ভালোবাসার চেয়েও বেশি 💞পর্ব-৩৩

0
6738

#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-৩৩
( Confession part)

★ আদিত্যের এক্সিডেন্টের আজ বিশদিন হয়ে গেছে।একয়দিনের ভেতর নূর শুধু একবার আদিত্যের সাথে ফোনে কথা বলেছে। তাও শুধুমাত্র এইজন্য যাতে আদিত্য মেনে নেয় যে নূরের কিছু হয় নি ও ঠিক আছে।

সাতদিন পরেই আদিত্যকে হসপিটাল থেকে রিলিজ দেওয়া হয়েছে। আদিত্য আপাতত ওদের সাভারের বাড়িতে আছে। হসপিটাল থেকে ওখানে নিয়ে এসেছিল সবাই। আদিত্য এখন মোটামুটি অনেকটা সুস্থ। এখন ঠিকমতো চলাফেরাও করতে পারে।

শরীর ঠিক থাকলেও ওর মন মানসিকতা একদম ঠিক নেই। এতোদিন নূরকে দেখতে না পেরে আদিত্যের পাগল প্রায় অবস্থা। নূরের সাথে না দেখা হচ্ছে,না কথা। ফোন দিলে ধরে না।ইদানিং তো ফোনই বন্ধ থাকে। নূর কেমন আছে?ওর কোনো কিছু হলো কিনা?এসব ভেবে আদিত্যের টেনশনে মাথা ফেটে যাচ্ছে। আবির তাসির অথবা তানিকে কিছু জিজ্ঞেস করলে। ঠিকমতো বলে না। শুধু তালবাহানা করে। কখনো বলে নূরের এক্সাম আছে, আবার কখনো বলে নূরের বাসায় সমস্যা আছে তাই হয়তো আসতে পারছে না।

ওরাই বা কি বলবে? ওরাতো নিজেরাই বুঝতে পারছে না, নূর এমন কেন করছে? তাই তো আদিত্যকে শান্ত রাখার জন্য নানান কথা বলে যাচ্ছে।

কিন্তু এসব কোনো কথাই এখন আদিত্যের মনকে শান্ত করতে পারছে না। ওরতো নূরকে না দেখা পর্যন্ত শান্তিই হবে না। আদিত্য নূরের সাথে দেখা করার জন্য অনেক বার বাসা থেকে বের হতে চেয়েছে। কিন্তু বাসার লোকের জন্য সেটাও পারছে না। অসুস্থ অসুস্থ বলে ওকে কেও বাসা থেকে বের হতেই দিচ্ছে না। এখন ওদের কিভাবে বুঝাবে যে শরীরের কষ্টের চাইতে নূরকে না দেখে থাকার বিষয়টাই বেশি কষ্টকর আদিত্যের কাছে। এক একটা দিন যেন এক একটা বছরের সমান ওর কাছে।

আজ আদিত্য মনে মনে পণ করেছে। আজ আর কারোর কথা শুনবে না সে। যে করেই হোক আজ সে বাইরে যেয়েই ছাড়বে। আর একমূহুর্তও নূরের সাথে দেখা না করে থাকতে পারবে না আদিত্য। তাই তো সকাল সকাল উঠে রেডি হচ্ছে ভার্সিটি যাওয়ার জন্য।

আজ আদিত্যের জেদের সামনে বাকি সবাইও কিছু বলার সাহস পেল না। অগত্যা সবাই মেনে নিল। যেহেতু আদিত্য এখন অনেকটা সুস্থ। তাই আর সবাই তেমন বাঁধা দিল না। আবির সবাই কে আস্বস্ত করে বললো।
…আমি ভাইয়াকে নিয়ে যাবো। তোমরা কেউ চিন্তা করোনা। আমি ওর সাথেই থাকবো।

