#ভালোবাসি_আমি_যে_তোমায়
#Sohani_Simu
১১.
সূর্য বেশ উপরে উঠেছে।বাইরে চমৎকার রোদ।সকালে অন্তর ঘুম ভাঙতেই চোখ বুলালো চারপাশে।বেশ বড়সড় ঘর।একপাশে সোফা রাখা আছে অন্যপাশে ওয়াশরুম আর বেলকুনি।ঘরে দুটো সিঙ্গেল বেড।একটাতে অন্ত শুয়ে আছে দেয়ালের সাথে লাগানো আরেকটাতে একটা ছেলে শুয়ে ঘুমোচ্ছে।ঘরের দরজা লাগানো।অন্তর বেডের পাশে একটা স্যালাইন স্ট্যান্ড আছে,হাতে সুচ ফুটানো।অন্ত শুয়ে থেকেই ঠোঁট ফুলাতে লাগলো।কি করবে কিছু বুঝতে পারছেনা।সবকিছু আবছা লাগছে তারকাছে।ছেলেটাকে কিছু একটা বলে ডাকতে চাইছে কিন্তু কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।এক হাত দিয়ে চোখ কচলে ধীরে ধীরে বেডে হেলান দিয়ে বসলো।এত বড় দূর্ঘটনা ঘটলেও অন্তর এক্সটারনাল কোনো চোট নেই বললেই চলে,শুধু মাথার বাম পাশে সামান্য কেটে গিয়েছে।ওখানকার একটু চুল কেটে ব্যান্ডেজ করা আছে।অন্ত খেয়াল করলো ওর পাশে স্যালাইনের লম্বা পাইপে একটা সুইচ লাগানো আছে।ওটাই নাড়াচাড়া করতে লাগলো।একবার স্যালাইনের গতি বাড়িয়ে দিচ্ছে একবার কমিয়ে দিচ্ছে।কয়েকবার এমন করার পর স্যালাইনের গতি পুরো বাড়িয়ে দিয়ে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে একটু জোরে বলল,
‘নির্ভীক?নির্ভীক?নির্ভীক?নির্ভীক? নির্ভীক?’
পাঁচবার ডাকার পর জারিফ চোখ খুললো।ভোর রাতে অন্তকে কেবিনে শিফট করলে জারিফ অন্তর কাছেই থেকে যায়।দুদিন ঠিকমতো ঘুম হয়নি তার,শরীর ক্লান্ত থাকায় আর অন্ত একটু সুস্থ হওয়ায় গভীর ঘুম দিয়েছিল কিন্তু অন্তর ডাকাডাকিতে তার ঘুৃম ভেঙে যায়।ধরফর করে উঠে অন্তর কাছে যেতে যেতে বলে,
‘ছোটপাখি?উঠেছিস?’
অন্ত ভ্রু কুচকে আশেপাশে তাকিয়ে বলে,
‘কোথায় পাখি?’
জারিফের মুখ কালো হয়ে যায়।দীর্ঘশ্বাস ফেলে অন্তর বেডে বসতেই অন্ত পা গুটিয়ে একটু দূরে সরে যায়।বিরক্ত হয়ে জারিফের দিকে তাকায়।জারিফ বেড থেকে উঠে মন খারাপ করে বলে,
‘আমার নাম কি বল দেখি?’
অন্ত ভ্রু কুচকে বলে,
‘নির্ভীক।’
জারিফ একটু চিন্তিত হয়ে বলল,
‘না নির্ভীক নয় আরেকবার ট্রাই কর।’
অন্ত কোনো চেষ্টা করলো না।জারিফের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘নির্ভীক কোথায়?’
জারিফের মাথা ঘুরছে।নিজের বেডে বসে চোখ কচলাতে কচলাতে বলল,
‘নির্ভীক কে চিনিস তুই?আগে বল তোর নাম কি?’
অন্ত নিজের নাম বলল না।হঠাৎই খেয়াল করলো স্যালাইনের পাইপ বেয়ে রক্ত উঠছে।ভয় পেয়ে চেঁচিয়ে বলল,
‘ভাইয়া রক্ত!!’
জারিফ চমকে তাকায়।রক্তের বিষয়টাতে সে একদমই গুরুত্ব দিলনা।অন্ত তাকে ভাইয়া ডেকেছে এটা শুনেই সে অন্তর কাছে এসে ওর গাল ধরে আনন্দিত হয়ে বলল,
‘ছোটপাখি!সব মনে পরেছে তোর?আমাকে চিনতে পারছিস?’
