#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-৩৪
★ আদিত্য সোজা ওর ফ্লাটের সামনে এসে গাড়ি ব্রেক করলো। তারপর গাড়ি থেকে নেমে নূরের পাশে গিয়ে গাড়ির দরজা খুলে নূরের হাত ধরে টেনে বের করলো তারপর ফ্লাটের ভেতর যেতে লাগলো।
নূর বেচারি ভয়ে কিছুই বলতে পারছে না। এদিকে জোড়াজুড়ি করলে লোকজনের সামনে সিনক্রিয়েট হতে পারে। এটা ভেবেই নূরও আদিত্যের সাথেই যেতে লাগলো।
লিফটের সামনে এসে লিফটের বাটন চেপে লিফটের ভেতরে ঢুকলো। তারপর লিফট থেকে বের হয়ে আদিত্যর ফ্লাটের সামনে এসে আদিত্য ফ্লাটের লক খুলে নূরকে নিয়ে ভেতরে ঢুকে দরজা ঠাস করে বন্ধ করে দিল।
নূরকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে রাগী কিন্তু শান্ত স্বরে বলে উঠলো।
…. ইয়েস, নাউ টেল মি। ওয়াট ইস দা ম্যাটার?
নূর কিছু না বলে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো।
….কি হলো? এখন চুপ আছো কেন? মুখ খোল। আর বলো হয়েছেটা কি তোমার? এরকম বিহেব কেন করছো?
নূর মাথা নিচু করেই মিনমিন করে বললো।
….. কি কিছু হয় নি। আ আমাকে যেতে দিন প্লিজ।
আদিত্য দাঁতে দাঁত চেপে বললো।
….ডোন্ট লাই টু মি নূর। আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। তুমি কিছু একটা লুকাচ্ছো আমার কাছ থেকে। সত্যি করে বলো কি হয়েছে?
…..ব বললাম তো কি কিছুই হয় নি।
আদিত্যের রাগ ধীরে ধীরে বেড়েই চলেছে। আদিত্য ধমক দিয়ে বললো।
….নূর আমার রাগ বাড়িয়ো না। বারবার কেন মিথ্যে বলছো?
আদিত্য চোখ বন্ধ করে নিজের রাগটা একটু কন্ট্রোল করে আবার নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
….ওঁকে ফাইন।টেক ইট ইজি। দেখ ভয় পাওয়ার কোনো দরকার নেই। যেকোনো সমস্যা হলে তুমি আমাকে নির্দ্বিধায় বলতে পারো। আমি সব ঠিক করে দেব। আচ্ছা বলো, তোমার বাসায় কোনো সমস্যা হয়েছে?
নূর নিচের দিকে তাকিয়ে থেকেই মাথা ঝাকালো। মানে না।
….ভার্সিটিতে কোনো সমস্যা হয়েছে? কেউ কিছু বলেছে?
নূর আবার মাথা ঝাকালো।
…. ওই জনি আবার কিছু করেছে?
নূর এবার চমকে তাকালো আদিত্যের দিকে। উনি কিভাবে জানলো জনির কথা?
নূরের তাকানো দেখে আদিত্য বুঝতে পেরে বলে উঠলো।
…হ্যাঁ আমি সবকিছু জানি। এখন বলো, ওই বদমাইশটা তোমার সাথে আবার কিছু করার চেষ্টা করেছে? কিংবা অন্য কেউ তোমাকে কিছু বলে ভয় দেখিয়েছে?
নূর আবারও মাথা ঝাকিয়ে বললো।
….না কেউ কিছুই বলেনি আমাকে?
