।
….কি বলছো এসব কিউটি? আমাকে চিনছ না?
তানি একটু চিন্তা করার ভাব ধরে বললো।
…..উমম,,,,, ইয়েস, মনে পরেছে। আপনি তো আমাদের হ্যান্ডসাম জিজুর সেই আউট অফ ফোকাস ভাইটা না?
…ওয়াট্?
…..হ্যাঁ ঠিকই বলেছি। আর হ্যাঁ, শুনুন মিষ্টার ওয়াটএভার। আজ এখানে আপনার কোনো গার্লফ্রেন্ড নেই। আপনার সামনে এখন যে আছে সে হলো অপজিট সাইডের কনের বোন। কথাটা মনে রাখবেন বুঝেছেন মিষ্টার? হুহ্।
কথাটা বলেই তানি এটিটিউডের সাথে হাত দিয়ে কাধে থাকা চুলগুলো ঝটকা মেরে চলে গেলো।
তানি চলে যেতেই আবির বাঁকা হেসে বিড়বিড় করে বললো।
….আচ্ছ,তো আমার সাথে বরপক্ষ কনেপক্ষ খেলা হচ্ছে? ঠিক আছে কিউটি, এখন থেকে আমিও তোমাকে অপজিট সাইডের খেল দেখাবো। তুমিও দেখবে এই আবির কেয়া চিজ হে।
———-
সামেয় ফোনে কথা বলতে বলতে স্টেজের দিকে যাচ্ছিল। হাটতে হাটতে হঠাৎ কারোর সাথে ধাক্কা লাগলো। সায়েম একটু বিরক্তিকর ভঙ্গিতে সামনে তাকালো। সামনে তাকাতেই সায়েমের চোখ সামনের ব্যাক্তির উপরেই আটকে গেল। চোখে মুখের ওপর থেকে বিরক্তি ভাব সরে গিয়ে, সেখানে একরাশ মুগ্ধতা ছড়িয়ে পরলো। সায়েম হা হয়ে তাকিয়ে রইলো তার দিকে।
সায়েমের সামনে থাকা মেয়েটা এতক্ষণে বিনতির সুরে বলে উঠলো।
….প্লিজ আমাকে বাচান। আমার পেছনে কিছু মনস্টার পরে আছে।
মেয়েটার কথায় সায়েমের ঘোর কাটলো। সায়েম ভ্রু কুঁচকে বললো।
….কি হয়েছে আপনার? কোনো বিপদে পরেছেন?
মেয়েটি মাথা ঝাকালো। মানে হ্যাঁ।
সায়েম মেয়েটাকে আস্বস্ত করে বললো।
….আপনি একদম চিন্তা করবেন না। এখানে আপনি সেফ আছেন। আমি আপনার কিছু হতে দেব না।
মেয়েটা পিছনের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা দেখে, দ্রুত গিয়ে সায়েমের পেছনে লুকালো।
সায়েম সেটা দেখে, মাথাটা পেছনের দিকে ঘুরিয়ে বললো।
…..কি হয়েছে?এতো ভয় পাচ্ছেন কেন?
মেয়েটি ভীতু চোখে তাকিয়ে সামনের দিকে ইশারা করে বললো।
…..ওইযে দেখুন, চলে এসেছে মনস্টার গুলো। প্লিজ ওদের হাত থেকে আমাকে বাচান।
সায়েম মনে মনে ভাবলো, মেয়েটাকে গুন্ডাদের হাত থেকে বাঁচালে। নিশ্চয় আমার উপর ফিদা হয়ে যাবে। কথাটা ভেবে সায়েম হিরোদের মতো এটিটিউড নিয়ে সামনে তাকালো। সামনে তাকাতেই সায়েম ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। ওর সব হিরোগিরি ফুস হয়ে গেলো। সায়েম ব্যাক্কলের মতো তাকিয়ে আছে। কারণ ওর সামনে কোনো গুন্ডা না,বরং আট দশ বছরের চার পাঁচটা বাচ্চা দাঁড়িয়ে আছে।
সায়েম সামনে তাকিয়েই পেছনের মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করলো।
….. আপনি তো বলছিলেন, কিছু ভয়ংকর মনস্টার আপনার পেছনে পরে আছে। কিন্তু আমার সামনে তো কয়েকটা বাচ্চা ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাচ্ছি না?
