ভালোবাসার চেয়েও বেশি 💞পর্ব-৩১

0
6955

#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-৩১

★ অন্ধকার গোডাউনে চেয়ারে হাত পা বান্ধা অবস্থায় আধমরা ভাবে পরে আছে বদমাইশ তিনজন।
হঠাৎ গোডাউনের লাইট জ্বলে উঠলো। লাইটের তিব্র আলো চোখে পরতেই ছেলেগুলো ওদের চোখ বন্ধ করে নিল।
একটু পরে গোডাউনের সাটার খুলে গেল। আদিত্য আবির আর তাসির ভেতরে ঢুকে ছেলেগুলোর সামনে যেয়ে দাঁড়ালো। ওদের পেছনে পেছনে আদিত্যের লোকজনও এসে দাঁড়ালো।

আদিত্য হিংস্র চোখে তাকিয়ে আছে চেয়ারে বাঁধা ছেলেগুলোর দিকে। আদিত্য ওর নিজের লোকের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ইশারা করলো।
লোকটা মাথা ঝাকিয়ে ওখান থেকে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর একটা বালটিতে করে পানি নিয়ে এসে ছেলেগুলোর মুখে ছিটে মারলো।
পানি মারায় ছেলেগুলো ধড়ফড়িয়ে উঠে হাঁপাতে হাঁপাতে সামনে তাকালো। আদিত্যের দিকে তাকিয়ে সবগুলো ভয়ে কাকুতি মিনতি করতে করতে বললো।
….ভা ভা ভাই, আমাদের ছেড়ে দিন ভাই। আমাদের ভুল হয়ে গেছে। আমরা আর কখনও এমন করবো না। এবারের মতো মাফ করে দেন। প্লিজ ছেড়ে দিন।

আদিত্যের চোখ মুখ আরো কঠোর হয়ে উঠলো। রাগে চোয়াল শক্ত করে পা দিয়ে সামনে থাকা ছেলেটার বুক বরাবর একটা লাথি মেরে দিল।
সাথে সাথে ছেলেটা চেয়ার সহ উল্টে পরে গেলো।

আদিত্য পিছন থেকে নিজের গানটা বের করে, ছেলেটার কাছে যেয়ে কপালে গান ঠেকিয়ে ক্রুদ্ধ কন্ঠে বলে উঠলো।
…..ছেড়ে দেব? তাও আবার তোদের? হ্যাঁ ঠিকই বলেছিস। ছেড়ে দেব তোদের। তবে এখান থেকে না। এই দুনিয়া থেকেই তোদের ফ্রী করে দেব। তোরা যে অপরাধ করেছিস তাতে তোদের এই পৃথিবীতে বেচে থাকার কোনো অধিকার নেই। তোরা জানিস, তোরা কতো বড়ো অন্যায় করেছিস? আমাকে মেরে ফেললেও হয়তো তোরা মাফ পেয়ে যেতি। কিন্তু তোরা আমার কলিজায় হাত দিয়েছিস। আমার প্রাণপাখীকে অপবিত্র করার চেষ্টা করেছিস। যার সামান্য পরিমাণ চোখের পানিও আমার সহ্য হয়না। তোরা তার শরীর থেকে রক্ত ঝরিয়েছিস। তাকে কষ্ট দিয়েছিস। সেও তোদের কাছে কাকুতি মিনতি করেছিল ছেড়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু তোরা শুনিসনি।তাহলে আমার কাছ থেকে কিভাবে রক্ষা পাওয়ার আশা করছিস? তোদের কোনো রক্ষা নেই। তোদের একটাই শাস্তি তা হলো মৃত্যু।

আদিত্যের ক্রোধ দেখে আজ আবিরও ভয় পেয়ে গেছে। আদিত্যের এমন ভয়ংকর রুপ আগে কখনো দেখিনি আবির। আজ আর ওর মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না।
আবির আর তাসির কারোরই সাহস হচ্ছে না আদিত্যকে কিছু বলার।

আদিত্য পিস্তলের ট্রিগারে চাপ দিতে গেলেই, ছেলেটা ভয়ে চোখ বন্ধ করে তড়িঘড়ি করে বললো।
…..ভাই আমাদের কেও এটা করতে বলেছিল।

সাথে সাথে আদিত্যের হাত থেমে গেল। চমকে উঠে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে কপাল কুঁচকে উচ্চস্বরে বললো।
…ওয়াটট???

