ভালোবাসি আমি যে তোমায় পর্ব: ৩৫

0
2015

#ভালোবাসি_আমি_যে_তোমায়
#Sohani_Simu
পর্ব:৩৫

শপিং এ এসেছি,আজকে শপিং করলে আপুর বিয়ের শপিং কমপ্লিট হয়ে যাবে।কাল গায়ে হলুদ তাই টুকি টাকি কিছু জিনিস ছাড়া পড়েছে সেগুলো নিতেই এসেছি। আমার সাথে আপু, ইচ্ছে,মিশু,তন্নি,মিরা,সোমা
,রুহি,মিতু, সারা,লিয়া,লিমন,রিসাব,নাছিম,তাজ,জিসান,
আরব,ওয়ারিশ এসেছে।

তন্নি,মিশু আর সোমা আপু আফ্রা আপুর ফ্রেন্ড।রুহি,মিতু,মিরা,সারা,লিয়া আপু আর লিমন,রিসাব,নাছিম,তাজ,জিসান,আরব,ওয়ারিশ ভাইয়া আমার কাজিন।বিয়ে উপলক্ষে আত্মীয়-স্বজন সবাই আমাদের বাড়িতে এসেছে।অনেকদিন পর সবার সাথে দেখা হয়ে খুব ভাল লাগছে।
শপিং শেষে সবাই একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসলাম।সবাই আড্ডা দিচ্ছিলাম এমন সময় আরাফ ভাইয়া এসে চেয়ার টেনে বসলো।সবাই খুব খুশি হলেও আমার একটুও ভাল লাগলো না তাই আমি আমার ফোন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলাম।লিমন ভাইয়ার কথা শুনে ফোন থেকে চোখ তুলে তাকালাম।

লিমন:আরাফ,কখন এসেছিস?তুই তো বললি আসবিনা রাজশাহীতে আর তোর হাতে কি হয়েছে?
আরাফ:তেমন কিছুনা,ওই একটু লেগেছে।

আমি আড় চোখে তাকিয়ে দেখি আরাফ ভাইয়ার বাম হাতে ইলাস্টিক ব্যান্ডেজ বাধা আছে।হাড়ে আঘাত পেলে বা মচকে গেলে এধরনের ব্যান্ডেজ ব্যবহার করা হয়।নির্ভীক ভাইয়া তাহলে ওখানেই মেরেছিলেন সেজন্যই এমন ব্যান্ডেজ লাগাতে হয়েছে।

লিয়া:আরাফ?একি অবস্থা তোর?চেহারার তো বারোটা বাজিয়ে দিয়েছিস ভাই।

মিতু:হুম লিয়া আপু ঠিক বলেছে।আরাফ ভাইয়া,তোমার কাছে আর একদিন সময় আছে এর মধ্যে তুমি চেহারা ঠিক করে নাও নাহলে কিন্তু অন্য ভাইদের কাছে ফেইল মারবে।(হেসে হেসে)

নাছিম:ফেইল আর ও?ব্যাটা এই দেবদাস লুকেই সব মেয়েকে পাগল করে দিবে।(হেসে হেসে)

রিসাব:পাগল না পাগলি।আমি বলি কি ভাই,আমাদের জন্যও কিছু রাখিস।(হেসে)

আমি আড় চোখে আরেকবার আরাফ ভাইয়ার দিকে তাকালাম।টেবিলের উপর ডান হাত রেখে মুখ মলিন করে শূন্যে দৃষ্টি রেখে টেবিলের দিকে তাকিয়ে আছে।মাথার চুল গুলো এলোমেলো হয়ে আছে,মুখে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি,চোখের নিচে কেমন বসে গেছে,সিগারেট খেয়ে ঠোঁট কালচে করে ফেলছে।তাও দেখতে ভালই লাগছে,সত্যি আরাফ ভাইয়া অনেক হান্ডসাম দেখতে তাই যেকোন অবস্থাতেই সুন্দর লাগে।হঠাৎ আরাফ ভাইয়া আমার দিকে তাকালো,আমি তার দিকে তাকিয়ে আছি দেখে মুচকি হাসলো।আমি সঙ্গে সঙ্গে অন্যদিকে তাকালাম।

আরাফ:সব তো তোদেরই আমি একজনেই তৃপ্ত।(আমার দিকে তাকিয়ে)

নাছিম:তুই এখনও অন্তকে…ওকে(পুরোটা বলল না)। ওকে ভাই ও বোনেরা,লুক এ্যাট মি।(সবার দিকে তাকিয়ে)

