ভালোবাসি আমি যে তোমায় পর্ব: ৩৪

0
2203

#ভালোবাসি_আমি_যে_তোমায়
#Sohani_Simu
পর্ব:৩৪

ভার্সিটিতে এসে ক্লাস শেষ করে আমি আর ইচ্ছে একটা ফাঁকা রাস্তায় ঘুরছি।কাল থেকে ইচ্ছে আমাকে নির্ভীক ভাইয়াকে নিয়ে জ্বালিয়ে মারছে।আমার অবশ্য ভালই লাগছে। আমার মনে হচ্ছে আমি চোখে রঙিন চশমা পরে আছি,সবকিছু রঙিন লাগছে। এই প্রকৃতি-পরিবেশ সবকিছু অন্যরকম ভাবে ফিল করছি।ইচ্ছের সাথে সবকিছু শেয়ার করে নিজেকে খুব হালকা মনে হচ্ছে।আমি ইচ্ছের একহাত জড়িয়ে ধরে সামনে তাকিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বললাম,

আমি:আই লাভ হিম।(মুচকি হেসে)
ইচ্ছে:কচু।(বিরক্ত হয়ে)

আমি:শোন না।(ইচ্ছের একবাহু জড়িয়ে ধরে হাঁটতে হাঁটতে)
ইচ্ছে:বল।(সামনে তাকিয়ে)
আমি:উনি আমাকে ভালোবাসবেন তো?(ঠোঁট উল্টিয়ে)

ইচ্ছে:উফ্ আর কত বার বলবো?(বিরক্ত হয়ে)
আমি:বল না,আমার শুনতে ভাল লাগছে।(মুচকি হেসে)
ইচ্ছে: আর কত কি যে দেখতে হবে!(হাসতে হাসতে)

আমি:কি দেখলি?(ভ্রু কুচকে)
ইচ্ছে:তুই যে কাউকে ভালোবাসবি এটা আমার ধারণার বাহিরে ছিল। আচ্ছা আরাফ ভাইয়া এসব জানতে পারলে কি হবে বলতো?(আমার দিকে তাকিয়ে)

আমি:মনে হয় আমাকে মেরে দিবে।(মন খারাপ করে)
ইচ্ছে:একটু প্রবলেম ক্রিয়েট করবে কিন্তু মারবেনা,ডোন্ট ওরি।চল কিছু খাই।

আমি:ওকে,চল।

ক্যান্টিনের দিকে যাচ্ছিলাম তখনই আমার ফোন বেজে উঠলো,

আমি:এই ইচ্ছে,এখন কি হবে? নির্ভীক ভাইয়া ফোন দিয়েছে তো।(ফোনের দিকে তাকিয়ে)

ইচ্ছে:আজব!কি হবে মানে?কথা বল।(ভ্রু কুচকে)
আমি:লজ্জা করছে।(মুচকি হেসে)
ইচ্ছে:হুহ্ ঢং,সারাদিন রাত নির্ভীক ভাইয়ার স্বপ্নে বিভোর থাকতে পারিস আর এখন কথা বলতে লজ্জা করছে?

আমি:তুই কথা বল প্লিজ,প্লিজ,প্লিজ।(রিকুয়েস্ট করে)
ইচ্ছে:ওকে দে।(বিরক্ত হয়ে)

ফোন বেজে বেজে কেটেই গেল। কিন্তু কিছক্ষণ পর আবার বেজে উঠলো। আমি ইচ্ছের দিকে ফোন এগিয়ে দিলাম ও রিসিভ করে স্পিকার অন করলো।

নির্ভীক:অন্ত?কোথায় তুৃমি?
ইচ্ছে:ভাইয়া আমি ইচ্ছে।(আমার দিকে তাকিয়ে)
নির্ভীক:অহ তুমি?অন্ত কোথায়?
ইচ্ছে:অন্ত?অন্ত এখানে নেই?(থতমত করে)
নির্ভীক:হোয়াট?নেই মানে?কোথায় গিয়েছে ও?

