#ভালোবাসা_বারণ
#পর্বঃ১৫
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
* অয়ন দেখতে পায় রিদ্রিতার ফোন। অয়ন ফোনটা হাতে নিয়ে ভাবছে এতো বছর পরে হঠাৎ রিদ্রিতা কল করলো কেনো? অয়ন কলটা পিক করবে কি করবে না! সেই দ্বিধা দ্বন্দ্বে পরে যায়। সম্পর্ক তো অনেক আগেই শেষ। তবে এখনও এতো ভয় কিসের আমার? কলটা পিক করে দেখা উচিৎ কি বলতে চায় সে! অয়ন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কলটা পিক করলো। কলটা রিসিভ করে অয়ন একদম নিশ্চুপ হয়ে আছে। ফোনের ওপারের মানুষটাও নিশ্চুপ। কি দিয়ে বা কোন কথা দিয়ে শুরু করবে বুঝতে পারছে না দুজনি। অয়ন আর নিরব থাকতে পারলো না। সকল নিরবতা ভেঙ্গে অয়ন বলল
— হ্যালো, কে বলছেন?
রিদ্রিতা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উত্তর দিলো
— নাম্বারটা এখন আর সেভ করা নাই। তাই চিনতে অসুবিধা হচ্ছে।
অয়ন শব্দ করে হেসে দিয়ে জবাব দিলো
— জ্বি, নাম্বার সেভ করার জন্য অধিকার প্রয়োজন হয়। যা কোনো দিন আমার ছিলো না। আর আপনার ফোন নাম্বার মনে রাখার মতো ইচ্ছে ও আমার নেই।
— হুম
— তা হঠাৎ করে কল করলেন কেনো?
— কেনো কল করা কি বারণ ছিলো?
— বারণ বলতে আমার প্রয়োজন তো শেষ হয়ে গেছে। তাই কল করায় অবাক হলাম।
— ওহহ, তো কেমন আছো তুমি?
— এই তো আছি ভালোই।
— হুম। এখন আর আমি কেমন আছি জানতে ইচ্ছে করে না?
— হাহাহা, কেনো জানতে চাইবো? আমি জানি আপনি খুব ভালো আছেন। আর ভালো থাকাটাই স্বাভাবিক। নিজের লাইফের সব থেকে সেরা মানুষের সাথে থাকছেন তো ভালো না থেকে কি উপায়?
— নিজে মন যা বলছে তা কি সব সত্যি? নিজের জায়গায় থেকে অন্যকে বিচার করাটা ছাড়নি এখনও!
— নিজের জায়গায় থেকে অন্যকে না আমি নিজের চোখে দেখে বিচার করি।
— হুম। সেদিন ভূল করেছিলাম আমি। একটা সুযোগ আমার পাওয়া উচিৎ ছিলো। তা না দিয়ে অনেকটা দূরে ঠেলে দিলে আমায়। এতোটাই দূরে যে হাজার চেষ্টা করলেও আর ফিরতে পারবো না আমি।
রিদ্রিতার কথা কানে আসতেই অয়ন অবাক হয়ে যায়। অয়ন নরম কন্ঠে বলতে লাগলো
— তাই! আর তুমি ফিরে আসলেই আমি মেনে নিবো তাই না! ভূল ক্ষমা করা যায়। তবে আগে সেই ভূলটা ক্ষমার যোগ্য হওয়া প্রয়োজন। তুমি যে ভূল গুলো করেছো। তা কোনো সাধারন ভূল না। আর সেটাকে ভূল বলে না। নিজের ইচ্ছায় তুমি রিয়াদের বিছানায় গিয়েছো। দিনের পর দিন আমার ভালোবাসা নিয়ে খেলেছো তুমি। আমার লাইফটা নরক বানিয়ে দিয়েছো। আমি তো একে আসক্ত ছিলাম। তুমি কেনো একে আসক্ত হতে পারলে না? আমি থাকার পরেও তুমি কেনো অন্যকে আপন করতে চেয়েছো? কেনো আমার ভালোবাসা টা নিয়ে এতোটা বাজে ভাবে ঠকিয়েছো আমায়?
