ভালোবাসার চেয়েও বেশি 💞পর্ব-৪৮

0
6515

#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-৪৮

★ নূর আর আদিত্যকে হলুদের জন্য স্টেজে পাশাপাশি বসানো হয়েছে। সামনেই সবাই বসে আছে। সবার প্রথমে আদিত্যের বাবা এসে ওদের হলুদ লাগিয়ে মিষ্টি মুখ করে গেল।
তারপর আদিত্যর চাচা চাচী এসে হলুদ ছোয়ালো। তারপর একে একে এসে সবাই হলুদ লাগাতে লাগলো।

একটু পরে সায়েম আবিরের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো।
….ব্রো ফাংশন কেমন বোরিং হয়ে যাচ্ছে না। লেটস হ্যাভ সাম ফান ব্রো।

আবির বাকা হেসে তানিকে শুনিয়ে বলে উঠলো।
….হ্যাঁ ঠিকই বলেছিস। আমাদেরই কিছু করতে হবে। মেয়েদের দ্বারা তো শুধু মেক আপ করা ছাড়া আর কিছুই সম্ভব না।

আবিরের কথায় তানি তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে ভেংচি কেটে আবিরের দিকে তাকিয়ে বললো।
…..এইযে মিষ্টার আউট অফ ফোকাস। মেয়েদের ওপর যে এতো লেকচার ঝাড়ছেন। তা আপনাদের কি এমন ট্যালেন্ট আছে শুনি? ট্যালেন্টের নামে শুধু বস্তাপচা কিছু ফালতু জোক্স মারা ছাড়া আর কি ট্যালেন্ট আছে আপনাদের? হুহ্।

আদিত্য চোখ কুঁচকে বললো।
….কিহহ্ এতবড় ইনসালাত?

তানি রাগী স্বরে বললো।
….শুধু ইনসালাত কেন?আপনার তো টমেটো, শশা, গাজর সবকিছুর সালাদ করা উচিৎ। মিষ্টার গুড ফর নাথিং।

তাসির এতক্ষণে বলে উঠলো।
….তানি তুমি শুধু শুধু রাগ করছো। আবিরতো শুধু মজা করছিলো। তাছাড়া,,,,

তাসিরের কথা শেষ হওয়ার আগেই সানা তাসিরের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো।
….হ্যাঁ হ্যাঁ আপনি তো বলবেনিই। আপনিও তো একজন পুরুষ মানুষ। তাইতো পুরুষদের পক্ষেই কথা বলবেন। লোকে ঠিকই বলে, চোরে চোরে মাসতুতো ভাই।

সানার কথা শুনে তাসির একটু অবাক হলো। সাথে হালকা রাগও হলো। তাসির সানার দিকে তাকিয়ে বললো।
….তুমি কি বলতে চাচ্ছো আমি চোর?

সানা ভেংচি কেটে এটিটিউডের সাথে বললো।
….বুঝদারের জন্য ইশারায় যথেষ্ট।

তাসির আঙুল তুলে বললো।
…দেখ তুমি কিন্তু বেশি বেশি করছো?

সানা বললো।
….কম কিছু আমার পছন্দও না।

এদের ঝগড়া দেখে সায়েম বলে উঠলো।
….ওকে ওকে গাইস। ঝগড়া করার দরকার নেই। দুই দলের ভেতর একটা ডান্স চ্যালেঞ্জ হয়ে যাক? তাহলেই ফয়সালা হয়ে যাবে কারা বেষ্ট, ছেলেরা না মেয়েরা?

তানি বলে উঠলো।
…ওকে, উই একসেপ্ট দা চ্যালেঞ্জ।

আবির বললো।
…উই অলসো একসেপ্ট দা চ্যালেঞ্জ।

সায়েম বলে উঠলো।
…ওকে দেন, লেটস সি হু উইন?

আবির তানির দিকে হালকা ঝুকে বাঁকা হেসে বললো।
….জিতবো তো আমরাই।
কথাটা বলেই আবির চোখে সানগ্লাস লাগিয়ে পাঞ্জাবির হাতা গোটাতে গোটাতে, এটিটিউডের সাথে ওখান থেকে সরে একটু ফাঁকা জায়গায় এসে দাঁড়ালো।তারপর সাউন্ড বক্সের কাছে থাকা ছেলেটার দিকে দুই হাত উঠিয়ে বললো।
….ডিজে ওয়ালে বাবু, মেরা গানা বাজাদো।

