ভালোবাসা বারণ পর্ব-১৭

0
2769

#ভালোবাসা_বারণ
#পর্বঃ১৭
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
অয়ন কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ করে ঈশার হাত ধরে ফেলে। অয়ন হাত ধরায় ঈশা বেশ অবাক হয়ে যায়। নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে। অয়ন ঈশার হাত ধরে বলতে লাগলো

— ভূল গুলো আকাশ সমান। অপরাধ গুলো ক্ষমার অযোগ্য। তবুও চাই একটা সুযোগ চাই। ক্ষমা চাই তোমার কাছে। একটি বার ক্ষমা করে দাও আমায়।

ঈশা অয়নের বিপরীত দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। অয়নের কথা কানে পৌঁছাতেই মনে পরে গেলো সেই দিনের অপমানের কথা। না চাইতেও চোখের পাতা ভারী হয়ে যায় তার। ঈশা অয়নের দিকে দৃষ্টিপাত না করে কান্না ভেজা কন্ঠে বলছে

— হাতটা ছাড়ুন প্লিজ। এই সব নাটক আমার পছন্দ না।

— যতক্ষণ পর্যন্ত ক্ষমা না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত হাত ছাড়বো না। বলো ক্ষমা করেছো আমায়?

— আপনি ক্ষমা পাবার অযোগ্য। হাতটা ছেড়ে দিন।

অয়ন ঈশার হাতটা ভিশন যত্নে আলতো করে হেঁচকা টেনে ঈশাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলো। ঈশা অয়নের থেকে নিজের চোখের জল আড়াল করছে। কিন্তু অয়ন সেটা দেখে ফেলে। অয়ন ঈশার চোখের নিচে চলে আসা নোনা জল নিজ হাতে মুছে দিলো। পরম আবেশে অয়ন স্পর্শ করে ঈশার গাল জোড়া। ঈশা কাঁপা কাঁপা গলায় বলছে

— যখন ইচ্ছে অপমান করবেন। আবার যখন ইচ্ছে ভালোবাসা দেখাবেন। আমি একটা খেলনার পুতুল আপনার কাছে। তাই না!

— ঈশা বিশ্বাস করো আমি তোমাকে ভূল বুঝে এমনটা করেছি। একটি বারের জন্যও তোমাকে বিশ্বাস করিনি। আসলে…….

ঈশা অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো অয়নের দিকে। রাগে ফিসফিসিয়ে বলছে ঈশা

— বিশ্বাস, ভূল বোঝা, এই সব এর কোনো প্রয়োজন নেই। আমি এখানে কাজ করি। আর আপনি আমার বস। আর কোনো সম্পর্ক নেই আমাদের মাঝে। ওহহহ ভূল বললাম আদু কখনও কোনো সম্পর্ক ছিলো না।

অয়ন ঈশার কথা শেষ হতেই ঈশাকে নিজের দিকে টেনে নিয়ে আসে। ঈশার কপালের উপর উড়ে আশা চুল গুলো হাত দিয়ে ঠিক করে দিয়ে অয়ন মৃদু কন্ঠে বলছে

— সম্পর্ক ছিলো, আছে, আর থাকবে। যতটাই বাধা আসুক না কেনো।

ঈশা অয়নের চোখের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বলতে লাগলো

— আমি ছেডতে বলেছি। আপনার অনেক টাকা আছে। আপনার চরিত্র নিয়ে কেউ কোনো কথা বলবে না। কিন্তু কেউ যদি দেখে আমি আপনার এতোটা কাছে আছি। তবে আমার চরিত্র নিয়ে আবার প্রশ্ন উঠবে। মানুষ আবারও আমাকে পতিতার সাথে তুলনা করবে। নিজেকে আর নিচে নামাতে চাই না আমি। দয়া করে আমার থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে চেষ্টা করুন। আপনার জন্য আমি আমার চরিত্রে কোনো কালিমা লেপন করতে পারবো না।

