ভালোবাসি আমি যে তোমায় ২*পর্ব:১৭

0
1514

#ভালোবাসি_আমি_যে_তোমায়_২
#Sohani_Simu

১৪.

জুম্মার নামাজ শেষে দুই পরিবারের সবাইকে সাক্ষী রেখে আল্লাহর কালাম মেনে জারিফ আর কুহেলী বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হল।বাসায় প্রচুর আত্মীয়স্বজন এসেছে।বড়রা দুপুরের খাওয়া শেষ করে শুয়ে একটু বিশ্রাম নেওয়ার জন্য যে যার মতো জায়গা করে নিয়েছে আর ছোট সদস্যগুলো অর্থাৎ জারিফ আর কুহেলীর কাজিনরা ড্রইং রুমে হৈচৈয়ের চূড়ান্ত করছে।সবাইকে এত আনন্দ করতে দেখে জারিফ মুখ মলিন করল।মনে মনে ভাবলো তার ছোটপাখি এখানে থাকলে নিশ্চয় সবার সাথে অনেক মজা করতো।শান্তশিষ্ট ছোটপাখিকে সবাই জ্বালাতন করতো আর ছোটপাখি তাকে বলতো ভাইয়া দেখ এরা সবাই আমাকে কুড়িয়ে পাওয়া বলছে,ভাইয়া দেখ আপু আবার আমার মাথায় চাটি মেরেছে,আপু সবাইকে সাজিয়ে দিচ্ছে আমাকে দিচ্ছে না।জারিফ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফোন হাতে নিয়ে উঠে গেল।নিজের রুমে গিয়ে দেখে ডেকোরেশনের লোকেরা ফুল দিয়ে বাসরঘর সাজাচ্ছে।জারিফ সেখানে একমুহূর্তও না দাঁড়িয়ে পাশের রুমে গিয়ে নির্ভীকের কাছে ফোন দিল।

‘ছোটপাখি কি করছে এখন।’

‘বাসায় আছে,ভাল আছে ডোন্ট ওরি।আগের চেয়ে একটু স্বাভাবিক হয়েছে।সব সময় এটা ওটা কোয়েশ্চেন করছে।আম্মু সকালে ডক্টরের কাছে নিয়ে গিয়েছিল ডক্টর চেক আপ করে সব ঠিক আছে বলেছে।’

‘তুই বাসায় যাবি কবে?’

‘বাসায় যাই তো।যখনই ইচ্ছে করে তখনই যাই কিন্তু ওকে লুকিয়ে যায়।তিনদিনে একবারও আমার কথা কাউকে জিজ্ঞেস করেনি।’

‘এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেল কিভাবে?’

‘কিছু মনে না থাকলে তো ভুলেই যাবে তাইনা?আগে প্রত্যেকবার ঘুম ভাঙার পর আমাকে দেখছিল কথা বলছিল তাই আমাকে মনে ছিল।এখন দেখা নেই কথাও নেই তাই ভুলে গিয়েছে।বাই দ্যা ওয়ে কাল কখন আসছো?’

‘বিকেলের দিকে পৌঁছে যাব।আরাফ যেতে চাইছে।’

‘অহ নিয়ে আসবা?আসলে নিয়ে আসো,নো প্রবলেম।’

‘কি বলছিস?'(অবাক হয়ে)

‘হুম নিয়ে আসো।’

‘পাগল হয়ে গিয়েছিস?আরাফ আমাকে ক্লিয়ারলি বলেছে ও ছোটপাখিকেই বিয়ে করবে।আজকে আরাফকে নিপার সাথে বিয়ে দিতে চেয়েছিল।এসব নিয়ে যথেষ্ট অশান্তি হয়েছে।তারপরও তুই বলবি ওকে নিয়ে যাব?’

