ভালোবাসি আমি যে তোমায় পর্ব: ৩৮

0
2078

#ভালোবাসি_আমি_যে_তোমায়
#Sohani_Simu
পর্ব:৩৮

সকালে ঘুম থেকে উঠে নিচে এসে দেখি ভাইয়ারা সবাই এলোমেলো হয়ে লিভিংরুমেই ঘুমোচ্ছে।নিচের রুম গুলোতে উকি দিয়ে দেখি আপুরাও ঘুমোচ্ছে।সকাল ৯টা বাজে তাও কেউ উঠেনি,এরা কি সারারাত জেগেছিল নাকি?সবাই ঘুমোচ্ছে তাই আমার একা একা ভাল লাগছেনা,শরীরটাও ভাল নেই।খুব দুর্বল লাগছে,র্যাশ গুলোতে ব্যাথা কমেছে কিন্তু মাথাটা কেমন ঘুরছে।ডাইনিং এর দিকে যেয়ে দেখি বড়রা ব্রেকফাস্ট করছে।আমি যেতেই আম্মু আর বড় খালামুনি আমাকে নাস্তা দিল কিন্তু একটা চেয়ারও ফাঁকা নেই তাই ভাবলাম আজকে ছাদে খাবো।প্লেট নিয়ে ছাদে আসতেই দেখি আরাফ ভাইয়া ছাদের দরজার পাশে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে স্মোক করছে,একদম আমার কাছেই দাঁড়িয়ে আছে।ভাইয়াকে দেখেই আমি চলে আসতে লাগলাম তখনি আমার হাত ধরে আটকিয়ে দিল।আমি রেগে বললাম,

আমি:কি সমস্যা?হাত ছাড়।
আরাফ:ঠিক সময় এসেছো,খুব মিস করছিলাম তোমাকে।(সিগারেট ফেলে দিয়ে)

আমি:ছাড়,আমি কিন্তু ভাইয়াকে বলে দিবো।(রেগে হাতের দিকে তাকিয়ে)

আরাফ:হুম বলো।(ভাবলেশহীন ভাবে)

আমি:ছাড়বে তুমি?(রেগে)

আরাফ:উহুম।এখানে দাঁড়াও তো একটু,দেখি ভাল করে।তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন?এগুলো কি খুব ব্যাথা করছে?খুব কষ্ট হচ্ছে না?(আমাকে দেয়ালের সাথে দাঁড় করিয়ে আমার গালে হাত দিয়ে করুন চোখে তাকিয়ে)

আমি:উফ্ হাত সরাও।(বিরক্ত হয়ে হাত সরিয়ে দিয়ে)

আরাফ ভাইয়া হাত সরিয়ে আমার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে।আমার খুব অস্বস্তি হচ্ছে,এখান থেকে যেতেও পারছিনা কারন আরাফ ভাইয়া আমার একহাত চেপে ধরে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,

আরাফ:আমি কখনও ভাবতেও পারিনি তোমার মতো একটা পিচ্চি মেয়েকে আমি এতটা ভালোবাসবো।কি আছে বলো তো তোমার মধ্যে?কেন আমি তোমাকে এত ভালোবাসি?কেন তোমাকে দেখলে নিজেকে আটকে রাখতে পারিনা?(আমার মুখের চুল গুলো ঠিক করে দিয়ে)

আমি কিছু না বলে রেগে আমার চুল থেকে হাত সরিয়ে দিলাম।আরাফ ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বলল,

আরাফ:তুমি আমাকে একবার আই লাভ ইউ বলেছিলে,মনে আছে তোমার?সেদিন আমি শুধু তোমাকে একটা ছোট বার্বি ডল দিয়েছিলাম তাতেই তুমি খুশি হয়ে আমাকে আই লাভ ইউ বলে দিলে।আচ্ছা এখন যদি তোমার সব গুলো প্রিয় জিনিস এনে দিই তুমি আমাকে আরেক বার আই লাভ ইউ বলবে?শুধু একবার?তুমি যা চাইবে আমি তাই দিয়ে দিবো,একবার বলো না তুমি আমাকে ভালোবাসো।(আমার কপালে কপাল ঠেকিয়ে)

আমি এক হাত দিয়ে আরাফ ভাইয়াকে ঠেলে দূরে সরিয়ে দিয়ে বললাম,
আমি:আমাকে কি তোমার লোভি মনে হয়?(ভ্রু কুচকে)

আরাফ:জানপাখি,আমি মরতে চাই।আমাকে মারবে প্লিজ?তোমার মুখে আমাকে ভালোবাসার কথা শুনলেই আমি মরে যাবো।প্লিজ মেরে ফেলো আমাকে।(আমার হাত নিজের বুকে নিয়ে)

আমি:আমি তোমাকে কখনও ভালোবাসতে পারবোনা।(রেগে)

আরাফ:কেন?কি সমস্যা আমার বলো?কেন ভালোবাসবেনা আমাকে?হুয়াই(রেগে ধমক দিয়ে)

আরাফ ভাইয়ার ধমক শুনে আমার হাত থেকে খাবারের প্লেট টা পরে গেল।আমি বুঝতে পারছি আরাফ ভাইয়াকে আর কিছু বলা যাবেনা,এখন কিছু বললেই রেগে যাবে।তাই মাথা নিচু করে চুপ থাকলাম কিন্তু আরাফ ভাইয়া আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,

আরাফ:আমি আমার সবটা দিয়ে তোমাকে ভালোবাসি।তুমি কেন বুঝ না বলোতো?তোমাকে খুব দরকার আমার,সারাজীবন তোমাকে আমার চাই।আমি মরে গেলেও তোমাকে আমার চাই।তুমি যদি ভেবে থাকো আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে ভালোবাসবে আমি কিন্তু সব শেষ করে দিবো।তুমি শুধু আমার,আমি ছাড়া কাউকে ভালোবাসতে দিবোনা তোমাকে।তোমাকে আমার হতে হবে,আমার সাথেই থাকতে হবে।অন্যকাউকে ভালোবাসলে আমি তোমাকে খুন করে ফেলবো।