অয়ন ওপার থেকে কোনো জবাব না পেয়ে থেমে যায়। অয়ন লাইনে ঠিক আছে অথচ কথা বলতে পারছে না রিদ্রিতা। অয়নের কোনো প্রশ্নেরই জবাব তার জানা নেই। অয়ন মৃদু হেসে রিদ্রিতাকে বলল
— তোমার নিরবতা আবারও প্রমান করছে তোমার পাপ গুলো, তোমার করা অপরাধ গুলো। যাই হোক আর কথা বাড়াতে চাই না। ভালো থেকো।
অয়ন লাইনটা মুখের উপর কেটে দিলো। ফোনটা হাতে থেকে ছুড়ে ফেলে দেয় বিছানায়। এতোটা খারাপ লাগছিলো রিদ্রিতার সাথে কথা বলতে যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। এতোটা নির্লজ্জ সে যে আবার আমায় কল করে ভালোবাসা চায়। অবাক না হয়ে পারি না আমি।
* সকাল বেলা ঈশা ঘুম থেকে উঠে যায়। সারা রাত দুচোখে ঘুম ছিলো না তার। ভোর হতেই চোখের পাতা জোড়া এক হয়ে যায়। কখন যে সে ঘুমের রাজ্যে পারি জমিয়েছে তা মনে নেই। নিজের বিছানা থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নেয় ঈশা। অফিসে যেতে হবে তাকে। যদিও ঈশার ইচ্ছে নেই অয়নের সামনে গিয়ে নির্লজ্জের মতো কাজ করতে। তবে কি করা যাবে? তার বাবার অপারেশনের সময় অনেক টাকা যে ঋণ করে ফেলেছে ঈশা। তা পরিশোধ করতে হলে এই চাকরিটা করা প্রয়োজন। ঈশা ফ্রেশ হয়ে এসে তৈরি হচ্ছে। একটু অদ্ভুত লাগছে আজকের সকালটা। মানে অদ্ভুত লাগার যথেষ্ট কারন ও আছে। প্রতিদিন সকালে তো কেউ না কেউ ডেকে তুলতো তাকে। কিন্তু আজ আজ কেউ তাকে ডেকে তুললো না। এই বিষয়টা একটু হলেও অবাক করে ঈশাকে। অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়েছে ঈশা। নাস্তা করতে খাবার টেবিলে আসতেই ঈশা দেখতে পেলো তার মা খাবার তৈরি করছে। ঈশা তার মাকে উদ্দেশ্য করে বেশ কোমল কন্ঠে বলে উঠল
— মা অফিসে জন্য লেট হয়ে যাচ্ছে। কখন খাবার দিবে?
ঈশা পিছন থেকে তার মাকে উদ্দেশ্য করে বলে কথাটা। ঈশার মা তার কথা শুনতেই পিছন ফিরে তাকালো। ঈশাকে উদ্দেশ্য করে কৌতুহলী কন্ঠে জ্বিগাসা করলো রেহেলা বেগম
— রেডি হয়েছিস কেনো? কোথায় কি যাচ্ছিস তুই?
— ওমা জানো না কেনো রেডি হয়েছি? আজ তো অফিস আছে তাই না। সো অফিসে যাবো। তারাতাড়ি খাবার দাও তো মা। পেটের মধ্যে আগুন জ্বলচ্ছে।
ঈশার দিকে একটু রাগি দৃষ্টি ফেলে রেহেলা বেগম। ঈশা কিছু বুঝতে পারছে না উনি রেগে যাচ্ছেন কেনো? ঈশা কিছু বলার আগেই তার মা তাকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলেন
— এতোটা অপমান যে তোকে করেছে। তার কাছে আবারও যাচ্ছিস? লজ্জা বোধ কি নেই তোর?