‘হ্যাঁ হ্যাঁ নিয়ে আসো।আচ্ছা রাখছি,রাস্তায় আছি আমি এখন।’
‘ওকে।’

কল কেটে জারিফ ভ্রু কুচকে বুঝার চেষ্টা করছে নির্ভীক কেন আরাফকে নিয়ে যেতে বলছে।সে জানে নির্ভীক অন্তর ব্যাপারে অনেক যত্নশীল,অন্তর কোন ক্ষতি সে হতে দিবেনা কিন্তু আরাফকে নিয়ে যাওয়া তার কাছে ঠিক মনে হচ্ছে না অবশ্য আরাফকে আটকানোর সাধ্যও তার নেই।দেখা যাচ্ছে আরাফ ওদের আগেই রাজশাহী যেয়ে বসে আছে।এমনটা হতেই পারে।জারিফের আগে যেন আরাফ সেখানে না যেতে পারে সেজন্য সে আরাফকে ফোন করলো।দুবার বাজার পরও আরাফ কল রিসিভ করলো না।কি করছে কে জানে।

সন্ধ্যা আগত প্রায়।সূর্য ডিমের কুসুমের রঙ ধারন করেছে।নিচের দিকে কিছু অংশ মিলিয়েও গিয়েছে,পুরোটা মিলতে বড় জোর দুমিনিট সময় লাগতে পারে।আরাফ ছাদে দাঁড়িয়ে রেলিংয়ে হাত রেখে সূর্যের ডুবে যাওয়া দেখছে।বামহাতের আঙুলে জলন্ত সিগারেট।ইউএস থাকতে বন্ধুদের দেখাদেখি মাঝে মাঝে একটু স্মোক করতো আজকে আবার করছে।আজকে তার মন ভাল নেই।বাবা-মার সাথে প্রচুর কথা কাটাকাটি হয়েছে।একটা ভালোবাসা আকড়ে ধরতে অন্য ভালোবাসা গুলো বাধঁনহারা হয়ে যাচ্ছে।অন্তকে ছাড়া সে যেমন বাঁচতে পারবেনা তেমনই নিজের বাবা-মাকেও কষ্ট পেতে দেখতে পারবেনা কিন্তু তার কিছু করার নেই।নিপা কে সে কিছুতেই বিয়ে করতে পারবেনা।কারও পায়ের শব্দ পেয়ে আরাফ পেছনে তাকালো।কলাপাতা রঙের সাদামাটা থ্রিপিস পরা মেয়েকে দেখেই সে উল্টো দিকে ঘুরে দাঁড়ালো।নিপা কয়েকধাপ এগিয়ে এসে আরাফের পাশে দাঁড়ালো।স্নিগ্ধ,শান্ত মুখটা কেমন মলিন হয়ে আছে।গোলাপি পাতলা ঠোঁটটাও শুকিয়ে কাঠ।লজ্জায় নিজেকে সবসময় আরাফের কাছ থেকে গুটিয়ে রাখা মেয়েটা এক নিমিষেই কেমন লজ্জাহীন হয়ে গিয়েছে।আরাফের পাশে দাঁড়িয়ে অসহায় মুখ করে বলল,

‘আপনি প্লিজ এমনটা করবেননা।’

আরাফ সিগারেটটা আঙুল থেকে ছেড়ে দিতেই সেটা ছাদ থেকে নিচে পরে গেল।সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে একহাত পকেটে ঢুকিয়ে দূরে তাকিয়ে নির্বিকারভাবে বলল,

‘আমি শুধু অন্তকে ভালোবাসি।বাবা জোর করে আমাদের বিয়ে দিতে চাইছে।আম্মু ইচ্ছে করে অসুস্থ হচ্ছে।যদি সত্যি তোর সাথে বিয়ে টা হয়ে যায় আমি কোনদিন তোকে সুখী করতে পারবোনা শুধু তাই নয় আমাকে দ্বিতীয় বিয়ে করতে হবে।আমার লাইফে তোর কোন ছায়া থাকবেনা।এমনকি তোকে ডিভোর্স দিতেও আমি দুবার ভাববো না।তার চেয়ে অন্য কাউকে বিয়ে করে নে,সুখী হ।’