ছেলেটা চোখ খুলে ভয়ার্ত কন্ঠে বললো।
….জি জি জ্বি ভাই। একটা মেয়ে আমাদের টাকা দিয়েছিল ওসব করার জন্য। সত্যিই বলছি।

আবির আর তাসিরও একটু চমকে গেল একথা শুনে।
আদিত্য চোয়াল শক্ত করে ক্ষিপ্ত স্বরে বললো।
….কে সে? কে বলেছে তোদের এসব করতে? নাম বল ফাস্ট। তাহলে হয়তো তোরা জানে বেচে যেতে পারিস।

….ভাই আমরা নাম জানি না। তবে দেখলে চিনতে পারবো।

তাসির কিছু একটা ভেবে নিজের ফোনটা বের করে ফোনের ভেতর থেকে একটা ছবি বের ছেলেটার সামনে ধরে বলে উঠলো।
….এইটাই কি সেই মেয়েটা?

ছেলেটা ছবি দেখে তড়িঘড়ি করে মাথা ঝাকিয়ে বললো।
….হ্যাঁ হ্যাঁ, এটাই তো সেই মেয়েটা যে আমাদের এসব করতে বলেছিল।

আদিত্য খপ করে তাসিরের হাত থেকে ফোনটা নিয়ে ফোনের স্ক্রিনে থাকা মেয়েটির ছবি দেখে নিল। ছবিটা দেখেই আদিত্য আরো ক্রোধে ফেটে পরলো। ছবিটা এ্যানির, তারমানে এ্যানিই এসব করিয়েছে?

আদিত্য চোখ মুখ কঠোর করে বললো।
…..ইউ হ্যাভ টু পে ফর দিস।

আদিত্য উঠে দাঁড়িয়ে যেতে নিয়ে আবার থেমে যায়। তারপর পিছনে ছেলেগুলোর দিকে তাকিয়ে বললো।
…. আমি আমার কথার কখনো বরখেলাপ করিনা। আমি যখন বলেছি তোরা জানে বেচে যাবি, তারমানে তোদের আমি জানে মারবো না। তবে আমি আমার প্রাণপাখি কেও প্রমিজ করেছি যে তোরা তোদের প্রাপ্য শাস্তি পেয়ে যাবি। তাই আমি তোদের এমন শাস্তি দেব যে তোরা আজ বেচে গেলেও। পরবর্তীতে তোরা নিজেরাই রোজ তোদের কামনা করবি। আর আপসোস করবি কেন আমি তোদের আজ মেরে ফেললাম না।
কথাগুলো বলেই আদিত্য ছেলেগুলোর দুই হাতে আর পায়ে গুলি করে দিল। সাথে সাথে ছেলেগুলো আর্তনাদ করে তৎক্ষনাৎ অজ্ঞান হয়ে গেলো। আদিত্য ওর লোকের দিকে তাকিয়ে বললো।
…..এদের কে কোনো হসপিটালের সামনে ফেলে এসো।

তারপর আদিত্যরা ওখান থেকে বেড়িয়ে গেলো।

—————————————-

এ্যানি ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে বারবার কাওকে ফোন করে যাচ্ছে। মনে মনে ভাবছে ওই ছেলেগুলো ফোন ধরছে না কেন? কাজ শেষ করেছে কিনা কিছুই জানতে পারছি না।
এ্যানির ভাবনার মাঝেই হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠলো। বাসার কাজের মেয়েটা গিয়ে দরজা খুলে দিতেই, একঝাঁক মহিলারা কোথাথেকে হুড়মুড় করে ঢুকে পরলো।
কাজের মেয়েটা হতভম্ব হয়ে বললো।
…..আপনারা কারা? এখানে কাকে চান?

মহিলাগুলোর ভেতর থেকে একজন বলে উঠলো।
….আমরা এ্যানির সাথে দেখা করতে এসেছি। এ্যানি কোথায়?

এ্যানি সোফায় বসে থেকেই কাজের মেয়ের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো।
…কে এসেছে?

কাজের মেয়েটা বললো।
….আফা কতগুলো মহিলা আইছে। আপনার সাথে দেখা করবার চায়।

এ্যানি ভ্রু কুঁচকে ভাবলো, আমার সাথে আবার কে দেখা করতে এলো? এ্যানি দরজার কাছে এগিয়ে গেল। সামনে এতগুলো মহিলা দেখে এ্যানি একটু অবাক হলো। তারপর জিজ্ঞেস করলো।
….আপনারা কারা? আর আমার কাছে কি চান?