মিউজিক শুরু হতেই আবির দুই পা ছড়িয়ে এটিটিউড নিয়ে দাঁড়িয়ে, মুখে আঙুল ঢুকিয়ে একটা শিস বাজালো। সাথে সাথে সব ছেলেরা এসে আবিরের পিছনে সারি সারি হয়ে দাড়ালো।তাসির আর সায়েমও এসে আবিরের দুই পাশে এটিটিউড নিয়ে দাঁড়ালো। আবির তুড়ি বাজিয়ে নাচতে নাচতে গাওয়া শুরু করলো।

♬ ল্যারকো কি উঙ্গলি পে নাচে হে জামানা
সিম্পল এ ফানডা হে কুড়িওকো বাতানা

লুটে নেহি লুট যায়ে
জিতে পাট যায়ে
কুড়িয়া হে জেবো মে রাখলে

কুড়িয়ানু ঠাগ লে, ঠাগ লে
কুড়িয়ানু ঠাগ লে,ঠাগ লে
ঠাগ লে,ঠাগ লে,ঠাগ লে

( এদের ডান্স দেখে এবার তানি উঠে দাঁড়ালো। তানি ডানে তাকাতেই, সানা এসে দাঁড়াল। তানি আবার বামে তাকাতেই, নিশি এসে দাঁড়ালো। আর তানির পেছনে আরো অনেক গুলো মেয়ে এসে দাঁড়াল। সবাইকে নিয়ে তানি এটিটিউড নিয়ে আবিরদের সামনে এসে দাড়ালো। তারপর তানি আবিরের,সানা তাসিরের,নিশি সায়েমের এবং বাকি মেয়েরা, অন্য ছেলেগুলোর কাছে যেয়ে ছেলেদের চারিদিকে ঘুরতে লাগলো।
তানি আবিরের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে এক হাত উপরে তুলে তুড়ি বাজাতে বাজাতে আবিরের চারিদিকে গোল গোল ঘুরে গেয়ে উঠলো)

♬ ল্যারকো কো লাগতাহে ইজি জিত যানা
ইসবার উনকো হারাকে হে দিখানা

( এইটুকু গেয়ে তানি আর বাকি মেয়েরা নিজেদের কোমড় বাঁকা করে ছেলেদের একটা ধাক্কা মারলো। তারপর নাচতে নাচতে গেয়ে উঠলো)

বাড়ি বাড়ি হাঁকে হে
ইউ হি হাওয়া ফাঁকে হে
জেবে ভাড়ি, খালি হে আকলে

মুন্ডেয়ানু ঠাগ লে,ঠাগ লে
মুন্ডেয়ানু ঠাগ লে, ঠাগ লে
ঠাগ লে, ঠাগ লে, ঠাগ লে।

( এবার আবির তানিকে ইশারা করে দেখিয়ে টিজ করে নাচতে নাচতে গেয়ে উঠলো)

♬ জিতনি ঘাস ডালো,তারিফে নিকালো
উতনেহি ইনকে ভাও বাড়তে হে

( তানিও আবিরকে দেখিয়ে দেখিয়ে ব্যাঙ্গ করে নাচতে নাচতে গাইলো)

♬ মকা তারতে হে,চকা মারতে হে
হাত পাকড়া তো ছাড়পে চাড়তে হে

( আবির তানির চারপাশে ঘুরে নাচতে নাচতে গেয়ে উঠলো)

♬ ♬ ♬ তোড়ে ইনকে চালে
৷ শেপে মাত দে ডালে
এ মাজা, মাজা লেকে চাখলে

কুড়িয়ানু ঠাগ লে, ঠাগ লে
কুড়িয়ানু ঠাগ লে, ঠাগ লে
ঠাগ লে, ঠাগ লে, ঠাগ লে

(মেয়েরা একসাথে নাচতে নাচতে গেয়ে উঠলো)

♬ ♬ মুন্ডেয়ানু ঠাগ লে, ঠাগ লে
মুন্ডেয়ানু ঠাগ লে, ঠাগ লে
ঠাগ লে, ঠাগ লে, ঠাগ লে

(তানি আবিরের সামনে আঙুল তুলে গাইলো)

♬ ♬ ♬ ♬ মুন্ডেয়ানু,,,

(আবির তানির সামনে আঙুল তুলে গাইলো)

♬ ♬ ♬ ♬ কুড়িয়ানু,,,,

( সানা তাসিরের সামনে আঙুল তুলে গাইলো)

♬ ♬ ♬ ♬ মুন্ডেয়ানু,,,

(তাসির সানার সামনে আঙুল তুলে গাইলো)