ইচ্ছে:আছে,আছে তো।ওই তো সামনে।
নির্ভীক:কোথায় আছো তোমরা?
ইচ্ছে:ক্যান্টিনের দিকে যাচ্ছি।(আমার দিকে তাকিয়ে)
নির্ভীক:ওয়েট আসছি।

বলেই কল কেটে দিলেন।আমি ইচ্ছের হাত ধরে অসহায়ের মতো হাবভাব করে বললাম,
আমি:এখন কি হবে?উনার সামনে যেতে তো আরও লজ্জা লাগবে।চল বাসায় যাবো,চল,চল।

ইচ্ছে:ছাড়, এমন ভাব করছিস যেন তুই একাই প্রেমে পরেছিস আর কেউ কোনদিন প্রেমে পরেনি,ভালোবাসেনি।

আমি:আরে তুই বুঝতে পারছিস না…
ইচ্ছে:হুম,এত লজ্জা পাওয়ার কি আছে সেটায় তো বুঝতে পারছিনা।ভালোবাসলে সবাই কথা বলতে চায় দেখা করতে চায় আর তুই মদনের মতো সব উল্টো করছিস,এই তুই সত্যি ভালোবাসিস নাকি আবেগে পড়ে? (আমাকে পুরোটা বলতে না দিয়ে)

আমি:জানিনা,শুধু জানি…..। নাহ্ কিছু জানিনা।(মন খারাপ করে)
ইচ্ছে:অদ্ভূত! তুই নির্ভীক ভাইয়াকে ভালোবাসিস কি না?(আমার দিকে তাকিয়ে)

আমি শুধু হ্যা সূচক মাথা নাড়লাম।
ইচ্ছে:তাহলে কথা বলতে চাইছিস না কেন?আর দেখাও করতে চাইছিস না।কাল রাতে নির্ভীক ভাইয়া তোকে ফোন দিল তুই আমাকে দিয়ে মিথ্যা বলে নিলি যে তুই ঘুমিয়ে পরেছিস,সকালে আর্লি ক্লাস আছে বলে জারিফ ভাইয়ার সাথে এলি।তুই কি অন্যদের মতো ভালোবাসার মানুষকে কাছে চাসনা?

আমি:আমি মানে আমি চাই কিন্তু…(মাথা নিচু করে)
ইচ্ছে:কিন্তু?

আমি কিছু বলবো তখনই পেছন থেকে কেউ আমাকে ডাকলো।আমি পেছনে তাকানোর আগেই ইচ্ছে ভ্রু কুচকে বলল,

ইচ্ছে:ভাইয়া,তুমি এখানে?

আমি পেছনে তাকিয়ে দেখি আরাফ ভাইয়া আমার পেছনে ঘাড় বাম দিকে সামান্য কাত করে এক ধ্যানে আমার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আরাফ ভাইয়ার সাথে দুটো ছেলেও আছে।আমি যেয়ে ইচ্ছের সাথে দাঁড়ালাম। আরাফ ভাইয়া আমার কাছে এসে দাঁড়ালো।
ইচ্ছে:তুমি এখানে কেন এসেছো?(ভ্রু কুচকে)

আরাফ:ওর সাথে কথা বলতে।(আমার দিকে তাকিয়ে)
ইচ্ছে:আমরা এখন বাসায় যাবো,অন্ত চল।(আমার হাত ধরে)

ইচ্ছে আমার হাত ধরে হাঁটা দিতেই আরাফ ভাইয়া আমার অন্য হাত ধরে আটকে দিল।
আমি:ভাইয়া হাত ছাড়ো(রেগে)
ইচ্ছে:কি করছো?আমি কিন্তু এখনই জারিফ ভাইয়াকে বলে দিব।(রেগে)

আরাফ:হুম বল।(ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে)

