#ভালোবাসি_আমি_যে_তোমায়_২
#Sohani_Simu
১৭.
দিন গড়িয়ে চলে।সপ্তাহ মাসে রুপান্তরিত হতে থাকে।প্রথমে একমাস তারপর দুমাস এভাবে কেটে গেল তিনটে মাস।প্রথম দিকে অন্তকে নিয়ে সবাই অনেক চিন্তিত থাকলেও মেডিসিনের চারটে ডোজ দেওয়ার পর এখন সবাই অনেকটা চিন্তা মুক্ত হয়েছে কিন্তু অন্তকে নিয়ে সবার চিন্তা কমলেও সবাইকে নিয়ে অন্তর চিন্তা দিনদিন বেড়েই চলেছে।পরিচিত কিছু দেখলেই আগের স্মৃতিগুলো অস্পষ্ট হয়ে মনে পড়ছে।তখন মাথাব্যথা হয় কিন্তু মেডিসিন খেলেই ঠিক হয়ে যায়।এতদিন ইচ্ছেমতির সাথে থেকে সবকিছু শিখে নিয়েছে।ইচ্ছেমতি পড়াশুনা করে দেখে সেও বাসায় টুকটাক পড়াশুনা করে এখন জেদ ধরেছে সেও ভার্সিটিতে যাবে।জারিফকে বলে বলে যখন জারিফ রাজী হচ্ছেনা তাখন সে রাযীনকে ফোন করলো।একবার রিং হতেই রাযীন কল রিসিভ করে বলল,
‘হুম বল।’
অন্ত মুখ ফুলিয়ে বলল,
‘রাযীন ভাইয়া,আমি ইচ্ছের সাথে ভার্সিটিতে যাব ভাইয়া যেতে দিচ্ছে না।’
‘তুৃৃই তো এখন অসুস্থ তাই যেতে দিচ্ছে না।আগে সুস্থ হ তারপর আমি তোকে ভার্সিটিতে নিয়ে যাবো ওকে?’
অন্ত রাগী কন্ঠে বলল,
‘তোমরা সবাই মিথ্যুক।কাল রাতেই বললা আমি সুস্থ আর সকাল হতে না হতেই বলছো অসুস্থ।যাও কারও সাথে কথা বলবো না।তুমি যদি আর একবার আমাকে ইন্জেকশন দিতে আসো তোমার পেটে সূচ ফুটিয়ে দিব।’
বলেই অন্ত কল কেটে দিল।থমথমে মুখ করে বেলকুনির ফ্লোরে বসে পরলো।কিছুক্ষণ বসে থাকার পর ফোনের সেই ছবিটি বের করল।আবারও ছবিটি জুম করে দেখে নির্ভীকের মুখ দেখতে না পেয়ে চিন্তিত কন্ঠে বলল,
‘এটা কে?এই হাত কার এটা?কার হাতে এমন কাটা দাগ আছে?’
অন্তর ভাবনার মাঝেই ইচ্ছেমতি অন্তকে ডাকলো।অন্ত আবার মুখ ফুলিয়ে উঠে রুমে গেল।ইচ্ছেমতি ব্যস্ত কন্ঠে বলল,
‘তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে ভাইয়া ভার্সিটিতে যাওয়ার পারমিশন দিয়ে দিয়েছে।’
অন্ত খুশি হয়ে বলল,
‘সত্যি?’