আরাফ ভাইয়ার কথা শুনে অজানা ভয়ে আমার বুক কেঁপে উঠলো।খুব অস্বস্থি হচ্ছে,নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাওয়ার মতো ফিলিংস হচ্ছে।আমি ক্লান্ত চোখে আরাফ ভাইয়ার নীলচে সাদা টিশার্টের দিকে তাকিয়ে আছি কারন আরাফ ভাইয়া আমাকে এখনও জড়িয়ে ধরে আছে আর আমি টিশার্ট ছাড়া কিছুই দেখতে পাচ্ছি না।হাত-পা মৃদু কাঁপছে,খুব খারাপ লাগছে।

এত খারাপ লাগার মধ্যেও আমার মুখে হাসি ফুটে উঠলো আরাফ ভাইয়ার টি শার্টে বুকের কাছে একটা ছোট লোগো তে ‘ফিয়ারলেস’ লিখা দেখে।ফিয়ারলেস মানে তো নির্ভীক।আমি জানি এই লোগোটার নিচেই আরাফ ভাইয়ার বুকে আমার নামে ট্যাটু করা আছে।আমার আর নির্ভীক ভাইয়ার নাম কত কাছাকাছি আছে,ভাবতেই মনটা শীতল হয়ে যাচ্ছে।আমি মুচকি হেসে অস্পষ্ট কন্ঠে বললাম,’ফিয়ারলেস ভাইয়া’।তারপরই মনে হল চারপাশটা কেমন সন্ধ্যার মতো অন্ধকার হয়ে আসছে।আরাফ ভাইয়া আমার বাহু ঝাকিয়ে বলছে,

আরাফ:জানপাখি কি হল তোমার?অন্ত?এই জানপাখি?

আমি বার বার চোখের পলক ফেলে ক্লিয়ার কিছু দেখার চেষ্টা করছি কিন্তু নাহ্ সব কিছু আরও বেশি ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে।ধীরে ধীরে কি যে হয়ে গেল কিছুই বুঝলাম না।

চোখ খুলে দেখি অ্যান্টি আমার বিপি চেক করছে।আম্মু মাথার কাছে বসে আছে।বাবা বেডের একপাশে দাঁড়িয়ে আছে।আর দরজার সাথে হেলান দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আরাফ ভাইয়া।আমি আশেপাশে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করছি যে আমার কি হয়েছে।হঠাৎ মনে হলো আমি তো ছাদে ছিলাম।আরাফ ভাইয়া কথা বলছিল তারপরই আমার শরীর খারাপ লাগছিল।

অ্যান্টি:বিপি খুবই লো।ওকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে খাচ্ছেনা ঠিক মতো।(আম্মুর দিকে তাকিয়ে)আর এই তুই,এত মেন্টাল স্ট্রেস কে দেই তোকে?বল আমাকে,আমি তার ট্রিটমেন্ট আগে করবো তারপর তোর।(আমার দিকে তাকিয়ে)

আমি:আমার কিছু হয়নি,অ্যান্টি।শুধু মাথাটা একটু ঘুরছে।(উঠে বসে)

বাবা:এই সব হয়েছে তোমার জন্য।আমার মেয়েকে দেখে রাখতে পারও না।মেয়ে কি খাচ্ছে না খাচ্ছে সেদিকে কোন খেয়াল নেই আর মা সেজে বসে আছে।(রেগে আম্মুকে বকা দিয়ে)

আম্মু:আমাকে না বকে মেয়েকে একটু শাসন করলে তো আজকের এইদিন টা দেখতে হতো না।সব হয়েছে তোমাদের বাবা আর ছেলের জন্য।আরও কিনে দাও বেশি করে চকলেট আর আইসস্ক্রিম(বাবার দিকে তাকিয়ে)।জানো ভাবি?(অ্যান্টির দিকে তাকিয়ে)সকালে আর রাতে ওসব খেয়েই থাকে,দুপুরে চারটে ভাত মুখে দিলে দিল না দিলে না দিল।আর তুই(আমার দিকে তাকিয়ে)আজ থেকে তোর খাওয়া বন্ধ,দেখি কত না খেয়ে থাকতে পারিস।(রেগে)

অ্যান্টি:এই না, এখনই দুধ আর ডিম নিয়ে এসে ওকে খাইয়ে দাও।বিপির যা অবস্থা ও দাঁড়াতেই পারবেনা এখন।

বাবা:যাও যাও তাড়াতাড়ি নিয়ে আসো।(আম্মুকে ঝারি দিয়ে)

আম্মু:এই একদম আওয়াজ করবেনা,তোমাদের জন্য আমার মেয়ের এই অবস্থা।(রেগে রুম থেকে যেতে যেতে)

অ্যান্টি:তুই রেস্ট নে।এখন উঠার চেষ্টা করিস না,মাথা ঘুরে পরে যাবি।আর একদম স্ট্রেস নিবিনা।আমি বিকেলে একবার এসে দেখে যাবো।এখন আমি যাই, ওদিকে আমার বাসায় এক রোগীকে রেখে এসেছি।(আমার হাত ধরে আমার দিকে তাকিয়ে)

বাবা:সেকি কার কি হয়েছে?(চিন্তিত হয়ে)

অ্যান্টি:আর বলেন না ভাই,আমার দেবরের বড় মেয়ে টোয়া।কাল রাতে অন্তর মতো র্যাশ বের হয়েছে।এরা কিছু একটা দিয়েছে।নাহলে ভাল মেয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই এরকম হয়ে গেল কেমন করে।অন্তর থেকে বেশি হয়েছে ওর।(বাবার দিকে তাকিয়ে)