আবিরের কথায় সবাই রাজি হয়ে গেলো।

——————————————

নূর মনমরা হয়ে রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে। আদিত্য এখনো রোজ ড্রাইভার সহ গাড়ি পাঠিয়ে দেয় নূরের জন্য। কিন্তু নূর সে গাড়িতে উঠে না। কারণ নূর চায়না আদিত্যের দেওয়া কোনো সুবিধা ভোগ করতে। এতটা স্বার্থপর ও হতে পারবে না।
এই কয়টা দিন নূরের কিভাবে কেটেছে তা শুধু ওই জানে। নূরের জীবন আগের থেকেও আরো বিতৃষ্ণা পূর্ণ হয়ে উঠেছে। এর ভেতরে নূরের সৎ মাও বাসায় চলে এসেছে।

আদিত্যকে দেখতে না পারার কষ্টে নূর নিজেও ভুগছে। কিন্তু হাজার কষ্ট হলেও নূর নিজের কথায় অটল থাকে। আদিত্যের থেকে দূরে থাকে। তবে রোজ তানির কাছ থেকে আদিত্যের সব খোঁজ খবর নেয়। তানি ওকে অনেক দিন জিজ্ঞেস করেছে তুই এমন কেন করছিস? অনেক চাপাচাপি করায় নূর শেষমেষ তানিকে সব খুলে বলে যে ও এটা আদিত্যের ভালোর জন্য করছে। সব শুনে তানি নূরকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করে য,নূর যেটা ভাবছে সেটা ভুল। ও যেন এমন না করে। কিন্তু ওর কথার ওপরই অটল থাকে। নূর উল্টো আরো তানিকে নিজের কসম দেয় যাতে এসব কথা আদিত্যকে না বলে। তানিও আর না পেরে হাল ছেড়ে দেয়।

নূরের ভাবনার মাঝেই হঠাৎ ওর পাশে একটা গাড়ি এসে থামে। নূর একটু ঘাবড়ে যেয়ে দুকদম পিছিয়ে যায়।

গাড়ির জানালা দিয়ে একটা ছেলে মাথা বের করে দিয়ে বলে উঠলো।
….কিরে নূর কোথায় যাচ্ছিস?

নূর একটা ফেক হাসি দিয়ে বললো।
…এইতো ভাইয়া ভার্সিটি যাচ্ছি।

….ও আচ্ছা, আমিও ওইদিকেই যাচ্ছি। চল আমি নামিয়ে দিচ্ছি তোকে।

….না না আপনার কষ্ট করতে হবে না। আমি যেতে পারবো।

….আরে কষ্টের কি আছে? আমিতো ওইদিকেই যাচ্ছি। আর এমনিতেও তোর সাথে অনেকদিন হলো কোনো কথাবার্তাও হয় না। এই সুযোগে একটু কথা বলা যাবে। এখন বেশি কথা না বলে গাড়িতে ওঠ।

নূর মাথা ঝাকিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো।

ছেলেটা আবার বলে উঠলো।
….তো কেমন আসিছ? তোর ভার্সিটি কেমন চলছে?

নূর একটা ফেক হাসি দিয়ে বললো।
….এইতো ভাইয়া ভালো। আর ভার্সিটিও ঠিকঠাক চলছে।

…..হুম। তা অনেক দিন হলো আসিস না? বাসায় এসে ঘুরে যাস একসময়।

….ঠিক আছে ভাইয়া। সময় করে একদিন যাবো। আচ্ছা চাচা কেমন আছে? অনেক দিন হলো দেখা হয় না চাচার সাথে।

….বাবা ভালোই আছে। আসলে বাবা একটু গ্রামের বাড়ি গেছে। তাই দেখতে পাসনি। তোকে হয়তো বলার সময় পায় নি।

এভাবে টুকটাক কথার মাঝেই ওরা ভার্সিটি পৌঁছে যায়। ক্যাম্পাসের মাঠে এসে গাড়ি থামে। নূর গাড়ির দরজা খুলে নেমে দাঁড়ালো। ছেলেটাও গাড়ি থেকে নেমে নূরের কাছে এসে দাঁড়ালো। তারপর মুচকি হেসে নিজের এক হাত আলতো করে নূরের গালে রেখে বললো।
….ঠিক আছে তাহলে এখন যাই পরে আবার দেখা হবে। ভালো থাকিস আর হ্যাঁ বাবা নেই দেখে ভাবিস না কোনো কিছুর দরকার হলে আমাকে জানাস কেমন?