বলেই ইচ্ছের থেকে আমার হাত ছাড়িয়ে আমাকে টেনে নিয়ে গিয়ে একটা গাছের সাথে দাঁড় করিয়ে দিল।আমি আশেপাশে তাকিয়ে দেখি কেউ নেই।আমার রাগও লাগছে ভয়ও করছে।আমার সাথে আবার খারাপ কিছু করবে নাতো?এই ছেলের মাথায় কখন কি চলে কেউ জানে না।(মনে মনে)

আরাফ:তোমার কি আমাকে একটুও ভাল লাগে না?কি সমস্যা আমার বলো?কেন ভাল লাগেনা আমাকে?(আমার দিকে তাকিয়ে)

আমি:তুমি কেন এইরকম কর,আমার এজন্যই তোমাকে ভাল লাগেনা।(মাথা নিচু করে)

আরাফ:কি করি আমি?আমি শুধু তোমার কাছে একটু ভালোবাসা চাই।তুৃমি আমাকে একটু ভালোবেসে দেখ আমি আর কিছু করবো না।তুমি যেমনটা বলবে আমি তেমনটাই করবো।(আমার হাত ধরে)

আমি:না।

আরাফ:কি না?তুমি জানো আমি তোমাকে কত ভালোবাসি?আমার কত কষ্ট হয় জানো?(আমার ডান গালে হাত রেখে)

আমি:আমি তোমাকে ভালোবাসিনা, কতবার বলবো?(রেগে গাল থেকে হাত সরিয়ে দিয়ে)

আরাফ:কেন ভালোবাসোনা?তুমি জানো আমার জন্য কত মেয়ে পাগল কিন্তু আমি তাদের দিকে তাকিয়েও দেখিনা কারন আমি শুধু তোমাকে ভালোবাসি।আমি শুধু তোমার বুঝেছো তুমি?আর তুমি শুধু আমার।(আবার আমার গালে হাত দিয়ে)

আমি:আমি তোমাকে কোনদিনও ভালোবাসবোনা আর তুমিও এসব বন্ধ কর,অনেক হয়েছে।(রেগে গাল থেকে হাত সরিয়ে)

আরাফ:আচ্ছা ঠিক আছে,তোমার আমাকে ভালোবাসতে হবেনা। আমি একা তোমাকে সারাজীবন ভালোবাসবো কিন্তু তুমি আমার সাথেই থাকবে,সবসময় আমার সাথে থাকবে।অন্যকাউকে যদি ভালোবাসো আমার থেকে খারাপ কিন্তু কেউ হবেনা।(রেগে দুই হাত দিয়ে আমার গাল ধরে)

আমি:উফ্ ছাড়ো,একদম আমাকে টাচ করবেনা।যাও এখান থেকে, আর কখনও আসবেনা।(রেগে)

আমার কথা শুনে আরাফ ভাইয়া শার্টের দুটো বোতাম খুলে বুকের বাপাশটা উন্মুৃক্ত করে আমাকে বলল,

আরাফ:দেখ তোমার নামে ট্যাটু করে নিয়েছি,সুন্দর হয়েছে না?অনেক আগে করেছিলাম কিন্তু তোমাকে দেখানো হয়নি।তোমার ভাল লেগেছে?(হাসিখুশি মুখ করে আমার দিকে তাকিয়ে)

আমি রেগে অন্যদিকে তাকালাম।আরাফ ভাইয়া আমার মুখ নিজের দিকে ঘুরিয়ে ফিসফিস করে বলল,
আরাফ:আই লাভ ইউ,জানপাখি।

আমি:তুমি কেন বুঝতে চাইছো না বলো তো?আমি ভালোবাসিনা তোমাকে আর কোনদিন বাসবোও না।(বিরক্ত হয়ে)

আরাফ:তুই কেন বুঝিস না?কেন?আমাকে ভালোবাসতে কি সমস্যা?নাহ্ অনেক বুঝিয়েছি তোকে আর নয়…..

