ভালোবাসি আমি যে তোমায় ২*পর্ব:১১

0
1669

#ভালোবাসি_আমি_যে_তোমায়_২
#Sohani_Simu

৯.

রাতে আমার ঘুম আসছে না কিছুতেই।চিৎ হয়ে শুয়ে কোমড় পর্যন্ত কম্বল টেনে দিয়ে সিলিং এর দিকে তাকিয়ে আছি।দুই চোখের কোনা বেয়ে উষ্ণ পানি গড়িয়ে পরছে।মাঝে মাঝে হেঁচকি উঠছে,তখন দুই হাত দিয়ে মুখ চেপে কান্না আটকানোর চেষ্টা করছি।আমার পাশেই ইচ্ছে ঘুমিয়ে আছে। ডিম লাইটের আবছা আলোই কি নিষ্পাপ লাগছে ওর ঘুমন্ত মুখ।আমি উঠে বসলাম।বালিশের নিচে থেকে ফোন নিয়ে দেখি রাত দুটো বেজে উনিশ মিনিট।গ্যালারী তে যেয়ে ছবিটা বের করলাম।তখন ছাদ থেকে রেগে চলে আসার সময় নির্ভীক ভাইয়া আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরেছিলেন,মুখ ডুবিয়ে দিয়েছিলেন আমার গালের নিচে।ইচ্ছে কিভাবে যেন সেই মুহূর্তটাকে ক্যামেরা বন্দি করে ফেলেছে।কোথায় থেকে যেন একফালি সরু আলোর রেখা এসে পরেছিল আমার মুখে আর নির্ভীক ভাইয়ার মুখ দেখা যাচ্ছে না।উনার চওড়া কাঁধ,ফর্সা পুরুষালি দুটো হাত আর মাথা ভর্তি সিল্কি চুল গুলো উঠেছে ছবিতে।একফালি কৃত্রিম আর চাঁদের আলোতে এমন একটা ছবি তোলার জন্য ইচ্ছেকে একটা নোবেল দিতে ইচ্ছে করছে।আমার যেহেতু নোবেল দেওয়ার সামর্থ্য নেই তাই আমি ইচ্ছের উপর ঝাপিয়ে পরে ওর গালে অসংখ্য কিস করে দিলাম।বেচারি ইচ্ছেমতি ঘুমের মধ্যেই ধরফরিয়ে উঠে বসে চেচিয়ে বলল,

“এই ককে?ককি হচ্ছে?চোর,চোর।”

আমি ওর মুখ চেপে ধরে বললাম,
“এই চুপ চুপ,চুপ কর।”

ওকে সামলাতে আমার বেশ বেগ পেতে হলো।একটু পর ইচ্ছে স্বাভাবিক হলো।মুখ থেকে আমার হাত সরিয়ে দিয়ে রাগী কন্ঠে বলল,
“কি করছিলি তুই?”

আমি ওর গলা জড়িয়ে ধরে অনেক খুশি হয়ে বললাম,
“জানননননননু এতদিনে তুই একটা কাজের কাজ করেছিস।আমার জানুটা!আই লাভ ইউ।”

বলতে বলতে ইচ্ছেকে নিয়ে বেডে গড়াগড়িও খেলাম।ইচ্ছে ভীত কন্ঠে বলল,
“এই তোর কি হয়েছে?ভূতে টূতে ধরেছে নাকি?আল্লাহু-লা-ইলা-হা ইল্লা হুয়াল…….এর পর কি?আল্লাহ আয়াতুল কুরসিও মনে পরছেনা।কি সাংঘাতিক ভূত!”

আমি আরেকদফা ওর উপর ঝাপিয়ে পরে বললাম,
“আল্লাহু লা-ইলা-হা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম,লা-তা খুযুহু সিনাতু ওয়ালা নাউমুন লাহু মা ফিসামাওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদি…”

ইচ্ছে সস্তির শ্বাস ফেলে বলল,
“যাক তাও ভাল ভূতে ধরেনি।তাহলে এমন করছিস কেন হে?পাগল হয়েছিস?”

আমি ওকে ছেড়ে দিয়ে মুখ কাচুৃমাচু করে বললাম,
“ইয়ে মানে হ্যাঁ,তোর ফটোগ্রাফি স্কিল দেখে আমি আধা পাগল হয়ে গেছি।”

ইচ্ছে আমাকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে হাত বাড়িয়ে টেবিল ল্যাম্প জ্বালিয়ে ভ্রু কুচকে ঘড়ি দেখে বলল,
“এত রাতে তুই না ঘুমিয়ে জেগে আছিস?ওই ছবিটা দেখছিলি?এতদিনে যেটা হলোনা আজকে সেটা হয়ে গেল নাকি?”

আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,
“কি হয়ে গেল?”

ইচ্ছে আমার দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বলল,
“জানু?লাভ নাকি করিস না?তোমরা চুটিয়ে প্রেম করছো আর আমি কিছু জানতে চাইলে বলছোনা,সেজন্য ছবি তুলে নিয়েছি এখন কি বলবা?কি হচ্ছিল তখন হুম?বল, বল।”

আমি থম থমে মুখ করে বললাম,
“কিছু হচ্ছিল না।কোন প্রেম নেই।উনি আমাকে রাগিয়ে দিয়েছিলেন তাই সরি বলছিলেন।”

ইচ্ছে মুচকি হেসে বলল,
“এভাবে সরি বলতে হয়?জড়িয়ে ধরে কিস করে?”

আমি ঠোঁট উল্টে বললাম,
“কিস করেনি।”

ইচ্ছে অবাক হয়ে বলল,
“কি বলছিস?”

আমি মন খারাপ করে বললাম,
“হুম,উনি তো কানের কাছে মুখ নিয়ে শুধু সরি বললেন।”

ইচ্ছে কিছু বলার আগেই আমি আবার কান্না শুরু করে দিলাম।জোড়ে জোড়ে হেঁচকি তুলে কান্না করতে করতে বললাম,
“থাকবোনা এখানে।কালই বাসায় চলে যাবো।”

ইচ্ছেকে আমি কিছুই জানায়নি।নির্ভীক ভাইয়ার সাথে ছাদে কি কথা হয়েছে,উনি বিয়ে করতে চান,ভাইয়ার বিয়ে ভাঙতে চান এসব কিছু জানায়নি।আমার খুব মন খারাপ।এতটা কষ্ট আমি আমার আঠারো বছরের জীবনে কোনদিন পাইনি।কান্না করে মাথাটা ভার হয়ে গিয়েছে,ব্যথায় ছিড়ে পরছে।ইচ্ছে ভাবছে বাসায় যাওয়ার জন্য এমন করছি কিন্তু ও জানেনা নির্ভীক ভাইয়াকে ছেড়ে আমি ঢাকায় যাবো না।ইচ্ছে আমাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে আবার ঘুমিয়ে পরেছে।আমি শুয়ে থেকে কপালে ম্যাসাজ করছি আর নিঃশব্দে কান্না করছি।ভোরের আলো ফোটার আগেই চোখের পাতা ভারি হয়ে আসলো।কান্না করতে করতেই ক্লান্ত চোখ জোড়া বন্ধ করে নিলাম।

.
চেচাঁমেচির আওয়াজ পেয়ে চোখ খুলে দেখি অনেকটা সকাল হয়ে গিয়েছে।নিচে থেকে নির্ভীক ভাইয়ার রাগী কন্ঠ পেয়ে কি হয়েছে দেখার জন্য দৌঁড়ে নিচে গেলাম।ড্রইং রুমের সোফার কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই নির্ভীক ভাইয়া আমার দিকে টিভির রিমোট ছুড়ে মারলেন।আমি একদমই সরে যাওয়ার টাইম পাইনি তাই রিমোটটা কপালে এসে লাগলো।ব্যথায় চোখ মুখ খিচে কপাল ধরে ফ্লোরে বসে পরলাম।উপস্থিত সবাই এসে আমাকে ঘিরে ধরলো।অ্যান্টি আমার পাশে বসে কপাল থেকে আমার হাত সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলো।নির্ভীক ভাইয়া হাঁটু গেড়ে আমার সামনে বসে আমার কপালে হাত দিতেই অ্যান্টি উনার হাত সরিয়ে দিয়ে ঠাস করে উনাকে একটা চড় বসিয়ে দিল রাগী কন্ঠে বলল,

“এক্ষুণি বেড়িয়ে যাবি বাসা থেকে আর কখনও আমার সামনে আসবিনা।”

নির্ভীক ভাইয়া অ্যান্টির কথা শুনেছেন বলে তো মনে হচ্ছেনা।উনি আবার আমার দিকে হাত দিতেই অ্যান্টি উনার হাত ধরে ফেললেন।রাগী কন্ঠে প্রান্ত ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললেন,
“প্রান্ত ওকে নিয়ে যা আমার সামনে থেকে।”