নিপার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরছে।এই মুহূর্তে নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায় মানুষ বলে মনে হচ্ছে।সকালে যখন শুনেছিল আরাফ তাকে বিয়ে করতে চায়না তখনও তার এত কষ্ট হয়নি কিন্তু যখন শুনলো আরাফ অন্তকে ভালোবাসে তখন তার পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গিয়েছিল।নিপা ভেবেছিল আরাফ কাউকে ভালোবাসেনা।বাসলেও সেরকম গভীরভাবে কাউকে ভালোবাসেনা।আজকাল আরাফের মতো সুদর্শন যুবক ছেলেদের দুচারটে গার্লফ্রেন্ড থাকা নিপার কাছে একদম স্বাভাবিক মনে হয়েছিল।সে ভাবতো যা কিছু হয়ে যাক চাচা-চাচি তাকে আরাফের সাথেই বিয়ে দিবে।চাচি বার বার তার মাকে বলতেন চাচা-চাচি যাকে বলবে আরাফ চোখবন্ধ করে তাকে বিয়ে করবে আর নিপা ভাবতো আরাফের যদি অন্যকারও সাথে সম্পর্ক থেকেও থাকে একবার বিয়ে হয়ে গেলে নিজের সব ভালোবাসা দিয়ে সে আরাফকে বেঁধে ফেলবে।নিপা হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখ মুছে অসহায় কন্ঠে বলল,

‘আমি সারাজীবন আপনার পায়ের তলায় থাকবো।আপনি যা বলবেন তাই শুনবো।আপনার যা ইচ্ছে আপনি তাই করবেন।আপনি অন্তুকে বিয়ে করলেও করবেন আমি কোনদিন বাধা দিবনা কিন্তু প্লিজ এই বিয়েতে না করবেন না।’

নিপার কথা শুনে আরাফ বিস্মিত হলো।মেয়েটা ঠিক কি চাইছে সে বুঝতে পারছে না।শুধু বিয়ে করতে বলছে কিন্তু বিয়ে করলে যে ওর জীবনটা নষ্ট হয়ে যাবে সেটা বুঝতে পারছেনা।আরাফ নিপার দিকে তাকিয়ে বলল,

‘আমাকে বিয়ে করলে তোর লাইফ নষ্ট হয়ে যাবে তাছাড়া আমার লাইফও জটিল হবে।তুই জেনে বুঝে কেন নিজের লাইফ হেল করবি?আর আমিই বা কেন তোকে বিয়ে করবো যেখানে অন্তকে ছাড়া আমি কাউকে ভাবতে পারিনা।’

নিপা কিছু না বলে মাথা নিচু করল।আরাফ ভ্রু কুচকে বলল,

‘কেন বিয়ে করবি আমাকে?আমি তো বলছি আমি অন্তকে ভালোবাসি,বিয়ে করলে ওকেই করবো না করলে কাউকে নয়।তুই কিসের জন্য আমাকে বিয়ে করতে চাইছিস?টাকার জন্য?বাবা তোকে বড় লোক ছেলের সাথেই বিয়ে দিবে তুই বাবাকে গিয়ে বল তুই আমাকে বিয়ে করবিনা।তুই বললেই সব ঠিক হয়ে যাবে।’

আরাফের কথা শুনে নিপার দম ফেঁটে কান্না আসছে,অশ্রুতে দুচোখ ঘোলা হয়ে এসেছে।আরাফ কি করে বলতে পারলো সে তাকে টাকার জন্য বিয়ে করতে চাইছে।নিপা ঘোলা চোখে একবার আরাফের দিকে তাকিয়েই দৌঁড়ে নিচে চলে গেল।সে আরাফকে ভালোবাসার কথা বলতে পারছেনা।কত কিছু বলতে ইচ্ছে করছে কিন্তু কিছু বলতে পারছেনা।আরাফ ভ্রু কুচকে সামনের দিকে তাকালো।গোধুলি লগ্ন চলছে।সামনের বিল্ডিং গুলোতে আলো জ্বলে উঠেছে।আরাফ দুই হাত প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে দূরের একটা টাওয়ারের লাল বাতির দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল আমি তো ওকে ভালোবাসার কথা বলার সুযোগই পেলাম না।একটু সুস্থ হোক,খুব শীঘ্রই সব ঠিক করে নিব।চাঁদ ওকে কতটা ভালোবাসে?আমার থেকে বেশি কেউ ওকে ভালোবাসতে পারবেনা।ওকে আমার কাছেই আসতে হবে,আমার এত ভালোবাসা কি করে উপেক্ষা করবে ও?ওকে আমি নিজের রক্তের সাথে মিশিয়ে নিয়েছি।চাঁদ কি করে আমার থেকে আমার রক্তকে আলাদা করবে?কোনদিন পারবেনা।

