ভালোবাসার চেয়েও বেশি 💞পর্ব-৩২

0
6827

#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি 💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-৩২

★ ক্লাস শেষে ভার্সিটির সামনে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে নূর। আদিত্য পার্কিং থেকে গাড়ি আনতে গেছে। আর নূরকে বলে গেছে এখানে দাড়িয়ে থাকতে।আজ নাকি আদিত্য ওকে কোথাও নিয়ে যাবে বলেছে। নূর অবশ্য প্রথমে একটু মানা করেছিল, কিন্তু আদিত্য তা শুনেনি। বলেছে কি নাকি গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে তাই যেতেই হবে।
নূরও তাই আর মানা করতে পারেনি। বাকি সবাইও নাকি যাবে। ওরাও চলে আসবে এখুনি।

আদিত্যের আসতে সময় লাগছে দেখে, নূর শুধু শুধু দাঁড়িয়ে না থেকে আজকে যে নোট গুলো কপি করেছিলো, সেগুলো বের করে চেক করতে লাগলো।

দুই মিনিট পরই আদিত্য গাড়ি নিয়ে চলে এলো। গাড়ি থামিয়ে আদিত্য গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়াতেই, হঠাৎ ওর ফোনটা বেজে উঠলো। আদিত্য ফোন বের করে দেখলো অফিস থেকে ফোন এসেছে। আদিত্য ফোনটা কানে নিয়ে কথা বলতে লাগলো।

নূর এখনো দাঁড়িয়ে পেপার চেক করছে। হঠাৎ দমকা বাতাসে নূরের হাত থেকে কয়েকটা পেপার উড়ে গেল। নূর একটু ঘাবড়ে যেয়ে তড়িঘড়ি করে পেপার গুলো ধরার জন্য পেপারের পেছনে ছুটতে লাগলো।

আদিত্য অন্য দিকে তাকিয়ে ফোনে কথা বলছে। তাই নূর এদিকে কি করছে সেটা আর ও দেখতে পাচ্ছে না।

নূর পেপারের পেছনে ছুটতে ছুটতে কখন যে রাস্তার মাঝখানে চলে এসেছে, সেই খেয়াল নেই ওর।
আদিত্য কথা বলা শেষে পাশে তাকিয়ে দেখে নূর নেই। আদিত্য ভ্রু কুঁচকে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো। মনে মনে ভাবলো, নূর আবার কই গেল?
পিছনে ঘুরে তাকাতেই আদিত্যের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পরলো। আদিত্য দেখলো নূর রাস্তার মাঝখানে বসে কি যেন খুঁজছে, আর ওর থেকে সামান্য দূরেই একটা ট্রাক ওর দিকে ছুটে আসছে। নূরের সে খেয়ালি নেই।

মূহুর্তেই যেন আদিত্যের পুরো পৃথিবীটাই থমকে গেল। ওর হার্টবিট যেন চলা বন্ধ করে দিল। হাত পা অবশ হয়ে যাচ্ছে। আদিত্য নূরকে ডাকতে চাচ্ছে, কিন্তু ওর গলা দিয়ে কোনো আওয়াজ বের হচ্ছে না। মনে হচ্ছে কেউ গলাটা চিপে ধরে রেখেছে।

নূর পেপারটা শেষমেষ হাতে পেয়ে খুশী মনে উঠে দাঁড়ালো। কিন্তু পাশে তাকাতেই ওর খুশি মুখটা উধাও হয়ে গেলো। সামনে থেকে আসা ট্রাককে দেখে নূরের সারা শরীর ভয়ে জমে গেল। নূর মনে মনে ভাবলো, আজই হয়তো ওর জীবনের শেষ দিন। এটা ভেবেই নূর চোখ বন্ধ করে নিল।

দুই সেকেন্ড পরেই নূরের মনে হলো কেউ ওকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিল। নূর যেয়ে রাস্তার পাশে পরে গেলো। একটু পরে নূর পিটপিট করে চোখ খুলে তাকালো। তারপর নিজের হাত পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখতে লাগলো সব ঠিক আছে নাকি। নূর মনে মনে ভাবলো, আমি কি তাহলে বেচে গেছি? কিন্তু কে বাঁচালো আমাকে?
এটা দেখার জন্য নূর পেছনে ফিরে তাকালো। আর তাকাতেই যা দেখলো তাতে নূর স্তব্ধ হয়ে গেল। মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো। ওর পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেল। নূর দেখলো আদিত্য রক্তাক্ত অবস্থায় উপর হয়ে রাস্তায় পরে আছে। নূরের বুঝতে বাকি রইলো না যে আদিত্য ওকে বাচাতে গিয়ে নিজেই গাড়ির সামনে চলে এসেছে।

