ভালোবাসি আমি যে তোমায় ২*পর্ব:১৫

0
1513

#ভালোবাসি_আমি_যে_তোমায়_২
#Sohani_Simu

১২.

সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে।রাস্তায় প্রচুর যানজট।হলুদ আর সাদা হেড লাইট জ্বালিয়ে একদিক থেকে আরেকদিকে ছুটে চলছে ছোট বড় অসংখ্য গাড়ি।ল্যাম্পপোস্টের আলোয় অনেক দূর পর্যন্ত পরিষ্কার রাস্তা দেখা যাচ্ছে। অন্ত গাড়ির জানালায় মাথা ঠেকিয়ে ব্যস্ত রাস্তা দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে গিয়েছে।নির্ভীক অন্তকে নিয়ে রাজশাহী যাচ্ছে।জারিফই ওদের যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছে।আরাফের কথা শুনে জারিফের মনে হয়েছে অন্তকে এখন সরিয়ে রাখায় ভাল।আরাফ আর নির্ভীকের মধ্যে যেন কোন ঝামেলা না হয় সেজন্যই জারিফ অন্তকে নির্ভীকের সাথে পাঠিয়ে দিল।জারিফের কাছে আরাফ কিংবা নির্ভীক কেউ কোন অংশে কম নয়,দুজনের স্থানই মনের মণি কোঠায়।নির্ভীক,অন্ত,প্রান্ত আর সিয়াম জারিফের ড্রাইভারকে নিয়ে রাজশাহী যাচ্ছে।ফ্রন্ট সিটে সিয়াম বসেছে আর পেছনের তিন সিটের মাঝখানে নির্ভীক আর দুপাশে অন্ত আর প্রান্ত বসেছে।অন্ত মোটামুটি দুজনার সিট নিয়ে বসে আছে কারন ও কিছুতেই চাইনা ওকে কেউ স্পর্শ করুক।ব্যাপারটা ওর কাছে খুব অসস্তিকর।ছোটবেলায় অন্ত এমনটা করেছে, পরিচিত কয়েকজন ছাড়া কাউকে হাত দিতে দিত না এমনকি ওর দিকে কাউকে তাকাতেও দিত না।ছোটবেলার সেসব স্মৃতি মনে না থাকলেও অবচেতন মন অন্তকে এমনটা করতে বাধ্য করছে।
নির্ভীক আর প্রান্ত এতক্ষণ চাপাচাপি করে বসে ছিল। অন্ত ঘুমিয়ে গিয়েছে দেখে নির্ভীক অন্তর দিকে এগিয়ে গিয়ে খুব সাবধানে অন্তকে একপাশ থেকে জড়িয়ে ধরে অন্তর মাথা নিজের বুকে রাখলো।
অন্তর বাম হাত নিজের ডান হাতের মধ্যে নিয়ে ফিসফিস করে বলল,
‘আমার ঘুমন্ত পরী।’

অন্তর কপালে আর হাতে ঠোঁট ছোঁয়াতেই প্রান্ত নির্ভীকের পায়ে নিজের পা দিয়ে ধাক্কা দিয়ে বলল,
‘কি করছিস?খেয়ে ফেলবি নাকি হাতটা?কন্ট্রোল ইউর সেল্ফ ইয়ার।অন্তর সিটেই ভাল ঘুম হবে।ওর সিট একটু হেলিয়ে দে।ঘুম ভেঙ্গে যদি দেখে তুই ওকে এভাবে চেপে ধরে আছিস কি হবে ভাবতে পারছিস?’

নির্ভীক কনুই দিয়ে প্রান্তকে গুতো দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে ফিসফিস করে বলল,

‘ডোন্ট কল হার অন্ত।চল রাজশাহী,তোকে আজ…’

প্রান্ত হাসতে হাসতে ফিসফিস করে বলল,
‘জ্বলছে নাকি ভাই?দেখি কোথায় জ্বলছে?জ্বলে লাভ নেই আমি তো অন্তই বলবো।অন্ত,অন্ত,অন্ত।’

নির্ভীক রাগী চোখে প্রান্তর দিকে তাকালো।এই মুহূর্তে প্রান্তকে গলাটিপে মারতে ইচ্ছে করছে তার কিন্তু অন্তর ঘুম ভেঙে যাওয়ার ভয়ে চুপ করে থাকলো।সিয়াম পেছনে তাকিয়ে বলল,
‘অন্ত তো তোকে ভুলে গেল এখন কি করবি?’

