ভালোবাসার চেয়েও বেশি 💞পর্ব-৭৪

0
5030

#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি 💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-৭৪

★ নূর নিচে আসতেই আবির মুচকি হেসে বলে উঠলো।
….আরে আরে ভাবি আসো আসো এখানে বসো।

তানি বলে উঠলো।
…আরে ভাবি না বলো BB

আবির ভ্রু কুঁচকে বললো।
….BB?

….হ্যাঁ BB। ভাবি প্লাস বিয়াইন সাব। এখন থেকেই অভ্যাস করে নেও বলার।

আবির মুচকি হেসে বললো।
….ওকে ওকে তো BB এখানে এসে আমাদের শোতে অংশগ্রহণ করুন।

নূর আস্তে করে বললো।
….শো?

….হ্যাঁ শো। আজ আমরা কে হবে রোডপতি খেলছি। আসো তুমিও বসে শো এনজয় করো।

নূর মুচকি হেসে আদিত্যের পাশে গিয়ে বসলো। আবির হাসি মুখে বলে উঠলো।
….সো সাহেবান, মেহেরবান কাদারদান,খিলিপান,মিঠাপান,পানদান,থুকদান, মরা গরু টেনে আন। আপনাদের সবাইকে আমাদের শোতে আমন্ত্রণ। আর যে আমাদের শো দেখতে চায় না সে পঁচা নালায় ডুবে যান। তো লেটস প্লে কে হবে রোডপতি।

একটা গোল টেবিলের দুই পাশে দুইটা চেয়ার রাখা হয়েছে। টেবিলের ওপর দুইপাশে দুইটা ফেক কম্পিউটার স্ক্রিন লাগিয়ে রেখেছে। আবির একপাশের চেয়ারে বসে বলে উঠলো।
….তো আমাদের প্রথম প্লেয়ার হলেন। দ্যা ওয়ান এন্ড অনলি আমাদের আদিত্য আর নূর ভাবির একমাত্র মেয়ের হবু শাশুড়ী, বর্তমানে যার পেটে আমার ছেলে এবং ভাইয়ের জামাই। তো ওয়েলকাম মিসেস শাশুড়ী। আপনাকে হট সিটে স্বাগতম।

সবাই একসাথে তালি বাজিয়ে উঠলো।
তানি সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সেলিব্রিটিদের মতো সবার দিকে হাত নাড়িয়ে বললো।
….থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ বাচ বাচ। অনেক অনেক ধন্যবাদ।
তানি যেয়ে চেয়ারে বসে বলে উঠলো।
….এ্যাংকার জি আপনি তো বললেন এটা নাকি হট সিট। কিন্তু এটাতো একদম ঠান্ডা, মোটেও হট না?

আবির বলে উঠলো।
…চিন্তা করবেন না, আমরা সিটের নিচে চুলা জালিয়ে দেব। তাহলেই দেখবেন একদম হট হয়ে যাবে।

তানি এটিটিউডের হাসি দিয়ে বললো।
…ওও ধন্যবাদ ধন্যবাদ, ইউ আর সো কাইন্ড।

…মেনশান নট ম্যাম। তো খেলা শুরু করা যাক?

…জ্বি জ্বি অবশ্যই

এসব দেখে ধীরে ধীরে নূরের ভালো লাগছে। ওদের কাজকর্ম এনজয় করছে ও।

আবির বলে উঠলো।
….খেলা শুরু করার আগে। আপনাকে নিয়মটা বুঝিয়ে দেই। আপনাকে একটা করে প্রশ করা হবে। প্রতিটি প্রশ্নের চারটি করে অপশন থাকবে। প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলো আপনি পাবেন মোটা অংকের ধনরাশি। যা দিয়ে আপনার পরবর্তী সাত প্রজন্ম বসে বসে খেতে পারবে। আপনার সহযোগিতার জন্য চারটি পাইপ লাইন (লাইফ লাইন) দেওয়া আছে একটা অডিয়েন্স পোল, ফোনো ফ্রেন্ড, টি টোয়েন্টি (ফিফটি ফিফটি) এবং এক্সপার্ট এডভাইজ।