খোলা আকাশের নিচে প্রান্তদের বাসার ছাদে বসে আছে নির্ভীক আর প্রান্ত।রাত খুব একটা গভীর হয়নি, চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার।ছাদের লাইট চোখে লাগছিল দেখে নির্ভীক সেটা বন্ধ করে দিয়েছে।আশেপাশের বাসা থেকে আবছা আলো এসে পরেছে তাদের ছাদে।নির্ভীক প্রান্তর গায়ের সাথে হেলান দিয়ে বসে আকাশের তারা দেখছে।প্রান্ত হাই তুলতে তুলতে বিরক্ত হয়ে বলল,

‘আরে ইয়ার ঘুমোতেও দিচ্ছিসনা পড়তেও দিচ্ছিস না কি চাইছিস টা কি?কয়দিন বাদে এক্সাম আর তোর কোনো চিন্তায় নেই।সর তো বালডা পড়তে হবে শেষ সময় এসে ফেল টেল করলে জু্নিয়রদের কাছে প্রেস্টিজ থাকবেনা।’

প্রান্ত নির্ভীককে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল।নির্ভীক চট করে প্রান্তর কোলের উপর মাথা দিয়ে শুয়ে নরম কন্ঠে বলল,

‘প্রেমে পরেছি ইয়ার,অসহ্য প্রেম।মাথা পুরো হ্যাং মেরে আছে।এত প্রেম পাচ্ছে!!প্রেম না করলে আমি শেষ।’

প্রান্ত ভ্রু কুচকে বলল,
‘শালা হারামি এই তোর ভালোবাসা?অন্ত একটু অসুস্থ বলে তাকে ছেড়ে অন্য..’

নির্ভীক চট করে উঠে বসে প্রান্তকে একটা ধমক দিয়ে বলল,
‘চুপকর ডাফার কোথাকার!!আর অন্ত বললি কোন সাহসে হুম?টেনে নিব জিভ টা এখন?’

প্রান্ত বিরক্ত হয়ে বলল,
‘পরেছি যতসব পাগলের পাল্লায়।অন্তকে অন্ত বলবোনা তো কি বলবো?আরাফ ভাইয়ার মতো জানপাখি বলবো?’

নির্ভীক প্রান্তর চুলের মুঠি ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
‘মরার পাখা গজিয়েছে না তোর?বাঁচতে চাইলে আর কখনও আমার অন্তকে অন্ত বলবিনা।কি বলবি তুই ভেবে নে।’

প্রান্ত চোখমুখ কুচকে নির্ভীকের হাত সরাতে সরাতে বলল,
‘বোন বলবো বোন।ছোট করে বোনু।শালা চুল ছাড়,চুল ধরেছিস কেন?লাগছে ছাড়।’

নির্ভীক প্রান্তর চুল জোরে টেনে ছেড়ে দিল।প্রান্ত মাথায় হাত দিয়ে চুল ঠিক করতে লাগলো।অন্ধকারের জন্য দেখতে পেলনা নির্ভীক ওর কয়েকটা চুল ছিড়ে নিয়েছে।নির্ভীক আবার প্রান্তর কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে বলল,

‘কি যেন বলছিলাম?প্রেম,হ্যাঁ প্রেম।প্রেম হল প্রাণের প্রাণ,চির ফাল্গুনী,নিষ্পাপ রুপের আশ্রয় আর সে?সে তো আরও কোমল,স্নিগ্ধ,নরম,প্রেমপরায়ণ।তার সাথে প্রেম করতেই হবে,এখনই।আমার পিচ্চিটাকি ঘুমিয়ে পরেছে!!দেখ তো কটা বাজে?’