আদিত্য এবার নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে নূরের মাথার পাশে দেয়ালে হাতের তালু দিয়ে জোরে একটা বারি মেরে রাগী স্বরে বললো।
….তাহলে এমন কেন করছো ড্যাম ইট? কি হয়েছে তোমার? আমার এক্সিডেন্টের পরে একবারও আমার সাথে দেখা করতে এলে না।ফোন দিলে ফোন ধরনা। ইনফ্যাক্ট এখনতো ফোনই বন্ধ করে রাখ। আর তুমি কিনা বলছো কিছুই হয় নি? আচ্ছা, সেগুলো নাহয় বাদই দিলাম। কাল কি করলে তুমি? কাল তোমাকে আমি আমার মনের কথা বললাম। তোমাকে ভালোবাসি বললাম। আর তুমি কি করলে? আমার সাথে দেখা না করেই পালিয়ে গেলে। তারপর আবার ফোনটাও বন্ধ করে রাখলে। এসবের পরেও তুমি বলবে যে কিছুই হয় নি? হাঁহ্? আমাকে কি তোমার স্টুপিট মনে হয়? আনসার মি ড্যাম ইট?
নূর মনে মনে ভাবলো, এভাবে চলবে না। আমাকে উনার সাথে কঠোর হতে হবে। নাহলে উনি আজ কিছুতেই আমাকে ছাড়বে না।কথাগুলো ভেবে নূর বুকে ওপর পাথর রেখে নিজেকে একটু শক্ত করে নিল। চেহারায় কঠোরতার ভাব এনে দুই হাত আদিত্যের বুকে রেখে আদিত্যকে একটা ধাক্কা দিল।
আচমকা এমন হওয়ায় আদিত্য দুই কদম পিছিয়ে গেল। তারপর অবাক চোখে নূরের দিকে তাকালো।
নূর আদিত্যের দিকে তাকিয়ে উচ্চস্বরে বলে উঠলো।
….বললামই তো কিছু হয় নি। তারপরও কেন বারবার একই কথা জিজ্ঞেস করে যাচ্ছেন? এভাবে আমাকে এখানে নিয়ে আসার মানেটা কি? আপনি জানেন? লোকজন দেখলে আমাকে নিয়ে কতরকমের কথা বানাতে পারে? পরেতো বদনাম আমার হবে, আপনার তো আর কিছু হবে না। আমাদের এই সমাজে দোষ সবসময় মেয়েদেরই হয়। ছেলেদের কিছুই হয় না৷ আর কি ভালোবাসার কথা বলছেন হ্যাঁ? আই লাভ ইউ বলেছেন দেখে কি মাথা কিনে নিয়েছেন নাকি? আপনি আমাকে ভালোবাসলেও, আমি তো আপনাকে ভা ভাভালোবাসি না। আর না আপনাকে ভালোবাসতে চাই। ভেবেছিলাম আপনাকে ইগনোর করলে আপনি হয়তো নিজেই বুঝে যাবেন। আর আমার পিছু ছেড়ে দিবেন। কিন্তু আপনিতো দেখছি পিছুই ছাড়ছেন না। রীতিমতো ছ্যাঁচড়ামি শুরু করে দিয়েছেন।
একদমে কথাগুলো বলে থামলো নূর। কথা শেষে আদিত্যের দিকে তাকাতেই নূর ভয়ে আৎকে উঠলো। আদিত্যের চোখ দিয়ে যেন রক্ত ঝড়ছে। চোখ মুখ প্রচন্ড রকমের লাল হয়ে উঠেছে।
আজকের নূরকে আদিত্য যেন চিনতে পারছে না। এটা ওর নূর হতেই পারে না। নূরের কথা শুনে আদিত্যের বুকের ভেতর চিনচিন ব্যাথা করছে। রাগে দুঃখে আদিত্য ভয়ংকর রুপ ধারণ করেছে। আদিত্য উল্টো দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে নিজের চোখ বন্ধ করে হাত দিয়ে নিজের চুল টেনে ধরে গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
…..এখান থেকে চলে যাও নূর। নাহলে আমি তোমার সাথে কি করবো আমি নিজেও জানি না।
নূর মুখ খুলে কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই আদিত্য আবারও রাগী কন্ঠে চেচিয়ে বললো।
….আই সেড লিভভভ,,,,
আদিত্যের এমন ধমকে নূরের অন্তর আত্মা কেঁপে উঠলো। নূর নিজের মুখে হাত চেপে ধরে কান্না আটকে, আর একমূহুর্তও দেরি না করে দৌড়ে ওখান থেকে বেড়িয়ে গেলো।
নূর বেড়িয়ে যেতেই আদিত্য ওর সামনে থাকা চেয়ারটাতে সজোরে একটা লাথি মারলো। তারপর বাসার সবকিছু ভাংচুর করতে লাগলো। আর চেচিয়ে বলতে লাগলো।
…ওয়াইইই???ওয়াইইই???ওয়াই ড্যাম ইট? ওয়াই? ওয়াই আর ইউ ডুইং দিস টু মি? ওয়াই?