আরাফ ভাইয়া রেগে এসব বলতে বলতে আমাকে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো কিন্তু ইচ্ছে গিয়ে সামনে দাঁড়ালো।

ইচ্ছে:তুমি ওকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছো?(ভ্রু কুচকে)

আরাফ:ও এখন থেকে আমার কাছে থাকবে তুই বাসায় যা।(রেগে)

ইচ্ছে:আমি জারিফ ভাইয়াকে বলে দিয়েছি তুমি এখানে এসেছো।তুমি এখন যাও নাহলে ভাইয়া এসে তোমাকে…

আরাফ:এই তোরা ওকে বাসায় রেখে আয়।(ইচ্ছেকে পুরোটা বলতে না দিয়ে ছেলে দুটোর দিকে তাকিয়ে)

ছেলে দুটো ইচ্ছের সামনে দাঁড়ালো।আমি ঝটকা মেরে আরাফ ভাইয়ার থেকে হাত ছাড়িয়ে নিতে চাইলাম কিন্তু পারলাম না।আরাফ ভাইয়া আমার দিকে রাগী চোখে তাকালো।আমি বুঝতে পারছি খারাপ কিছু হতে চলেছে।ভয় আর টেনশনে গলা শুকিয়ে গেছে।জোড়ে জোড়ে কাঁদতে কাঁদতে বললাম,
আমি:ছেড়ে দাও,আমি বাসায় যাবো।

আরাফ ভাইয়া কিছু না বলে আমাকে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো।আমি এবার হাত ছাড়ানোর জন্য আরাফ ভাইয়ার হাতে জোড়ে কামড় বসিয়ে দিলাম,এত জোড়ে দিয়েছি যে আমার দাঁতেই ব্যাথা পেয়েছি কিন্তু শয়তানটা একটুও ইশ আশ করেনি আর হাতও ছাড়েনি।আমি একটা ঢোক গিলে চিৎকার দিতে যাবো তখনই আরাফ ভাইয়া এক হাত দিয়ে আমার গলা চেপে ধরে রাস্তার পাশে দেয়ালে ঠেসে দাঁড়করিয়ে দিল।আমি দুই হাত দিয়ে আরাফ ভাইয়ার হাত সরানোর চেষ্টা করছি,দম বন্ধ হয়ে আসছে।আরাফ ভাইয়া একহাত দিয়ে কপালে পড়ে থাকা চুল গুলো মাথার উপর ঠেলে তুলে দিয়ে রেগে বলল,

আরাফ:তুই বার বার আমাকে খারাপ হতে বাধ্য করিস।

বলেই আমার মুখের উপর স্প্রে করে দিল।কয়েকসেকেন্ডের মধ্যেই আমি সেন্স হারিয়ে ফেললাম।

ধীরে ধীরে চোখ খুলে আশেপাশে তাকিয়ে দেখি আমি আমার রুমেই শুয়ে আছি।তখনকার কথা মনে পরতেই লাফ দিয়ে উঠে বসলাম।মাথাটা ভার হয়ে আছে।দুই হাত দিয়ে মাথা ধরে বসে আছি।ইচ্ছের কথা শুনে চোখ তুলে তাকালাম।
ইচ্ছে:উঠেছিস?(দরজায় দাঁড়িয়ে)

আমি:আমি এখানে কি করে আসলাম?(মাথা ধরে)
ইচ্ছে:নির্ভীক ভাইয়া এনেছে।(বেডে এসে বসে)

আমি:কিভাবে?(ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে)
ইচ্ছে:কোলে নিয়ে।(মুচকি হেসে)

আমি:আই মিন আরাফ ভাইয়ার কাছ থেকে কিভাবে আনলো?(রাগী চোখে তাকিয়ে)

ইচ্ছে:বললাম তো কোলে করে এনেছে।আমি তখন জারিফ ভাইয়াকে ফোন না দিয়ে নির্ভীক ভাইয়াকে ফোন দিয়েছিলাম আর তাছাড়াও উনি তো আগেই ফোন করে আসতে চেয়েছিলেন।উনি আসলেন তোকে কোলে নিলেন আর বাসায় রেখে গেলেন,আমিও তোর সাথেই এসেছি।