পেছনের মেয়েটা বলে উঠলো।
…..হ্যাঁ তো? এরাই তো সবচেয়ে বড়ো মনস্টার। এদের বাচ্চা ভেবে ভুল করবেন না। এইসব বাচ্চারা বড়ো বড়ো মনস্টার দেরও হার মানায়।
মেয়েটার কথায় সায়েমের এবার অজ্ঞান হওয়ার উপক্রম। কি সব আবোল তাবোল কথা বলছে? মেয়েটা কি পাগল নাকি?
সায়েমের ভাবনার মাঝেই, সামনে থাকা বাচ্চাগুলো রাগী স্বরে বলে উঠলো।
…..আঙ্কেল আপনি সামনে থেকে সরে যান। ওই চোর মেয়েটার সাথে আমাদের বোঝাপড়া আছে।
বাচ্চাদের কথায় সায়েম আরও বেশি অবাক হলো। ওর সামনে এসব কি হচ্ছে ও কিছুই বুঝতে পারছে না।
পেছনের মেয়েটা এবার তেড়ে এসে বাচ্চাদের সামনে আঙুল তুলে রাগী স্বরে বললো।
…..এই এই চোর কাকে বলছিস তোরা হ্যাঁ? মানুষ চিনিস? থাপ্পড় মারবো এখন, চিহ্ন থাকবে সারাজীবন। বুঝতে পেরেছিস বিচ্চুবাহিনি?
বাচ্চারাও আঙুল তুলে আরও রাগী স্বরে বললো।
……ও হ্যালো, আমরা আপনার এইসব ফালতু হুমকিতে ভয় পাই না বুজেছেন? আপনি আমাদের আইসক্রিম চুরি করে ভেগেছেন।তো আপনাকে চোর বলবনা নাতো কি বলবো? একবার কেন, একশ বার বলবো চোর, চোর,চোর।
…..এই এই দেখ ভালো হবে না কিন্তু বলে দিচ্ছি। আমি মোটেও আইসক্রিম চুরি করিনি। ওখানে একটাই স্টবেরি আইসক্রিম ছিল। আর আমি আগে পেয়েছি তাই আমি নিয়ে নিয়েছি। তাহলে চুরি হলো কি করে?
….একদম মিথ্যা কথা বলবেন না। আইসক্রিম আগে আমরা পেয়েছিলাম। যেটা আপনি ছিনিয়ে নিয়ে দৌড়ে চলে এসেছেন। ভালোই ভালোই বলছি, আমাদের আইসক্রিম আমাদের ফিরিয়ে দিন। নাহলে আপনার জন্য অনেক খারাপ হয়ে যাবে।
….মোটেও না। এটা আমার আইসক্রিম। আর আমার জীবন থাকতে, এই আইসক্রিম কেও আমার কাছ থেকে নিতে পারবে না।
…আপনার না,আমাদের।
….আমার।
…..আমাদের।
….আমার।
এদের কান্ড দেখে সায়েমের মাথা ঘুরে যাচ্ছে। লাইক সিরিয়াসলি? সামান্য একটা আইসক্রিমের জন্য এরা এমন ভাবে লড়াই করছে, যেন নিজেদের জীবন নিয়ে কাড়াকাড়ি করছে। এদের এমন অবস্থা দেখে সায়েম জোরে একটা ধমক দিয়ে বললো।
…স্টপপপ, কি হচ্ছে এসব হ্যাঁ? পাগল হয়ে গেছো তোমরা? সামান্য একটা আইসক্রিমের জন্য কেও এভাবে ঝগড়া করে?
সায়েমের ধমকে সবাই চুপ হয়ে মাথা নিচু করে মিনি বিড়ালের মতো দাড়িয়ে রইলো।
সায়েম বাচ্চাদের দিকে তাকিয়ে বললো।
….বাচ্চারা, এভাবে বড়োদের সাথে কথা বলাটা, ব্যাড ম্যানার্স। তোমরা জানোনা? তোমাদের যত আইসক্রিম লাগবে সেটা কেটারার বয়দের বললেই ওরা এনে দিবে বুজেছ?