আদিত্যর মাথার নিচে রক্তে ভেসে যাচ্ছে।
এসব দেখে নূর কেমন অনূভুতি শুন্য হয়ে গেলো। আশেপাশের সবকিছু ঘোলাটে হয়ে গেল। একদম পাথরের মতো দাঁড়িয়ে রইলো নূর।

কিছুক্ষণের মধ্যেই ওখানে মানুষজনের ভীড় জমে গেল। সবাই নানানরকম কথা বলতে লাগলো। কিন্তু নূরের সেসব কোনো কথাই কানে যাচ্ছে না। ও মূর্তির মতো দাঁড়িয়েই আছে। ওর ভেতর কোনো অনূভুতি কাজ করছে না।

একটু পরে আবির তাসির আর তানি ওখানে দৌড়ে এলো। আদিত্যের এমন অবস্থা দেখে আবির আর তাসির কিছুতেই সহ্য করতে পারছে না। দৌড়ে যেয়ে আদিত্যকে ধরে ওরা দুজন কাঁদতে লাগলো। আবির কাঁদতে কাঁদতে বললো।
….ভা ভাই কি হয়েছে তোর? ওঠনা ভাই। এতো র রক্ত কেন তোর শরীরে? প্লিজ ভাই ওঠনা।

তাসির নিজেকে একটু শক্ত করে আবিরের দিকে তাকিয়ে বললো।
…. এসবের সময় নেই। আমাদের ওকে তাড়াতাড়ি হসপিটালে নিতে হবে। ওকে ধরে গাড়িতে তোল তাড়াতাড়ি।

আবির মাথা ঝাকালো। তারপর ওরা দুজন আদিত্যকে ধরে গাড়িতে তুললো।

তানি এদিক ওদিক তাকিয়ে কিছুটা দূরে নূরকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ওর কাছে দৌড়ে গেল। তানি নূরের কাছে এসে দেখলো নূর কেমন অথর্বের মতো দাঁড়িয়ে আছে। তানি চিন্তিত স্বরে নূরকে ডাকতে লাগলো। কিন্তু নূরের কোনো হেলদোল নেই। তানি এবার নূরের কাঁধ ঝাকিয়ে উচ্চস্বরে ডেকে বললো।
….নূর নূরর,,,শুনতে পাচ্ছিস? তুই ঠিক আছিস?

নূর এবার একটু নড়েচড়ে উঠে তানির দিকে তাকালো। তারপর নিজের হাতটা উঠিয়ে রাস্তার দিকে ইশারা করে অস্পষ্ট স্বরে তানিকে কিছু একটা বলার চেষ্টা করলো।
….উ উ উ উনি আ আ আআমার জ জ জজন্য,,,,,

আর কিছু বলতে পারলো না নূর।জ্ঞান হারিয়ে পরে যেতে নিলেই তানি নূরকে ধরে ফেললো। তারপর একটা সিএনজি ডাক দিয়ে নূরকে নিয়ে সিএনজিতে উঠে আবিরদের গাড়ির পেছনে পেছনে গেল।
—————————————-

পিটপিট করে চোখ খুলে তাকালো নূর। আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো ও একটা হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে। তানি সামনেই একটা চেয়ারে মাথায় হাত রেখে চোখ বন্ধ করে বসে আছে।
নূরের হঠাৎ আদিত্যের কথা মনে হতেই ঠাস করে উঠে বসলো। শব্দ শুনে তানি তাকিয়ে দেখলো নূর উঠে পরেছে। তানি তাড়াহুড়ো করে বললো।
….তুই ঠিক আছিস?

নূর অস্থির হয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে তানিকে জিজ্ঞেস করলো।
….উ উ উনি কোথায়? কে কেমন আছেন উনি? উ উউনার কিছু হয়নি,উনি ঠি ঠিক আছন তাইনা বল? ক ককথা বল?