আমি:কিন্তু আরাফ ভাইয়া কোথায়?কি হয়েছিল তখন?(চিন্তিত হয়ে)
ইচ্ছে:হসপিটালে।(মন খারাপ করে)
আমি:হসপিটালে?(ভ্রু কুচকে)

ইচ্ছে:হুম,নির্ভীক ভাইয়া ওর হাত ভেঙ্গে দিয়েছে।তোকে বার বার ক্লোরোফর্ম দেওয়ার জন্য।ঠিক হয়েছে,হাত না ভেঙ্গে ওর মাথাটায় ভেঙ্গে দেওয়া লাগতো।(রেগে)

আমি:উনি হাত ভেঙ্গে দিলেন?আরাফ ভাইয়া কিছু করেনি?(অবাক হয়ে)

ইচ্ছে:ভাইয়া যা মাথা মোটা,ও তো বুঝতেই পারেনি যে নির্ভীক ভাইয়া ওর হাতে মারবেন।ভাইয়া তোর গলা চেপে ধরেছিল,পরে স্প্রে করলো তখনি তো নির্ভীক ভাইয়া এসে তোকে ধরলেন।আমাকে ডেকে তোকে ধরতে বললেন আমিও দৌঁড়ে যেয়ে তোকে ধরলাম।(আমার দিকে তাকিয়ে)

আমি:আর ওই ছেলে দুটো তোকে আসতে দিল?আটকে রেখেছিল তো তোকে।(অবাক হয়ে)

ইচ্ছে:হুম ওরা কিছু বলেনি।
আমি:তারপর কি হলো?(ভ্রু কুচকে)

ইচ্ছে:আমি যেয়ে তোকে ধরলাম আর নির্ভীক ভাইয়া ঝড়ের গতিতে আরাফ ভাইয়ার হাত দেয়ালে রেখে মেরে দিলেন পরপর দুইটা পান্চ,হাড় মনে হয় ফেটে গেছে।আরেকটা মারার আগেই ছেলে দুটো আটকে দিল।আরাফ ভাইয়া হাত ধরে অবাক হয়ে বলল,”তুই আমাকে মারলি?আমি তোর বড় ভাই।”নির্ভীক ভাইয়া রেগে বললেন,”বড় ভাই মাই ফুট,ও তোমার ছোট বোন হয় কিন্তু তুমি কি করেছো?..লাস্ট ওয়ার্নিং দিচ্ছি তোমাকে,এরপর যদি এরকম কিছু হয় আমি তোমাকে খুন করে ফেলবো।”

আমি:আরাফ ভাইয়া কি বলল তখন?
ইচ্ছে:ভাইয়া রেগে চলে গেল।জারিফ ভাইয়া এসব শুনে আরাফ ভাইয়াকে ফোন দিয়েছিল।ভাইয়া বলল হসপিটালে আছে। নির্ভীক ভাইয়াকে মারার হুমকি দিয়েছে।

আমি:নির্ভীক ভাইয়া কোথায়?(ভয় পেয়ে)
ইচ্ছে:আছে কোথাও, এত ভয় পাচ্ছিস কেন?কিছু হবেনা।ফ্রেশ হয়ে খাবি চল,বিকেল হয়ে গেছে।(ড্রেসিং টেবিলের সামনে যেয়ে)

আমি কিছু বললাম না।মনে মনে খুব ভয় পাচ্ছি।উনার কি দরকার ছিল আরাফ ভাইয়াকে মারার। আরাফ ভাইয়া তো খুব ভয়ঙ্কর,নির্ভীক ভাইয়ার কোন ক্ষতি করবে নাতো?(মনে মনে)