মহিলগুলোর ভেতর থেকে লিডার টাইপের মহিলাটি বলে উঠলো।
….ও,, তাহলে তুই সেই এ্যানি?

এ্যানি ভ্রু কুঁচকে বললো।
…মানে?

লিডার মহিলাটি রহস্যময় হাসি দিয়ে বললো।
….এখনি বলছি।
কথাটা বলেই লিডার মহিলাটি এ্যানির সামনে যেয়ে ঠাস্ করে ওর গালে একটা চড় মেরে দিল।

এভাবে চড় মারা দেখে কাজের মেয়েটা এত্তো বড়ো হা করে মুখের ওপর হাত চেপে ধরলো।

চড় খেয়ে এ্যানির মাথাটা একটু অন্য দিকে ঘুরে গেল।
এ্যানি গালে হাত দিয়ে রাগী চোখে মহিলাটির দিকে তাকিয়ে বললো।
….হাউ ডেয়ার ইউ? তোমার সাহস কি করে হলো আমার গালে চড় মারার?

মহিলাটি তাচ্ছিল্যের একটা হাসি দিয়ে বললো।
…..সাহসের তো এখনো কিছুই দেখিসনি। আগে দেখ তোর সাথে আমরা কি করি?
কথাটা বলেই মহিলাটি পাশে থাকা মহিগুলোর দিকে কিছু একটা ইশারা করলো।
সাথে সাথে দুজন মহিলা এগিয়ে এসে এ্যানির দুই হাত শক্ত করে ধরে টানতে টানতে বাসার সামনে রাস্তায় নিয়ে এলো।

এ্যানি অনেক ছোটাছুটি করে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলতে লাগলো।
…..এই এই কি করছো তোমরা? ছাড়ো আমাকে। কোথায় নিয়ে যাচ্ছো? দেখ ভালো হবে না কিন্তু বলে দিলাম। তোমরা আমাকে চিনোনা। আমার বাবা জানলে তোমাদের সবকয়টাকে জেলে ভরে দিবে। ভালোই ভালোই বলছি ছেড়ে দেও আমাকে।

মহিলাগুলো এ্যানির কথায় ভ্রূক্ষেপ না করে ওকে টানতে টানতে বাসার সামনে রাস্তায় নিয়ে গেল।

কাজের মেয়েটা দৌড়ে যেয়ে এ্যানির মায়ের কাছে সব খুলে বললো। সব শুনে এ্যানির মা দৌড়ে গেল এ্যানির কাছে। যেতে যেতে এ্যানির বাবাকে ফোন করে তাড়াতাড়ি বাসায় আসতে বললো।

মহিলাগুলো এ্যানিকে টানতে টানতে রাস্তায় নিয়ে এসে ঠাস্ করে নিচে ফেলে দিল।

এ্যানি যেয়ে পরলো রাস্তার ওপর।
লিডার মহিলাটি যেয়ে এ্যানির চুলের মুঠি ধরে শক্ত করে টান দিয়ে কর্কশ গলায় বললো।
….আমাদের চিন্তা তোর করতে হবে না। তুই নিজের চিন্তা কর। তুই কি ভেবেছিলি? একটা নিস্পাপ মেয়ের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার চেষ্টা করবি আর তোকে কেও কিছু বলবে না?

এ্যানি এবার একটু ঘাবড়ে গেল। মনে মনে ভাবলো, এরা কি নূরের কথা বলছে? কিন্তু এরা জানলো কিভাবে? আর নূরই বা কোথায়?

এ্যানির মা দৌড়ে এসে এ্যানির কাছে যেতে নিলে, দুজন মহিলা তাকে আটকে ফেলে। এ্যানির মা নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলতে লাগলো।
….কারা আপনারা? কি চাই আপনাদের? আমার মেয়ের সাথে এমন করছেন কেন? ছেড়ে দিন ওকে প্লিজ। আপনাদের কতো টাকা চাই বলুন? আমি সব দিয়ে দিব। তবুও আমার মেয়েটাকে ছেড়েদিন দয়া করে।

লিডার মহিলাটি এ্যানির মায়ের কাছে তেড়ে এসে বললো।
….নিজের মেয়ের জন্য খুব দরদ উৎলে উঠছে তাইনা?অথচ তোর মেয়ে যে অন্যের মেয়ের জীবন নষ্ট করতে যাচ্ছিলো, সে খবর আছে তোদের? আমাদের কি চাই জানিস? আমাদের চাই ইনসাফ। আর আমরা এখন ইনসাফ করে তারপরই যাবো।