প্রান্ত ভাইয়া নির্ভীক ভাইয়ার পেছনেই দাঁড়িয়ে ছিলেন।উনি নির্ভীক ভাইয়াকে টেনে তুলে একটু সাইডে নিয়ে গেলেন।অ্যান্টি কপাল থেকে আমার হাত সরিয়ে দিল।হাতের দিকে তাকিয়েই আমার মাথা ঘুরে উঠলো কারন হাতের তালুতে রক্ত লেগে আছে।রক্ত দেখলে আমার মাথা ঘোরে।অ্যান্টি নিজের ওড়না দিয়ে আমার কপাল চেপে ধরে বলল,
“কমলা ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে আসো।অনেকখানি কেটে গেছে।”

খালার আগেই ইচ্ছে দৌঁড়ে গেল।নির্ভীক ভাইয়া অ্যান্টির পেছনে দাঁড়িয়ে আছেন।উনি এক হাতে কপালের চুলগুলো মাথার উপর ঠেলে ধরে আছেন আর উনার অন্য হাত প্রান্ত ভাইয়া ধরে আছেন।আমি সোফায় হেলান দিয়ে হতবাক হয়ে সব দেখছিলাম অকস্মাৎ আমি কান্না করে দিলাম।সারারাত ধরে নির্ভীক ভাইয়ার উপর জমে থাকা সব অভিমান এবার সবার সামনে কান্না হয়ে বেড়িয়ে আসলো।নির্ভীক ভাইয়া আমার পাশে হাঁটু গেড়ে বসে আমাকে একপাশ থেকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
“সরি,সরি,আমি ইচ্ছে করে মারিনি তোমাকে।আমি বুঝতে পারিনি তুমি ওখানে দাঁড়িয়েছো।আমি খুব সরি।প্লিজ ডোন্ট ক্রাই।ব্যাথা করছে খুব?”

আমি উনাকে ঠেলে সরানোর চেষ্টা করছি আর উনি আমাকে আরও শক্ত করে ধরছেন।অ্যান্টি তো উনার উপর রাগ করে চলেই গেল।আমি কান্না থামালে নির্ভীক ভাইয়া আমার কপালে মেডিসিন দিয়ে ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দিলেন।অ্যান্টি এসে আমাকে নিয়ে নিজের রুমে গেল।নির্ভীক ভাইয়া আর বাকিরা পেছন পেছন আসছিল কিন্তু অ্যান্টি সবার মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিল।

.
তিনদিন হলো নির্ভীক ভাইয়ার সাথে কথা বলিনি।উনি নিজে নিজে অনেক বক বক করেছেন।আমাকে নিয়ে ঘুরতেও গিয়েছিলেন।অনেক গুলো গান শুনিয়েছেন।দশবার কান ধরে উঠা বসাও করেছেন তাও আমি উনার সাথে একটা কথাও বলিনি।উনার যেমন আকাশ সমান কষ্ট আমারও তেমন আকাশ সমান অভিমান হয়েছে।এই তিন দিনে আমি বুঝে গিয়েছি আমি উনাকে কত ভালোবাসি।উনাকে ভালোবাসার পর থেকে আমার কিছুই ঠিক নেই।মাথা তো পুরোই গেছে।কোনটা অলিক কোনটা বাস্তব বোঝা দায় হয়ে যাচ্ছে।নিজেকে দূরারোগ্য ব্যাধিগ্রস্ত মনে হচ্ছে।মনে হচ্ছে আমার চেয়ে অসুৃখি আর অসুস্থ ব্যক্তি এই পৃথিবীতে কেউ নেই।

সন্ধ্যার ম্লান আলোই ছাদের এক কোনায় রেলিং এ হাত দিয়ে একা দাঁড়িয়ে আছি।আজকে ক্লাস টেস্ট ছিল দেখে ঢাকা যেতে পারিনি কিন্তু কাল যেতেই হবে কারন কাল সন্ধ্যায় ভাইয়ার গায়ে হলুদ আর পরশু বিয়ে।আমরা কাল সকালেই রওনা দিব।এখান থেকে অ্যাঙ্কেল-অ্যান্টি,খালা,নির্ভীক ভাইয়া আর প্রান্ত ভাইয়া যাবেন,রাযীন ভাইয়া তো ঢাকাতেই থাকেন।আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলাম তখনই কেউ আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।আমি একটু কেঁপে উঠলাম।নির্ভীক ভাইয়া আমার কানে ফিসফিস করে বললেন,

“আই লাভ ইউ মনপরী”

আমি একটু বিরক্ত হলাম কারন এটা সত্যি নয় নিশ্চয় আমার কোন কল্পনা।আমি বিরক্ত বললাম,
“আই লাভ ইউ টু।”

সঙ্গে সঙ্গে উনি আমাকে নিজের দিকে ঘুরালেন।আমার দুই গাল ধরে বললেন,
“রিয়েলি!!অহ মাই গড!”