আবিরের পেছনে দুটো চেয়ারে নিশি আর সায়েম এক্সপার্ট সেজে বসে আছে। নিশি মাথার ওপর বড় একটা খোপা করে ভাব নিয়ে বসে আছে। আর সায়েম বিশাল বড় সাইজের চশমা পরে বসে আছে। আবির হাত দিয়ে ইশারা করে ওদের দেখিয়ে বললো।
….আমাদের সাথে আজকে এক্সপার্টের ভূমিকায় আছে দা মোস্ট, দাআআ মোস্ট অচেনা অজানা আর একদমই ফালতু এবং ভাংঙ্গার দুজন লোক। যাদের নামটাও আমি বলতে চাই না আপনারা নিজেরাই দেখে নিন।

সায়েম আর নিশি ভাব নিয়ে ধন্যবাদ বললো। যেন ওদের মাত্রই ওদের কতো প্রশংসা করা হয়েছে।

নূরের এসব দেখে অনেক মজা লাগছে। নূরকে এনজয় করতে দেখে আদিত্যেরও অনেক ভালো লাগছে।

আবির বলে উঠলো।
…..তাহলে শুরু করা যাক? তো এই হলো আপনার প্রথম প্রশ্ন কানা দশ পয়সার জন্য, আপনার কম্পিউটার স্ক্রিনে। প্রশ্ন হলো।
একটা গান আছে “ও টুনির মা তোমার টুনি কথা শোনে না” তো প্রশ্ন হলো টুনি কেন কথা শোনে না?
অপশন ১. টুনির কানে ময়লা জমেছে তাই ও শুনতে পাচ্ছে না।
অপশন ২.টুনির কানে পঁচন ধরেছে তাই ও শুনতে পাচ্ছে না।
অপশন ৩.টুনি কানে হেডফোন লাগিয়ে রেখেছে তাই ও শুনতে পাচ্ছে না।
অপশন ৪. টুনির কানপুরে হরতাল চলছে তাই ও শুনতে পাচ্ছে না।

তানি গভীর চিন্তা ভাবনা করছে যেন বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা হয়েছে ওকে। আবির বলে উঠলো।
…..আপনি চাইলে এক্সপার্ট এডভাইজ নিতে পারেন। তো এক্সপার্টরা আপনারা কিছু বলতে চান এ ব্যাপারে?

নিশি বিজ্ঞ জ্ঞানী বিদদের মতো বলে উঠলো।
…..হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই। আমার মনে হয় টুনি,,,

নিশিকে মাঝখানে থামিয়ে দিয়ে সায়েম বলে উঠলো।
….আরে আপনার মনের কথা আপনার কাছেই রাখুন। এটা অনেক ডিফিকাল্ট প্রশ্ন, আপনি এসবের কি জানেন? আমাকে বলতে দিন। আম…আমার হিসেবে টুনি,,

এবার নিশি সায়েম কে থামিয়ে দিয়ে বলে উঠলো।
….এক্সকিউজ মি মিঃ, হাউ ডেয়াট ইউ? আপনি কি বলতে চান হ্যাঁ? আর ইউ ট্রাইং টু সে দ্যাট আই এ্যাম এ ফুল?