টোয়া আপুরও আমার মতো হয়েছে?ব্যাপারটা কেমন যেন লাগছে।(মনে মনে)

বাবা:এখন কি অবস্থা?
অ্যান্টি:চুলকানি টা নেই,ঘুমোচ্ছে।ঠিক আছে ভাই আমি এখন উঠি,বাসায় অনেক গেস্ট।(বেড থেকে উঠে দাঁড়িয়ে)

বাবা:আচ্ছা।

অ্যান্টি চলে গেল।বাবাও আমাকে রেস্ট নিতে বলে চলে গেল কিন্তু আরাফ ভাইয়া এখনও দরজায় দাঁড়িয়ে আছে।আমি আর চোখে আরাফ ভাইয়ার টিশার্টের দিকে তাকালাম।লোগোটা অনেক সুন্দর লাগছে।এখান থেকে নির্ভীক ভাইয়ার নামটা বুঝা যাচ্ছে না কিন্তু ওখানে খুব সুন্দর করে উনার নামটা ইংলিশে লিখা আছে আমি দেখেছি।ইশ ওই টিশার্ট টা যদি আমার হতো!আমি ওই টিশার্ট টা পরলে আমার বুকের কাছেও তো ওই লোগো থাকবে আর ওখানে নির্ভীক ভাইয়ার নামও থাকবে।আমার ওটা চাই চাই,আমি নিবো ওটা কিন্তু আরাফ ভাইয়াকে বলবো কি করে?না বলে নিতে পারবো কিন্তু তাহলে তো চুরি করা হবে,আমি কোন চোর নই।ধূর টিশার্ট টা জারিফ ভাইয়ার হলেও তো পারতো।এখন আরাফ ভাইয়ার থেকে কি করে নিবো?আমার নিতেই হবে ওটা।

আমি বেডে হেলান দিয়ে থম থমে মুখ করে বসে আছি আর ভাবছি কি করে চাইবো টিশার্ট টা।অন্যকারও হলে আলাদা কথা ছিল কিন্তু এটা আরাফ ভাইয়ার।আরাফ ভাইয়ার থেকে এটা কিছুতেই নিতে পারবো না,আমাদের সম্পর্ক যে অন্যরকম কিন্তু আমার ওটা নিতেই হবে।জারিফ ভাইয়ার কথা শুনে দরজার দিকে তাকালাম,

জারিফ:এখানে কি করছিস?ভেতরে আয়।(আরাফ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে)

আরাফ:এখানেই ঠিক আছি।(সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে)

জারিফ ভাইয়া আরাফ ভাইয়াকে আর কিছু না বলে ভেতরে আমার কাছে এসে বসে বলল,
জারিফ:আজ থেকে বাহিরের খাবার বন্ধ।(রাগ করে)

আমি:ভাইয়া…(করুন সুরে)
জারিফ:কি ভাইয়া হ্যা?নিজের দিকে দেখেছিস?প্রতিদিন অসুস্থ হচ্ছিস,এভাবে কত দিন চলবে?(বকা দিয়ে)

আমি মাথা নিচু করে ভাইয়ার বকা খাচ্ছিলাম তখনই আম্মু দুধ,ডিম,নাস্তা সব নিয়ে এলো।তারপর ভাইয়া আর আম্মু মিলে আমাকে অনেকগুলো খাবার খাইয়ে ছেড়ে দিল।আম্মু নিচে চলে গেল।দরজার দিকে তাকিয়ে দেখি আরাফ ভাইয়াও নেই।তাই আমি ভাবছি জারিফ ভাইয়াকে বলবো আমাকে আরাফ ভাইয়ার মতো একটা টিশার্ট কিনে দিতে।ভাইয়া ফোনে কি যেন করছে।আমি একটু নড়ে চড়ে বসে বললাম,

আমি:ভাইয়া..
জারিফ:বল।(ফোনের দিকে তাকিয়ে)
আমি:তুমি আমাকে একটা টিশার্ট কিনে দিবা?
জারিফ:ওকে।(ফোনের দিকে তাকিয়েই)

আমি:ওকে নয় বল দিবা কি না?(হাত ঝাকিয়ে)
জারিফ:হুম দিবো।(আমার দিকে তাকিয়ে)
আমি: লোগো লাগানো।
জারিফ:আচ্ছা ঠিক আছে,তুই শুয়ে থাক। আমার একটু কাজ আছে।(উঠতে উঠতে)

আমি:শোন,শোন।(হাত ধরে)
জারিফ:কি?(ভ্রু কুচকে)

আমি:আরাফ ভাইয়ার ওই টিশার্টের মতো।না ওটার মতো নয় ওটাই।তুমি আমাকে ওটাই এনে দাও,আরাফ ভাইয়াকে দিতে বলো।(ইনোসেন্ট মুখ করে)

জারিফ:কি?(রেগে)
আমি:আমি ওটাই নিবো।(মাথা নিচু করে)
জারিফ:আমি তোকে ওটার থেকে ভাল কিছু এনে দিবো।(নিজের হাত থেকে আমার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে)

আমি:না আমি ওটাই নিবো….
জারিফ:আমি না বলেছি।(রেগে)
আমি:ওটা নিয়ে দাও এখনই..(ভীত কন্ঠে)
জারিফ:ছোটপাখি?বললাম তো ওটা নয়।(ধমক দিয়ে)

ভাইয়ার ধমক শুনে আমার মুখ চুপসে গেল।আমি আর কিছু না বলে উপুর হয়ে শুয়ে কাঁদতে লাগলাম।

জারিফ:বললাম তো ওর থেকে ভাল এনে দিবো।ছোটপাখি?রাগাস না আমাকে।(রেগে)