ইচ্ছেমতি চোখে গোল ফ্রেমের চশমা পরে ব্যাগ কাঁধে নিল হাতে দুটো বই নিয়ে বলল,
‘হুম সত্যি কিন্তু এক ঘন্টার জন্য।আজকে খুব গরম তাই নির…’
ইচ্ছেমতি নির্ভীকের কথা বলতে গিয়েছিল কিন্তু নির্ভীক সবাইকে নিষেধ করে দিয়েছে তার নাম যেন অন্তর সামনে কেউ না বলে।অন্ত নির্ভীককে চিনেই না।দিনের মধ্যে দু-একবার যাবেই নির্ভীকদের বাসায় তাও জানেনা নির্ভীক কে।এমনকি নির্ভীক প্রতিদিন ওকে খুব কাছ থেকে দেখে তাও অন্ত একদিনও বুঝতে পারেনা।নির্ভীক এক্সামের আগে প্রান্তর বাসায় চলে গিয়েছে,এক্সাম শেষ হয়ে দুদিন হয়ে যাচ্ছে তাও আসছেনা।নির্ভীকের মাথায় কি চলছে সেই ভাল জানে।ইচ্ছেমতি জিভে কামড় দিয়ে কথা ঘুরিয়ে বলল,
‘আজকে খুব গরম তাই জারিফ ভাইয়া বলল একঘন্টা পরই বাসায় ফিরে আসতে নাহলে গরমে তোর হেডেক হতে পারে।’
অন্ত ভ্রু কুচকে বলল,
‘আচ্ছা তুই বলিস আমি আর তুই একসাথে ভার্সিটিতে পড়ি তাহলে তুই ভার্সিটিতে গেলে আমি কেন যাবনা?হুয়াই?আর কিসের অসুস্থতা? আমার কোন অসুখ নেই,সাধারন হেডেক সবারই থাকে তাই বলে সবাই পড়াশুনা বাদ দেই?আর গরমের দিনে সবাই ক্লাসে না যেয়ে ঘরে বসে থাকে?’
ইচ্ছেমতি খট খট শব্দ করে হেঁটে এসে অন্তর সামনে দাঁড়িয়ে মুচকি হেসে বলল,
‘বাহ!ভ্যাদা টুনি দেখি খুব বুদ্ধিমান হয়ে যাচ্ছে।এত সুন্দর লজিক!!ভেরি গুড।শোন একদম সময় নেই তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিচে আয়।ফ্রেন্ডরা সবাই ওয়েট করছে।আজকে সবার সাথে তোকে পরিচয় করিয়ে দিব।’
অন্ত খুশি হয়ে তাড়াতাড়ি রেডি হতে লাগলো।ইচ্ছেমতি নিচে যেয়েই নির্ভীককে ফোন করল।নির্ভীক কল রিসিভ করতেই ইচ্ছেমতি বলল,
‘ভাইয়া আপনি থাকবেন তো ওখানে?আমার কিন্তু ভয় হচ্ছে,আরাফ ভাইয়ার সাথে একবার বাহিরে গিয়ে হারিয়ে গিয়েছিল তো।’
‘ডোন্ট ওরি।আমি সবসময় ওর সাথেই থাকবো।শোন তোমাকে একটা কথা বলি।তুমি কিন্তু ওকে বলবা না আমি কে।আমার ব্যাপারে কোন কথায় বলবানা ওকে?’
ইচ্ছেমতি মুচকি হেসে বলল,
‘ওকে।আমি তো এসব কখনও বলিনি এখনও বলব না।’
‘ওকে বাই।’
নির্ভীক কল কেটে দিল।ইচ্ছেমতি সোফায় বসে অন্তর জন্য ওয়েট করতে লাগলো।কিছুক্ষণ পরই অন্তকে সিঁড়ি দিয়ে নামতে দেখেই ইচ্ছেমতি চোখ বড় বড় করে উঠে দাঁড়ালো।ইচ্ছেমতি বুঝতে পারছেনা সিঁড়ি দিয়ে ওটা মানুষ নেমে আসছে নাকি কোনো পরী কারন অন্তকে রুপকথার কোনো পরীর থেকে কম কিছু মনে হচ্ছেনা।অন্ত সাদা গাউন,সাদা ওড়না আর সাদা চুড়িদার পরে চুল খোলা রেখেছে।ঠোঁটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক আর কপালে ছোট একটা কালো টিপে অন্তকে একদম মায়া দ্বীপের রাজকুমারী লাগছে।অন্ত ইচ্ছেমতির সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
‘চলো।’
ইচ্ছেমতি অন্তর পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে নিয়ে বির বির করে বলল,
‘নির্ভীক ভাইয়া আজকে শেষ।’
অন্ত বুঝতে না পেরে ভ্রু কুচকে বলল,
‘কি বলছো?লেট হয়ে যাচ্ছে তো চলো যাই।উপরে ভাবিকে বলে এসেছি।’
ইচ্ছেমতি থতমত খেয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে বলল,
‘না যাব না,তুই বার বার আমাকে তুমি করে বলিস।’
অন্ত ইচ্ছের হাত ধরে হাঁটা দিয়ে বলল,
‘আ’ম সরি গোল আলু।আমার একটুও মনে ছিল না।আমি তো তোকে তুই ই বলি।আগেও বলতাম।আগে জানু বলতাম।আমার মনে আছে এসব।একবার আপু আমাকে মেরেছিল বলে তুই আপুর হাতে কামড় দিয়েছিলি তাড়পর আমাকে জড়িয়ে ধরে বললি আমার জানুটাকে যে মারবে আমিও তাকে মারবো।তখন থেকেই তো আমরা জানু না?’