নূর বাসায় এসেই নিজের রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে, দরজা ঘেঁষে নিচে বসে পরে। তারপর মুখে হাত চেপে কাঁদতে থাকে। কাঁদতে কাঁদতে বিড়বিড় করে বলে।
….আমি আজ আপনাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি। আমাকে কখনো মাপ করেন না।কখনো না। আমি আপনার যোগ্য না। আমাকে সবসময় ঘৃণা করেন। আমি ওটারি যোগ্য। ওটারি যোগ্য।
নূরের হঠাৎ কিছু একটা মনে আসতেই ও ফোন বের করে তানির নাম্বারে ফোন দিয়ে বললো।
…তানি, আবিরকে একটু ফোন করে বল আবির আর তাসির যেন এখুনি একটু আদিত্যর ফ্লাটে যায়।
তানি বললো।
…কেন আদিত্য ভাইয়ার কি হয়েছে? আর তোর কন্ঠ এমন শোনাচ্ছে কেন? এই তোদের মাঝে কি কিছু হয়েছে?
….এসব কথা বলার সময় নেই এখন। তোকে যেটা বললাম সেটা কর। পরে তোকে সব খুলে বলবো।
…ঠিক আছে আমি বলছি আবিরকে।
নূর মাথা ঝাকিয়ে ফোন কেটে দিল। নূর জানে আদিত্য এখন ঠিক নেই। রাগের মাথায় উল্টা পাল্টা কিছু করতে পারে। তাই আবির আর তাসিরকে যেতে বললো।
————————————-
আদিত্য বারান্দায় বসে জোরে জোরে অনেক লাউডলি গিটার বাজাচ্ছে। বারবার ওর কানে শুধু নূরের বলা কথাগুলো বাজছে। আর রাগে চোয়াল শক্ত করে আরো জোরে জোরে গিটার বাজাচ্ছে। গিটার বাজাতে বাজাতে আদিত্যের হাত কেটে রক্ত বের হচ্ছে। কিন্তু সেদিকে ওর কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। ও ওর মতো বাজিয়েই যাচ্ছে।
তানির কথামতো আবির আর তাসির আদিত্যের ফ্লাটে চলে এসেছে। কয়েকবার বেল দেওয়ার পরেও আদিত্য দরজা খুলছে না দেখে আবির নিজের কাছে থাকা চাবি দিয়ে দরজার লক খুলে দুজন ভেতরে ঢুকলো।
ভেতরে ঢুকেই দুজন হতভম্ব হয়ে গেলো। বাসা দেখে মনে হচ্ছে বাসার ওপর দিয়ে টর্নেডো বয়ে গেছে। সারা বাসায় সবকিছু ভাংচুর হয়ে পরে আছে।
হঠাৎ গিটারের লাউড শব্দ ওদের কানে আসলো। ওরা দুজন দ্রুত আদিত্যের রুমের দিকে গেল। রুমে ঢুকে দেখলো শব্দটা বারান্দার থেকে আসছে। তাই ওরাও বারান্দার দিকে গেল। বারান্দায় যেয়ে আদিত্যের অবস্থা দেখে ওরা আরও চমকে গেল।
তাসির দ্রুত আদিত্যর কাছ থেকে গিটারটা টান দিয়ে নিয়ে আদিত্যের দিকে তাকিয়ে ধমকের সুরে বললো
…. কি করছিস এসব? পাগল হয়ে গেছিস? তোর হাত দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। সে খেয়াল আছে তোর? মাত্র কিছুদিন হলো তুই এক্সিডেন্ট থেকে উঠেছিস। আর এখুনি তুই আবার নিজের শরীর থেকে রক্ত ঝরাচ্ছিস। তুই জানিস এতে তোর কতো ক্ষতি হতে পারে? আর সারা বাসায় এসব ভাংচুর করে রেখেছিস কেন? হয়েছেটা কি?