আমি কান্না থামালাম না কারন আমি জানি কান্না চালিয়ে গেলে ওই টিশার্ট আমি পাবোই।তাই কান্নার বেগ বাড়িয়ে দিলাম কিন্তু নির্ভীক ভাইয়ার কন্ঠ পেয়ে চমকে গেলাম।

নির্ভীক:ভাইয়া কি হয়েছে ওর?আম্মু বলল ও অসুস্থ।(ভীত কন্ঠে)

জারিফ:হুম।এই দেখি উঠ,কাঁদছিস নাকি?ছোটপাখি?আমি কিন্তু রেগে যাচ্ছি।উঠ বলছি,বললাম তো ওর থেকে অনেক ভাল এনে দিবো।কিরে?(হালকা রেগে আমার হাত ধরে)

আমি কান্নামুখ করে উঠে বসে মাথা নিচু করে থাকলাম।নির্ভীক ভাইয়ার জন্য সব প্ল্যান ফ্লপ হয়ে গেল।উনি না আসলে আর কিছুক্ষণ কান্নার এক্টিং চালিয়ে গেলেই জারিফ ভাইয়া ওই টিশার্ট টায় আমাকে এনে দিত।যেই ফিয়ারলেসের জন্য এত কিছু করা সেই ফিয়ারলেসই আমার প্ল্যান ফ্লপ করে দিল।ব্যাপারটা কিছুটা এরকম, “যার জন্য করলাম চুরি সেই বলে চোর”।

নির্ভীক:কাঁদছো কেন?শরীর বেশি খারাপ করছে?কি হচ্ছে?(চিন্তিত হয়ে)

আমি:ওই টিশার্ট…. (ক্ষীণ কন্ঠে)
জারিফ:ছোটপাখি?(রেগে ধমক দিয়ে)

এবার আমি সত্যি ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলাম।ভাইয়া আমাকে এত জোড়ে ধমক দিল তাও নির্ভীক ভাইয়ার সামনে সেজন্য।

নির্ভীক:ভাইয়া দাঁড়াও,দাঁড়াও।কি হয়েছে আমাকে বলো।(জারিফ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে)

জারিফ:ও আরাফের টিশার্ট নিবে।(রেগে)
নির্ভীক:অহ।(আমার দিকে তাকিয়ে)
জারিফ:জানিনা কি দেখেছে ওটার।আচ্ছা আমি তোকে ওইরকম দেখতে অনেক গুলো কিনে দিবো।আজই কিনে দিবো।এখন রেস্ট নে,আমার কাজ আছে।

বলেই ভাইয়া দ্রুত পায়ে হেঁটে চলে গেল।ভাইয়া যখন চলেই গেল তখন আর কেঁদে কি লাভ তাই চোখ মুছে নির্ভীক ভাইয়ার দিকে তাকালাম।উনি রাগী মুখ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।
নির্ভীক:তুমি ওই টিশার্ট নিতে চেয়েছো?ওটা ভাল লেগেছে তোমার?(রাগী কন্ঠে)

আমি:হুম।(মাথা নিচু করে)

আমার কথা শুনে নির্ভীক ভাইয়া আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে আমার দিকে ঝুকে রাগী গলায় বললেন,
নির্ভীক:কেন?

আমি:ওটা অনেক সুন্দর,ওই….

নির্ভীক ভাইয়া আমাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে আমার দুইবাহু ঝাকিয়ে চোখমুখ লাল করে বললেন,
নির্ভীক:কেন তাকিয়েছো ওই দিকে?হুয়াই?(ধমক দিয়ে)

আমি কিছু না বলে চুপ করে ভীত চোখে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।আমার চোখ যেদিক ইচ্ছা যেতে পারে আর যা ইচ্ছা তাই পছন্দ হতে পারে,এত হাইপার হওয়ার কি আছে।আমার চুপ থাকা দেখে উনি আরও রেগে গেলেন কিন্তু কিছু বলার আগেই উনার ফোন বেজে উঠলো।উনি পকেট থেকে ফোন বের করে রিসিভ করে রাগী গলায় বললেন,
নির্ভীক:এইমাত্র বাসায় আসলাম।
ওপাশ:………….
নির্ভীক:১ঘন্টা ওয়েট করেছি মিষ্টির জন্য,আসেনি ও।(রেগে)
ওপাশ:………..
নির্ভীক:কি আর বলবো বল,কি করিনি ওর জন্য?তাও এমন করছে।(রেগে)
ওপাশ:…………
নির্ভীক:আমি ওকে কিছুতেই ছাড়বোনা,নেভার।তুই এখনই ওকে নিয়ে টেনিস ক্লাবে আয়।(রেগে)

উনি কল কেটে বেড সাইট টেবিলে একটা লাথি দিলেন।আমি ভয়ে ভয়ে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।ফর্সা মুখটা কেমন লালচে হয়ে গেছে।কি হয়েছে উনার।এত রাগ করছেন কেন।মিষ্টির সাথে মনে হয় ঝগড়া চলছে।উনি কত জোড় দিয়ে বললেন উনি কিছুতেই মিষ্টিকে ছাড়বেন না আর উনি মিষ্টির জন্য সব করেছেন।উনি অনেক ভালোবাসেন মিষ্টিকে।ভাবতেই আমার মুখ কালো হয়ে গেল।আমি সহ্য করতে পারছিনা,খুব কষ্ট হচ্ছে।উনি মিষ্টিকে ভালোবাসলে আমার কি হবে?আমিও তো উনাকে ভালোবাসি।উনি অন্যকাউকে ভালোবাসতে পারেন না কিছুতেই না।

নির্ভীক:এই তুমি আমার টিশার্টের দিকে দেখেছো একবারও?বল?তাকিয়েছো আমার দিকে একবারও?আমারটা চয়েস হয়েছে?বল?(রেগে আমার পাশে বসে)