কথাগুলো বলে মহিলাটি আবার এ্যানির কাছে যেয়ে রহস্যময় হাসি দিয়ে বললো।
….তোর মানুষের ভিডিও বানিয়ে বদনাম করার খুব শখ তাইনা? আজ আমরা তোর সেই শখ পূরণ করবো।
কথাটা বলেই লিডার মহিলাটি পাশের মহিলার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো।
….শিলা ক্যামেরা বের কর। আজ আমরা ওর ফাটাফাটি ভিডিও বানাবো । যা দেখলে মানুষ সারাজীবনেও ভুলবে না।

শিলা মাথা ঝাকিয়ে মোবাইল ক্যামেরা বের করে শুট করা শুরু করলো।

এ্যানি ভয় পেয়ে বললো।
….দে দেখো এমন কিছুই করবে না। নাহলে কিন্তু আমার বাবা তোমাদের ছাড়বে না বলে দিলাম।

লিডার মহিলাটি আবারও ঠাস্ করে একটা চড় লাগিয়ে দিল এ্যানির গালে। তারপর রাগী স্বরে বলে উঠলো।
….আগে নিজে এখান থেকে বেচে দেখা তারপর আমাদের চিন্তা করিস। আজ তোর এমন হাল করবো যে কাওকে নিজের মুখ দেখাতেও ভয় পাবি। যেটা তুই অন্যের সাথে করতে চেয়েছিলি সেটা এখন তোর সাথে হবে।

এ্যানি এবার ভয়ে কেঁদে দিয়ে বললো।
….প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন। আমি কিছু করিনি।

এ্যানির মাও অনেক কাকুতি মিনতি করতে লাগলো এ্যানিকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য।

কিন্তু সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ না করে লিডার মহিলাটি পাশের মহিলাকে কিছু একটা ইশারা করতেই, সেই মহিলাটি মাথা ঝাকিয়ে নিজের ব্যাগ থেকে একটা কেচি বের করে লিডার মহিলাটর হাতে দিল। তারপর দুজন মহিলা যেয়ে এ্যানির দুই হাত চেপে ধরে এ্যানিকে আটকে রাখলো।
এ্যানি ভয়ে কান্নাকাটি করতে লাগলো আর নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলো।
লিডার মহিলাটি যেয়ে এ্যানির চুলের গোছা একহাতে নিয়ে আরের হাতে কেঁচি দিয়ে ঘ্যাচাং করে চুলগুলো কেটে ফেললো।

এ্যানি এবার চিৎকার দিয়ে কান্না করে দিল। শিলা নামের মহিলাটি সবকিছুই তার ক্যামেরায় ভিডিও করছে।
এতক্ষণে রাস্তায় ভীড় জমে গেছে। পাবলিক দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এসব দেখছে আর লাইভ মজা নিচ্ছে।

একটু পরে লিডার মহিলাটি আবারও পাশের মহিলার দিকে ইশারা করতেই, সেই মহিলাটি যেয়ে একটা বালতি নিয়ে এলো। বালতির ভেতর কালো রং মেশানো। সব মহিলাগুলো একে একে এগিয়ে এসে বালতির ভেতর নিজেদের হাত চুবিয়ে তারপর সেই হাত দিয়ে এ্যানির সারা মুখে কালি মেখে দিল।

তারপর আবার আরেকজন মহিলা অন্য একটা বালটি। এটার ভেতর গবর মেশানো। সবাই নিজেদের নাক চেপে ধরলো। আর মহিলাটি এ্যানির পেছনে দাঁড়িয়ে পুরো বালতি ধরে এ্যানির মাথায় ঢেলে দিল। তারপর সবাই একটু দূরে যেয়ে নিজেদের নাক চেপে ধরে হাসতে লাগলো। শিলা নামের মহিলাটি এতক্ষণ যেগুলো ভিডিও করেছিলো সেটা সোশাল মিডিয়ায় আপলোড করে দেয়। এবং সাথে সাথে সেটা ভাইরাল হওয়া শুরু করে দেয়।

এ্যানি গবরের গন্ধে বমি করা শুরু করে দিল
এতক্ষণে এ্যানির বাবা চলে এলো। গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে এ্যানির কাছে গেল। এ্যানির এমন অবস্থা দেখে ওর বাবা রাগী স্বরে বলে উঠলো।
….কে করেছে আমার মেয়ের এই অবস্থা? আমি কাওকে ছাড়বো না। বলো কে করেছে এসব?