ইচ্ছেমতি হাঁটা থামিয়ে অবাক হয়ে বলল,
‘তোর মনে আছে?আর কি মনে আছে?’
অন্ত বিরক্ত হয়ে হাঁটতে হাঁটতে বলল,
‘আমার সব মনে আছে কিন্তু কেউ বিশ্বাসই করছেনা।আজাইরা আমাকে একগাদা মেডিসিন খাওয়াচ্ছে।সামান্য মাথাব্যথার জন্য কেউ এত মেডিসিন খাই?এলিয়েনটা যে কবে আসবে।একমাত্র এলিয়েনটায় আমার কথা একটু হলেও শোনে।’
ইচ্ছেমতি চরম অবাক হলো।অন্ত অনেকদিন পর আজকে আরাফকে এলিয়েন বলেছে।ইচ্ছেমতিকে দাঁড়াতে দেখেই অন্ত পেছনে তাকিয়ে বিরক্ত হয়ে বলল,
‘ধূর থাক তুই আমি চলে গেলাম।’
বলেই অন্ত গট গট করে হাঁটা দিল।ইচ্ছেমতিও দৌঁড়ে অন্তর সাথ ধরলো তারপর দুজন গাড়িতে উঠে ভার্সিটিতে চলে গেল।এদিকে অন্ত চলে যেতেই নির্ভীক বুকে হাত দিয়ে প্রান্তর উপর ঢলে পরলো।নির্ভীক আর প্রান্ত অন্তদের বাসার সামনে বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল।অন্তকে দূর থেকে দেখেই নির্ভীক পুরো হা হয়ে গেল।প্রান্তর উপর পরে গেলে প্রান্ত নির্ভীককে ধরে বলল,
‘আরে চল তাড়াতাড়ি,ওরা তো চলে গেল।’
প্রান্তর কথা শুনে নির্ভীক নিজের সংবিৎ ফিরে পেল।প্রান্তকে ড্রাইভ করতে দিয়ে নিজে প্রান্তর পেছনে বসে প্রান্তর কাঁধে থুতনি রেখে বলল,
‘অনেক বড় একটা প্রবলেম হয়ে গেছে ইয়ার।’
প্রান্ত ড্রাইভ করতে করতে ভ্রু কুচকে বলল,
‘কিসের প্রবলেম?’