সায়েম তাচ্ছিল্যের সুরে বলে উঠলো।
…এতে বলার কি আছে? আপনাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে। আপনি আপনার মাথার ওপর যে মাটির পাতিল বানিয়ে রেখেছেন সেটা আগে সামলান। নাহলে আপনি এটার নিচেই চাপা পড়ে মরে যাবেন। আপনি এককাজ করুন আপনার এই খোপায় প্রতিদিন পানি ঢালুন দেখবেন একদিন আপনার খোঁপা বাচ্চা দিয়ে দিবে।হা হা হা

নিশি দাত কিড়মিড় করে সায়েমের দিকে আঙুল তুলে বলে উঠলো।
….দেখুন মিষ্টার আপনি কিন্তু মানবাধিকার লঙ্ঘন করছেন। আপনি নিজের চেহারা দেখেছেন। মুখের ওপর চশমা পড়েছেন নাকি চশমার ওপর মুখ লাগিয়েছেন তাই বোঝা যাচ্ছে না। আইছে আমার ওপর কমেন্ট করতে। আরে আপনাকে দেখে তো উগাণ্ডার গরিলাও নিজেকে হ্যান্ডসাম ভাববে।

….আর আপনার চেহারা দেখে বান্দরনি রাও নিজেদের বিশ্ব সুন্দরী ভাববে।

….দেখুন আপনি কিন্তু লিমিট ছাড়িয়ে যাচ্ছেন? আয়নায় নিজের চেহারা দেখেছেন? পোকা ধরা পঁচা বেগুনের মতো মুখ আপনার।

…..আমার চেহারা তাও দেখা যায়। আপনার মুখ দেখে তো আমার বমি এসে যাচ্ছে। আপনার মুখ তো ব্যান্ড হওয়া উচিত। এই মুখ নিয়ে কখনো বাইরে বের হবেন না।বাচ্চারা ভয় পেয়ে যাবে।

….আরে আপনার মুখ দেখে তো থু দিতে ইচ্ছে করছে। আত্থু।

….আপনি থু তো আমি ডাবল থু থু।

…আপনি থু

….আপনি থু

নিশি আঙুল তুলে রেগে আবারও কিছু বলতে যাবে তখনই হঠাৎ নূর খিলখিল করে হেসে উঠলো। দুই হাতে তালি বাজিয়ে বাজিয়ে হাসতে লাগলো। নূরকে হাসতে দেখে সবাই ওর দিকে তাকালো। সবাই মনে মনে অনেক খুশী, শেষমেশ ওদের প্ল্যান কাজ করেছে। নূরকে এভাবে মন খুলে হাসতে দেখে আদিত্যের মন প্রাণ জুড়িয়ে যাচ্ছে। এই হাসির জন্যই তো এতকিছু করেছি। আদিত্য মুচকি হেসে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে নূরের দিকে। এই হাসির জন্য ও সবকিছু করতে পারে।

একটু পরে আবির তানির দিকে তাকিয়ে বললো।
…..তাহলে বলুন আপনার সঠিক উত্তর কোনটি?

তানি একটু চিন্তা করে বললো।
….উমম আমার মনে হয় অপশন ৪. টুনির কানপুরে হরতাল চলছে তাই ও শুনতে পাচ্ছে না।

….আর ইউ শিওর? লক করে দেয়?

….জ্বি লক করে দিন।

….তো অপশন ৪ লক করা হোক।

আবির সিরিয়াস মুড নিয়ে বললো।
….আপনার উত্তর ,,,

তানি টেনশনে নখ কামড়িয়ে বললো।
….আরে ভাই তাড়াতাড়ি বলুন না৷ টেনশনে আমার বাচ্চা বাইরে না চলে আসে।

আবির হঠাৎ হাসিমুখ করে বললো।
….আপনার উত্তর সঠিক হয়েছে। আপনি জিতে গেছেন দশ পয়সার কানা কয়েন। তালিয়া,,

সবাই তালি বাজাল।
তানি খুশিতে চিল্লিয়ে বলে উঠলো।
….ইয়েএএএএএ আমি জিতে গেছি, জিতে গেছি আমি।

আবির একটা দশ পয়সার কানা কয়েন তানির হাতে দিয়ে বললো।
….এই নিন আপনার জিতে যাওয়া এমাউন্ট। এই খুশির মুহূর্তে আপনার অনূভুতি টা জানান আমাদের।