রুহি:তাকিয়েছি তোমার দিকে,বলো এবার কি বলবে?(হেসে)
নাছিম:কিছুনা ব্যস এমনি।(ইনোসেন্ট ফেস করে)

সারা:কাল দিন বাদে আমাদের বোনের বিয়ে আর ভাইদের দেখলে মনে হচ্ছে তারা এব্যাপারে কিছু জানেই না।(ভাইদের দিকে তাকিয়ে)

রিসাব:আর কি করতে হবে মেরি আপা?সব কাজই তো করে দিলাম।(সারা আপুর দিকে তাকিয়ে)

সারা:আজকে রাতে মিটিং হবে সবাই এটেন্ড থাকবি।(সবার দিকে তাকিয়ে)

তন্নি:কিন্তু আপু,মিটিং এর বিষয় কি?

মিরা:মিটিং এর বিষয় হলো,আফ্রার বরের গেট আটকে কত টাকা খোলা হবে,কি ভাবে বরের জুতো চুরি করা হবে আর কিভাবে বরের ভাই জনতাদের হেনস্তা করা হবে।

জিসান:আমরা ঠিক করেছি জুতো চুরি করে অনেক বড় অ্যামাউন্ট নিবো তারপর সেটা দিয়ে রাজশাহী চষে বেরিয়ে ঢাকায় ফিরে যাবো।
তাজ:আরে ভাই ওসব জুতো চুরি করা আমাদের কাজ না।আমরা মেয়ে পটানোর দায়িত্বে থাকবো।আর জুতো চুরি করবে আপু মুনিরা।(হেসে)

মিশু:আমরা একা?
মিতু:হুম আমরা একাই যথেষ্ট।লিয়া আপুর বরের জুতো চুরি করেছিলাম মনে নেই তোমাদের,দেখবে এবার আফ্রা আপুর বরের জুতো ও ঠিক চুরি করবো
(আত্মবিশ্বাসেরর সাথে)

ইচ্ছে:বরের ভাই কিন্তু সাংঘাতিক জিনিয়াস,জুতো চুরি করা অত সহজ হবে না।আমাদের সব প্লান দুই মিনিটে ফ্লপ করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন উনি তাই বুঝে শুনে প্ল্যান করতে হবে।

লিমন:ওই লম্বা করে ছেলেটা, চাঁদ না কি নাম ওইটা বরের ভাই না?(ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে)

আরব:আমি জারিফ ভাইয়ার সাথে দূর থেকে উনাকে দেখেছি।
জিসান:আমিও।
ইচ্ছে:হুম,নির্ভীক নাম উনার।বাসায় সবাই চাঁদ বলে ডাকে।মাথা ভরা বুদ্ধি,স্ট্রং প্ল্যান না করলে আমরা ফেইল।

আমি:আর ওদের দলে বখাটে টাইপের ছেলেও থাকতে পারে যেমন- শৈবাল,তাইনা ইচ্ছে?(ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে)
ইচ্ছে:হুম,এটা আমার মনেই ছিল না।আর টোয়া নামের শাঁকচুন্নিও থাকবে।ভাইয়েরা আমার তোমরা টোয়ার থেকে সাবধানে থেকো।

নাছিম:আরে বাহ্ তোরা তো অনেক কিছু জানিস।

আফ্রা:জানবে না আবার?এটা তো সারাদিন নির্ভীক ভাইয়ার সাথে ঘুরে বেড়ায়।একে তোমরা কেউ বিশ্বাস করে কিছু বলবেনা সব কিন্তু নির্ভীক ভাইয়াকে বলে দিবে।(আমার দিকে তাকিয়ে)

আমি:আমি সব বলে দিব?তুমি এমনটা বলতে পারলে?(মন খারাপ করে)

নাছিম:আরে আমাদের অন্ত মুনি এসব কিছু করবেনা।

তন্নি:আমার তো তোকে সন্দেহ হচ্ছে,আই থিংক তুই রাযীন ভাইয়াকে সব বলে দিবি।(আপুর দিকে তাকিয়ে)

সারা:তন্নি ঠিক বলেছে।

আরাফ:ওকে গাইস তোরা মজা কর, আমি আসছি।(উঠে দাঁড়িয়ে)

নাছিম:কোথায় যাচ্ছিস?(ভ্রু কুচকে)
আরাফ:বাসায়।

সারা:একা যাবি কেন?আমরাও যাবো।এই রিসাব,লিমন যা বিলটা দিয়ে আয়।
আরাফ:আমি তোদের সাথে যেতে পারবোনা।