নির্ভীক বুক ভরে শ্বাস নিয়ে মুচকি হেসে বলল,
‘প্রেমের প্রবলেম।আজকে যাবতীয় ভালোবাসা বাসির প্রবলেম মিটিয়ে ফেলতেই হবে,আর পারছিনা।’
প্রান্ত মুচকি হেসে বলল,
‘কিন্তু আমার বোনুর তো প্রেমে পরার বয়স হয়নি হলেও তোর মতো বুড়োর সাথে আমার বাচ্চা বোনুটাকে একদমই মানাবেনা।তোর সাথে ওই টোয়া না পোয়া তাকেই মানাবে।’
নির্ভীক প্রান্তর পিঠে কিল দিয়ে বলল,
‘আমার সাথে ভাইগিরি করছিস?তোর বাচ্চা বোনুকে কিন্তু তুলে নিয়ে যাব।’
প্রান্ত বাইক থামিয়ে বলল,
‘ওকে ডান,যা তুলে নিয়ে আয়।যদি তুলে বাসায় নিয়ে যেতে পারিস আমি আজকে সবার হাত-পা ধরে হলেও তোদের বিয়ে করিয়ে দিব যা।’
নির্ভীক গাড়ি থেকে নেমে চোখে সানগ্লাস পরে মুচকি হেসে বলল,
‘ওকে ভাইজান চ্যালেঞ্জ একসেপ্টেট।আমাদের বাসায় গিয়ে ওয়েট কর আমি পিচ্চিটাকে নিয়ে আসছি।’
প্রান্ত মুচকি হেসে বলল,
‘চল তোকে ভার্সিটিতে নেমে দিয়ে আসি আগে।’
—-
অফিসে নিজের ডেস্কে বসে কম্পিউটারে রেজিগনেশন লেটার টাইপ করছে আরাফ।দশদিনের নাম করে ইউএস এসে অফিসের বসের সাথে করা তিনমাসের চুক্তিতে ফেসে গিয়েছিল তাই আর দেশে ফিরতে পারেনি।এখন সব ঝামেলা মিটিয়ে নিয়েছে।আজই পদত্যাগ পত্র জমা দিয়ে চাকরি ছাড়বে সে।দ্রুত লেটার টাইপ করে প্রিন্ট করতে দিয়েই চেয়ারে মাথা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করলো।কিছু একটা চিন্তা করেই চোখ খুলল।প্রিন্ট হওয়া পদত্যাগ পত্র হাতে নিয়ে একটানে ছিড়ে ডাস্টবিনে ফেলে দিল।ফোন হাতে নিয়ে অন্তর একটা ছবি বের করে মুচকি হেসে বলল,
‘জানপাখি,তোমার জন্য আমি সব করতে…’
আর কিছু বলার আগেই আরাফের একজন ইংরেজ কলিগ ফোনের দিকে উকি দিয়ে পাশ থেকে বলল,
‘ওয়াও!!!হু ইজ শী?শী’জ বিউটিফুল!!!’
আরাফ ফোন পকেটে ঢুকিয়ে মুচকি হেসে বলল,
‘শী’জ মাই লাইফ।’
কলিগ মুচকি হেসে বলল,
‘ডু ইউ লাভ হার?’
আরাফ একটা ফাইল খুলে কম্পিউটারের কিবোর্ডে হাত রেখে কাজে ব্যস্ত হয়ে বলল,
‘ইয়াহ।’
হঠাৎই আরাফের ফোন বেজে উঠলে পকেট থেকে ফোন বের করে দেখে নিপার কল।আরাফ জানে তার মা বার বার নিপার ফোন থেকে কল দেয় নাহলে নিপার এত সাহস নেই যে আরাফকে ফোন করে বিরক্ত করবে।আরাফ ফোন কানে ধরে কেবিন থেকে বেড়িয়ে গেল।আরাফের মা বললেন,
‘কেমন আছিস বাবা?দুদিন থেকে কথা বলছিস না।’
আরাফ রাগী কন্ঠে বলল,
‘কি বলতে চাও তাড়াতাড়ি বল,বিজি আছি।’
আরাফের মা মন খারাপ করে বললেন,
‘বলছিলাম নিপা তো খুব ভাল নাচতে পারে,ছোট থেকে নাচ শিখেছে।এখানে নাচের প্রতিযোগিতা হবে।তোর বাবা ওর জন্য ফর্ম তুলতে চাইছে,ফর্ম তুলবে কি?’
আরাফ রাগী কন্ঠে বলল,
‘এসব ফালতু কথা বলার জন্য কল করেছো?তোমাদের যা ইচ্ছে কর না,আমাকে কেন বিরক্ত কর?’
আরাফ কল কেটে দিয়ে নিজের ডেস্কে ফিরে আসলো।প্রায় আধ ঘন্টা পর চোখমুখ শক্ত করে ফোন নিয়ে বেলকুনিতে এসে ইচ্ছেমতিকে কল করে বলল,
‘অন্তকে ফোন দে।’
‘অন্ত কথা বলবেনা তোমার সাথে।’
আরাফ রেগে বলল,
‘দিবি তুই?’
