ভালোবাসা বারণ পর্ব-১৬

0
2402

#ভালোবাসা_বারণ
#পর্বঃ১৬
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
* মাটি থেকে তুলার জন্য রিহানের দিকে হাত বাড়িয়ে দিতেই অনু চিৎকার করে অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— এইসব কি হচ্ছে? অয়ন স্যার আপনি রিহানের গায়ে হাত তুলছেন কেনো? কি করেছে রিহান?

অয়ন অনুর কথায় কর্ণপাত না করে রিহানকে মাটি থেকে তুললো। এক হাতে রিহানের শার্টের কলার শক্ত করে চেপে ধরে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো অনুর দিকে। রাগি কন্ঠে অনুকে উদ্দেশ্য করে বলল অয়ন

— তুমি জানো না এই রাসকেলটা এইটা বাজে ছেলে। ওর অনেক মেয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্ক আছে। ও মেয়েদের সাথে প্রেমের অভিনয় করে তাদের জীবনটা নষ্ট করে দেয়। ও কারো ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য নয়।

অয়নের কথা শুনে অনু হতবাক হয়ে যায়। রিহান ও বেশ চমকে উঠে অয়নের কথায়। কৌতুহলী কন্ঠে রিহান জ্বিগাসা করে অয়নকে

— স্যার আমি অনেক মেয়ের সাথে সম্পর্ক রাখি মানে বুঝলাম না। এই সব কি বলছেন আপনি? কিছু খেয়ে এসেছেন নাকি? পাগলের মতো যা মুখে আসছে তাই বলে যাচ্ছেন!

রিহানের কথা গুলো শুনে অয়ন রাগে ফেটে পরে। রিহানের গালে বেশ কষিয়ে সজোরে থাপ্পড় বসিয়ে দেয় অয়ন। রাগে গজগজ করতে করতে অয়ন বলতে লাগলো

— আমি কি বলছি তা বুঝতে পারছিস না তুই? আমি পাগল হয়ে গেছি তাই না! ঈশার সাথে প্রতারণা করিসনি তুই? আমি নিজের চোখে দেখেছি হাসপাতালের সামনে তোদের একে অন্যকে আলিঙ্গন করার দৃশ্য। এরপরেও বলবি তোদের মাঝে কোনো সম্পর্ক নেই?

অয়নের কথা শুনে অনু আর রিহানের মাথায় মনে হচ্ছে আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে। দুজন দুজনের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। অয়নের কোনো ভিক্তি নেই এমন প্রশ্ন শুনে অবাক হওয়াটাই স্বাভাবিক। অনু রিহানের দিকে এগিয়ে এসে অয়নের হাত থেকে এক টানে রিহানকে ছাড়িয়ে নিলো। বিস্ফরিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অয়নের দিকে। অনু অয়নকে উদ্দেশ্য করে কর্কশ গলায় বলল

— এতো দিন ভেবেছি আপনার মতো মহান‌ একজন মানুষ সত্যি এই দুনিয়ায় দুটো নেই। আপনাকে বেশ শ্রদ্ধা ও করতাম। ঈশার সাথে আপনি যা যা করেছেন তারপরও আমি আপনাকে সম্মান এর চোখে দেখে এসেছি। তবে রিহান আর ঈশাকে নিয়ে আপনি যেই ধারনাটা নিজের মধ্যে ধারণ করে আছেন। সেটা শোনার পর আপনাকে যে কি বলবো বা বলা উচিত! সত্যি ভেবে পাচ্ছিনা আমি।

— মানে? যা বলতে চাও পরিস্কার করে বলো অনু।

— কি পরিস্কার করে বলবো আমি? কি শুনতে চান রিহান আর ঈশার মধ্যে কি সম্পর্ক আছে? নাকি শুনতে চান ঐ দিন হাসপাতালে রিহান কাকে জরিয়ে ধরে ছিলো? আমার পরিস্কার কথা আপনার ঐ অপরিস্কার মাথায় ঢুকবে বলে আমার মনে হয় না। ঈশা মতো একটা মেয়েকে যে লোক রাস্তায় নামাতে পারে। তাকে পরিস্কার করে বলার মতো কোনো কথাই আমার জানা নাই।