নূর জোরপূর্বক একটা হাসি দিয়ে মাথা ঝাকিয়ে বললো।
…ঠিক আছে ভাইয়া। আমি এখন আসি।

…হুম ঠিক আছে।
কথাটি বলেই ছেলেটা গাড়ি নিয়ে চলে গেলো।

নূর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ক্লাসের দিকে এগুলো।

এতক্ষণ যে একজন অগ্নি চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে ছিল নূরের সেই খেয়াল নেই।
আদিত্য ক্যাম্পাসের দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে উপর থেকে এতক্ষণ সবকিছু দেখছিল আর রাগে ফুঁসছিলো। এমনিতেও নূর এতদিনে একবারও ওর সাথে দেখা করেনি এটা নিয়ে আদিত্যের মনে নূরের জন্য একটু অভিমান জমে ছিল। আজ এতদিন পরে নূরের সাথে দেখা করতে এসেছে। আর সেই মূহুর্তে নূরকে অন্য কারোর সাথে দেখে আদিত্যের আরো রাগ বেড়ে গেল।

নূর হেটে নিজের ক্লাসের দিকে যাচ্ছে। হঠাৎ একটা ফাঁকা ক্লাসের দরজা দিয়ে কেউ নূরের হাত ধরে হ্যাঁচকা টান দিয়ে ভেতরে নিয়ে গেল। তারপর দরজা বন্ধ করে নূরকে দেয়ালের সাথে দুই হাত আটকে চেপে ধরলো।
আচমকা এমন হওয়ায় নূর প্রচুর ঘাবড়ে গেল। চোখ খিঁচে বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রইলো।

….ছেলেটা কে ছিল?

পরিচিত কন্ঠ শুনে নূর চমকে চোখ খুলে সামনে তাকালো। হঠাৎ করে আদিত্যকে দেখে নূর থ হয়ে গেলো। অবাক আর মায়ার চোখে একধ্যানে তাকিয়ে রইলো আদিত্যের দিকে। আদিত্যকে সুস্থ সবল দেখে নূরের মনে মনে অনেক খুশী লাগছে। নূরের ভাবনার মাঝেই আদিত্য আবারও অগ্নি চোখে চেয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো।
….কি হলো কথা বলছো না কেন? ছেলেটা কে ছিল? আনসার মি ড্যাম ইট।

আদিত্যের কথায় নূরের ঘোর কাটলো। আর তার সাথে ওর বাস্তবতার কথাও মনে পরে গেলো। নূর মনে মনে ভাবলো, আমাকে দূর্বল হলে চলবে না। শক্ত হয়ে উনার সাথে কথা বলতে হবে। যাতে উনি নিজে থেকেই আমার কাছে থেকে সরে যান। এসব ভেবেই নূর মনে মনে একটু
সাহস নিয়ে আদিত্যের দিকে তাকিয়ে বললো।
….. কে কেন? ছেলেটা যেই হোক আপনাকে কেন বলতে হবে?

নূরের এমন জবাব শুনে আদিত্য একটু অবাক হলো। সাথে সাথে প্রচুর রাগও হলো। আদিত্য চোয়াল শক্ত করে রাগী স্বরে বললো।
…নূর আমার রাগ বাড়িও না। এমনিতেই আমি প্রচুর রেগে আছি। তাড়াতাড়ি করে বলো ছেলেটা কে? আর ওর সাহস কি করে হলো তোমাকে টাচ করার?