অন্ত ভয় পেয়ে জারিফের হাত গাল থেকে সরিয়ে বেডের কোনায় গিয়ে জড়সড় হয়ে বসে।স্যালাইন শেষ হওয়ার কারনে পাইপ বেয়ে রক্ত উঠছিল।জারিফ অন্তর স্যালাইন খুলেই দৌড়ে বাহিরে যায়।পাশের কেবিনে নির্ভীক আর প্রান্ত শুয়ে ছিল।নির্ভীককে টেনে তুলে উত্তেজিত হয়ে বলল,
‘চাঁদ,ছোটপাখি এখনই নিজের থেকে আমাকে ভাইয়া বলে ডাকলো।ওর মনে হয় সব মনে পড়ে গেছে।’
জারিফকে যতটা উত্তেজিত দেখাচ্ছে নির্ভীকের মধ্যে উত্তেজনার ছিটে ফোটাও উদয় হলোনা।নির্ভীক মাথা ধরে বসে ঘুম ঘুম কন্ঠে বলল,
‘কয়টা বাজে?’
জারিফ অন্তর কাছে যেতে যেতে বলল,
‘তাড়াতাড়ি আয়,আমি ডক্টর ডাকছি।’
জারিফ তাড়াহুড়ো করে চলে গেল।নির্ভীক নিজের ফোন নিয়ে দেখে দশটা কুড়ি বাজে।কল লিস্টে যেয়ে সিয়াম নামের একটা বন্ধুকে কল দিয়ে বলে,
‘কোথায় তুই?’
সিয়াম:জ্যামে বসে আছি দোস্ত। হসপিটালের কাছেই।
নির্ভীক:অহ বেশি জ্যাম হলে হেঁটে চলে আয়।ড্রাইভার চাচা এসেছে না কে এসেছে?
সিয়াম:তোদের গাড়ি নিয়ে আসিনি।বাবার ড্রাইভারকে নিয়ে এসেছি।বাবা আছে সাথে,দুদিন থাকবে এখানে।কেন যে বাবার সাথে আসলাম যাওয়ার সময় বাসে করে যেতে হবে।
নির্ভীক:আয় তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা হয়ে যাবে।
নির্ভীক কল কেঁটে ওয়াশরুমে ঢুকে শাওয়ার নিয়ে একটা কালো প্যান্ট আর কালো শার্ট পরে নিল।বেডে বসে শার্টের হাতা ফোল্ড করে কালো ফিতার ঘড়ি পরলো।জুতোর ফিতে বেধে ফোন প্যান্টের পকেটে নিয়ে প্রান্তর কাছে গিয়ে ওর পিঠে ধুপ ধাপ দুটো কিল বসিয়ে দিয়ে বলল,
‘ওই উঠ।’
প্রান্ত উপুর হয়ে শুয়ে ছিল।নির্ভীকের কিল খেয়ে দুম করে চিৎ হয়ে হাত পা টান টান করতে করতে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলল,
‘অন্তর কি অবস্থা?অন্ত…’
প্রান্ত আর কিছু বলার আগেই নির্ভীক একহাতে ওর গলা চেপে ধরলো আর অন্যহাতে গাল চেপে ধরে রাগী কন্ঠে বলল,
‘আর একবার যদি অন্তর নাম মুখে নিয়েছিস আই সোয়্যার পটাশিয়াম সায়ানাইড এর জুস খাওয়াবো তোকে।সকালটা শুরু করলি আমার বউ এর নাম নিয়ে!এত সাহস তোর!’
প্রান্তর জীবন যায় যায় অবস্থা।দুই হাত দিয়ে নির্ভীকের হাত সরানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছেনা।দরজায় একটা কমবয়সী নার্স এসে ব্যস্ত হয়ে বলল,
‘স্যার আপনাদের মধ্যে নির্ভীক কে?এখনই পাশের কেবিনে চলুন।’
নির্ভীক প্রান্তকে ছেড়ে দিয়ে হন হন করে হাঁটা দিল কিন্তু দরজার কাছে গিয়ে তাকে থামতে হলো।নার্সটা দরজার মাঝখানে দাঁড়িয়ে নির্ভীকের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।নির্ভীক ভ্রু কুচকে রাগী কন্ঠে বলল,
‘কি ব্যাপার?সরে দাঁড়ান!’