নির্ভীক রাগী মুখ করে ইশারায় সিয়ামকে চুপ থাকতে বলল।এখন সে কথা বলে অন্তর ঘুম ভাঙাতে চায়না কিন্তু বার বার অন্ত অন্ত করায় এই দুটোকে সে উচিত শিক্ষা দিবে।সিয়াম আর প্রান্ত চুপ করে জানালা দিয়ে বাহিয়ে তাকিয়ে থাকলো।নির্ভীক অন্তকে জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করলো।সঙ্গে সঙ্গে মাথার মধ্যে অজস্র চিন্তা গিজগিজ করতে লাগলো।সিটে মাথা এলিয়ে দিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিরবির করে বলল,

‘ আ’ম নট জেলাস ওকে?ইউ আর জাস্ট মাইন।আই নো হোয়াট আই হ্যাভ টু ডু নাউ এ্যান্ড আই উইল নেভার লেট ইউ গো এনিহোয়্যার।’

ডাইনিং টেবিলে বসে বাবা-মার সাথে ডিনার করছে ইচ্ছেমতি।সাদা পোর্সেলিনের প্লেটে হাতে গুনা কয়েকটা ভাত নিয়ে ডান হাতের তর্জনী আঙুল দিয়ে নাড়াচাড়া করছে।একটা একটা করে ভাত সাজিয়ে ইংরেজি পি লেটার লিখতেই কাজের মেয়ে ইচ্ছেমতির প্লেটে ডাল ঢেলে দিল।ইচ্ছেমতি রেগে কাজের মেয়ের দিকে তাকালো।কাজের মেয়েটি তাকে কোনো পাত্তা না দিয়ে ইচ্ছেমতির মাকে একটু ডাল দিল।ইচ্ছেমতি আবার প্লেটের দিকে তাকিয়ে ডালের মধ্যে ভাত খুঁজতে লাগলো।কিছুক্ষণ পর বাবার খাওয়া শেষ হতেই ইচ্ছেমতি প্লেটের দিকে দৃষ্টি স্থির রেখে বলল,

‘বাবা?তোমার সাথে আমার দুটো কথা আছে।’

ইচ্ছেমতির বাবা টেবিল ছেড়ে উঠে বেসিনে গিয়ে হাত ধুতে ধুতে বলল,
‘মাত্র দুটো কথা?আমার মেয়ে তো দুটো কথা বলে না।’

ইচ্ছেমতি বাবার দিকে তাকিয়ে বলল,
‘আমার প্রথম কথা জারিফ ভাইয়া যখন বিয়ে করে নিচ্ছে ভাইয়াকেও নিপা আপুর সাথে বিয়ে করিয়ে দাও।আর আমার দ্বিতীয় কথা তোমার বন্ধুর নাকি কোন ছেলে আছে আম্মু বলছিল তার সাথে একবার দেখা করতে।আমি কারও সাথে দেখা করবো না।আমি প্রান্তকে ভালোবাসি।’

ইচ্ছেমতি আর এক মুহূর্তও সেখানে না দাঁড়িয়ে নিজের রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দিল।জোরে জোরে কয়েকবার শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ে ওয়াশরুমে যেয়ে হাত ধুয়ে রুমে এসে ফোন নিয়ে প্রান্তকে ফোন দিল।প্রান্ত বার বার ফোন কেঁটে দিচ্ছে দেখে মেসেজে লিখলো,

‘কল ধরছেন না কেন?এত কিসের অহংকার আপনার?আমার সাথে কথা বললে কি আপনার মুখ ক্ষয় হয়ে যাবে?নাকি ভয় পাচ্ছেন আমাকে?কথা বললেই আমার প্রেমে পরে যাবেন সেই ভয়ে কল রিসিভ করছেন না?’