নূর মনে মনে প্রচুর ভয় পেলেও, উপরে সেটা বুঝতে দিলো না। নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বললো।
…ছা ছাড়ুন আমাকে।আমার ক্লাসে দেড়ি হয়ে যাচ্ছে। আ আপনার কোনো প্রশ্নের জবাব দিতে আমি বাধ্য নই।

নূরের এভাবে কথা বলা দেখে আদিত্য প্রচুর অবাক হচ্ছে । সাথে রাগও আরও বাড়সে। আদিত্য এবার একটু ধমকের সুরে বললো।
….অবশ্যই বলতে বাধ্য তুমি। তোমার সবকিছুর ওপর শুধু আমার অধিকার। তোমাকে আমি ছাড়া অন্য কেউ টাচ কেন করবে? এটা আমি কখনোই মেনে নেব না। কখনো না।

আদিত্যের এমন কথায় নূর যেন ভেতরে ভেতরে আবেগে আপ্লূত হয়ে উঠছে। নূর আবারও মনে মনে ভাবলো, না না এভাবে হবে না। উনাকে কিছু কড়া কথা শোনাতে হবে, যাতে উনি এখান থেকে চলে যায়। এসব ভেবেই নূর মুখের ভাবভঙ্গি একটু কঠোর করে বললো।
….কেন? কেন মানবেন না? এটা আমার জীবন। আমি যার সাথে খুশি তার সাথে মিশি। যার সাথে ইচ্ছা তার সাথে ঘুরে বেড়াবো। হাসি আনন্দ করবো। তাতে আপনার কি? আপনি কেন আমার পার্সোনাল লাইফে ইন্টারফেয়ার করছেন? কেন?

নূরের এসব কথা শুনে আদিত্যের রাগ এবার চরম পর্যায়ে উঠে গেলো। আদিত্য অগ্নি চোখে তাকিয়ে চোয়াল শক্ত করে নিজের হাত মুঠ করে নূরের মাথার কাছে দেয়ালে একটা ঘুষি মেরে উচ্চস্বরে বলে উঠলো।
……..কজ “আই লাভ ইউ ” ড্যাম ইট।

নূর যেন স্তব্ধ হয়ে গেলো। শিরদাঁড়া দিয়ে ঠান্ডা শীতল বাতাস বয়ে গেলো। ওর কানে শুধু আদিত্যের বলা কথাটাই বাজতে লাগলো।
“আই লাভ ইউ” “আই লাভ ইউ” “আই লাভ ইউ”। মনে হচ্ছে পুরো ক্লাসে কথাটা প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।

আদিত্য দুই হাতে নূরের মুখটা ধরে নূরের কপালের সাথে নিজের কপাল ঠেকিয়ে লো ভয়েসে আবেগ মিশ্রিত কন্ঠে আবারও বলে উঠলো।
….ইয়েস আই লাভ ইউ। আমি তোমাকে ভালোবাসি। তুমি শুধু আমার। একান্তই আমার। তাই তোমাকে আমি অন্য কোনো ছেলের পাশে সহ্য করতে পারবো না। কিছুতেই না।

নূরের এখন চিৎকার করে কান্না করতে ইচ্ছে করছে।চোখ বন্ধ করে মনে মনে ভাবছে, আমি যেই ভয়টা পেয়েছিলাম সেটাই হলো। উনি কেন আমাকে আজ এই কথাটা বললো? এখন আমি কি করবো? কিভাবে নিজেকে সামলাবো? কিভাবে?

নূরের ভাবনার মাঝেই আদিত্য আবার বলে উঠলো।
….আমার জবাব পেয়ে গেছতো? এখন বলো ছেলেটা কে ছিল? দেখ আমি ইচ্ছা করলেই দুই মিনিটের ভেতরই ছেলেটার সব ডিটেইলস যেনে যেতে পারবো। কিন্তু সেটা তখন ছেলেটার জন্য খুব একটা সুখকর হবে না। তখন কিন্তু আমাকে কিছু বলতে পারবে না। তাই যা বলবে জলদি বলো।

নূর এবার অনেক ভয় পেয়ে গেল। তড়িঘড়ি করে বলে উঠলো।
….উনি আকাশ ভাইয়া। আমার চাচার ছেলে। উনি আমাকে নিজের ছোট বোনের মতোই ভালোবাসে। আর আমিও উনাকে বড়ো ভাইয়ের মতোই মানি।