অয়ন ঈশার চোখের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো। ঈশার কথা শুনে প্রচন্ড রাগে উঠে যায় অয়নের। অয়ন রাগে গজগজ করতে করতে ঈশাকে উদ্দেশ্য করে ফিসফিসিয়ে বলছে

— কে কি বলল সেটা কথা নয়। আমার সামনে তোমাকে নিয়ে কেউ বাজে মন্তব্য করলে তাকে আমি খুন করে ফেলবো।

— তাই না! খুন করে ফেলবেন তাদের। আচ্ছা কতজন কে খুন করবেন? কত অয়নের মুখ বন্ধ করবেন আপনি? যদি পারেন তো নিজেকে আগে খুন করুন। নিজের চিন্তা ধারাকে গলা টিপে হত্যা করুন মিস্টার অয়ন চৌধুরী। এতে করে আমার আঘাতে লাঘব না হলেও পরবর্তীতে অন্য কেউ অন্তত চরিত্র নিয়ে বাজে কথা থেকে মুক্তি পাবে।

ঈশা অয়নের থেকে‌ নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে এগিয়ে যেতে লাগলো। অয়ন ঈশার চলে যাওয়ার দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে। অপেক্ষা একটি বার ঈশা পিছন ফিরে তাকাক তার দিকে। একটি বার বুকে এসে বলুক ভালোবাসি তো তোমায়। অনেক ভালোবাসি।

— অয়ন স্যার কেবিনে যাবেন না?

মিস্টার গোমস এর কৌতুহল পূর্ণ কন্ঠ স্বর অয়নের ভাবনার অবকাশ ঘটালো। অয়ন নিজের চোখ আলতো করে কচলাতে কচলাতে মিস্টার গোমস কে উদ্দেশ্য করে বলল

— উফফফফ মিস্টার গোমস হল রুমে প্রচন্ড ধূলো উড়ছে। এই সব ধূলো চোখে অসহ্য জ্বলা সৃষ্টি করে। একটু পরিস্কার করে দিবেন কেমন।

কথাটা শেষ করতেই অয়ন চৌধুরী হল রুম থেকে হনহন করে বেরিয়ে যায় নিজের কেবিনের উদ্দেশ্য। অয়নের কথা শুনে একটু অবাক হয় মিস্টার গোমস।

— এয়ার কন্ডিশন করা রুমে ধূলো আসে কি করে?

ভাবছেন মিস্টার গোমস। অয়ন চৌধুরী এই রুমের ধূলি কণার জন্য নয়। তার মনের ভিতর যে ধূলো জমে আছে সেটা বোঝাতে চেয়েছে।

* ঈশা নিজের ডেক্সে বসে আছে। কাজে মন বসছে না তার। “এই লোকটা একটা গোলক ধাঁধা। তাকে সঠিক ভাবে বোঝা বড্ড দায়। আসলে কি চায় উনি? যখন ইচ্ছে হয় একদম নিচে নেমে যায় উনি। আবার যখন ইচ্ছে হয় তখন আবার আকাশ ছোঁয়া। এই লোকটা আমার থেকে আসলে কি চায়? বাঁচতে দিবে না আমায়! কি জন্য? আমার কি একটু শান্তিতে বাঁচার অধিকার নেই? নারী হয়ে কি আমি ভূল করেছি? হ্যাঁ, হয়তো ভূল করেছি আমি। তাই তো অয়ন চৌধুরী আমাকে ভালোবাসে এই চোখের নোনা জল উপহার স্বরূপ দিয়েছেন। দিয়েছেন না ভূলে যাওয়ার মতো কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা। ভালোবাসি বললেই হয় না। এটা একটা সস্তা শব্দে পরিনত হয়েছে। যখন তখন যে কাউকেই বলতে পারা যায় ভালোবাসি। কিন্তু আদুকি সেটাকে ভালোবাসা বলে? ভালোবাসা শব্দটা ব্যবহার করে মানুষ দিনের পর দিন আঘাত করে বুকের বাম পাশে। যে আঘাতটা হাজার বার চেষ্টা করলেও ভূলে যাওয়া মুশকিল। ভালোবাসার মানে ভালো রাখা। হ্যাঁ, ভালো রাখার অপর নাম ভালোবাসা। কাউকে ছোট করে কখনও ভালোবাসা প্রকাশ করা হয় না”। ল্যাপটপের টুক টুক করে টাইপিং এর শব্দ ভেসে আসছে ঈশার কানে। সবাই কাজে ব্যস্ত। আমাকে ব্যস্ত হতে হবে।