বাচ্চারা মাথা ঝাকালো। মানে ঠিক আছে।
সায়েম এবার মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বললো।
….আর আপনি বড়ো হয়ে এভাবে বাচ্চাদের সাথে কথা বললে ওরা কি শিখবে? এখন সবাই একজন আরেকজনকে সরি বলে সব মিটমাট করে নেও।
দুজনরাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও অন্য দিকে তাকিয়ে থেকে দায়সারা ভাবে সরি বলে দিল।
সায়েম মুচকি হেসে বললো।
…গুড, বাচ্চারা যাও তোমরা এখন গিয়ে খেলা করো।
সায়েমের কথামতো বাচ্চাগুলো ওখান থেকে চলে গেল।যেতে যেতে পেছন দিকে মেয়েটার দিকে একবার তাকিয়ে হাতের দুই আঙুল দিয়ে একবার নিজের চোখের দিকে দেখিয়ে আবার মেয়েটার চোখের দিকে ইশারা করে বুঝালো যে, ওরা মেয়েটাকে দেখে নিবে।
মেয়েটা চোখ কুঁচকে রাগী চোখে তাকিয়ে চোখের ইশারায় বুঝালো যে, সেও ওদের দেখে ছাড়বে।
সায়েম গলা খাঁকারি দিয়ে বললো।
….বায়দা ওয়ে আপনার নামটা তো জানা হলোনা। নাম কি আপনার? আপনি কি বিয়েতে এসেছেন?
মেয়েটি সায়েমের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো।
….আমার নাম নিশি।আমি এখানে আমার মামাতো ভাই আদিত্য ভাইয়ার বিয়েতে এসেছি। আপনি জানেন কি হয়েছে?
সায়েম মুখ খুলে কিছু বলতে যাবে, তার আগেই নিশি আবার বলে উঠলো।
আরে আপনি কি করে জানবেন? আপনাকে তো বলায় হয়নি। কিজে বলবো, জানেন? সেই সকাল থেকে রেডি হয়ে বসে আছি এখানে আসবো বলে। আপনি তো জানেনই মেয়েদের রেডি হতে কতো সময় লাগে। কতো কিছু করতে হয়। এতো কষ্ট করে রেডি হওয়ার পর, মা কি বললো জানেন?
সায়েম আবারও মুখ খুলে কিছু বলতে যাবে, তার আগেই নিশি আবারও বলে উঠলো।
….আরে আপনি কি করে জানবেন? আমি বলছি শুনুন। মা বললো, তার নাকি আজ মাথা ব্যাথা করছে। সে নাকি আজ আসতে পারবে না। তখন কেমনটা লাগে বলেন?
সায়েম আবারও কিছু বলতে যাবে, তার আগেই নিশি বলে উঠলো।
…আরে চুপ করেনতো। আমি বলছি শুনুন। আমার এতো কষ্ট করে রেডি হওয়া তো আর বিফলে যেতে পারে না তাইনা? বিয়েতে এসে সেলফি না তুললে, আমি আজকের স্টাটাস কি করে দিবো? আমার ফলোয়াররা তো আমার দর্শনের আশায় বসে থাকবে তাইনা? তাই আমি মাকে বললাম, তুমি থাকো তোমার মাথা ব্যাথা নিয়ে। আমি একাই গেলাম। ভালো করেছি না বলেন?
….হ্যাঁ মান,,,,,
সায়েম কে থামিয়ে দিয়ে নিশি আবার বলে উঠলো।
….এইরে, দেখেছেন আপনার কথার জন্য আমার লেট হয়ে গেলো। এখনো বউয়ের সাথে একটা সেলফিও নিতে পারলাম না। আপনি এতো কথা বলেন কেন? বেশি কথা বলা আমার একদম পছন্দ না। আমাকে দেখুন, আমি কতো কম কথা বলি। এখন থেকে আর এতো কথা বলবেন না বুঝেছেন? দেখি সরুন তো,আমি বউয়ের সাথে সেলফি তুলতে যাবো।
একনাগাড়ে এতো কম কথা বলে নিশি ওখান থেকে চলে গেলো।
সায়েম বেচারা থ হয়ে ওখানেই দাঁড়িয়ে রইলো।মনে হচ্ছে ওর উপর দিয়ে কোনো টর্নেডো বয়ে গেলো। বেচারা এখনো শক থেকে বের হতে পারছে না। দাঁড়িয়ে থেকে বিড়বিড় করে বললো।
….আমি বেশি কথা বলি?