আদিত্য এতক্ষণে একটু শান্ত হলো। চোখ মুখ স্বাভাবিক করে বললো।
….তো এই কথাটা বলতে এতো সময় লাগে? আগে বললেই তো হয়ে যেতো। শুধু শুধু আমার রাগ বাড়াচ্ছিলে। যাইহোক বাদ দেও এখন।
তারপর আদিত্য একটু মুচকি হেসে নূরের কপালে নিজের ঠোঁট জোড়া ছুঁইয়ে গভীর ভাবে একটা চুমু দিয়ে দিলো।
সাথে সাথে নূরের সারা শরীর শিরশির করে কেঁপে উঠলো। দুই হাত দিয়ে নিজের কামিজ চেপে ধরলো।
আদিত্য চুমু দিয়ে বলে উঠলো।
….এখন ক্লাসে যাও। আমি কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে ওয়েট করবো। ক্লাস শেষে ওখানে চলে এসো।
কথাটা বলেই আদিত্য ওখান থেকে চলে গেলো।

আদিত্য চলে যেতেই নূর ধপ করে নিচে বসে পরলো। নিজের হাতটা কপালে নিয়ে আদিত্যের চুমু দেওয়া স্থানে ছোঁয়াতে লাগলো। তারপর হাতটা আবার চোখের সামনে এনে হাতের দিকে তাকিয়ে নিরবে কেঁদে উঠলো। কাঁদতে কাঁদতে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো।
….কেন করলেন এমনটা? কেন আমাকে ভালোবাসলেন? আমাকে ভালোবাসা যে একদম ঠিক না। আমি যে কারোর ভালোবাসার যোগ্য না। আমাকে ভালোবাসলে আপনার জীবনে শুধু অমঙ্গলই হবে।

নূর নিজের চোখের পানি মুছে নিয়ে মনে মনে বললো। আমাকে দূর্বল হয়ে পরলে চলবে না। আমাকে শক্ত হতে হবে। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি সেটাতে অটল থাকতে হবে। কিছুতেই সেটা ভুলে গেলে চলবে না। নিজের স্বার্থের জন্য উনার জীবন বিপদে ফেলতি পারনা আমি।কখনোই না। কথাগুলো ভেবে নূর নিজেকে শক্ত করে উঠে দাড়ালো। তারপর ক্লাস থেকে বেড়িয়ে এলো। বাইরে এসে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলো আদিত্য কোথাও আছে কিনা। আদিত্য কোথাও দেখতে না পেয়ে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো নূর। তারপর দ্রুত ক্যাম্পাস থেকে বেড়িয়ে চলে গেলো। আদিত্যের সামনে আর পরতে চায়না নূর।
—————————————

আদিত্য একঘন্টা ধরে বসে আছে কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে। কিন্তু নূরের আসার কোনো খবর নেই। আদিত্য আর থাকতে না পেরে ফোন বের করে নূরের নাম্বারে ফোন দিল। কিন্তু নূরের নাম্বার বন্ধ আসছে। আদিত্যের এবার চরম রাগ হতে লাগলো। মেয়েটার হয়েছেটা কি? এমন করছে কেন? আজতো আমি আমার মনের কথাও ওকে বলে দিলাম। তারপরও এমন করছে কেন? এসব ভেবে আদিত্যের ভেতর প্রচন্ড অস্থির হয়ে উঠছে। আদিত্য আর বসে না থেকে বাইরে বেড়িয়ে এলো।

বাইরে এসে দেখলো আবির আর তাসির দাঁড়িয়ে আছে। আদিত্যকে আসতে দেখে তাসির ভ্রু কুঁচকে বললো।
….কিরে চলে এলি যে? নূর আসেনি?