ডাইনিং টেবিলে বসে আছি,আম্মু তুলে খাওয়াচ্ছে।আমি খাবার মুখে নিয়ে বসে আছি আর চিন্তা করছি।
আম্মু:খাচ্ছিস না কেন?(আমার দিকে তাকিয়ে)

আমি:আর খাবোনা।
আম্মু:কিছুই তো খেলি না।আর একটু খা,হা কর।(মুখের কাছে খাবার ধরে)

আমি নাক ছিটকে একটু পানি খেয়ে উঠে আসলাম।সিঁড়ির কাছে আসতেই নির্ভীক ভাইয়ার কন্ঠ পেয়ে পেছনে তাকালাম।উনি আর প্রান্ত ভাইয়া ভেতরে ঢুকে আম্মুর সাথে কথা বলছেন।আমার কথা জিজ্ঞেস করেই উনি সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে আমাকে দেখতে পেলেন।আমাকে দেখেই উনি মুচকি হেসে আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলেন।

আমিও যে হাসছি সেই খেয়াল আমার নেই।আমি এখন উনাকে দেখতে ব্যস্ত।হোয়াইট টিশার্ট,আর্মি গ্রীন প্যান্টে উনাকে দারুণ লাগছে।চুল গুলোও পরিপাটি হয়ে কপালে পরে আছে।একহাতে ল্যাপটপ অন্যহাতে মাউস আর চার্জার নিয়ে আছেন।এতটুকু দেখতেই উনি আমার কাছে চলে আসলেন।আমি মাথা নিচু করে হাতের নখ খোঁটলাতে থাকলাম।

নির্ভীক:হাই পিচ্চি!কখন উঠেছো?খেয়েছো?

আমি একবার উনার দিকে তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে নিয়ে মাথা উপর নিচ করলাম।

নির্ভীক:ওকে গুড,চলো ভাইয়ার কাছে যাবো।
আমি:ভাইয়া তো বাসায় নেই।(আটকা আটকা কন্ঠে)
নির্ভীক:নেই?কিন্তু ভাইয়াই তো আসতে বলল।(অবাক হয়ে)

আমি:অহ,আমি সঠিক জানিনা।ভাইয়াকে তো দেখিনি,রুমে থাকতে পারে।(নিচের দিকে তাকিয়ে অনেক নার্ভাস হয়ে)

নির্ভীক:অন্ত?আর ইউ ওকে?

বলেই উনি ডানহাতে থাকা মাউস আর চার্জার গলায় ঝুলিয়ে নিয়ে আমার গালে হাত দিয়ে বললেন,
নির্ভীক:হোয়াট হেপেন্ড?(চিন্তিত হয়ে)

উনি আমার গালে হাত রাখতেই এক অদ্ভূত ভাল লাগায় আমার হাত-পা মৃদু কাঁপতে লাগলো।আমি কোনরকম উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,”নাথিং। ”
বলেই এক দৌঁড়ে রুমে চলে আসলাম।রুমে এসে বেলকুনিতে ঢুকে দরজা আটকিয়ে ফ্লোরে বসে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম।

উফ্ আর একটু দেরি হলেই কিছু একটা হয়ে যেত।না,না আর উনার সামনে যাওয়া যাবেনা।উনার কাছে গেলে এত নার্ভাস ফিল করছি মনে হচ্ছে ঠাস করে পরে মরে যাবো।না কিছুতেই লাইফ রিস্ক নেওয়া যাবেনা।(মনে মনে)
ফ্লোরে বসে এসবই ভাবছিলাম তখনই ইচ্ছে দরজা ধাক্কানো শুরু করলো।আমি চট করে উঠে দরজা খুলে
ফট করে ইচ্ছের হাত টেনে ওকে বেলকুনিতে নিয়ে আবার দরজা বন্ধ করে দিলাম।তারপর ইচ্ছেকে নিয়ে ফ্লোরে বসে কি কি হয়েছিল সব বলা শুরু করে দিলাম।

চলবে…………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here