#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি 💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-৭৩
★ আদিত্যরা নূরকে হসপিটালে নিয়ে এসেছে। ডক্টর নূরের চেকআপ করে কিছু টেস্ট করিয়েছে। নূর এখনো বেহুশই আছে। সবকিছু দেখে ডক্টর বললো।
….ওনার মাথায় ভারি কোনো জিনিস দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। যারজন্য উনি ওনার স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেছে।
আদিত্য ভীতু গলায় বললো।
…নূর কি কখনো ঠিক হবে না ডক্টর?
….এ ব্যাপারে সিওর কিছু বলা যাচ্ছে না। ওনার স্মৃতিশক্তি তাড়াতাড়িও আসতে পারে আবার দেড়িও হতে পারে। আবার কখনো নাও আসতে পারে। কিছু বলা যায় না। তবে আপনারা ওনাকে জোর করে কিছু মনে করানোর চেষ্টা করবেন না।এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। পেসেন্টের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যেতে পারে।
….না না এমন কোনো কাজই করবো না যাতে ওর ক্ষতি হয়। ওকে আমি ফিরে পেয়েছি এটাই অনেক। আর কিছুর দরকার নেই আমার।
….ঠিক আছে তবে আপনারা ভালোবাসা আর হাসি আনন্দের মাধ্যমে ওনাকে ধীরে ধীরে অল্প করে ওনাকে আগের কথা মনে করানোর চেষ্টা করতে পারেন। আমি কিছু মেডিসিন লিখে দিচ্ছি , এগুলো নিয়মিত দিবেন ওনাকে। আমি আপাতত একটা ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে দিয়েছি। তিন চার ঘন্টা পর ওনার জ্ঞান ফিরে আসবে। আশা করি সব ঠিক হয়ে যাবে।
আদিত্য মাথা ঝাকিয়ে উঠে গেল। তারপর নূরকে কোলে নিয়ে বাইরে বের হলো। বাইরে এসে আদিত্য নূরকে কোলে নিয়েই গাড়িতে বসলো। তাসির ড্রাইভিং করছে আর আবির ওর পাশের সিটে বসলো। আদিত্য নূরের দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে নূরের গালে হাত বোলাতে লাগলো। আশেপাশের কোনো হুঁশ নেই ওর। ওতো ওর প্রাণপাখীকে দেখায় ব্যস্ত। পাঁচ মাস ধরে চোখ দুটো অধীর হয়ে ছিল নূরকে দেখার জন্য। আজ নূরকে দেখে দেখে ও ওর চোখের তৃঞ্চা মেটাতে চায়।কতো সাধনার পরে ও ওর প্রাণপাখীকে ফিরে পেয়েছে। আদিত্য নূরের কপালে চুমু খেয়ে নূরকে বুকের মাঝে জড়িয়ে নিল। আহ্ কতো শান্তি লাগছে ওর। মনে হচ্ছে খরা চৌচির মাটিতে অঝোর বৃষ্টির বর্ষন হচ্ছে। নূরকে জড়িয়ে ধরে অশ্রু চোখে মুচকি হাসলো।
আবির আর তাসির আদিত্যকে এভাবে দেখে ওরাও অশ্রু চোখে একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে স্বস্তির হাসি দিল।
একঘন্টা পর ওরা সাভারের বাড়িতে এসে পৌঁছাল। গাড়ি থামলে আদিত্য নূরকে কোলে নিয়ে বাসার ভেতর ঢুকলো। সবাই ড্রয়িং রুমেই বসে ছিল ওদের আসার অপেক্ষায়। আবির ওদের আগেই ফোন করে সব জানিয়ে দিয়েছিল। আদিত্যর কোলে নূরকে দেখে সবাই ওর কাছে দৌড়ে এলো নূরকে দেখার জন্য। নূরকে দেখে সবাই খুশিতে আত্মহারা হয়ে উঠেছে।
আদিত্য সবার উদ্দেশ্যে বলে উঠলো।
….নূরের এখন রেস্টের দরকার। তোমরা সবাই ওর সাথে পরে দেখা করো।
আদিত্যের বাবা মাথা ঝাকিয়ে বললো।
….হ্যাঁ ঠিকই বলেছিস, তুই ওকে রুমে নিয়ে যা।
আদিত্য নূরকে নিয়ে ওর রুমে গিয়ে বেডের ওপর শুইয়ে দিল। নূরের পাশে বসে কতক্ষণ নূরের দিকে তাকিয়ে থেকে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। কিছুক্ষণ আদিত্য উঠে গিয়ে কাবার্ড থেকে কাপড়চোপড় বের করে ওয়াশরুমে গেল ফ্রেশ হতে। আজ কতোদিন হয়ে গেল নিজের দাড়ি মুছ কাটেনা ও। পুরো জংলী দেখা যাচ্ছে ওকে। তাই আজ ভালো করে ফ্রেশ হবে ও। যাতে নূরের কাছে সেই আগের মতো হ্যান্ডসাম লাগে ওকে।
—
আবির আজ হাসিমুখে রুমে ঢুকলো। তানি বেডে বসে ছিল , আবির যেয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে বললো।
….কি।করছে আমার কিউটিপাই টা? শরীর কেমন এখন?