তানি খুশিতে গদগদ হয়ে বললো।
….জ্বি জ্বি অবশ্যই। আসলে কি বলবো ভেবে পাচ্ছি না। খুশিতে চোখে পানি চলে এসেছে আমার। ইতনি খুশি,ইতনি খুশি, ইতনি খুশি মুঝে আজতাক নেহি মিলি🤧। আমি আমার এই প্রাপ্তির জন্য ধন্যবাদ জানাতে চাই আমার মা বাবা,দাদা দাদী, পর দাদা দাদী, চাচ চাচী,ফুফু ফুফা,খালা খালু,নানা নানী, আমার প্রতিবেশী, আমার বাসার কাজের লোক মিনুু আরও,,

আবির তানির রেলগাড়ী থামিয়ে দিয়ে বলে উঠলো।
….বাচ বাচ ম্যাম, আমরা আপনার মনোভাব বুঝতে পেরেছি। আপনি এখন আপনার সিটে যেয়ে বসুন।

…জ্বি জ্বি ধন্যবাদ।
কথাটা বলে তানি যেয়ে সোফায় বসলো।

নূর এসব দেখে অনেক মজা পাচ্ছে। আর হাসছেও অনেক। আর নূরকে দেখে আদিত্যের মন ভরে যাচ্ছে।
আবির এবার বলে উঠলো।
…..তো আমরা এবার ডেকে নেব আমাদের নেক্সট প্লেয়ার। এবং আমাদের নেক্সট প্লেয়ার হলো মিস সানা।

সানাও উঠে দাঁড়িয়ে সেলিব্রিটিদের মতো হাত নাড়িয়ে হেলেদুলে যেয়ে হটসিটে বসলো।

আবির বলে উঠলো।
…..তো মিস সানা আপনার প্রথম প্রশ্ন হলো পচিশ পয়সার জন্য। আপনার প্রশ্ন হলো, বিয়ের পরে আপনি আপনার স্বামীকে কোন কাজটা প্রথমে করাতে চাইবেন?
অপশন ১.তাকে দিয়ে ঘর মোছাবেন।
অপশন ২.তাকে দিয়ে কাপড় কাচাবেন।
অপশন ৩.তাকে দিয়ে থালাবাসন মাজাবেন।
অপশন ৪.তাকে দিয়ে আপনার পা টিপাবেন।

আবিরের অপশন গুলো শুনে বেচারা তাসিরের গলা শুকিয়ে আসছে। কি বলছে এসব আবিরের বাচ্চা?

সানা গালে হাত দিয়ে গভীর চিন্তা করে বললো।
…….হুমমম, এটাতো অনেক কঠিন প্রশ্ন। আমারতো সবগুলো অপশনই পছন্দ। আমিতো এসবগুলোই করাতে চাই।

সানার কথা শুনে তাসির বেচারার এবার অজ্ঞান হওয়ার উপক্রম। ওর চোখের সামনে ওর ভবিষ্যৎ ভেসে উঠলো।যেখানে ও এসব কাজ করছে, আর সানা বসে বসে ওর ওপর হুকুম চালাচ্ছে।
তাসিরের এমন করুন অবস্থা দেখে সবাই মুখ টিপে হাসছে।

আবির বলে উঠলো।
……যাইহোক আপনাকে একটা অপশন তো বলতেই হবে।

সানা কিছুক্ষণ ভেবে বলে উঠলো।
….উমম ঠিক আছে অপশন ৪ লক করে দেন।

….ওকে, আর আপনার উত্তর সঠিক হয়েছে। আপনি পাচ্ছেন এই পচিস পয়সার কানা কয়েন।

সানা খুশিতে গদগদ হয়ে বললো।
…..ধন্যবাদ ধন্যবাদ, এতো টাকা আমি কোথায় রাখবো? ইনকাম ট্যাক্স ওলারা আবার ব্লাক মানি রাখার অভিযোগে আমার বাসায় রেইড না দিয়ে দেয়,?