আফ্রা:কেন যেতে পারবেনা?জারিফ ভাইয়া তোমাকে ইনভাইট করেছে তো আর আমি নিজে তোমাকে ইনভাইট করেছি।তুমি আমাদের সাথেই যাবে।

নাছিম:হুম চল।

সবার জোড়াজুড়িতে আরাফ ভাইয়া আমাদের সাথে আমাদের বাসায় যেতে রাজী হয়ে গেল কিন্তু গাড়িতে এসে সমস্যা হয়ে গেল।আসার সময় এমনি চাপাচাপি করে এসেছিলাম,আমাকে সারা আপুর কোলে চড়ে আসতে হয়েছে আরব আর তাজ ভাইয়াও নাছিম আর লিমন ভাইয়ার কোলে চড়ে এসেছে।এখন আবার আরাফ ভাইয়াকে দিয়ে আরও একজন বেশি হয়ে গেছে।গাড়িতে ১৪টা সিট আছে কিন্তু মানুষ হয়ে গেছে ১৯জন তার মধ্যে লিমন ভাইয়া যা মোটা একাই দুইসিট নিচ্ছে।

সবাই গাড়িতে চাপাচাপি করে উঠে বসলো। আমি,মিতু আপু,তন্নি আপু,আরব ভাইয়া আর তাজ ভাইয়া বাহিরে দাঁড়িয়ে আছি।আমরা সবাই হালকা তাই আমাদের কোলে চড়ে যেতে হবে।রিসাব ভাইয়া ড্রাইভিং সিটে বসেছে পাশে আরাফ ভাইয়া।

আরব:এই নাছিম ভাই,আমরা না হয় রিক্সা নিয়ে যাই।

নাছিম:না,একসাথেই যাবো।তোরা কোলে বস।আয় আমার কাছে কে আসবি?

মিতু:আমি।(হেসে)
নাছিম:হা হা হা,আরব তুই আয়।(হেসে)

তন্নি:এই আমাকে কে কোলে নিবা?(গাড়ির ভেতরে তাকিয়ে)

রুহি:আপু তুমি আমার কাছে আসো।(চিল্লিয়ে)
রিসাব:উফ্ আস্তে,তোদের মেয়েদের কন্ঠ একদম মাইকের মতো।(কানে হাত দিয়ে)

তন্নি আপু গিয়ে রুহি আপুর কোলে আর মিতু আপু লিয়া আপুর কোলে বসলো।
আরব:আরে ওইটা বরের ভাই না?(সামনের দিকে তাকিয়ে)

আমি চমকে সেদিকে তাকালাম।নির্ভীক ভাইয়া রাস্তার বিপরীত পাশে বাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে কয়েকটা ছেলের সাথে হেসে হেসে কথা বলছেন,প্রান্ত ভাইয়াও আছেন।আরব ভাইয়া জোড়ে নির্ভীক ভাই বলে ডাকলো।নির্ভীক ভাইয়া এদিকে তাকালেন কিন্তু আরব আর তাজ ভাইয়াকে চিনতে না পেরে আবার আড্ডায় মন দিলেন।আমি যে পেছনে দাঁড়িয়ে আছি উনি সেটা খেয়াল করেননি বুঝায় যাচ্ছে।

রিসাব:কই আসলোনা তো।

নাছিম:খেয়াল করেনি কিংবা চিনতে পারেনি।আরব ওকে আবার ডাক,তোকে আর তাজ কে ওদের সাথে পাঠাবো।

ইচ্ছে:এই আরব ভাইয়া তুমি একটা কাজ করো না, অন্তকে সামনে রেখে নির্ভীক ভাইয়াকে ডাকো দেখো অন্তকে দেখলে উনি এক দৌঁড়ে চলে আসবেন।(গাড়ির ভেতর থেকে)

আরাফ:অন্ত?গাড়িতে উঠো।(জানালা দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে)সারা ওকে কোলে নিয়ে বস।(পেছনে ঘাড় ঘুরিয়ে)

আরাফ ভাইয়ার কথা শেষ হওয়ার আগেই আরব ভাইয়া আমাকে সামনে এনে আমার সাথে দাঁড়িয়ে আমার কাঁধে হাত দিয়ে জোড়ে নির্ভীক ভাইয়াকে ডাকলো।উনি আবার এইদিকে তাকালেন।আমাকে দেখার সাথে সাথে উনি সোজা হয়ে দাঁড়ালেন।তারপর দ্রুত পায়ে রাস্তা পার হয়ে এদিকে আসতে লাগলেন।প্রান্ত ভাইয়াও উনার পেছন পেছন আসছেন।