প্রান্ত ফোন নিয়ে দেখে বলল,

‘দশটা দশ।তুই কি এখন বাসায় যাবি?গেলে তাড়াতাড়ি যাতো বাল।আমি একটু পড়তে বসবো।কুত্তাটাকেও নিয়ে যাবি নাহলে ওকে মেরে গুম করে দিব।’

নির্ভীক উঠে দাঁড়িয়ে প্রান্তর টিশার্ট ধরে টেনে তুলে বলল,
‘চল তোকেও নিয়ে যাবো।আমি প্রেম করবো তুই পাহাড়া দিবি।লুকিয়ে আমার প্রেম করা দেখেছিস তো তোর চোখ আমি গেলে দিব।’

প্রান্ত ভ্রু কুচকে বলল,
‘কি করবি ওর সাথে?

নির্ভীক প্রান্তর পেটে ঘুঁষি দিল।প্রান্ত আউচ বলে পেটে হাত দিয়ে বলল,
‘বাল!!মারছিস কেন এত?’

নির্ভীক মুচকি হেসে বলল,
‘প্রেম কন্ট্রোল করতে পারছিনা সেজন্য।তাড়াতাড়ি চল না ভাই।’

প্রান্ত বিরক্ত হয়ে নির্ভীকের সাথে হাঁটা দিল।যেদিন থেকে নির্ভীক ওদের বাসায় এসেছে মাইর খেতে খেতে ওর মাংস পঁচে গিয়েছে।নির্ভীক যতটা না ওকে বিরক্ত করছে তার থেকে বেশি কুকুরটা ওকে বিরক্ত করছে।আজকে সকালে প্রান্ত যখন ঘুমোচ্ছিল কুকুরটা বিছানায় উঠে অপকর্ম করে বিছানা ভাসিয়ে দিয়ে চলে গেল।প্রান্ত ঘুম থেকে উঠে কি লজ্জাতেই না পরেছিল।ওর মা ভাবছে প্রান্তই এসব করেছে।সারাটাদিন মায়ের কাছে বকা খেয়েছে।কাজের মেয়েটার সাথে যতবার দেখা হয়েছে ততবার হেসেছে।খবরটা তার বাবার অফিস পর্যন্ত চলে গিয়েছে।বাবার বন্ধুর একটা পাঁজি মেয়ে ‘মুন’ প্রান্তকে ফোন করে আবার জিজ্ঞেসও করেছে সে এমন কিছু করেছে কিনা।লজ্জায় তো প্রান্তর মাথা কাঁটা যাচ্ছিল।প্রান্তর এমন অবস্থা দেখে নির্ভীক হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছিল।

রাত দশটা বেজে চল্লিশ মিনিট।অন্যান্য দিন অন্ত নটার মধ্যেই ঘুমিয়ে যায় কিন্তু আজ তার ঘুম পাচ্ছেনা।বিছানার উপর বসে থেকে ভূতের ছবি আঁকছে।বিকেলে খালার সাথে পাশের বাসায় ঘুরতে যেয়ে রিংকুর সাথে তার নতুন করে পরিচয় হয়।রিংকুর ড্রইং খাতায় বিভিন্ন ধরনের ভূতের ছবি দেখে বাসায় এসে নির্ভীকের বাবার কাছে বাইনা করে ছবি আঁকানোর জন্য খাতা,রং পেন্সিল সব কিছু আনিয়ে নেই।তারপর থেকেই ভূতের ছবি আঁকিয়ে চলেছে।এই দিকে নির্ভীক দশমিনিট ধরে দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে লুকিয়ে অন্তকে দেখছে।অন্তকে দুই বেণীতে একদম ছোট বাচ্চাদের মতো দেখাচ্ছে আর ওকে টিশার্ট পরে থাকতে দেখে নির্ভীকের খারাপ মাথা আরও খারাপ হয়ে যাচ্ছে।নির্ভীকের ইচ্ছে করছে দৌঁড়ে যেয়ে অন্তকে জড়িয়ে ধরতে কিন্তু সে যাচ্ছে না।খালা অন্তর পাশে শুয়ে থেকে ঘুমোচ্ছিল।অন্ত খালাকে টেনে তুলে বলল,
‘খালা চলো রিংকুদের বাসায় যাবো।একটা ভূতের ছবি মনে পরছেনা।চলো গিয়ে দেখে আসি।’