অয়ন পুরো থ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এই সব কি বলছে অনু? তার মানে কি? ঈশাকে আমি ভূল বুঝে এতো অপমান করেছি? অয়ন নিজে বিচলিত না হয়ে একদ শান্ত গলায় অনু কে উদ্দেশ্য করে বলছে

— ঈশা কি তা আমার জানা আছে। আর রিহান যে কেমন ছেলে তাও জানি। হাসপাতালে সামনে দৃশ্যটা এখন ও আমার চোখের সামনে ভাসছে।

— মানে? ওহহহহ আপনি এখনও সেই নিজের চিন্তায় আটকে আছেন। আরে শুনুন মিস্টার অয়ন চৌধুরী ঈশার মতো মেয়ে কোটিতে একটা খুঁজে পাওয়া যায়। কোন দিক থেকে ওকে ছোট করবেন আপনি? ও সরাসরি কথা বলে। রিহানের সাথে ওর ভাই বোনের সম্পর্কটাকে আপনি……! ছিঃ, বলতেও লজ্জা করে। আর হাসপাতালের সামনে ঈশা নয় আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলো রিহান। কি দেখে যে আমাকে ঈশা ভেবেছেন আমার জানা নাই। ঐ দিন আপনার উচিত ছিলো সামনে থেকে দেখে আসা আসলে মানুষটিকে। কিন্তু আপনি তো….!

* অনুকে কিছু বলতে দিলো না অয়ন। অয়ন অনুকে থামিয়ে বলছে

— অনু প্লিজ থামো একটু। আমাকে ক্ষমা করে দাও তোমরা। আমি সত্যিই ভূল বুঝেছিলাম তোমাদের। রিহান আই এম সরি।‌ ক্ষমা করে দাও আমায়।

রিহান অয়নের হাত জোড়া ধরে আলতো করে বলতে লাগলো

— আরে স্যার। এই সব কি বলছেন? আমি আপনাকে নিয়ে কোনো অভিযোগ করছি না। আমার কোনো অভিযোগ নেই। প্লিজ ক্ষমা চেয়ে আমাকে লজ্জিত করবেন না।

— হুম। আসছি আমি।

অয়ন রিহান ও অনুর থেকে বিদায় নিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যায়। আজ কেনো জানি হাত দুটো বেশ ভারি লাগছে। মনে হচ্ছে ড্রাইভ করার মতো শক্তি আমার হাতে নেই। চোখ দিয়ে এক ফোঁটাও নোনা জল আসছে না আমার। বুকের মধ্যে এক অদ্ভুত শূন্যতা অনুভব করছি আজ। বার বার মনে হচ্ছে কোনো দামী একটা জিনিস আমার জীবন থেকে হারিয়ে গেছে। সত্যি হারিয়ে গেছে আমার দামী, খুব দামী একটা মানুষ হারিয়েছি আমি। কতটা বাজে ভাবে অপমান করেছি আমি ঈশাকে। এতোটা নিচু মানসিকতার পরিচয় আমি দিয়েছি যে। হাজার ক্ষমা চাইলেও ঈশা ক্ষমা করতে পারবে না আমায়।

* কথা গুলো আপনমনে ভাবতে লাগলো অয়ন। অফিসের সামনে এসে অয়ন গাড়িটা কোনো মতে পার্ক করলো। অফিসে ঢুকতে আজ ভিশন অদ্ভুত লাগছে তার। এতোটা খারাপ লাগছে যে নিজেকে নিজের কাছে বেশ ছোট মনে হচ্ছে আজ। ঈশার সামনে কোন মুখে দাড়াবো আমি? কি করে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলবো আমি? না সম্ভব না আমার পক্ষে ঈশার সামনে কোনো কথা বলা সম্ভব না। অয়ন মাথাটা নিচু করে অফিসে ঢুকলো। অফিসে ঢুকতেই অয়ন দেখতে পেলো ঈশা তার ডেক্সে বসে কাজ করছে। অয়ন তার দিকে চোখ তুলে তাকাতে পারলো না। চলে গেলো নিজের কেবিনে। অয়ন কেবিনে এসে নিজের জায়গায় বসলো। ঈশার মুখটা বার বার তার চোখে ভেসে আসছে। অয়ন ল্যাপটপ টা ওপেন করে ঈশার ডিলিট করা ছবি গুলো রিস্টোর করলো। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ঈশার ছবির দিকে। বেশ ইচ্ছে করছে তাকে একটিবারের জন্য ছুঁয়ে দেখতে। দৃষ্টির তৃষ্ণা মিটলেও হৃদয়ের তৃষ্ণা মিটছে না তার। অয়ন ঈশাকে নিয়ে ভাবনার সাগরে ডুব দিলো।

— স্যার, আসতে পারি?