নির্ভীক ভাইয়া আমার সামনে এসে আমাকে বললেন,

নির্ভীক:অন্ত?তুমি এখানে কার সাথে এসেছো?(ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে)

আমি কিছু বলার আগেই উনি আমার কাঁধ থেকে আরব ভাইয়ার হাত সরিয়ে আমাকে নিজের দিকে টেনে নিয়ে বললেন,
নির্ভীক:কে আপনি?(আরব ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে)

আমি আমার হাতের দিকে তাকিয়ে আছি।নির্ভীক ভাইয়া আমার ডান হাতের কব্জির উপরে ধরে আছেন।আমার হাত মৃদু কাঁপছে।গাড়ির ভেতরে ইচ্ছেকে দেখা যাচ্ছেনা নাহলে ওকে ইশারা করে আমার পাশে দাঁড়াতে বলতাম কারন আমি আবার নার্ভাস ফিল করছি।

আরব:আমি আরব,অন্ত মুনির ছোট খালার ছেলে।(মুচকি হেসে)

নির্ভীক:অহ হ্যালো,আরব।(হ্যান্ডশেক করে)আপনি..

আরব:আপনি বলবেন না প্লিজ,আমি আপনার ছোট।আপনি আমাকে তুই ওর তুমি বলতে পারেন।

নির্ভীক:ওকে তুমি,তুমিও আমাকে তুমি বলতে পারো।বাই দ্যা ওয়ে ও কে?(তাজ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে)

তাজ:আমি তাজরান,অন্ত মুনির মেজো খালার ছেলে।(মুচকি হেসে)

নাছিম ভাইয়া,রিসাব ভাইয়া আর আফ্রা আপু গাড়ি থেকে বের হয়ে আসলো।ওরা নির্ভীক ভাইয়ার সাথে কথা বলল।গাড়িতে আমাদের ধরছেনা সে কথাও বলল।নির্ভীক ভাইয়া গাড়ির ভেতরে তাকিয়ে আরাফ ভাইয়াকে দেখে আমার হাত শক্ত করে ধরে রাখলেন।তারপর প্রান্ত ভাইয়াকে বললেন,

নির্ভীক:তুই আর সিয়াম বাইকে চারজন কে নিয়ে যা।সিয়াম কে ডাক,এখানে বাইক নিয়ে আয়।

উনার কথা শুনে প্রান্ত ভাইয়া রাস্তা পার হয়ে বাইক নিয়ে আসলেন।সিয়াম ভাইয়াও একটা বাইক নিয়ে আসলেন।আরব আর তাজ ভাইয়া প্রান্ত ভাইয়ার বাইকে উঠলো। জিসান আর নাছিম ভাইয়া সিয়াম ভাইয়ার বাইকে উঠলো।যাওয়ার আগে নাছিম ভাইয়া বললেন,
নাছিম:নির্ভীক?রাতে ভাল করে আলাপ হবে ওকে?(নির্ভীক ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে)

নির্ভীক:ওকে ভাইয়া।

ওরা চলে গেল।গাড়িতে এখন ১৪টা সিটে ১৪ জন বসে আছে।সারা আপু ভেতর থেকে আমাকে ডাকছে,

সারা:অন্ত মুনি,তুই আমার কোলে আয়।

আমি গাড়িতে উঠবো কিন্তু নির্ভীক ভাইয়া উঠতে দিলেন না।জানালা দিয়ে আফ্রা আপুকে বললেন,
নির্ভীক:ভাবি,অন্ত আমার সাথে যাবে।তোমরা যাও।
আফ্রা:ওকে ভাইয়া।

আরাফ:চাঁদ আমি যাবো তোর সাথে,অন্ত এখানে বসো।(গাড়ি থেকে নেমে নিজের সিট ছেড়ে দিয়ে)

নির্ভীক:অন্ত?তুমি গাড়িতে যাবা?(আমার দিকে তাকিয়ে)

আমি আড় চোখে গাড়ির ভেতরে ইচ্ছের দিকে তাকালাম। ইচ্ছে মাথা ডানে বামে নাড়ালো,এর অর্থ হলো ‘না’।

নির্ভীক:বলো,গাড়িতে যাবা?