————————–
নিশি নূরের রুমে এসে সেই আধাঘন্টা ধরে নানা পোজে নূরের সেলফি নিয়েই যাচ্ছে। নূর একটু বিরক্ত বোধ করলেও, সেটা বুঝতে না দিয়ে মুচকি হেসে নিশির সাথে সেলফি তুলছে। নূর বুঝতে পারছে মেয়েটা খুব বাচ্চা স্বভাবের।
নিশির কান্ড দেখে রুমের সব মেয়েরা মিটিমিটি হাসছে।
আর সানা বসে বসে তাসিরের সাথে ফোনে চ্যাটিং করছে। তাসির টেক্সট পাঠালো যে,ওর এখন সানাকে দেখতে ইচ্ছে করছে। সানা যেন ওর সাথে এখনই দেখা করে। সানা টেক্সটটা পড়ে মুচকি হাসলো। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে নূরের কাছে যেয়ে বললো।
….ভাবি এখনই একটু আসছি।
নূর মাথা ঝাকিয়ে বললো।
…ঠিক আছে।
সানা নিশির দিকে তাকিয়ে বললো।
….আচ্ছা শোন,তুই ভাবির কাছে থাক।আমি একটু পরেই আসছি।
নিশি মুচকি হেসে বললো।
….ঠিক আছে তুই চিন্তা করিস না।
সানাও মুচকি হেসে বেড়িয়ে গেলো।
কিছুক্ষণ পরেই নূরের রুমে একটা সাত-আট বছরের বাচ্চা মেয়ে এলো। মেয়েটি এসে রুমের সব মেয়েদের বললো।
…..তোমরা সবাই জানো?নিচে না আইসক্রিম আর ফুচকার স্টল দেওয়া হয়েছে। কত্তো মজার মজার আইসক্রিম আর ফুচকা।আমিতো অনেক খেয়েছি। আরো সবাই খাচ্ছে। তোমরা খেতে চাইলে এখুনি যাও। নাহলে কিন্তু পরে সব শেষ হয়ে যাবে।
আইসক্রিমের কথা শুনে নিশির আর কোনো হুঁশ নেই। ও এক দৌড়ে ছুটে বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে। বাকি মেয়েরাও আইসক্রিম আর ফুচকার কথা শুনে এক মুহূর্তও দেরি না করে হুড়মুড় করে সবাই বেড়িয়ে গেলো। রুমে এখন শুধু নূর ছাড়া আর কেও নেই। নূর ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে বসে নিজের কানের দুল জোড়া ঠিক করছে।
হঠাৎ দরজা বন্ধ করার শব্দে পেছনে ফিরে তাকালো নূর। দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো আদিত্য ওর দিকে নেশা ভরা চোখে তাকিয়ে আছে। এইসময় আদিত্যকে এখানে দেখে নূর একটু অবাক হলো। এক ঝটকায় বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো নূর। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো ।
…তু তুমি এখানে? কে কেও দেখে,,,,,
নূরের কথা শেষ হওয়ার আগেই, আদিত্য তড়িৎ গতিতে এসে নূরকে জড়িয়ে ধরলো। দুই হাত দিয়ে নূরকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে, নূরের কানের কাছে মুখ নিয়ে নেশাক্ত কন্ঠে বললো।
…..আই মিস ইউ প্রাণপাখী। আই মিস ইউ সোওও মাচ।
নূরও আবেশে চোখ বন্ধ করে আদিত্যের পিঠে হাত রেখে আদিত্যকে জড়িয়ে ধরলো। তারপর আস্তে করে বললো।
…আই মিস ইউ টু।
একটু পরে আদিত্য নূরকে ছেড়ে দিয়ে মাথা তুলে নূরের দিকে তাকালো। মুগ্ধ নয়নে নূরকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো। নূরকে আজ কাঁচা হলুদ রঙের একটি শাড়ি পরানো হয়েছে। শাড়িটি বাঙালী স্টাইলে পরানো হয়েছে। মাথায় আর সারা শরীরে জারবেরা ফুলের গহনা দিয়ে সাজানো হয়েছে। নূরকে আজ কোনো ফুলের রাজ্যের রানী মনে হচ্ছে। আদিত্য যেন ভাষা হারিয়ে ফেলছে। নূরের এই পাগল করা রুপে হারিয়ে যাচ্ছে আদিত্য।
নূর লজ্জায় আদিত্যর দিকে তাকাতে পারছে না। মাথা নিচু করে লাজুক হেসে দাঁড়িয়ে আছে।
আদিত্য নূরের মুখটা দুইহাতে ধরে, নূরের কপালে নিজের কপাল ঠেকিয়ে লো ভয়েসে ঘোর লাগা কন্ঠে বললো।
…..একটা মানুষকে এভাবে পাগল করা কি ঠিক বলো? আর কতো রুপে আমাকে ঘায়েল করবে তুমি? আমি সেই কবেই আহত হয়ে গেছি তোমার মায়ায়। তাহলে এই আহত ব্যাক্তিকে আরো কেন আহত করছো? একটু কি মায়া হয় না আমার উপর তোমার?