আমি শুধু মাথা ডান বামে নাড়িয়ে না বললাম কারন উনি তো টিশার্ট পরেননি,গ্রীন কালারের মতো একটা শার্ট পরে আছেন।আমি না বলাতে উনি আরও রেগে গেলেন।আমার একহাত শক্ত করে চেপে ধরে বললেন,

নির্ভীক:লুক এ্যাট মি।বল,আমার টিশার্ট সুন্দর কিনা?(রেগে)
আমি:আপনি টিশার্ট পরেননি।(মাথা নিচু করে)

নির্ভীক:অহ(নিজের দিকে তাকিয়ে)।হোয়াটএভার,ওর দিকে কেন তাকিয়েছো বল?(রেগে হাত চেপে ধরে)

এমনিতেই মিষ্টির জন্য আমার রাগ হচ্ছে তারউপর উনি আবার আমাকে রাগ দেখাচ্ছেন।এবার আমি রেগে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
আমি:উফ্ ছাড়ুন তো,তাকিয়েছি তো কি হয়েছে?আমার চোখ আছে তাই তাকিয়েছি আর আমি ওটাই নিবো।(হাত ছাড়িয়ে নিয়ে)

নির্ভীক:অন্ত?(ধমক দিয়ে)

আমি:আমি এখনই আরাফ ভাইয়ার থেকে নিয়ে আসবো ওটা।(বেড থেকে নামতে নামতে)

নির্ভীক ভাইয়া আমার হাত টেনে বেডে বসিয়ে দিলেন।রাগ কনট্রোল করার মতো মুখভঙ্গি করে বললেন,

নির্ভীক:আচ্ছা ঠিক আছে,ওইরকমই এনে দিবো।একদম সেম কিন্তু ওটা নিতে চাইবেনা আর ওটার দিকে তাকাবেও না,ওকে?(আমার এক গালে হাত রেখে)

আমি:সেম যদি না পান?আর লোগো লাগানো থাকতে হবে।কখন এনে দিবেন?এখনই নিবো।(উনার দিকে তাকিয়ে)

নির্ভীক:এখন কি করে?এখন আমাকে বাহিরে যেতে হবে। আমি তোমাকে বিকেলে এনে দিবো,ওকে?(শান্ত হয়ে)

উনার কথা শুনে আমার মুখ মলিন হয়ে গেল।উনি তো এখন মিষ্টির কাছে যাবেন।আমার জন্য উনার এখন সময় নেই।উনার কাছে তো মিষ্টিই সবার আগে।আমি কিছু না বলে মাথা নিচু করে থাকলাম।

নির্ভীক:এনে দিবো তো।আচ্ছা বিকেলে নয় আগেই নিয়ে আসবো,ওকে?(আমার মুখ তুলে)

আমি: কিন্তু ওইরকমই হতে হবে।সেম টু সেম।(উনার দিকে তাকিয়ে)

নির্ভীক:ওকে,ওকে।(হাসি মুখ করে)।আচ্ছা খেয়েছো তুমি?দেখি কি হয়েছে তোমার?মাথা ঘুরছে?আম্মু বলল তুমি কিছু খাওনা আর স্ট্রেস নাও?(আমাকে ভাল করে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে)

ইচ্ছে:কি হয়েছে রে তোর?নিচে সবাই বলছে তোর শরীর খারাপ।(রুমে ঢুকে ঘুম ঘুম কন্ঠে)

আমি:এই বেরো ঘর থেকে,ঢুকবিনা আমার ঘরে।(হাত দিয়ে দরজা দেখিয়ে দিয়ে)

ইচ্ছে:হাহ্,এটা আমারও ঘর,যখন খুশি আসবো।(আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে)
আমি:ফুপ্পি তোকে নিয়ে যাবে।(মন খারাপ করে)

ইচ্ছে:আর আমার ক্লাস গুলো কে করে দিবে?তুই?ঢাকা গেল আমার চলবে?(আমার পাশে বসে)

নির্ভীক:তুমি তো দেখছি কিছুই জানো না।(অবাক হয়ে)
ইচ্ছে:কেন ভাইয়া?কি হয়েছে?(চিন্তিত হয়ে)

নির্ভীক:এখানে তোমাদের ফ্ল্যাট নিয়েছে।ফুপ্পি তোমাকে আর আরাফ ভাইয়াকে নিয়ে সেখানেই থাকবে।

ইচ্ছে:কি?(অবাক হয়ে)
নির্ভীক:হুম সেজন্যই তো আমার পিচ্চিটার মন খারাপ।(আমার দিকে তাকিয়ে)

আমি:তুই এখান থেকে চলে যাবি?(মন খারাপ করে ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে)

ইচ্ছে:না।
আমি:সত্যি।(খুশি হয়ে)
ইচ্ছে:হুম সত্যি,আচ্ছা আমি আম্মুর কাছ থেকে আসছি।

বলেই ইচ্ছে চলে গেল।আমি আনমনেই বেডে শুয়ে পরলাম।নির্ভীক ভাইয়া ব্যস্ত হয়ে বললেন,

নির্ভীক:কি হল?খারাপ লাগছে?