আমি উনার চোখের দিকে তাকিয়ে ইচ্ছের মতো মাথা নাড়িয়ে না বললাম।উনি ঠোঁট সামান্য প্রসারিত করে হাসলেন।তারপর আরাফ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললেন,
নির্ভীক:ও তো চাইছেনা,তুমি যাও ভেতরে বসো।

আরাফ ভাইয়া একটা দম ছেড়ে চোখ মুখ শক্ত করে গাড়িতে গিয়ে বসলো।গাড়ি চলতে শুরু করলো।নির্ভীক ভাইয়া আমার হাত ধরে বললেন,
নির্ভীক:চলো।

আমি কিছু বললাম না।মনে মনে ভাবলাম এখন থেকে আমাকে এই নার্ভাসনেস আর লজ্জা টা দূর করার চেষ্টা করতে হবে নাহলে আমার ভবিষ্যৎ অন্ধকার।

নির্ভীক ভাইয়া আমাকে নদীর পাড়ে নিয়ে আসলেন।আমরা পাথরের ব্লকে পাশাপাশি বসলাম।সূর্য ডুবে যাচ্ছে,কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই গোধুলি লগ্ন শুরু হবে।
নির্ভীক ভাইয়া কিছুক্ষণ এদিক ওদিক তাকিয়ে বললেন,

নির্ভীক:আইস্ক্রিম খাবা?(আমার দিকে তাকিয়ে)

আমি কিছু না বলে না সূচক মাথা নাড়ালাম।

নির্ভীক:কেন?(ভ্রু কুচকে)
আমি:ইচ্ছে করছেনা।(ক্ষীণ কন্ঠে)

নির্ভীক:আচ্ছা তোমার মনে হচ্ছেনা তুমি আমার সাথে অদ্ভূত বিহেভ করছো?(নদীর দিকে তাকিয়ে)

আমি মাথা নিচু করে ভাবতে থাকলাম।উনি কি সব বুঝে গেলেন নাকি?না,উনাকে কিছুতেই বুঝতে দেওয়া যাবে না।উনি এসব জানতে পারলে আমি আর কিছুতেই উনার সামনে দাঁড়াতে পারবোনা।

নির্ভীক:কি ভাবছো?(আমার দিকে তাকিয়ে)
আমি:কিছুনা।(মাথা নিচু করে)

নির্ভীক:কয়েকদিন ধরে তুমি আমাকে ইগনোর করছো।ঠিক করে কথা বলছো না,আমি কথা বললেও বেশি কিছু বলছো না,ফোন করলেও কথা বলছো না,আমি থাকলে তুমি সেখানে থাকছো না।কি সমস্যা?আমি কি কিছু করেছি?তুমি কি আমার উপর রেগে আছো?…টেল মি।

আমি:কোন সমস্যা নেই।(একবার উনার দিকে তাকিয়ে)

নির্ভীক ভাইয়া আমার পাশে এগিয়ে এসে বসলেন।উনার দুহাত আমার দুগালে রেখে বললেন,

নির্ভীক:তাহলে এমন করছো কেন?আমার খারাপ লাগছে তো,তুমি জানো আমি কত কষ্ট পাচ্ছি?(মুখ মলিন করে)

উনার এমন মলিন মুখ দেখে আমার কোথাও চাপা কষ্ট হচ্ছে।এক মুহূর্তেই আমার চোখদুটো জলে ভরে আসলো।চোখের পলক ফেলতেই দুগাল বেয়ে জল গড়িয়ে পরলো।উনি দুহাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে আমার চোখের জল মুছে দিয়ে বললেন,

নির্ভীক:কাঁদছো কেন?(চিন্তিত হয়ে)
আমি:জানিনা।(কান্না মিশ্রিত কন্ঠে)
নির্ভীক:কেউ কিছু বলেছে?
আমি:না।
নির্ভীক:আরাফ কিছু বলেছে?
আমি:না।
নির্ভীক:তাহলে?
আমি:এমনি।(কান্না থামিয়ে)

নির্ভীক:এমনি কেউ কাঁদে?অহ ইয়েস কাঁদে তো।আমি ভুলেই গিয়েছিলাম,পিচ্চিরা তো এমনিই কাঁদে।আর তুমি তো একটা পিচ্চি।আজকে তোমার যত গুলো ভাইবোন দেখলাম তুমি ওদের সবার থেকে ছোট তাইনা?(হালকা হেসে)