আবির বলে উঠলো।
…..ঠিক আছে এখন আপনার দ্বিতীয় প্রশ্ন আসছে কানা পঞ্চাশ পয়সার জন্য। একটা গান আছে”চুমকি চলেছে একা পথে “। তো প্রশ্ন হলো, চুমকি একা কোথায় যাচ্ছে?
অপশন ১. চুমকির অনেক জোরে বাথরুম এসেছে তাই ও তাড়াতাড়ি বাথরুমে যাচ্ছে।
অপশন ২.চুমকি রিলিফের চাল নেওয়ার লাইনে দাড়ানোর জন্য তাড়াতাড়ি যাচ্ছে।
অপশন ৩. চুমকির জুতা ছিড়ে গেছে তাই ও তাড়াতাড়ি সবার আড়ালে যেতে চাচ্ছে।
অপশন ৪. চুমকি করোনার টিকা দিতে যাচ্ছে।

সানা গভীর চিন্তা করে বললো।
……হুমমম এটাতো আরো কঠিন মনে হচ্ছে। বুঝতে পারছি না কিছু।

…..আপনার কাছে পাইপ লাইন আছে। আপনি চাইলে সেখান থেকে সাহায্য নিতে পারেন। আপনি অডিয়েন্স পোল ব্যবহার করতে পারেন।

….ঠিক আছে আমি অডিয়েন্স পোল ব্যবহার করতে চাই।

….ঠিক আছে অডিয়েন্স পোল আনা হোক।

একটু পরে সায়েম আর তাসির মিলে একটা পোল ডান্সের পোল এনে মাঝখানে রাখল। আবির সেটা দেখিয়ে সানাকে বললো।
…..আপনাকে পোলের সাথে পোল ডান্স করতে হবে। আপনার ডান্স দেখে অডিয়েন্স ইমপ্রেস হলে তারা আপনাকে হেল্প করবে।

সানা মাথা ঝাকিয়ে উঠে গিয়ে পোল ধরে ঘুরে ঘুরে পোল ডান্স করতে লাগলো।
♬ ♬ মে লাভলী হো গায় ইয়ার
♬ ♬ নাম তেরা পাড়কে নাম তেরা পাড়কে
♬ ♬ মে লাভলী হো গায় ইয়ার
♬ ♬ নাম তেরা পাড়কে নাম তেরা পাড়কে

সানার ডান্স দেখে সবাই তালি বাজাল। তারপর সবাই মিলে অপশন ১. বলতে বললো। সানা সবার কথামতো অপশন ১.ই সিলেক্ট করলো।এবং উত্তর ঠিক হলো। সানার খেলা শেষে এবার আবির বলে উঠলো।
…..এখন আমাদের সাথে খেলবে আমাদের নূর ভাবিইই। সবাই তালি বাজিয়ে তাকে স্বাগতম করো।

নূর চমকে উঠে বললো।
……আ আমি?

আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল।
…..হ্যাঁ তুমি, যাবে ওখানে? দেখবে অনেক মজা লাগবে।

নূর কিছুক্ষণ ভেবে মুচকি হেসে মাথা ঝাকিয়ে সায় জানালো। তারপর আস্তে করে উঠে গিয়ে হট সিটে বসলো।

আবির বলে উঠলো।
…..তো ভাবি তোমার প্রথম প্রশ্ন ১টাকার জন্য হলো, ছোট হাতের এবিসিডি বড়ো হাতের এবিসিডির থেকে কতো ছোট?
অপশন ১.১ বছরের ছোট।
অপশন ২. ২বছরের ছোট।
অপশন ৩. ৩বছরের ছোট।
অপশন ৪. ৭মাসের ছোট।

আবিরের প্রশ্ন শুনে নূর ফিক করে হেসে দিল। তারপর একটু সবার মতো গভীর ভাব ধরে বললো।
……উমমম আমার মনে হয় অপশন ১. ১বছরের ছোট।