আবিরকে এতো খুশী দেখে তানিরও অনেক ভালো লাগছে। আজ কতোদিন পর আবিরকে আগের মতো হাসিখুশি দেখছে। ও জানে এসব নূরকে ফিরে পাওয়ার জন্য হয়েছে। মনে মনে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাল তানি। সবকিছু ঠিক করে দেওয়ার জন্য। আবির এবার তানির পেটে হাত বুলিয়ে বললো।
….আর আমার বেবিটা কেমন আছে?
তানি বলে উঠলো।
….বেবি না বলো বাবা। আমার ছেলে হবে। যে বড়ো হয়ে নূরের মেয়েকে বিয়ে করবে।
…..ওকে ওকে, তো বাবা জানো আজকে আমরা কাকে পেয়েছি? তোমার হবু শাশুড়ীকে পেয়েছি। তুমি খুশিতো? তোমার শাশুড়ী চলে এসেছে, এখন কিছুদিন পর তোমার বউও চলে আসবে।
আবিরের কথায় দুজনেই হেসে দিল। কিছুক্ষণ পর তানি বলে উঠলো।
….আচ্ছা নূরের এই অবস্থা কি করে হলো?আর কেইবা করলো এসব?
আবির একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো।
….এটাতো একমাত্র নূর ভাবির স্মৃতি ফিরে আসার পরেই জানা যাবে। তার আগে কিছুই বলা যাচ্ছে না।
তানি মুচকি হেসে বললো।
….চিন্তা করোনা সব ঠিক হয়ে যাবে।
——
নূর পিটপিট করে চোখ খুলে তাকালো। চোখ খুলে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো। জায়গা টা চিনতে পারছে না ও। হঠাৎ নিজেকে অপরিচিত জায়গায় দেখে নূর ঘাবড়ে গেল। এক ঝটকায় উঠে বসে ভীতু ভাবে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো। নতুন জায়গা দেখে ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে কাপতে লাগলো। এটা কোন জায়গা? আমি এখানে কিভাবে এলাম?
তখনই আদিত্য ওয়াশরুমের দরজা খুলে বের হলো। নূরকে এভাবে দেখে আদিত্য ঘাবড়ে যেয়ে দ্রুত নূরের কাছে আসতে নিলেই, নূর আরও ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে বেডের কোনায় লেগে গেল। ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলে উঠলো।
….আ আমার কাছে আসবেন না। কে আ আপনি?