আমি:হুম আমি আর ইচ্ছে,ছোট আমরা।
নির্ভীক:তোমাদের দুজনের মধ্যে কে ছোট?(আমার একহাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে)
আমি:ইচ্ছে আমার এগারো মাসের বড়।(হাতের দিকে তাকিয়ে)

নির্ভীক:দেখেছো তুমি কত পিচ্চি?তোমার থেকে ছোট আর কেউ নেই।(মুচকি হেসে)

আমি:আছে তো।সারা আপুর মেয়ে,লিরা আপুর ছেলে আর নাছিম ভাইয়ার তো ছেলে বাবু হবে দুমাস পর।ওরা আমার থেকে অনেক ছোট।(মুচকি হেসে)

নির্ভীক:ওটা অন্য জেনারেশনের গল্প,আমাদের জেনারেশনে তুমিই একমাত্র পিচ্চি।(আমার গাল টেনে)

আমি:ওকে।(মুখ ফুলিয়ে)

নির্ভীক:আচ্ছা শোন তুমি কিন্তু ওদের সাথে বেশি মিশবা না,ওকে?(আমার দিকে তাকিয়ে)

আমি:কাদের সাথে?(ভ্রু কুচকে)
নির্ভীক:তোমার ওসব ভাইদের সাথে।
আমি:ভাইয়ারা তো অনেক ভাল।
নির্ভীক:হোক ভাল তাও ওদের সাথে কম কথা বলবা।আর বিয়েতে শাড়ি পরবা না।(আমার দিকে তাকিয়ে)

আমি:কেন?সবাই শাড়ি পরবে আমিও পরবো আর আমি দুইটা শাড়ি নিয়েছি কালকে পরার জন্য।(উনার দিকে তাকিয়ে)

নির্ভীক:তুমি পিচ্চি মানুষ পিচ্চিদের মতো ড্রেস পরবা বড়দের মতো শাড়ি পরবা কেন?(আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে)

আমি:আপুরা সবাই শাড়ি পরবে তাই আমিও পরবো।

নির্ভীক:ওকে ফাইন,শাড়িই পরো তারপর যখন ছেলেরা লালপরী,নীলপরী,হলুদপরী বলবে তখন?প্রবাল ভাইয়াও আসবে বিয়েতে,তোমাকে শাড়ি পরা দেখলে আবার নীলপরী লিখে লেটার দিবে।ভাল লাগবে তখন?(রাগ করে)

আমি:তাহলে শাড়ি পরবোনা কিন্তু আমি তো হলুদে পরার জন্য ড্রেস কিনি নি,কাল সকালেই কিনতে হবে।(চিন্তিত হয়ে)

নির্ভীক:কাল কেন?আজই যাবে চলো।(উঠে দাঁড়িয়ে)

আমি:আমার কাছে তো এখন বেশি টাকা নেই।দাঁড়ান ভাইয়াকে বিকাশ করতে বলি।(ফোন হাতে নিয়ে)

নির্ভীক:উফ্ লাগবেনা।(আমার হাত থেকে ফোন নিয়ে প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে) চলো তো দেরি হয়ে যাচ্ছে।

বলেই আমাকে নিয়ে যেতে লাগলেন।আমি এইমাত্র খেয়াল করলাম আমি অনেকক্ষণ ধরে নার্ভাস ফিল করিনি বরং উনার সাথে থাকতে খুব ভাল লাগছে।মনে মনে প্রে করছি আমার সব নার্ভাসনেস যেন কেটে যায় কারন আমি উনার সাথে সবসময় থাকতে চাই,কথা বলতে চাই।সেদিনের পর থেকে নার্ভাসনেসের কারনে উনার কাছে দাঁড়াতেই পারিনা আর কথা বলতে তো অনেক লজ্জা করে।

শপিং মলে আসতে আসতে আমাদের রাত হয়ে গিয়েছে। প্রায় দুঘণ্টা ধরে শপিং করে বাহিরেই ডিনার শেরে নির্ভীক ভাইয়া আমাকে নিয়ে বাসায় আসলেন।লিভিং রুমে বসে সবাই আড্ডা দিচ্ছে।আমাদের দেখে সবাই নির্ভীক ভাইয়াকে ডাকলো।নির্ভীক ভাইয়া হাতের ব্যাগ গুলো আমাকে দিয়ে সবার সাথে বসে পরলেন।আমি রুমে এসে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিচে আসলাম।