মেসেজ সেন্ড হওয়ার সাথে সাথেই প্রান্তর একটা ছোট্ট মেসেজ আসলো,
‘আমার গার্লফ্রেন্ড আছে।’

ইচ্ছেমতি থম মেরে প্রান্তর মেসেজের দিকে কয়েকসেকেন্ড তাকিয়ে থেকে দুইহাতে মেসেজ টাইপ করে পাঠালো,

‘আপনার বউ থাকলেও আমার কোনো প্রবলেম নেই।যদি অন্যপক্ষের কয়েকটা বাচ্চাও থাকে তাতেও আমার কোনো প্রবলেম নেই।আপনি কল রিসিভ করুন।’

প্রান্ত প্রায় পাঁচমিনিট পর মেসেজের রিপ্লাই করলো,
‘আর ইউ ক্রেজি?’

ইচ্ছেমতি মুচকি হেসে লিখলো,
‘ক্রেজিনেস নয়,এটা হলো ম্যাডনেস ফর লাভ।শুনুন আজকে রাতের মধ্যে যদি আমাকে ফোন না দেন কাল সকালে রাজশাহী যেয়ে আপনার গার্লফ্রেন্ডের সব চুল টেনে ছিড়বো বলে দিলাম।’

অনেকক্ষণ প্রান্তর আর কোনো রিপ্লাই না পেয়ে ইচ্ছেমতি বিছানায় গা এলিয়ে দিল।সিলিং এর দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল,’ বাবাকে প্রান্তর কথা বলা একদমই উচিত হয়নি।বাবা নিশ্চয় এখন প্রান্তর ব্যাপারে খোঁজ নিবে।বাবার নির্ঘাত প্রান্তকে পছন্দ হবে।প্রান্তর বাবাকে বিয়ের কথাও বলে ফেলতে পারে।প্রান্তর বাবা তো আমার বাবার মতো সহজ সরল মানুষ নয়,অনেক কুটিল মানুষ।বাই এনি চান্স সরল বাবা আর কুটিল বাবার মধ্যে যদি বিবাদ লেগে যায় আর প্রান্ত যদি এসব জানতে পারে উনি তাহলে আমাকে পদ্মায় খুসে ধরে মেরে ফেলবেন।নো নো নো এটা হতে পারেনা।’

ভবিষ্যৎ কল্পনা করে ইচ্ছেমতি দৌঁড়ে বাবার ঘরে গেল।যা ভেবেছিল তাই।ইচ্ছেমতির বাবা নির্ভীকের বাবার কাছে ফোন দিয়ে প্রান্ত কিসে পড়ে প্রান্তর বাবা কি করে এসব বলছিলেন।ইচ্ছেমতির বাবা সহজ সরল মানুষ,ছোট-খাটো হিসেব নিকেশও তিনি একদম ছিলছিলে করে রাখেন আর নিজের ছেলে-মেয়ের ব্যাপারে তিনি অত্যন্ত যত্নশীল।ইচ্ছেমতি বাবার হাত থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে কল কেটে রাগী কন্ঠে বলল,

‘উফ্ বাবা তুমি অ্যাঙ্কেলকে এসব কি বলছিলে?আমি তো মজা করছিলাম।আমি কাউকে ভালো টালো বাসিনা।আমি শুধু দেখছিলাম তোমার রিয়েকশনটা কেমন হয়।আমার এক ফ্রেন্ড আছে ও একবার ওর বাবাকে একটা ছেলের কথা বলেছিল ওর বাবা তখন ওকে চড় মেরেছিল।আমি পরীক্ষা করে দেখছিলাম তুমিও চড়টড় মারো কিনা কিন্তু তুমি মারো নি।তুমি অনেক ভাল বাবা।আই লাভ ইউ।’

মুখস্থ বিদ্যার মতো ফর ফর করে কথা গুলো বলে ইচ্ছেমতি তার বাবাকে জড়িয়ে ধরলো।বাবা সস্তির শ্বাস ফেলে বললেন,
‘আমি জানতাম আমার মেয়ে এমন কিছুই করবেনা।দেখেছো আসমা?তুমি শুধু শুধু আমার মেয়েকে বকছিলে।আরে আমি তো জানি আমার মেয়ে কেমন।সে কোনদিন বাবার কথার অবাধ্য হবেনা।আমার পছন্দ করা ছেলেকেই বিয়ে করবে।আমার ইচ্ছে পূরণ করবে আমার ইচ্ছেমতি।’