♬ ♬ ♬ কুড়িয়ানু,,,,

(সায়েম আর নিশিও একই ভাবে একজন আরেকজনের সামনে আঙুল তুলে গাইলো)

♬ ♬ ♬ ♬ মুন্ডেয়ানু,,,,

♬ ♬ ♬ ♬ কুড়িয়ানু

(সবাই একসাথে গেয়ে উঠলো)

♬ ♬ ♬ ♬ ♬ ঠাগ লে,,,,

ওদের ডান্স শেষে সবাই হাতে তালি দিয়ে উঠলো।
তালির শব্দে আবির আর তানিরা স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়ালো।

আদিত্য হেসে বলে উঠলো।
…..টেক ইট ইজি গাইজ। এটা হলুদের ফাংশন। কোনো ডাব্লিউ ডাব্লিউ চ্যাম্পিয়ন শিপের ম্যাচ না। এতো সিরিয়াস হওয়ার দরকার নেই।

আদিত্যের কথায় সবাই হেসে দিল।

এদের আনন্দ উল্লাস দেখে নূরের আজ ওর ফ্যামিলির কথা খুব মনে পরছে। আজ ওর এতো বড়ো একটা দিন। অথচ ওর পরিবারের কেউ আজ ওর পাশে নেই। আজ নিজের বাবা থাকতেও, অনাথের মতো বিয়ে হচ্ছে ওর। এসব কথা ভেবে নূরের প্রচুর খারাপ লাগে। নিজের অজান্তেই ওর চোখে পানি চলে আসে। মাথাটা একটু অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিজের চোখের পানি মুছে ফেলে নূর। যাতে আদিত্য দেখতে না পারে।

কিন্তু আদিত্য নূরের চোখের পানি আগেই দেখে ফেলেছে। ও বুঝতে পারছে নূরের কান্নার কারন। তাই নূরকে কিছু বললো না। শুধু মনে মনে বললো।
….তুমি চিন্তা করোনা প্রাণপাখী। আর কিছুক্ষণ পরেই তোমার মুখে হাসি ফুটে উঠবে।

নূর সামনের দিকে তাকিয়ে একটা জোরপূর্বক হাসি দিলো।

একটু পরে কেউ জোরে আপু বলে ডেকে উঠলো। ডাকটা শুনে নূর চমকে উঠে পাশে ফিরে তাকালো। পাশে তাকাতেই দেখলো রবি দৌড়ে ওর দিকেই আসছে। নূরের যেন নিজের চোখকেই বিশ্বাস হচ্ছে না। রবিকে এখানে দেখে নূর খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলো।

রবি দৌড়ে এসে জোরে আপুও বলে নূরকে জড়িয়ে ধরলো। নূরও রবিকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো।
একটু পরে নূর রবির দিকে তাকিয়ে বললো।
…ভাই তুই এখানে? কিভাবে এলি? কার সাথে এলি?

পাশ থেকে কেউ বলে উঠলো।
….আমাদের সাথে এসেছে।

কন্ঠটা শুনে নূর সামনে তাকিয়ে দেখলো, ওর চাচা আর চাচাতো ভাই আকাশ দাঁড়িয়ে আছে।
ওদের দেখে নূর আরও অবাক হলো। সাথে প্রচুর খুশিও হলো। নূর ওর চাচার দিকে তাকিয়ে বললো।
….চাচা,ভাইয়া আপনারা?

আকাশ মুচকি হেসে বললো।
….হ্যাঁ আমরা। তুই কি ভেবেছিলি? তুই কিপ্টামি করে তোর বরের টাকা বাচানোর জন্য, আমাদের বিয়েতে ডাকবিনা। তাই বলে কি আমরা আসবোনা? আমরা তো দাওয়াত ছাড়াই চলে এসেছি তোর বিয়ের খাবার খেতে।

আকাশের কথায় নূর চোখে পানি নিয়ে হেসে দিল।
নূরের চাচা নূরের পাশে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বললো।
…কেমন আছিস মা?

…..আমি অনেক ভালো আছি চাচা। কিন্তু তোমরা এখানকার কথা কি করে জানলে?