নার্সটা ঘোরের মধ্যেই একটু সরে দাঁড়ালো।নির্ভীক নার্সটার উপর বিরক্ত হয়ে দ্রুত পাশের কেবিনে যেতে লাগলো।দরজা ঠেলে ভেতরে ঢোকার আগেই অন্তর চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ পেল।নির্ভীক চিন্তিত হয়ে দ্রুত দরজা ঠেলে ভেতরে গেল।ভেতরে এসে দেখে অন্ত বেডের উপর দাঁড়িয়ে চিৎকার করে ডক্টরকে বলছে,
‘মাথাব্যথা করছে কেন আমার?’
ডক্টর আবু তালহা অন্তর একহাত ধরার চেষ্টা করে বলছেন,
‘এই মেডিসিন খাও এখনই মাথাব্যথা চলে যাবে।”
নার্সের হাতে মেডিসিন। জারিফ বেডে পা ঝুলিয়ে মাথা ধরে বসে আছে।তার আর কিছু ভাল লাগছেনা।কিছুক্ষণ আগেই জারিফ ভেবেছিল অন্ত ঠিক হয়ে গেছে এখন এসব দেখে সে হতাশ।তারপরও মনের মধ্যে খুত খুত করছে এখনই বুঝি তার ছোটপাখি ঠিক হয়ে যাবে।।নির্ভীক অন্তর কাছে এগিয়ে যেতেই অন্ত নির্ভীককে দেখে খুশি হয়ে বলল,
‘ওই তো নির্ভীক চলে এসেছে।নির্ভীক আমার মাথাব্যথা করছে কেন?’
নির্ভীক কোনো কথা না বলে অন্তর কাছে এগিয়ে গেল।জোর করে অন্তর এক হাত ধরে ওকে বসিয়ে দিয়ে নম্র কন্ঠে বলল,
‘কারন তুমি এখন অসুস্থ।’
অন্ত বিরক্ত হয়ে নির্ভীকের হাত সরিয়ে দিয়ে বলল,
‘নির্ভীক কোথায়?কখন আসবে?’
নার্সটা মেডিসিন হাতে নিয়ে বিরক্ত হয়ে ডক্টরকে বলল,
‘স্যার পেশেন্টের মাথা খারাপ হয়ে গেছে।ওকে মেন্টাল হসপিটালে দেওয়ায় ভাল হবে না?’
নির্ভীক চরম রেগে গিয়ে স্যালাইনের স্ট্যান্ড ফেলে দিয়ে চেঁচিয়ে বলল,
‘শাট আপ এ্যান্ড গেটলস্ট ফ্রম হেয়ার।’
নির্ভীকের এমন ব্যবহারে অন্ত কেঁপে উঠেছে।ডক্টর তো রাতে নির্ভীকের হাতে মাইর খেয়ে এমনিতেই রেগেছিল এখন রিভেঞ্জ নেওয়ার একটু সুযোগ পেয়ে গেল।ডক্টর স্বাভাবিক কিন্তু বিদ্রূপ করা কন্ঠে বললেন,
‘আপনি রেগে যাচ্ছেন কেন?উনি ঠিকই বলেছেন।পেশেন্টকে মেন্টাল হসপিটালেই এডমিট করাতে হবে।দেখুন আমরা মানসিক রোগীর ডক্টর নয়।কেবিনে আসুন পেশেন্টকে রিলিজ দেওয়া হবে।’
নির্ভীক চোখ মুখ শক্ত করে ডক্টরের কথা শুনলো।ডক্টরের কথা শেষ হতেই নার্সের হাত থেকে মেডিসিন নিয়ে জোর করে অন্তকে খাইয়ে দিল।ডক্টরের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘শুনুন আপনি কোনো প্রেসক্রিপশন করবেন না।আপনিতো পাগলের ডক্টর না আপনার সাজেশনে কোনো কাজ হবেনা।কি করতে হবে বলুন এখনই ওর রিলিজ নিব।’
নির্ভীক যে সত্যি সত্যি রিলিজ নিতে চাইবে ডক্টর সেটা কল্পনাও করেননি।ডক্টর ভেবেছিলেন রোগীর এইরকম কন্ডিশন দেখে নির্ভীক উনার হাত-পা ধরে হলেও রোগীকে এখানে রাখতে চাইবে কিন্তু এখন তো ঘটনা উল্টো হয়ে গেল।উনি ভাবছেন সত্যি সত্যি রিলিজ দিলে সিনিয়র ডক্টরের কাছে উনাকে এর জন্য জবাবদিহিতা করতে হবে আর সিনিয়র ডক্টর তো এদের পরিচিত।ব্যাপারটা কতদূর যাবে কে জানে!ডক্টর কিছু না বলে বেড়িয়ে গেলেন সাথে নার্সও।জারিফ নির্ভীকের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর হয়ে বলল,
‘এখন ওর রিলিজ নিলে ভাল হবে?কালই ডক্টর বলেছিলেন কমপক্ষে পাঁচদিন এখানে থাকতে হবে আর ছয় মাস ডক্টরের আন্ডারে থাকতে হবে।’
নির্ভীক অন্তর বেডের কোনায় বসে বলল,
‘আজই আমি ওকে নিয়ে রাজশাহী চলে যাবো।’
-‘হোয়াট!’