আদিত্যের কথায় আরো লজ্জায় কাঁপতে লাগলো। কম্পিত কণ্ঠে বললো।
….তো তোমার এখন এ এখানে আসা ঠিক হয় নি। কে কেও দেখে ফেললে স সমস্যা হয়ে যাবে।
আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
…..কোনো সমস্যা হবে না। তুমি চিন্তা করোনা। জানো তোমার এখানে আসার জন্য কতো মেহনত করতে হয়েছে আমাকে? প্রথমে আমার বডিগার্ড গুলোর চোখ ফাঁকি দিয়ে এসেছি। তারপর তোমার আশেপাশের বডিগার্ড গুলো সরিয়েছি। শুধুমাত্র তোমার কাছে আসার জন্য, আমাকে নিচে আইসক্রিম আর ফুচকার স্টলের ব্যাবস্থা করতে হয়েছে।
আদিত্যের কথায় নূর অবাক হয়ে ওর দিকে তাকালো। মনে মনে ভাবলো, আদিত্য শুধু ওর সাথে দেখা করার জন্য এতো কিছু করেছে? মানুষটা সত্যিই পাগল। নূর বলে উঠলো।
….এ এসবের কি দরকার ছিল? একটু পরে তো এমনিই আমাদের দেখা হতো।
আদিত্য নূরের কমোড় জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে, নূরের কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো।
….দরকার আছে। আজ আমাদের গায়ে হলুদ।তাই আমার বউকে সবার প্রথম হলুদও আমিই লাগাবো। অন্য কেউ না। বুজেছ বউ?
আদিত্যের মুখে বউ ডাকটা শুনে নূরের শিরদাঁড়া দিয়ে একটা ঠান্ডা শীতল হাওয়া বয়ে গেলো। মনের ভেতর সুখ সুখ অনূভুতি হতে লাগলো। নূর আমতা আমতা করে বললো।
….কি কিন্তু এখন হলুদ লাগালে। পরেতো সবাই সেটা দেখে জিজ্ঞেস করবে, যে এই হলুদ কে লাগালো? তখন কি বলবো আমি?
আদিত্য বাঁকা হেসে নূরের কানে বললো।
….দেখলেতো জিজ্ঞেস করবে?
….মা মানে,,,
নূরের কথা বলার মাঝেই নূর ওর কোমড়ে ঠান্ডা কিছু অনুভব করলো। সাথে সাথে নূর কেঁপে উঠে দুই হাত দিয়ে আদিত্যের পাঞ্জাবির বুকের অংশ শক্ত করে খামচে ধরলো।
আদিত্য নূরের কোমড়ে হলুদ লাগানোর পর। এক হাত দিয়ে নূরের পেটের উপর থেকে শাড়ি খানিকটা সরিয়ে আরেক হাত দিয়ে নূরের পেটের উপর হলুদ লাগলো।
নূরের যেন দম বন্ধ হয়ে আসছে। নূর চোখ বন্ধ করে পাঞ্জাবি আরো শক্ত করে খামচে ধরে, জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলতে লাগলো।
হলুদ লাগানো শেষে আদিত্য নূরের কানের কাছে মুখ নিয়ে, কানে একটা চুমু দিয়ে, নেশা ভরা কন্ঠে বললো।
….হ্যাপি হলুদ প্রাণপাখী। আজ আমার দেওয়া হলুদ তোমার অঙ্গে। আর কাল তোমাকে রাঙাবো আমার রঙে। তোমার সারা অঙ্গ জুড়ে থাকবে শুধু আমার ভালোবাসার পরশ। কাল থেকে তুমি হয়ে যাবে একান্তই আমার। তোমাকে আমার রঙে রাঙিয়ে তুলবো।
নূর আর সহ্য করতে পারছে না আদিত্যর এমন পাগল করা কথা। তাই নূর কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠলো।
….তো তোমার এখন যাওয়া উচিৎ। কেউ না কেউ চলে আসবে।
আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
….ঠিক আছে, আমি যাচ্ছি এখন। আর হ্যাঁ, আরেকটা কথা। অনুষ্ঠান শেষ হলে, আগেই কিন্তু হলুদ উঠাবেনা। আমি যেমন হলুদ লাগিয়ে দিয়েছি। তেমন আমিই আবার হলুদ উঠিয়ে দেব। বুজেছ?
নূর নিচের দিকে তাকিয়ে মাথা ঝাকালো। মানে ঠিক আছে।
আদিত্য মুচকি হেসে নূরের কপালে চুমু দিয়ে বেড়িয়ে গেলো।
চলবে…..
( সবাই কে ঈদ মোবারক🌙। ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে সবার জন্য আমার তরফ থেকে ঈদের গিফট হিসেবে, নতুন পর্ব নিয়ে এলাম।💝💝)