…..আদিত্য আমাদের ফোন করে সব বলেছে।আর বিয়েতেও আসতে বলেছে। আজ আমাদের আসার জন্য গাড়ি পাঠিয় দিয়েছিল। আমি তোর জন্য অনেক খুশী। শেষমেশ তোর জীবনে খুশী এসেছে। আদিত্য সত্যিই অনেক ভালো ছেলে। তোকে অনেক খুশী রাখবে।

চাচার কথায় নূর মায়া ভরা ছলছল চোখে আদিত্যের দিকে তাকায়। নূরের ইচ্ছে করছে এখুনি আদিত্যকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে। এই মানুষটা কিভাবে এতো ভালোবাসতে পারে? আমার অজান্তেই আমার সব দুঃখ কষ্ট মুহূর্তেই দূর করে দেয়।

নূরকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আদিত্য চোখের পলক ফেলে ইশারায় নূরকে আস্বস্ত করে। নূরও মুচকি হেসে মাথা ঝাকিয়ে সায় দেয়।

রবি বলে উঠলো।
….ওয়াও আপু তোমাকে তো একদম পরি পরি লাগছে।

রবির কথায় নূর মুচকি হাসলো।

আদিত্য অভিমানী সুরে বলে উঠলো।
….আমাকে তো মনে হয় কারোর চোখেই পরছে না।

রবি উঠে এসে আদিত্যর পাশে বসে বললো।
….কথাটা একদম মিথ্যে বলেননি জিজু। আমার এতো সুন্দর আপুর সামনে আপনাকে একটু চোখে কমই পরছে। দাঁড়ান চশমা পরে নেই। তারপর হয়তো আপনাকে চোখে পরবে।
কথাটা বলে রবি একটা সানগ্লাস বের করে স্টাইল নিয়ে চোখে লাগলো। তারপর আদিত্যের৷ দিকে তাকিয়ে ভাব নিয়ে আবার বলে উঠলো।
….হুম এখন দেখতে পাচ্ছি। আপনাকেও ঠিক ঠাকই লাগছে।

আদিত্য বুকে হাত দিয়ে মাথা নত করে বললো।
…..যাক এই অধম যে আপনার নজরে পরেছে, তাতেই আমি ধন্য সালা সাহেব।

রবি আদিত্যর দিকে একটু ঝুঁকে আস্তে আস্তে করে বললো।
….শুনুন জিজু, আমার আপুকে একা ভেবে তার সাথে কোনো খারাপ ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন না বলে দিলাম। কারণ আপুর ভাই এখনো বেঁচে আছে। ‘ডোন্ট আন্ডারেস্টিমেট দা পাওয়ার অফ এ্যা রবি ম্যান’। আমার কন্ট্রাক্ট কিন্তু অনেক উপর পর্যন্ত আছে। তাই ভুলেও আপুর সাথে উল্টো পাল্টা কিছু করার চেষ্টা করবেন না বুজেছেন?

আদিত্য মিছেমিছি ভয় পাওয়ার ভান ধরে বললো।
….না না, কি যে বলেননা? এই অধমের এতো বড়ো স্পর্ধা কোথায়, আপনার সাথে পাঙ্গা নেওয়ার? আপনি একদম নিশ্চিত থাকুন। আমি আপনার আপুর একদম গোলাম হয়ে থাকবো।

রবি আরো ভাব নিয়ে মাথা ঝাকিয়ে বললো।
…গুড বয়। অল্পতেই বুঝে গেছেন। আই লাইক ইউ।

আদিত্য এক ভ্রু উঁচিয়ে রবির দিকে তাকিয়ে বললো।
…..তাই নাকি?

….হুম

আদিত্য হটাৎ এক হাতে রবির গলা পেঁচিয়ে ধরে নিজের কোলের ভেতর নিয়ে আরেক হাতে রবিকে কাতুকুতু দিয়ে হেসে বললো।
….তাই, তাই, তাই?

রবি হেসে উঠে ছটফট করতে করতে বললো।
….সরি সরি জিজু।আমিতো শুধু মজা করছিলাম। সত্যি বলছি। ছেড়ে দেন প্লিজ।

আদিত্যকে রবির সাথে এভাবে হাসি খুশি ভাবে মিশতে দেখে নূরের মনটা ভরে উঠছে। আদিত্যের প্রতি ওর সম্মান আরো বেড়ে যাচ্ছে।
———-

রবি একটা চেয়ারে বসে জুস খাচ্ছে আর সামনে তাকিয়ে আছে। তখনই ওখানে আবির, তাসির আর সায়েম এসে হাজির হলো। আবির রবির পাশে বসে মুচকি হেসে বললো।
….আরে এতো দেখছি আমাদের ওয়ান এন্ড অনলি দ্য রবি বিয়াই সাহেব। তো,কেয়া হালচাল বিয়াই সাহেব?