আদিত্য উঠে দাঁড়িয়ে দুই হাতে তাসিরের কাধ ঝাকিয়ে উত্তেজিত হয়ে বললো।
….সেটা তুই নূরকে জিজ্ঞেস করনা? ওর কি হয়েছে? কেন করছে আমার সাথে এমন? আমার কি দোষ আছে? আমি কি ওকে কোনো কষ্ট দিয়েছি? তাহলে আমাকে কিসের শাস্তি দিচ্ছে ও। কেন করছে এমন আমার সাথে? কেন? কেন?কেন?
হঠাৎ আদিত্যের মাথায় প্রচন্ড ব্যাথা শুরু হয়ে যায়। আদিত্য দুই হাতে মাথা চেপে ধরে বসে পরে।
তাসির আর আবির দুজনেই ভয় পেয়ে যায়। দুজন তাড়াতাড়ি আদিত্যকে ধরে বসে। তাসির বলে উঠলো।
….ওঁকে ওঁকে রিলাক্স। দেখ ডক্টর তোকে সাবধানে থাকতে বলেছে। এই মুহূর্তে এতো স্ট্রেস নেওয়া তোর স্বাস্থ্যের জন্য একদম ঠিক না। তুই একটু শান্ত হ প্লি,,,,,
তাসির ওর কথা শেষ করার আগেই আদিত্য নিজের জ্ঞান হারিয়ে ফেললো। আবির আর তাসির প্রচুর ঘাবড়ে গেল। আবির আদিত্যের গালে হালকা করে চাপরে বললো।
….ভাই, আর ইউ ওঁকে? শুনতে পাচ্ছ ভাই?
তাসির চিন্তিত স্বরে বললো।
…ওঁকে জলদি হসপিটালে নিতে হবে। তাড়াতাড়ি করে ওকে উঠা।
আবির মাথা ঝাকিয়ে দুজন মিলে আদিত্যকে উঠিয়ে গাড়িতে করে হসপিটালে নিয়ে গেল।
————————————–
নূর মনমরা হয়ে ক্লাসে বসে আছে। কাল সারারাত একটুও ঘুমাতে পারেনি। শুধু কেঁদে চোখের পানিতে বালিশ ভিজিয়েছে। সকালে না খেয়েই ক্যাম্পাসে চলে এসেছে।
হঠাৎ তানি এসে ঠাস করে নূরের পাশে বসে পরলো। তানির বসার শব্দে নূরের ধ্যান ভাংলো। নূর পাশে ফিরে তানির দিকে তাকিয়ে দেখলো তানি ওর দিকে কেমন চোখ গরম করে তাকিয়ে আছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে তানি প্রচুর রেগে আছে। নূর ভ্রু কুঁচকে বললো।
….কিরে? কি হয়েছে? এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?
তানি নূরের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রাগী মুডে বললো।
….কি হয়েছে , সেটাতো তুই আমাকে বলবি।
…মানে?
….মানে তুই কাল আদিত্য ভাইয়াকে কি বলেছিস?
তানির কথায় নূর একটু থতমত খেয়ে গেল। আমতা আমতা করে বললো।
…কি কি আবার বলবো? কিছুই না।
…আচ্ছা কিছুই বলিস নি তাই না? তাহলে কাল আদিত্য ভাইয়া এমনি এমনি অসুস্থ হয়ে পরেছে তাইনা?
আদিত্যের অসুস্থতার কথা শুনে নূরের বুকের ভেতর ধক্ করে উঠলো। নূর চমকে উঠে বললো।
….অ অ অসুস্থ?