তানি নূরের কাঁধে হাত দিয়ে বললো।
… আমি সব বলছি। তুই আগে একটু শান্ত হ।

…আমি ঠিক আছি। তুই আগে আমার কথার উত্তর দে।

তানি দুঃখী গলায় বললো।
…. আদিত্য ভাইয়াকে অপারেশন থিয়েটার নিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এখন উনার অপারেশন চলছে। অপারেশন শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছুই বলা যাচ্ছে না।

তানির কথা শুনে নূর হু হু করে কেঁদে উঠলো। কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠলো।
….স সসব আ আমার জন্য হয়েছে। আ আআমিই দায়ী উনার এই অবস্থার জন্য। আ আআমাকে বাচাতে যেয়ে আজ উনার এই অবস্থা হয়েছে।

নূরের এমন অবস্থা দেখে তানিরও খুব খরাপ লাগছে। তবুও নিজেকে একটু শক্ত করে নূরকে শান্ত করার চেষ্টা করে বললো।
…তুই একটু শান্ত হ।দেখ এখানে কারোর কোনো দোষ নেই। এটা শুধু একটা এক্সিডেন্ট। তুই চিন্তা করিস না। দেখবি ভাইয়া একদম ঠিক হয়ে যাবে।

একটু পরে নূর তানির দিকে তাকিয়ে বললো।
….আ আমাকে একটু ওখানে নিয়ে যাবি প্লিজ?

তানি মাথা ঝাকিয়ে নূরের কাঁধ ধরে নূরকে অপারেশন থিয়েটারের সামনে নিয়ে গেল।

নূর আর তানি ওটির সামনে যেয়ে দেখলো। আবির আর তাসির ওটির সামনে চেয়ারে বসে আছে। আবিরের কাঁদতে কাঁদতে চোখ মুখ লাল করে ফেলেছে। তাসির চোখ বন্ধ করে দুই হাত দিয়ে নিজের চুল টেনে ধরে মাথা নিচু করে বসে আছে। ওরা এখনো বাসায় খবর দেইনি। বাসায় জানাজানি হলে সবাই ভেঙে পরবে। বিশেষ করে আদিত্যের বাবা। উনি এমনিতেই হার্টের পেসেন্ট। তারউপর এমন একটা খবর শুনলে, উনার অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যেতে পারে। তাই আবির আর তাসির বাসায় এখনো কাওকে জানায়নি।

নূর কাঁপা কাঁপা পায়ে ওটির দরজার কাছে যেয়ে, দরজার ওপরে কাচের হোল দিয়ে ভেতরে দেখার চেষ্টা করলো।
নূর দেখলো আদিত্যের মুখে অক্সিজেন দিয়ে রেখেছে। মাথায় আর সারা শরীরে ব্যান্ডেজ পেঁচিয়ে রেখেছে। আদিত্যকে এভাবে দেখে নূরের কষ্টে কলিজা ছিঁড়ে যাচ্ছে। নূর আর দেখতে পারলো না। ওখান থেকে সরে এসে পাশের দেয়াল ঘেঁষে নিচে বসে পরলো। মুখে দুই হাত চেপে ধরে কান্না আটকানোর চেষ্টা করছে।

দুই ঘন্টা পর ওটির দরজা খুলে ডক্টররা বের হয়ে এলো। আবির আর তাসির দৌড়ে ডক্টরের সামনে গেল।
নূর ওখানেই পাথরের মতো বসে রইলো। ও ডক্টরের কাছে যাওয়ার সাহস পাচ্ছে না। ডক্টর যদি কোনো খারাপ কিছু বলে সেই ভয়ে।

তাসির ডক্টরকে জিজ্ঞেস করলো
….ডক্টর আদিত্যর কি খবর? ওর কিছু হয়নি তো?

ডক্টর ওদের আস্বস্ত করে বললো।
…ডোন্ট ওয়ারি। অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছে। হি ইস নাউ আউট ডেঞ্জার।

কথাটা শুনে যেন সবার জানে পানি এলো। তাসিরের চোখে পানি চলে এলো। তাসির বললো।
…থ্যাংক ইউ ডক্টর। থ্যাংক ইউ সো মাচ। আমরা কি আদিত্যের সাথে দেখা করতে পারি?

….হ্যাঁ একটু পরে ওনাকে কেবিনে সিফট করা হবে। আর দুই ঘন্টা পরে ওনার জ্ঞান ফিরবে। তখন আপনারা চাইলে দেখা করতে পারবেন। তবে হ্যাঁ, রোগীর পাশে বেশি ভীড় করা যাবে না। ওনার সমস্যা হতে পারে।