খালা ঘুমের মধ্যেই বলল,
‘কাল সকালে যাইয়ো,রিংকু বাবু ঘুমাই গেছি তুমিও ঘুমাও।

অন্ত আর কিছু না বলে খাতাপত্র গুছিয়ে লাইট অফ করে শুয়ে পরলো।অন্ত সবার কথা শুনে।খালা ঘুমোতে বলছে তাই এখন সে ঘুমোবে।নির্ভীক মুচকি হেসে নিজের রুমে গেল।অন্ত ঘুমালে সে আবার আসবে।অন্তর কপালে চুমু না দিলে আজকাল রাতে তার ঘুম হয়না।

কিচেনে ফ্রিজ খুলে খাবার টেস্ট করছে প্রান্ত।এখন তার ফুফু মানে নির্ভীকের মা হসপিটালে কাজে ব্যস্ত আর খালা ঘুমিয়ে গেছে তাই তাকে নিজেই খাবারের সন্ধান করতে হচ্ছে।প্রান্ত ফ্রিজ থেকে একটা লাল টসটসে আপেল নিয়ে কামড় দিতেই তার ফোন বেজে উঠলো।পকেট থেকে ফোন বের করে দেখতেই মুখ থেকে বিরক্তির শব্দ বের হল।ইচ্ছেমতি ফোন করেছে।অনিচ্ছা শর্তেও তাকে ফোনটা ধরতে হল নাহলে পাগলি মেয়েটা সারারাত ফোন করবে।প্রান্ত ফোন কানে ধরে বিরক্ত কন্ঠে বলল,

‘বল কি বলবা?’

‘সত্যি আপনি শুনতে চান?’

‘এই শোনো একদম আমাকে বিরক্ত করবেনা।তোমার মতো ফাজিল মেয়ে আমি দুটো দেখিনি।’

‘আপনি রেগে যাচ্ছেন কেন বলুন তো?আমি তো কিছুই বলিনি।আপনি কি বিরক্ত হচ্ছেন?বিরক্ত হলেও কিছু করার নেই আপনার সাথে যখন ইচ্ছে হবে কথা বলবো।আপনাকে আমার খুব ভাল লাগে।’

প্রান্ত রেগে বলল,
‘তোমাকে আমার একটুও ভাল লাগে না,বাই।’

‘এই না, শুনুন, শুনুন একটা ইমপর্টেন্ট কথা আছে।’

‘কি কথা?’

‘আপনার সত্যি আমাকে ভাল লাগে না?না মানে আমি কিন্তু যথেষ্ট সুন্দরী আছি।মানছি আমি অন্তর মতো অতো সুন্দর নয় কিন্তু আপনিও তো নির্ভীক ভাইয়ার মতো অতো সুন্দর নয়।তাই আপনার উচিত অন্তর মতো কাউকে না খুঁজে ওর থেকে একটু কম সুন্দর কাউকে বেছে নেওয়া।’

প্রান্ত আপেল খেতে খেতে সোফায় গিয়ে বসলো।আশেপাশে কেউ আছে কিনা দেখে নিয়ে আস্তে আস্তে বলল,
‘আমি তো অনেক আগেই বেছে নিয়েছি।সে তোমাদের মতো অতো ফর্সা নয়,সোনার কন্যা।সোনার কন্যা মানে বু…..’