বাবার কথা শুনে ইচ্ছেমতির মন খারাপ হয়ে গেল।ইচ্ছেমতির মা বললেন,
‘রাখো তোমার ইচ্ছে পূরণ। জারিফের সাথে সাথে এদের দুটোকেও বিয়ে করিয়ে দাও।আমি ভাবিকে বলে দিই নিপাকে নিয়ে চলে আসুক আর তুমিও তোমার বন্ধুকে বল।ছেলেটার মাথাতো গেছে মেয়েটা ভাল থাকতেই বিয়ে করিয়ে দাও।শুভ কাজে দেরি না করাই ভাল।’

ইচ্ছেমতি কান্নার সুরে বলল,
‘বাবা….দেখো আম্মু কিসব বলছে।আমি এখন বিয়ে করবোনা।’

বাবা ইচ্ছেমতির মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে ইচ্ছেমতির মায়ের দিকে তাকিয়ে বললেন,
‘আহ চুপ কর তো।মেয়ের বিয়ের বয়স হয়েছে নাকি?আর তাছাড়াও আমার মেয়ে আমার মতো হয়েছে।সে কোন ভুল করবেনা।তোমরা মা-ছেলে মিলে তো সবসময় আমার টেনশন বাড়িয়ে দাও কিন্তু আমার মেয়ে একনিমিষেই আমার সব টেনশন দূর করে দেয়।জানোতো,ভাল মানুষের উপর আল্লাহ্‌র নিয়ামত থাকে।আমার মেয়ে আমার কাছে আল্লাহর নিয়ামত।’

ইচ্ছেমতির মা বিছানায় বসে ছিল।ইচ্ছেমতির বাবার দিকে তেড়ে এসে রাগী কন্ঠে বলল,

‘এই তুমি কি বলতে চাইছো?আমি আর আমার ছেলে তোমাকে টেনশন দিই?কে ভাল মামুষ?তোমাকে বিয়ে করে আমার জীবনটায় শেষ হয়ে গেছে………….’

ইচ্ছেমতির মা কথা চালিয়ে গেলেন।ইচ্ছেমতির বাবার চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার না করে তিনি থামবেন না।ইচ্ছেমতি দুই হাতে কান চেপে নিজের রুমে চলে গেল।ইচ্ছেমতির বাবা টেবিল থেকে গ্লাস নিয়ে ঢাকনা সরিয়ে ঢক ঢক করে পানি খেয়ে গ্লাসটা যথা স্থানে রেখে শুয়ে পরলেন।

রাত এগারোটা।জারিফদের বাসার ছাদে খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে আছে জারিফ আর আরাফ।চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার।ছাদের দরজার কাছে ষাট ওয়াটের একটা বাল্ব জ্বলছে।বাল্বের সাদা আলোর জন্য চারপাশটা আরো বেশি অন্ধকার দেখাচ্ছে।আরাফ দুই হাত পকেটে ঢুকিয়ে সব অন্ধকার ছাপিয়ে দূরের আকাশে তাকিয়ে আছে।জারিফ আরাফের পেছনেই দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে।কথা বলা শেষে জারিফ ফোনের দিকে তাকিয়ে বলল,

‘ওরা রাজশাহী পৌঁছে গেছে।’

আরাফ কিছু না বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।জারিফ ফোন পকেটে ঢুকিয়ে দুধাপ এগিয়ে গিয়ে আরাফের কাঁধে হাত রেখে বলল,

‘চাঁদ ওকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে।’

আরাফ তাচ্ছিল্য হাসলো পর মুহূর্তেই চোখ মুখ শক্ত করে হাঁটা দিল।জারিফ ওর এক হাত ধরে বলল,
‘কোথায় যাচ্ছিস?’