…..আমি করেছি এসব।

পেছন থেকে কারোর আওয়াজ পেয়ে এ্যানির বাবা তাকিয়ে দেখার চেষ্টা করলো কে বললো কথাটা।

মহিলাগুলো সহ ভীড়ের মানুষ দুই দিকে ভাগ হয়ে সরে গেল। আর মাঝখান দিয়ে রাস্তা হয়ে গেলো। সেখান দিয়ে এগিয়ে এলো আদিত্য। আর ওর পেছনে আবির আর তাসির।

আদিত্য এ্যানির বাবার কাছে এসে বললো।
…হ্যাঁ আমি করেছি।

এ্যানির বাবা ভ্রু কুঁচকে রাগী স্বরে বলে উঠলো।
….তুমি করেছো??? কিন্তু কেন করেছো? তোমার সাহস কি করে হলো আমার মেয়ের সাথে এমন কাজ করার?

আদিত্য একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো।
….সাহস আমার যথারীতিই একটু বেশি। সেটার কথা আর আপনাকে নাইবা বললাম। যাহোক কথা আসে এটা কেন করলাম? তাহলে শুনুন, আপনার মেয়ে যেটা করেছে সেখানে এগুলো তো কিছুই না। ওকেতো আরো কঠিন শাস্তি দেওয়া উচিৎ।

এ্যানির বাবা বললো।
….মানে??? কি এমন করেছে আমার মেয়ে? জার জন্য ওর সাথে এমন আচরণ করছো?

…..সেটা আপনার গুনধর মেয়ের কাছেই জিজ্ঞেস করুন। দেখুন বলতে পারে কিনা নিজের কুকীর্তির কথা?

এ্যানির বাবা এ্যানির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো।
….এ্যানি আদিত্য কি বলছে এসব? তুমি কি করেছ?

এ্যানি কিছু বলতে পারছেনা ভয়ে ভয়ে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো।

এ্যানির বাবা ধমকের সুরে বললো।
….কি হলো? কথা বলছো না কেন?

আদিত্য তাচ্ছিল্যের সুরে বললো।
…আঙ্কেল ও বলতে পারবে না আমি জানি। কারণ ওই ঘৃণিত কথাটা বলার সাহস ওর নেই, যে কাজটা ও নিজেই করতে চেয়েছিল।তাই আমিই আপনাকে বলছি। আমি কখনও কাউকে আমার কাজের এক্সপ্লেনেশন দেইনা। কিন্তু আপনি আমার বাবার বন্ধু বলে শুধু আপনাকে ব্যাপারটা খুলে বলছি।

তারপর আদিত্য এ্যানির বাবাকে সবকিছু খুলে বললো। সবকিছু শুনে এ্যানির বাবা হতভম্ব হয়ে গেলো। তার মেয়ে যে এতো খারাপ কাজ করতে পারে এটা সে কখনও কল্পনাও করেনি। এ্যানির বাবা এ্যানির দিকে তাকিয়ে রাগী স্বরে বললো।
….আদিত্য যা বলছে তাকি সত্যিই? কথা বলছো না কেন? জবাব দেও আমাকে?

এ্যানি এবার উচ্চস্বরে বলে উঠলো।
…হ্যাঁ হ্যাঁ করেছি আমি। সব আমিই করেছি। কারণ ওই মেয়েটা আদিত্যকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে। আদিত্যকে আমি ভালোবাসি। আর আদিত্য কিনা ওই মেয়েটার জন্য পাগল। তাই আমি ওকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য এসব করেছি।
এ্যানির মুখে এসব কথা শুনে ওর বাবার লজ্জায় মাথা হেট হয়ে যায়। মেয়েটাকে বেশি আদর দিয়ে বাদর বানিয়ে ফেলেছে।