রবি ভাব নিয়ে বললো।
….রবি সবসময়ই বিন্দাস থাকে। আপনাদের কথা বলুন।

আবির হতাশার সুরে বললো।
…..আমাদের কথা আর কি বলবো বিয়াই মশাই। গার্লফ্রেন্ডের প্যারায় বেচে আছি কোনোরকমে। আপনার তো আর গার্লফ্রেন্ড নাই তাই বিন্দাস আছেন। গার্লফ্রেন্ড থাকলে বুঝতেন লাইফটা কি প্যারা সিটামল হয়ে যায়।

তাসির আবিরের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো।
….কি করছিস তুই? বাচ্চাদের সামনে কেউ এসব কথা বলে?

রবি ভ্রু কুঁচকে তাসিরের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো।
….হে হে, ওয়ান সেকেন্ড ম্যান। হু ইজ বাচ্চা? আই এ্যাম নট এ বাচ্চা ওকে? আই এ্যাম রবি।
রবি আবার আবিরের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো।
…আর হ্যাঁ আমি বুঝবো না কেন? ‘ডোন্ট আন্ডারস্টিমেট দ্যা পাওয়ার অও এ্যা রবি ম্যান’। গার্লফ্রেন্ড আমারও আছে।

রবির কথায় ওরা তিনজন রিতীমত আকাশ থেকে পড়লো। সায়েম বেচারা মাত্রই জুস মুখে দিয়েছিল। রবির কথায় জুস ওর গলায় আটকে কাশি উঠে গেলো। আবির রবির দিকে চোখ বড়ো বড়ো করে অবিশ্বাস্য ভাবে তাকিয়ে বললো।
….আর ইউ সিরিয়াস? মানে সত্যিই তোমার গার্লফ্রেন্ড আছে?

….অবশ্যই আছে। তবে হ্যাঁ, আপনাদের গার্লফ্রেন্ডদের মতো এতো প্যারা দেয়না আমার গার্লফ্রেন্ড। আসলে আমি ওকে এমন ভাবে কন্ট্রোল করে রেখেছি , যে ওর সাহসই হয় না আমাকে প্যারা দেওয়ার। আমার গার্লফ্রেন্ড আমার কথায় উঠে আর বসে।

রবির কথায় সবগুলো হা করে তাকিয়ে আছে। সায়েম এবার একটু তাচ্ছিল্যের সুরে বলে উঠলো।
….চাপা মারা একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে না, মিষ্টার রবি মহাশয়?

কথাটা যেন রবির ইগোতে লাগলো। রবি সায়েমের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো।
…..কি বললেন? আমি চাপা মারছি? আমার কথা আপনাদের বিশ্বাস হচ্ছে না? ওঁকে ফাইন, ব্যাপারটা এখন আমার ইগোর।তাই আমি এখুনি আপনাদের প্রমাণ করে দেব যে, এই রবি কখনো চাপা মারে না। আমার গার্লফ্রেন্ডের কথা নাহয় বাদ দিলাম। আমি এখানেই আপনাদের সামনেই মাত্র পাঁচ মিনিটেই একটা মেয়েকে পটিয়ে দেখাবো।ইট’স এ্যা চ্যালেঞ্জ।

সায়েম বলে উঠলো।
….ওঁকে চ্যালেঞ্জ ব্রো।

রবি হাত দিয়ে ইশারা করে কিছুটা দূরে একটা নয় দশ বছরের মেয়েকে দেখিয়ে বললো।
….ওইযে দেখছেন, ওই মেয়েটা। মাত্র পাঁচ মিনিটেই ওই মেয়েটাকে আমি পটিয়ে দেখাবো। জাস্ট ওয়েট এন্ড সি।
কথাটা বলে রবি উঠে দাঁড়িয়ে ওই মেয়েটার দিকে যেতে লাগলো। যেতে যেতে একবার পেছনে আবিরদের দিকে তাকিয়ে, হাতের দুই আঙুল দিয়ে একবার ওদের দিকে তুলে , আবার নিজের চোখের দিকে আঙুল তাক করে ইশারায় বুঝালো যে, ওকে ভালো করে দেখতে।

আবিররা তো শুধু হতভম্ব হয়ে ওর কান্ড দেখছে।

রবি ধীরে ধীরে মেয়েটার কাছে যেয়ে বললো।
….আরে তুমি? তোমাকে তো কোথাও দেখেছি মনে হচ্ছে?