আদিত্য বুঝতে পারছে নূর নতুন জায়গা দেখে ঘাবড়ে গেছে। তাই নূরকে শান্ত করার জন্য কিছুটা দূর থেকেই দুই হাত স্যারেন্ডার করার মতো উঁচু করে ফ্লোরে হাঁটু গেড়ে বসে বললো।
….ওঁকে ওঁকে রিল্যাক্স, কাম ডাউন। আমি আসছি না তোমার কাছে। দেখ আমি আদিত্য, তোমার আদিত্য তোমার হাসব্যান্ড। আর তুমি নূর, আমার নূর আমার প্রাণপাখী আমার ওয়াইফ। আর এটা আমাদের বাড়ি, তোমার বাড়ি। পেছনে তাকিয়ে দেখ।
আদিত্যের কথায় নূর একটু শান্ত হলো। আদিত্যের কথামতো পেছনে তাকিয়ে দেখলো দেয়ালে নূর আর আদিত্যের বড়ো একটা ছবি টানানো। নূর অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো ছবিটার দিকে। এই লোকটা কি সত্যি ওর স্বামী? নূর এবার বাচ্চাদের মতো শান্ত চোখে আদিত্যের দিকে তাকালো। আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
…..এখন ভয় কমেছে নূর?
নূর আস্তে করে বলে উঠলো।
…..নূর? আমি নূর?
….হ্যাঁ তুমি নূর। মিসেস নূর সাদমান শাহরিয়ার।
নূর কিছুক্ষণ চিন্তা ভাবনা করতে লাগলো। উনার কথা অনুযায়ী আমার নাম নূর। আর উনি আমার স্বামী। কিন্তু আমার কিছু মনে নেই কেন?
আদিত্য উঠে দাঁড়িয়ে বললো।
….এখন বসতে পারি তোমার পাশে?
নূর কিছুক্ষণ চিন্তা ভাবনা করে আস্তে করে হালকা ঘাড় কাত করে অনুমতি দিল। আদিত্য মুচকি হেসে নূরের সামনে যেয়ে বসে বললো।
….দেখ তুমি ভয় পেয়না। এই বাড়ি এই বাড়ির লোকেরা সবাই তোমার আপনজন। আমি জানি তোমার কিছু মনে নেই। তাই তোমার এসব কিছুতে মানিয়ে নিতে একটু সময় লাগবে। তোমার যতো সময় লাগে তুমি নেও। আমার কোনো জলদি নেই। আমার বিশ্বাস ধীরে ধীরে সব আবার আগের মতো হয়ে যাবে। তুমি আবারও সেই আগের নূর হয়ে যাবে। ঠিক আছে?
নূর শুধু চুপচাপ আদিত্যের কথা শুনে গেল। নিজে কিছুই বললো না। আদিত্য আবার বলে উঠলো।
….তুমি এবার একটু ফ্রেশ হয়ে এসো, ভালো লাগবে। কাবার্ডে তোমার সব কাপড়চোপড় রাখা আছে। ওখান থেকে যেটা ভালো লাগে ওটা নিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসো।
নূর আস্তে করে মাথা ঝাকিয়ে উঠে গিয়ে কাবার্ড খুলে একটা থ্রি পিচ নিয়ে ওয়াশরুমে গেল।
বিশ মিনিট পর নূর শাওয়ার নিয়ে বের হলো। আদিত্য নূরের দিকে তাকাতেই ওর চোখ আটকে গেল। সদ্য শাওয়ার নিয়ে বের হওয়ায় নূরকে একদম স্নিগ্ধ লাগছে। ভেজা চুলগুলো থেকে টপটপ করে পানি পরছে। আজ কতদিন পর নূরকে এভাবে দেখছে। আগে হলে আদিত্য এখুনি যেয়ে ওর দুষ্টুমি শুরু করে দিত। তবে আজ সেটা করতে পারছে না। কিন্তু এটা নিয়ে আদিত্যের কোনো আপসোস নেই। ও যে ওর প্রাণপাখীকে চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছে এটাই ওর কাছে অনেক। আল্লাহ সহায় থাকলে বাকি সবও সময়ের সাথে ঠিক হয়ে যাবে। এসব ভেবে আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
….তুমি তো চুল ভালো করে মোছই নি। ঠান্ডা লেগে যাবে তো। তুমি কিছু মনে না করলে আমি মুছে দেই?