তাসির বললো।
…ঠিক আছে ডক্টর আমরা খেয়াল রাখবো। থ্যাংক ইউ সো মাচ।
—————————————–

আদিত্যকে কেবিনে সিফট করা হয়েছে দুই ঘন্টা হয়ে গেছে। তাসির আর আবির কেবিনের সোফায় বসে আছে।
একটু পরে আবির আর তাসির খেয়াল করলো আদিত্য একটু নড়েচড়ে উঠছে। হয়তো আদিত্যের জ্ঞান ফিরে আসছে। কথাটা ভেবে তাসির আদিত্যের বেডের পাশে টুলে এসে বসলো। তাসির খেয়াল করলো আদিত্য কেমন জানি ছটফট করছে। মনে হচ্ছে ও ঘুমের ভেতর খারাপ কিছু দেখছে। একটু পরে তাসির আবার খেয়াল করলো আদিত্য বিড়বিড় করে কি যেন বলছে। তাসির ভালো করে শোনার জন্য আদিত্যের মুখের ওপর ওর কানটা ঝুকালো। কিছুক্ষণ শোনার পর তাসির বুঝতে পারলো আদিত্য বিড়বিড় করে শুধু নূরের নাম ধরে ডাকছে।

হাঠাৎ আদিত্য চিৎকার দিয়ে নূরের নাম ধরে ডেকে উঠে চোখ খুলে তাকালো। তাসির খুশি হয়ে বললো।
…আদি তোর জ্ঞান ফিরে এসেছে। তুই ঠিক আছিস? আমি এখুনি ডক্টরকে ডেকে আনছি।
কথাটা বলেই তাসির উঠতে নিলেই আদিত্য অনেক কষ্টে কোনরকমে বলে উঠলো।
…..তা তাতাসির।

তাসির সাথে সাথে থেমে যেয়ে আদিত্যের দিকে ঝুকে তাড়াহুড়ো করে বললো।
….হ্যাঁ হ্যাঁ, বল। কিছু বলবি?

আদিত্য কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠলো।
….নূ নূ নূর ক ককোথায়? ও ঠি ঠিক আছে তো?

তাসির যেন অবাকের চরম পর্যায়ে। এই মূহুর্তে যার কিনা জীবন মরন নিয়ে টানাটানি সে এখন নূরের চিন্তায় অস্থির। একটা মানুষ কিভাবে কাউকে এতো ভালোবাসতে পারে? তাসিরের ভাবনার মাঝেই আদিত্য আবারও অস্থির হয়ে বললো।
….কি কিরে? কথা ব বলছিস না কেন? নূরের কি কিকিছু হয়নি তো? স সসত্যি করে বল।

তাসির বলে উঠলো।
….আরে তুই চিন্তা করিস না। তোর নূরের কিছু হয় নি। ও একদম ঠিক আছে।

আদিত্য একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বললো।
….স সসত্যি বলছিস তো? আ আআমার নূর ঠিক আছে?

…হ্যাঁ হ্যাঁ সত্যি সত্যিই বলছি আমার বাপ।

….তা তা তাহলে নূর কো কোথায়? ও ওকে দেখছি না কে কেন? ওকি আ আআসেনি এখানে?

….আরে এসেছে তো। তখন থেকে বাইরে বসে আছে। বেচারি অনেক ভয় পেয়ে গেছিলো তোর জন্য। শুধু নূর কেন, তুই তো আমাদের সবাইকে ভয় পাইয়ে দিয়েছিলি শালা। জানিস সবার কি অবস্থা হয়েছিল। ভয়ে সবার আত্মা গলায় চলে এসেছিলো। এখন তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে আমাদের রক্ষা কর।

…..নূ নূ নূরকে একটু ডা ডাকনা। ও ওওকে না দেখা পর্যন্ত আ আমার শান্তি হবে না।

…ঠিক আছে, ঠিক আছে। তুই শান্ত হ আমি নূরকে ডেকে আনছি।

আবির উঠে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো।
…তুই ভাইয়ের কাছে থাক। আমি ডেকে আনছি নূরকে। আর তানিকেও দেখে আসছি।

তাসির মাথা ঝাকিয়ে বললো।
…ঠিক আছে।

আবির বাইরে এসে দেখলো তানি একা একা চেয়ারে বসে আছে। আবির ভ্রু কুঁচকে বললো।
….তুমি একা কেন? নূর কোথায় তানি?

তানি মুখটা ছোট করে বললো।
…..আমি একটু ওয়াশরুম গিয়েছিলাম এসে দেখি নূর এখানে নেই। আমি এদিক ওদিক খুঁজলাম কিন্তু পেলাম না। পরে ওর নাম্বারে ফোন দিলাম তাও ধরলো না। তার কিছুক্ষণ পর হঠাৎ ওর ম্যাসেজ আসলো যে ও বাসায় চলে গেছে। আমারনা ওর জন্য খুব চিন্তা হচ্ছে। মেয়েটা আজ অনেক বড়ো ধাক্কা খেয়েছে। নাজানি ওর ভেতর কি চলছে?