খুশিতে উনার চোখমুখ চক চক করছে।উনি আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন,আমি ফ্লোরের নাগাল পাচ্ছি না।উনি আমাকে নিয়ে কয়েকধাপ পিছিয়ে গিয়ে আমাকে আকাশের দিকে উঁচু করে ধরে আবার ফ্লোরে নামিয়ে দিলেন।আমার কপালে গভীর কিস করে বললেন,
“ভালোবাসি,ভালোবাসি,হৃদয় তুমি আমার।আই লাভ ইউ মাই হার্ট।”

আমি স্তব্ধ।প্রথমে ভেবেছিলাম আমি স্বপ্ন দেখছি কারন এইরকম কয়েকবার হয়েছে উনি আমাকে জড়িয়ে ধরে আই লাভ ইউ বলেছেন কিন্তু কিছুক্ষণ পরই উনি মিলিয়ে গিয়েছেন।আমি কাঁপা কাঁপা হাতে আমার গালে রাখা উনার হাত স্পর্শ করলাম।উনি মুচকি হেসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
“ইউ লাভ মি?সে ওয়ান্স এগেইন প্লিজ।আই ক্যান্ট বিলিভ।”

আমি উনাকে জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে বললাম,
“এটা সত্যি আপনি?আপনি নির্ভীক ভাইয়া?আপনিই ওই রাগী ছেলেটা?আই লাভ ইউ বাট আই হেট ইউ।আপনি খুব খারাপ..খুব।আই লাভ ইউ।”

বলেই আমি থেমে গেলাম।উনাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে এক দৌঁড়।কি সব বললাম উনাকে!!লজ্জায় আমি শেষ।উনার সামনে আর দাঁড়াতেই পারবোনা।আমি ছুটে নিচে আসতে লাগলাম।উনি আমার পেছন পেছন আসতে আসতে বললেন,

“এই দাঁড়াও,পরে যাবা।আস্তে যাও,এই পিচ্চি।”

কে শোনে কার কথা, আমি দাঁড়ালাম না।দৌঁড়ে রুমে এসে দেখি ইচ্ছে আর আরাফ ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে।আরাফ ভাইয়াকে দেখে আমি দরজার কাছে দাঁড়িয়েই খুশিতে লাফালাফি শুরু করে দিয়েছি।আরাফ ভাইয়া আমাকে দেখেই দৌঁড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“জানপাখি কোথায় গিয়েছিলে তুমি?দেখো আমি চলে এসেছি।”

আমিও ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
“আজ এসব কি হচ্ছে আমার সাথে!!এত খুশি,উফ্!”

আরাফ ভাইয়া আমাকে এত শক্ত করে ধরেছে যে আমি ব্যথা পাচ্ছি কিন্তু খুশির ঠেলায় কিছু বললাম না।ইচ্ছে এসে আমাকে টানতে বলল,
“এই ছাড় আমার ভাইয়াকে।এই ভাইয়া তুমি ওকে ছাড়ো,তুমি জানো ও তোমাকে কত বকে?একদম ওর সাথে কথা বলবা না।”

ব্যস শুরু হয়ে গেল টানাটানি।দুইজন আরাফ ভাইয়ার দুইহাত ধরে টানতে টানতে আমি বললাম আমার ভাইয়া ইচ্ছে বলে ওর ভাইয়া।কি এক কান্ড!শেষে আরাফ ভাইয়া আমাদের দুজনকেই দুইহাতে জড়িয়ে ধরলো।আমি ভাইয়ার বুকে মাথা রেখেই খেয়াল করলাম নির্ভীক ভাইয়া দরজার কাছে দাঁড়িয়ে রাগী মুখে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।উনার সাথে চোখাচোখি হতেই লজ্জায় আমি আরাফ ভাইয়ার বুকে মুখ লুকালাম।নির্ভীক ভাইয়া রুমে ঢুকে আরাফ ভাইয়াকে ডাকলেন।আরাফ ভাইয়া আমাদের ছেড়ে দিয়ে নির্ভীক ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে বলল,

“হেই চাঁদ!কেমন আছিস ভাই?”