এত তাড়াতাড়ি নিচে আসার উদ্দেশ্য একটায় সেটা হলো নির্ভীক ভাইয়া।নিচে এসে দেখি উনি সবার সাথে হেসে হেসে কথা বলছেন।উনার হাসিতে কি জাদু আছে নাকি?উনাকে হাসতে দেখলে আমার মুখেও হাসি চলে আসে।কিছুক্ষণ উনার দিকে তাকিয়ে থেকে লিমন ভাইয়ার পাশে গিয়ে বসলাম।

বসতে না বসতেই নির্ভীক ভাইয়া চিৎকার দিয়ে বললেন,
নির্ভীক:অন্ত?আমার ফোনে চার্জ নেই এখনই চার্জে লাগাতে হবে,গো ফাস্ট।

উনি এত কিছু বলার আগেই আমি বসা থেকে দাঁড়িয়ে গিয়েছি।তারপর উনার ফোন নিয়ে রুমের দিকে যেতে লাগলাম।উপরে এসে উনার ফোনের পাওয়ার বাটনে চাপ দিয়ে দেখি ৬৯% চার্জ আছে।এত চার্জ থাকা শর্তেও উনি আমাকে এত তাড়াদিলেন কেন?উনার ওয়ালপেপার দেখে চার্জের কথা ভুলেই গেলাম।ফোনের দিকে তাকিয়ে হাঁটছি।

ওয়ালপেপারে নির্ভীক ভাইয়ার পিকচার দেওয়া আছে।কালো শার্ট আর কালো জিন্স পরে গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।শার্টের হাতা ফোল্ড করা আছে হাতে কালো ঘড়ি চোখে সানগ্লাস মুখে সেই অমায়িক হাসি।ক্রাশ তো আমি সেই প্রথম দিন ভার্সিটিতেই খেয়েছিলাম এখন যা খাই এগুলো ক্রাশের 2.0 ভার্সন।আমি মুচকি হেসে ফোন থেকে চোখ তুলে তাকিয়ে দেখি আমার সামনে দেয়াল।আশে পাশে তাকিয়ে দেখি আমি এখন আম্মুর ঘরের মধ্যে পশ্চিম দিকের দেয়ালের সামনে দাঁড়িয়ে আছি।হঠাৎ সবকিছু মনে পরতেই আমি এক দৌঁড়ে নিজের রুমে চলে আসলাম।দরজা আটকিয়ে নির্ভীক ভাইয়ার ফোন চার্জে লাগিয়ে টিপতে লাগলাম।ফোনে সুয়াইপ লক দেওয়া আছে তাই ইজিলি ভেতরে ঢুকতে পারলাম।

সবার আগে গ্যালারি তে ঢুকলাম।এখানে কোন পিকচার নেই শুধু ভিডিও।কয়েকটা ভিডিও প্লে করে দেখলাম সফট্ওয়্যার,প্রোগ্রামিং,রোবোটিক্স এসব নিয়েই ভিডিও।নিচের দিকে কিছু পিকচার আছে স্টাডি রিলেটেড এছাড়া পুরো গ্যালারি খুঁজেও উনার আর একটা পিকচারও পেলাম না।আশ্চর্য উনার একটা পিকচারও নেই,সেদিন গণভবনে যেয়ে উনি তো আমার সাথে অনেক পিকচার তুলেছিলেন।তাহলে কি সব ডিলিট দিয়েছেন?তাই হবে।আমি মনে খারাপ করে গ্যালারি থেকে বেরিয়ে কল লিস্ট আর ইনবক্স চেক করতে লাগলাম।মিষ্টি নামের মেয়ের সাথে উনি লাস্ট কবে কথা বলেছেন সেটাই দেখতে চাইছি কিন্তু উনার কন্টাক্ট লিস্টে মিষ্টি নাম দিয়ে কোন নাম্বার সেভ করা নেই।তাহলে মিষ্টির সাথে কি উনার ব্রেক আপ হয়ে গেছে?ভাবতেই মনটা আনন্দে নেচে উঠলো কিন্তু কিছুক্ষণ পর মনে হল অন্য কিছু দিয়েও তো সেভ করা থাকতে পারে।আমি বেশ চিন্তায় পরে গেলাম।মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম সব গুলো নাম দেখবো।এখানে কয়েকশো নাম দিয়ে নাম্বার সেভ করা আছে।আমি এক ঢোক পানি খেয়ে বিসমিল্লাহ্ বলে এ লেটার দিয়ে নাম দেখা শুরু করলাম। এ লেটার দিয়ে সব নাম দেখে বি তে গেলাম, কয়েকটা নাম দেখতেই ফোনে কল আসলো।