‘দিচ্ছি তো রেগে যাচ্ছ কেন?’
অন্ত ফোন কানে ধরেই আনন্দিত হয়ে বলল,
‘আরাফ ভাইয়া জানো?আমি এখন ভার্সিটিতে যাচ্ছি।’
আরাফ রাগী কন্ঠে বলল,
‘ভালোবাসি আমি তোমাকে বুঝেছো তুমি?’
‘আই লাভ ইউ টু এলিয়েন।’
আরাফ চমকে গেল।অন্ত হুট হাট বিভিন্ন কথা বলে তাকে প্রায়ই চমকে দেই কিন্তু আজ আরাফ একটু বেশিই চমকে গিয়েছে কারন অন্ত তাকে এলিয়েন বলেছে।কিছুক্ষণ চুপ থেকে আরাফ নরম কন্ঠে বলল,
‘তুমি জানো?আমি এখন আকাশের দিকে তাকিয়ে কান্না করছি।আই মিস ইউ।অনেক ভালোবাসি তোমাকে।তুমি কি আমাকে একটু ভালোবাসবে?আসবে এখানে?’
কল স্পিকারে দেওয়া ছিল তাই ইচ্ছেমতি সব শুনতে পেয়েছে।অন্ত কিছু বলার আগেই ইচ্ছেমতি বলল,
‘ভাইয়া ও তো জানেনা মানুষ কেন আকাশের দিকে তাকিয়ে কান্না করে।’
আরাফ রেগে কল কেটে দিল।নিজের বোনের উপর তার খুব রাগ হচ্ছে কারন সে অন্তকে যখনই একটু বুঝানোর চেষ্টা করে তখনই ইচ্ছেমতি অন্তকে অন্যকিছু বুঝায়।ইচ্ছেমতি অন্তকে বলে জারিফ যেমন ভাইয়া আরাফও তেমন ভাইয়া তাছাড়াও অন্তরও আগের অনেক কিছু মনে পরে।আগে অন্ত তো আরাফকে নিজের ভাই ই মনো করতো ইচ্ছেমতি বলার পর এখনও নিজের ভাইয়ের মতোই মনে করে আর অন্ত জানে জারিফের মতো আরাফেরও বউ আছে।
—
প্রান্ত নির্ভীককে ভার্সিটিতে নেমে দিয়ে চলে গেল।অন্তরাও ভার্সিটিতে পৌঁছে ফ্রেন্ডদের কাছে গেল।অন্ত সব ফ্রেন্ডদের দেখল।সবাইকে চেনা মনে হলেও সেরকম ভাবে কাউকে চিনতে পারলোনা।শুধু রিপন বাদে সবার সাথে টুকটাক কথা বলল।রিপন কয়েকবার অন্তর সাথে কথা বলার চেষ্টা করে হতাশ হয়ে বলল,
‘তুই কি সত্যি আমার সাথে দুশোদিন কথা বলবিনা?সব ভুলে গেলি আর এই দুশোদিন কথা না বলার কথা ভুলতে পারলিনা?একেই বলে মেয়ে মানুষ।বাবা গো বাবা কত অভিমান!!’
অন্ত ভ্রু কুচকে রিপনের কথা শুনে ইচ্ছেমতিকে ফিসফিস করে বলল,
‘ও এসব কি বলছে?’