নূর কিছু না বলে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। আদিত্য মুচকি হেসে তোয়ালে দিয়ে নূরের চুল মুছে দিল। তারপর চিরুনি দিয়ে সুন্দর করে চুলগুলো আঁচড়ে দিল। নূর মাথা নিচু করে চোরা চোখে বারবার আদিত্যকে দেখছে। লোকটার প্রতি কেমন যেন একটা অদ্ভুত টান অনুভব করছে ও। মনে হচ্ছে হৃদয়ের খুব
কাছের কেও।
চুল আঁচড়ান শেষে আদিত্য নূরকে বেডের ওপর বসিয়ে বললো।
…..তুমি একটু বসো এখানে আমি তোমার জন্য খাবার নিয়ে আসছি।
হঠাৎ দরজার কাছে কিছু ফুসুরফাসুর আওয়াজ শুনতে পেল। আদিত্য বুঝতে পারছে বাইরে কি হচ্ছে। তাই মুচকি হেসে বলে উঠলো।
….ভেতরে আসো সবাই। আর বাইরে দাঁড়িয়ে আর অধৈর্য হতে হবে না।
বলার সাথে সাথে সবগুলো হুরমুর করে ভেতরে ঢুকলো। নূরের সাথে দেখা করার জন্য সবাই কখন থেকে অধৈর্য্য হয়ে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল। নূরের খবর শুনে ওর বাবা আর ভাইও চলে এসেছে দেখা করতে।
একসাথে এতো মানুষকে দেখে নূর ঘাবড়ে গেল। ও জড়োসড়ো হয়ে আদিত্যের পেছনে লুকিয়ে আদিত্যের হাতা খামচে ধরলো। আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো।
…..ভয় নেই নূর এরা সবাই তোমার পরিবার। তোমাকে এতদিন পর পেয়েছে তাই দেখা করতে এসেছে।
আদিত্যের কথায় নূর একটু স্বাভাবিক হলো। তবে আদিত্যের হাতা ছাড়ল না। আদিত্যের হাতা ধরেই বসে রইলো। ওরা সবাই এক এক করে নূরের কাছে এসে কথা বলতে লাগলো। নূর শুধু চুপ করে ওদের কথা শুনলো।প্রথমে ওর বাবা এসে নূরের মাথায়া হাত বুলিয়ে কিছুক্ষণ কাঁদাকাটি করলো। তারপর আদিত্যের বাবা, দেখা করলো। তারপর আদিত্যের চাচা, আদিত্যের চাচী এসে বললো।
….ডাটার ইন লাউ, হোয়ার গোইং হয়েছিলে তুমি? জানো তোমার স্টেশনে স্টেশনে (টেনশনে) আমাদের সবার স্লিপার (ঘুম) হারিয়ে গিয়েছিল জানো?
চাচীর কথা নূর কিছুই বুঝতে পারছে না। ও বোকার মতো তাকিয়ে রইল। সানা বলে উঠলো।
….তোমার ইংলিশ শুনে ভাবি আবারও হারিয়ে যাবে।
সানার কথায় সবাই হেসে দিল। এবার তানি এসে বসলো নূরের কাছে। ছলছল চোখে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে উঠলো।
….তুই জানিস তোর মেয়ের জামাই আসতে যাচ্ছে।
তানির কথা বুঝতে না পেরে নূর ভ্রু কুঁচকে তাকালো।
তানি নূরের হাতটা নিজের পেটের ওপর রেখে বললো।
….এইযে এখানে তোর মেয়ের জামাই আসছে। তোর কিন্তু এখন থেকেই আমার সেবা করতে হবে বুঝলি? তাহলেই ভবিষ্যৎে তোর মেয়ে সুখে থাকবে বুখেছিস?
তানির কথায় নূর জোরপূর্বক একটা হাসি দিল। সবার দেখা করা শেষে আদিত্যের বাবা বলে উঠলো।
….আচ্ছা আচ্ছা এখন সবাই চলো রাত অনেক হয়েছে ওদের আরাম করতে দাও। বাকি কথা কাল বলো।
সবাই মাথা ঝাকিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেল।আদিত্য সানার দিকে তাকিয়ে বললো।
….আচ্ছা শোন আমাদের জন্য খাবার উপরে পাঠিয়ে দিস।
…..ঠিক আছে ভাইয়া।
একটু পরে কাজের লোক এসে আদিত্যদের রুমে খাবার দিয়ে গেল। আদিত্য প্লেটে খাবার বেড়ে নূরের সামনে বসে বললো।
….তুমি কিছু মনে না করলে আমি খাইয়ে দেই তোমাকে?