অন্ত একবার জারিফের মুখের দিকে তাকাচ্ছে একবার নির্ভীকের।নির্ভীক শান্ত কন্ঠে বলল,
‘এতদিন আমি এখানে কিভাবে থাকবো বলো?দুমাস পর ফাইনাল এক্সাম আমার।ওখানেই ওর ট্রিটমেন্ট হবে।’
জারিফ ভ্রু কুচকে বলল,
‘তোকে থাকতে হবে তার তো কোনো মানে নেই।আমরা আছি তো।’
নির্ভীক ছোট শ্বাস ছেড়ে বলল,
‘আমি ওখানে একা থাকতে পারবোনা।’
জারিফ হালকা রেগে বলল,
‘তাই বলে তুই ওর ট্রিটমেন্ট করাতে দিবিনা?’
নির্ভীক বসা থেকে দাঁড়িয়ে বলল,
‘রাজশাহীতে ডক্টরের অভাব আছে নাকি?ওখানেও ভাল ডক্টর আছে,ডক্টর তালহার চেয়ে ভাল ডক্টর আছে আর ভাইয়া তো একমাসের মধ্যেই রাজশাহী পার্মানেন্ট হচ্ছে।বাসাতেই একটা নিউরোলজিস্ট থাকবে তাছাড়া আম্মুও আছে।কোনো প্রবলেম হবে না।’
জারিফ মানলো না কিন্তু এ ব্যাপারে আর কোনো কথাও এগুলো না কারন অন্তকে দেখতে আরাফসহ ফুল ফ্যামেলি চলে এসেছে।সবাইকে দেখে অন্তর অসস্তি হচ্ছে।ওর মনে হচ্ছে এদের সবাইকে চেনে কিন্তু কাউকে কিছু বলতে পাচ্ছেনা।কাউকে ওর কাছে যেতেও দিচ্ছেনা।আরাফকে দেখে অন্ত ওর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটা করলো,
‘তুমি নির্ভীক?’
আরাফ অন্তর সামনে বসে ভ্রু কুচকে নির্ভীকের দিকে তাকালো।নির্ভীক একহাত প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে অন্তর দিকে তাকিয়ে কাছেই দাঁড়িয়ে আছে।আরাফ অন্তর দিকে তাকিয়ে নির্ভীককে দেখিয়ে বলল,
‘ও নির্ভীক,আমি আরাফ।মনে পড়ছেনা আমাকে?’
অন্ত বিরক্ত হয়ে বলল,
‘হ্যা মনে পরছে।তোমাদের সবাইকেই চিনি। তুমি নির্ভীক।নির্ভীকের নাক লম্বা।তোমার নাকও লম্বা ওই যে ওই নির্ভীকের নাকও লম্বা।তোমরা দুজনই নির্ভীক?’
নির্ভীক মলিন হাসলো।আরাফ ভ্রু কুচকে অন্তর কথা শুনছিল এখন ভ্রু স্বাভাবিক করে মুচকি হেসে বলল,
‘আর কি মনে আছে?নির্ভীক কি করে?’
অন্ত মনে করার চেষ্টা করছে।কিছুই মনে পরছেনা দেখে নির্ভীকের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘নির্ভীক দাঁড়িয়ে থাকে।’
ইচ্ছেমতি এমন একটা সিরিয়াস মোমেন্টেও ফিক করে হেসে দিয়ে বলল,
‘আরে জানু,দাঁড়িয়ে তো সবাই থাকে এই দেখ আমিও দাঁড়িয়ে আছি।তুই অন্যকিছু বলার চেষ্টা কর যেমন নির্ভীক ভাইয়া রাগ করে,নির্ভীক ভাইয়া গান করে,নির্ভীক ভাইয়া তোকে পি….’