…হ্যাঁ অসুস্থ? কাল আবির আমাকে ফোন করে বললো আদিত্য ভাইয়া নাকি কাল জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিল। আবির আর তাসির ভাইয়া মিলে আদিত্য ভাইয়াকে হসপিটাল নিয়ে গিয়েছিল। পুরো তিনঘণ্টা পর ওনার জ্ঞান ফিরেছে। এখনও হসপিটালেই আছে। আবির বললো জ্ঞান হারানোর আগে ভাইয়া নাকি শুধু তোর কথাই বলেছে। এখন তুই বলবি কাল কি বলেছিস ভাইয়াকে?
তানির কথা শুনে নূরের চোখে পানি চলে আসে। নূর তানিকে সবকিছু খুলে বলে। সবকিছু শুনে তানি আরও রেগে যায়। রাগী স্বরে বলে উঠলো।
….তোর মতো গাধা মেয়ে আমি দুনিয়াতে একটাও দেখিনি। তুই এই যুগের শিক্ষিত মেয়ে হয়ে আদি যুগের মানুষের মতো এসব ফালতু কুসংস্কারে কিভাবে বিশ্বাস করতে পারিস? আমি তোকে আগেও অনেক বার বলেছি এসব অপয়া টপয়া বলতে কিছুই নেই। এগুলো সব মানুষের বানানো ফালতু কথা ছাড়া আর কিছুই না। আল্লাহ মানুষকে যতদিন হায়াত দিয়েছে, ততদিনই সে বাঁচতে পারে। তাঁর বেশি বা কম সে বাঁচবে না। সবকিছুই আল্লাহর হাতে। এতে কারোর কোনো হাত থাকে না। আর না কারোর মৃত্যুর জন্য কেও দায়ী থাকে। তোকে এতবার বলেছি তারপরও তুই সেই এককথা নিয়েই পরে আছিস। আমার আজ সত্যিই মনে হচ্ছে তোর মতো অভাগী এই দুনিয়াতে আর একটাও নেই। কারণ যে ব্যাক্তি নিজেই তার সুখটাকে পায়ে ঠেলে সরিয়ে দেয়। সে কখনো সুখী হতে পারে না। সুখী হতে চাইলে জীবনে সুখটাকে ধরে রাখার ক্ষমতা রাখতে হয়। শুধু শুধু বসে কাদলেই সব ঠিক হয়ে যায় না। আচ্ছা তুই তো ভাইয়ার ভালোর জন্যই এসব করেছিস তাইনা? তাহলে তোর ভালো করতে গিয়ে যদি ভাইয়ার আরও ক্ষতি হয়ে যায়? তখন কি তুই নিজেকে ক্ষমা করতে পারবি? সেদিন ভাইয়ার এক্সিডেন্ট টা তোর জন্য হয়েছিল কিনা জানিনা। তবে এখন যদি ভাইয়ার কিছু হয়ে যায় তার কিন্তু তুইই দায়ী থাকবি। দেখ আমি তোর ভালো চাই। এইজন্যই বলছি, এখনও সময় আছে সবকিছু ঠিক করে ফেল। নাহলে কিন্তু পরে আর আফসোস করেও লাভ হবে না।
একনাগাড়ে কথাগুলো বলে থামলো তানি।
তানির কথা শুনে নূর নিরবে শুধু কেঁদেই যাচ্ছে। তানির এবার নূরের জন্য খারাপ লাগছে। নূরের ঘাড়ে হাত দিয়ে নূরের চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো।
…হয়ছে এখন থাম।জানিস তো শুধু এটাই। বসে বসে কান্না করা।
নূর কাঁদতে কাঁদতে বললো।
…..আমি সত্যিই অনেক বড়ো ভুল করে ফেলেছি। উনার কিছু হয়ে গেলে আমি নিজেকে কখনোই ক্ষমা করতে পারবো না। আমি নিজেও মরে যাবো।
তানি একটু মুচকি হেসে বললো।
….কাওকেই মরতে হবে না। ভাইয়ার সাথে কথা বলে সব ঠিক করে নে। তারপর আর কোনো টেনশন থাকবে না।
নূর কান্না থামিয়ে মুখটা ছোট করে বললো।