আমি:না,না আমি ঠিক আছি।(উঠে বসে)
নির্ভীক:উঠছো কেন,শুয়ে থাকো।আমি এখন আসছি,ওকে?(আমাকে শুয়ে দিয়ে)

আমার মনটা দুমরে মুচরে শেষ করে দিয়ে নির্ভীক ভাইয়া মিষ্টির কাছে চলে গেলেন।আমি হতাশ হয়ে শুয়ে থাকলাম।দুপুরের খাবার খেয়ে আপু আর ভাইয়াদের সাথে সোফায় বসে গল্প করছিলাম।তখনই দেখলাম আরাফ ভাইয়া শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে নিচে আসছে।আমি ভাবছি ভাইয়ার টিশার্টটা কি করলো।দেখে তো মনে হচ্ছে গোসল দিয়েছে তাহলে টিশার্ট টা নিশ্চয় ছাদে শুকোতে দিয়েছে।যাই ছাদে যেয়ে দেখে আসি,থাকলে ওটার পিক তুলে নিবো তাহলে দোকানে গিয়ে খুঁজতে সুবিধা হবে।ভেবেই আমি ফোন নিয়ে ছাদে চলে আসলাম।দুপুরের উত্তপ্ত রোদে ছাদ একদম তেঁতে আছে আমি পুরো ছাদ খুঁজেও ওই টিশার্ট টা পেলাম না। তাই হতাশ হয়ে ছাউনির নিচে গিয়ে বসতেই নির্ভীক ভাইয়া ডাকলেন।পেছনে তাকিয়ে দেখি উনি ছাদের দরজায় আর উনার হাতে শপিং ব্যাগ আছে।তারমানে উনি টিশার্ট টা নিয়ে এসেছেন।আমি হাসি খুশি মুখে উনার কাছে যেতেই উনি বকাবকি শুরু করে দিলেন,

নির্ভীক:এখানে এসেছো কেন?কত রোদ এখানে।ডক্টর রোদে যেতে নিষেধ করেছিল না?কেন এসেছো এখানে?দুপুরে কেউ ছাদে আসে?(রেগে)

আমি উনার বকাবকিকে পাত্তা না দিয়ে উনার থেকে শপিং ব্যাগ নিয়ে টিশার্ট দেখতে লাগলাম।ছয়টা লেডিস টিশার্ট এনেছেন সবগুলোই অনেক সুন্দর কিন্তু ওই টিশার্ট টা আনেননি।

আমি:ওটা কোথায়?(খুঁজতে খুঁজতে)
নির্ভীক:এগুলো পছন্দ হয়েছে?(আমার দিকে তাকিয়ে)
আমি:হুম কিন্তু ওটা কোথায়,ওটা নিয়ে আসেন নি?(উনার দিকে তাকিয়ে)

নির্ভীক:এটা দেখ এটাও ওইরকম নীল কালার আর লোগোও আছে।(একটা টিশার্ট দেখিয়ে)

আমি:এটাতে অন্য লোগো,আমি ওটার কথায় বলেছিলাম।এগুলো লাগবেনা,নিবো না এগুলো।(মন খারাপ করে)

নির্ভীক:এগুলো ওটার থেকে বেশি সুন্দর।
আমি:হোক সুন্দর আমি ওটাই নিবো।(জেদ করে)
নির্ভীক:ওগুলো তো ছেলেদের।
আমি:হোক ছেলেদের,ওটাই নিয়ে আসুন।
নির্ভীক:নেই ওইরকম,খুঁজেছিতো অনেক। তোমার এগুলো ভাল লাগেনি?আচ্ছা বিকেলে আরও এনে দিবো।চলো নিচে চলো, এখানে খুব গরম।(হাত ধরে)

আমি:যাবো না,আগে ওটা এনে দিন।(হাত ছাড়িয়ে নিয়ে সিঁড়ির ঘরের দেয়াল ঘেষে বসে)

নির্ভীক:হোয়াট দ্যা,,,উঠো।(রেগে হাত টেনে)
আমি:না।(কেঁদে দিয়ে)
নির্ভীক:অন্ত উঠো বলছি।কি পেয়েছো ওটার মধ্যে হ্যা?তাকাও আমার দিকে।নিচে যাবে চলো।(রেগে)

আমার খুবই খারাপ লাগছে।লাইফে কোনদিন কোন কিছু নেওয়ার জন্য একবারের বেশি দুবার বলতে হয়নি,চাওয়ার আগেই সব পেয়ে গেছি।আর আজ কেঁদেও পাচ্ছিনা।আর ওটার জন্য আমার এত জেদ হচ্ছে কেন বুঝতে পারছিনা।কি আছে ওটাতে,লোগোতে অনেক সুন্দর করে নির্ভীক ভাইয়ার নাম লিখা আছে এই জন্যই ওটা নেওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা হচ্ছে।একদম হ্যাংলার মতো আচরণ করছি আমি।আমার এরুপ আচরণ আমার নিজের কাছেই একদম অপরিচিত।ভালোবাসা আমাকে হ্যাংলা বানিয়ে দিয়েছে।হ্যাংলা হলেও ওটা আমার লাগবে,ওটা পরে না ঘুমালে আমি শান্তি পাবো না।

নির্ভীক ভাইয়া জোড় করে আমাকে রুমে নিয়ে এসে,শপিং ব্যাগ গুলো বেডে আছাড় মেরে ফেলে দিয়ে রাগ করে চলে গেলেন।আমি মন খারাপ করে বসে থাকলাম।

সন্ধ্যায় জারিফ ভাইয়াও কয়েকটা টিশার্ট এনে দিল কিন্তু একটাও ওটার মতো নয়।আমি রাগ করে রাতের খাবার না খেয়েই শুয়ে পরলাম।বাসায় সবাই জেনে গেছে আমি একটা টিশার্টের জন্য হ্যাংলার মতো আচরণ করছি কিন্তু কেউ জানেনা আরাফ ভাইয়ার টিশার্ট নেওয়ার জন্য এমন করছি।আমি আরাফ ভাইয়ার ওই টিশার্ট টা লুকিয়ে লুকিয়ে অনেক খুঁজলাম কিন্তু পেলাম না।রাগে,দুঃখে রুমের দরজা ভেতর থেকে লাগিয়ে দিয়ে শুয়ে পরলাম।ইচ্ছে আপুদের সাথে থাকবে।যেখানে খুশি থাকুক,আমি একাই থাকবো।