ইচ্ছেমতি আর কিছু বলার আগেই নির্ভীক ওকে থামিয়ে দেয়।নির্ভীক চায় না অন্য কারও কাছে গল্প শুনে অন্ত নির্ভীককে নিয়ে কল্পনা করুক।নির্ভীক চায় অন্ত ওর সাথে থেকে নতুন করে ওকে চিনুক।অন্ত নির্ভীকের দিকে তাকালো।ইচ্ছেমতির মুখে রাগ করার কথা শুনে কিছুক্ষণ আগে নার্সের উপর নির্ভীকের রেগে যাওয়ার কথা মনে পরে।অন্ত খুব স্বাভাবিকভাবেই আরাফের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘হ্যাঁ নির্ভীক ভাইয়া রাগ করে।ডক্টরেরর সাথে রেগে কথা বলে আর আমাকে জোর করে মেডিসিন খাওয়ায়।’
নির্ভীক মুচকি হাসলো।আরাফ এবার অন্তর হাত ধরতেই অন্ত পাশের টেবিলে রাখা এক গ্লাস পানি আরাফের দিকে ছুড়ে দেই।এতে কেউ খুশি নাহলেও নির্ভীক ঠিকই মুখ টিপে হেসেছে।অন্ত বার বার ওর বাবা-মার দিকে তাকাচ্ছে।অন্ত ভেবে পাচ্ছে না এই দুটো লোক এত কাঁদছে কেন।ইচ্ছেমতি অনেক বেশি কথা বলছে।বার বার এটা ওটা মনে করানোর চেষ্টা করছে।অন্ত সবাইকে বলছে তার সবকিছু মনে আছে কিন্তু সে কিছুই বলতে পারছেনা।একঘন্টার মধ্যেই অন্ত ক্লান্ত হয়ে সবার সামনেই ঘুমিয়ে যায়।এতক্ষণও ডক্টর রিলিজের কোনো ব্যবস্থা করেনি দেখে নির্ভীক প্রান্ত আর ওর আরেকটা বন্ধু সিয়ামকে ডক্টরের কাছে পাঠিয়ে দেয়।নির্ভীক জারিফের পাশে বসে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,
‘অন্ত আমার কাছেই থাকবে।আমি ওকে রাজশাহী নিয়ে যাবো।’
আরাফ রেগে যায়।রাগী কন্ঠে বলে,
‘হুয়াই?ওর নিজের ফ্যামেলি থাকতে তোর কাছে কেন থাকবে?তুই কে?’
নির্ভীক হাতের ফাইল থেকে একটা কাগজ জারিফের হাতে দিয়ে বলে,
‘আইনত আমরা হাসব্যান্ড ওয়াইফ,তাইনা ভাইয়া?’
জারিফ এক হাতে পেপার নিয়েছে অন্য হাতে নিজের কপাল ডলছে আর আড় চোখে নিজের বাবার দিকে তাকাচ্ছে।ব্যাপারটা যে এখনই এভাবে জানাজানি হয়ে যাবে সে বুঝতে পারেনি।একা একা এত বড় একটা ডিসিশন নেওয়ার জন্য এখন নিশ্চয় বাবা ওকে প্রচুর বকাবকি করবে,দুয়েকটা চড় থাপ্পড় ও দিতে পারে।বাবার রাগ সম্পর্কে ভালই ধারণা আছে তার কিন্তু জারিফের মনে হয়েছে ও যা করেছে একদম ঠিক কাজ করেছে।ছোটবেলা থেকেই জারিফ নির্ভীকের সাথে অন্তর বিয়ে দিতে চেয়েছে।জারিফের যেমনটা পছন্দ নির্ভীককে তেমন ভাবেই তৈরী করেছে।নির্ভীক ও অন্তকে পাবার জন্য জারিফের সব কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করছে।জারিফ বলেছে ক্যাডেটে পড় নির্ভীক ক্যাডেটেই পড়েছে,জারিফ বলেছে ইন্জিনিয়ারিং করতে হবে নির্ভীক বুয়েটে চান্স নিয়েছে,জারিফ বলেছে বুয়েটে নয় ঢাকায় ওর থাকা চলবেনা নির্ভীক পরের বার রুয়েটে চান্স নিয়েছে।