অয়ন কেবিনে বসে বসে ঈশাকে তার বলা প্রতিটা কথা নিজের মনে করে ভাবছে। সত্যি এতোটা বাজে মন্তব্য করেছি আমি! নিজের কাছে নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে। এই ছিলো আমার ভালোবাসা? ওহহহ হ্যাঁ ঈশা ঠিক বলেছে। আমার মতো একটা মানুষের বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই। আর না আছে কারো ক্ষমা পাওয়ার যোগ্যতা। ঈশার মায়াবী চোখের দিকে তাকিয়ে অয়ন বলছে

— যে কয়টা দিন বেঁচে থাকবো‌! সেই কয়টি দিন রোজ রোজ না না অযুহাতে আমি তোমার থেকে ক্ষমা চাইবো। জানো প্রিয় আল্লাহ ও সব ভূলের ক্ষমা করে দেয়। তুমি তো তার অসাধারণ সৃষ্টি। তবে তুমি কেনো ক্ষমা করতে পারবে না আমায়?

উক্ত কথা শেষ করতে করতে আ্যলকাহল নামক তীব্র নেশাময় মেডিসিন দিয়ে গলাটা ভিজিয়ে নেয় অয়ন। হ্যাঁ মেডিসিন তো বটেই। খুব সহজেই কারো মাথা থেকে কোনো প্রিয় একজনের চেহারাটা ও অনুভূতি গুলো মুছে দেয়। অয়ন একের পর এক প্যাগ নিঃশেষ করে দিচ্ছে। চোখ জোড়া রক্ত বর্ণ ধারণ করে আছে তার। হঠাৎ করে অয়নের কেবিনে প্রবেশ করে ফারজানা। ফারজানা অয়নকে ড্রিংক করতে দেখে বেশ অবাক হয়ে যায়। ফারজানা অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলছে

— এই অয়ন কি করছিস তুই? পাগল হয়েছিস নাকি?

ফারজানার কর্কশ গলায় অয়নকে বাধ্য করলো তার দিকে দৃষ্টিপাত করতে। অয়ন ফারজানার দিকে মুখ তুলে তাকালো। বেশ রেগে আছে মনে হচ্ছে সে। অয়ন কিছুই বললো না তাকে। অয়ন কে নিরব দেখে ফারজানা অয়নের কাছে এসে বলল

— আমি সত্যিই জানি না তোর কি হয়েছে? কেনো এমন করছিস তুই? জীবনের গল্পটা এভাবে শেষ করে দিস না অয়ন। একটি বার নিজেকে নিয়ে ভেবে দেখ। তুই কখনও তো এমন ছিলিনা। রিদ্রিতা চলে যাবার পরেও কতটা সুন্দর করে নিজেকে সামলে নিয়েছিস। এতোটা সফল হয়েছিস তুই। তবে আজ কোন কারণে মরণ নেশায় আসক্ত হয়ে যাচ্ছিস? বল না অয়ন কিসের জন্য এমন করছিস তুই?