ঈশা একটু হেসে তার মা এর দিকে তাকিয়ে জবাব দিলো
— মা লজ্জা বোধ অবশ্যই আছে কিন্তু আমি যে অয়নের কাছে ঋণী। ওর ঋণ সোধ করতে হবে আমায়। আমি চাই না কারো দানের টাকায় আমার বাবা বেঁচে থাকুক। আমি চাই আমার বাবা সবার সামনে মাথা উঁচু করে বাঁচুক। আমাদের হয়তো মা ও অয়ন চৌধুরীর মতো টাকা নেই। আর না আছে তার মতো রাজার হালে চলার মতো ক্ষমতা। কিন্তু মা একটা জিনিস ঠিক আছে আমাদের। তা হলো নিজের উপর সম্মান। নিজের আত্নসম্মান কখনও আমরা বিসর্জন দেইনি। আর না দিবো কখনও।
ঈশার কথা শুনে রেহেলা বেগম বেশ নিশ্চুপ হয়ে যায়। ঈশার কথা গুলো সত্যি। এই কথা গুলো অযৌক্তিক নয়। রেহেলা বেগম একটু নরম কন্ঠে বলল
— তবে কি যাবিই সেখানে?
— হ্যাঁ, মা যাবো। আমাকে অয়নের ঋণ শোধ করতে হবে।
— যদি অয়ন তোকে আবার কথা শুনায়! আবার যদি তোকে বাজে বাজে কথা বলে। তখন কি করবি?
— জানি মা। অয়ন অপমান ছাড়া আর কিছু করতে পারে না। আর আমি ওর অপমানের জবাব সময় মতো দিবো। আপাতত মুখ বুজে সহ্য করাটাই উত্তম।
* ঈশা নাস্তা শেষ করে নিজের বাসা থেকে বেরিয়ে যায় অফিসের উদ্দেশ্যে। অয়ন অফিসে আসার জন্য কিছুক্ষণ আগেই বাসা থেকে বেরিয়েছে। অয়ন গাড়ি নিয়ে ড্রাইভ করছে। অয়ন নিজে নিজে ভাবছে। ” আচ্ছা আজ কি ঈশা অফিসে আসবে? কাল ওকে অনেক অপমান করেছি আমি। একটিবার ও ওর কথা ভেবে দেখিনি। দেখা যাক আসে কি আসে না। তবে যদি না আসে তা হলে আমি কোনো জোর করবো না ওকে। নিজের মতো থাকতে দিবো ঈশাকে। অয়ন ঈশার কথা ভাবতেই হঠাৎ করে সজোরে ব্রেক করলো নিজের গাড়ি। হঠাৎ এতো জোরে ব্রেক করার জন্য অয়ন সামনের দিকে ঝুঁকে যায়। অয়ন মাথাটা তুলেই ভিশন অবাক হয়ে যায়্। একি দেখছে সে? রিহান আর অনু এক সাথে কোথায় যাচ্ছে? অনুর হাতে লাল গোলাপ। রিহান অনুর বাহু জোড়া ধরে হাঁটছে। মানে কি এসবের! এই ছেলে আজ ঈশা, কাল অনু, এরপর অন্য কেউ। ছিঃ ছিঃ ছিঃ! আমি তো ভাবতাম এইসব শুধু মাত্র মেয়েরা করে। এখন দেখছি আমি ভূল। কিছু কিছু ছেলেরাও কম যায় না। অয়ন গাড়ি থেকে দুম করে নেমে পরলো। প্রচন্ড রাগ হচ্ছে রিহানের উপর। ঈশাকে ছেড়ে এখন অন্য কাউকে কি করে আপন করতে পারলো সে? ঈশা তো ওকে ভালোবাসে। তবে কেনো ঈশাকে ছেড়ে দিলো?
* কথাটা ভাবতেই অয়ন এগিয়ে যায় রিহানের দিকে। রিহানকে পিছন থেকে সজোরে ধাক্কা মারে অয়ন। ধাক্কার তাল সামলাতে না পেরে কিছুটা সামনের দিকে এগিয়ে মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়ে রিয়ান। অয়নের এমন ব্যবহারে কারন কেউ বুঝতে পারে না। অয়ন অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রিয়ানের দিকে। রিয়ান অয়নকে রাখি লুকে দেখে ভয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলতে লাগলো
— স্যার, আপনি আমাকে ধাক্কা দিলেন কেনো? আমি কি কিছু করেছি?
অয়ন তার প্রশ্নের জবাব দেয়ার প্রয়োজন মনে করলো না। মাটি থেকে তুলার জন্য রিহানের দিকে হাত বাড়িয়ে দিতেই……………………..
#চলবে………………………..