নূর কিছুক্ষণ কাচুমাচু করে এদিক ওদিক তাকালো। তারপর আস্তে করে ঘাড় কিঞ্চিৎ কাত করে হ্যাঁ বুঝালো। এইটুকুতেই আদিত্য অনেক খুশি হয়ে গেল। এতোদিন পর ও ওর প্রাণপাখীকে নিজের হাতে খাওয়াতে পারবে। আদিত্য হাসি মুখে নূরকে খাইয়ে দিতে লাগলো। নূর খাচ্ছে আর আরচোখে আদিত্যকে দেখছে। কয়েক লোকমা খাওয়ার পর নূর আস্তে করে বললো।
….আ আপনি খাবেন না?
নূরের কথায় আদিত্য মায়া ভরা চোখে নূরের দিকে তাকালো। একটা ঢোক গিলে মুচকি হেসে বললো।
….হ্যাঁ হ্যাঁ খাবোতো।
কথাটা বলে আদিত্য নিজের মুখেও এক লোকমা খাবার নিল। খাওয়া শেষে হাত ধুয়ে থালাবাসন গুছিয়ে নিচে রেখে আসলো।
আদিত্য রুমে এসে দেখলো নূর বেডের বসে কেমন যেন কাচুমাচু করছে। আদিত্য ব্যাপার টা বুঝতে পেরে নূরের সামনে বসে মুচকি হেসে বলে উঠলো।
…. দেখ ঘাবড়ানোর দরকার নেই। আমি জানি তোমার এইমুহূর্তে আমার সাথে স্বাভাবিক হাসব্যান্ড ওয়াইফের মতো থাকার মন মানসিকতা তৈরি হয়নি। তাই আমি তোমাকে কোনো বিষয়ে জোর করবো না। তুমি যেভাবে চাও সেভাবেই হবে। শুধু তোমার কাছে একটা অনুরোধ। প্লিজ আমাকে এই রুমেই থাকতে দেও। আমার ওপর ভরসা রাখ।আমি বেডে শুবনা, আমি ওখানে ডিভানে শুয়ে থাকবো, তবুও আমাকে এই রুমে একটু থাকতে দেও। যাতে রাতে অন্তত তোমার মুখটা দেখতে পারি। নাহলে যে আমি শান্তি পাবোনা। প্লিজ?
নূর আবারও হালকা ঘাড় কাত করে বুঝাল ঠিক আছে। আদিত্য খুশী হয়ে বললো।
….ঠিক আছে তাহলে তুমি বেডে শুয়ে পড়ো।
নূর মাথা ঝাকিয়ে কাত হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো। আদিত্য নূরের ওপর চাদর টেনে দিয়ে নিজে যেয়ে ডিভানে শুয়ে পড়লো। ডিভানে শুয়ে নূরের দিকে তাকিয়ে রইলো। আজ কতদিন পর ওর শান্তির ঘুম হবে কারণ ওর প্রাণপাখী ফিরে এসেছে ওর কাছে।
আধাঘন্টা পর নূর গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল। আদিত্যের এখনো ঘুম নেই চোখে, ওতো ওর প্রাণপাখীকে দেখতে ব্যাস্ত। যত দেখছে মনই যেন ভরছে না।ওর খুব ইচ্ছে করছে নূরকে বুকে জড়িয়ে ঘুমাতে। কতদিন হলো ও ওর প্রাণপাখীকে বুকে জড়িয়ে ঘুমায় না। কথাটা ভেবে আদিত্য নূর ঘুমিয়ে পড়েছে বুঝতে পেরে আস্তে করে উঠে নূরের কাছে গেল। নূরের কাছে এসে বেডের পাশে নূরের মুখোমুখি হয়ে ফ্লোরে বসলো। আলতো করে নূরের গালে হাত বুলিয়ে মায়া ভরা চোখে তাকিয়ে রইলো। তারপর নূরের হাত ধরে হাতের পিঠে চুমু খেয়ে নিজের গালের সাথে লাগিয়ে ধরলো। চোখ দিয়ে দু ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো। আদিত্য মনে মনে বললো।