ফারজানার কথার জবাবে অয়ন মৃদু হেসে বলল

— রিদ্রিতা যা যা করেছে আমার সামনে করেছে। আমি ওকে ভূল করে নিজের ভালোবাসা টা উপহার হিসেবে দিয়েছি। আর ও তার ব্যবহার করেছে। তাই ও চলে যাবার পরেও কষ্ট হয়নি আমার। কিন্তু ঈশাকে আমি ভূল বুঝে দিনের পর দিন আঘাত করেছি। এতোটা আঘাত করেছি যে সে আমার মৃত্যু চায়। হ্যাঁ ওর মন সেটাই চায় যা আমি এখন বলছি। নিজের জীবনের সব চেয়ে বড় ভূল করেছি আমি ২য় বার কারো প্রতি তীব্র আসক্ত হয়ে। না পারলাম তার কাছে নিজেকে প্রকাশ করতে আর না পারলাম তার মনে একটু জায়গা করতে। সব ভূল আমার। তাই নিজেকে সাজা দেয়ার বিকল্প নেই।

ফারজানা কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা। সত্যি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো সে। অয়ন চৌধুরী এতোটা দূর্বল হতে পারে! জানা ছিলো না তার।

* অফিস শেষ করে ঈশা নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরলো। আজ রাস্তাটা কেমন জেনো ফাঁকা লাগছে ভিশন। কোনো গাড়িও দেখা যাচ্ছে না। একটু ভয় হচ্ছে তার। নির্জন জায়গায় থাকা নিজের কাছে সেভ মনে হয়না কোনো নারীর কাছে। কারন এই নির্জনতার সুযোগ নিতে সর্বদা প্রস্তুত থাকে মানুষের মতো দেখতে কিছু পশু। এই পশু গুলো নারীকে মানুষ মনে করে না। মনে করে কোনো লোভনীয় খাদ্য। তাই তো অহরহ ঘটছে ধর্ষণের মতো জঘন্য কাজ। নিজের জীবন কে নরক বানিয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে আত্নহত্যার পথ অনুসরণ করে হাজারো নারী।

কথা গুলো ভাবতেই গা শিউরে ওঠে ঈশার। দূরে দেখা যাচ্ছে একটা রিক্সা আসছে। বাকিটা পথ এই রিক্সায় করেই মেতে হবে তাকে। রিক্সাটি ঈশার সামনে আসতেই ঈশা রিক্সাওয়ালা মামাকে বলল

— মামা যাবেন?

রিক্সাওয়ালা প্রথমে একটু থ হয়ে থেকে অতঃপর বলতে লাগলো

— হ জামু। তবে ভাড়া বাড়ায়া দিতে অইবো।

ঈশা কিছু না ভেবেই রিক্সায় উঠে বসে।

— হ্যাঁ, চলুন সমস্যা নেই ভাড়া বেশি দিবো। তারাতাড়ি চলুন।

* রিক্সাওয়ালা মামা বাঁকা হেঁসে ঈশাকে নিয়ে এগিয়ে চলল। ওনার হাসিটা একটু রহস্যজন মনে হলেও কিছু করার উপায় নেই। এই মুহূর্তে যদি এই রিক্সায় করে না যাই তা হলে বাকি পথ হেঁটে হেঁটে যেতে হবে। আপন গতিতে ছুটে চলছে রিক্সাটা। কিছু দূর যেতেই হঠাৎ করে রিক্সাটা থেমে যায়। ঈশা অবাক হয়ে জ্বিগাসা করলো মামাকে

— মামা রিক্সা থামালেন কেনো?

রিক্সা ওয়ালা মামা শান্ত কন্ঠে জবাব দিলেন

— কাম আছে এর লইগাই থামাইছি।

— মানে? কি কাজ?

— সময় মতো বুঝবেন। এহন চুপ কইরা বইয়া থাকেন। আমি আসতাছি।

কথাটা বলেই রিক্সাওয়ালা মামা চলে যায় রাস্তার পাশে থাকা জোপের আড়ালে। ইশারা মনে ভিশন ভয় কাজ করছে। আচ্ছা কোনো বিপদের ইশারা নয়তো এটা? মিনিট দুয়েক যেতেই হঠাৎ করে ঈশা রিক্সার সামনে তাকাতেই চমকে উঠে ঈশা। রিক্সা থেকে সে দেখতে পায় কয়েক পা দূরে………………………

#চলবে………………………

( কেমন লাগলো আজকের পর্ব? অবশ্যই জানাবেন। Nice, Next বাদ দিয়ে গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি। ধন্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here