আবির হাতে তালি দিয়ে বললো।
….আরে বাহ্ বাহ্, ভাবিজী কামাল হো গেয়া, ধোতি ফাড় কে রুমাল হো গেয়া। আপনিতো জিতে গেছেন। এবং আপনি আজকে সবচেয়ে বেশি ধনরাশি জিতেছেন। পুরো এক টাকা।

নূর খুশী হয়ে লাফিয়ে উঠে বাচ্চাদের মতো হাতে তালি দিয়ে বললো।
…..সত্যিই? ইয়েএএএ

নূরকে এভাবে খুশী হতে দেখে আদিত্যের মনটা শান্তি পাচ্ছে। ওর চেষ্টা সফল হয়েছে। নূর সবার সাথে ফ্রী হওয়া শুরু করেছে।

আবির আবার বলে উঠলো।
…..তো এবার ১টাকা পচিস পয়সার জন্য আপনার দ্বিতীয় প্রশ্ন হলো, ফলের রাজা আম শুধু গরমের সময়ই কেন আসে? শীতের সময় কেন আসে না?
অপশন ১. আমের শীতের কাপড় নেই তাই শাীতে আসে না।
অপশন ২. শীতে আমের সর্দি লেগে যায় তাই ও শীতে আসে না।
অপশন ৩. শীতে আমের স্কিন খারাপ হয়ে যায় তাই ও শীতে আসে না।
অপশন ৪. আমের ইচ্ছা ও যখন খুশী তখন আসবে, এতে আমার বাপের কি?

নূর একটু ভেবে বললো।
….উমমম অপশন ৪.।

আবির আবারও তালি বাজিয়ে বলে উঠলো।
….ওয়াও ভাবিজী আপনি আবারও জিতে গেছেন।

নূর আবারও খুশি হয়ে গেল। এভাবে আরোও কিছুক্ষণ খেলা চলতে থাকলো। নূর ধীরে ধীরে সবার সাথে মিশে আনন্দ করতে লাগলো। আদিত্যের অনেক ভালো লাগছে এসব দেখে। সবাই একসাথে আনন্দ ফুর্তি করছে।

হঠাৎ নূরের কেমন যেন লাগতে শুরু করলো। ওর মনে হলো এমন কিছু ও আগেও অনেক করেছে। ওর চোখের সামনে কেমন আবছা আবছা স্মৃতি ভাসতে লাগলো। তবে ঠিক করে কিছু দেখা যাচ্ছে না। হঠাৎ নূরের মাথা কেমন যেন চক্কর দিয়ে উঠলো। মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে গেল। নূর দুই হাতে নিজের মাথা চেপে ধরলো।

আদিত্য এটা দেখে প্রচুর ভয় পেয়ে গেল। দৌড়ে এসে নূরকে ধরে বললো।
….কি হয়েছে প্রাণপাখী? শরীর খারাপ লাগছে? মাথা ব্যাথা করছে?

নূর আস্তে করে বললো।
…হ্যাঁ অ অনেক মাথা ব্যাথা করছে।

তাসির বলে উঠলো।
….আদি নূরকে রুমে নিয়ে যা। ওর এখন আরামের দরকার।

আদিত্য মাথা ঝাকিয়ে নূরকে কোলে নিয়ে রুমে চলে এলো। নূরকে বেডে শুইয়ে দিয়ে বললো।
….প্রাণপাখি তুমি শুয়ে থাক। আমি তোমার মাথা টিপে দিচ্ছি, তোমার ভালো লাগবে।
কথাটা বলে আদিত্য নূরের মাথার কাছে বসে মাথা টিপে দিতে লাগলো। ধীরে ধীরে নূরের মাথা ব্যাথা কমে এলো।

রাত ১০টা
আদিত্য নূরকে ঔষধ খাইয়ে শুইয়ে দিল। নূরের গায়ের ওপর চাদর টেনে চলে যেতে নিলেই নূর হঠাৎ আদিত্যের হাত টেনে ধরলো। আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
….কি হয়েছে কিছু বলবে?