আর কিছু বলার আগেই প্রান্ত হন্ত দন্ত হয়ে সোফার পেছনে গিয়ে লুকিয়ে পরলো কারন অন্ত সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসছে।অন্তকে প্রান্তর দিকে আসতে দেখেই প্রান্ত ইচ্ছেমতির কল কেটে নির্ভীককে মেসেজ করল,

‘কিরে কার সাথে প্রেম করছিস?বোনু তো ড্রইং রুমে।আমি সোফার পেছনে লুকিয়ে আছি এখানে খুব মশা।উদ্ধার কর আমাকে,প্লিজ ভাই প্লিজ।’

অন্ত যেয়ে টিভি অন করে সোফায় শুয়ে পরলো।টিভিতে নিউজ হচ্ছে তার এখন নিউজ দেখতে ইচ্ছে করছেনা তাই সে একটার পর একটা চ্যানেল চেন্জ করতে লাগলো।প্রান্ত অন্তর পেছন থেকে হামাগুড়ি দিতে দিতে সিঁড়ির কাছে এসে আটকে গেল।সিঁড়ি দিয়ে উঠতে গেলেই অন্ত ওকে দেখতে পাবে তাই সিঁড়ির নিচে চুপ করে বসে থাকলো।তখনই নির্ভীক প্রান্তকে একটা ছোট্ট মেসেজ দিয়েছে।

‘লুকিয়ে থাক।কি করছে ওখানে?’

‘টিভি দেখছে,টিভিতে বড় বড় সাপ দেখাচ্ছে।সাপের নাম ব্ল্যাক মাম্বা।সাপটা অনেক লম্বা আর সিলভার কালার কিন্তু মুখের মধ্যে ব্ল্যাক।’

‘ধূর এসব দেখছে কেন?ভয় পাবে তো।’

‘ভাই তোদের বাসায় এত মশা কেন?সিঁড়ির নিচে প্রচুর মশা,খেয়ে ফেলছে আমাকে।’

নির্ভীক আর কোন মেসেজ পাঠালো না।উপর থেকে রেলিংয়ে দুহাত রেখে নিচের দিকে ঝুকে অন্তর দিকে তাকিয়ে থাকলো।প্রায় আধ ঘন্টা পর অন্ত সোফাতেই ঘুমিয়ে গেল।অন্তর ঘুমিয়ে যাওয়া দেখে নির্ভীক নিচে এসে অন্তর পাশে হাঁটু গেড়ে বসে অন্তর হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে ফিসফিস করে বলল,
‘তুমি কিন্তু দিন দিন বাঘিনী হয়ে যাচ্ছ।বিড়াল ছানা থেকে ডিরেক্ট বাঘিনী,কিউট বাঘিনী।আমার তো তোমাকে কিসি দিতে ইচ্ছে করছে একটা দিই?রাগ করবা না তো?’

নির্ভীক আশেপাশে দেখে নিল।প্রান্তকে কোথাও দেখতে না পেয়ে টুপ করে অন্তর গালে চুমু দিয়ে মুচকি হেসে বলল,
‘আরেকটা দিই?নাহ থাক এগুলো অনেক মিষ্টি।বেশি মিষ্টি খেলে রিংকুর মতো মটু হয়ে যাব।বিয়ের আগে মটু হলে তুমি আবার বিয়ে ক্যান্সেল করে দিবা।বিয়ের পর মটু হবো ওকে?এখানে শুয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছে?চলো তোমাকে রুমে দিয়ে আসি।’

নির্ভীক খুব সাবধানে অন্তকে কোলে নিয়ে রুমে গেল।অন্তকে বেডে শুয়ে দিয়ে কিছুক্ষণ অন্তর পাশে বসে থেকে অন্তর কপালে দুটো চুমু দিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে আসলো।নিচে এসে প্রান্তকে কোথাও খুঁজে না পেয়ে তাকে ফোন দেই।সিঁড়ির নিচে থেকে রিংটনের আওয়াজ শুনে সেখানে গিয়ে দেখে প্রান্ত মেঝেতেই জড়সড় হয়ে শুয়ে ঘুমিয়ে আছে।নির্ভীক প্রান্তকে টেনে তুলে নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে পরলো।

চলবে……………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here