মেয়েটি রবির দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বললো।
….আমাকে?আমাকে কোথায় দেখেছ?

রবি কিছু একটা মনে আসার মতো করে বললো।
…আরে হ্যাঁ তোমাকে তো একদম হুবহু #বাজরাঙ্গি ভাইজান মুভির সেই মুন্নির মতো দেখা যায়। দেখেছ, এইজন্যই তো কনফিউজ হয়ে গিয়েছিলাম।

রবির কথায় মেয়েটা যেন হাওয়ায় উড়তে লাগলো। খুশি হয়ে বললো।
…সত্যিই? আমাকে দেখতে মুন্নির মতো সুন্দর লাগে?

….আরে মুন্নির মতো কেন? তুমি তো দেখতে মুন্নির চেয়েও বেশি সুন্দর। আজকে এই হোয়াইট ড্রেসে তোমাকে যা সুন্দর লাগছে কি বলবো। তোমাকে দেখে একটা ছন্দ মনে পড়লো। শুনবে তুমি?

মেয়েটি উৎসাহ নিয়ে বললো।
….কি বলোনা?

“সাদা জামা লাল টিপ পড়ে তোমাকে যা দেখাচ্ছে,
মা কসম পুরো এম্বুলেন্স লাগছে।

রবির ছন্দ শুনে মেয়েটি খিলখিল করে হেসে উঠলো। এভাবে রবি আরো নানান রকম কথা বলতে লাগলো, মেয়েটাকে পটানোর জন্য।
এসব দেখে আবিরদের চোয়াল যেন ফ্লোর পর্যন্ত ঝুলে পরছে। কিছুক্ষণ পর ওরা দেখলো, মেয়েটা রবির গালে একটা চুমু দিয়ে দিলো। এবার তো ওদের চোখ কোটর থেকে বেড়িয়ে আসার উপক্রম। সায়েম বেচারাতো শক খেয়ে চেয়ার উল্টে নিচে পরে গেলো।
রবি ওদের দিকে তাকিয়ে এক চোখ টিপ মারলো।

একটু পরে রবি মেয়েটার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আবিরদের কাছে আসলো। ওদের কাছে এসে আয়েশি ভঙ্গিতে চেয়ারে বসে পায়ের ওপর পা তুলে বাকা হেসে ভাব নিয়ে বললো।
….সো গাইজ, কেমন দিলাম? এখন নিশ্চয় কোনো ডাউট নেই? নেক্সট টাইম কখনো আর আমার কথার উপর প্রশ্ন তুলবেন না বুজেছেন?
” মে দিখতা হু সুইট ইনোসেন্ট সোয়ামী টাইপ কা
পার হু বহুত বারা হারামি টাইপ কা”।

হঠাৎ করে সায়েম নিচে বসে রবির পা টিপা শুরু করে দিল। আর আবির আর তাসির রবির দুই হাত টিপা শুরু করলো। টিপতে টিপতে সায়েম বলে উঠলো।
…..বাবাজী তুসি গ্রেট হো, সুপার সে ভি উপার হো।

আবির বলে উঠলো।
…..রবী বাবার জয়। জয় রবী বাবা।

তাসির বলে উঠলো।
….বাবা আমরা আজ থেকে আপনার শীর্ষ। আমাদের উপর আপনার কৃপাদৃষ্টি রাখুন।

সায়েম বলে উঠলো।
….বাবা আমাদেরকেও একটু টিপস দিন না।কিভাবে মেয়ে পটাতে হয়?

আবির বলে উঠলো।
….হ্যাঁ বাবা, একটু বলেননা কিভাবে গার্লফ্রেন্ড কে কন্ট্রোলে রাখতে হয়?

রবি এক হাত উঁচু করে জ্ঞানী ঋষি মূণীষিদের মতো করে বললো।
…..চিন্তা করোনা বৎসরা। রবি বাবার দৃষ্টি তোমাদের উপর পড়েছে। এখন থেকে তোমাদের শুধু কল্যাণই হবে। অবসরে তোমাদের সব শিখিয়ে দিবো। আপাতত আমার আহারের সময় হয়েছে, তাই আমি খাদ্য গ্রহণ করতে যাচ্ছি।
কথাটা বলে রবি একই মুডে ওখান থেকে উঠে চলে গেলো।

রবি চলে যেতেই ওরা একজন আরেকজনের মুখের দিকে তাকালো। তারপর হঠাৎ অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো।

চলবে…….
( ঈদ বোনাস। জিও রিডার্স লোক।😌😌🤓)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here