স্ক্রিনের দিকে তাকিয়েই আমার কান্না চলে আসলো।লাইফ দিয়ে সেভ করা নাম্বারে কল এসেছে।এটা নিশ্চয় মিষ্টির নাম্বার।মিষ্টি উনার লাইফ ভাবতেই চোখ থেকে টপটপ করে জল পরতে লাগলো।রিসিভ না করে বসে থেকে কাঁদছি, ফোন বেজেই চলেছে।আমি কাঁপা হাতে ফোন রিসিভ করে চুপ করে থাকলাম।

ওপাশ থেকে নির্ভীক ভাইয়ার কন্ঠ পেয়ে আমি হকচকিয়ে গেলাম।
নির্ভীক:অন্ত,ফোন নিয়ে নিচে আসো। বাসায় যাবো।
আমি:উম,হুম,হুম যাচ্ছি।(থতমত খেয়ে)

আমি ভাল করে নাম্বারের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলাম।এটা তো আমার নাম্বার। আমার ফোন তো সেই সন্ধ্যার থেকে উনার কাছে আছে।উনি আমার নাম্বার লাইফ দিয়ে সেভ করে রেখেছেন,ভাবতেই আমি লাফালাফি শুরু করে দিলাম।কিছুক্ষণ লাফানোর পরে খেয়াল হলো লাইফ দিয়ে আমার নাম্বার সেভ থাকলেও উনি তো আমাকে ভালোবাসেন না।উনি তো মিষ্টি কে ভালোবাসেন।উনার সাথে আমার অনেক ভাল সম্পর্ক,সবসময় আমাকে পিচ্চি ডাকেন,কিউট বলেন সেজন্য হয়তো লাইফ দিয়ে সেভ করে রেখেছেন।হুম তাই হবে। উনার তো গার্লফ্রেন্ড আছে আমাকে উনি কখনও ভালোবাসবেন না।হঠাৎ কিছু একটা ভেবে এল দিয়ে সব নাম্বার দেখতে লাগলাম কিছুক্ষণ দেখেই লাভ দিয়ে সেভ করা আরেকটা নাম পেলাম।এটা নিশ্চয় মিষ্টি।খুব কান্না পাচ্ছে,কোনরকম কান্না আটকিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে নাম্বার টা চেক করবো তখনই দরজায় ঠকঠক শব্দ হলো।আমি ধীর পায়ে উঠে গিয়ে দরজা খুলতেই ইচ্ছে ঘরে ঢুকে আমার ফোন আমার হাতে দিয়ে নির্ভীক ভাইয়ার ফোন নিয়ে নিচে চলে গেল।আমি ওকে মিষ্টির ব্যাপারে কিছু জানায় নি।কেন জানিনা নির্ভীক ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড নিয়ে কথা তুলতে ভাল লাগেনা।

বেডে শুয়ে পরলাম।কিছুক্ষণ পর ইচ্ছে এসে দরজা লাগিয়ে শুয়ে পরলো।
আমি:আমাদের রুমে কেউ থাকবেনা?(উঠে বসে)

ইচ্ছে:না,আপুরা সবাই নিচের রুমে থাকবে ভাইয়ারা লিভিং রুমের মেঝেতে আর বড়রা গেস্ট রুমে।সবার জায়গা হয়ে গেছে।(বেডে বসে)

আমি:আরাফ ভাইয়াকে তো কোথাও দেখলাম না?(ভ্রু কুচকে)

ইচ্ছে:জারিফ ভাইয়ার কাছে আছে।(শুয়ে পরে)

আমি কিছু না বলে পাশ ফিরে শুয়ে পরলাম।ঘুম আসছেনা।নির্ভীক ভাইয়া আর উনার গার্লফ্রেন্ড মিষ্টি আমার সব ঘুম কেড়ে নিয়েছে।যতবার ভাবছি উনার গার্লফ্রেন্ড আছে উনি আমাকে কখনও ভালোবাসবেন না তত বার আমার চোখ ভিজে যাচ্ছে কান্নায় বুক ভার হয়ে আসছে।কি হত,যদি আমার নাম্বারটা উনি লাভ দিয়ে সেভ করে রাখতেন।অন্য কাউকে উনি কেন ভালোবাসবেন,হুয়াই।এসব ভেবেই বালিশে মুখ গুজে নিঃশব্দে কাঁদতে থাকলাম।

চলবে……………!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here