সারারাত অনলাইন শপিং এর দোকানে ওই টিশার্ট টা খুঁজলাম কিন্তু পেলাম না।নির্ভীক ভাইয়াকে ঘিরে এত কিছু হয়ে যাচ্ছে কিন্তু উনি রাগ করে আর কথা বলেন নি আমার সাথে।আমার সাথে কথা বলবেন কেন?উনার তো মিষ্টি আছে।উফ্ ওই অসহ্য ডাইনি টাকে পেলে খুন করে ফেলবো।

.
আপু আর রাযীন ভাইয়া আমাদের নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে এসেছে।রাযীন ভাইয়া পুরো রেস্টুরেন্ট বুক করেছেন।আপুর ভাই-বোনদের মধ্যে আমি,ইচ্ছে,মিতু আপু,মিরা আপু,আরব ভাইয়া,তাজ ভাইয়া আর জিসান ভাইয়া এসেছি অন্যদিকে রাযীন ভাইয়ার ভাই-বোনদের মধ্যে কয়েকটা ছেলে-মেয়েকে দেখছি ওদের মধ্যে নির্ভীক ভাইয়া,প্রান্ত ভাইয়া আর টোয়া আপুর ছোট বোন তরীকে ছাড়া আর কাউকে চিনিনা।সবাই ভাগ ভাগ হয়ে আলাদা আলাদা টেবিলে বসেছে।আমি আপুর পাশে বসে আছি,রাযীন ভাইয়ার পাশে নির্ভীক ভাইয়া বসে আছেন, আমার আর নির্ভীক ভাইয়ার মাঝখানে তরী বসে আছে।তরী অনেক ছোট ক্লাস ফাইভে পরে।

সবাই সবার মতো হাসি ঠাট্টা করছে আমিই শুধু চুপচাপ আছি।অবশ্য এর পেছনে কারনও আছে সেটা হলো নির্ভীক ভাইয়া।উনি এখানে আসার পর থেকে দুইবার মিষ্টির সাথে ফোনে কথা বলেছেন,আবার এখান থেকে উনি মিষ্টির কাছেই যাবেন বলছেন।এই জন্য আমার মন খারাপ।মিষ্টি যা বলছে উনি তাই করছেন অথচ আমি একটা টিশার্ট চেয়ে পেলাম না।কেনই বা পাবো আমি তো আর উনার গার্লফ্রেন্ড নয়।

রাযীন:শালীরা আমাকে সেই যে শান্তি অফার দিল অফার আর শেষই হয়না।(আমার দিকে তাকিয়ে)

আফ্রা:কথায় বলে না? সুখে থাকতে ভূতে কিলায়..তোমার হয়েছে সেই দশা।(রাযীন ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে)

রাযীন:তুমি যাই বলোনা কেন আমিই পৃথিবীর একমাত্র দুলাভাই যার শালীরা এত ভাল।(মুচকি হেসে)

আফ্রা:দেখতে হবেনা কার বোন?(প্রাউড ফিল করে)
রাযীন:আমি মাঝে মাঝে ভাবি তুমি এমন অথচ তোমার বোন কেন এত শান্তশিষ্ট।

আফ্রা:ও একটু শান্তই আছে।তোমাকে কোনদিন বিরক্ত করবেনা।তবে আমি ওর সাথে থেকে থেকে বিরক্ত।ছোট থেকে প্রচুর জ্বালিয়েছে আমাকে,হাসে কম কাঁদে বেশি।কান্নায় ওর প্রধান অস্ত্র।ওর সাথে একটু জোড়ে কথা বলে দেখো কেঁদে দিবে।আমি তো ভয়ে ওর সাথে জোড়ে কথা বলিনা,ও কাঁদলে ভাইয়া আমাকে আস্ত রাখবেনা।(রাযীন ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে)

আমি:কি বলছো এসব?(মন খারাপ করে আপুর দিকে তাকিয়ে)

রাযীন:হুম,ছোটবেলায় ও প্রচুর কাঁদতো।গায়ে কাউকে হাত দিতে দিত না আর ওর দিকে তাকানোও যাবেনা,কেউ তাকালেও কেঁদে দিত।(হাসতে হাসতে)

তরী:তুমি এখনও কাঁদো?(আমার দিকে তাকিয়ে)

নির্ভীক:তোমরা টপিকটা চেন্জ করো নাহলে এখনই কেঁদে দিবে।(মুচকি হেসে)

আফ্রা:হুম হুম ঠিক বলেছো।(হাসতে হাসতে)

আমি কিছু বলছি না।শুধু সবার কথা শুনছি।আড্ডা,গল্প,খাওয়া-দাওয়া শেষে সবাই বাহিরে এসে দাঁড়ালাম।নির্ভীক ভাইয়া বার বার ঘড়িতে টাইম দেখছেন।গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখা করার জন্য হিরোদের মতো করে সেজে এসেছেন,ইচ্ছে করছে উনার সাদা প্যান্ট আর লেমন কালার টিশার্টে এক বালতি কাঁদা ছুড়ে দিই কিন্তু আমি এটা কখনই করতে পারবো না জানি।হঠাৎই মনে হল উনাকে যদি মিষ্টির কাছে না যেতে দিই তাহলে কেমন হয়।হুম খুবই ভাল হয় কিন্তু কি করে আটকাবো উনাকে।আচ্ছা ইচ্ছেকে বলে দেখি ও কি বলে।

আমি ইচ্ছের কাছে যেয়ে ওকে এক সাইডে নিয়ে এসে সব বললাম কিন্তু এই ছেমরি কিছুতেই বিশ্বাস করছেনা যে নির্ভীক ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড আছে।
আমি:তুই আমাকে অবিশ্বাস করছিস?(ভ্রু কুচকে)