নূর মাথা নিচু করে আস্তে করে বললো।
….আপনি চাইলে এখানে বেডে শুতে পারেন। ডিভানে যেয়ে শুতে হবে না।

নূরের কথা শুনে আদিত্য খুশিতে রিয়্যাকশন দেওয়া ভুলে গেল। ও সত্যিই শুনছে তো? নূর ওকে ওর পাশে শুতে বলছে? আদিত্য বলে উঠলো।
…আ আর ইউ শিওর? তোমার সমস্যা হবে নাতো?

নূর আস্তে করে মাথা নাড়িয়ে বুঝাল না কোনো সমস্যা হবে না। আদিত্য মাথা অন্য দিকে ঘুরিয়ে একটু হাসলো। তারপর আবার নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
….ঠিক আছে।

আদিত্য এসে নূরের পাশে কাত হয়ে মাঝখানে ফাঁক রেখে নূরের মুখোমুখি হয়ে শুলো। আজ কতদিন পর নূরের পাশে ঘুমাবে ও। ভাবতেই খুশী লাগছে আদিত্যর। আদিত্য মুচকি হেসে নূরের দিকে তাকিয়ে রইলো।
আদিত্যের তাকানো দেখে নূর লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর ভান করলো।

আধাঘন্টা পর হঠাৎ নূরের নাকে একটা মোহনীয় ঘ্রাণ এসে লাগছে। ঘ্রাণটা কোথা থেকে আসছে জানার জন্য নূর এদিক ওদিক মাথা ঘুরিয়ে নাক টানতে লাগলো। হঠাৎ নূরের মনে হলো ঘ্রাণটা আদিত্যের কাছ থেকেই আসছে। নূর আস্তে করে মাথাটা আদিত্যের কাছে এনে নাক টানলো। নূর বুঝতে পারলো ঘ্রাণটা আদিত্যের কাছ থেকেই আসছে। ঘ্রাণটা অনেক পরিচিত মনে হচ্ছে নূরের কাছে। একদম মন মাতানো নেশালো গন্ধ। নূরের নেশা ধরে যাচ্ছে কেমন ঘোর লেগে আসছে ওর। নূর আদিত্যের আরও কাছে এসে আদিত্যের বুকে নাক ঠেকিয়ে আদিত্যের শরীরের ঘ্রাণট টেনে নিতে লাগলো। ঘ্রাণটা নূরকে ভেতর থেকে কেমন যেন নাড়িয়ে দিচ্ছে। নূর ঘোরের মাঝেই আদিত্যকে জড়িয়ে ধরলো। আদিত্যকে জড়িয়ে ধরেই একসময় ঘুমিয়ে পড়লো।

আদিত্য এতক্ষণ অনেক কষ্টে নিজেকে আটকে রেখেছিল। ওতো প্রথম থেকে জেগেই ছিল। ঘুমানোর ভান করছিল। যাতে নূর ওর কাছ থেকে সরে না যায়। নূর ঘুমিয়ে পড়েছে বুঝতে পেরে আদিত্যও এবার দুই হাতে নূরকে বুকের জড়িয়ে ধরলো। আজ কতদিন পর নূরকে বুকে নিয়ে ঘুমাতে পারছে। খুশীতে আদিত্যের চোখে পানি চলে এলো। আদিত্য আলতো নূরের মাথায় চুমু খেয়ে নূরকে জড়িয়ে ধরে পাঁচ মাস পর আজ প্রশান্তির ঘুম দিল।

চলবে………
( আজকের গেমটির আইডিয়া কাপিল শারমা শো থেকে নেওয়া। আমার ফেবারিট শো এটা। এখন অনেক মিস করি শো টাকে।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here