অয়নের ম্যানেজার দরজার সামনে অপেক্ষা করছে অয়নের অনুমতির‌। কিন্তু অয়নের এই দিকে হুস নেই। ম্যানেজার কিছু সময় দরজার ওপারে দাঁড়িয়ে থেকে ভিতরে চলে আসেন উনি। আয়নের সামনে এসে বললেন

— স্যার, বোর্ড মিটিং এরেঞ্জ করা হয়েছে। সবাই আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।

মিস্টার গোমস এর কথা শুনে অয়নের ভাবনার অবকাশ ঘটলো। অয়ন আনমনে মিস্টার গোমসকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো

— হ্যাঁ, অপেক্ষা করছি আমি। আর করবো অপেক্ষা। সারা জীবন অপেক্ষায় থাকবো আমি।

অয়নের কথাটা ঠিক বোধগম্য হচ্ছে না তার। মিস্টার গোমস বেশ বিব্রত হয়ে অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলে

— স্যার আর ইউ ওকে? সবাই তো আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।

মিস্টার গোমস এর কথায় অয়ন একটু অপ্রস্তুত হয়ে বলল

— হ্যাঁ, আমি এখনি যাবো।

মিস্টার গোমস অয়নের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। অয়ন মিস্টার গোমসকে উদ্দেশ্য করে মৃদু হেসে বলল

— মিস্টার গোমস জীবনটা আজ খুব বিরক্ত লাগছে। ইচ্ছে করছে মরে যাই। একটু শান্তিতে থাকতে চাই আমি। এতোটা খারাপ ভাবে হেরেছি নিজের কাছে নিচে যে আর কোনো দিন কারো সামনে চোখ তুলে কথা বলার মতো সাহস‌ আমার হবে না আমার।

* অয়নের কথা শুনে মিস্টার গোমস মৃদু হেসে বলল

— স্যার, আপনার কথার মানে আমি বুঝতে পেরেছি। ক্ষমা করবেন আমায় একটা কথা কি জানেন ভালোবাসা এমন এক অদ্ভুত অনুভূতি যা সকল ভূল, অপরাধ, কষ্ট, বাধাকে উপেক্ষা করে ছুটে আসে প্রিয়জনের কাছে। আপনি যাই করেছেন নিজের মতো করে বিচার‌ করে। এখন একটু তার কথা ভাবুন। যদি তাকে পেতে চান তবে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হবে।

— হুম। প্রস্তুত আমি। তাকে আমার চাই।

কথাটা শেষ করে অয়ন বোর্ড মিটিং এর জন্য বেরিয়ে যায় কেবিন থেকে। হল রুমে ঢুকে অয়ন দেখতে পেলো ঈশা টেবিলের একটা কোনে বসে আছে। মাথা নিচু করে ফাইল গুলো দেখছে সে। অয়ন ঈশার চোখের দিকে তাকিয়ে মনের মধ্যে লুকিয়ে থাকা হাজার অভিযোগ, ঘৃণা আর তার করা আঘাতের কষ্ট দেখতে পাচ্ছে। অয়ন ঈশার দিকে কিছুটা সময় তাকিয়ে থাকার পর ঈশা হঠাৎ করেই লক্ষ্য করলো অয়ন তার দিকে তাকিয়ে আছে। ঈশা অয়নের দিকে তাকাতেই অয়ন চোখ নামিয়ে নেয়। ঈশার চোখের দিকে তাকানোর সাহস তার নেই।

* মিটিং শেষ হতেই সবাই হল রুম থেকে বেরিয়ে যায়। ঈশাও ফাইল গুলো গুছিয়ে নিয়ে বেরিয়ে যেতে লাগলো হল থেকে। অয়ন
কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ করে……………………..

#চলবে…………………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here