নির্ভীক ভাইয়া মুচকি হেসে বললেন,
“আলহামদুলিল্লাহ ফার্স্ট ক্লাস ভাল আছি।তুমি দেশে আসবা আগে বলোনি তো?”

আরাফ ভাইয়া নির্ভীক ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,
“জারিফের বিয়ে আর আমি আসবোনা তাই আবার হয় নাকি!!যাইহোক আমাকে তোর রুমে নিয়ে চল প্লিজ,এয়ারপোর্ট থেকে ডিরেক্ট এখানে চলে এসেছি।”

নির্ভীক ভাইয়া মুচকি হেসে বললেন,
“হ্যা চলো।”

আমি ইচ্ছের পেছনে দাঁড়িয়ে আড় চোখে নির্ভীক ভাইয়াকে দেখছিলাম।উনিও এতক্ষণ আরাফ ভাইয়ার সাথে কথা বলতে বলতে আমার দিকে তাকিয়েছেন।উনারা রুম থেকে যেতেই আমি ইচ্ছেকে জড়িয়ে ধরে নিজের সব ভার ওর উপর ছেড়ে দিলাম।বেডের উপর দুজন কিছুক্ষণ মরার মতো পরে থেকে উঠে বসে স্বাভাবিক হলাম। আর রুম থেকে বের হইনি,ডিনার করতেও যাইনি।বেশি খুশি থাকলে ক্ষুধা-তৃষ্ণা কিছু থাকেনা।কয়েকঘন্টা আগে আমি পৃথিবীর সবচেয়ে অসুখী মানুষ ছিলাম আর আজ এই মুহূর্ত থেকে আমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ।

★★★

বিকেলের শেষ ভাগ চলছে।সূর্যটা পশ্চিম আকাশে হেলে পরে অস্তমিত হওয়ার প্রহর গুনছে।কংক্রিটের তৈরি চার দেয়ালের মধ্যে দিনের আলো প্রায় ফুরিয়ে এসেছে।আলো গুলো কেমন অন্ধকার হয়ে গিয়েছে।আলোর তো কত নাম থাকে- লাল আলো,নীল আলো,সবুজ আলো,সাদা আলো।এই আলোর নাম কি তাহলে অন্ধকার আলো!হয়তো নয়,হতে পারে এটা ম্লান আলো,ক্ষীণ আলো কিংবা নিষ্প্রভ আলো।কম আলোতেই ঘরের মেঝেতে বসে নীল রঙা ডায়েরীটা পড়ে শেষ করে কান্নায় ভেঙ্গে পরলো ইচ্ছেমতি।তার মনে হয়েছিল সে সব কিছু জানতো কিন্তু অন্তর ডায়েরী পড়ে বুঝতে পারলো সে কিছুই জানতোনা।মেঝে থেকে উঠে ডায়েরীটা সযত্নে আবলুসের মতো কালো আলমিরাতে ঢুকিয়ে লক করে রাখলো সে।সঙ্গে সঙ্গে ফোন বেজে উঠলো।স্ক্রিনে প্রান্ত নাম দেখেই দ্রুত কল রিসিভ করলো।কথা বলা শেষ করে গোল ফ্রেমের চশমাটা খুলে দুই হাতে চোখ মুছে আয়নার সামনে দাঁড়ালো।অগোছালো চুলগুলো সামান্য পরিপাটি করে নিয়ে ওড়নাটা ঠিকভাবে গায়ে জড়িয়ে ফোন হাতে নিয়ে ছোট ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে ঘর থেকে হন হন করে বেড়িয়ে গেল সে।সিঁড়ি থেকে নেমেই মায়ের মুখোমুখি পড়লো।ইচ্ছেমতির মা আসমা বেগম ওকে দেখেই বলল,
“এই অবেলায় কোথায় যাচ্ছিস?একটু পরই সন্ধ্যা নামবে।”

ইচ্ছেমতি মাকে পাশ কাটিয়ে যেতে যেতে মলিন মুখে বলল,
“হসপিটালে যাচ্ছি।নির্ভীক ভাইয়ার জ্ঞান ফিরেছে।আজকে রাতে অন্তর কাছে থাকবো।কুকুরটাকে নিয়ে চিন্তা করোনা ওখানেই আছে।”

ইচ্ছেমতি বাসা থেকে বেড়িয়ে গেল।আসমা বেগম কিছু বললেন না।ধীরে ধীরে হেঁটে গিয়ে সোফায় বসলেন।উনার বুক ভার হয়ে আসছে।

চলবে………!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here