….প্রাণপাখী তোমার সাথে এসব যে করেছে তাকে আমি কিছুতেই ছাড়বো না। কিছুতেই না। একবার শুধু তোমার সব মনে পড়ে যাক তারপর ওই কালপ্রিট কে আমার হাত থেকে কেউ বাচাতে পারবো না। আমি তাকে এমন ভয়াবহ শাস্তি দেব যে সে নিজেই আমার পা ধরে তার মৃত্যু কামনা করবে। আই প্রমিজ ইউ প্রানপাখী।
এসব ভাবতে ভাবতে আদিত্য নূরের হাত ধরে বেডের ওপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লো।
ঘন্টাখানিক পর নূর হঠাৎ অন্য দিকে ঘুরতে নিলে ওর হাতে টান পড়লো। নূর চোখ খুলে দেখলো আদিত্য ওর হাত ধরে ঘুমিয়ে আছে। নূর অবাক হয়ে কতক্ষণ তাকিয়ে রইলো। কিছু বলতে যেয়েও বলতে পারলোনা নূর। আদিত্যের মুখের দিকে তাকিয়ে ওর খুব মায়া হলো। লোকটা যে ওকে পাগলের মতো ভালোবাসে সেটা কিছুটা হলেও ও বুঝতে পেরেছে। নূরও তাই কিছু না বলে আদিত্যর হাত ধরেই আবার ঘুমিয়ে পড়লো।
এভাবে দেখতে দেখতে দুই দিন কেটে গেল। আদিত্য প্রতিরাতেই নূরের হাত ধরে ঘুমায়। এই দুই দিনে নূরের তেমন কোনো উন্নতি দেখা যায় নি। শুধু আগের থেকে একটু ভয়টা কমেছে। কিন্তু নূর এখনো তেমন কথা বলে না। সবসময় মনমরা হয়ে চুপচাপ নিজের রুমে বা বেলকনিতে বসে থাকে। সবার সাথে তেমন কোনো কথা বলেনা। নূরকে এভাবে দেখে আদিত্যের খুব খারাপ লাগে। আদিত্য চায় নূর আগের মতো আবার হাসিখুশি প্রানচঞ্চল হয়ে উঠুক। নূরকে স্বাভাবিক করার জন্য নূরের বেশি করে কথা বলাটা জরুরি। কথাটা ভেবে আদিত্য মনে মনে একটা প্ল্যান করলো। ও জানে কিভাবে নূরকে সবার সাথে ফ্রী করা যায়।
বিকাল ৪টা
দুপুরের খাবার খেয়ে নূর একটু ঘুমিয়ে ছিল। হঠাৎ নিচ থেকে মানুষের হইচইয়ের শব্দে নূরের ঘুম হালকা হয়ে এলো। নূর আড়মোড়া ভেঙে চোখ খুলে উঠে বসলো। নিচ থেকে অনেক জোরে জোরে কথা আর হাসাহাসির শব্দ আসছে। নূর মনে কৌতূহল জাগলো। বিষয়টা দেখার জন্য নূর বেড থেকে নেমে ধীরে ধীরে রুমের বাইরে বেরিয়ে এলো। করিডরে এসে উপর থেকে নিচে উঁকি দিয়ে দেখলো। নিচে আদিত্য,আবির,তাসির সায়েম, তানি,সানা আর নিশি মিলে কি যেন করছে আর খুব হাসাহাসি করছে। নূরের ইচ্ছে হলো বিসয়টা দেখার। নূর ধীরে ধীরে সিড়ি বেয়ে নিচের দিকে আসলো।
আদিত্য আরচোখে তাকিয়ে নূরকে আসতে দেখে সবার দিকে তাকিয়ে আস্তে করে বললো।
….শোন আমাদের প্ল্যান কাজ করছে। নূর এদিকে আসছে, সবাই ওর সামনে একদম আগের মতো স্বাভাবিক বিহেব করবি।
সবাই মাথা ঝাকিয়ে সায় দিল
চলবে…….