আদিত্য মাথা ঝাকিয়ে বললো।
….না আসেনি। আর ফোনটাও বন্ধ আসছে। জানিনা কি হয়েছে মেয়েটার? কেমন যেন আজব বিহেব করছে।

তাসির আদিত্যের কাঁধে হাত দিয়ে আস্বস্ত করে বললো।
….আরে চিন্তা করিস না। হয়তো কোনো টেনশনে আছে। দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে।

আদিত্য আবিরের দিকে তাকিয়ে বললো।
….তুই একটু তানিকে ফোন করে জিজ্ঞেস করতো, নূর কোথায় আছে?

আবির মাথা ঝাকিয়ে বললো।
…ঠিক আছে ভাই।

আবির তানির নাম্বারে ফোন দিয়ে কথা বললো। কথা বলা শেষে আদিত্যের দিকে তাকিয়ে বললো।
….ভাই তানিতো বলছে।নূর নাকি আজ ক্লাসেই আসেনি।

আদিত্য ভ্রু কুঁচকে একটু উচ্চস্বরে বলে উঠলো।
….ওয়াট???কি বলছিস এসব? আমি নিজে সকালে ক্লাসের আগে নূরের সাথে কথা বললাম। তাহলে ও ক্লাসে যাইনি কেন?

আবির ঠোঁট উল্টে বললো।
….কি জানি ভাই? তানিতো এটাই বললো।

আদিত্যর এবার মনে মনে সন্দেহ হচ্ছে। নিশ্চয় নূরের কিছু একটা হয়েছে। যার জন্য ও এমন করছে। কিন্তু কি হয়েছে? মেয়েটা তো কিছু বলছেও না।

আবির বলে উঠলো।
….ভাই আমাদের এখন যাওয়া উচিৎ। তোর আবার শরীর খারাপ করতে পরে।

আদিত্য একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মাথা ঝাকালো। মানে ঠিক আছে।

—————————————

রাত ৯ টা
আদিত্য অস্থির ভাবে সারাঘর পায়চারী করছে। কিছুতেই শান্তি পাচ্ছে না ও।নূরের ফোন এখনো বন্ধ আসছে। কি হয়েছে নূরের, কেন এমন করছে কিছুই বুঝতে পারছে না আদিত্য। ভেবেছিল আজ কথা বলে সবকিছু সর্ট আউট করে ফেলবে। কিন্তু সেটাও হলো না। আচ্ছা, মেয়েটা কি কোনো সমস্যায় পড়েছে? এসব নানান কথা ভেবে টেনশনে আদিত্যের মাথা ফেটে যাচ্ছে। ইচ্ছে করছে সবকিছু ভেঙে গুড়িয়ে ফেলতে। টেনশনে আদিত্য রাতের খাবার টাও খাইনি।
নাহ আর থাকতে পারছে না আদিত্য। এভাবে আর কতক্ষণ থাকলে হয়তো ও দম বন্ধ হয়ে মরে যাবে। আদিত্য হঠাৎ কোনো কিছু না ভেবে গাড়ির চাবি নিয়ে বেড়িয়ে পরলো।

যাওয়ার সময় বাসার সবাই পেছন থেকে অনেক ডাকাডাকি করলো, কিন্তু আদিত্য কারোর কথা না শুনে বেড়িয়ে পরলো।

আদিত্য ফুল স্পিডে গাড়ী চালিয়ে, সোজা নূরের বাসার সামনে এসে ব্রেক করলো। গাড়ি থেকে নেমে নূরের বাসার দিকে তাকিয়ে রইলো। মনে মনে একবার ভাবলো নূরের বাসার ভেতর ঢুকে যাবে। আবার এটা ভেবে থেমে গেল যে নূরের সৎ মা দেখে ফেললে নূরের জন্য প্রবলেম হতে পারে। আদিত্য কতক্ষণ অস্থির ভাবে এদিক ওদিক পায়চারী করতে লাগলো। আবার নূরের বাসার জানালা আর বেলকনির দিকে তাকাতে লাগলো। যদি নূরকে দেখতে পায় সেই আসায়। কিন্তু না নূরকে কোথাও দেখতে পেল না আদিত্য। হতাশ হয়ে আবার গাড়িতে উঠে বসলো। গাড়িতে বসে সিটের সাথে হেলান দিয়ে বসে নূরের বাসার জানালার দিকে তাকিয়ে রইলো।