আদিত্য চোয়াল শক্ত করে এ্যানির সামনে কিছুটা দূরে বসে অগ্নি চোখে তাকিয়ে দাঁত কিড়মিড় করে বললো।
…..জাস্ট সাট আপ। ভালোবাসার কথা তোর ওই নোংরা মুখে উচ্চারণও করবি না। তোর মতো মেয়েকে ভালোবাসাতো দূরের কথা ঘৃণা করতেও আমার রুচিতে বাঁধে। আমি চাইলে তোর সাথেও সেই কাজটা করতে পারতাম যেটা তুই আমার নূরপাখির সাথে করতে চেয়েছিলি। কিন্তু না আমি তোর মতো এতো নিকৃষ্ট কাজ করতে পারলাম না। আমি তোকে পুকিশেও দিতে পারতাম। কিন্তু তাতে তোর সাথে নূরেরও নাম বদনাম হতো। আর সেটা আমি কখনোই হতে দেব না। তুই কি ভেবেছিলি আমার প্রাণপাখিকে কষ্ট দিয়ে তুই পার পেয়ে যাবি? কখনোই না। ইচ্ছেতো করছে তোকে এখুনি গুলি করে মেরে ফেলতে।
কথাটা বলেই আদিত্য ওর গানটা বের করে এ্যানির কপাল বরাবর পয়েন্ট করলো ।

এ্যানির এবার ভয়ে আত্মা বেড়িয়ে যাওয়ার উপক্রম।

এ্যানির বাবাও ভয় পেয়ে আদিত্যের সামনে বসে হাত জোর করে বিনীত সুরে বললো।
….না না আদিত্য প্লিজ ওকে জানে মেরোনা। যেমনই হোক একটা মাত্র মেয়ে আমার। দয়া করে ওকে মেরোনা প্লিজ। আমি তোমাকে প্রমিজ করছি, আর কখনও এ্যানি তোমাদের সামনেও যাবে না। দরকার হলে ওকে আমি বিদেশে পাঠিয়ে দিব। তবুও ওকে ছেড়ে দেও প্লিজ।

আদিত্য উঠে দাঁড়িয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
…..ঠিক আছে। শুধুমাত্র আপনার কথামতো ওকে এবারের মতো ছেড়ে দিলাম। তবে কখনও যদি ও নূরের কোনো ক্ষতি করার চেষ্টা করে, তাহলে সেদিনই ওর জীবনের শেষ দিন হবে। কথাটা মনে রাখবেন।

এ্যানির বাবা মাথা ঝাকালো। মানে সে বুঝতে পেরেছে।

আদিত্য ওখান থেকে সরে গিয়ে মহিগুলোর কাছে যেয়ে বললো।
….আপনাদের সবাইকে অনেক ধন্যবাদ আমার কথামতো এখানে আসার জন্য।

লিডার মহিলাটি মুচকি হেসে বললো।
….কিযে বলেননা সার? আপনার দেওয়া টাকাতেই তো আমাদের মহিলা কল্যাণ সংস্থাটা চলছে। আপনার জন্য কিছু করতে পারাতো আমাদের জন্য সৌভাগ্যের ব্যাপার। আর তাছাড়া অন্যায়ের প্রতিবাদ করাইতো আমাদের কাজ।

আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
….ঠিক আছে, তাহলে আজ আসি। বায়।

বলেই আদিত্য ওখান থেকে চলে গেলো।

আদিত্য গাড়ি ড্রাইভ করছে। পাশ থেকে আবির হাসতে হাসতে বললো।
….ভাই ভিডিও তো পুরা ভাইরাল হয়ে গেছে। এক ঘন্টায়ই ওয়ান মিলিয়ন ভিউস হয়ে গেছে। এ্যানিতো একদম ফেমাস সেলিব্রিটি হয়ে গেলো। সত্যিই ভাই একদম পুরো ফাটিয়ে দিয়েছিস। কি শায়েস্তা টাই না করলি। জীবন থাকতে আর আজকের দিনটা ভুলতে পারবে না।
কথাগুলো বলেই আবির হাসতে লাগলো। তাসিরও ওর সাথে হেসে দিল।

আদিত্য বাঁকা হেসে মনে মনে বললো। যারাই আমার প্রাণপাখির ক্ষতি করার চেষ্টা করবে, তাদের অবস্থা এর থেকেও ভয়ানক হবে। আমি থাকতে কেউ তোমার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।
আদিত্য আবার ভাবছে , গতকাল তো এসবের কারণে নূরকে প্রপোজ করতে পারলো না। তবে আগামীকাল অবশ্যই নূরকে প্রোপজ করবো। কাল ভার্সিটি শেষে কোথাও নিয়ে যেয়ে সারপ্রাইজ দিব। তারপর আমার মনের কথা বলে দিব আমার নূরপাখিকে।
এসব কথা ভেবে আদিত্য মুচকি হাসলো।এখন শুধু কালকের অপেক্ষা।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here