…কিন্তু আমি কোন মুখে উনার সামনে যাবো। কালকে উনার সাথে ওরকম ব্যবহার করার পর কোন মুখে উনার সামনে যেয়ে দাঁড়াব। উনি হয়তো আমাকে দেখলেই রেগে যাবেন।হয়তো এখন ঘৃণাও করেন আমাকে।
…আরে কে বলেছে তোকে এসব ফালতু কথা? আদিত্য ভাইয়া তোকে অনেক ভালোবাসেন। তোকে কখনোই সে ঘৃণা করতে পারেন না। হ্যাঁ, হয়তো একটু রেগে আছে। কিন্তু তোর এই মিষ্টি মুখে সুন্দর করে একটা সরি বলে, তোর সেই স্পেশাল চুমুটা দিয়ে দিলেই দেখবি ভাইয়া একদম গলে ফালুদা হয়ে যাবে।
তানির কথায় নূর এবার লজ্জা পেয়ে গেল। তানি দুষ্টুমি করে বললো।
…হয়েছে আর লজ্জায় লাল হতে হবে না। যার সামনে হওয়ার দরকার তার সামনে হইও। এখন তাহলে চল যাই আদিত্য ভাইয়ার কাছে।
নূর মাথা ঝাকালো। তারপর দুজন উঠে দাঁড়িয়ে বাইরে বেড়িয়ে এলো।
বাইরে আসতেই হঠাৎ নূরের ফোনটা বেজে উঠলো। নূর ফোন বের করে দেখলো ওর ছোট মা ফোন করেছে। নূর ফোন রিসিভ করে কানে ধরতেই ওর ছোট মা কর্কশ গলায় বলে উঠলো।
….এখুনি বাসায় চলে আয়।
নূর বললো।
…এখুনি? কিন্তু কেন?
….হ্যাঁ এখন মানে এখুনি। আর কোনো কথা শুনতে চাই না আমি। আর কেন সেটা আসলেই দেখতে পাবি।
কথাটা বলেই ফোন কেটে দিল।
নূর তানির দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো।
….ছোট মা ফোন করেছিলো। এখুনি বাসায় যেতে বলছে।
তানি ভ্রু কুঁচকে বললো।
…কেন তার আবার কি হলো?
….কি জানি?কিন্তু বলছে এখুনি যেতে। মনে হচ্ছে কোনো জরুরি কিছু হবে।
তানি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো।
….হুম, তাহলে আর কি করার। যা বাসায়। আজকে তো আর তাহলে আদিত্য ভাইয়ার কাছে যাওয়া হচ্ছে না। কাল সকালে তাহলে যেতে হবে।
নূর মাথা ঝাকিয়ে বললো।
….হ্যাঁ, তাছাড়া তো আর কোনো উপায় নেই। ভার্সিটির টাইম ছাড়াতো আর বাসা থেকে বের হওয়া যায় না।
….ঠিক আছে তাহলে কালই যাবো আমরা। কাল গিয়ে সারপ্রাইজ দিয়ে দেব ভাইয়াকে। এর আগে আর কিছু বলার দরকার নেই।
নূর মাথা ঝাকিয়ে বললো
….ঠিক আছে।
তারপর নূর বাসার উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে গেলো।
নূরের মনের ভেতর এখন কিছুটা হালকা লাগছে। এখন শুধু কাল উনাকে সরি বলতে পারলেই শান্তি। এসব কথা ভেবে নূর খুশি মনে দরজা খুলতেই, সজোড়ে ওর গালে এসে একটা থাপ্পড় পড়লো।
আচমকা এমন হওয়ায় নূর হতভম্ব হয়ে গেলো। গালে হাত দিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখলো চড়টা আর কেও না ওর সৎ মাই মেরেছে। নূরের চোখ গেল ওর ছোটমার পেছনে সোফায় বসা ব্যাক্তির উপর। লোকটাকে দেখেই নূর ভয়ে আৎকে উঠলো। মনে মনে ভাবছে এই লোকটা আবার কেন এসেছে?
চলবে…….