আবির তানিকে জড়িয়ে ধরে বললো।
….চিন্তা করোনা সময়ের সাথে সব ঠিক হয়ে যাবে।

তানি বললো।
….হুম। আচ্ছা আদিত্য ভাইয়ার কি অবস্থা এখন?

আবির তানিকে ছেড়ে দিয়ে বলে উঠলো।
…ও হ্যাঁ আমিতো ভুলেই গেছিলাম। ভাইয়ের জ্ঞান ফিরে এসেছে। আর ভাই এখন নূরের সাথে দেখা করতে চাচ্ছে। এখন ভাইকে কি বলবো? নূরকে না দেখে যাদি ভাই হাইপার হয়ে যায়?

তানি একটু ভেবে বললো।
…চলো আমি ভাইয়াকে বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করছি।

আবির মাথা ঝাকিয়ে বললো।
….ঠিক আছে চলো।

আবির আর তানি দুজন কেবিনের ভেতর ঢুকলো। তানি আদিত্যের দিকে তাকিয়ে বললো।
….আপনি ঠিক আছেন ভাইয়া? এখন কেমন লাগছে?

আদিত্য তানির পেছনে তাকিয়ে নূরকে খোঁজার চেষ্টা করছে। নূরকে না দেখে তানির দিকে তাকিয়ে বললো।
….নূ নূ নূর কোথায়? ও ওওকে দেখছি না কেন?

তানি বললো।
…আসলে ভাইয়া আজ নূরের ছোট মা বাসায় আসার কথা আছে। তাই নূরকে চলে যেতে হয়েছে। নাহলে ওর বাসায় সমস্যা হতে পারে। নূর যেতে চাচ্ছিল না। আমিই ওকে জোর করে পাঠিয়েছি। আপনি চিন্তা করবেন না। কাল সকালেই আবার আসবে নূর। তখন ওর সাথে দেখা করে নিয়েন।

আদিত্য মনে মনে হতাশ হলেও উপরে উপরে জোরপূর্বক একটা হাসি দিল। নূরের বাসার খবর আদিত্যের জানা আছে। তাই আর কিছু বলতে পারলো না। তবে নূরকে না দেখা পর্যন্ত ওর শান্তিও লাগছে না। আদিত্য মন খারাপ করে ভাবছে কাল সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে আমার নূরপাখিকে দেখার জন্য।

————————————–

নূর বাসার দরজা খুলে এলোমেলো পায়ে নিজের রুমের দিকে গেল। তারপর ওয়াশরুমে যেয়ে নিজের শরীরের ভর ছেড়ে দিয়ে ঠাস্ করে ফ্লোরে বসে পড়লো।
একটু পরে হঠাৎ নূর দুই হাত দিয়ে নিজের দুই গালে চড়াতে লাগলো। চড়াতে চড়াতে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো।
….সব তোর জন্য হয়েছে। সব তোর জন্য হয়েছে। তোর জন্য আজ উনার এই অবস্থা হয়েছে। তুই দায়ী এসবের জন্য। তুই কেন নিজের অস্তিত্ব ভুলে যাস? কেন ভুলে যাস তুই একটা অপয়া। হ্যাঁ হ্যাঁ, অপয়া অপয়া অপয়া। তারপর নূর চড়ানো বন্ধ করে জোরে জোরে কাঁদতে কাঁদতে আবার বলতে লাগলো।
….তুই কেন ভুলে যাস তুই একটা অপয়া? তুই যার জীবনে যাবি তার জীবন শেষ হয়ে যাবে। তুই যাকে ভালোবাসবি সে তোর থেকে দূরে চলে যাবে। এসব জানার পরও কেন তুই আদিত্যকে ভালোবাসতে গেলি? কেন ওর এতো কাছে গেলি? কেন? কেন?কেন? তোর মতো অপয়ার কাওকে ভালোবাসার কোনো অধিকার নেই। ছোট মা ঠিকই বলে। আমি সবাইকে খেয়ে ফেলি। আমার জন্য সবাই চলে যায়। আজ আমার জন্যই আদিত্যের জীবনেও কাল নেমে এসেছে। না না আমি ওনার কোনো ক্ষতি হতে দেবনা। আমি উনার জীবন থেকে সরে যাবো। কখনও উনার সামনে যাবো না। কখনো না। উনি দূরে থাকুক তবুও ভালো থাকুক। আমি উনাকে দূর থেকেই দেখে যাবো। আমার কি? আমিতো আমার জীবন এভাবেই মেনে নিয়েছি। কিন্তু উনি ভালো থাকুক, সুখে থাকুক এতেই আমি খুশি। হ্যাঁ এতেই খুশি……

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here