ইচ্ছে:তুই বুঝতে পারছিস না,এটা সম্ভব নয়।(হাত নাড়িয়ে)
আমি:আচ্ছা বাদ দে,তুই আপাতত আমাকে বল উনাকে বাসা পর্যন্ত কিভাবে নিয়ে যাবো।(বিরক্ত হয়ে)

আমার কথা শুনে ইচ্ছে কিছুক্ষণ ভাবলো।তারপর বলল,
ইচ্ছে:জানিনা কাজ হবে কিনা তবে তুই ট্রাই করে দেখতে পারিস।

আমি:বল তাড়াতাড়ি।
ইচ্ছে:তুই ভাইয়াদের কাছে যা।

আমি:ভাইয়াদের কাছে যেয়ে কি বলবো?(ভ্রু কুচকে)
ইচ্ছে:উফ্ মাথা মোটা ভাইয়াদের কাছে এমনি যাবি,হাসবি,গল্প করবি,হাত ধরবি।

আমি:ওকে।
ইচ্ছে:অল দ্যা বেস্ট।(মুচকি হেসে)

ইচ্ছের সাথে কথা বলে আমি নির্ভীক ভাইয়ার দিকে তাকালাম।উনি রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে প্রান্ত ভাইয়ার সাথে গল্প করছেন।আমি এবার কিছুটা দূরে ভাইয়াদের কাছে গেলাম।
আমি:আরব ভাইয়া।(ভাইয়ার পাশে দাঁড়িয়ে)
আরব:এই অন্ত মুনি শোন,আমরা কাল ঘুরতে যাবো।(আমার দিকে তাকিয়ে)

আমি:কোথায় যাবা?কাল নাকি তোমরা ঢাকায় চলে যাবা?(ভ্রু কুচকে)
জিসান:রাজশাহী তো ঘুরে দেখায় হলোনা।কাল সারাদিন ঘুরবো। না ঘুরে কিছুতেই ফিরবো না।কি বলিস তোরা?(বাকিদের দিকে তাকিয়ে)

তাজ:হুম ঠিক।

আরব:আম্মু কাল কিছুতেই থাকতে চাইবেনা।অন্তমুনি তোকে কিন্তু আম্মুকে আটকাতে হবে।(আমার কাঁধে হাত রেখে)

আমি:খালামুনিকে তো আমি যেতে দিবোনা কিন্তু আমাকে আইসক্রিম খাওয়াতে হবে,উফ্ কাল থেকে খাইনি।চলো আমাকে আইসক্রিম কিনে দাও।(আরব ভাইয়ার হাত টেনে)

আরব:আচ্ছা চল কিন্তু কাল যে তোর শরীর খারাপ ছিল তখন খালামুনি জারিফ ভাইয়া আর খালুকে বকছিল, তোকে এসব কিনে দেওয়ার জন্য।(আমার দিকে তাকিয়ে)
আমি:উফ্ চলো তো,আম্মু জানতেই পারবেনা।(হাত টেনে)

আরব ভাইয়ার হাত ধরে যেই না উল্টো দিকে ঘুরলাম তখনি নির্ভীক ভাইয়ার সাথে একটা ধাক্কা খেলাম।উনি একদম আমার পেছনেই ছিলেন আমি বুঝতে পারিনি।উনার দিকে তাকিয়ে দেখি রেগে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।আমি ভয়ে ভয়ে উনাকে বললাম,

আমি:সরি ভাইয়া,আমি আপনাকে দেখতে পাইনি সেজন্য ধাক্কা লেগে গেছে।

আমার কথা শুনে উনার রাগ মনে হয় একটু বেশি হলো।আরব ভাইয়ার হাত থেকে আমার হাত খুলে নিয়ে বললেন,
নির্ভীক:সবাই গাড়িতে উঠেছে,চলো তুমি ভাবির সাথে যাবে।(চোখমুখ শক্ত করে)

আমি:আমার আইসক্রিম?(আরব ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে)

আরব:আচ্ছা রাতে পার্টি হবে।(মুচকি হেসে)
নির্ভীক:এই তোমরাও গাড়িতে উঠো,যাও।(ভাইয়াদের দিকে তাকিয়ে)

বলেই আমাকে নিয়ে গাড়িতে এলেন।আপুর পাশে আমাকে বসিয়ে দিলেন।আমি ভেবেছি উনি আমার পাশে বসবেন তাই আপুর দিকে একটু চেপে বসতে লাগলাম তখনি উনি গাড়ির দরজা লাগিয়ে জানালা দিয়ে আপুকে বললেন,
নির্ভীক:ভাবি ওকে আমাদের বাসায় নিয়ে যাবা আর তোমার সাথে রাখবা।আমি কিছুক্ষণ পর বাসায় যাবো।আমি না যাওয়া পর্যন্ত ওকে বাসায় যেতে দিওনা,ওর সাথে দরকার আছে।

আফ্রা:ঠিক আছে।

উনি আমার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে চলে গেলেন।আমি উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকলাম।উনি প্রান্ত ভাইয়ার সাথে বাইকে উঠে চলে গেলেন।হঠাৎ আমার মনে হলো উনার তো মিষ্টির কাছে যাবার কথা।উনি নিশ্চয় ওই ডাইনিটার সাথে দেখা করতে গেলেন।কি যে করবো আমি,কিছু বুঝতে পারছিনা।এমন একজনকে ভালোবাসলাম যে কিনা অন্যকাউকে ভালোবাসে।উনি তো আমাকে কখনওই ভালোবাসবেন না।উফ্ এসব ভাবলে এত কষ্ট হয় কেন!ইচ্ছে ঠিকি বলে ভালোবাসা মানে কষ্ট।

চলবে……………………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here