ইচ্ছেমতি মুচকি হেসে বলল,
‘ও একবার তোকে ওর থেকে দুশো হাত দূরে থাকতে বলেছিল আর তুই রাগ করে ওর সাথে দুশোদিন কথা বলতে চাসনি সেটায় ও বলছে।’
অন্ত কিছু বুঝতে পারছেনা।তার এখানে ভালও লাগছেনা।লালমাটির এই ক্যাম্পাস কেমন একটা ভ্যাপসা গরমে ঢাকা পরে আছে।তীব্র খরায় মানুষজন নাজেহাল হয়ে পরেছে।কোথাও একটুও বাতাস নেই,একটা গাছের পাতা পর্যন্ত নড়ছেনা।গরমে অন্তর নাকে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে,কপালের ছোট ছোট চুলগুলো ঘেমে কপালের সাথে লেপ্টে গিয়েছে।অন্ত ইচ্ছেমতির হাত ধরে হাঁটা দিয়ে বলল,
‘আমার এখানে ভাল লাগছেনা।পানি খাব,গরম লাগছে।বাসায় যাব।’
ইচ্ছেমতি অন্তর কথা শুনে বলল,
‘এসে দশমিনিটও হয়নি আর এখনই বাসায় যাবি?ব্যাগে পানি আছে নিয়ে খা না আর ক্লাসে চল ফ্যান আছে।’
অন্ত ইচ্ছেমতিকে নিয়ে ফ্রেন্ডদের থেকে একটু দূরে নিরিবিলি জায়গায় চলে আসলো।গাছের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,
‘এখানে তাও একটু ভাল লাগছে।এখানে কেউ নেই।’
ইচ্ছেমতি আশেপাশে তাকিয়ে গাছের পেছনে নির্ভীককে দেখতে পেয়েই মুচকি হেসে বলল,
‘তুই এখানে দুমিনিট দাঁড়া আমি পানি নিয়ে আসছি।’
ইচ্ছেমতি আর একসেকেন্ডও দেরি না করে দৌঁড়।অন্ত পেছন থেকে চেঁচিয়ে বলল,
‘যেতে হবেনা,পানি আমার ব্যাগে আছে।কোথায় যাচ্ছিস?তাড়াতাড়ি আয়।’
ইচ্ছেমতি একটু দূরে গিয়ে ফ্রেন্ডদের সাথে কথা বলতে লাগলো।ইচ্ছেমতিকে দেখা যাচ্ছে জন্য অন্ত কোন রিয়াক্ট করলো না।ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে দু ঢোক পানি খেতেই নির্ভীক এসে খপ করে অন্তর হাত থেকে বোতলটা নিয়ে ঢকঢক করে পানি খেতে লাগলো। অন্ত হা করে নির্ভীকের দিকে তাকিয়ে আছে।এত গরমের মধ্যে নির্ভীককে দেখে অন্তর মনে হচ্ছে ওর সামনে কেউ এয়ার কুল ফ্যান সেট করে দিয়েছে।অন্ত বুঝতে পারছেনা এই গরমে তার সামনের এই ছেলেটাকে এত সুন্দর আর শীতল দেখাচ্ছে কেন!অন্ত নির্ভীকের সাদা টিশার্টের দিকে তাকালো,সাদা টিশার্টের বুকের উপর কালো একটা অবয়ব আর তার নিচেই কালো রঙ দিয়ে লিখা আছে ‘আর্ডেন্ট ম্যান’।অন্ত এবার নির্ভীকের গলার দিকে তাকিয়ে দেখলো ঢোক গিলার সময় ওর গলার হার উঠা নামা করছে।নির্ভীকের মুখের দিকে তাকালেই অন্তর কেন যেন খুব ভাল লাগছে।ফর্সা গালে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি আর লম্বা নাক অন্তর কাছে খুবই পরিচিত মনে হতে লাগলো।নির্ভীক পুরো বোতল শেষ করে মাটিতে ফেলে দিল এবং তার অন্য হাতে থাকা একটা নতুন বোতলের সিপি খুলে অন্তর হাতে ধরিয়ে দিয়ে অন্তকে একটু পানি খাইয়ে দিল।অন্ত বুঝতেই পারছেনা তার সাথে এসব কি হচ্ছে।নির্ভীককে দেখে সে যেন জ্ঞান শূন্য হয়ে গিয়েছে।অন্তকে পানি খাইয়ে দিয়ে নির্ভীক তার চোখ থেকে নীল রঙের সানগ্লাস খুলে অন্তর একদম সামনে দাঁড়িয়ে চোখে চোখ রেখে বলল,
‘ আই লাভ ইউ।’
চলবে………………