আরাফ হাত ঝারা দিয়ে জারিফের হাত সরিয়ে দিয়ে বলল,
‘রাজশাহী।’

জারিফ আরাফের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
‘তুই ওখানে যাবিনা।’

আরাফ জারিফের বুকে ধাক্কা দিয়ে সামনে থেকে সরিয়ে রেগে বলল,
‘তুই একটা ছোটলোক,জঘন্য।কি করে পারলি ওকে অন্য কোনো ছেলের সাথে পাঠিয়ে দিতে?তুই কি ভাবছিস চাঁদ ওকে কিছু বলবেনা?একা পেয়ে খুবলে খাবে,নষ্ট করে ফেলবে ওকে।’

জারিফ শক্ত গলায় বলল,
‘চাঁদকে আমি বিশ্বাস করি।ও এমন কিছু করবেনা।করলে তুই করবি।তুই আমার বিশ্বাস ভেঙ্গেছিস।আমার বোনের দিকে খারাপ নজরে তাকিয়েছিস।’

আরাফ রেগে জারিফের গলার কাছে টিশার্ট খামছে ধরে বলল,
‘একদম বাজে কথা বলবিনা।’

জারিফ আরাফের হাত সরিয়ে দিয়ে চোখ মুখ শক্ত করে বলল,
‘ঘৃণা হচ্ছে তোকে আমার।’

আরাফ কিছু না বলে হাঁটা দিল।জারিফ রেগে চেঁচিয়ে বলল,
‘তুই যদি ওদের কাছে যাস আমাদের সম্পর্ক এখানেই শেষ।’

জারিফের কথা শুনে আরাফ ছাদের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে গেল।হাত মুঠো করে ছাদের দরজায় জোরে ঘুঁষি মেরে হন হন করে চলে গেল।জারিফ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রেলিং এ দুই হাত রেখে নিচে ঝুকে থাকলো।তিন চারমিনিট পর আরাফকে গাড়ি নিয়ে বের হয়ে যেতে দেখে চোয়াল শক্ত করে নিচে নিজের রুমে চলে আসলো।

ঘুমন্ত অন্তকে বিছানায় শুয়ে দিয়ে নির্ভীক ওর বাবা-মার দিকে তাকালো।নির্ভীকের মা অন্তর পাশে বসে অন্তর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে নির্ভীকের দিকে তাকিয়ে বললেন,

‘হসপিটালে আমি ডক্টরদের সাথে কথা বলেছি।কালই ওকে ওখানে এডমিট করিয়ে দিব।আমি সব সময় থাকতে পারবো সমস্যা নেই।’

নির্ভীক ব্যাগ থেকে অন্তর সব রিপোর্ট,প্রেশক্রিপশন,মেডিসিন,সিটি স্ক্যান ইমেজ বের করতে করতে বলল,

‘ভাইয়া হসপিটালে দিতে বলেছে দেখে দিচ্ছি নাহলে কিছুতেই দিতাম না।শুধু মাত্র পাঁচদিন এর বেশি একদিনও নয়।’

নির্ভীক মায়ের হাতে রিপোর্ট ধরিয়ে দিয়ে বাবার সামনে দাঁড়িয়ে চিন্তিত হয়ে বলল,
‘ভার্সিটিতে ওর কি ব্যবস্থা করা হবে বলো তো?এই অবস্থায় পড়াশুনা কিছু করতে পারবেনা।সকালের কথা বিকেল পর্যন্ত মনে রাখতে পারছেনা।’

নির্ভীকের বাবা চোখ থেকে চশমা খুলতে খুলতে বললেন,
‘অন্ত মা সুস্থ হোক।ভার্সিটির দিকটা আমি সামলে নিব।আশা করি ফাইনাল সেমিস্টারের আগেই সব ঠিক হয়ে যাবে।’

নির্ভীক অন্তর দিকে তাকিয়ে ওর কাছে এগিয়ে গিয়ে মাকে বলল,

‘ওর কাছে কে থাকবে?তুমি নাহলে খালা কেউ একজন থাকো।ইচ্ছেমতি আসতে চাইলো কিন্তু ভাইয়া বিয়ের জন্য আসতে দিলনা।সামনের ফ্রাইডে বিয়ে।যাবা তোমরা?’