নির্ভীককে যে কি কি ভাবে নাচিয়েছে সেটা শুধু জারিফ আর নির্ভীকই ভাল জানে।এক মাস আগে জারিফ যখন ওর মাকে নিয়ে অন্তর সাথে দেখা করতে রাজশাহীতে গিয়েছিল নির্ভীক একপ্রকার ভয় থেকে জোর করে অন্তকে বিয়ে করে নেই।জারিফ নিজে তার সাক্ষী।অন্ত তো এসবের কিছুই জানতোনা,পেপার এগিয়ে দিয়ে সিগনেচার করতে বলেছে অন্ত কিছু না দেখেই সিগনেচার করে দিয়েছে।জারিফ সহ সবাই বলছিল অন্ত এখন ঢাকাতেই থাকবে কিন্তু নির্ভীক একমুহূর্তে সবার মুখ বন্ধ করে দিল।
বিয়ের কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে গিয়েছে।আরাফ রাগী চোখে নির্ভীকের দিকে তাকালো।রাগে ওর ফর্সা মুখ লাল হয়ে গিয়েছে।আরাফ চেঁচিয়ে বলল,
‘আমি এসব মানিনা।মানিনা এসব আমি।অন্ত শুধু আমার।’
আরাফের চিৎকার শুনে অন্ত হকচকিয়ে লাফিয়ে উঠে।হঠাৎ এভাবে ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ায় তার ব্রেনে চাপ পরেছে।খুব অস্বস্তি হচ্ছে।দুই হাতে মাথা ধরে বসতে না বসতেই সেন্সলেস হয়ে গেল।সবাই ভয় পেয়ে যায়।ডক্টর এসে অন্তকে চেক আপ করে রাগী কন্ঠে বললেন,
‘আপনাদের আগেই নিষেধ করেছিলাম এত তাড়াহুড়ো করবেন না।আপনারা ওর কাছে মানসিক চাপ ছাড়া আর কিছুই না।সবেমাত্র ওর ট্রিটমেন্ট শুরু হয়েছে,এত চাপ নেওয়ার সময় এখনও হয়নি।ঔষধের একটা ডোজ কমপ্লিট হলে ও একটু চাপ নিতে পারতো।আপনারা মাথায় রাখবেন ওর ব্রেনে ক্লট আছে এভাবে চাপ পরলে নতুন করে রক্তক্ষরণ হবে,নাক কান দিয়ে রক্ত আসবে।এমনটা হলে ওকে বাঁচানো সম্ভব হবে না।’
ডক্টরেরর কথা শুনে নির্ভীক রেগে সবাইকে রুম থেকে বের করে দিয়েছে।অন্তর বাবা-মা বিয়ে নিয়ে কোনো রিয়েক্ট করেনি কারন তারা জানতো সব ঠিক থাকলে গত দিন জারিফের বিয়ের আগে নির্ভীক আর অন্তর বিয়ে হতো।আরাফের কথা শুনে নির্ভীক যথেষ্ট অবাক হয়েছে।নির্ভীক জানতো জারিফের মতো আরাফও অন্তকে নিজের বোন ভাবে সেজন্যই তো আরাফ সেদিন নির্ভীক আর অন্তকে কাছাকাছি দেখে রেগে গিয়েছিল।নির্ভীক ভেবেছিল যেকোনো ভাই তার বোনকে অন্য কারো সাথে দেখলে রেগে যাবে এটাই স্বাভাবিক।জারিফ সবকিছু জানা শর্তেও নির্ভীককে অন্তর পাশে দেখলে রেগে যেত তাই আরাফের রাগ করাটা নির্ভীকের কাছে একদম স্বাভাবিক মনে হয়েছে।
নির্ভীক খুব অস্থির হয়ে গেছে।রাগ হচ্ছে খুব।কিছুতেই মানতে পারছেনা তার ভালোবাসাকে অন্যকেউ ভালোবাসছে।আরাফকে খুন করতে ইচ্ছে করছে ওর।বার বার চোখের সামনে ভেসে উঠছে আরাফ সেদিন রাজশাহী যেয়ে অন্তকে ওর সামনে জড়িয়ে ধরেছিল।অন্তকে আরাফের বুকে দেখে নির্ভীকের খুব রাগ হয়েছিল।নির্ভীক সেদিন কোনো রিয়েক্ট করেনি কিন্তু আজ হসপিটালের এই ছোট কেবিনটাতে অনেক কিছু করে ফেলেছে।
চলবে…………..