নূর শুয়ে শুয়ে আজকের আদিত্যের বলা কথাগুলো ভাবছে আর চোখের পানি ফেলছে। নিজেকে আজ সবচেয়ে বেশি অসহায় মনে হচ্ছে ওর।
কিছুক্ষণ পর নূর চোখ মুছে উঠে বসলো। তারপর জানালার কাছে যেয়ে পর্দাটা হালকা সরিয়ে বিষন্ন মনে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো।

হঠাৎ নূরকে জানালায় দেখতে পেয়ে আদিত্য খুশি হয়ে গেলো। আদিত্য গাড়ি থেকে নেমে হাত উঁচু করে নাড়িয়ে নূরের দৃষ্টি আর্কষণ করতে চাইলো। কিন্তু নূর সেটা টের পেলো না। আদিত্য জোরে ডাকও দিতে পারছে না। লোকজন দেখলে নূরের বদনাম হতে পারে এটা ভেবে।

কতক্ষণ নাড়াচাড়া করার পরও যখন নূর সারা দিলোনা, আদিত্য তখন হাল ছেড়ে দিয়ে আবারও গাড়ির ভেতর বসে রইলো। গাড়ির ভেতর বসে বসেই নূরকে দেখতে লাগলো।
চাঁদের আলোয় দূর থেকেও নূরকে দেখতে কতো সুন্দর লাগছে। আদিত্যের মনের অস্থিরতাটাও এখন একটু কমেছে। এভাবে নূরকে দেখতে দেখতে একসময় গাড়ির ভেতরেই ঘুমিয়ে পরে আদিত্য।

সকাল বেলা নূর রেডি হয়ে বেড়িয়ে গেলো ভার্সিটির উদ্দেশ্যে। মন মরা হয়ে রাস্তার আইলেন দিয়ে হেটে যাচ্ছে। হাটতে হাটতে বাসা থেকে অনেকটা দূরে আসতেই হঠাৎ ওর পাশে একটা গাড়ি এসে থামে। নূর একটু ঘাবড়ে দুই পা পিছিয়ে যায়। সামনে তাকিয়ে দেখে আদিত্যের গাড়ী। এটা দেখে নূর চমকে যায়।

আদিত্য ঝট করে গাড়ি থেকে নেমে নূরের কাছে এসে শক্ত করে নূরের হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় গাড়ির কাছে। তারপর দরজা খুলে নূরকে একপ্রকার ধাক্কা দিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। তারপর নিজে দ্রুত যেয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে দেয়।

আদিত্য রাতে গাড়িতেই ঘুমিয়ে ছিল। সকাল হতেই গাড়িটা ওখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যায়। আর নূরের জন্য ওয়েট করতে থাকে।

আচমকা এসব হওয়ায় নূর কিছুই বুঝে উঠতে পারে না। আদিত্যের দিকে তাকিয়ে দেখে আদিত্যকে কেমন যেন বিধ্বস্ত লাগছে। চুলগুলো এলোমেলো চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে প্রচন্ড পরিমাণ রেগে আছে। নূর মনে মনে প্রচুর ভয় পেলেও উপরে উপরে একটু সাহস দেখিয়ে বললো।
….কো কোথায় নিয়ে যাচ্ছ……

নূর আর কিছু বলতে পারে না। তার আগেই আদিত্য নূরের দিকে অগ্নি চোখে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো।
…..সাট আপ। নট এ্যা সিঙ্গেল ওয়ার্ড। চুপচাপ বসে থাকো। নাহলে আমার চেয়ে খারাপ কেও হবে না।

আদিত্যের রাগের সামনে নূরের আর কিছু বলার সাহস থাকে না। অগত্যা চুপচাপ বসে থাকে। মনে মনে ভাবে দেখা যাক আর কি আছে আমার কপালে?

চলবে……..

(রিচেক করিনি।ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here