নির্ভীকের বাবা-মা যাওয়া না যাওয়া এত আগে থেকে কিছু বলতে পারলেন না।শুক্রবার আসতে এখনও চারদিন বাকি।ব্যস্ত মানুষরা কাজ ফেলে হুট হাট কোথাও যেতে পারেনা।দরজার কাছে প্রান্ত আর সিয়ামকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নির্ভীক শার্টের ফোল্ড করা হাতা উপরে তুলতে তুলতে ওদের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।প্রান্ত উল্টো দিকে ঘুরে হাঁটতে হাঁটতে বলল,

‘ওই সিয়াম চল,আজকে আমাদের বাসায় থাকবি।’

সিয়াম দুই হাত প্রসারিত করে আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে বলল,
‘ধূর আজকে আর কোথাও যাবোনা,এখানেই থাকবো।এত জার্নি করে মাথা খালি দুলছে।মনে হচ্ছে এখনও গাড়িতেই বসে আছি।অন্ত…’

আর কিছু বলার আগেই নির্ভীক সিয়ামের পেটে ঘুঁষি দেই।প্রান্ত তো এক দৌঁড় সিয়ামও পেট ধরে দৌঁড়।নির্ভীক ওদের পেছনে দ্রুত হাঁটতে হাঁটতে রেগে বলল,
‘ওই দাঁড়া বলছি।আজকে তোদের দুটোকে থার্ড ডিগ্রী দিব।টাইগার?টাইগার??’

নির্ভীকের কুকুর নির্ভীকের রুমের সোফায় শুয়ে ঘুমোচ্ছিল।নির্ভীকের ডাক শুনতে পেয়েই এক লাফে উঠে দৌঁড়ে নির্ভীকের কাছে আসলো।নির্ভীক প্রান্তর দিকে ইশারা করতেই কুকুরটা প্রান্তর দিকে যেতে লাগলো।প্রান্ত সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বলল,

‘হেই টাইগার তুই তো আচ্ছা হারামি রে।দুদিন আগেও আমার বাসায় থেকেছিস খেয়েসিছ আর আজকে আমাকে কামড়াতে আসছিস।দেখে নেবো তোকে শালা।অন্তর ঘুম ভাঙলেই তো নির্ভীক তোকে আমাদের বাসায় রেখে আসবে।তখন দেখিস তোর কি অবস্থা করি।’

প্রান্ত আর সিয়াম সিঁড়ি থেকে নামতেই নির্ভীক উপর থেকে বলল,
‘টাইগারকে তোদের বাসায় নিয়ে যা।ওর যদি কোনো রকম অসুবিধা হয় আই সোয়্যার তোদের মেরে টাইগারকে দিয়ে খাওয়াবো।’

টাইগার গিয়ে সিয়ামের পায়ে গা ঘেষতে লাগলো।প্রান্ত খুশি হয়ে নির্ভীকের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘টাইগার সিয়ামকে চুজ করেছে।ও সিয়ামের সাথে যাবে।’

সিয়াম টাইগারকে তুলে নিয়ে প্রান্তর কোলে দিয়ে বলল,
‘পাগল নাকি!কুত্তা নিয়ে বাসায় ঢুকলে আম্মু মেরে পিঠের ছাল তুলে নিবে আর তাছাড়াও আমি আজ তোদের বাসায় থাকবো।’

প্রান্ত বেচারা দুঃখী ফেইস করে টাইগারকে কোলে নিয়ে হাঁটা দিল।সিয়াম নির্ভীকের দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলিয়ে বলল,
‘আজকে আসি? কালকে অন্তকে দেখতে আবার আসবো ওকে?’

নির্ভীক তেড়ে আসছে দেখে সিয়াম দৌঁড়ে বাসা থেকে বেড়িয়ে গেল।নির্ভীক নিচে এসে সোফায় বসে গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে কপালের চুলগুলো এক হাতে মাথার উপর চেপে ধরলো।সস্তির শ্বাস ফেলে সিলিং এর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,

‘আমাকে ভালোবাসার পর কিছুই ঠিক থাকবেনা তোমার পিচ্চি, শুধু কটাদিন টাইম দাও আমাকে।না না আমিই কটা দিন টাইম দিলাম তোমাকে।’

চলবে…………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here